রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-০৪

0
62

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলকের চোখ খুলতেই সে নিজেকে আবিষ্কার করে তার নিজের রুমে। পলক একদম অবাক হয়ে যায়। ধুপ করে ঘুম থেকে উঠে বলে,
“আমি তো কাল একটা পরিত্যক্ত বাসায় ছিলাম,,তাহলে এখানে কি করে এলাম?”

বলেই সে কালকের রাতের কথা ভাবতে থাকে। কাল রাতে রক্তিম পূর্ণিমা ছিল। পলকের মনে পড়ে চাঁদের আলোয় সে জ্ঞান হারিয়েছিল তারপর কোন এক গহ্বরে ঢুকে পড়ছিল। এরপর আর তার কিছু মনে নেই। পলক উঠে দাঁড়ায়। উঠে দাঁড়িয়ে অবাক হয়৷ কারণ তার পরণে একটা সাদা রঙের পাজামা এবং সালোয়ার। পলকের মনে পড়ে কাল রাতে সে শাড়ি পড়ে ছিল তাছাড়া বিয়ের পর থেকে তো সে কোনদিনও সালোয়ার পড়ে নি। তাহলে আজ কিভাবে সে এই সালোয়ার পড়ে আছে?

এমন অবাক ভাব নিয়েই সে বাইরে বের হয়৷ রুমের বাইরে আসতেই যেন পলক আরো বেশি অবাক হয়। কারণ সে দেখতে পায় পারভেজ ইসলাম হাসি মুখে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার হাতে কোন লাঠিও নেই! লাঠি ছাড়াই বেশ স্বাভাবিক ভাবে হাটতে পারছেন তিনি। এমনকি তাকে দেখতে অনেকটা কম বয়স্ক লাগছে। পারভেজ ইসলাম পলকের কাছে এসে বলে,
“তোর ঘুম ভাঙল? আজ তাহলে আমাকে আর কষ্ট করে তোকে ডেকে দিতে হলো না।”

পলক কিছু বলবে কি তার আগেই তাকে আরো বেশি অবাক করে তার মা নূর বেগম সামনে উপস্থিত হয়। পলক আরো বেশি হতবাক। তার মা তো শয্যাশায়ী ছিল। অথচ এখন কি স্বাভাবিক ভাবে হেঁটে আসছে। তাকেও অনেকটা কম বয়স্ক লাগছে। নূর বেগম এগিয়ে এসে বলেন,
“তুই উঠে পড়েছিস মা? তাহলে জলদি খেতে চলে আয়। আমি তোর, তোর বাবার আর পাভেলের জন্য খাবার বাড়ছি।”

পলক তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি ঠিক আছ তো আম্মু?”

“আমার আবার কি হবে?”

পলক কিছু বলবে এমন সময় পারভেজ সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“আম্মু, জলদি খেতে দাও। আমায় ভার্সিটিতে যেতে হবে। আজ থেকে আমার মাস্টার্সের ক্লাস শুরু। আমি প্রথম দিন লেইট করতে চাচ্ছি না। আর পলককেও আমি নিয়ে যাব। ওকে জলদি তৈরি হতে বলো।”

পলকের এবার অজ্ঞান হবার জোগাড়। তার ভাই তো চাকরি করে আর সে তো ভার্সিটির পাট বিয়ের পরই চুকিয়ে দিয়েছে। তাহলে এসবের মানে কি? পলক সবার উদ্দ্যেশ্যে বলে ওঠে,
“এসব হচ্ছেটা কি? আর ভাবি কোথায়?”

পাভেল রেগে বলে,
“ভাবি মানে? তুই কি মজা করছিস নাকি?”

“মজা কেন করব ভাইয়া? আমি তো রুহানি ভাবির খোঁজ চাচ্ছি।”

“এই রুহানিটা আবার কে? সকাল সকাল তোর মাথাটা আবার খারাপ হয়ে গেল না তো?”

“আরে রুহানি ভাবি, তোর স্ত্রী।”

পারভেজ এবার হাসতে হাসতে অস্থির হয়ে যায়। নূর বেগম বলেন,
“এসব তুই কি মজা করছিস পলক? পাভেলের আবার কবে বিয়ে হলো?”

পাভেল বলে,
“আম্মু, আমার মনে হয় তোমার মেয়ে কোন স্বপ্ন-টপ্ন দেখেছে। যাইহোক, ওকে জলদি তৈরি হতে বলো, ভার্সিটিতে যেতে হবে। আজ তো ওর ভার্সিটিতে প্রথম দিন। আমার সাথে চলুক তাহলে আর ওকে কেউ কোন র‍্যাগ ট্যাগ দেবে না।”

পলক বলে ওঠে,
“ভার্সিটিতে আমার প্রথম দিন মানে?”

“প্রথম দিন মানে আজ তোর ভার্সিটি জীবন শুরু হতে চলেছে। এখন আর বেশি কথা না বলে তৈরি হতে যা। হাতে বেশি সময় নেই।”

পলক অস্থির হয়ে বলে,
“তোমরা যে সবাই কি বলছ আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আজকের তারিখটা কত বল তো?”

পাভেল বিরক্ত হয়ে বলে,
“আজ ৫ই জানুয়ারি।”

“সালটা কত?”

