যে বর্ষণে প্রেমের ছোঁয়া [দ্বিতীয় খণ্ড] পর্ব-৪৫ অন্তিম পর্ব (১ম অংশ)

0
25

#যে_বর্ষণে_প্রেমের_ছোঁয়া
#আনিশা_সাবিহা
অন্তিম পর্ব (১ম অংশ)
[দ্বিতীয় খণ্ড]

নিজের ঘরের বেডের সাথে গা এলিয়ে নিচে বসে আছে সৌমিত্র। মিসেস জেবা চেষ্টা করেও ছেলেকে বিছানায় বসাতে পারলেন না। সৌমিত্র অনেকক্ষণ নীরব থাকার পর থেমে থেমে বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করল,
“মা, আমি কি অনেক খারাপ?”

ছেলের কথায় চোখে অশ্রু নেমে আসে মিসেস জেবার। চিরচেনা সতেজ, চঞ্চল, পাগলামিতে ভরা ছেলেটার এই দশা মানতে পারেন না তিনি। সৌমিত্রের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,
“না, বাবা। তুই কেন খারাপ হবি? তুই আমার ভালো ছেলে।”

“আমি নিশ্চয় খারাপ। নাহলে নিজের চাওয়াকে হারিয়ে ফেললাম কেন? এই একটা মানুষই তো আমি কত করে চেয়েছিলাম। কতটা প্রতীক্ষা করেছিলাম। তবুও আমি পেলাম না কেন? আমি খারাপ তাই আমি পাইনি।”

মিসেস জেবা ছেলের পাশে বসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে ফুঁপিয়ে উঠে বললেন,
“ভালো মানুষই তো সব হারায়। কিছু পায়না। তুই এমন বলিস না সৌমিত্র। আমার আগের সৌমিত্র হয়ে যা তুই।”

সৌমিত্র উত্তর দেয়না। কেমন শান্ত আত্মা ঘিরে ধরেছে তাকে। তার আত্মায় আর ছটফটানি নেই। ঘুমিয়ে পড়েছে হয়ত চিরদিনের মতো। স্বচ্ছ ঢুকে আসে ঘরে। মায়ের উদ্দেশ্য ভারি স্বরে বলে,
“অনেক রাত হয়েছে। নিজের ঘরে ঘুমাতে যাও মা। আমি সৌমিত্রের সাথে থাকব আজ।”

“আমার ঘুম কীভাবে আসবে স্বচ্ছ?”

“প্রতিদিন যেভাবে আসে। আমরাই বিষয়টাকে অস্বাভাবিক করে তুললে ও স্বাভাবিক হবে কীভাবে? আর তাছাড়া এমন কিছু কথা থাকে যা মা-বাবাকে বলা যায়না। আমি তো ওর সব কথা জানি। তাই আমি থাকাই ভালো ওর সাথে। তুমি যাও।”

স্বচ্ছের কথা উপলব্ধি করে সৌমিত্রকে একবার দেখে ভারাক্রান্ত মনে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে উঠে গেলেন মিসেস জেবা। স্বচ্ছ সৌমিত্রকে কড়া আদেশ দিয়ে বলল,
“আমি আমার ঘর থেকে বালিশ আনতে যাচ্ছি। এসে যেন দেখি তুই বিছানায় শুয়ে পড়েছিস।”

স্বচ্ছ বালিশ নিতে নিজের ঘরের দিকে উদ্যত হয়। মিসেস জেবা নিজের ঘরে ঢুকে দেখলেন ইথান বিষণ্ণ মুখে বিছানায় বসে পা দোলাচ্ছে। মিসেস জেবা গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“খেয়েছ তুমি রাতে?”

ইথান সম্মতি জানিয়ে বলে,
“হুঁ। মাম্মা খাইয়ে দিলো।”

আজ রাতে কারোর গলার নিচেই খাবার নামেনি। সৌমিত্রকে তো খাওয়ানোই যায়নি। ইথানকে কোনোমতে খাইয়েছে মোহ। ইথান এবার উৎসুক মনে বলে ওঠে,
“কাকু ওভাবে কাঁদছিল কেন?”

মিসেস জেবা কী জবাব দেবেন বুঝতে না পেরে একটু ভেবে বললে ওঠেন,
“কষ্ট পেয়েছে তাই।”

“বড়রাও ওভাবে কান্না করে? ঠিক আমার মতো কাঁদছিল। আমি ওভাবে বড়োদের কাঁদতে দেখিনি।”

মিসেস জেবা তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন,
“বড়োরা কাঁদতে পারেনা। তাই তাদের দুঃখ আরো বেশি। কারণ তারা দুঃখ জমিয়ে রাখে। প্রকাশ করতে পারেনা।”

“বড়ো হলে দুঃখ পেলে কান্না করা যায়না? তাহলে আমি বড়োই হবো না।”

ইথানের কথায় মিসেস জেবা ভাবলেন বড়ো হওয়াটাও কত যন্ত্রণার! মানুষ বড়ো হতে চায়। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে বোঝে সেই ছোটোবেলাই ছিল তার উত্তম সময়। মিসেস জেবা ইথানের গালে হাত বুলিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে এখন ঘুমাও।”

ইথান বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পড়ল। মিসেস জেবা বালিশে মাথা দিলেও চোখের পাতায় নিদ্রা ধরা দিলো না।

স্বচ্ছ নিজের ঘর থেকে বালিশ এনে সৌমিত্রের ঘরে ঢুকতেই খেয়াল করল সৌমিত্র ফ্লোরে চোখ বন্ধ করে পড়ে আছে। মস্তিষ্কে আতঙ্ক ছেয়ে গেল স্বচ্ছের। বুকটা ধক করে উঠল। বালিশ ফেলে তড়িৎ গতিতে ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসল সে। অবচেতন সৌমিত্রকে বারবার ঝাঁকিয়ে উচ্চস্বরে ডাকতে থাকল,
“সৌমিত্র! এই সৌমিত্র! চোখ খোল। কথা বল। কী হলো তোর?”

সৌমিত্রের কোনো সাড়া পাওয়া যায়না। স্বচ্ছ পাগলের মতো সৌমিত্রের হাত, দেহ, মুখ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। স্বচ্ছ নিজের ঘরে গিয়েছে মাত্র কয়েক মিনিট হয়েছে। এর মধ্যে ছেলেটা কি কিছু ঘটিয়ে ফেলল? স্বচ্ছ আবার ডাকল,
“কী রে ভাই! একবার তাকা। কী হয়েছে তোর? কষ্ট পেয়েছিস? আমায় বল।”

স্বচ্ছের ভয়ে জর্জরিত কণ্ঠস্বর কানে গেল মোহের। তাদের আর সৌমিত্রের ঘরের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। দোতালায় তাদের ঘর কিন্তু মিসেস জেবা থাকেন নিচেই। মোহ নিজের ঘর থেকে তড়িঘড়ি করে এসে দেখল সৌমিত্রের অবস্থা। স্বচ্ছ সৌমিত্রের শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ করল। সব ঠিকই আছে। মোহ বলল,
“কী হলো ওর?”

