#যেখানে_পথচলা_শুরু |২৫|
সাদিয়া মেহরুজ
হোস্টেলে পিনপতন নীরবতা। মৌনতা ঝাপটে ধরে রয়েছে চারপাশকে। বিল্ডিং এর সামনে কফিন রাখা হয়েছে সবেমাত্র। আস্তে ধীরে কফিনের উপরিভাগ খুলে দেয়া হলো। তৎক্ষনাৎ দৃশ্যমান হলো মেয়েলি মুখোশ্রী। মৃ ত্য দেহটা ফ্যাকাশে হয়ে!কেমন বিবর্ণতা ছেপে রয়েছে চেহারায়। রক্ত জবার ন্যায় লাল ঠোঁট জোড়া সাদা হয়ে গিয়েছে। হাত দু’টো পেটের মাঝ দিকে ভাজ করে রাখা। হাতে শুভ্র রঙের এক গুচ্ছো ফুল। মৃ ত দেহটা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে দেখে আচানক চিৎকার দিয়ে উঠলো ইলি। লম্বা লম্বা পা ফেলে ও ছুটল কফিনের কাছে। মৃ ত দেহটা ঝাপটে ধরে আ র্ত না দ করে উঠল। কাতর গলায় শুধাল,
-” কেনো সু ই সা ই ড করলে উইলি? কেনো করলে এমনটা! আমাকে কি একটু খুলে বলা যেত না? ”
নির্জীব তীরু। পেছন হতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ইলির পাগলামো দেখছে। য ন্ত্র ণা য় বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে তার! এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। কি বলে সান্ত্বনা দেবে সে ইলিকে? আপনজন এর মৃত্যু হলে তাকে ঠিক কি বলে সান্ত্বনা দেয়া যায় তা জানা নেই তার। আঁখিদ্বয় জলে পূর্ণ। উইলির মৃত্যুটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত, অবাস্তব লাগছে। এইতো সপ্তাহখানেক আগে সে যখন ইলির সাথে দেখা করতে এলো তখন উইলিকে কি দারুণ প্রাণোচ্ছল লাগছিল। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যাবধানে ঠিক কি এমন হয়ে গেল যে হুট করে আ ত্ম হ ত্যা করে বসলো। ইলির নিকট এগিয়ে যাওয়ার সময় তীরু হটাৎ ভীড়ের মধ্য হতে চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলো।
-” নিজের ইচ্ছেতে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফিজিক্যালী ইনভলভ হয়ে এখন হুদাই ম রে গেল এই মেয়ে। এর জন্য এখন আমাদের বেশ কয়েকদিন পুলিশি ঝামেলা বয়ে বেড়াতে হবে। বিরক্তিকর! ”
-” এ যুগে উইলির মতো নির্বোধ মেয়ে আর একটাও দেখিনি আমি। পারসোনাল ভিডিও ফাঁস করার হুমকি দিয়েছে তো পুলিশে কমপ্লেন করতো। অযথা ম রে গিয়ে ঝামেলা বাড়িয়ে দিলো। এখনকার এই সময়ে মেয়েদের জন্য আইন কতটা কড়া তা কি জানতো না উইলি? ”
এমন আরো সব উদ্ভট কথাবার্তা শুনে তীরুর মাথা ধরে গেল। একটা মানুষ এখানে মা রা গিয়েছে সেই মানুষটাকে নিয়ে এমন নেতিবাচক কথাবার্তা কি শোভা পায়? এদের কি নূন্যতম চেতনাবোধ অব্দি নেই? আশ্চর্য!
উইলির সু ই সা ই ডে র কারণ তার বয়ফ্রেন্ড। ঠিক এমনটাই জানতে পেরেছে তীরু। মেয়েটা ভুলবশত কি স্বেচ্ছায় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে গভীর সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছে। পরিশেষে তার বয়ফ্রেন্ড উইলির খুব অন্তরঙ্গ ছবি আর ভিডিও পাঠিয়ে ব্লাকমেইল করার চেষ্টা করেছে। টাকা চেয়েছিল ছেলেটা। অত টাকা ছিল না উইলির। দিশেহারা হয়ে, দিকবেদিক শূন্য হয়ে শেষে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাই নেয় ও। তবে এমন বানোয়াট কাহিনি মেনে নিতে পারছেনা ইলি। উইলি যতটাই খারাপ হোক, বাজে হোক অন্তত এভাবে গভীর সম্পর্কে যাবে না! ও তো রিলেশন করে টাইমপাস করতে। উইলি এমনটাই বলে ইলিকে আশ্বস্ত করে আসছিলো। তবে তীরুর মতবাদ এখানে ভিন্ন। বাহিরে চলাফেরা করার সময় সে দেখেছিল উইলিকে, ও ঠিক কতোটা কাছাকাছি যেতে পারে ছেলেদের। রাস্তার মাঝেই অশ্লীলতা তা তীরুর চোখে পড়েছিল। কিন্তু ও তো উইলিকে সর্ব সময় কঠিন হৃদয়ের, শক্ত একটা মেয়ে মনে করতো তবে এমন কি হলো যে উইলিকে সু ই সা ই ডে র পথটাই বেছে নিতে হলো?
