রাখিব তোমায় যতনে পর্ব-২৫

0
609

#রাখিব_তোমায়_যতনে
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৫
একবুক সাহস নিয়ে শুদ্ধতা দাঁড়িয়ে আছে রকির সামনে।ওর হাত বাঁধা আর মুখটাও বাধা অবস্থায় আছে।বুকটা ধুকপুক করছে। ভয় যে পাচ্ছে না এমনটা নয়।অবশ্যই ভয় পাচ্ছে শুদ্ধতা।তবে যতোবার সেসব অসহায় মেয়ে আর শিশুদের কথা চিন্তা করে ওর ভয়টা কেটে যায়।ভেসে উঠে সবার করুন অবস্থা।না জানি কি অবস্থায় রেখেছে ওদের লোকগুলো।এদিকে রকি শুদ্ধতার দিকে কামুক নজরে তাকিয়ে থেকে জাহিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—” এই খা*সা মা*ল কোথা থেকে এনেছিস রে জাহিদ? এর দেখি আ*গুন ভরা যৌবন।আমাদের বস একে পাচার না করে না জানি একে তার জন্যেই রেখে দেয়।”

জাহিদ মিথ্যে হেসে বলে,
—” যা বলেন না রকি ভাই।আমি তো আপনাদের জন্যে কাজ করি।”

রকি জাহিদকে কতোগুলো টাকা দিল।তারপর জাহিদকে বিদায় দিয়ে দিলো।এরপর শুদ্ধতার বাহু ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।গা ঘিনঘিন করছে শুদ্ধতার এই রকির স্পর্শে। তবুও দাঁতেদাঁত চিপে সহ্য করে যাচ্ছে ও।রকি শুদ্ধতাকে টেনে গাড়িতে উঠিয়ে দিল।একটা ট্রাক এটা।যেটার পিছনে শুদ্ধতাকে উঠিয়ে ট্রাকের মুখ বন্ধ করে দিল।শুদ্ধতাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ায় একটু ব্যাথা পেলো শুদ্ধতা।তবে সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ করল নাহ।পুরো ট্রাকে মেয়ে দিয়ে ভর্তি।এখানে দশ বছরের মেয়েও আছে।সবাই কাঁদছে।নিরম কান্না যাকে বলে।শুদ্ধতার মায়া লাগছে ভীষন এদের জন্যে। না জানি কতো মায়ের বুক খালি করে এই মেয়েদের তুলে এনেছে এরা।আরও কতোশতো মেয়েদের এইভাবে পা*চার করে দিয়েছে। শুদ্ধতা মনে মনে আওড়ালো,
—” নীবদ্ধ আপনি জলদি চলে আসুন।এই মেয়েদের তাদের মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিন।”

_____________
লাইন বাই লাইন দাড় করানো হয়েছে সব মেয়েদের।এক এক করে গুনা হচ্ছে তাদের।হিসাব মতো মেয়েদের তালিকা হতেই তাদের ধাক্কিয়ে ধাক্কিয়ে বিশাল বড় একটা জাহাজে উঠানো হয়।মূলত এই জাহাজের মাধ্যমেই সাগর পারি দিয়ে অন্যদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ওদের।শুদ্ধতাকে সহ সব মেয়েদের জাহাজের একটা রুমে বন্দি করে দেওয়া হলো আজ রাতেই ওদের পা*চার করে দেওয়া হবে।শুদ্ধতা দেখল রুমটার ভীতরে অন্তত পাঁচশ মেয়ে তো হবেই।জীর্ণশীর্ণ অবস্থা তাদের।শুদ্ধতা কিছু একটা পরিকল্পনা করল।তার পাশে থাকা একটা মেয়েটার কাছে এগিয়ে গেলো।মেয়েটাকে বাহু দ্বারা ধাক্কা দিল।ধাক্কা খেতেই মেয়েটা শুদ্ধতার দিকে তাকাল।শুদ্ধতা চোখের ইশারায় মেয়েটাকে ঘুরতে বলল।প্রথমে মেয়েটা বুঝতে না পারলেও অনেক কষ্টে শুদ্ধতা ওকে বুঝায়।মেয়েটা ঘুরতেই শুদ্ধতা ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে লাগল মেয়েটার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার জন্যে।এর মাঝে হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে হকচকিয়ে যায় শুদ্ধতা।জলদি নিজ নিজ অবস্থাকে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়ায়।একটা কালো মোটা দেখে লোক ঢুকে ওদের এখানে।লোকটা সব মেয়েগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবারও চলে যায়।শুদ্ধতা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।আবারও নিজের কাজে লেগে পরে।এভাবে প্রায় অনেক্ষন চেষ্টার পর শুদ্ধতা সফল হয় মেয়েটার হাতের বাঁধন খুলতে।মেয়েটা হাত ছাড়া পেতেই আগে ওর মুখের বাধন খুলে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নেয়।তারপর জলদি শুদ্ধতার হাতের বাঁধনও খুলে দেয়।হাত ছাড়া পেতেই শুদ্ধতা মুখের কস্টেপ খুলে ফেলে।তারপর মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে খুব আস্তে বলে,
—” আমাদের এখন এই মেয়েগুলোকেও মুক্ত করতে হবে।চিন্তা করো না।আমি এখানে তোমাদের উদ্ধার করতেই এসেছি।আমার হাজবেন্ড পুলিশ ফোর্স নিয়ে শীঘ্রই এখানে আসছেন।তোমরা শুধু আমার কথামতো কাজ করো।”