“সেটাই বুঝতে পারছি না।”

মোহ একটু ভেবে বলল,
“হয়ত জ্ঞান হারিয়েছে। অতিরিক্ত দুঃখ-কষ্ট পেয়ে ডিপ্রেসড হলে মানুষ জ্ঞান হারায়। আমি পানি আনছি।”

মোহ দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। স্বচ্ছ সৌমিত্রের মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। প্রথমে কাজ না হলেও সামান্য সময় পর হালকা করে দৃষ্টি মেলে সৌমিত্র। মোহ বিচলিত কণ্ঠে জানতে চায়,
“ঠিক আছে আপনি, সৌমিত্র?”

সৌমিত্র শুধু তাকিয়ে থাকে পিটপিট করে। পুরোপুরি তাকানোর ক্ষমতাও যেন হারিয়েছে সে। অস্ফুটস্বরে শুধু নাম জপে,
“মিস গোলাপি!”

মোহ শূন্য অভিব্যক্তি নিয়ে স্বচ্ছের পানে তাকায়। স্বচ্ছ মোহকে ইশারা করে যেন সে গিয়ে ঘুমিয়ে যায়। মোহ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়। সৌমিত্রকে ধরে বিছানায় বসায় স্বচ্ছ। পানি পান করায় এবং শুধায়,
“এখন ঠিক আছিস?”

সৌমিত্র নিরুত্তর। স্বচ্ছ সৌমিত্রের পাশে বসে এবং আবার বলে,
“আমার সাথে কথা তো বল!”

সৌমিত্র তবুও চুপচাপ বসে রইল। তারপর হুট করেই স্বচ্ছের কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়ল সে। স্বচ্ছ চমকায় কিন্তু নিজেকে ধাতস্থ করে। সৌমিত্রের কপালে হাত রাখে সে। শরীরটা গরম লাগছে বোধ করে সৌমিত্রের গায়ে চাদর টেনে দেয়। সৌমিত্র কিছুক্ষণ পর নিজের বুক চেপে ধরে ভাইয়ের কোলে মাথা রেখেই গুমরে গুমরে বলে,
“আমার বুকে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে ভাইয়া।”

‎স্বচ্ছ কী বলে ছেলেটাকে শান্ত করবে তা ঠাওর করতে পারেনা। ঠাণ্ডা স্বরে বলে,
‎”সময়ের সাথে সব সয়ে যাবে।”

‎”ঠিক হবে না? সয়ে কেন যাবে?”

‎”না, এটা ঠিক হওয়ার নয়। এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে। এই কষ্ট তোর বুকের নয়। তোর না পাওয়ার যাতনা এটা। যেটা বয়ে বেড়াবি। সেই অনুভূতিগুলো পূর্ণতা না পেয়ে শুধু দগ্ধ হবে। সেই আগুনের তাপ তোকে জ্বালাবে।”

‎সৌমিত্র দুর্বল কণ্ঠে ফের বলে ওঠে,
‎”তবে সেই অনুভবগুলো এত সুন্দর লেগেছিল কেন যখন সেটা প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম? এখন তারা এত ভয়ংকর কেন?”

‎স্বচ্ছ আগের ন্যায় বলে,
‎”কষ্ট দেওয়ার জন্যই কিছু অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এই অনুভূতিরা সময়ের সাথে লড়তে না পেরে হেরে যায়।”

‎সৌমিত্র বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে,
‎”তাহলে সব সময়ের দোষ!”

‎আপনমনে কথা বলতে বলতে ঘুমে নিমজ্জিত হয় সৌমিত্র। বড়ো ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে বিড়ালছানার ন্যায় আঁটোসাঁটো হয়ে ঘুমিয়ে থাকে সে। স্বচ্ছের দুটি চোখ বন্ধ হয়না। মিসেস জেবা একবার এসে ঘরের দরজা থেকে উঁকি দিয়ে ছেলেদের দেখে চলে যান। রাত তখন তিনটার আশেপাশে। মোহ শান্ত পায়ের ধাপে সৌমিত্রের ঘরে আসে। স্বচ্ছ তখনও ঘুমায়নি। সৌমিত্রকে নিয়ে বসে আছে। মোহকে দেখে স্বচ্ছ হতবাক হয়। ধীর কণ্ঠে শুধায়,
‎”ঘুমাওনি তুমি?”

‎মোহ নির্লিপ্তে বলে,
‎”ঘুম আসছে না। আমিও এখানে বসি?”

‎স্বচ্ছ সম্মতি জানায়। মোহ স্বচ্ছের পাশে বসে। সৌমিত্রের দিকে লক্ষ্য করে বলল,
‎”মাত্র একটা ঘটনায় সে কীভাবে মুষড়ে গেল!”

‎স্বচ্ছ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল,
‎”জানি না সকালে কেমন পাগলামি করবে। কীভাবে সামলাব!”

‎”আমরা যদি আরো আগে তানিয়ার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করতাম! তাহলে এমনটা হতো না। এর আগেও এমন বহুবার হয়েছে যে আমি তানিয়ার সম্বন্ধ ভাঙতে সাহায্য করেছি। এবারও কেন হলো না এমন?”

‎স্বচ্ছ মোহের বিছানায় রাখা হাতের উপর হাত রেখে বলে,
‎”ভাগ্যের ওপর হাত ঘোরানো সম্ভব নয়। যেমন আমি সৌভাগ্যবান বলে তোমায় পেয়েছি। আর সৌমিত্র দুর্ভাগা তাই সে ওর কাঙ্ক্ষিত মানুষকে পায়নি। যদি এক পার্সেন্টও আশা থাকত ওর মানুষটাকে ফিরিয়ে দেওয়ার তাহলে জীবনের সব দিয়ে ওকে ওর প্রিয় মানুষটাকে পাইয়ে দিতাম। কিন্তু কোনো আশা নেই মোহ। মানুষ নিজের পরিস্থিতিতে বদ্ধ পরিকর।”

‎ভোরের সামান্য আলো ফুটতেই নিজের ঘরে চলে গেল মোহ। স্বচ্ছের চোখ লেগে এলো তখন। সৌমিত্রকে আস্তে করে বালিশে শুইয়ে সে নিজেও শুয়ে পড়ল।

সকাল সকাল ফারাহ তার ছোটো ভাইয়ের এই অবস্থার কথা শুনে সব কাজ ফেলে ছুটে এলো। শৌভিকও সব ব্যস্ততা ফেলে এসেছে আজ। ফারাহ সৌমিত্রের ঘরে ঢুকতেই দেখল সৌমিত্র বিছানায় বসে একধ্যানে তার ঘরের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাহ ভারাক্রান্ত গলায় ডাকে,
“সৌমিত্র ভাই!”

