#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪১
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
নিষ্পলক দৃষ্টিতে আহনাফ তাকিয়ে রয়েছে অর্ষার দিকে। অর্ষার দৃষ্টি নত। চোখ ছলছল করছে। বুকের ভেতর চাপা কষ্ট। সে তখনো ক্যাথি এবং অ্যানির মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে আহনাফ বলল,’ওহ।’
অর্ষা না তাকিয়েই বলল,’আপনার মনে ছিল না?’
‘খেয়াল ছিল না।’
‘আচ্ছা।’
‘তোমার কি এজন্যই মন খারাপ?’
অর্ষা মৃদু হেসে বলে,’কই না তো! আমি ঠিক আছি।’
অর্ষা আর কথা না বাড়িয়ে স্মিথকে বলল বিড়াল দুটোকে যেন ঘরে নিয়ে যায়। এরপর সে আহনাফকেও ঘুমাতে যেতে বলে। দু’জন দু’দিকে ঘুরে শুয়ে রয়েছে। আহনাফ ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো। অর্ষার চোখে ঘুম নেই। সে কাঁদছে নিরবে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। যাতে করে আহনাফ টের না পায়। সকালে অর্ষার ঘুম ভাঙার আগেই আহনাফ অফিসে চলে যায়। সকালে ডাকেওনি।
সকাল ১১টার দিকে অর্ষা ঘুম থেকে ওঠে। চোখ-মুখ ফুলে গেছে। সে ফ্রেশ হয়ে নেয়। পেটে ক্ষুধা আছে, কিন্তু খাওয়ার ইচ্ছে নেই। খাবার সামনে নিয়ে সে নিরবে বসে রয়েছে। মানতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে যে, খুব অল্প সময়ই সে আহনাফের সাথে রয়েছে। তারপর তাকে চলে যেতে হবে। অনেক দূরে। যেখান থেকে চাইলেও হুট করে চলে আসা যাবে না। আহনাফকে একবার ছুঁয়ে দেখা যাবে না। কী অদ্ভূত এক কষ্টের সীমানায় তাকে পাড়ি জমাতে হবে।
অর্ষার ফোনটি তখন বেজে ওঠে। সে খাবার রেখে রুমে যায়। আহনাফ কল করেছে। ফোন রিসিভ করে বলল,’হ্যালো।’
‘ঘুম থেকে উঠেছ?’
‘হুম।’
‘রেডি হয়ে নাও।’
‘কেন?’
‘ঘুরতে যাব।’
অর্ষা ‘না’ বলল না। যেটুকু সময় আহনাফের সাথে সে কাটিয়ে যেতে পারবে, ততটুকুই সে স্মৃতি হিসেবে সাথে করে নিয়ে যেতে পারবে।
ফোন রেখে সে হালকা বেগুনি রঙের একটা জামদানি শাড়ি পরে। মুখে হালকা মেকাপ আর হাতে ম্যাচিং করে চুড়ি পরে। রেডি হতে হতে আহনাফও বাসায় পৌঁছে যায়। আহনাফকে দেখলেই অর্ষার বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে। কষ্ট হয় খুব। একটুও ইচ্ছে করে না মানুষটাকে ছেড়ে যেতে।
‘হয়ে গেছে তোমার?’
আহনাফের প্রশ্নে মাথা দুলিয়ে সায় দিল অর্ষা। দুজনে একত্রে বাড়ি থেকে বের হয়। গাড়িতে বসে অর্ষা জিজ্ঞেস করে,’আজকে অফিসে যাননি?’
‘গিয়েছিলাম। ছুটি নিয়ে এসেছি।’
‘কেন?’
‘তোমার জন্য। চলেই তো যাবে। তাই ভাবলাম এই সময়টুকু তোমার সাথেই থাকি। সুইজারল্যান্ডের কোথাও ঘুরতে যেতে চাও?’