ফোন বাজছে। তীরু ভীড় ঠেলে বিরান স্থানে এলো। অরোন কল দিচ্ছে। ছেলেটা এর আগেও বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। ধরার সুযোগ হয়নি তার। এবার না রিসিভ করলেই নয়।
-” সমস্যা কি তোমার তীরু? ” ক্রোধান্বিত কন্ঠস্বর!
তীরু ফাঁকা ঢোক গিললো। অরোনের কণ্ঠে শুনে মনে হচ্ছে ছেলেটাকে সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। নিশ্চয়ই এখন কয়েকটা কড়া কথা শোনাবে তাকে।
-” আমার তো কোনো সমস্যা নেই। আমার কোনো সমস্যা থাকতে যাবে কেন বলুন তো যেখানে আমার কাছে আছে আপনার মতো আদর্শবান, চারিত্রিক গুনাবলি সম্পন্ন, কেয়ারিং একজন স্বামী। ”
অরোন নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। এইযে অসময়ে তীরুর ফাজলামো করার স্বভাবটা! এটা একদমই পছন্দ নয় অরোনের। বলে বলে ও ক্লান্ত! কিন্তু এই ঘাড়ত্যাড়া মেয়েটা পাত্তা দিলে তো। সে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো,
-” ফ্লার্ট করছো? এমন সিরিয়াস মোমেন্টে এসব কথাবার্তা মানায় বলো তো? ”
-” মানায় না? আচ্ছা থাক আর বলবো না। কি বলতে ফোন দিয়েছিলেন বলে ফেলুন। ”
-” ফোন ধরছিলে না কেন? ”
কন্ঠে কাঠিন্যতা, গম্ভীরতা টানল তীরু। বলল,
-” এখানে একজন মা রা গিয়েছে অরোন। আমি নিশ্চয়ই এখানে আপনার ফোন ধরার জন্য বসে নেই, হু? ব্যাস্ত ছিলাম। ইলি ননস্টপ কাঁদছে। ওকে সামলাতে হচ্ছে। আমি ছাড়া ওর আছেই বা কে বলুন তো? এসময় ওর পাশে থাকা রেখে আমি যদি আপনার সাথে ফোনে হাঁসের মতো প্যাকপ্যাক করতে থাকি তাহলে বিষয়টা কেমন বি শ্রী দেখায় না বলুন?”