সৌমিত্র ফারাহর কণ্ঠ যেন শুনতেই পেল না। তার চোখ ঘড়িতেই আটকে থাকে। ফারাহ সৌমিত্রের সামনে এসে দাঁড়ায় আর বলে,
“দেখ আমি এসেছি।”

সৌমিত্র আনমনে বলে,
“কেন এসেছিস কাজ ছেড়ে? তুই তো আমার মতো বেকার মানুষ নয়। কাজ ছেড়ে সময় নষ্ট করতে কেন এসেছিস?”

শৌভিক দূর থেকে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারে এখন বেকারত্ব জিনিসটা সৌমিত্রের মনকে ভোগাচ্ছে। হয়ত ভাবছে আজ তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে কিছু একটা করলে তানিয়া তার জীবন থেকে হারাতো না। ফারাহ মন খারাপ করে বলে ওঠে,
“এভাবে কেন বলছিস? তুই নিজেকে কষ্ট দিস না প্লিজ!”

সৌমিত্র কিছু বলল না। শুধু ঘনঘন শ্বাস নিলো। ফারাহ ফের সৌমিত্রের হাত ঝাঁকিয়ে বলে,
“তুই আমাকে টিজ করবি না? আমাকে ক্ষেপিয়ে দেওয়া সেই সৌমিত্র ভাইকেই আমার ভালো লাগে।”

সৌমিত্র শুকনো হাসে। ফারাহর মাথায় হাত রেখে বলে,
“ভাগ্যিস কোনোমতে তোকে তোর ওই মানুষটার হাতে তুলে দিতে পেরেছি। তুই অনেক ভাগ্যবতী। যদি তা না হতো তাহলে এই যন্ত্রণা তোকে ভুগতে হতো। আর সেটা আমি মানতে পারতাম না।”

ফারাহ কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে অপলক নয়নে ভাইকে দেখে। শৌভিক এগিয়ে এসে বলে,
“জীবন অনেক বড়ো সৌমিত্র। মানুষ মানুষকে ছেড়ে যায়। কেউ নিজ ইচ্ছায় আবার কেউ কঠিন পরিস্থিতিতে। তোমায় স্বাভাবিক হতে হবে। তোমার মা, ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখো। তবে তাদের জন্য স্বাভাবিক হওয়ার উৎসাহ পাবে। তারাও তোমার প্রিয়জন।”

আসলে সময়ও সবকিছু ছেড়ে এগিয়ে যায়। পরিস্থিতি তার জন্যই পাল্টায়। এক দিন থেকে এক মাসে এগোয়। আবার মাস থেকে বছরে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে সবার জীবন তিন বছর এগিয়ে গেছে। কত বদল, কত ভিন্নতা এসেছে সবার জীবনে। কিন্তু ভালোবাসাগুলো বদলায়নি। সাথে বর্ষণও ফিরেছে বারংবার।

টিপটিপ করে বৃষ্টি নেমেছে ভুবনে। সেই বৃষ্টিতে জোর নেই। মিছিমিছি সকলের গা ভিজিয়ে দিচ্ছে হালকা করে। বিকেলের দিকে বাড়িতে ফিরল মোহ ও ইথান। মোহ ছিল তার স্কুলের ডিউটিতে। আর ইথান ছিল তার নিজের স্কুল শেষে কোচিং-এ। নিজের কাজ শেষে ইথানকে নিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে মোহ। বাড়িতে পা রাখতেই মিসেস জেবা বেশ আগ্রহী হয়ে ইথানের খোঁজ করলেন।
“ইথান এসেছে? কোথায় ইথান বাবুটা?”

ইথান তার দাদিমার সামনে গিয়ে কোমড়ের দুপাশে হাত রেখে গাল ফুলিয়ে বলল,
“দাদিমা! আমি বড়ো হচ্ছি না? আমাকে বাবু ডাকবে না।”

মিসেস জেবা আর মোহ উভয়ে শব্দ করে হেসে ফেলল। মিসেস জেবা ইথানের গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন,
“ঠিক আছে বড়ো মানুষ। আজকে তোমার জন্য কী বানিয়েছি বলো তো?”

ইথান একটু ভাবতেই তার লোচন দুটো ঝলমল করে ওঠে। অতি উৎসাহ নিয়ে বলে ওঠে,
“কেক বানিয়েছ?”

“শুধু তাই নয়। সাথে পাস্তাও রান্না করেছি।”

ইথান খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। মিসেস জেবা ফের বলেন,
“এখন তাড়াতাড়ি ভেজা জামাকাপড় ছেড়ে গুড বয় হয়ে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে বসো।”

ইথান এক দৌড়ে ঘরে চলে গেল। মোহ হতবাক হয়ে বলল,
“মা, কেন শুধু শুধু এত কষ্ট করেন? ওকে এত কিছু বানিয়ে দিলে সবসময় জেদ করবে।”

“করুক। সমস্যা কোথায়? আমি বাড়িতে সারাদিন বসে থাকলে সময়ও তো কাটেনা। এরচেয়ে বরং কিছু করে যদি ওর ছোটো মুখে এত বড়ো হাসি দেখি তাহলে কতই না ভালো লাগে।”

শাশুড়ির কথার সামনে মোহ পারবে না সেটা তার জানা রয়েছে। তাই আর কিছুই বলল না সে। মিসেস জেবা মোহকেও আদেশ করলেন যেন সে বেশিক্ষণ এই হালকা ভেজা জামাকাপড়ে দাঁড়িয়ে না থাকে। মোহ তাতে সম্মতি জানিয়ে সিঁড়িতে পা বাড়ায়। তার মেসেজের টোন বাজে তখনই। ফোনটা হাতে নিতেই তার চিরচেনা পুরুষের মেসেজ পায়।
‘ইথান আর তুমি বাড়িতে ঠিকঠাক পৌঁছে গিয়েছ তো? বৃষ্টিতে ছাতা নিয়ে গিয়েছিলে? না নিয়ে গেলে কেউই ভেজা জামাকাপড় বেশিক্ষণ পরে থাকবে না কিন্তু। আমি আর কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরছি।’