অর্ষা তেরছাভাবে হেসে বলল,’না।’
আহনাফ এরপরও অনেক কথা বললেও বা বলার চেষ্টা করলেও অর্ষা তেমন কোনো রেসপন্স করেনি। প্রথমে দুজন একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে হেলেনসহ আরো কিছু বন্ধুরা আসে আহনাফের। অর্ষা বাংলাদেশে ফিরে যাবে শুনে হেলেন খুবই আপসেট হয়।
বিষন্ন মন নিয়ে বলে,’তোমায় মিস করব অশা।’
অর্ষা স্মিত হাসে। সে এই কথাটি অন্য কারো মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিল। বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে দুজনে জেনেভা শহরে যায় ফুপির বাসায়। আজ রাতটা সেখানেই থাকবে। হুট করে ঐ বাড়িতে যাওয়ায় সকলেই বেশ অবাক হয়।
ফুপি মেকি রাগ দেখিয়ে আহনাফকে বলে,’তোরা যে আসবি আগে বলিসনি কেন?’
আহনাফ দুষ্টুমি করে বলল,’তাহলে কি বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে অন্য কোথাও চলে যেতে?’
ফুপি আহনাফের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে,’শুধু ফাইজলামি! আগে বলে রাখলে ভালোমন্দ রান্না করে রাখতাম।’
‘তো এখন রান্না করো। সমস্যা কোথায়?’
‘কয় দিন থাকবি তো?’
‘না। সকালেই চলে যাব। হঠাৎ করে আসলাম দেখা করতে কারণ অর্ষা চলে যাবে।’
‘চলে যাবে মানে? কোথায়?’ বিস্মিতকণ্ঠে জানতে চাইলেন ফুপি।
উত্তরে অর্ষা বলল,’বাংলাদেশে ফিরে যাব ফুপি। ভিসার মেয়াদ শেষ।’
‘তাহলে আবার কবে আসবে?’
প্রশ্ন শুনে অর্ষা আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ কিছুই বলল না। অর্ষার ব্যথিত মুখটি লক্ষ্য করে ফুপি এই বিষয়ে আর কোনো কথা না বলে বললেন,’তোমরা বসো। আমি কিছু বানিয়ে আনছি।’
আহনাফ পিছু ডেকে জিজ্ঞেস করল,’নিহিত আর নেহা কোথায়?’
‘ক্লাসে। চলে আসবে একটু পর।’
আহনাফ টিভি ছেড়ে দেয় দেখার জন্য। অর্ষা চুপচাপ টিভির দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
‘তুমি হঠাৎ করে এমন চুপচাপ হয়ে গেছ কেন?’
অর্ষা আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল,’কোথায়?’
‘তোমার পরিবর্তন কি তুমি দেখছ না? অবশ্য এখন তোমাকে অনেক বেশি ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে।’
অর্ষা কিছু বলল না। আহনাফ বলল,’এভাবে মন খারাপ করে থাকার মানে কী?’
‘মন খারাপ না।’
একটুখানি থেমে জিজ্ঞেস করল,’আচ্ছা আমি চলে গেলে আমায় মিস করবেন না?’
আহনাফ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল,’করব।’
ফুপি তখন খাবার নিয়ে আসে। পাশে বসে যাওয়ার প্রসঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তবে ফিরে আসার বিষয়ে ওদেরকে কোনো প্রশ্ন করে না। এই সব বিষয় না হয় ভাই এবং ভাবির সাথে ফোনে আলোচনা করা যাবে।
বিশ্রাম করার জন্য আহনাফ আর অর্ষা যখন রুমে আসে তখন কিছুটা সময় অর্ষা চুপচাপ ভাবে। তার এখানে ভালো লাগছে না। সে বারান্দায় কিছুক্ষণ পায়চারি করে রুমে ফিরে আসে। আহনাফ উপুর হয়ে শুয়ে আছে।
দ্বিধা কাটিয়ে অর্ষা ডাকল,’শুনছেন?’
আহনাফ মাথা তুলে বলল,’বলো।’
‘চলেন বাড়ি ফিরে যাই।’
আহনাফ এবার উঠে বসে। ভ্রুঁ কিঞ্চিৎ বাঁকা করে জিজ্ঞেস করে,’কেন?’
‘ভালো লাগছে না এখানে।’
‘কাল সকালেই তো বাড়ি ফিরে যাব।’
‘আমার একটুও ভালো লাগছে না। মন টিকছে না।’
আহনাফ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবল। এরপর বলল,’ঠিক আছে। চলো।’
এখনই যাওয়ার কথা শুনে ফুপি ভীষণ রেগে গেলেন। কিছুতেই এখন ওদেরকে যেতে দেবেন না। আহনাফ বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বলল,অনেক গোছগাছ বাকি আছে। তাই না গেলেই নয়! প্রথম দফায় ফুপি একদম রাজি না হলেও পরবর্তীতে রাজি হয়ে যান। নিহিত এবং নেহার সাথে দেখা না করেই ওরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। কোনো কিছুতেই অর্ষার অস্থিরতা কমছে না।
.