মেয়েটা মাথা নাড়ালো।তারপর শুদ্ধতা আর মেয়েটা একে একে সবাইকে বাধন ছাড়া করতে লাগল।যাকেই বাধনমুক্ত করছে সেও শুদ্ধতার মতো অন্যকাউকে মুক্ত করার কাজে লেগে পরছে।এভাবে খুব তাড়াতাড়িই তারা একে-অপরকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়ে গেলো।
__________
এদিকে ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে শুদ্ধতার সকল কথা শুনতে পাচ্ছে নীবদ্ধ আর জুনায়িদ শেখ।শুদ্ধতাকে দেওয়া ওই ডিভাইসটা শুধু জিপিএস না ওটার সাথে ব্লুটুথ ডিভাইসও কানেক্ট করা আছে।শুদ্ধতার সকল কথাই তারা শুনেছে।জুনায়িদ শেখ এইবার বলে,
—” শুদ্ধতা অনেক সাহসী।দেখেছো মেয়েগুলোকে কিভাবে মুক্ত করল।নীবদ্ধ এটাই সময় আমাদের এখনি এট্যা*ক করতে হবে। এট্যা*ক করলে তারা সবাই আমাদের সাথে লড়াই করতে ব্যস্ত থাকবে।এই সুযোগে আমি একদলকে পাঠিয়ে দিবো মেয়েগুলোকে উদ্ধার করার জন্যে।”

নীবদ্ধ চুপচাপ শুনলো।জুনায়িদ শেখ এইবার তার হাতে থাকা যন্ত্রনাটার কাছে মুখ নিয়ে বলে,
—” Officers.Get ready. We’ll attack them in just 10 seconds.. 9,8,7,6,5,4,3,2,1,0. Let’s Attack..”

সব পুলিশ ফোর্স একসাথে আক্র*মন করল সন্ত্রা*সীদের উপর।সন্ত্রাসীরা আকস্মিক আক্র*মনে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য ছিলো।পরবর্তীতে বিষয়টা বুঝতে পারতেই তারাও সমানতালে আক্র*মন করে বসল।দু দলের বিধ্বংসী যুদ্ধ চলছে যেন।রকি চিল্লাচ্ছে,
—” বস আপনি চিন্তা করবেন নাহ।এই সালার পুলিশরা কিছুই করতে পারবে না।আমরা এদের সবকটাকে উপরে পাঠিয়ে দিবো।”

এই সন্ত্রা*সীদের মেইন লিডার যে সে বলল,
—” এই মা******রা খবর পাইলো কেমনে? আমগো এহানের? কেমনে জানলো?কোন হালায় বাটপারি করল আমার লগে।কই*লজা ছি*ড়া ফালামু একবার খালি এই দিকটা সামলায় লই।”

এদিকে নীবদ্ধ আরেকদল পুলিশ ফোর্সকে ইশারা দিয়ে দিল মেয়েগুলোকে দ্রুত উদ্ধার করার জন্যে যেতে।তারা তাই করল।

