রক্তিম পূর্ণিমা পর্ব-০৭

0
68

#রক্তিম_পূর্ণিমা
#পর্ব_৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

পলক মেহরাজের সেবা শুশ্রূষা করে নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। রাস্তায় এসে দাঁড়াতেই পাভেল পলককে বাড়িতে নিয়ে এলো।

বাড়িতে এসে পলক বসে পড়লো খাতা কলম নিয়ে। তার জীবনে এখন অনেক দায়িত্ব। আগে একটা লিস্ট তৈরি করতে হবে যে সে কি কি করবে। কিভাবে অতীতটাকে পাল্টে নিজের এবং নিজের প্রিয়জনদের জীবন আরো সুন্দর করে গঠন করবে। পলকের এহেন ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে হট্টগোলের শব্দ শুনতে পেরে বাইরে এলো। এসেই দেখল পাভেল তার মাকে জড়িয়ে ধরে আছে। পারভেজ ইসলাম ও নূর বেগম দুজনেই বেশ খুশি লাগছে। পলককে আসতে দেখেই পাভেল পলকের কাছে এসে বলল,
“একটা খুশির খবর আছে পলক জানিস,,”

পাভেলকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই পলক বললো,
“তুই একটা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছিস। তাইতো?”

পাভেল অবাক হয়ে বলল,
“তুই কিভাবে জানলি?”

পলক উত্তরে কিছু বললো না। পাভেল কিছুক্ষণ থেমে অতঃপর বলল,
“আমার সফটওয়্যার বিষয়ে ধারণা থাকায় চাকরি পেয়ে গেলাম। মাস্টার্স শেষ করার পর আরো ভালো পোস্টে নিয়োগ পাবো।”

পলক অবাক হলো না। কারণ এসব সে আগেও শুনেছে। পারভেজ ইসলাম বলল,
“এটা তো অনেক খুশির খবর। আমার ছেলে এত ভালো একটা চাকরি পেল।”

নূর বেগম বললেন,
“চাকরিটা যখন পেয়েছে তখন এবার ওর বিয়ের ব্যবস্থা করো। একটা ভালো মেয়ে দেখে আমাদের ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করে দেই।”

পারভেজ ইসলাম বলেন,
“এটা একদম ঠিক বলেছ তুমি। তা পাভেল, তোর কি পছন্দের কেউ আছে? থাকলে আমাদের বলতে পারিস।”

পাভেলের মুখের হাসি হঠাৎ মিলিয়ে যায়। সে খানিক বিরস মুখেই বলে,
“না, তেমন কেউ নেই।”

“তাহলে তো আমাদের পছন্দের মেয়েকেই তুমি বিয়ে করতে পারো। তাই না?”

পাভেল মাথা নাড়ায়। পলক বিচক্ষণ দৃষ্টিতে পাভেলের দিকে তাকায়। তার কেন জানি মনে হচ্ছিল পাভেল কিছু লুকাচ্ছে। যদিও ৫ বছর আগে অতীতে সে বিষয়গুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি কিন্তু বর্তমানে বিষয়টা আলাদা। তাকে ভবিষ্যতটা সুন্দর করতে হলে অতীতে কোন ভুল কিছু ঘটে থেকে থাকলে তাকে শোধরাতে হবে।

পাভেল নিজের রুমের দিকে রওনা দিলে পলক তার পিছন পিছন যায়। পাভেল পলককে নিজের পেছনে আসতে দেখে বলে,
“তুই কি কিছু বলতে চাস আমায়?”

পলক সাহস করে বলে ফেলে,
“তোর কি সত্যি কাউকে পছন্দ নেই, ভাইয়া?”

পাভেল একটু থেমে বলে,
“না রে নেই। তুই আমাকে আর জ্বালাস না তো। আমি অনেক টায়ার্ড হয়ে আছি একটু বিশ্রাম নিতে দে।”

বলেই পাভেল নিজের রুমে চলে যায়। পলক ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে বলে,”আজ ৫ই জানুয়ারি ২০১৯, ৩০ জানুয়ারি ভাইয়ার বিয়ে হয় ভাবির সাথে। সে হিসেবে আমার হাতে একমাসেরও কম সময় আছে। এর মধ্যেই যা করার করতে হবে। রুহানি ভাবি এই বাড়ির জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই আমাকেই ব্যাপারটা সামলাতে হবে।”

★★★
পলক নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠে দেখে বিকেল হয়ে গেছে। পলক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমায় এভাবে শুয়ে বসে থাকলে হবে না। অতীতে যখন একবার ফিরে এসে জীবনে নতুন সুযোগ পেয়েছি তো এবার সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।”

বলেই পলক নিজের রুম থেকে বাইরে আসে। পারভেজ ইসলামকে দেখতে পেয়েই সে বলে,
“আব্বু, আমার সাথে একটু বাইরে চলো তো।”

“কোথায় যাব?”