.
রাতে গ্রুপ কলে জয়েন হয় অর্ষা। সে বাংলাদেশে ফিরে আসবে বলে সবাই ভীষণ খুশি। আশিক বারবার করে মনে করিয়ে দেয়,
‘লামিয়া কিন্তু আমার জন্য কম্বল আনেনি। এটলিস্ট তুই ভুলে যাস না।’
রেশমি বলে,’তুই চলে আসবি, ভালোই হবে। সবাই মিলে আবার এক সাথে হব। আমার যার সাথে বিয়ের কথা চলছে সবাই মিলে যাব তার সাথে দেখা করতে।’
‘আমার জন্য কিন্তু চকোলেট আনবি মনে করে।’ বলল দিদার।
অর্ষা সবার কথা শোনে। বন্ধুদের কথা ভেবে তারও খুশি লাগে। তবে যখনই আহনাফের কথা মনে পড়ে তখনই মন বিষাদে ছেঁয়ে যায়।
জুঁই জিজ্ঞেস করে,’ভাইয়া সাথে আসবে না?’
অর্ষা ছোটো করে বলল,’জানিনা।’
তখন আহিল বলল,’মনে হয় আসবে না। আসলে তো আমাদের জানাতো।’
‘ওহ।’
সব সময়ের মতো আজ বন্ধুদের আড্ডাতে খুব একটা মনোযোগ দিতে পারল না অর্ষা। তবে বাকিরা বিভিন্ন রকম প্ল্যানিং করছিল অর্ষা দেশে আসলে কোথায় কোথায় ঘুরবে, কত আড্ডা দেবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিনদিনের মধ্যে একদিন কেটে গেছে। বাকি দু’দিনে সব গোছগাছ শেষ। আহনাফের তেমন কোনো ভাব পরিলক্ষিত হয়নি অর্ষার কাছে। সে কি খুব খুশি হবে চলে যাওয়ায়? অর্ষার কত না বলা কথা ছিল। কত কিছু বলতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি। এতগুলো মাসেও যা বলা হয়নি, একদিনের ব্যবধানে সেসব কথা বলবেই বা কীভাবে? সব কথা কি মুখে বলা আবশ্যক? চোখের কি ভাষা নেই? নাকি মানুষটির চোখের ভাষা পড়ার ক্ষমতা নেই। হয়তো নেই! একজন মানুষ কী করেই বা অন্য মানুষের মনের খবর জানবে? এটা তো কখনো সম্ভব নয়। সেদিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে আহনাফ তার স্থানে সঠিক।
ফ্লাইটের আগের দিন আহনাফ অর্ষার জন্য অনেক কিছু এনেছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে সে সত্যি সত্যিই আশিকের জন্য একটা কম্বল কিনে দিয়েছে। অর্ষা তখন হেসে ফেলে।
আহনাফ বলে,’থ্যাঙ্কস গড! অবশেষে তোমার হাসি তো দেখতে পারলাম।’
‘আমার হাসি না দেখলেই বা কী? আপনি তো খুশি?’
‘আমার খুশি হওয়ার কী হলো এখানে?’
‘আমি আর আপনার সাথে থাকব না। এতে তো আপনার খুশি হওয়ারই কথা। আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন।’
আহনাফ চুপ হয়ে যায়। অর্ষা বলে,’যাই হোক। যে ক’টা মাস এখানে ছিলাম আপনাকে হয়তো খুব জ্বালিয়েছি। কষ্ট দিয়েছি। এজন্য স্যরি। মাফ করে দিয়েন।’
‘এসব ফর্মালিটি কেন দেখাচ্ছ?’
‘আমাদের মধ্যে থাকা সম্পর্কটাও তো ফর্মালিটির মধ্যেই পড়ে তাই না? একটা সুযোগ কি আপনি দিয়েছিলেন সম্পর্কটিকে? একটাবারও কি দিয়েছিলেন স্ত্রীর অধিকার? মন থেকে কি আপনি আমায় মেনে নিতে পেরেছেন? জানি, সবগুলো প্রশ্নের উত্তরই নেগেটিভ। তাহলে কি সম্পর্কটা ফর্মালিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়?’