এদিকে গোলাগুলির শব্দে শুদ্ধতা বুঝতে পারল নীবদ্ধ আর জুনায়িদ শেখ এসে পরেছে।শুদ্ধতা প্রচন্ড খুশি হয়ে মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—” আর কোন চিন্তা নেই আমার হাজবেন্ড পুলিশ নিয়ে এসে পরেছে।আর একটু অপেক্ষা।”

হঠাৎ ধরাম শব্দে দরজা খুলে গেলো।সামনে সেই মোটা কালো করে লোকটা।মেয়েগুলো ভয় পেয়ে গেলো।শুদ্ধতা তা দেখে বলে,
—” ভয় পেও না তোমরা।কিছু হবে না তোমাদের।”

—” ওই সা*লি কিছু হবে না মানে? তোর কলি*জায় ডর নাই?”

লোকটার কথায় তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
—” না একটুও নেই।”

—” খারা তুই।তোরে এহনি মজা বুঝাইতাছি।”

লোকটা তেড়ে আসলো শুদ্ধতার দিকে। এসেই শুদ্ধতার চুল মুঠি দিয়ে ধরল।ব্যাথা পেলো অনেক শুদ্ধতা তবে একটুও শব্দ করল নাহ।লোকটা শুদ্ধতার গাল চেপে ধরল।
—” অনেক তেজ না তোর? যদি আমি এহন এই সব মাইয়াগো সামনে তোরে রে*প করি?তহন তোর এই তে*জ কই যাইবো।”

শুদ্ধতা দাঁতেদাঁত চিপে বলে,
—” তোর পরিকল্পনাতেও এই ভাবনা আনিস না।আমার স্বামি তোকে টুক*রো টুক*রো করে ফেলবে। জা*নো***রের বাচ্চা।”

শুদ্ধতা লোকটাকে গালি দেওয়ায় লোকটা শুদ্ধতা একটা ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বলে,
—” ভাবনাতে আনমু না ঠিক আছে।তবে তা বাস্তবে করে দেখামু।সালি চু*******। তোর তেজ আজ আমি বাহির করমু।”

লোকটা শুদ্ধতার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই শুদ্ধতা দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।তারপর একেবারে লোকটার গো*পনাঙ্গ বরাবর শরীরের সব শক্তি দিয়ে লাথি মেরে দেয়।বিকট চিৎকার দিয়ে লোকটা ফ্লোরে বসে পরে।শুদ্ধতা মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—” এই সুযোগ হাত গুটিয়ে বসে থাকা যাবে না। আমাদেরও এই শয়*তানগুলোর বিরুদ্ধে আক্র*মন করা উচিত।মারো সবাই একে।”

সব মেয়েরা যেন শুদ্ধতার কথায় সাহস পেলো।সবাই একে-অপরের সাথে বলা বলি লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পরল।লোকটা মারতে লাগল ইচ্ছা মতন যতোক্ষন না পর্যন্ত লোকটা নিজের জ্ঞানশক্তিলোপ পেলো। শুদ্ধতা বলে,
—” চলো তোমরা সবাই বাহির হতে হবে এখান থেকে।আর হ্যা মনোবল হারাবে না।সামনে যেই আসুক।একসাথে তার উপর ঝাপিয়ে পরবে।তোমরা পাঁচশজন মেয়ে একত্রে হলে তোমাদের সাথে কেউ পারবে না।নিজেদের দূর্বল ভাববে নাহ।বুঝেছো?”

শুদ্ধতার কথায় একটা মেয়ে বলে,
—” আপু তুমি না থাকলে আমরা এই সাহস পেতাম নাহ আপু।তুমি আমাদের জন্যে আজ যা করলে তা কোনদিন আমরা ভুলব নাহ।”

শুদ্ধতা মুচঁকি হেসে বলে,
—” মনে রাখবে আমি তোমাদের মধ্যে থেকেই একজন।চল আর সময় নষ্ট করা যাবে নাহ।”

শুদ্ধতা গিয়ে দরজা খুলে দিল।নাহ আশেপাশে কেউ নেই।শুদ্ধতা ইশারা করল মেয়েগুলোকে বের হওয়ার জন্যে।সব মেয়েগুলো একসাথে বের হয়ে আসল।তারপর শুদ্ধতাও তাদের পিছু পিছু যেতে নিল।এমন সময় পিছন থেকে একজন বলে উঠে,
—” কিরে মা***।ভালই তো পলায় যাইতাছোস?তুই কি মনে করছোস?তোগো এতো সহজেই যাইতে দিমু? এই ধর সবগুলারে।”