আপনাআপনি হাসির রেখা পরিলক্ষিত হয় মোহের হালকা ভেজা ওষ্ঠে। নয়নে দেখা যায় খুশির ঝলক। সেই মানুষটার একটা দিনও ভুল হয়না এই সময়ে মেসেজ দিয়ে খবর নিতে। প্রতিদিন ঠিক এই সময়ে মেসেজ আসে মোহের ফোনে। একটা মানুষ এত যত্নশীল হয় কী করে? উত্তর খুঁজে পেল না মোহ।

সন্ধ্যার পরপর একটি গ্র্যান্ড ইভেন্টের আয়োজন হয়েছে। নামি-দামি কত ডিজাইনার, ব্র্যান্ড উপস্থিত হবে সেখানে নিজস্ব স্টাইল নিয়ে। ফারাহর কোম্পানিও তার মাঝে রয়েছে। নিজস্ব মডেলকে তৈরি করতে করতে নাজেহাল অবস্থা তার। নিজের সাদা রঙের গাউনটা পরে এসে মডেল মেয়েটার চুল কার্ল করতে দেখে ক্ষেপে ওঠে সে।
“এই ড্রেসের সাথে স্ট্রেইট চুল মানাবে। বারবার করে বলেছিলাম। তাও আমার কথার হেরফের হয় কী করে?”

ফারাহর এক গর্জনে তটস্থ হয় সকলে। মেকআপ আর্টিস্ট ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
“এখনি চুল স্ট্রেইট করে দিচ্ছি ম্যাম।”

“তোমাকে আর করতে হবে না। নিজের চেহারা জলদি গুম করো। ফাস্ট! আমি করব যা করার।”

মডেল মেয়েটি মিনমিন করে জিজ্ঞেস করল,
“ম্যাম আপনি?”

“না, আমার আত্মা!”

প্রশ্নে ফারাহর বাঁকা উত্তর শুনে তার মুখের উপর কথা বলার সাহস হলো না কারোরই। কিছুটা সময় অতিবাহিত হবার পর একজন স্টাফ ফারাহর নিকট এসে নিচু স্বরে বলে ওঠে,
“ম্যাম, আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।”

ফারাহ প্রচণ্ড বিরক্তির সহিত বলে,
“উফফ… কোন প্রেসিডেন্টের এখন আমার সাথে দেখা করার পায়তারা করার ইচ্ছা হলো?”

মেয়ে স্টাফ আর উত্তর দিলেন না। তার আগেই এক পুরুষালি কণ্ঠের ঝংকার ঠেকল ফারাহর কানে। পুরুষটি বেশ আদুরে স্বরে বলল,
“হ্যালো, ম্যাম! আমি জানি আমার কোনো অ্যাপোয়েন্টমেন্ট নেই কিন্তু জরুরি কাজে আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। একটু সময় কি হবে?”

দুলে ওঠে ফারাহর মনটা। দরজার দিকে চাইতেই চশমা পরিহিত মানুষটার স্মিত হাসি দেখেই ফারাহর বিরক্ত এবং ক্রোধান্বিত মুখশ্রীতে আনন্দের ছাপ ফুটে ওঠে। চিকন ঠোঁটজোড়ায় চলে আসে হাসি। পরক্ষণেই আঁড়চোখে তার স্টাফ আর মডেল মেয়েটিকে দেখে। তারা উৎসুক হয়ে ফারাহর মুখের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে। সঙ্গে সঙ্গে মুখ গম্ভীর করে ফেলল ফারাহ। গলা খাঁকারি দিয়ে স্টাফকে বলে উঠল,
“মেকআপ আর্টিস্টকে ডাকো। মেয়েটার চুল স্ট্রেইট করিয়ে নাও। আমি আসছি কিছুক্ষণের মধ্যে।”

ফারাহ দ্রুত পা ফেলে বেরিয়ে যায়। পেছন পেছন যায় শৌভিক। মডেল মেয়েটি এবার হেসেই স্টাফকে বলে,
“ম্যামের হাজবেন্ড পানির মতো। আর ম্যাম হচ্ছে আগুন। উনার হাজবেন্ডকে দেখার সাথে সাথে উনি এমনভাবে নিভে যান যেন উনি রাগতেই জানেন না।”

স্টাফ মেয়েটিও ফিক করে হেসে ফেলল। ফারাহ নিজের কেবিনে শৌভিকের হাত ধরে নিয়ে এসে সরাসরি শুধালো,
“এই সময় এখানে কী?”

শৌভিক নিজের চশমা খুলে টেবিলে রেখে ফারাহর দিকে ঝুঁকে বলে,
“এখানে তো আমি সবসময়ই আমার শত্রুর মেয়েকে খোঁজার উদ্দেশ্যেই আসি।”

“কিন্তু আপনি তো অনেক ব্যস্ত বলেছিলেন।”

শৌভিক মৃদু হেসে ফারাহর হাত ধরে তার হাতের অনামিকা আংটি ঠিক করে দিতে দিতে বলল,
“কিন্তু আমি তো এটাও বলেছিলাম যে আমি আমার স্ত্রীকে গ্রান্ড ইভেন্টের ড্রেসে কেমন লাগছে দেখতে এখানে আসব।”

ফারাহ সামান্য দূরে সরে গিয়ে নিজের গাউন ধরে একবার ঘুরপাক দিয়ে বলল,
“তাহলে বলুন কেমন লাগছে আপনার শত্রুর মেয়েকে?”

শৌভিক টেবিলের দিকে হেলে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ফারাহর আপাদমস্তক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলল,
“এইজন্যই তো শত্রুর মেয়েটাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। এমন মাধুকরী সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ মেয়েটাকে হাতছাড়া করাই জীবনের সবচেয়ে বড়ো লস। আর এত বড়ো লস খেতে তো শৌভিক রাজি নয়।”

ফারাহ লজ্জায় নুইয়ে পড়ে। শৌভিক তার নিকটে এসে তার চুলে হালকা হাত লাগিয়ে বলে ওঠে,
“একটু কমতি আছে। লেট মি ফিক্স দিস।”

সামান্য বাঁকিয়ে কানের কাছে বিদেশি স্টাইলে খোঁপা করেছিল ফারাহ। শৌভিক ছোটো চুলগুলো এনে ফারাহর কপালের কাছে রাখল। তার বাম হাতের লাল গোলাপের মাঝে তিনটা ফারাহর খোঁপায় গুঁজে দিলো। অতঃপর বাকি ফুলগুলো রেখে ফারাহর মুখটা দুহাতে আগলে ধরল শৌভিক। গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইল ফারাহ। শৌভিক তার প্রিয়দর্শিনীর কপালে চুম্বন এঁকে নিজের অন্তর শান্ত করল। শীতল কণ্ঠে বলল,
“আই এম প্রাউড অফ ইউ ফারাহ জান।”