‘তুমি নিজে থেকেও কখনো আমায় এসব বলোনি।’
‘আমার বলে দিতে হবে? আমি কেন আপনাকে ফোর্স করতে যাব? যাই হোক, রাতের ফ্লাইটে তো চলেই যাচ্ছি। অতীত টেনে এনে অযথা এটুকু সময়ে ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না।’
‘তুমি রেগে আছো নাকি এখনো তোমার মন খারাপ?’
‘কোনোটাই না।’
অর্ষা অপেক্ষা করে না কোনো রকম কথা বলার জন্য। শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে তার কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, আগে অর্ষা দেশে ফিরুক। পরে কিছু একটা করা যাবে। অর্ষার কোনো কিছুতে আগ্রহ নেই আর। সে বুঝে গেছে তার প্রতি আহনাফের এখনো যা আছে তা শুধু দয়া,সফ্ট কর্ণার আর সিমপ্যাথি। ভালোবাসা নেই নিশ্চয়ই।
অর্ষা রেডি হয়ে বসে থাকে। প্রচণ্ড কান্না পেলেও সে কাঁদে না। লিলিয়া পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। স্মিথ জড়িয়ে ধরে পাশে বসে থাকে। মন খারাপ করে বলে,’তুমি জলদি ফিরে এসো আবার। আমি অপেক্ষায় থাকব তোমার জন্য।’
অর্ষা প্রত্যুত্তর না করে স্মিথের কপালে চুমু খায়। আহনাফ রেডি হয়ে আসলে সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে ওরা বাড়ি থেকে বের হয়। যাওয়ার পূর্বে বুকটা হাহাকার করে ওঠে। ক্যাথি আর অ্যানি কেমন কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে। স্মিথের সাহায্যে অর্ষা বিড়াল দুটোকে কোলে তুলে নেয়। হাত-পা কাঁপছে তার ভয়ে। তবুও সে কোলে নিয়েছে। কান্নারা গলায় দলা পাকিয়ে আছে। সে বিড়াল দুটোর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘তোদেরকে অনেক মিস করব। তোরা আমায় ভুলে যাবি নিশ্চয়ই?’
নিরীহ প্রাণী দুটো চুপ করে থাকে। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ওদেরও বুঝি আজ মন খারাপ। যাওয়ার পূর্বে অর্ষা হানির সাথেও দেখা করে যায়। সবাই তার ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবে জানিয়েছে। গাড়িতে বসে আহনাফ অবশ্য ফিরে আসার অপেক্ষা করবে এই কথা বলেনি; সে বলেছে,’আমি বাংলাদেশে খুব তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করব।’
অর্ষা কিছুই বলল না। এয়ারপোর্টে পৌঁছেও থম মেরে বসে থাকে। দুজন চুপচাপ পাশাপাশি বসে রয়েছে। কত না বলা কথা বলার ছিল। তবে ইচ্ছে নেই। আর কিছু বলেই বা কী হবে! এনাউন্সমেন্ট শুনে অর্ষা উঠে দাঁড়ায়।
লাগেজ হাতে নিয়ে মলিনকণ্ঠে বলে,’আসছি। ভালো থাকবেন।’
আহনাফও উঠে দাঁড়িয়েছে। ইমিগ্রেশন পার হলেই মেয়েটা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে। কত দূরত্ব তৈরি হবে মাঝখানে! ‘আসছি’ বলেও অর্ষা দাঁড়িয়ে আছে। কেন দাঁড়িয়ে আছে এটা সে জানে না। হয়তো প্রতিক্ষিত কোনো কথা শোনার জন্য। আহনাফ কিছু বলল না। শুধু অর্ষাকে বিস্মিত করে দিল। শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে অর্ষাকে। এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা কান্না আর চেপে রাখতে পারল না অর্ষা। মোম যেমন আগুনের তাপে গলে যায়, সেও তেমনই আহনাফের সংস্পর্শে এসে গলে গিয়েছে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। লাগেজ ছেড়ে আহনাফকে সেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
চলবে…
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_৪২
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে পৌঁছে অর্ষা জহির চৌধুরী আর আহিলকে দেখতে পায়। বাবার স্নেহের ছায়ায় অর্ষাকে তিনি জড়িয়ে ধরলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো মা?’