শুদ্ধতা ঘাবড়ালো না।শুদ্ধতা ভালোভাবেই জানে এই মেয়েগুলোর উদ্দেশ্যে লোকগুলো গু*লি চালাবে না।কারন একটা মেয়ে ক*ম মানে ওদেরই লস।তাই ভরসা পেলো।আর এই মুহূর্তে একজন মেয়েও ওরা হারাতে রাজি না।কারন যতো দ্রুত সম্ভব এখান থেকে জাহাজ নিয়ে আর মেয়েগুলোকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাওয়া।ছয়জন লোক একত্রে এদিকে ধেয়ে আসছে।শুদ্ধতা মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—” সবাই একসাথে আক্র*মন কর।ভয় নেই,কোন ভয় পাবে না।এখান থেকে ফিরে বাবা মার কাছে যেতে হলে লড়াই করতে হবে।এট্যা*ক দেম।”

মেয়েগুলো সবাই একসাথে ঝাপিয়ে পরল ওই ছয়জন লোকের উপর।ইচ্ছামতো মারতে লাগল লোকগুলোকে।এমন সময় প্রায় ২০ জনের মতো পুলিশ এসে পরল এখানে।সেখানের একজন পুলিশ শুদ্ধতার কাছে এগিয়ে এসে বলে,
—” ম্যাম আর চিন্তা নেই আমরা এসে পরেছি।আপনি মেয়ে গুলোকে নিয়ে বাহিরে যান।বাহিরে নীবদ্ধ স্যার আর আমাদের অফিসার স্যার আছেন।”

নীবদ্ধ’র নামটা শুনেই বুকটা মুঁচরে উঠলো শুদ্ধতার।না জানি লোকটা কি অবস্থায় আছে।নীবদ্ধকে দেখার জন্যে মনটা আনচান করে উঠল।শুদ্ধতা মেয়েগুলোকে ডেকে সবাইকে নিয়ে জাহাজের বাহিরে চলে আসল।বাহিরেও পুলিশ দাড় করানো ছিলো। মিশন সাকসেসফুল হয়েছে।সব সন্ত্রা*সীই ধরা পরেছে।কিছু পুলিশ আহত হয়েছে।আর নীবদ্ধ’র হাতের বাহুতে হালকাভাবে গু*লি ছুঁয়ে গেছে।পুলিশের একজন লোকের কাছে সব শুনে শুদ্ধতা দৌড় লাগালো নীবদ্ধ’র কাছে যাওয়ার জন্যে।

——
নীবদ্ধ’র হাতে কোনরকম একটা কাপড় দিয়ে বেধে দেওয়া হয়েছে যাতে র*ক্ত বেশি না ঝরে।কাপড় বাধা শেষেই নীবদ্ধ অস্থির হয়ে উঠলো শুদ্ধতার কাছে যাওয়ার জন্যে।মেয়েগুলোকে ওই ট্রাকটাতেই উঠানো হচ্ছে।এতোগুলো মেয়েকে তো আর গাড়িতে নেওয়া সম্বভ নাহ।নীবদ্ধ দ্রুত সেদিকে অগ্রসর হল।অতঃপর দূর থেকে শুদ্ধতাকে দৌড়ে এদিকে আসতে দেখে নীবদ্ধও দৌড় লাগালো।শুদ্ধতা নীবদ্ধ’র কাছে এসেই নীবদ্ধ’র বুকে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।নীবদ্ধও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একহাত দিয়ে।নীবদ্ধ অস্থির গলায় বলল,
—” তুমি ঠিক আছো শুদ্ধতা?তোমার কিছু হয়নি তো?”