পাভেল এবার চরম বিরক্তি নিয়ে বলে,
“তুই কি পাগল হলি নাকি? সালটাও ভুলে গেছিস। এটা ২০১৯ সাল।”

পলকের এবার সবথেকে বড় ঝটকা খাওয়ার পালা। সে ত্বরিত বলে ওঠে,
“এটা কিভাবে সম্ভব?”

“উফ! তুই জলদি তৈরি হয়ে নে তো। আমার এত নাটক আর সহ্য হচ্ছে না।”

বলেই পাভেল চলে যায়। নূর বেগমও তার সাথে সাথে চলে যায়। পারভেজ ইসলাম পলকের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“আমার মনে হয়, তুই একটু অসুস্থ। সেরকম হলে আজকে একটু বিশ্রাম নিতে পারিস।”

“না, আব্বু। আমি ঠিক আছি।”

বলেই পলক নিজের রুমে আসে৷ রুমে টাঙানো ক্যালেন্ডারের দিকে তাকায়। এতক্ষণে ব্যাপারটা তার কাছে পরিস্কার হতে থাকে। পলক বলে ওঠে,
“তাহলে কি গতকাল রাতের রক্তিম পূর্ণিমায় বিশেষ কিছু ঘটেছে? আমি হঠাৎ করে ২০২৪ থেকে ২০১৯ এ চলে এসেছি। মানে ৫ বছর আগে! তাহলে কি জীবন আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিল?”

পলকের এবার একটু ভালো লাগা তৈরি হয়। কিছু সময়ের জন্য সবটা স্বপ্ন মনে হলেও এখন বাস্তব লাগছে। পলক এখন এমন একটা সময়ে চলে এসেছে যেই সময় তার জীবন একদম সাজানো গোছানো এবং সুন্দর ছিল। শুধু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত তার সাজানো গোছানো জীবন এলোমেলো করে দেয়। তবে এবার যদি সে দ্বিতীয় সুযোগ পায় তবে অবশ্যই সেসব শুধরাবে।

পলক একটা স্বস্তির হাসি হেসে বলে,
“যদি সত্যিই এমন হয়ে থাকে তাহলে এবার আমি এই সুযোগকে কাজে লাগাব। নিজের অতীতে করা সব ভুল শুধরে নেব যাতে আমার ভবিষ্যৎ জীবন সুখের হয়। অতীতের কোন ভুলের পুনরাবৃত্তি আমি করবো না৷ বিশেষ করে নিজের জীবনের “আরাফাত” নামক সবথেকে বড় ভুলটাও শুধরে নেব।”

★★
খাওয়া দাওয়া শেষে পলক পাভেলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“চল ভাইয়া, আজ আমায় ভার্সিটিতে নিয়ে চল।”

“আচ্ছা, তুই বাইরে গিয়ে অপেক্ষা কর। আমি বাইকটা বের করছি।”

পলক তাই করে। বাইরে আসতেই হঠাৎ তার মনে পড়ে যায় ৫ বছর আগে প্রথমদিন যখন তার ভাই তাকে ভার্সিটিতে নিয়ে যাচ্ছিল তখন মাঝরাস্তায় বাইকের পেট্রোল শেষ হয়ে গেছিল। যার জন্য তাদের অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। যদিও সঠিক সময় ভার্সিটিতে পৌঁছাতে পেরেছিল কিন্তু কম করে হলেও ২/৩ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হয়েছিল। এটা ভেবেই পলক পারভেজের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“শোন, মোড়ের মাথায় যে পেট্রোল পাম্পটা আছে সেখান থেকে গাড়িতে পেট্রোল ভড়ে নিস। মনে হয় পেট্রোল একটু কম আছে।”

পাভেল পাট নিয়ে বলে,
“কালই পেট্রোল ভড়িয়েছি আর তুই কম বললেই হবে নাকি!”

“বিশ্বাস না হলে চেক করে দেখ।”

পাভেল বাইকটা চেক করতেই অবাক হয়ে বলে,
“তাই তো!”

পলক হেসে বলে,
“দেখলি! যদি তুই পেট্রোল না ভড়াতি তো মাঝরাস্তায় গিয়ে আমাদের অকুল পাথারে পড়তে হতো। তারপর ২/৩ কিলোমিটার হেঁটে পেট্রোল পাম্পে যেতে হতো। যদিও ভার্সিটির প্রথম দিন ক্লাস দেরিতে শুরু হবে তাই অসুবিধা হবে না। কিন্তু তাও আমাদের তো ভোগান্তি পোহাতে হতো।”

পাভেল অবাক হয়ে বলে,
“কিন্তু তুই কিভাবে বুঝলি যে বাইকে পেট্রোল কম আছে।”

পলক একটা দূর্বোধ্য হাসি দিয়ে বলে,
“এটাই তো!”

পাভেল আর কথা না বাড়িয়ে নিজে বাইকে বসে পলককে বাইকে উঠে বসতে বলে। পলক উঠে বসতেই বাইকটা স্টার্ট দেয়। অতঃপর মোড়ের মাথায় গিয়ে পেট্রোল ভড়ে নেয়। যার ফলে এবার আর কোন ভোগান্তি হয়না। পলক এটা দেখে মৃদু হেসে বলে,
“এভাবেই আমি চাইলে ভবিষ্যতকে পরিবর্তন করতে পারব! অতীতের সব ভুল শোধরাতে পারব!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