মা ডাক শুনে সকল ক্লান্তিবোধ দূর হয়ে যায় অর্ষার। মৃদু হেসে বলে,’না, বাবা।’
আহিল অর্ষার হাত থেকে লাগেজ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,’ভালো আছিস?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো। তুই?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্।’
বাইরে গিয়ে তিনজনে গাড়িতে উঠে বসে। অর্ষা আর জহির চৌধুরী পেছনের সিটে বসেছেন। গাড়ি ড্রাইভ করছে আহিল। বুকের ভেতর অসহ্য রকম যন্ত্রণা হচ্ছে অর্ষার। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আহনাফকে ছেড়ে এসে সে ভালো নেই। কতটা কষ্ট তার হচ্ছে, সেটা সে কাউকে বোঝাতে পারবে না। গাড়ির সিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে। আহনাফের জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ভালোবাসা, ভরসা নাকি সিমপ্যাথি কী ছিল ঐ জড়িয়ে ধরায় অর্ষা সেটা জানে না। তবে হ্যাঁ, সে ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছিল। মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে সে চোখের পানিটুকু লুকিয়ে মুছে ফেলে।
বাড়িতে পৌঁছানো মাত্র আমেনা বেগম শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। অর্ষার মনে হচ্ছে, সে শ্বশুরবাড়িতে নয় বরঞ্চ নিজের বাবার বাড়িতে এসেছে। এত আদর, আহ্লাদ শ্বশুরবাড়িতে পাওয়া মানে সেই মেয়ে সত্যিই ভাগ্যবতী।
রেণু রান্নাঘরে গিয়ে দ্রুত শরবত বানিয়ে আনে। শরবত খেয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় অর্ষা। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আমেনা বেগম ভাতের প্লেট নিয়ে বসে আছেন।
অর্ষাকে দেখে তিনি বললেন,’এসো। বসো এখানে।’
অর্ষা ক্লান্তস্বরে বলল,’খাব না মা। ভালো লাগছে না।’
‘এসব কিছু শুনছি না। বসো এসে।’
অগত্যা অর্ষাকে বসতে হলো। তিনি জোর করে অর্ষাকে খাইয়ে দিয়ে একটু ঘুমুতে বললেন। অর্ষার কোনো কিছুই ভালো লাগছিল না। ঘুমও আসছিল না। আহনাফ একটা ফোনও করল না! এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল সে? বিছানায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আমেনা বেগম গম্ভীর হয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। আহনাফ জিজ্ঞেস করে,’তুমি আমার ওপর কেন রেগে আছো?’
‘অর্ষাকে একা কেন পাঠালি? তুই সাথে এলি না কেন?’
‘অফিস থেকে ছুটি নেই এখন। কিছুদিন পর তো রোজাই। একেবারে ঈদের সময় আসব।’
‘তোর আসা লাগবে না। তুই একা সুইজারল্যান্ডেই থাক।’
‘তুমি শুধু শুধু রাগ করছ।’
‘আমি তো শুধু শুধুই রাগ করি সবসময়। তুই যে আসলে কেমন আমি মা হয়েও মনে হয় তোকে ঠিকমতো বুঝতে পারলাম না।’
‘আচ্ছা বাদ দাও। অর্ষার পৌঁছাতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো?’
‘আমাকে কেন এসব জিজ্ঞেস করছিস? অর্ষাকে ফোন করে তোর এসব খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল না?’
আহনাফ ইতস্তত করে বলল,’একজনের থেকে শুনলেই তো হলো!’
‘না, হলো না। আমি তো আর ওর সাথে আসিনি। ওর কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা সেটা ও-ই বলতে পারবে।’
‘আচ্ছা আমি পরে ওর সাথে কথা বলে নেব। কী করছে এখন?’
‘ঘুমাতে তো বলে এলাম। ঘুমাচ্ছে হয়তো।’
‘ঠিক আছে। ওর খেয়াল রেখো। রাখছি এখন।’
‘শোন।’
‘বলো।’
‘তুইও নিজের খেয়াল রাখিস।’
আহনাফ স্মিত হেসে বলল,’রাখব।’
ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস নেয় আহনাফ। কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে। খুব একা ফিল হচ্ছে নিজেকে। অর্ষার বোকাসোকা কথাবার্তা, ভয়, লজ্জা, হাসি এসব খুব মিস করছে অজান্তেই। মায়ায় পড়ে গেছে হয়তো। মায়া শব্দটিও ভয়ানক হয়। প্রবলভাবে একবার মায়ায় জড়িয়ে পড়লে, সেই মায়া,কাটিয়ে উঠাও দুষ্কর।
.
