যেখানে দিগন্ত হারায় পর্ব-৩১+৩২

0
220

#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩১
জাওয়াদ জামী জামী

পরদিন রাতের গাড়িতে আরমান ঢাকা যায়। সব পেপার সংগ্রহ করে, পাসপোর্ট রিনিউসহ অন্যান্য কাজ করে দশদিন পর বাড়ি ফিরে।

মাশিয়ার রেজাল্ট দিয়েছে। মাশিয়ার ডিপার্টমেন্টে টিচার আরমানকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। সিজিপিএ তে মাশিয়া সেকেন্ড পজিশনে আছে। মাশিয়ার রেজাল্ট শুনে সবাই খুশি হয়েছে। কল্পনা মোর্তাজা, মিরাজ মোর্তাজাও ভিষণ খুশি। তারা আয়েশা খানম এবং আরমানের কাছে ফোন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন বারবার করে। কল্পনা মোর্তাজা মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে মাশিয়া কথা বলেনা। বিষয়টা আরমানকে ভাবাচ্ছে। মাশিয়া ওর সাথে ঠিকই সহজ হয়েছে এরপরও বাবা-মা’র সাথে কথা বলছেনা কেন? অনেক চেষ্টা করেও কোন উত্তর পায়না আরমান। পরক্ষনেই ও ভাবে, হয়তো এখনও বাবা-মা’র ওপর অভিমান করে আছে। আর ওর অভিমান এতটাই তীব্র যে সহজেই ভাঙ্গার নয়। আরমান সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া থেকে ফিরেই ও মাশিয়াকে নিয়ে ঢাকা যাবে। মেয়েটাকে ওর বাবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিয়ে আসবে। মান-অভিমান ঘোচানোর সময় এবার এসেছে।

রাতের বাসেই আরমান ঢাকা যাবে। একদিন পরেই ওর ফ্লাইট। মাশিয়া আরমানের ব্যাগ গুছিয়ে দিয়েছে। আয়েশা খানমের মন খারাপ। আগামী চারমাস তিনি ছেলের মুখ দেখতে পারবেননা। ছেলে অন্তপ্রান তিনি। তিনি ছেলেকে এটাসেটা বলছেন, সাবধান করছেন। মাশিয়া সব শুনে মিটিমিটি হাসছে। এতবড় ছেলের জন্য মা’কে চিন্তা করতে ও এই প্রথমবার দেখল। ওর ভাইয়া কিংবা ও যখন বিদেশে ট্যুরে যায় তখন ওর মম এতটা চিন্তা কখনোই করেনা।

” সত্যিই যাচ্ছেন? দীর্ঘ চারমাস আপনার সাথে ঝগড়া না করে কিভাবে থাকব! ঝগড়াটা মিস করব খুব। ফোনে ঝগড়া করবেনতো আমার সাথে? ” যেন ছোট্ট একটা মেয়ে আবদার করছে এমন ভঙ্গিতে বলল মাশিয়া।

মাশিয়ার বায়না শুনে আরমান হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না। ঝগড়া করার শখও যে মানুষের হয় আজই জানল বেচারা।

” রিয়েলি এই চারমাস তুমি শুধু ঝগড়াটাই মিস করবে? তুমি কি কখনোই বড় হবেনা? ”

” শুনুন, আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি। আপনার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগে, সেই দোষটা কি আমার? ঝগড়ায় আপনার পারফরম্যান্সও যে ওয়ান ক্লাসের সেটা অন্তত স্বীকার করেন। অপরপক্ষ ঝগড়ায় পারফেক্ট না হলে ঝগড়া জমেনা, সেটা আমি আপনার কাছ থেকেই শিখেছি। ”

” এই তুমি থামবে? ওকে একা রেখে আমি যে কতদিনের জন্য বাহিরে যাচ্ছি সেই চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়েছে। আর ও আছে ঝগড়া নিয়ে! সাবধানে থাকবে। আম্মার সাথে ঘুমাবে। হুটহাট বাহিরে যাবেনা। তোমার যখন যেটা প্রয়োজন হবে আম্মাকে জানাবে। বুঝতে পেরেছ? ”

” হুম, জানাবো। ”

” পড়াশোনায় যেন কোন গাফিলতি না হয়। থার্ড সেমিস্টারে তোমাকে টপার হতে হবে। আমি প্রতিদিনই তোমার পড়াশোনার খোঁজ নিব। নোটস করে দেব। কিছু নোট করে রেখেছি। সেগুলো কমপ্লিট করবে। আমি সময় বের করে প্রতিদিন তোমাকে একটু করে পড়া দেখিয়ে দেব।তোমার ফোন তো গায়েব করে দিয়েছ। চারমাস শশীর ফোন দিয়ে কাজ চালাও। আমি বাড়িতে এসেই তোমাকে ফোন কিনে দেব। তোমার ফোন থাকলে নিজেই টিচারদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সাহায্য নিতে পারতে। ”

