যে প্রেম হঠাৎ আসে পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
288

#যে_প্রেম_হঠাৎ_আসে❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম.
– পর্ব:১৩ (অন্তিম পর্ব)

সময়ের চাকা সময়ের স্রোতে ঘুরতে থাকে। সময় দিয়ে যায় স্মৃতি, সময় দিয়ে যায় ব্যাথা আবার এই সময়ই হয়ে দাঁড়ায় হাজারও ব্যাথা, স্মৃতি ভুলানোর ঔষধ-মলম। সময় চলে গেল। দেখতে দেখতে কেটে গেল চারদিন। সেই যে শেষ বিকেল এরপর আর ইহান অনুজার কথা হয়নি। বেলকনিতে দু-একবার চোখাচোখি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু কেউ কোনো কথা বলেনি। ইহানও বলেনি অনুজাও বলার সাহস দেখায়নি। অনুজা মেনে নিয়েছে তার মতো অসম্পূর্ণ নারী কখনোই ইহানের মতো পবিত্রবান এক প্রেমিক পুরুষের স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। অনুজা আজকাল আর এসব ভেবে কাঁদে না। তার মনে হয় এতদিনের বুকের ভেতর গহীন অতলে লুকিয়ে রাখা পাথরটা সরাতে পেরেছে। সে ইহানকে বুঝাতে পেরেছে কেন অনুজা এতদিন ইহানকে মেনে নেয়নি। ভালোবাসায় সাড়া দেয়নি। সত্যি বলতে অনুজা প্রথম যেদিন ইহানকে মার খেতে দেখেছিল সেদিনই ইহানকে ভালো লেগেছিল। আচমকা ইহানের তার প্রতি দৃষ্টি রাখা এক অদ্ভুত শিহরণ ঢুকিয়ে ছিল মনে। তবুও অনুজা নিরূপায়। সে জানত তার জন্য ভালোবাসা ঠিক নয়। অনুজা ভেবেছিল ইহান হয়তো তার পিছনে দু’চারদিন পরে থাকবে সময় যেতেই পিছু ছাড়বে। কিন্তু ইহান তো ইহান ছন্নছাড়া, জেদি একটা ছেলে। তবুও অনুজা নিজেকে মানিয়েছে একটা বছর ইহানের থেকে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইহানের আচমকা গায়েব হওয়ার ব্যাপারটা একদমই মানতে পারেনি। মায়ায় পড়ে গিয়েছিল যে। সময়ের সাথে সাথে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে এমন গভীর মায়ায় আটকাতে পারে এটা ইহান না হারালে অনুজা জানতেই পারত না। নীরব দীর্ঘশ্বাস বের হলো অনুজার। আজকাল একটু হলেও অনুজার সময়টা ভালো কাটে। যন্ত্রণার রেশটা বেশ গেছে সেরে।’

আজ শুক্রবার! সকাল থেকেই অনুজার বাবা খুব ব্যস্ত। কিছু একটার আয়োজন করছেন তিনি। কারা যেন আসবেন! তাদেরই খাতির যত্ন কিভাবে করতে হবে তার বন্দবস্ত করছেন। অনুজা আর তনুজাকে বলা হয়েছে তারা যেন জলদি জলদি গোসল সেরে পরিপাটি পোশক পড়ে নিজেদের গুছিয়ে রাখে। যতই হোক বাড়িতে মেহমান আসবে বলে কথা। তনুজার মেহমান আসাটা খুব পছন্দের। কিন্তু অনুজার ততটা না। তবুও বাবার সম্মানের ব্যাপার বলে কথা তাই মেনে নেয়া। কোমড়ে ওড়না মুড়িয়ে বেলকনি ঘরে ঝাড়ু দিচ্ছিল অনুজা। হঠাৎই ইহানের কণ্ঠ শোনা যায়। সে বলে,
“অনুজা শুনুন,

অনুজা তক্ষৎণাৎ ইহানের দিকে তাকায়। দ্বিধাহীন বলে, “জি বলুন,

ইহানের হাবভাব স্বাভাবিক। কৌতুহলী মুখ। ঠোঁটে আওড়ানো সাধারণ প্রশ্ন,
“আপনাদের বাড়িতে কেউ আসছে নাকি– আপনার বাবাকে দেখলাম সকাল সকাল বড় ব্যাগে করে বাজার নিয়ে আসতে। কেউ আসছে অনুজা?”