.
গ্যাঞ্জাম পার্টি পরের দিন সকালে এসে আহিলদের বাড়িতে উপস্থিত হলো। অর্ষা তখনো ঘুমে। সারা রাত আহনাফের একটা টেক্সট, কলের জন্য অপেক্ষা করে রাত পার করেছে। রাত জাগাটাও সার্থক হতো যদি আহনাফের থেকে একটা টেক্সট হলেও পেত! ভুলে গেছে মানুষটা তাকে এত দ্রুত!
দরজায় জোরে জোরে করাঘাতের শব্দে অর্ষার কাঁচা ঘুমটা ভেঙে যায়। এত জোরে জোরে করাঘাত হচ্ছে, মনে হচ্ছে দরজার ওপর দিয়ে সুনামি বয়ে যাচ্ছে। সে হেলতে-দুলতে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলে হুড়মুড় করে ভেতরে প্রবেশ করে।
রেশমি গিয়ে বিছানায় শোয়। জুঁই আর লামিয়া বিছানার এক সাইডে বসে। আশিক আর দিদার গেল আহিলের ঘুম ভাঙাতে।
লামিয়া কোলের ওপর বালিশ রেখে বলল,’তুইও যে বাংলাদেশে এসে পড়বি আমায় আগে বলিসনি কেন?’
‘আগে বললে কী হতো?’
‘এভাবে কথা বলছিস কেন? কী হয়েছে?’
‘কিছু না। তোরা বোস। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।’
অর্ষা ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে আশিক আর দিদারও রুমে চলে এসেছে। রেণু এসে নাস্তা দিয়ে গেছে। সবাই কাড়াকাড়ি করে খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত ছিল।
রেশমি অর্ষাকে দেখে বলল,’এদিকে আয়। আমাদের সাথে খা।’
‘তোরাই খা। আমি পরে খাব।’
‘হয়েছেটা কী? মন খারাপ কেন?’ খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল জুঁই।
অর্ষা চেয়ার টেনে বসল। মুখ গোমড়া করে বলল,’তোরা সবাই খুব স্বার্থপর জানিস? বাংলাদেশে আসার পর উনি একটা খবরও নিলেন না। কোনো ম্যাসেজ কিংবা কলও করেননি। আর তোরাও ঠিক সেরকম। আমি এসেছি গতকাল। আর তোরা এলি আজকে!’
‘এজন্য আমরা স্যরি বেবি।’ জুঁইয়ের সাথে সবাই বলল,’হ্যাঁ, স্যরি। স্যরি।’
আহিলও ফ্রেশ হয়ে এসে ওদের সাথে যোগ দেয়। লামিয়া ক্ষিপ্র কণ্ঠে আহিলের উদ্দেশ্যে বলে,’তোর ভাই এত কঞ্জুস আর স্বার্থপর কেন রে? ব্যাটা বদ!’
‘ওয়ে! মুখ সামলে কথা বল। আমার ভাই তোর কী ক্ষতি করেছে?’
‘আমার ক্ষতি করতে যাবে কেন? তোর ভাই একটা অকর্মার ঢেকি। আনরোমান্টিকের বস্তা। বউয়ের প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্যও পালন করতে পারে না হুহ!’
অর্ষা বিরক্ত হয়ে ‘চ’ সূচক শব্দ করে বলল,’বাদ দে তো এসব টপিক।’
‘হ্যাঁ ভাই, কাজের কথায় আসি এবার। দেখ অর্ষা লামিয়া খা’টা’ই’শ মহিলাকে এতবার বলার পরও আমার জন্য কম্বল আনেনি। তুই নিশ্চয়ই ওর মতো করিসনি বনু বল? আমার জন্য কম্বল এনেছিস তো?’ বলল আশিক।
অর্ষা হেসে বলে,’এনেছি। উনি কিনে দিয়েছে।’
‘কে? ভাইয়া?’
‘হুম।’
‘ওয়াও! দুলাইভাই দি গ্রেট। লামিয়ার বাচ্চা অযথাই ভাইয়ার নামে এতগুলো কথা বললি!’