মাশিয়া বুঝতে পারছে আরমান একটু রেগে গেছে। তাই ও আরমানকে শান্ত করতে বলে উঠে,

” শশীর ফোন দিয়েই আমি ডিপার্টমেন্টের স্যারদের সাথে কথা বলব। তৃষা, মিতুলতো আছেই। ওরাও সাহায্য করবে। আপনি চিন্তা করবেননা। এবারেও ভালো রেজাল্ট করব দেখবেন। ”

” মনে থাকে যেন। ”

” খুব মনে থাকবে। আপনিও ভুলে থাকবেননা কিন্তু। ”

আরমান ভ্রু কুঁচকে তাকায় মাশিয়ার দিকে। ওর কথা বুঝতে পারেনি।

” কি ভুলতে পারবনা? ”

” মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন। চুল পরিপাটি করে রাখবেননা, বডি স্প্রে ইউজ করবেননা। কলারের কাছের বোতাম লাগিয়ে রাখবেন। সুন্দর করে হাসবেননা। মোটকথা মেয়েরা যাতে আপনার আশেপাশে না ঘেঁষে এমনভাবে চলবেন। ”

আরমান মাশিয়ার কাছে এগিয়ে এসে ওকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল বুকের ভেতর। মাশিয়াও নিজেকে সঁপে দিল আরমানের হাতে।

” ব্রাশ করতে পারবোতো? নাকি ঐটাও বন্ধ রাখতে হবে? মুখে গন্ধ থাকলে মেয়েরা আমার আশেপাশে ঘেঁষবেনা। আর এমনটা কি আজীবন চলতে থাকবে? শেষে এই মেয়েটা আমার কাছে ঘেঁষবেতো? ”

” আমার কাছে আসলে ফিটফাট হয়ে আসবেন। আমি আবার অপরিচ্ছন্ন মানুষ দেখতে পারিনা। আমার জামাই হল মোস্ট হ্যান্ডসাম পার্সোন। তাকে স্মার্ট হতেই হবে। ”

” আচ্ছা, তাহলে আমি হলাম তোমার বলির পাঁঠা! তোমার ইচ্ছেমত আমাকে চলতে হবে? এটা হবেনা, ম্যাম। আমি আরমান আজ পর্যন্ত নিজের ইচ্ছেতেই চলেছি এত বছর যাবৎ। এতদিন আমি যেভাবেই চলেছি, ভবিষ্যতেও এভাবেই চলব। ” মাশিয়াকে রাগানোর সুযোগ আরমান ছাড়লনা।

” তারমানে আপনি আমার কথা শুনবেননা? অসভ্য মাস্টার, আমি আপনার গলা টিপে মে’রে ফেলব। লুচু একটা, খালি মেয়েদের সান্যিধ্য পাওয়ার জন্য ছোঁকছোঁক করে! আমি এখনই আম্মাকে বলে আপনার মালয়েশিয়া যাওয়া ক্যান্সেল করব। আপনার যাওয়া কিভাবে বন্ধ করতে হবে সেটা আমার জানা আছে। ” রাগে আরমানের গাল টানছে মাশিয়া।

” দেশে পুরুষ নির্যাতন বিরোধী আইন হওয়া দরকার। নয়তো দেখা যাবে আগামী এক বছর পর আমি নামক কারও অস্তিত্ব থাকবেনা। শুধু একটা কংকাল হয়ে ঝুলব কোন ডক্টরের চেম্বারে। দেশে ডাকিনী নারীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ”

আরমানের কথা শুনে মাশিয়া রাগে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত আরমানের আশেপাশে ভিড়লনা। আরমান সবার কাছ থেকে বিদায় নিলেও মাশিয়া ওর কাছে একবারও আসলনা।

আরমান যাওয়ার পর দশদিন মাশিয়া ওর সাথে কথা বলেনি। ও নিজের মতই থেকেছে। শশীর ফোন দিয়ে তৃষা আর মিতুলের সাথে যোগাযোগ করে নোটস সংগ্রহ করেছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করছে।

আয়েশা খানম জায়নামাজে বসে দোয়াদরুদ পাঠ করছেন। ফোনের শব্দে তার মনযোগে বিঘ্ন ঘটে। তিনি জায়নামাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ড্রেসিংটেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলেন আরমান ফোন দিয়েছে। তিনি হাসিমুখে রিসিভ করলেন।

” বাপ, কেমন আছো তুমি? গত দুইদিন ফোন করোনাই কেন? তোমার শরীলডা ভালো আছে? ” একসাথে কয়েকটা প্রশ্ন করে থামলেন আয়েশা খানম।

” আসসালামু আলাইকুম, আম্মা। আমি ভালো আছি। গত দুইদিন ঝামেলায় ছিলাম, আম্মা। তাই ফোন করতে পারিনি। তুমি কেমন আছো? শশী, মাশিয়া ওরা কেমন আছে? ”

” ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমরা সবাই ভালো আছি, বাপ। কিন্তু তুমি কি ঝামেলায় পরছিলা? এখন সব ঠিক আছে তো? ” আয়েশা খানম উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইলেন।

” অন্য কোন কিছু হয়নি, আম্মা। কোর্স নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। তোমার শরীর ভালো আছে, আম্মা? ঔষধ খাচ্ছ নিয়মিত? ”

” আমার জন্য চিন্তা কইরোনা, বাপ। আমি ভালো আছি। বউমা নিয়ম কইরা তিনবেলাই আমারে ঔষধ দেয়। তুমি নিজের খেয়াল রাইখো। ঠিকমত খাওয়াদাওয়া কইরো। ”

” ঠিক আছে, আম্মা। ”

” বউমার লগে কতা কইবা? ”

” কোথায় সে? তোমাকে বিরক্ত করছেনাতো? পড়াশোনা ঠিকমত করছে? ”

” হেয় কি ছুডু মানুষ, আমারে বিরক্ত করব? হেয় পড়াশোনাও করতাছে, আবার বাড়ির টুকটাক কাজও করতাছে। হেয় আর আগের মত নাই। তুমি ইকটু অপেক্ষা কর, আমি হেরে ডাকতাছি। ”

” আম্মা, ঐ অসভ্য মাস্টারকে বলে দিন, আমি তার সাথে কথা বলবনা। পাশের বাড়ির পাগলের সাথে কথা বলতেও আমি রাজি আছি কিন্তু ঐ অসভ্য মাস্টারের সাথে জীবনেও কথা বলবনা। তাকে দেশে আসতে নিষেধ করে দিন। সে যেন ঐখানকার কোন সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে সেখানেই সংসার করে। ” মাশিয়া বারান্দায় বসে ছিল সেটা আয়েশা খানম লক্ষ্য করেননি। হঠাৎ মাশিয়ার কথা শুনে তিনি একটু চমকেই উঠেছেন।

এদিকে আরমানের কানে মাশিয়ার বলা কথাগুলো ঠিকই পৌঁছে গেছে। ও বুঝল এখনও মাশিয়ার রাগ কমেনি। একমাসেও ওর রাগ কমেনি দেখে আরমানের চিন্তা হচ্ছে। না জানি ভবিষ্যতে রাগ করলে কতমাস লেগে যাবে শান্ত হতে!

” আমি রাখছি, আম্মা। ওর রাগ কমলে আমাকে ফোন দিতে বলো। তোমরা সাবধানে থেক। ”

” তুমি ভালোভাবে থাইক, বাপ। আর তিনটা মাস গেলেই আমার শান্তি। তুমি দেশে আইসা একটা চাকরি করবা। তোমার সুখের সংসার দেখলেই আমার সুখ হইব। ”

সুধা প্রতিদিনই কোচিং-এ যাচ্ছে। ওকে কোন কাজই করতে হয়না। কল্পনা মোর্তাজা যে মেইড ওর কাছে রেখেছেন, সে-ই সব কাজ করছে। সুধার কাজ শুধু পড়াশোনা করা। ও রাস্তাঘাট মোটামুটি চিনে গেছে। কয়দিন থেকেই ওর মন আনচান করছে বাড়ির জন্য। আরমান দেশে থাকলে ঠিকই ওকে দেখতে আসত। দুইদিন ও বাড়িতে ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। আয়েশা খানম মেয়ের কান্না সইতে পারেননি। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মাশিয়া আর শশীকে নিয়ে ঢাকা যাবেন। তিনি আরমানকেও বলেছেন এই কথা। সব শুনে আরমানও রাজি হয়েছে। আয়েশা খানম ঢাকায় যাওয়ার তোড়জোড় করছেন। তিনি মাশিয়ার বাবার বাড়ির জন্য কয়েকরকম পিঠা, আতপ চাল, পোলাওর চাল, হাঁস, মুরগী আরও অনেক জিনিস প্যাকিং করেছেন।

প্রায় দুইমাস পর মা-বোনকে দেখে সুধা কেঁদে ফেলল। আয়েশা খানমও কাঁদছেন। শশীর চোখেও পানি। সুধা কখোনো এতদিন মা’কে ছেড়ে থাকেনি। কল্পনা মোর্তাজা মেয়ের সাথে কথা বলতে চাইলে মাশিয়া এড়িয়ে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মন খারাপ করে ছোট ড্রয়িংরুমের এককোনে দাঁড়িয়ে আয়েশা খানম আর তার মেয়েদের মিলন দেখতে থাকেন। মাশিয়া ফ্ল্যাটের একমাত্র বেডরুমে গিয়ে শুয়ে পরল। ওর ভিষণ মাথাব্যথা করছে।

