রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-১৮

0
605

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ১৮
‘ ওর নাম জাহিদ।আমার বুবুর স্বামি।আর আরেকটা পরিচয় আমার বুবুর হ*ত্যাকারি।’

শান্ত চোখে তাকালো নীবদ্ধ শুদ্ধতার দিকে।এখন বুঝতে পারলো।মেয়েটার এতো রাগের কারন।কেন এতো ঘৃনা ছিলো সেই দৃষ্টিতে।নীবদ্ধ আজ প্রথমবার শুদ্ধতার হাত স্পর্শ করলো।খুব নিবীড়ভাবে আকড়ে ধরলো শুদ্ধতার হাত।ধরাস করে উঠে শুদ্ধতার বুকের ভীতর।কেঁপে উঠলো শুদ্ধতা।তবুও নির্বিঘ্নে তাকালো নীবদ্ধ’র দিকে।নীবদ্ধ শান্ত কন্ঠে বলল,
-‘ আমি আপনার কাছে ওয়াদাবদ্ধ হলাম। আপার হ*ত্যাকারি তার চরম শাস্তি দিবো আমি।আমার কথাটা মিলিয়ে নিয়েন।’

শুদ্ধতার ভরসা পেলো ওই কথায়।নীবদ্ধ’র এই একটা বাক্যই যেন ওকে বুঝিয়ে দিলো লোকটা ওকে কতোটা চায়।ওর ইচ্ছা,স্বপ্নগুলোকে ঠিক কতোটা প্রাধন্য দেয়। মনটা একটু নরম হচ্ছে কি?একটু কি ভালোলাগা তৈরি হলো বোধহয়।
________________
সেদিন সবাই অনেক্ষন নীবদ্ধ আর শুদ্ধতার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করলো।নীবদ্ধ’র সুস্থ্য হতে সময় লাগবে একমাস।তাহলে একমাস পরেই ওদের বিয়েটা ঘরোয়াভাবে দিয়ে দেওয়া হবে।নীবদ্ধ তো ঠোঁটকা’টার মতো বলেই দিয়েছিলো,
-‘ সুস্থ্য হওয়ার কি দরকার? কবুল বলবো মুখ দিয়ে।সাইন করলো ডানহাত দিয়ে সেগুলো ভালোই আছে।বিয়েটা কাল করে নিলে হয়না?আপনি কি বলেন শুদ্ধতা?’

নীবদ্ধ’র এমন কথায় শুদ্ধতা চোখ রাঙ্গানো দিয়েছিলো।কিন্তু নীবদ্ধ থামার নাম নিলে তো?ওর এমন পাগলামোতে সকলে শুধু হাসছিলো।সবাই তো জানে নীবদ্ধ শুদ্ধতা বলতে ঠিক কতোটা পাগল।অবশেষে শুদ্ধতা যখন রাগ করে বলেছিলো,আমি বিয়ে এক্সাম শেষেই করবো এই লোক এমন করলে।
শুদ্ধতার এমন থ্রেড দেওয়াতে শান্ত হয়েছিলো নীবদ্ধ।বাড়ি ফিরেই সানামকে ফোন করে সব জানায় শুদ্ধতা।সানাম প্রচন্ড খুশি হয় কথাটা শুনে।

এইভাবে ভালো মন্দ মিলিয়ে কেটে যায় একমাস।নীবদ্ধ আর শুদ্ধতার বিয়ের বাকি আরো চারদিন। এই একমাসে সানাম আর ঐক্য’র প্রেম জমে ক্ষীর।তাদের সম্পর্কের কথা শুদ্ধতা নিজেই নীবদ্ধ’কে জানিয়ে দিয়েছিলো।সব শুনে প্রচন্ড খুশি হয় নীবদ্ধ।পরিবারের সবাইও রাজি হয়ে যায়।ঐক্য’র মাস্টার্স কমপ্লিট হলেই ওদেরও বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। আপাততো সানাম এর ফ্যামিলির সাথে কথা বলে নেওয়া হয়েছে।তাদেরও কোন সমস্যা নেই।

