যদি হঠাৎ ইচ্ছে হয় পর্ব-১১

0
142

#যদি_হঠাৎ_ইচ্ছে_হয়
#পর্ব_১১
#Saji_Afroz

নিজেকে যতই ঠিক রাখতে চায় না কেন ফুয়াদ, দিশার কথা মনে পড়লে মনটা ছটফট করে। আজও এর ব্যতিক্রম হলো না। রাদিনের সঙ্গে ওকে শপিং করতে দেখে বুকের মাঝে মোচড় দিয়ে উঠে ওর। কিছুদিন পর দিশা অন্য কারো হয়ে যাবে। এই চরম সত্যিটা হজম করতে এতটা খারাপ কেন লাগছে ওর! সবটা ভুলার জন্য নিজেও বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। তবুও কেন মনটা এত বেহায়াপনা করছে!

আইরাকে আসতে দেখে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে ফুয়াদ। আইরাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কান্না করে এসেছে ও। ফুয়াদ একটু অবাক হয়ে বলল, কেঁদেছেন?

আমতাআমতা করে আইরা বলল, না তো!

আইরা কোনো মতেই যেন নিজেকে ঠিক রাখতে পারছে না।
ও কথা ঘুরিয়ে বলল, গায়ে হলুদের শাড়িটা?

ফুয়াদ খেয়াল করলো, আইরার ঠোঁট কাঁপছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলো, ওর পুরো শরীরই কাঁপছে। ফুয়াদের মনে হলো, আইরা এই বিয়েটায় মন থেকে রাজি হয়নি। তাই এই প্রশ্ন ও করেই বসলো, আপনি কী এই বিয়েটায় রাজি নন? আমাকে বলতে পারেন সব।

আইরার হঠাৎ মাথাটা ঘুরে উঠে। চারপাশের সবকিছু ঝাপসা দেখতে শুরু করলো ও।
ফুয়াদ ও অবস্থা বুঝতে পেরে ও কে বলল, উত্তেজিত হবেন না। সব ছাড়ুন। চলুন কিছু খাওয়া যাক?

আইরা বুঝতে পারে ফুয়াদ একজন ভালো মনের মানুষ। ওকে এভাবে ঠকানো ঠিক হচ্ছে না। তাই ও সিদ্ধান্ত নেয় ফুয়াদকে সব খুলে বলার। কিন্তু কিছু বলার আগেই আইরা জ্ঞান হারায়। ফুয়াদ ঘাবড়ে যায়। তৎক্ষনাৎ আইরাকে নিয়ে পাশের একটি হাসপাতালে ও চলে আসে। এখানে এসে ডাক্তারের কাছে এমন কিছু শুনবে ও ভাবেনি।

-রোগী নিশ্চয় স্ট্রেসে থাকে অনেক। নাহলে এমন হওয়ার কথা নয়। এই সময়ে স্টেস একদমই উচিত নয়।

ডাক্তারের কথা শুনে ফুয়াদ বলল, কোন সময়?
-জানেন না? তার মানে মাত্রই জানতে চলেছেন!
-কী?
-রোগী প্রেগন্যান্ট।

কথাটি শুনে বড়োসড়ো একটা ধাক্কা খায় ফুয়াদ। ওর বড়ো চোখ জোড়া দেখে ডাক্তার বললেন, আপনি কে হোন রোগীর?

ফুয়াদ সত্যিটা লুকিয়ে বলল, স্বামী।
-তবে তো আপনার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু আপনাকে দেখে তা মনে হচ্ছে না। আপনি কী বাচ্চা এখুনি চাচ্ছেন না?
-এমন কিছু নয়। মাত্র জানলাম তাই একটু অবাক হলাম।

ডাক্তার আইরার জন্য মেডিসিন লিখে দেন, সাথে দেন কিছু পরামর্শ।
আইরার জ্ঞান ফিরলে ও ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসে। ফুয়াদ বারান্দায় থাকা চেয়ারে বসে আছে। ডাক্তার ফুয়াদকে কী বলেছে ও জানে না। তাই ফুয়াদের পাশে বসে বলল, কী বলল ডাক্তার?