রাতের খাবার পর কল্পনা মোর্তাজা বিদায় নিলেন। তিনি যাওয়ার আগে আয়েশা খানমকে নিজের বাড়িতে দাওয়াত করলে আয়েশা খানম জানান, তার ছেলে দেশে ফিরলে ছেলেকে নিয়ে তিনি যাবেন বেয়াই বাড়িতে। কল্পনা মোর্তাজা বুঝলেন আয়েশা খানম তার ছেলের আগে ছেলের শ্বশুর বাড়িতে যেতে চাননা। তাই তিনি আর জোড় করলেননা। মিরাজ মোর্তাজা দেশে না থাকায় তিনি একাই এখানে এসেছিলেন।

সাতদিন ঢাকা কাটিয়ে আয়েশা খানম মেয়ে আর ছেলের বউকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যান। এই সাতদিন কল্পনা মোর্তাজা একবার করে মাশিয়াকে দেখতে এসেছেন। সেই সাথে নিয়ে এসেছেন খাবার। তিনি এই কয়দিন আয়েশা খানমকে রান্না করার সুযোগ দেননি। এছাড়াও তিনি আয়েশা খানমসহ সবাইকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। আয়েশা খানম এসবে আপত্তি করলেও তিনি মানেননি। আয়েশা খানম এই সাতদিনে বুঝে গেছেন কল্পনা মোর্তাজা মানুষ হিসেবে অসাধারণ। তিনি যেমন দ্বায়িতশীল তেমনি উদার। দুই বেয়ানে মিলে এই কয়দিন বেশ আড্ডাও দিয়েছেন। তাদের বিদায় বেলায় কল্পনা মোর্তাজা কেঁদে ফেলেছেন। কল্পনা মোর্তাজার কান্না দেখে তার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে কেঁদেছেন আয়েশা খানমও। তার মেয়েদেরও একদিন শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে। হয়তো সেদিন এভাবেই কাঁদবেন।

বাড়িতে এসে মাশিয়া দেখল পুরোদমে ধানের বীজ বপনের কাজে ব্যস্ত গ্রামবাসী। আয়েশা খানমও কোমড় বেঁধে লেগে গেলেন কাজে। ফোন দিয়ে কয়েকজন মজদুর ডেকে নিলেন। তারা জমি চাষ দেয়া থেকে শুরু করে বীজ বপন এমনকি চারা লাগানোর কাজও করবে।

মাশিয়া আর শশীর তেমন কোন কাজ নেই। কাজের মেয়েটাই রান্নাসহ বাড়ির সব কাজ করে দেয়। তাই বিকেল হলেই ওরা বাহিরের উঠানে কিংবা বাগানে গিয়ে আড্ডা দেয়। আজকেও ওরা বাগানেই আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় মাশিয়া লক্ষ্য করল কয়েকমাস আগে যে তিনজন মেয়েকে লুকিয়ে আরমানকে দেখার জন্য লজ্জা দিয়েছিল, সেই তিনজন মেয়েই আজ আবারও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওদের বাহিরের উঠানে উঁকিঝুকি মারছে। মাশিয়া আজও সুযোগ হাতছাড়া করলনা। ও পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় কাঁটাতারের বেড়ার দিকে।

” এই যে, খুকুমণিরা, আগামী দুইমাস উঁকিঝুঁকি মে’রে কোনও লাভ নেই। তোমরা যে খোকাবাবুকে দেখার জন্য উদগ্রীব হচ্ছ, সেই বান্দাটি এখন মালয়েশিয়ায় পড়াশোনা করছে। যে বয়সে তার আণ্ডাবাচ্চাকে পড়ানোর কথা, সেই বয়সে বুড়ো ধামড়াটি নিজে পড়ছে। তাই আগামী দুইমাস এভাবে উঁকিঝুঁকি মে’রে এনার্জি লস করোনা। অবশ্য দুইমাস পর আসলেও তোমাদের কোনও লাভ নেই। আমার মত সুন্দরী বউ ফেলে যে খোকাবাবু দূর পরবাসে মাস্তি করতে পারে, সে আদৌও তোমাদের দিকে তাকাবে কিনা সেই সন্দেহ আমার আছে। ” মাশিয়ার কথা শুনে মেয়ে তিনজন আজকেও চরম লজ্জা পেয়েছে। তবে একটা মেয়ে লজ্জাকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে আসল মাশিয়ার দিকে।

” তার ফোন নম্বর দেয়া যাবে? কথা বলে শিওর হতাম, তিনি আমাদের সাথে কথা বলবেন কিনা। তাকে দেখে ভালো মানুষ মনে হয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি আমাদের মনের কথা বুঝবেন। দিননা তার নম্বর। ”

মেয়েটির কথায় মাশিয়া দাঁত কিড়মিড়িয়ে শশীর দিকে তাকালো। এরপর শশীর কাছ থেকে ফোন নিয়ে আরমানের বর্তমান নম্বর বের করল।