লামিয়া ধমক দিয়ে বলল,’তুই তো তোর মুখটা অফ কর ঘু’ষ’খো’র কোথাকার!’
আশিক ভেংচি কাটল লামিয়াকে। অর্ষাকে বলল,’কোথায় রেখেছিস?’
‘আরে দিচ্ছি। এত অস্থির হচ্ছিস কেন?’
এরপর অর্ষা রেশমিকে জিজ্ঞেস করল,’তোর বিয়ের কথাবার্তা কতদূর এগোলো?’
‘ছাই এগোবে! বিয়ে ক্যান্সেল!’
‘সেকি! কেন?’
‘ছেলের আরো মেয়ের সাথে চক্কর চলে। গত পরশু ছেলের এক গার্লফ্রেন্ড আমায় ফেসবুকে ম্যাসেজ করেছিল। ওদের ম্যাসেজের স্ক্রিনশট, কাপল ছবি দেখাল।’
‘বলিস কী! তোর আইডি চিনল কীভাবে?’
‘তা জানি না। হয়তো খোঁজ নিয়েছে।’
‘পরে তুই কী করলি?’
‘কী করব আর? আম্মুকে দেখালাম সব। আম্মু আব্বুকে বলল। এরপর ছেলের বাবা-মাকে আর ঐযে পাশের বাড়ির ঘটক আন্টি; তাকেও সব জানিয়েছে। তারপর বিয়ের কথাবার্তা সেখানেই স্থগিত।’
আশিক খিলখিল করে হেসে বলল,’তোর কপালে বিয়ে নেই রে রেশমি। তুই সিঙ্গেলই ম’র’বি। মিলিয়ে নিস।’
‘তোর ফা’উ’ল কথা শুনলেই মেজাজ গরম হয়ে যায় আমার।’
‘আচ্ছা আচ্ছা আপাতত বাদ দে এসব। কোথাও যাবি ঘুরতে?’ জানতে চাইল আহিল।
লামিয়া বলল,’অবশ্যই। চল কোনো রেস্টুরেন্টে যাই আগে।’
‘ঠিক আছে। উঠ সবাই।’
সবাই রেডি হয়েই এসেছিল। শুধু আহিল আর অর্ষার রেডি হতেই যতটুকু সময় লাগল। আগে সবাই মিলে অর্ষাদের বাড়িতে যায়। কুসুম অর্ষাকে দেখে বেশ অবাকও হয়। হয়তো জানত না অর্ষার দেশে আসার বিষয়ে। তিয়াসটা বড্ড অভিমানী হয়ে গেছে। অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না!
শেষমেশ অর্ষা তিয়াসকেও সাথে করে ঘুরতে নিয়ে গেল। রেস্টুরেন্টের বাইরে আহিলের সকালের সাথে দেখা হয়ে যায়। অনেকদিন বাদে সকালকে দেখে একটু অবাকই হলো আহিল।
আহিল বাদে সবাই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেছে। তিয়াস বায়না ধরেছে সে চিপস্ খাবে, তাই ও’কে নিয়ে পাশের দোকানে যাচ্ছিল আহিল। তখনই সকালের সাথে তার দেখা হয়ে যায়। সকাল অবশ্য বিশেষ পাত্তা দিলো না। দেখেও না দেখার ভান ধরে পাশ কাটিয়ে অন্যপাশে চলে গেল। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভাইকে ফোন করে বলল,
‘ভাইয়া এই রেস্টুরেন্টে যাব না। তুমি বের হও।’
কথা শেষ করে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করেনি সে । ফোন রেখে দিয়েছে।
.
মাহিতের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেছে। ঘা’ড়’ত্যা’ড়া এক পিস বোন তার কপালে জুটে গেছে। কখন কী মন চায়, না সকাল নিজে জানে আর না কাউকে জানতে দেয়! মেজাজ খারাপ করে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় সিঁড়িতে এক মেয়ের হাতের সাথে নিজের হাতে বেশ জোরেই ধাক্কা লেগে যায়।
দুজনে একত্রেই বলে ওঠে,’স্যরি।’
মাহিত ফের বলল,’স্যরি। খেয়াল করিনি।’
রেশমি মৃদু হেসে বলল,’ইট’স ওকে।’
মাহিত চলে যাওয়ার পরও রেশমি পিছু ফিরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। লামিয়া কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে বলল,’আর তাকিয়ে থাকতে হবে না। ভেতরে চল।’
রেশমি ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে বলল,’ধুর! এমন করিস কেন?’