ফুয়াদ নরম স্বরে বলল, জানেন? আমিও না একজনকে ভালোবাসতাম। কিন্তু সে আমায় ভালো বাসে না। তাই ওকে ভুলতে আপনাকে বিয়েটা করতে রাজি হয়েছি। এই কথাটি আপনাকে বলার আমার প্রয়োজন ছিল। বলিনি বলে হয়তো আপনার সত্যিটাও জানিনি আগে।

আইরা বুঝতে পারে ফুয়াদ সব সত্যিটা জেনে গেছে। ও দীর্ঘ একটা নি:শ্বাস ফেলে বলল, আমি আপনার অপরাধী। যা শাস্তি দেন আমায় মাথা পেতে নেব।
-নিরূপায় না হলে কেউ এত বড়ো সিদ্ধান্ত নেয় না। আপনি চাইলেই এবরশন করতে পারতেন। কিন্তু করেননি। একজন মা হিসেবে আপনার ভাবনাটা আমি বুঝেছি। নিশ্চয় বাচ্চার বাবা এমন কিছু করেছে যার কারণে এটা করতে আপনি বাধ্য হয়েছেন।

ফুয়াদের কথা শুনে ওর দিকে অবাক হয়ে তাকায় আইরা। ফুয়াদ বলল, তাই তো?

হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথা নেড়ে আইরা বলল, কিন্তু আমি আপনাকে সত্যিটা জানাব ঠিক করেছিলাম। এখন অন্যভাবে জেনে গেলেন। আপনি এখন যা খুশি করতে পারেন।
-আপনি যদি রাজি থাকেন তবে এই বিয়েতে আমারও কোনো অমত নেই। বাচ্চার দায়িত্ব আমি নেব।

আইরা বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে যায় ওর কথা শুনে। ফুয়াদ আরও বলল, আর যদি বাচ্চার বাবার কাছেই আপনি ফিরে যেতে চান তাতেও সাহায্য করব।

আইরা বলল, পথ নেই যাওয়ার। কেন শুনবেন?

আইরা ও রাদিনের সবটা শুনলো ফুয়াদ। আইরা এখনো অন্যের বিবাহিতা স্ত্রী শুনে আরেকবার যেন ঝাটকা লাগে ওর।
কিন্তু ওর জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছু শুনে ফুয়াদ নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়। নিজের জীবনে ভালোবাসাকে ও হারালো। মা বোন অনেক আশা নিয়ে আইরাকে পছন্দ করেছে। ওদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে দেখুক না, জীবনে সুখি হওয়া যায় কিনা। আর আইরা প্রেগন্যান্ট শুনেও ওর প্রতি ঘৃণা কাজ করছে না ফুয়াদের। বরং কাজ করছে মায়া। ও চাইলেই বাচ্চাটাকে শেষ করতে পারতো। কিন্তু ও এমনটা করেনি। এতেই বোঝা যায়, আইরা স্বার্থপর নয়। বরং নিরূপায়।

৷ হাসিনা খান রাদিনের শপিং এর লিস্ট দেখে বললেন, এতকিছু একদিনে নিলো দিশা? কোটি টাকা একদিনেই খরচ করে ফেললো এই মেয়ে।

তার কথা শুনে রাদিন বলল, খরচ করার জন্যই তো ওকে নিয়ে গেলাম। আমার বউ হবে ও। সবকিছু সবার চেয়ে আলাদা হতে হবে। তাই নয় কী?
-বিয়ের আয়োজনের খরচ সাধারণত মেয়ে পক্ষ করে। এখন সবটা কিন্তু আমরা করছি।
-ওরা করতে চেয়েছে। তা দিয়ে তোমাদের চলছে না। তাই এটা তোমাদের বিষয় হয়ে গেছে। ওদের সামর্থ্য যতটুক ততটুক তো করতেই চেয়েছিল।
-আচ্ছা! তুই এমন ঘরের মেয়েই পছন্দ করলি কেন? রাইদার বান্ধবীকে বিয়ে করলে তোর সম্মান আরও কত বাড়তো বুঝতে পারছিস?
-তুমিও আবারও শুরু করলে মা?