” শোন, তোমাদের রোমিওকে বলো তার বউ নম্বরটা তোমাদের দিয়েছে। তাকে বলে দিও, সে যেন আসার সময় তোমাদের জন্য ডাভ সাবান, ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী স্নো, চকলেট এসব নিয়ে আসে। হাজার হলেও তোমরা তার কাছের মানুষ। সম্মান বলে তো একটা কথা আছে, তাইনা? ”

মেয়েরা নম্বর পেয়ে হাসিমুখে বিদায় নেয়। তারা মাশিয়ার কথার কোনো জবাব দেয়না। এদিকে মাশিয়া রাগে ফুঁসছে।

চলবে…

#যেখানে_দিগন্ত_হারায়
#পার্ট_৩২
জাওয়াদ জামী জামী

ভার্সিটি থেকে ফিরে রেস্ট নিচ্ছিল আরমান। তখনই ওর ফোন বেজে উঠল। স্ক্রীনে বাংলাদেশের নম্বর দেখে বেশ অবাকই হয়। রিসিভ করতেই অচেনা কন্ঠস্বর সালাম দিল।

” আসসালামু আলাইকুম। ”

” ওয়ালাইকুমুসসালাম। কে বলছিলেন? ”

” আমি লামিয়া। আপনি কি আরমান? ”

” জ্বি। কিন্তু আপনি কে? লামিয়া নামের কাউকে আমি চিনি বলে মনে হচ্ছেনা। ”

” আপনি আমাকে চিনবেননা। আমার বাড়ি দুর্গাপুর। আপনার পাশের গ্রাম। ”

এবার আরমান চমকে গেছে। ওর এই নম্বর হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউই জানেনা। দুর্গাপুরের কারও জানার কোন কারনই নেই। এই মেয়ে ওর নম্বর পেল কিভাবে! কৌতূহল দমন করতে না পেরে আরমান প্রশ্নটা জিজ্ঞেসই করে বসল।

” আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায় থেকে? আমাকে কিভাবে চেনেন? ”

” আপনার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে আমি কলেজে যাই, তখনই আপনাকে দেখেছি। আপনার নম্বরটা আপনার ওয়াইফ দিয়েছে। ”

” হোয়াট! মাশিয়া দিয়েছে? আপনাকে কেন আমার নম্বর দিতে গেছে? ও কি আপনাকে চেনে? ” এতক্ষণ শান্ত হয়ে কথা বললেও এবার বেশ রেগে গেছে আরমান। ওর রাগ আঁচ করতে পেরে ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা মেয়েটা একটু মিইয়ে যায়। ওর বুক ঢিবঢিব করছে। তবুও মিনমিনে গলায় নিজের পক্ষে সাফাই দিতে চেষ্টা করল।

” আসলে আপনাকে আমার ভিষণ ভালো লেগেছে। আপনার ওয়াইফ সেটা বুঝতে পেরেই, আপনার নম্বর আমাকে দিয়েছে। ” এরপর মেয়েটি একে একে সেদিনের মাশিয়ার বলা কথাগুলো বলল।

সব শুনে আরমান রাগে গজগজ করতে থাকে। মাশিয়ার এমন উদ্ভট কর্মকান্ড ও মানতে পারছেনা। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় এবার মাশিয়াকে কিছু কঠিন কথা বলবে। কিন্তু তার আগে এই মেয়েটাকে পিছু ছাড়াতে হবে।

” আমার স্ত্রী না হয় জেনে-বুঝেই আপনাকে আমার নম্বর দিয়েছে। কিন্তু আপনি আমাকে ফোন দেয়ার ভুলটা করলেন কিভাবে? একজন বিবাহিত পুরুষকে ফোন দেয়াটা ভদ্রতার মধ্যে পরেনা এই জ্ঞানটুকুও আপনার নেই! আবার বলছেন, আমাকে ভালো লেগেছে? এরপর আর কখনোই আমাকে বিরক্ত করবেননা। আমার স্ত্রী আছে। আর স্ত্রী রেখে বাহিরের কোন মেয়ের সাথে কথা বলা আমার পক্ষে অসম্ভব। ”

মেয়েটিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আরমান ফোন কেটে দিয়ে নম্বরটা ব্লক করে দেয়। এরপর ও ফোন দেয় শশীর কাছে। শশী ফোন রিসিভ করলে আরমান মাশিয়ার সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু মাশিয়া আগেই শশীকে বলে রেখেছে, আরমান ওর সাথে কথা বলতে চাইলে শশী যেন আরমানকে বলে দেয়, মাশিয়া কথা বলতে চায়না। বাধ্য হয়ে মা-বোনের সাথে কথা বলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় আরমানকে।