নীবদ্ধ এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।তবে পায়ে সামান্য খুব অল্প পরিমানে এখনো মাঝে মাঝে ব্যাথা হয়।তবে এতোটুকু ব্যাথায় নীবদ্ধ’র কিছু যায় আসে নাহ।আজ নীবদ্ধ এসেছে শুদ্ধতাদের বাড়িতে।রাশেদ সাহেবের সাথে ওর জরুরি কথা আছে।শুদ্ধতা তো নীবদ্ধ’কে এই বাড়িতে দেখেই চমকে উঠেছিল।কারন নীবদ্ধ কোনদিন শুদ্ধতাদের বাড়িতে আসেনি।ওকে আসতে বললে ও বলতো যেখানে আপনার মেয়েই আমায় পছন্দ করে না সেখানে আপনাদের বাড়ি গিয়ে কি করবো?যেদিন আপনার মেয়ের মনে জায়য়া করতে পারবো সেদিন আপনাদের বাড়ি আমি আপনা-আপনি নিজের জায়গা খুজে নিবো।
রিনা বেগম তো হুলুস্থুল লাগিয়ে দিলেন নীবদ্ধকে দেখে।শুদ্ধতাকে বলছে এটা দিতে সেটা দিতে।নীবদ্ধ শুধু আলতো হাসছিলো।তাদের অবস্থা দেখে।নীবদ্ধ রাশেদ সাহেবের সাথে আলাদা কথা বলার জন্যে বাগানের দিকটায় চলে গেলো।দুজন মুখোমুখি হয়ে বসলো।নীবদ্ধ নিজেই আগে শুরু করলো,
-‘ আপনার একটু হেল্প লাগতো আংকেল।’

রাশেদ সাহেব শান্ত কন্ঠে বলেন,
-‘ হেল্প করবো তবে তার আগে বাবা ডাকতে হবে।আংকেল কি?’

হাসলো নীবদ্ধ বললো,
-‘ সেটা নাহয় বিয়ের পরেই ডাকলাম।আপাততো চারদিন সহ্য করে নিন।’

রাশেদ সাহেব বলেন,
-‘ কিভাবে হেল্প করতে পারি নীবদ্ধ?’

গম্ভীর হয়ে আসলো নীবদ্ধ’র মুখশ্রী।বলে,
-‘ আপনাকে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ট্রান্সফার করতে হবে।রিজন দিবেন আপনার একজন দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসার লাগবে।’

-‘ কিন্তু কেন?কারনটা কি?হঠাৎ যে?’

-‘ কারন আছে আংকেল।আপাততো সেটা আমি বলতে চাচ্ছি না।শুধু এটুকু বুঝে নিন আমি অনেক সিরিয়াস কেস নিয়ে তদন্ত করছি।আর তার জন্যে আমার সেই পুলিশ অফিসারটাকে লাগবে।আর কারন যদি জানতেই চান।আমি বলবো আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান আমার এটুকু হিন্টস এই আপনি আমার কারনটা বুঝে নিতে পারবেন। আমি চলতে চাইছি না কারন দেয়ালেরও কান আছে।’

নীবদ্ধ’র এমন সিরিয়াস কথায় আর প্রশ্ন করার সাহস পেলেন না রাশেদ সাহেব।শুধু এটুকু বললেন,
-‘ পুলিশ অফিসারের নাম কি?’

-‘ জুনায়িদ শেখ বর্তমানে চট্টগ্রাম ডিপার্টমেন্টের পুলিশ কর্মকর্তা তিনি।তাকে আপনার ঢাকা ট্রান্সফার করতে হবে।চলুন আংকেল ভীতরে যাওয়া যাক আন্টি আর শুদ্ধতা অপেক্ষা করছে।’

নীবদ্ধ’র মুখে জুনায়িদ শেখের নাম শুনে বেশ অবাক হলেন রাশেদ সাহেব।নীবদ্ধ যে বিরাট বড় একটা খেলায় নেমেছে তা বেশ ভালোভাবে আঁচ করতে পারলেন তিনি।
___________
নীবদ্ধ’কে আজ পেয়ে যেন রিনা বেগম হাতে আকাশের চাঁদ পেয়েছেন।বিয়ের আগেই বিশাল বড়সড় জামাই আদরের ব্যাবস্থা করেছেন তিনি।নীবদ্ধ খেতে খেতে হয়রান।শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র অবস্থা দেখে হাসছে।নীবদ্ধ অসহায়ভাবে পাশে বসা শুদ্ধতার গা জ্বালানো হাসি দেখে করুনভাবে বলে,
-‘ আন্টিকে থামতে বলেন শুদ্ধতা।আর তো খেতে পারছি না।খাইয়ে খাইয়ে আমাকে মেরে ফেললে আপনারই লস।বিয়ের আগেই বিধবা হয়ে যাবেন।’

শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র মুখশ্রী দেখে বুঝলো আসলেই নীবদ্ধ অনেক বেশি খেয়ে ফেলেছে তাই ও নিজের মায়ের উদ্দেশ্য বলল,
-‘ মা হয়েছে তো।আর কত?উনি আর খেতে পারছেনা। থামো মা।’

রিনা বেগম নীবদ্ধ’র দিকে তাকালেন।নীবদ্ধ অহসায় চেহারা দেখে তিনি শান্ত হলেন। অতঃপর নীবদ্ধ বাড়ি যাওয়ার জন্যে বিদায় নিলো সবার থেকে।সবাই থাকতে বলেছিলো।কিন্তু নীবদ্ধ শুনেনি কারো কথা।যাওয়ার আগে শুদ্ধতার কানে ফিসফিস করে বলে গিয়েছিলো,
-‘ আসছি চারদিন পর।অপেক্ষা করবেন তো আমার জন্যে বউ সেজে?’

শুদ্ধতার কোন জবাব না পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে চলে গিয়েছিলো নীবদ্ধ।রুমে এসে নীবদ্ধ’র কথার জবাব না দেওয়ায় প্রচন্ড খারাপ লাগছিলো শুদ্ধতার।অনেক ভেবেচিন্তে নীবদ্ধ ছোট্ট একটা মেসেজ করে দেয় শুদ্ধতা ‘ অপেক্ষা করবো।’

চলন্ত গাড়িতে বসে মেসেজটা পড়ে তৃপ্তির হাসি হেসেছিলো নীবদ্ধ।অবশেষে বরফ তাহলে আস্তে আস্তে গলতে শুরু করে দিয়েছে। শুধু আর একটু প্রচেষ্টা।তারপর রানি তার।রাজার কাছে রানি আসলে তখন সে যাবে কোথায়?
_____________

বাড়িতে আসতেই নীবদ্ধ মুখোমুখি হয় ঈশানের।ঈশান রাগি চোখে তাকিয়ে আছে দু কোমড়ে হাত দিয়ে।নীবদ্ধ ভ্রু-কুচকে তাকালো ঈশানের দিকে।বলে,
-‘ কিরে তুই এমন করে আছিস কেন?’

ঈশান রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
-‘ তুমি ভাবিদের বাসায় গিয়েছিলে অথচ আমায় নেওনি কেন?’

প্রশ্ন করলো নীবদ্ধ,
-‘ তুই জানলি কিভাবে?’

-‘ আমি শুনেছি তো মা তোমার সাথে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলছিলো তখন সে জিজ্ঞেস করেছিলো তুমি কোথায়?তুমি বললে তুমি ভাবিদের বাড়ি।এতেই জেনেছি।এখন বলো আমায় নিলে না কেন?’

নীবদ্ধ গাট্টা মারলো ঈশানের মাথায়।

-‘ তুই গিয়ে কি করতি?আর আমি কাজে গিয়েছিলাম।’

ঈশান ব্যাথায় হালকা আওয়াজ করলো। মাথায় হাত ডলতে ডলতে কাঁদো গলায় বলে,
-‘ তুমি আমায় মারলে কেন?’

-‘ তো তুই অহেতুক কেন জেরা করছিস?’

-‘ কোথায় জেরা করলাম?শুধু আমায় নিয়ে যাওনি কেন এটা বললাম।’

-‘ আমি আজ প্রথমবার গেলাম।তাও কাজেই গিয়েছি।আর আমি অফিস থেকে সোজা ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম।আর তুই মাসে কয়বার যাস হিসেব আছে?গিয়ে তো দু তিন দিন থেকেও আসিস।তখন আমি কিছু বলি?’

নীবদ্ধ আবারও গাট্টা মারলো ঈশানের মাথায়।তারপর নিজের রুমে চলে গেলো। এদিকে ব্যাথা পেয়ে ঈশান কান্না করে চেঁচামেচি করে বাড়িঘর মাথায় তুলে ফেলেছে। আয়েশা রহমানের কাছে বিচার দিতে গিয়ে উলটো নিজেই মায়ের দৌড়ানি খেয়ে রুমে চলে এসেছে।সোজা ফোন লাগালো শুদ্ধতার কাছে এখন সে তার ভাবির কাছে ভাইয়ের নামে বিচার দিবে।
‘কেউ তাকে ভালোবাসে না শুদ্ধতা ছাড়া।’ বিরবির করে কথাগুলো বলে ফোন লাগালো শুদ্ধতার কাছে।

#চলবে___________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।