ফারাহর ঠোঁটের হাসিটুকু মেলে যায় বেশ৷ শীতলতা ছেয়ে যায় সর্বাঙ্গে। খানিকটা উঁচু হয়ে শৌভিকের দাড়ি ভর্তি গালে চুমু দিয়ে বড়ো শ্বাস নিয়ে বলে উঠল,
“থ্যাংক ইউ মাই ডিয়ার হাজবেন্ড।”

এরপর ফারাহ শৌভিকের রাখা বাকি গোলাপ তুলে নিয়ে তার সামনে আয়নার কাছে দাঁড়িয়ে দেখে বলল,
“গোলাপগুলো হাতে নিয়ে ইভেন্টে যাব। কেউ জিজ্ঞেসা করলে বুক ফুলিয়ে বলব আমার হাজবেন্ড দিয়েছে। আই এম ম্যারিড।”

ফারাহর নাক টেনে দেয় শৌভিক। নিজের ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখে ইতিমধ্যে নীলয় ছয়টা কল দিয়ে ফেলেছে। সাথে দুটো মেসেজও দিয়েছে। তাড়াহুড়ো করে ফারাহর গালে আরেকটা চুমু দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে তাহলে আমি আসি। নীলয় অনেকবার কল দিয়েছে। গাড়ি নিয়ে নিচেই আছে ও। দেরি হয়ে যাচ্ছে। একটা জায়গায় যাওয়ার ছিল। তাই ভাবলাম এদিক হয়ে যাই। হাতে মাত্র কয়েকটা মিনিট সময় ছিল।”

ফারাহ বিস্ময় নিয়ে জানতে চায়,
“এইটুকু সময়ের জন্য এখানে আসতে গেলেন কেন?”

“না আসলে এতগুলো চুমু মিস হয়ে যেতো তাই।”

কথা শেষেই তড়িৎ গতিতে কেবিন ছেড়ে বের হয় শৌভিক। এভাবেই কাটছে তাদের সময়। শৌভিক নিজের কথা রেখেছে। ফারাহকে সে এড়িয়ে যাচ্ছে এমনটা বোধ হতে দেয়নি আর কখনোই। সময়ে অসময়ে সামান্য ক্ষণের জন্য ফারাহর নিকট উপস্থিত হয়েছে। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও কত যে ছুতো বের করেছে ফারাহর সঙ্গে দেখা করার! ফারাহও এখন শৌভিককে যেন আগের চেয়ে বেশি বুঝতে শিখেছে। শৌভিকের প্রতিটা পরিস্থিতিতে সঙ্গ দিয়ে গিয়েছে। বুঝদার হতে শিখেছে স্বামীর পাক্কা স্ত্রী এর মতো! গভীর হয়েছে সম্পর্কের বোঝাপড়ার সাথে প্রণয়ের সন্ধি।

সন্ধ্যাবেলা ইথানকে পড়তে বসিয়েছে মোহ। আজকাল পড়াশোনার দিক থেকে বেশ ফাঁকিবাজি শিখেছে ইথান৷ রেজাল্ট ভালো হলেও খানিকটা জোর করেই পড়াতে হয়। ইথান কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“মাম্মা! কোচিং থেকে এক পাহাড় সমান ম্যাথ করতে দিয়েছে। আমি তো ছোটো মানুষ। আমি কি এত কিছু করতে পারব বলো?”

মোহ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“কেন পারবে না? বিকালে তো দাদিমাকে বলছিলে তুমি খুব বড়ো হয়ে গেছো। এখন ছোটো হলে কী করে?”

“ধুর। এতটাও তো বড়ো হইনি তো। সব ম্যাথ না হলে স্যার বলেছে কান ধরে সারা ক্লাস দাঁড় করিয়ে রাখবে। তুমি একটু স্যারের সাথে কথা বলে আমাকে বাঁচিয়ে নাও।”

মোহ চোখ বড়ো বড়ো করে ইথানের দিকে তাকাল। খানিকটা ধমক দিয়ে বলে উঠল,
“একদম না। ঠিকঠাক পড়াশোনা শেষ করো।”

মন মানতে চায় না ইথানের। এত পড়া কি এত ছোটো মস্তিষ্কে ঢোকে? বারবার দরজার দিকে তাকায়। ব্যাগ থেকে বই বের করতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষের পায়ের শব্দ পেয়েই লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে। দরজার কাছে স্বচ্ছ আসতেই ইথান ছুট লাগিয়ে বাবার কোলে উঠে পড়ে। স্বচ্ছ যেন বিষয়টার জন্য প্রস্তুতই ছিল। ইথানকে কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরতেই ইথান স্বচ্ছের কাঁধে মাথা রেখে অভিযোগের সুরে বলল,
“বাবা, আমি এতগুলো ম্যাথ করতে পারব না। তুমি কিছু বলো।”

স্বচ্ছ মুচকি হেসে ইথানের মাথায় হাত রেখে বলে,
“তাই তো! আমার ইথান বাবু এত চাপ নেবে কেন? ও কি ব্যাড স্টুডেন্ট নাকি? একদম চাপ নিতে হবে না সোনা।”

মোহ চোখ রাঙিয়ে তাকায় স্বচ্ছের পানে। তেড়ে এসে বলে,
“শুধুমাত্র আপনার জন্য ইথান ফাঁকিবাজ হচ্ছে। ওর সব কথাতে সায় দিয়ে ওকে নষ্ট করছেন।”

মোহের কথা শুনে ইথান ফের স্বচ্ছকে জড়িয়ে বলল,
“বাবা তুমি একটু মাম্মাকে বোঝাও।”

“কী বোঝাবে আমাকে? আমাকে বোঝালেই আমি বুঝব? নিচে নামো বলছি!”

ইথান নিচে নামে না। স্বচ্ছও ইথানকে আগলে ধরে বলে ওঠে,
“আমার ছেলেকে এত প্রেশার দিলেই আমি মেনে নেব নাকি?”

মোহ চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,
“ও আমার ছেলে।”

স্বচ্ছও জোর গলায় বলল,
“না, আমার ছেলে।”

“আপনার ছেলে বললেই হলো? খবরদার বাড়াবাড়ি করবেন না।”

স্বচ্ছও ভয় পাওয়ার ভান ধরে বলল,
“আহা, ভয়ে তো আমার হৃদপিণ্ড বেরিয়ে এলো আপনার ধমকানিতে ম্যাডাম।”

মোহ অন্যদিকে ফিরে মুখ বাঁকিয়ে উত্তর দিলো,
“ওহ হো! আপনার হৃদপিণ্ডও আছে জানতাম না তো।”

দুজনের কথা কাটাকাটির মাঝে স্বচ্ছের কোল থেকে নিচে তার পকেট থেকে চকলেট নিয়ে ঘর ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল ইথান। সেই সুযোগে স্বচ্ছ মোহের অতি সংলগ্নে এগিয়ে এসে পেছন থেকে মোহকে নিজের মাঝে আগলে নিয়ে ধীর গলায় বলল,
“আছে আছে৷ সেই হৃদয় সবসময় আপনার জন্য অস্থির হয় ম্যাডাম। আপনার জন্য উন্মুখিয়ে থাকে। হৃদয়টা খুবই চতুর। রয়েছে আমার শরীরে কিন্তু কাছে চাইতে থাকে শুধু আপনাকে। কাছে মানে আরো কাছে, অনেক কাছে।”

মোহ স্বচ্ছের দিকে ফিরে তার আঁখিতে আঁখি মিলিয়ে শুধায়,
“কত কাছে?”