শুদ্ধতার বুক থেকে মাথা উঠালো।ছলছল চোখে নীবদ্ধ’র দিকে তাকিয়ে আবার নীবদ্ধ’র ব্যাথাযুক্ত বাহুর দিকে তাকাল।বলে,
—” আমার চিন্তা বাদ দিন।ইস,কতোটা লেগেছে।চলুন হাসপাতালে যেতে হবে।এখানের কাজ শেষ।বাকিটা জুনায়িদ ভাইয়া সামলে নিবে।”

নীবদ্ধ শুদ্ধতার কঁপালে চুমু খেলো।তারপর শুদ্ধতার গালে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে বলে,
—” আমার দমটা বন্ধ হয়ে আসছিল তুমি জানো? কতোক্ষনে শুধু আমি তোমার কাছে যাবো সেই আশায় ছিলাম।”

—” আমি ঠিক আছি তো।আর চিন্তা নেই।”

এমনসময় কেউ শুদ্ধতা বলে চেঁচিয়ে উঠলো।সে আর কেউ না জুনায়িদ শেখ।রকি একজন পুলিশ অফিসার থেকে তার গান ছিনিয়ে নিয়ে শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ’র দিকে গু*লি করে দিল। শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ আকস্মিক আক্র*মনে হতভম্ব।জুনায়িদ শেখ এইবার নিজেই গু*লি ছুরলেন রকির উদ্দেশ্যে। একসাথে পাঁচটা গুলি করে মেরে ফেলল রকিকে। তারপর জুনায়িদ শেখ নিজেই পরে গেলান মাটিতে।কারন শুদ্ধতা আর নীবদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে বাঁচাতে গিয়ে তার গায়ে তিনটা গু*লি লেগেছে।শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ দৌড়ে আসল জুনায়িদ শেখের কাছে।নীবদ্ধ তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে চিৎকার করছে,
—” তাড়াতাড়ি আসো।ভাইয়াকে এম্বুল্যান্সে উঠাও।দ্রুত।”

নীবদ্ধ নিজেই উঠাতো।কিন্তু ওর একহাতে গু*লি লাগায় ও পারছে না।দুজন পুলিশ এগিয়ে আসলেই জুনায়িদ শেখ হাত উঠিয়ে তাদের থামিয়ে দেয়।শুদ্ধতা কান্না করে দিল।
—” ভাইয়া ওদের থামালেন কেন?আপনাকে হাসপাতালে নিতে হবে।”

জুনায়িদ শেখ হাসলেন।শুদ্ধতার গালে হাত রেখে বলেন,
—” বোন রে আমার সময় শেষ।দুনিয়াতে আমার হায়াত এটুকুই।হাজার চেষ্টা করলেও তোরা আমায় বাঁচাতে পারবি নাহ।তোকে আর নীবদ্ধকে আমি কোনদিন ভুলব নাহ।ক্ষণিকের এই দেখায় আমি মৃত্যুর পরও তোদের কথা মনে রাখব।আমাকে ভাই ডেকেছিস।ভাই হয়ে তোকে একটা কথা বলব।সারাজীবন মেনে চলিস।”

জুনায়িদ শেখ শুদ্ধতা আর নীবদ্ধ’র হাত নিয়ে তাদের একে-অপরের হাতের মাঝে দিলেন।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছেন তিনি।ভীষন কষ্ট হচ্ছে তার।তাও কষ্ট করে বলেন,
—” সারজীবন একে-অপরের পাশে থাকিস। ভালো থাকিস। কেউ কোনদিন কারো হাত ছাড়িস নাহ।”

একটু থেমে আবারও বলেন,
—” আর আমার একটা শেষ চাওয়া।ইহকালে তো শুভ্রতাকে পেলাম নাহ।আমার মৃত্যুর পর আমার কবরটা শুভ্রতার পাশে দিস। জানি এটা অন্যায়। তাও এটুকু অন্যায় আবদার করলাম তোদের কাছে।দুজন পাশাপাশি কবর দিলে আমি শুভ্রতাকে আমার অভিযোগগুলো বলব।আমার কথাটা রাখিস বোন। আল্লাহ্ হা*ফেজ।”

জুনায়িদ শেখ কালিমা পড়েই তার নিশ্বাস ত্যাগ করেন নীবদ্ধ’র কোলে।শুদ্ধতা ‘ ভাইয়া ‘ বলে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।আর নীবদ্ধ শক্ত হয়ে বসে রইল।ওর চোখজোড়া লাল হয়ে আছে।সে এখন স্তব্ধ হয়ে জুনায়িদ শেখের শান্ত মুখশ্রীটার দিকে তাকিয়ে রইল।

#চলবে________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।