অনুজার তড়িৎ উত্তর,
“হুম আসছে।”
“ওহ আচ্ছা।”

ইহান চলে গেল। অনুজা তাকিয়ে। ইহানের কথাবার্তায় আজকাল একদমই প্রকাশ পায় না একসময় ইহান অনুজাকে ভালোবাসত। অনুজা বুঝতে পেরেছে ইহান তার জীবনের সিদ্ধান্তটা সঠিকই নিয়েছে। চোখে পানি আসলেও সামলে নিলো অনুজা। নীরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দিল আবার।’

তখন বিকেলের মাঝামাঝি প্রহর। হঠাৎ কলিংবেল বাজার শব্দ পাওয়া যায়। অনুজা আজকে লেমন কালার চুড়িদার পড়েছে। চুলগুলো খোঁপা করে কাঁকড়া দেয়া। তনুজাও গোল ফ্রকে নিজেকে সাজিয়েছে। মিনিট দশ যেতেই অনুজার মা আসলেন তনুজা আর অনুজাকে নিতে। অনুজাকে বলা হলো মাথায় কাপড় চেপে আসতে। তনুজাও মাথায় কাপড় দিয়ে এগিয়ে গেল। অনুজা বিরক্ত নিয়ে বলে, ”মা ওনাদের সামনে যাওয়াটা কি খুব জরুরি?”

অনুজার মা তাড়া দিয়ে বলেন,
“অবশ্যই জরুরি। দ্রুত চল।”

অনিচ্ছাকৃত অনুজা। নিরূপায় ভঙ্গিমায় হেঁটে গেল। তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো চায়ের ট্রে। এবার একটু খটকা লাগছে অনুজার। এমনটা তো কখনো করেনি তার মা। অনুজা বলল,
“মা কা..

পুরো কথা বলা গেল না তার আগেই অনুজার মা বললেন, “কথা নয়। যা জলদি।”

অনুজা এগিয়ে গেল। মাথা নিচু করে হাঁটল। অনুজা যখন সবার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ঠিক সেই মুহূর্তে অনুজার বাবা বললেন, “এই হলো আমার বড় মেয়ে অনুজা। আর ও হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে তনুজা।”

অনুজার বাবার কথা শুনে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন, “জানি, ভাড়ি মিষ্টি মেয়ে আপনার অনুজা।”

অনুজা সালাম দেয়ার জন্য তাকাল ভদ্রলোকের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে বিষম খেল কারণ লোকটা হচ্ছেন ইহানের বাবা। অনুজা এবার আশপাশ দেখল ইহানও আছে। তার পাশে ইহানের দুলাভাই রায়ান, বড় বোন আনিসা, সঙ্গে ইহানের মাও বসে।’

অনুজার হাত কেঁপে উঠল আচমকা। সে কি সত্যি দেখছে। চায়ের ট্রে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। ইহান তক্ষৎণাৎ ছুটে এসে ধরল ট্রে। মৃদুস্বরে বলল,
“ঘাবড়ানোর কিছু নেই রাত্রীপ্রিয়া। বিয়ে কিন্তু আমি আপনাকেই করব।”

অনুজার পলকহীন চাহনি। এসব কি বলছে ইহান? — ছেলেটা পাগল হলো নাকি। এদের সংলাপে বাকি সবাই মৃদু হাসে। দৃষ্টি সরিয়ে ইহানের বাবা বলেন, “মেয়ে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে বেয়ান সাহেব।”

সঙ্গে সঙ্গে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বললেন অনুজার বাবা। সবার আড়ালে রায়ান তাকাল ইহানদের দিকে। স্বল্প আওয়াজে বলল, “শেষমেশ শালা সাহেবই বিজয়ী হলো। আজব নাছোরবান্দা ছেলে একটা।”

হাসল রায়ান।’
পুরোটা সময় ঠিক কেমনভাবে যেন কেটে গেল। অনুজাকে ইহানের বউরূপে সাধারণ স্বীকৃতি দেয়ার জন্য পড়ানোর হলো আংটি। যেটা পড়ালেন ইহানের মা। সঙ্গে বললেন,
“আমার ছেলেটাকে ভালো রেখো মা। ও একটু পাগল টাইপ। কিন্তু তোমায় খুব ভালোবাসে।”

অনুজা কিছু বলার সুযোগই পেল না। সবটা কেমন যেন দ্রুত ঘটে গেল। আর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আজ থেকে ঠিক পনের দিনের মাথায় বিয়ে পড়ানো হবে অনুজা আর ইহানের।


আকাশ জুড়ে সন্ধ্যা হবে হবে পালা। পশ্চিমা আকাশে লালাভ আবরণের সৃষ্টি হচ্ছে। অনুজা ইহান ছাঁদে দাঁড়িয়ে। একান্তে কথা বলার জন্য আনা হয়েছে তাদের। অনুজা নীরব। ইহান বিতৃষ্ণা নিয়ে বলল, “এত নীরবতা সহ্য হচ্ছে না– কিছু বলো অনু?”