‘হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?’
‘ছেলেটা সুন্দর না?’
‘জানিনা। বিয়েশাদী হয়ে গেছে এখন কি আর আগের মতো ছেলেদের দিকে তাকানোর সুযোগ আছে?’
‘থাক। তোর তাকানো লাগবে না। চল ভেতরে।’
রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের আড্ডায় থেকেও অর্ষা আহনাফকে ভীষণ মিস করেছে। একটু পর পর সুযোগ পেলেই হোয়াটসএপ চেক করেছে। কিন্তু আহনাফের কোনো খবর-ই নেই। ঘণ্টা দুয়েক বাইরে ঘুরেফিরে সবাই বাড়ি ফিরে যায়। আর থাকতে না পেরে অর্ষা নিজেই আহনাফকে কল করে। রিং হয় কিন্তু রিসিভ হয় না। পরপর তিনবার কল করেও কোনো রেসপন্স পাওয়া গেল না। অভিমানের পাল্লা তড়তড় করে বাড়তে থাকে। দু’চোখে জমা হয় অশ্রুকণা। সে ম্যাসেজ পাঠায়,
‘বিরক্ত করার জন্য স্যরি।’
ম্যাসেজ ডেলিভার হয় কিন্তু সীন করে না। রাগে অনলাইন থেকেই বেরিয়ে যায় অর্ষা। পনেরো কি বিশ মিনিট পর অনলাইনে গিয়ে আহনাফের রিপ্লাই পায়,’স্যরি। একটু বিজি আছি।’
অর্ষা এবার কিছুই লিখল না। ম্যাসেজ সীন করে রেখে দিল। যে ব্যক্তি রাগ, অভিমান বোঝে না; শুধু নিজের ব্যস্ততাকেই শো করে তাকে নিজের অনুভূতি, কষ্টগুলোও জানিয়ে কোনো লাভ নেই।
কিছুক্ষণ বাদে আবার আহনাফের ম্যাসেজ আসে,’কী করছ?’
অর্ষা রিপ্লাই করে,’কিছু না।’
‘ফ্রি আছো?’
‘হু।’
‘কল দিচ্ছি।’
‘কথা বলতে পারব না।’
‘কেন?’
‘এমনিই।’
আহনাফ উত্তর না দিয়ে কল করে। অভিমান এখন কিছুটা রাগে পরিণত হয়েছে। তাই সে ফোন ধরল না। দু’বার কল করার পরও যখন অর্ষা ফোন রিসিভ করল না তখন আহনাফ ম্যাসেজ দেয়,
‘কী হয়েছে? এমন করছ কেন?’
‘বললাম তো এখন কথা বলতে পারব না।’
‘একটু আগে তাহলে কেন ফোন করেছিলে?’
‘তখন কথা বলতে ইচ্ছে হয়েছিল তাই। এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।’
আহনাফ ম্যাসেজটা সীন করে রেখে দিল। এতে অর্ষার মেজাজ আরো বেশি খারাপ হয়ে যায়। ম্যাসেজের উত্তর দিতে না পারলে সীন করে রাখার কী দরকার? বিরক্ত হয়ে অর্ষা ইউটিউবে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আহনাফের রিপ্লাই আসে। একটা গানের ভিডিয়ো পাঠিয়েছে। ভিডিয়োটা অন করে অর্ষা।
‘ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে,
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই।
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক,
গেলে যাবি চোখের বাইরে না।’
রাগ, অভিমানের বদলে অর্ষার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।
রিপ্লাই না পেয়ে আহনাফ লেখে,’কী হলো?’
‘কী হবে?’
‘কথাই তো বলছ না। এখন ফ্রি আছি। কল দাও।’
এরপর সে নিজেই কল করে। অর্ষা ফোন রিসিভ করে না। সেও একটু বুঝুক কেমন লাগে! কল কেটে দিয়ে অর্ষা লিখে,’বারবার ফোন কেন করছেন? কী চান?’
আহনাফও এবারও একটা গানের ভিডিয়ো পাঠায়।
‘চলো বলে ফেলি
কত কথাকলি,
জন্মেছে বলতে তোমায়
তোমাকে চাই।
ঝলসানো রাতের
এ পোড়া বরাতে,
তুমি আমার অন্ধকার
আর রোশনাই।’
চলবে…