রাহাত খান এসে ওদের থামালেন। রাদিন বাবার উদ্দেশ্যে বলল, আমার ফিউচার ওয়াইফের কী এতটুকুও খরচ করার অধিকার নেই?
-নিশ্চয় আছে।
-সেটা মা কে বুঝাও। এখন থেকেই ওর প্রতি হিংসে মনোভাব রাখলে চলবে নাকি?

এই বলে রাদিন রুম থেকে বেরিয়ে যায়। হাসিনা খান রাগে কটমট করতে করতে বললেন, দেখেছ কীসব বলল ও?
-খারাপ কী বলেছে! কেন তুমি এমন আচরণ করছ বলো তো?
-কারণ ছেলের সর্বনাশ বেঁচে থাকতে দেখতে পারছি না।

এতসব শপিং দেখে খুশিতে গদগদ হয়ে যান দিলোরা খাতুন। তাদের সবার জন্যই বেশ দামি উপহার নিয়ে এসেছে দিশা। দিশার বান্ধবী রাত্রীর জন্যেও এনেছে উপহার। সবকিছু দেখে দিলোরা খাতুন বললেন, হ্যাঁ রে? কত খরচা হলো এসবে?
-কোটি টাকা গেল আজ।
-কী বলছিস!
-হ্যাঁ।

রাত্রী বলল, এগুলা তো বিয়ের। এখনো আরও অনেক বাকি।
-রাদিন বলল মাত্র তো শুরু। আমার কোনো শখ অপূরণ রাখতে না করেছে ও।

আকবার হককে ডেকে এসব দেখালে তিনি বললেন, সবই সুন্দর। কিন্তু পেয়েছ বলে অহেতুক খরচা করা উচিত নয়। ওটা তোমারই সংসার হবে৷ আর নিজের সংসারটা গুছিয়ে সাজাতে হয়। অহেতুক খরচ করে নয়।

দিলোরা খাতুন ব্যঙ্গ সুরে বললেন, ওদের আছে খরচা করতে অসুবিধা কী? তোমার নেই বলে আমি করিনি। রাদিনের আছে দিশা করবে। উল্টাপাল্টা কথা মেয়েকে বুঝিয়ে দিও না তো!

দিলোরা খাতুন যে এখন স্বপ্নের দেশে ভাসছেন বুঝতে পেরে আর কিছু বললেন না আকবার হক। দিশাও বাবার কথায় পাত্তা না দিয়ে মা কে অন্যসব জিনিস দেখাতে লাগলো।

ড্রয়ার খুলে লাল বেনারসিটা বের করলো আইরা। এটা পরেই প্রিন্সের সঙ্গে কোর্টে বিয়েটা সম্পন্ন করেছিল ও। যদিও প্রিন্স ওকে অনেক জোরাজোরি করেছিল দামি পোশাক নেওয়ার জন্য। কিন্তু আইরার চাহিদা ছিল সামান্য। শুধু ভালোবাসাটাই ছিল ওর মূল চাহিদা। তবুও ও হারালো প্রিন্সকে। এতটাই মন্দ কপাল ওর। হঠাৎ ফুয়াদের কথা মনে পড়লো ওর। ফুয়াদ সবটা জেনে ওকে গ্রহণ করছে। এতটাও মন্দ কপাল তো ওর নয়! ফুয়াদের মতো একজন কী আসলেই ও প্রাপ্য!
.
চলবে