ইহানের মুখে ‘তুমি’ শব্দটা হৃদয়ে বড় শিহরণ জাগালো অনুজার। সে বলল,
“আপনি ভুল করছেন ইহান।”

অনুজাকে নিজের দিকে ঘুরালো ইহান। অনুজার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার দিকে তাকান অনু?”

অনুজা তাকাল। তার চোখে পানি। হৃদয়ে উত্তাপ। ইহান অনুজার দু’গাল চেপে ধরে শীতল কণ্ঠে বলে, “আমি ভুল করিনি, আমার আপনাকে লাগবে। আপনি যেমন তেমনভাবেই লাগবে। আপনি সম্পূর্ণ নারী হোন বা অসম্পূর্ণ নারী। আপনি যেমন আমার তেমনভাবেই লাগবে।”
“এভাবে হয়না ইহান।”
“আপনি চুপ করুণ। অনেকদিন হয়না হয়না করেছেন এখন আর শুনব না। আপনি আমার মানে আপনি আমার। বুঝেছেন। অনেক বাহানা করেছেন অনু এবার অন্তত মেনে নিন। আমি সত্যিই সত্যিই পাগল হয়ে যাব। প্লিজ অনু এবার অন্তত আমায় বোঝো, আমি তোমায় ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। কেন বুঝতে চাও না তুমি?’

শেষ কথাটা খুব করুণ শোনাল ইহানের। ইহান আর দাঁড়াল না কথাটা বলে চলে আসতে নেয়। কেমন যেন দূর্বল লাগছে হঠাৎ। ইহানের যাওয়ার পথে অনুজা ডেকে ওঠে, “পূর্ণ শোনো।”

মুহুর্তের মধ্যে ইহানের পা চলা থেমে গেল। বিস্মিত হয়ে আঁটকে পড়ল ওখানেই। সে কি ঠিক শুনল– ইহান নামের অর্থ হলো পূর্ণচাঁদ। অনুজা কি মাত্র সংক্ষেপে ইহানকে ‘পূর্ণ’ বলে ডাকল। ইহান ঘুরে তাকায়। অনুজা কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে আওড়ায়,
“আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি পূর্ণ।”

কথাটা বলেই ছুটে এসে ইহানকে জড়িয়ে ধরল অনুজা। আচমকা অনুজার কাণ্ডে ইহানের মনে হলো তার পুরো পৃথিবী বোধহয় এক মুহূর্তের মধ্যে থেমে গেল। অনুজা তাকে জড়িয়ে ধরেছে। ইহান কি করবে বুঝতে পারছে না। তার হাত কাঁপছে। গত একবছরে এই প্রথম তারা দুজন এতটা কাছাকাছি চলে এসেছে। ইহানের হাত একটু একটু করে অনুজাকে ধরল। বাঁধন হলো শক্ত। অতঃপর ইহান মিষ্টি হেঁসে বলে উঠল, “অবশেষে রাত্রীপ্রিয়ার মন গললো। তাহার প্রেমদুয়ার পূর্নের তরে খুলল। আমার অসুস্থ শহরের ঔষধ হয়ে ধরা দিল। আমি আজ ভীষণ খুশি অনু, ভীষণ খুশি।”

বিনিময়ে চোখ বন্ধ করে হাসল অনুজা। আকাশে তখন সন্ধ্যে নেমেছে। পাখিরা সব ছুটে চলেছে। প্রকৃতি ছুঁইয়ে প্রেমময় বাতাস বইছে। তাহাদের মাঝে ভালোবাসার পূর্ণতার রূপে দুই প্রেমিক প্রেমিকা আলিঙ্গন করছে। কি সুন্দর! কি সুন্দর!’