অরোন শীতল গলায় শুধাল,
-” তুমি সেফলি পৌঁছেছ শুধুমাত্র এই ম্যাসেজটা শুনতে চেয়েছিলাম আমি। ”
ধরা পড়ে আমতা আমতা করলো তীরু। ‘ আচ্ছা ‘ বলে খট করে কল কেটে ব্যাগে পুড়লো। ইলিকে দেখা দরকার। মেয়েটাকে নিয়ে এক্ষুনি বাসায় চলে যাবে। কতক্ষণ ধরে কাদছে! অসুস্থ হয়ে পড়ে যদি।
_
ছুটির দিন ছিলো আজ। তবুও বেশ কিছু কাজ অফিস থেকে মেইল করে পাঠানো হয়েছে। কাজ শেষে ল্যাপটপটা পাশে রেখে দিয়ে শুয়ে পড়লো তীরু। প্রচন্ড পেট ব্যাথা হচ্ছে। ব্যাথার দরুণ চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। ঠিক এই সময়টাতে ও সবথেকে বেশি দূর্বল, বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে! যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী হতে হয়। ঠোঁট কামড়ে ক্রন্দন রুখে নম্র, তুলতুলে বালিশে মুখ ডোবাল ও।
-” এভাবে শুয়ে আছো কেন? ”
মাত্রই রুমে এলো অরোন। বাহির থেকে আসার প্রমাণ দিচ্ছে তার পোশাক, মুখের আদল। বালিশ থেকে মুখ উঠালো তীরু। সঙ্কোচ নিয়ে বলল,
-” পেট ব্যাথা। ”
ঠিক কতটুকু যন্ত্রণা, কাতরতা মিশে ছিলো কন্ঠে তা চট করে অনুভূত করতে পারলো অরোন। পেট ব্যাথা হওয়ার কারণটা অব্দি জিজ্ঞেস করলো না। বুঝে নিলো সবটা। মূলত তীরুর সঙ্কোচ, লজ্জায় ছেয়ে থাকা মুখোশ্রী দেখে বোধগম্য হলো। অরোন পা চালিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। তা দেখে পুনরায় চোখ বুজল তীরু। প্রায় এক ঘন্টা পর পেটের ওপর গরম অনুভূত হওয়ায় তীরু চট করে চোখে মেলে তাকাল। হট ব্যাগ ধরে রয়েছে অরোন। সে প্রশ্নাত্নক দৃষ্টি ফেলতেই বলে উঠলো,
-” ইউটিউবে দেখলাম এসময় গরম পানির তাপ নিলে ব্যাথা খানিকটা কমে। ”
হাসল তীরু! হাত বাড়িয়ে অরোনের গাল টিপে দিলো ও। অরোন একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বলল,
-” ধরো। প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে। ডার্ক চকলেটও এনেছি। ইউটিউবে এটাও দেখলাম ডার্ক চকলেট খেলে নাকি ভালো লাগে। ”
অরোনের কোলে মাথা রাখল তীরু। অন্তঃকরণে নিদারুণ প্রশান্তির পদচারণ। এইযে অরোনের এই ছোটখাটো যত্ন, ভালোবাসা। এসব এতোটা শান্তি দেয় তাকে। গুটিশুটি মে রে অরোনে কাছাকাছি গিয়ে তীরু আপনমনে, নিম্ন কন্ঠে শুধাল,
-” আমার জীবনে এতোটা সুখ দেয়ার জন্য আমি আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ আল্লাহ। আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই আপনার কাছে। ”
চলবে~
#যেখানে_পথচলা_শুরু |২৬|
সাদিয়া মেহরুজ
প্রিয় ইলি আপু,
যখন তুমি চিঠিটা পড়ছো ততক্ষণে হয়তো আমি পৃথিবী হতে বিদায় নিয়ে নিয়েছি। আপু, এভাবে হুট করে তোমায় কোনো কিছু না জানিয়ে আ ত্ন হ ত্যা করার জন্য দুঃখিত। আমাকে তুমি মাফ করে দিও। মৃ ত মানুষের প্রতি রাগ, ক্ষোভ পুষে রাখতে নেই। আমি অনেকবার, অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম তোমায় পুরো ঘটনাটা জানানোর। কিন্তু পারিনি! বারবার ব্যার্থ হয়েছি। ক্যানিয়েল, আমার প্রেমিক। যাকে আমি পাগলের মতো ভালোবাসতাম! সেই আমার মৃ ত্যু র একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়াবে আমি তা কখনোই