মাশিয়া আর শশী পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করেছে। আরমানের আসতে আর দেরি নেই। সাতদিনের মধ্যেই ও দেশে আসবে। মাশিয়ার তৃতীয় সেমিস্টার শুরু হবে আর দশ দিন পরই। আরমান দেশে এসে ওকে নিয়ে আবারও ঢাকা যাবে। মাশিয়ার পরীক্ষা শেষ হলেই আবার গ্রামে আসবে। মাশিয়া বন্ধুদের কাছ থেকে নোটস সংগ্রহ করে পড়ছে। বন্ধুরা ওকে যথেষ্ট হেল্প করছে।

আয়েশা খানম ব্যস্ত হয়ে ছেলের পছন্দের খাবার বানাবেন তারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি চালের গুঁড়া করে এনেছেন। পাশের বাড়িতে বলে রেখেছেন হাঁসের জন্য। মাশিয়া পড়ার ফাঁকে ফাঁকে শ্বাশুড়ির কাজকর্ম দেখে হাসে। আয়েশা খানম ছেলেকে প্রচন্ড ভালোবাসেন এটা সে বুঝে। তাই মাঝেমধ্যে শ্বাশুড়িকে এসব নিয়ে উত্যক্তও করে। আয়েশা খানমও হাসিমুখে ছেলের বউয়ের সকল মিষ্টি অত্যাচার সহ্য করেন।

শনিবার রাত আটটার দিকে আরমান বাড়িতে আসল। ওকে পেয়ে আয়েশা খানম খুশিতে কেঁদে ফেললেন। আরমানও মা’কে জড়িয়ে রাখল অনেকক্ষণ। কান্নাকাটির পালা শেষ হলে আরমান শশীর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। শশী খুশিমনে ব্যাগ নিয়ে আম্মার ঘরে যায়।

মাশিয়া নিজের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সব মনযোগ দিয়ে দেখছিল। গত কয়েকমাসে ও আরমানের সাথে একবারও কথা বলেনি। আজ আরমান ওকে কি করবে ভেবেই ভয় হচ্ছে। আরমান আয়েশা খানমের সাথে কথা বলে ঘরের দিকে আসে। দরজার কাছে এসে দেখল মাশিয়া দাঁড়িয়ে আছে। ও মাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল, মাশিয়ার সাথে একটাও কথা বললনা।

” আজব! আমার সাথে কথা না বলেই অসভ্য মাস্টার ভেতরে চলে গেল! ” মাশিয়াও ভেতরে যায়।

আরমান ব্যাগ খুলে কিছু বের করছে। মাশিয়া উঁকি দিয়ে দেখল ট্রাউজার আর টি-শার্ট বের করেছে সে। ধীর পায়ে মাশিয়া বিছানায় গিয়ে বসল।

” হ্যাল্লো মাস্টার, আজকাল বেশি ভাব নিচ্ছেন মনে হয়? মাশিয়াকে মনে হয় চিনতেই পারছেননা! ভেরি ব্যাড। ”

মাশিয়ার গলা শুনে ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয় আরমান।

” সিংহীকে ভুলে যাওয়ার সাধ্য কি আমার আছে! তবে আপাতত কিছুক্ষণের জন্য চিনতে চাইছিনা। গোসল করে এসে সবকিছুর হিসাব নিতে বসব। বলতে পার সেজন্যও সাইলেন্ট আছি। ”

” কি..কিসের হিসাব! আমি এখন পড়তে বসব। আমার পরীক্ষার ডেইট দিয়েছে। তাই আমি পড়াশোনা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারছিনা। আপনি যদি বেশি হম্বিতম্বি করেন, তবে আমি আম্মার ঘরে আস্তানা গাড়ব। ”

মাশিয়ার সহজ স্বীকারোক্তি শুনে আরমান এগিয়ে আসল ওর দিকে। আরমানকে দেখে মাশিয়াও উঠে দাঁড়ায়। ওর চোখেমুখে দুষ্টুমি খেলা করছে। আরমান কাছে এসে এক টানে মাশিয়াকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

” তোমার যত ইচ্ছে হয় পড়। আমি কিছুই বলবনা। শুধু এই রুম থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবেনা। তাহলে তোমার খবর আছে। আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করবেনা কখনোই। সেটা তোমার জন্য খারাপ বৈ ভালো হবেনা। ” মাশিয়ার ললাট আরমানের ভালোবাসার উঞ্চ পরশে সিক্ত হয় নিমেষেই। তৎক্ষনাৎ মাশিয়ার কপোল লালাভ আবরনে ছেয়ে যায়। ওর হিয়া প্রকম্পিত হয় অজানা সুখের আবেশে। ওষ্ঠদ্বয়ের সুরেলা ঝংকারে আরমানের কর্ণকুহরে প্রশান্তির ছোঁয়া দেয়।

” কোথাও যাবোনা। কিন্তু মহাশয়, এতগুলো ব্যাগ কেন আপনার সাথে? নিয়ে গিয়েছিলেন একটা ব্যাগ, এনেছেন চারটা। কি আছে এত? ”