“যতটা কাছে এলে দূরত্ব নামক শব্দ একবারে মুছে যাবে ততটা কাছে।”

‎মোহকে নিজের সামনাসামনি ঘুরিয়ে নেয় স্বচ্ছ। সত্যি সত্যিই দূরত্ব শব্দটাকে ঘুচিয়ে নিজের সঙ্গে লেপ্টে নেয় মোহকে। তৎক্ষনাৎ মোহ হালকা হেসে স্বচ্ছের পেটে চিমটি কেটে স্বচ্ছের সমস্ত অনুভূতি উড়িয়ে দেয়। হঠাৎ এমন হওয়ায় চোখমুখ খিঁচে দূরে সরে যায় সে। মোহ টাওয়াল এনে স্বচ্ছের মাথায় ঝুলিয়ে দিয়ে বলে,
‎”আপাতত ফ্রেশ হয়ে আসুন। ইনজয় দ্যা শাওয়ার। ওকে?”

‎মোহ ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে উদ্যত হয়। কিন্তু একরোখা স্বচ্ছ নিজের অনুভূতির দফারফা মেনে নিতে পারেনা। ফের আটকায় মোহকে। টাওয়াল দিয়েই পেঁচিয়ে ধরে আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্ত করে। কড়া কণ্ঠে বয়ান করে,
‎”আমাকে এভাবে পাগল বানিয়ে নিজে পালিয়ে গেলে তো আমি সহ্য করব না। এমনি দিনভর আপনাকে না দেখার তৃষ্ণা আমার গলা থেকে হৃদয় অবধি শুকিয়ে ফেলে মিসেস মোহ। এরপর বাড়ি ফিরে যদি প্রথমেই তীরের মতো দৃষ্টি ছুঁড়তে থাকেন তাহলে তো সেটা অন্তরে লাগে। সেসব কষ্ট লাঘব না করেই পালালে হবে?”

‎মোহ দরজার দিকে তাকিয়ে স্বচ্ছকে ধাক্কিয়ে সরার চেষ্টা করে বলে উঠল,
‎”দরজা কিন্তু খোলা আছে। খুব খারাপ হবে।”

‎স্বচ্ছ স্মিত হেসে মোহের চোখেমুখে ফুঁ দিয়ে জানায়,
‎”তোমার এই একটা বিষয়ে ভয় আর লজ্জা আমার কী যে ভালো লাগে।”

‎মোহের কোমড়ে একহাত রেখে অন্যহাত মোহের হাতে রেখে তা প্রসারিত করে নাচের ভঙ্গিতে দরজার দিকে মোহকে নিয়ে এগিয়ে গেল স্বচ্ছ। সামান্য উচ্চস্বরে বলল,
‎”সবাই দেখো মোহ আর তার স্বামী কী করছে।”

‎এমন নির্লজ্জের মতো কাণ্ডে মোহ বিস্ফোরিত চোখে চাইল। অন্যহাত দিয়ে স্বচ্ছের ঠোঁট চেপে ধরে চাপা স্বরে বলে উঠল,
‎”দিনদিন কিন্তু আপনি নিজের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। চুপ করুন।”

‎মোহের হাতে স্বচ্ছ মৃদু কামড়ে ধরতেই স্বচ্ছের ঠোঁট থেকে হাত নামিয়ে নেয় সে। মোহের গালে হাত রেখে বলে,
‎”এভাবে কেউ কাউকে চুপ করায়? বোকা মেয়ে।এসব পুরোনো পদ্ধতি। আধুনিক যুগে আধুনিক পদ্ধতি শিখতে হবে না?”

‎আর কিছু বলার সুযোগ হয়নি মোহের। দুইজোড়া ওষ্ঠদ্বয় মিলে যায়। স্বচ্ছ মোহকে দুহাতে আঁকড়ে ধরে। মোহ স্বচ্ছের বুকের কাছের শার্টের অংশ খামচে ধরতেই বোতাম ছিঁড়ে যায় সেখানকার। স্বচ্ছ ঠোঁট সরিয়ে একচোখ টিপে বলে,
‎”এটা হচ্ছে চুপ করানোর আধুনিক যুগের উপায়।”

‎মাথা নিচু করে নিজের বোতাম ছিঁড়ে শার্ট দেখে স্বচ্ছ। তার বুকের অংশ দৃশ্যমান। মোহের পানে চেয়ে বলে,
‎”এটা কেমন প্রতিশোধ?”

‎মোহ স্বচ্ছের হাতে বোতাম ধরিয়ে বলল,
‎”আপনি যেমনটা ভাবেন তেমন প্রতিশোধ। এখন ফ্রেশ হোন। অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

‎স্বচ্ছ এবার সত্যিই ওয়াশরুমের দিকে ধাবিত হয়। তবুও ঘাড় ঘুরিয়ে বলে ওঠে,
‎”আর হ্যাঁ আমি যেই পদ্ধতি শেখালাম সেটা কিন্তু সবার জন্য না শুধু আমার জন্য প্রযোজ্য।”

‎স্বচ্ছের কথাতে হাসি পায় মোহের। কতকিছু যে বদলালো কিন্তু স্বচ্ছ ব্যতীত। স্বচ্ছ আগের কোম্পানির জব ছেড়ে দিয়েছে। দুই বছর ধরে নতুন কোম্পানিতে কাজ করছে। সেই সঙ্গে লোন নিয়ে নিজের বন্ধু সাথে বিজনেস শুরু করেছে। দেড় বছরের মধ্যেই মোটামুটি ভালো জায়গায় ব্যবসা ধাবিত হয়েছে। ব্যবসা আরো বড়ো হলে নিজের জব ছেড়ে দেবে স্বচ্ছ। মোহ মানুষটার জীবনের কোনো সিদ্ধান্তে বাঁধা হয়নি। শুধু পাশে থেকেছে। কখনো ভেঙে পড়লে নিজেকে আবার জোড়া লাগানোর উৎসাহ দিয়েছে। এটাই তো প্রকৃত জীবনসঙ্গী!