কল্পনা করিনি। আমার মতো প্লে গার্ল কখনো কারো প্রেমে পড়বে এটা আশা করিনি আমি কখনোই। কিন্তু ভুলবশত, মনের অজান্তে কি করে যেন সব এলোমেলো হয়ে যায়। ক্যানিয়েল আমায় ভালোবাসেনি। ও আমাকে জাস্ট ইউজ করেছে। যা আমি অন্যদের সাথে করতাম। কথায় আছে না? প্রকৃতি হিসাব চুকাতে ওস্তাদ! ভুল নয়। ক্যানিয়েল এর সাথে রিলেশনে থাকাকালীন ও আমায় জোর করে ফিজিক্যালী ইনভলভ হতে। আমিও যাচাই বাছাই না করে, কিছু না ভেবে ওর কথায় রাজি হয়ে যাই।ক্যানিয়েল আমাদের ব্যাক্তিগত মূর্হতের ভিডিও করেছিল আমার অজান্তে। ভিডিও করার পর ও আমায় ব্লাকমেইল করা শুরু করে। টাকা চাচ্ছিলো। আমি ওর এরূপ রূপ দেখে ভেঙে পড়েছিলাম আপু, প্রচন্ড আ ঘা ত পেয়েছিলাম। টাকা না দিয়ে চুপচাপ ছিলাম।এর ফাঁকে ও বাবাকে আমাদের সেই ভিডিও পাঠায়। বাবা তা দেখে মায়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি করে। মা আমায় ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় বকা ঝকা করে। লজ্জায়, অপমানে, ক্যানিয়েলের ধোঁকা এর স্বীকার হয়ে আমি হতবুদ্ধি, অনুভূতিশূন্য হয়ে পড়েছি। আমার পক্ষে এই পৃথিবীতে আর একটুও থাকা সম্ভব নয়। আমার জীবন ন র কে পরিণত হয়েছে আপু! আমি শান্তি চাই। সবার আড়ালে চলে যেতে চাই যা একমাত্র মৃ ত্যু র মাধ্যমেই সম্ভব। এই চিঠি আমি তোমার উদ্দেশ্যে লিখে যাচ্ছি কারণ তুমি ব্যাতীত আমার আপন কেও নেই। অতীতে যা যা করেছি আমি তার জন্য মন থেকে ক্ষমাপ্রার্থী। মাফ করো আমায়। সুখে থেকো। যিশুর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন পৃথিবীর সর্ব সুখ তোমার পায়ে এনে দেন।
ইতি,
তোমায় সারাজীবন কষ্ট দেয়া ছোটবোন উইলি।
শ্বাস – প্রশ্বাস ঘন হচ্ছে! হাঁপানি রোগীর মতো টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে ইলি। হাত – পা ক্রমাগত কাঁপছে। চোখ দু’টো দিয়ে অনবরত গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল এর ধারা। দমকা বাতাস এলো। উড়িয়ে নিয়ে গেলো ইলির হাতে থাকা খসখসে সাদা কাগজটা। চেতনা ফিরে পেল ইলি। উন্মাদের মতো ছুটলো সম্মুখে। ছোট্ট ইটের টুকরো পায়ে আঁটকে মুখ থুবড়ে পড়লো তৎক্ষণাৎ। রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। ধ্যান দিলোনা ও। উইলির শেষ সৃতিটা রক্ষা করতে সে ছুটে গেল প্রাণপণে। শেষ রক্ষা হলো না। কাগজটা হাওয়া এসে নিয়ে গেছে বহুদূরে। দৈত্যের মতো লম্বা পাহাড়ের ওপর পাশে। এতোটা জোড় ছিলো দমকা হাওয়ার। টিভিতে দেখিয়েছিল, আজ প্যারিসে ভারী ঝড় হবে। ইলি ভূমিতে বসে পড়ল। চেঁচাল! দু’হাত দিয়ে পাগলের মতো নিজের চুল টেনে ধরে বিড়বিড় করলো,
-” সব তোর দোষ ইলি। তোর দোষ! কাওকে আগলে রাখতে পারিস না, কাওকে না। ”
ইলির অবস্থা বেগতিক।উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাগণ এর মাঝে দু’জন ছুটল তীরুকে ডাকতে। তীরু এলে ইলি তার বুকে আছড়ে পড়ে আর্তনাদ জুড়লো,
-” আমি কাওকে আগলে রাখতে পারিনা টীরু। ওর দেয়া শেষ চিঠিটাও হারিয়ে ফেললাম। এতো স্টুপিড আমি! ”
তীরু সান্ত্বনা দিলো, ” থামো ইলি। এতে তোমার কোনো দোষ নেই। হাওয়ার তেজ বেশি ছিলো। ঝড় হবে। এখন উঠো তো। বাড়িতে চলো। তোমার গায়ে তো প্রচন্ড ঝড়। ”