” তুমি যেন কার কার জন্য ডাভ সাবান, ফেয়ার এ্যান্ড লাভলী আরও সব কি কি আনতে বলেছিলে। সেসবই এনেছি। প্রয়োজনমত সবাইকে দিয়ে দিও। ”

আরমানের কথায় মাশিয়া দাঁত দিয়ে জিভ কাটল। ঘুরেফিরে ঐ প্রসঙ্গ আসায় ওর বুক ধুকপুক করছে।

” যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। রাত হয়ে গেছে। আম্মা তার আদরের ছেলের জন্য কতকিছু রান্না করেছে, সেসব ঠান্ডা হয়ে গেলে খেয়ে মজা পাবেননা। আম্মার আদরের ন্যাদা ছেলে বলে কথা। ” মাশিয়া কথাগুলো বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।

দুইদিন পর আরমান মাশিয়াকে নিয়ে ঢাকা চলে যায়। ঢাকায় একমাসের বেশি সময় কাটিয়ে পরীক্ষা দিয়ে আবারও গ্রামে ফিরে আসে। এবার ওদের সাথে সুধাও এসেছে। মেয়েটা গত কয়েকমাসের মধ্যে এবারই প্রথম গ্রামে আসল। এবারে কল্পনা মোর্তাজা তার মেয়েকে বাড়িতে নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করলেও মাশিয়া শোনেনি। সে এবারও বাবা-মা’য়ের সাথে ভালো করে কথা বলেনি। দুইদিন মাশিয়ার ভাই মাহিন তার স্ত্রী’কে নিয়ে এসেছিল। ওরাও মাশিয়াকে যাওয়ার কথা বলেছে কিন্তু মাশিয়া রাজি হয়নি। আরমান সব শুনে প্রতিবারের মত এবারও চিন্তায় পরে যায়। মাশিয়ার এহেন আচরণের জবাব খুঁজে পায়না কিছুতেই। সেই সাথে বুঝতে পারেনা মাশিয়ার মতিগতি।

” আম্মাআআআ, আপনার এত সুন্দর সুন্দর শাড়ী আছে? এটা বেশি সুন্দর। ডিপ পার্পলে বোধহয় আপনাকে খুব মানাত। ”

আয়েশা খানম আলমারি খুলে কিছু একটা বের করছিলেন। তখনই মাশিয়া ঘরে ঢুকল। সে আয়েশা খানমের কাছে এসে দাঁড়ায়। ওর চোখ যায় আয়েশা খানমের শাড়ীর দিকে। সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে শাড়ীগুলো। তারই মধ্যে ডিপ পার্পল কালারের শাড়ীতে চোখ আটকে যায় মাশিয়ার। ও বের করে আনল শাড়ীটা। নেড়েচেড়ে দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে।

” তোমার শ্বশুর আনছিল ঢাকা থাইকা। বারো-তেরো বছর আগে। ” হুট করেই অতীতে ডুব দিলেন আয়েশা খানম। অতীতের স্মৃতি রোমন্থনে মগ্ন হলেন।

” আব্বার পছন্দ ছিল বলতে হবে। আব্বা জানত তার সুন্দরী বউকে কোন কালারে মানাবে। দূর্ভাগা আমি আব্বাকে দেখতে পেলামনা। ”

মাশিয়ার কথায় হাসলেন আয়েশা খানম।

” এই শাড়ীডা পরলে তোমারেও সুন্দর লাগবো। আইজকা শাড়িডা পইরা আমারে দেখাওতো। আমার পোলায়ও খুশি হইব। হেয় শাড়ী পছন্দ করে। ওর জন্যই আমি এহনও শাড়ী পইরা থাকি। আমার বইনেরাও সালোয়ার কামিজ পরে। কিন্তু আমি আরমানের জন্য ঐসব পরবার পারিনা। ওর একটাই কতা ‘ শাড়ীতেই নারী ‘। শাড়ী না পরলে নাকি আমারে ওর আম্মার মত লাগবনা। ”

মাশিয়া আয়েশা খানমের কথা অমান্য করতে পারলনা। ও শাড়ীটা নিয়ে বেরিয়ে আসল ঘর থেকে।

রাতে আরমান সবেমাত্র নিজের ঘরে ঢুকেছে। লোডশেডিংও হয় ঠিক তখনই। অন্ধকার থেকে বাঁচতে ফোনের টর্চ অন করতেই নজর যায় ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়ানো মেয়ের দিকে। অন্ধকারে সে হাড়তে কিছু একটা খুঁজছিল।

আরমান ফোনের আলোয় মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকে এক অপ্সরাকে। ডিপ পার্পল কালারের শাড়ীতে তাকে মোহনীয় লাগছে। ওর তনু-মন সকল বাঁধ ভাঙ্গতে চাইছে। নিষিদ্ধ কিছু ইচ্ছেরা তোলপাড় করে চলেছে ওর শিরা-উপশিরায়।