‎বাড়ির সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে এলো সৌমিত্র। গায়ে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট আর সাথে কালো টাই আর হাতে গোল্ডেন ঘড়ি। চুলগুলো সারাদিন পর সামান্য এলোমেলো হয়েছে। হাতে কালো রঙের ফাইলের ব্যাগ রয়েছে। একবারে ফর্মাল লুক! চেহারায় সারাদিন কাজ করার পর সামান্য ক্লান্তির ছাপ বোঝা যায়। ইথান নিজের বাবার দেওয়া চকলেট খেতে না খেতেই সৌমিত্রকে দেখে খুশি দ্বিগুণ হয় তার। তড়িঘড়ি করে সৌমিত্রের দিকে এগোতেই সৌমিত্র তার প্যান্টের পকেট থেকে চকলেট বের করে ইথানের দিকে ধরে মুচকি হাসে আর বলে,
‎”বাবার দেওয়া চকলেট তো শেষই হলো না। এখন আরেকটা চকলেট চাই? তোমার মা জানলে খবর আছে।”

‎ইথান মুখ চেপে হাসতে হাসতে বলল,
‎”মাম্মা জানার আগেই খেয়ে ফেলব।”

‎সৌমিত্র ইথানের চুল এলোমেলো করে দিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকায়। মিসেস জেবা বেরিয়ে আসতেই সে ব্যস্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,
‎”একটু বেশি করে কফি করে দিও মা। পারলে ভাবিকে করতে বলো প্লিজ। ভাবির কফি স্ট্রং বেশি। কিছু কাজ আছে রাতে শেষ করব তাই লাগবে।”

‎”আচ্ছা, ঠিক আছে। এখনি আবার কাজে বসে যাস না। আগে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট কর। রাতের খাবার খা। তারপর বাকিসব। কাজে বসলে আর উঠতে চাস না তুই।”

‎সৌমিত্র মায়ের কথায় সায় দিয়ে বলল,
‎”ওকে, ওকে। তুমি যা বলবে তাই হবে।”

‎রাতে খেতে বসে সবাই। স্বচ্ছ ইথানকে খাইয়ে দেয়। মোহ মিসেস জেবাকে খাবার বেড়ে দিতে দিতে ইথানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‎”তুমি সব ম্যাথ করেছ?”

‎ইথানের মুখ চুপসে যায়। মিনমিন করে বলে,
‎”অর্ধেক হয়েছে। অনেকগুলো দিয়েছে স্যার।”

‎”এত টালবাহানা করলে কিন্তু চলবে না ইথান।”

‎মিসেস জেবা তাদের কথোপকথনে বাগড়া দিয়ে ইথানের পক্ষ নিয়ে বললেন,
‎”মোহ, ও ছোটো মানুষ। মাঝে মাঝে একটুআধটু এমন করবেই।”

‎মোহ কিছু বলার আগেই সৌমিত্র বলে,
‎”না, মা। ছোটো মানুষ একটু ফাঁকিবাজি এমনিই করে। তার মধ্যে ওর এই স্বভাবকে সায় দিলে ও বিগড়ে যাবে। কিন্তু ভাবি ওকে শক্ত করেও বোঝানো যাবে না।”

‎সৌমিত্র একটু থেমে ইথানের দিকে তাকায়। গলার স্বর নরম করে বলে,
‎”ইথান বাবু, জীবনে পড়াশোনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস। এটা ঠিক না থাকলে জীবনের কোনো অধ্যায় তুমি পূর্ণ করতে পারবে না। এই কথা এখন হয়ত বুঝবে না। বড়ো হলে বুঝবে। নিজের সব স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে হলে আমাদের উপরে উঠতে হয়ত। আর উপরে ওঠার সবচেয়ে জরুরি ধাপ পড়াশোনা। বুঝেছ?”

‎ইথান একটু চুপ থেকে সৌমিত্রের কঠিন কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করে। তারপর জিজ্ঞাসা করে,
‎”পড়াশোনা করলে নিজের ইচ্ছা মতো সব করতে পারব?”

‎”পারবে।”

‎সৌমিত্রের কথায় আশ্বস্ত হয় ইথান। মনে মনে ভেবে নেয় খেয়েই ফের পড়তে বসবে। সৌমিত্র নিজের খাবার নিজে নিয়ে আরেকটু খায়। খাওয়া শেষ করে খানিকটা তৃপ্তি নিয়ে বলে,
‎”খাবার ভালো ছিল। ভাবি খাওয়া শেষে ঘরে কফিটা পৌঁছে দিয়ে আসবেন প্লিজ। আমি ঘরে যাচ্ছি। আর ভাইয়া ইলেক্ট্রিসিটির বিল আমি আসার সময় দিয়ে এসেছি। তুমি যেন দিতে যেও না।”

‎সৌমিত্র উঠে যায়। পুরোটা সময় বাকিরা নীরব ছিল। মিসেস জেবা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন। মনের মধ্যে অজস্র নিরাশা জমে থাকে। কোথা থেকে কোথায় পৌঁছেছে সৌমিত্র। কত ভিন্নতা এসেছে তার জীবন চিত্রে শুধুমাত্র একটা ঘটনায়। তার বাড়ি মাতিয়ে রাখার স্বভাব বিলীন হয়ে গেছে। আচরণে শুধু তার গাম্ভীর্য! দরকারের চেয়ে বেশি কথা বলেনা সে। অথচ অতীতে তার মুখ বন্ধ করা দায় হয়ে যেত। মুখ ফসকে কত কথা বলে বাড়ি মাথায় তুলেছে তার হিসেব নেই। চেহারায় সেই চাঞ্চল্য ভাবটাও হারিয়ে গেছে। দরকারে অদরকারে ঝলমলে হাসি মুখে থাকা ছেলেটা এখন খুব বেশি হলে হালকা হাসে। দুবছর হলো চাকরি পেয়ে এক দায়িত্বশীল পুরুষ হয়ে উঠেছে সে। ভাইয়ের সঙ্গে মিলে বাড়ির সব কর্তব্য পালন করে। মিসেস জেবা উনার আগের সেই ছোটো ছেলেকে মনে করেন। বারবার ফিরে পেতে চান। কিন্তু সেটা বোধহয় আদতেও সম্ভব নয়।

‎ক্লাসের বাচ্চাদের পরীক্ষার খাতা দেখা শেষ করে হাফ ছাড়ে মোহ। ঘড়ির দিকে চোখ বুলাতেই দেখে প্রায় এগারোটা বাজে। মাসে একবার করে স্কুলের বাচ্চাদের পরীক্ষা নেয় সে। আজও সেই দিন ছিল। খাতাগুলো পাশে রেখে দিতেই ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে দেখল স্বচ্ছ নিজের ল্যাপটপে তার সঙ্গে বাবার ছবি দেখছে। মোহ উপলব্ধি করল নিশ্চয় স্বচ্ছ তার বাবাকে মিস করছে। তবে তাকে জিজ্ঞেসা করলে বিষয়টা সুনিপুণভাবে এড়িয়ে যাবে সেটা মোহের জানা। তাই মোহ হালকা কেশে ওঠে। স্বচ্ছ সাথে সাথে ল্যাপটপ বন্ধ করে একপাশে রেখে মোহের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“ম্যাডাম, স্কুলের কাজ শেষ হলে কি আমার জন্য একটু সময় হবে?”