“সেটা গেলেই দেখতে পারবে।”

বলেই সে পারভেজ ইসলামকে নিয়ে ব্যাংকে চলে যায়। ব্যাংকে গিয়ে পারভেজ ইসলামকে একটা ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিয়ে বলে,
“এখন থেকে তুমি এই একাউন্টে টাকা রাখবে তোমার আর মায়ের জন্য।”

পারভেজ ইসলাম বলেন,
“এসবের কি দরকার ছিল? আমাদের কাছে তো তুই আছিস, পাভেল আছে। তোরাই তো আমাদের ভবিষ্যত।”

“কারো ভরসায় থেকো না আব্বু। মানুষ বদলাতে সময় নেয় না। আমায় কথা দাও যে, তুমি এখানে নিয়মিত টাকা রাখবে।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে।”

“এই টাকা কিন্তু কোন কাজে খরচ করবে না। আম্মু বা ভাইয়াকেও জানাবে না।”

“আচ্ছা, আচ্ছা।”

পলক একটার স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। পলক বাসায় ফিরে একটু ফ্রেশ হয়ে সামান্য নাস্তা খেয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

পলক একবার বিছানার এদিক তো আরেকবার অদিক গড়াগড়ি করছিল কিন্তু তার দুচোখে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। হঠাৎ কিছু একটা মনে পড়তেই সে উঠে বসে।

পাভেলের রুমের বাইরে গিয়ে দেখে দরজার ছিটকানি লাগানো। পলকের মনে সন্দেহ জাগে। তাই সে তাদের বাসার ছাদে চলে যায়। ছাদে গিয়ে দেখে পাভেল ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। পলক দূর থেকেই শুনতে পায় পাভেলের বলা কথাগুলো,
“তুমি কেন একটু সাহসী হতে পারলে না জান্নাত? তুমি যদি একটু সাহস নিয়ে তোমার পরিবারকে আমার কথা জানাতে তাহলে আমিও আমার পরিবারকে বলে আমাদের ব্যাপারটা ম্যানেজ করতে পারতাম।”

বিপরীত দিক থেকে কি বলছে সেটা পলক শুনতে পায়না। তবে পাভেল ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,
“হতে পারে তোমরা অনেক বড়লোক। তোমার বাবা তোমার সাথে তোমার চাচাতো ভাইয়ের সম্মন্ধ করে রেখেছেন। কিন্তু তারমানে আমাদের এতদিনের ভালোবাসা তো মিথ্যা হয়ে যায় না, জান্নাত। তুমি কি আমার জন্য নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না।”

কিছুক্ষণ পরেই পাভেল তার ফোনটা তুলে একটা আছাড় মা*রে। ফোনটা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। পলক এগিয়ে গিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে বলে,
“এসবের মানে কি ভাইয়া? তুই কি কাউকে ভালোবাসিস? সত্যি করে বলবি।”

পাভেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“তুই যখন সবটা শুনেই ফেলেছিস তখন আর তোর থেকে কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। হ্যাঁ, আমি ভালোবাসি একটা মেয়েকে। ওর নাম জান্নাত।”

“সমস্যাটা কি?”

“জান্নাতে একজন ধনাঢ্য প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে। তার বাবা-চাচা দুজনেই রাজনীতির সাথে জড়িত। জান্নাত আমার জুনিয়র ছিল কলেজে। ওখানেই আমাদের পরিচয় এবং প্রণয়। ও বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে পড়াশোনা করছে। আমাদের দীর্ঘ ৬ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু জান্নাত সবকিছু করেছে গোপনে। কারণ ওর পরিবার ওকে অনেক শাসনে রাখে। এতদিন ও আমায় বলত একটা ভালো চাকরি জোগাড় করে ওর পরিবারের কাছে সম্মন্ধ নিয়ে যেতে। ও এমনকি ওর পরিবারের সম্মতি ছাড়া আমার বাড়িতেও কিছু জানাতে বারণ করে। কিন্তু এখন চাকরি পাওয়ার পর ও বলছে ওর পরিবার অনেক আগে থেকেই ওর সাথে ওর চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। ও নিজের পরিবারের বিপক্ষে যেতে চাইছে না। আমি বুঝতে পারছি না, কি করব।”

পলক নিজের ভাইয়ের সব কথা মনযোগ দিয়ে শোনে। এখন তার কাছে অনেক বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়। ৫ বছর আগের স্মৃতি গুলো মানসপটে ভেসে ওঠে। রুহানির সাথে বিয়ের সময় তার ভাই এটা নিয়ে বেশি একটা খুশি ছিল না। বিয়ের পরেও তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। রোজ রোজ ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। পলক বুঝতে পারে তার ভাই দাম্পত্য জীবনে কখনোই সুখী হয়নি কারণ সে নিজের মনের মানুষকে পায়নি। বিয়ের ৫ বছরেও এখনো অব্দি বাবা পর্যন্ত হয়নি! এই সমস্ত ক্ষোভ থেকেই হয়তো তার এত দায়িত্বশীল ভাইটা বদলে গেছিল।

পলক এসব ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে পাভেলের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“তুই একদম চিন্তা করিস না ভাইয়া। আমি তোর বোন আছি তোর সাথে। তোর জীবন বদলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। অতীতে তুই যা কষ্ট ভোগ করেছিস এবার আমি কিছুতেই সেসব ভুগতে দেব না।”

শেষের কথাটা মনে মনে বলে পলক। এখন তার কাঁধে অনেক বড় গুরুদায়িত্ব। নিজের ভাইয়ের জীবনটা গুছিয়ে দিতেই হবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