আলোর সন্ধান পেয়ে মাশিয়া সোজা হয়ে দাঁড়ায়। সামনের মানুষটাকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে তার কাছে এগিয়ে যায়।

” আজকে এখানেই দাঁড়িয়ে থাকার পণ করেছেন নাকি? ”

” উঁহু, আজকে কোন পণ করে নিজেকে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করছেনা মোটেও। আজকেতো সব পণ ভেঙে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। চোখের সামনে, নিজের ঘরে এমন লাস্যময়ী কারও অস্তিত্ব থাকলে কোন সাধু পুরুষই কোনও পণ করতে পারবেনা। তারা ধ্যান ভঙ্গ করে সেই রমনীকেই কামনা করে কায়মনে। যেমন কামনা করছি আমি। ” আরমানের ঘোর লাগা গলা শুনে মাশিয়ার গলা শুকিয়ে গেছে শরীরে হালকা কাঁপন অনুভব করছে।

” শুধু কামনা করেই যান। এমন ব্রহ্মচারী হয়ে থাকলে অপ্সরা কেন কোন পেত্নীও থাকবেনা, যে যতই দেবালয়ে থাকুকনা কেন। ” ততক্ষণে আরমান মাশিয়াকে নিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে। বন্ধ করেছে দরজা। ও মাশিয়ার মনোভাব জানতে পেরেছে। আরমানকে দরজা বন্ধ করতে দেখে মাশিয়া সবিস্ময়ে বলল,

” একি! দরজা বন্ধ করলেন কেন? আম্মা আপনাকে ডেকেছিলেন। কিছু একটা বলবেন। ”

” উহু, এখন কোন কথা শুনতে চাইনা। বউয়ের যখন স্বামীর বহ্মচারী হওয়া নিয়ে আপত্তি, তখনতো এসব ঘোচাতেই হয়। পুরুষের বহ্মচারী হতে নেই কি বল? এতে নিজের ক্ষতি আবার বউয়েরও ক্ষতি। একজন আদর্শ পুরুষ কোন অবস্থাতেই তার বউয়ের ক্ষতি হতে দিতে পারেনা। আর আমিও আদর্শ পুরুষদের দলেই পরি। ” আরমান এক ঝটকায় মাশিয়াকে কোলে তুলে নেয়। আরমানের এমন কাজে লজ্জায় আরমানের বুকেই মুখ লুকায় মাশিয়া। আরমানের শরীরের পুরুষালী গন্ধে ওর দেহ অবসন্ন হয়ে যায়। পেটের ভিতর হাজারো প্রজাপতি ওড়ার অনুভূতি হচ্ছে। পিপাসায় ফেটে যাচ্ছে বুক। এ এমন পিপাসা যেন দুনিয়ার সকল পানিতেও এই তৃষ্ণা মিটবার নয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে আবেশে।

আরমান মাশিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর শরীরে নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দেয়। আরমানকে নিজের এত কাছে পেয়ে মাশিয়া দুই হাতে মুখ ঢাকল। আজ হঠাৎই ওর লজ্জা লাগছে।

আরমান মাশিয়ার মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে দেয়।

” সিংহী এত লজ্জা পাচ্ছে কেন! তাকে এমন লজ্জা পেতে আগে কখনই দেখিনি। ”

” আগে কখনোই অসভ্য মাস্টার সিংহীর শরীরে হুমড়ি খেয়ে পড়েনিতো তাই। ” খিলখিলিয়ে হাসছে মাশিয়া।

” কেন ভালো লাগছেনা? ” মৃদু গলায় জানতে চাইল আরমান।

” হুঁ। ”

মাশিয়ার সম্মতি পেয়েই ওর কোমল ওষ্ঠে ওষ্ঠ রাখল আরমান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মাশিয়া আরমানকে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে মুক্ত করেই হেসে। ওর এমন কাজে আরমান স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মাশিয়ার দিকে। ও বুঝতে পারছেনা মাশিয়া কেন এমন করল।

হাসি থামিয়ে মাশিয়া বলল,

” সুড়সুড়ি লাগছিল, অসভ্য মাস্টার। সুড়সুড়ি না দিয়ে চুমু খেতে পারেননা বুঝি? ”

” তবে রে ফাজিল মেয়ে। ” আরমানের লক্ষ্য মাশিয়ার ঠোঁট। এবারেও মাশিয়া মুখ সরিয়ে নেয়। আবারও আরমান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় মাশিয়ার দিকে।

” আরেকটা কথা, থুথু যেন না লাগে। সুড়সুড়ি এবং থুথুবিহীন চুমু চাই আমি। ”

আরমান এক হাতে কপাল চাপড়ায়।

” আমার কাজে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য তোমার শাস্তি পাওনা হয়েছে। আর সেটা হলো, সুড়সুড়ি এবং থুথুযুক্ত চুমু। ”

মাশিয়াকে আর কোনও কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে শক্ত বাঁধনে বেঁধে নেয় আরমান।

চলবে…