“যদি বলি না হবে না তাহলে?”

“তাও সমস্যা নেই। আমি নিজের হক নিজে ছিনিয়ে নিতে জানি।”

কথা শেষেই স্বচ্ছ মোহের হাতটা ধরে টেনে নিজের নিকটে নিয়ে আসে। স্বচ্ছের বুকের কাছে মাথা রাখে মোহ এবং শান্ত গলায় বলে,
“ফারাহকে কল দিয়েছিলেন? আজ তো ওর ইভেন্ট ছিল।”

“দিয়েছিলাম। মহারানি মহা ব্যস্ত বোধহয়। ইভেন্টে থাকায় কল ধরতে পারেনি হয়ত।”

“আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়েছে ওর। সাদা ড্রেসে একদম পুতুলের মতো লাগছিল।”

“বাহ্, বাহ্! ভাবি আসার পর থেকে ভাইয়ের আর কোনো কদরই নেই দেখছি। আমার কলটা অবধি ধরল না আর তোমায় ছবিও পাঠিয়ে দিলো। এটা কেমন ভেদাভেদ।”

মোহ ফিক করে হেসে উঠে প্রত্যুত্তর করে,
“আপনি প্রচণ্ড রকমের হিংসুটে মানুষ বুঝলেন?”

“আর কত অপবাদ পাব!”

মোহ আর জবাব দেয় না। স্বচ্ছ একটু চুপ থেকে হুট করে বলল,
“হকের কথা বলতে গিয়ে একটা ব্যাপার মনে পড়ল।”

মোহ কৌতূহলী চাহনি চাইতেই স্বচ্ছ তার পাশের বক্স ড্রয়ার খুলে অনেকগুলো টাকা বের করে। তারপর মোহের হাতে যত্নের সহিত তুলে দিয়ে তার হাতে হাত রাখতেই মোহ বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে,
“হঠাৎ এত টাকা আমায় দিচ্ছেন কেন?”

“তোমার হক। তোমার মোহরানা। যেসময় আমার বিয়ে হয় সেসময় তোমার হক পূরণ করার মতো সাধ্য আমার ছিল না। আজ সামান্য সাধ্য হয়েছে। আমি আমার অধিকারের কোনো অংশে কম পায়নি। তোমারটা বাকি রেখে খারাপ স্বামী কেন হবো বলো তো? এতে পঞ্চাশ হাজার আছে।”

মোহ টাকাগুলো রেখে স্বচ্ছের গালে হাতটা রেখে বলল,
“আমার সবচেয়ে বড়ো অধিকার আমি বিয়ের সময় পেয়ে গেছি। আপনাকে পাওয়াই আমার অধিকার। আপনিই আমার হক। জানি টাকাগুলো নেওয়ার নিয়ম আছে। তাই নিজের কাছেই রেখে দিলাম।”

স্বচ্ছ খুশি হয় বেশ। শান্তির শ্বাস ফেলে। মোহ তাদের ঘুমানোর বালিশ ঠিক করতে করতে ফট করেই বলে,
“মায়ের মুখে শুনছিলাম কাল আপনার বাবার জন্মদিন।”

মুখের রঙ পাল্টায় স্বচ্ছের। হালকা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,
“হুমম। আগে তাকে কত সারপ্রাইজ দিতাম। এখন তো সহজে দেখাও করা হয়না।”

“তাহলে চলুন দেখা করতে যাই কাল।”

চমকে তাকাল স্বচ্ছ। থেমে থেমে বলল,
“তুমি যাবে?”

“যাব তো। এতগুলো বছর উনার প্রতি রাগ পুষেছি। কিন্তু হঠাৎ উপলব্ধি হলো সেই ক্রোধ আর নেই। যখন থেকে মায়ের মুখে শুনলাম মানুষটা আগের মতো নেই। সেদিন থেকে দেখা করতে ইচ্ছে করে। দেখতে মন চায় কতটা বদলেছেন উনি? জানতে মন চায় আমাকে দেখে কী অভিব্যক্তি হবে উনার? হাজার হলেও উনি আপনারই বাবা।”

স্বচ্ছ কী বলবে বুঝে উঠতে পারেনা। শুধু মনের মাঝে টানটান উত্তেজনায় টগবগিয়ে ওঠে হৃৎস্পন্দন। সে মোহের হাতের পিঠে চুম্বন এঁকে জানায়,
“থ্যাংক ইউ, মোহময়ী।”

রাত গভীর হয়। নিস্তব্ধতা ছড়ায় ভুবনে। সৌমিত্র খোলা জানালার বাহিরে তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি পড়ছে সামান্য। নিজের প্রজেক্ট কমপ্লিট করে ল্যাপটপ, ফাইল বন্ধ করল সে। কফির কাপে শেষ চুমুক দিয়ে টেবিলের একপাশে রেখে ড্রয়ার খুলে লাইটার নিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। ধোঁয়ায় ভরে গেল ঘর। সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে জানালার পাশে দাড়ালাম সে। নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বৃষ্টি দেখল মনোযোগ দিয়ে। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“কত যে বর্ষণ আসে আর যায়। কিন্তু প্রেমের বর্ষণ একবারই এলো। আমার জীবনে দীর্ঘ স্থায়ী হলোই না।”

সৌমিত্র তার ঘরের ঘড়ির দিকে চাইল। ঘড়িটা উল্টোদিকে চলছে একভাবে। ঘড়ির কাঁটা সৌমিত্র ইচ্ছেকৃত বদলে দিয়েছে। তার উন্মাদ মন অদ্ভুত ভাবনায় ভুগছে। যেই সময় সব শেষ করেছে সেই সময় থেকে যদি পিছনে যাওয়া যায়? তাই ঘড়ি উল্টো পথে ঘুরিয়েছে সে। ঘড়ির দিকে অপলক দেখে বলে,
“সব কষ্টই সয়ে গেছে। আমিও বদলে গেছি। ঠিক আপনার মনেরই মতো।”

চলবে…