উইলির মৃ ত্যু র প্রায় একমাস পর আজ পুলিশ কর্মকর্তারা একটা চিঠি খুঁজে পেয়েছে। সেই চিঠিটা উইলির ব্যাক্তিগত ডায়েরীতে রাখা ছিলো। একমাস বাদে পুনরায় কেস ঘাটতে গিয়ে চিঠিটার সন্ধান মেলে। পাশাপাশি ক্যানিয়েলকেও গ্রেফতার করা হয়েছে আজ দুপুরবেলা। বিধস্ত ইলিকে তীরু দু’হাতে আগলে নিলো। ফের হাওয়া বয়ে গেল। তীরু হাঁটতে হাঁটতে অন্যমনস্ক হলো। মেঘলা অম্বরে দৃষ্টিপাত ফেলে ম্লান কণ্ঠে বলল,
-” এভাবে চলে গেলে কেন উইলি? একবারও কি খুলে বলা যেত না? বেঁচে থেকে শান্তি পেলে না আর এখন সু ই সা ই ড করেও সেই আকাঙ্খিত শান্তি তো আর পাবে না। ”
_
-” তুই কি এই ইদেও আসবি না মা? ” তানহার মলিন কন্ঠ।
তীরু হাসঁফাসঁ করে। মুখ ফুটে বলে দিতে ইচ্ছে করে তার সবটা! কিন্তু বললে কি আর সারপ্রাইজ থাকবে নাকি? নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখে ও। বলে,
-” অফিসের কাজের চাপ কতোটা জানোই তো মা। তার ওপর এতো লম্বা ছুটি নেয়াটা রিস্কি। চাকরি চলে গেলে সমস্যায় পড়বো। এখানে তো আর ইদ উপলক্ষে ছুটিও দেয়না। এখানে সবাই বলতে গেলে খ্রীষ্টান। ”
বেদনা, কাতরতা লহমায় ছেপে গেলো তানহার মুখোশ্রী জুড়ে। মায়ের এহেন চাহনি তীরুর অন্তরালে আঘাত হানলো। কিয়ৎক্ষণ পর তড়িঘড়ি করে কল কে টে দিলেন তিনি। কান্না পাচ্ছে তার! তীরুর সামনে কাঁদলে মেয়েটা কষ্ট পাবে না?
হাত থেকে ফোন রাখল তীরু। তৎক্ষণাৎ খটখট শব্দ শ্রবণ করলো। বাম পাশে দৃষ্টি ফেলতেই হতবিহ্বল ও! অরোন ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে। স্বাভাবিক রূপে নয়। অরোনের গায়ে কাপড় বলতে এ মূর্হতে আছে কেবল কোমড়ে জড়ানো টাওয়াল। তীরুর গা শিরশিরিয়ে উঠল! চটজলদি মাথা নুইয়ে বিছানার চাদর খুঁটতে লাগল। কাবার্ড থেকে নিজের পোশাক নিতে নিতে তীরুকে খেয়াল করলো অরোন। মেয়েটাকে স্বাভাবিক লাগছে না! হয়েছেটা কি ওর? তীরুর সন্নিকটে এগিয়ে অরোন চিন্তিত কন্ঠে শুধাল,
-” কি হয়েছে তোমার? ”
মাথা তুলে তাকাল তীরু। তার বেহায়া চোখ দু’টো অরোনের চেহারাতে নয় বুকে গিয়ে আটকালো। শুষ্ক ঢোক গিলে প্রাণপণ চেষ্টায় তীরু কোনোরকমে বলল,
-” এভাবে তো কখনো টাওয়াল পড়ে বের হননি। আজ কেন? ”
-” ড্রেস ফেলে গিয়েছিলাম। তুমি মা’র সাথে কথা বলছিলে তাই ডিস্টার্ব করতে ইচ্ছে হলো না। মা’র সাথে কথা বলা শেষ? ”
তীরুর ছোট্ট উত্তর ‘ হুম। ‘
ফিরে যেতে নিয়ে হটাৎ পিছন ফিরে তাকালো অরোন। আচানক খেয়ালে এলো তার তীরুর এরূপ আচরণের। ঠোঁটের কোণে ভেসে উঠলো তার দুষ্টু হাসি! পুনরায় পূর্বের স্থানে ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-” বাই এনি চান্স, তুমি কি আমায় এ অবস্থায় দেখে লজ্জা পাচ্ছো? কিন্তু এর থেকে ডিপলি তো আমায় তুমি দেখে..”
বাকিটুকু বলতে দিলো না তীরু। অরোনের মুখ চেপে ধরে চেঁচাল,
-” লজ্জা টজ্জা নেই নাকি? যান জামাকাপড় পড়ে আসুন। দরজা খোলা কেও এসে পড়বে। ”
-” চলো দু’জন একসাথেই যাই। তোমারও শাওয়ার নিতে হবে। ”
টু শব্দ করার সুযোগ পেলোনা মেয়েটা। অরোন তাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে ইতিমধ্যে।
চলবে~