ছয়বছর পর!’
ধরণীতে সন্ধ্যা হয়েছে। রাজশাহীতে তখন শীতের আভাস। প্রকৃতি ছুঁইয়ে সে কি ঠান্ডা! অনুজা ছুটছে তার চার বছরের ছোট্ট মেয়ে তুলতুলের পিছনে। মেয়েটা ভাড়ি দুষ্ট প্রকৃতির। সম্পূর্ণ রূপে ইহানের মতো। অনুজা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“তুলতুল দাঁড়াও, নয়তো থাপড়িয়ে তোমার গাল লাল করে দিব।”

তুলতুল দাঁড়াল না। ছুটতে ছুটতে বলল,
“মা পালে না। কি মজা– মা পালে না।”
“তুলতুল দাঁড়াও।”

তুলতুল দাঁড়াল না। হঠাৎ সদর দরজার মুখে এসে দাঁড়াল ইহান। হাতে ব্যাগপত্র। অনুজা অবাক হয়ে বলল,
“আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলে?”
“বউয়ের কথা খুব মনে পড়ছিল তাই চলে এলাম।”
“কি?”
“কি কি করো না– আমার বড্ড প্রেম প্রেম পেয়েছে।”
“ফাজলামো বন্ধ করো পূর্ণ।”

ইহান হাসল। ভিতরে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“আমি সত্যি বলছি বউ। বসের থেকে ছুটি চাইলাম তিনিও দিয়ে দিল।”

তুলতুল ছুটে ইহানকে ‘পাপা’ ডেকে কোলে চড়ে বসল। ইহানও তাকে স্নেহের আদরে ভরিয়ে দিল। অনুজা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে। তুলতুল, তুলতুল ইহানদের নিজেদের সন্তান নয়। চারবছর আগে তুলতুলের বয়স মাত্র দু’মাস। তখন দত্তক নেয়া হয়। এই বিষয়টা ইহান, অনুজা আর অনুজার বাবা ছাড়া কেউ জানে না। সবাই জানে তুলতুল তাদের নিজেদের সন্তান। অনুজা যে কখনো মা হতে পারবে না। এটা ইহান কাউকে জানায়নি। আর অনুজাকেও বলেছে কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই। সে বাসরঘরেই জানিয়ে ছিল, “তুমি আমার কাছে অসম্পূর্ণ থাকবে অনু, বাকিদের কাছে নয়। তোমার দূর্বলতা জানার অধিকার শুধু আমার আর কারো না।”

ইহানের এই কথার মাঝে এমন মুগ্ধ হয়েছিল অনুজা। যে তার মাঝে মাঝে মনেই হয় না সে অসম্পূর্ণ নারী। ইহানরা বিয়ের পর রাজশাহী চলে আসে। বিয়ে প্রথম তিন’বছর তারা ঢাকায় ফেরেনি। তিনবছর পর আচমকা তুলতুলকে নিয়ে হাজির। ব্যাপারটার জন্য ইহানের মা বেশ রেগে ছিল ইহানের ওপর। কারণ ইহানই বলে সে কাউকে জানাতে চায়নি অনুজার প্রেগ্ন্যাসির ব্যাপারে। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য নয়। কারণ ইহান যে টাইপের ছেলে তাতে এটা বিশ্বাস যোগ্য। অনুজা ইহানের জীবনে আসার আগে প্রায় ছয়’মাসের জন্য ইহান গায়েব ছিল। যোগাযোগ নেই। কোথায় আছে কেউ জানে না। ইহানের মা তো দিশেহারা প্রায়। ছয়মাস পর ইহান যখন ফিরে আসে। তখনই ইহানের বাবা গায়ে হাত তোলে ইহানের। তিনি মনে করেন তার ছেলে অন্যায়কর কাজকর্ম করে এসেছিল। এবং রাগের মাথায় বলে তুমি আমায় বাবা বলে ডাকবে না ইহান। সেই থেকেই ইহান তার বাবাকে চেয়ারম্যান বলে ডাকত। বাসার চেয়ারম্যান এই আলোকে।’

যদিও এখন তা গুচে গেছে। অনুজার আগমণে ইহানের জীবন বদলে গেছে। ছন্নছাড়া ইহান এখন বুঝদার হয়েছে।’

নানান কিছু ভাবতে ভাবতে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে অনুজা। আর অনুজাকে নিজের দিকে ধ্যান মগ্নরূপে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইহান বলল,
“এভাবে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে থেকো না রাত্রীপ্রিয়া, আমি কিন্তু ভয়ংকর কিছু করে ফেলব।”

অনুজার ধ্যান ভাঙল। হেঁটে গিয়ে ইহানের হাতে তুলতুলের খাবার প্লেটটা ধরিয়ে দিয়ে বলল, “কথা কম বলে মেয়েকে খাওয়াও।”

অনুজা চলে যায়। আর ইহান মিষ্টি হাসে।’

আকাশ জুড়ে জোৎস্না। রেলিংহীন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে অনুজা। আচমকা পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল ইহান। বলল,
“একা একা দাঁড়িয়ে কেন আছো?”

অনুজা জবাব দেয় না। ঘুরে দাঁড়ায়। উদাসীন স্বরে বলে,
“আচ্ছা পূর্ণ তোমার কি কখনো আমার প্রতি অভিযোগ লাগে না?”
“একসময় লাগত এখন আর লাগে না। আমায় ভালোবাসো কি না।”
“তুমি আমায় এত ভালোবাসো কেন?”
“ভালোবাসার কি কারণ হয়?”
“সত্যিই হয়না।”

ইহান অনুজাকে ঘুরিয়ে পিছন থেকে আবার জড়িয়ে ধরে। অনুজার ঘাড়ে থুতনি রেখে শীতল কণ্ঠে শুধায়,
“যে প্রেম হঠাৎ আসে,সেই প্রেম তুমি
যে প্রেমে পার করে দেয়া যায় একটা জীবন অনায়াসে, সেই প্রেম তুমি।’
তুমি শুধু প্রেম নয় ভালোবাসা আমার। তীব্র সাধনার ফল তুমি। এবার বলো, তোমাতে অভিযোগ ক্যামনে আনি!”
“তুমি আস্ত একটা পাগল পূর্ণ।”
“তুমি করেছ।”
“তুলতুল কি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
“হুঁ।”
“আচ্ছা তোমায় একটা প্রশ্ন করি?”
“করো?”
“আমার বাবাকে মানালে কি করে?”

সঙ্গে সঙ্গে অনুজাকে ছাড়ল ইহান। ব্যঙ্গ কণ্ঠে বলল,
“তোমার বাবা তো বাবা। তোমার বাবাকে মানাতে আমার চারদিন সময় লেগেছে। সে বড়ই শোকের ঘটনা রমনাপার্কে দেখা করেছিলাম আমরা। এত বুঝালাম মানতেই চাইছিল না। শুধু পা’টা ধরা বাকি ছিল জানো। বাপরে বাপ যেমন বাপ তেমন মেয়ে। তবে তোমার চেয়ে ভালো ছিল মাত্র চারদিনেই মানাতে পেরেছিলাম। আর তুমি তো তুমি পুরো দেড় বছর নাকানিচুবানি খাইয়েছ।”

অনুজার ঠোঁটে তখন তীব্র হাসি। ইহান বলে,
“হেঁসো না।”
“আমি হাসব।”
“তোমায় হাসতে বারণ করেছি অনু?”
“করব না।”
“সত্যিই করবে না?”
“আচ্ছা করলাম। আরেকটা প্রশ্ন করি?”
“আগে জড়িয়ে ধরো?”

অনুজা ধরল। ইহান বলল,
“এবার বলো?”
“আপনি বলেছিলেন আপনি নাকি একবার ছয়মাসের জন্য গায়েব ছিলেন। তাই আপনার বাবা আপনায় মেরেছিল সেদিন। এবার বলুন তো ছয়মাস কোথায় ছিলেন?”

ইহান কিছু সময় চুপ থাকল। রহস্যময়ী কণ্ঠে বলল,
“পৃথিবী বড় রহস্যময় অনু, এই রহস্যময় দুনিয়ায় এই ছোট বিষয়টা নয় রহস্যময় থাকুক। তুমি আমার থাকো আর আমি তোমার।”

অনুজা মেনে নিলো আর জোর করল না। সত্যি সত্যিই না হয় কিছু বিষয় অজানা থাকুক। কারণ পৃথিবী যে রহস্যে থাকতে পছন্দ করে।’

অনুজা শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ইহানকে। ইহান উপলব্ধি করল তা। কপালে চুমু একে ভাবল শুধু,
“একসময় সে বড়ই ছন্নছাড়া ছিল।”

#সমাপ্ত!’