#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩৫
জাওয়াদ জামী জামী
রুমে এসে শাহেদ চুপচাপ বসে আছে। তিয়াসা খাটে বসে ফুঁসছে সেটা শাহেদ বেশ বুঝতে পারছে। মেয়েটা কেন এত রেগেছে সেটাই ওর মাথায় আসছেনা।
” আপনি এত রাগ করছেন কেন জানতে পারি? এত রাগ করার কথা তো আপনার নয়! ” সাহস করে শাহেদ জিজ্ঞেস করেই ফেলল।
” আবারও ‘ আপনি ‘ বলছে! এই আপনি কি মানুষ নাকি তেলাপোকা? নাকি কানে কম শোনেন? আগেইনা বলে দিয়েছি আমাকে ‘ তুমি ‘ বলবেন? ” তিয়াসা হুংকার ছেড়ে বলল।
” আচ্ছা তুমি করেই বলব। এত রাগের কারন জানতে পারি? ”
শাহেদ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিয়াসার দিকে। মেয়েটার রাগী রাগী মুখ দেখতে ওর বেশ লাগছে। রাগে ওর চোখদুটো সরু হয়ে গেছে, গালদুটোয় লালাভ আভায় পরিপূর্ণ, আনমনে বারেবারে ঠোঁট কামড়ে ধরছে। জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে।
” বোঝেননা আপনি? নাকি বুঝেও না বোঝার ভাণ করছেন? রাস্তার লোকজন কত কটু কথা বলছিল জানেন? তা জানবেন কিভাবে! আপনার চোখ-কান সবকিছুই ছিল রেপিস্টটাকে কিভাবে মারবেন সেই চিন্তায়। লজ্জা বলতে কি কিছুই নেই আপনার? ”
” একটা রেপিস্টকে মারতে লজ্জা লাগবে কেন! বরং লজ্জা হওয়া উচিত ঐসব লোকদের, যারা সবকিছু জেনেও নিশ্চুপ ছিল। ঐসব মানুষের জন্যই সমাজে এত হানাহানি, অশান্তি হয় বুঝেছেন? ”
” আপনি কি সমাজ সংস্কারের ঠিকাদারি নিয়েছেন? কতজনকে নিজের হাতে শাস্তি দেবেন? দেশের প্রতিটা ঘরে কতশত মানুষরূপী পিশাচ বাস করে জানেন? কত নারী নির্যাতন হয় সেটা জানেন? কত শিশু, কিশোরী, তরুনী এমনকি বৃদ্ধাও ধর্ষিতা হয় সেটা নিশ্চয়ই জানেন? পারবেন সবাইকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে? এসব না করে বরং সেই ধর্ষিতা মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ান। অপরাধীকে আইনের কাছে সোপর্দ করে, তার শাস্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করুন। সে যেন তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পায় সেটা নিশ্চিত করুন। ভিক্টিমের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তার ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। শুধু শুধু রেপিস্টকে মারলেই দ্বায়িত্ব পালন করা হয়না। আজকে তাকে মারছেন, কয়দিন পর সে সব ভুলে অন্য কারও সর্বনাশ করবেনা তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তাকে এসব করতে দেখে অন্য কেউ সাহস পাবে। সে-ও হয়তো একই কাজ করবে। এভাবে চলতেই থাকবে। তখন কি করবেন বলতে পারেন? ” একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল তিয়াসা। ও রাগে, কষ্টে হাঁপাচ্ছে। কপাল কুঁচকে কামড়ে ধরছে নিচের ঠোঁট।
শাহেদ তাকিয়ে আছে তিয়াসার দিকে। ও উপলব্ধি করছে মেয়েটার প্রতিটা কথাই অক্ষরে অক্ষরে সত্য। রাগের বশে লোকটাকে খুঁজে বের করতে গিয়ে ভিক্টিম মেয়েটার দিকে নজর দেয়া হয়নি। বাচ্চাটার পরিবারের কাছে টাকা দিয়েই ভেবেছে তার দ্বায়িত্ব পালন করেছে। এই মুহুর্তে নিজের গালে নিজেরই চড় মারতে ইচ্ছে করছে। এত বড় বোকামি কিভাবে করল! নিজের অপরাধ মনে মনে স্বীকার করে, মুখ কাঁচুমাচু করে তিয়াসাকে জিজ্ঞেস করল,
” তুমি কি ভাবীকে ফোন করে সবকিছু বলে দিয়েছ? ”
” হুঁ। কি ভেবেছিলেন, আপনারা দল বেঁধে অন্যায় করবেন আর আমি চুপচাপ দেখে যাব? ” বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করল তিয়াসা।
” নাহ্ সেসব মোটেও ভাবিনি। এসব ভাবার সময় পেয়েছি নাকি! ভাবার আগেই তুমি এ্যাকশন শুরু করে দিয়েছ। ” শাহেদ মুখ ভার করে বলল। ওর পুলকের জন্য চিন্তা হচ্ছে। না জানি তার ওপর কোন ঝড় বইছে!
***
” আম্মু, খেতে দাও তাড়াতাড়ি। ভিষণ ক্ষুধা লেগেছে। ” পুলক বাসায় ঢুকেই মল্লিকা মির্জার কাছে খাবার চাইল। ও এদিকওদিক তাকিয়ে আশফিকে খুঁজছে।
” খবরদার মা, এই বদ লোকটাকে যদি আপনি খেতে দিয়েছেন তবে কিন্তু আপনার সাথে আমার বিশাল রকমের ঝগড়া হবে। ” পুলকের আওয়াজ পেয়ে আশফি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মল্লিকা মির্জাকে হুমকি দিল।
” ও বউ , এভাবে কেউ শ্বাশুড়ির সাথে কথা বলে! শ্বাশুড়ি জাতিকে সম্মান করতে হয়। নইলে যখন তুমি শ্বাশুড়ি হবে তখন তোমার ছেলের বউও তোমাকে সম্মান করবেনা। আর তোমার অসম্মান আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারবনা। ” পুলক আশফির দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলল।
” একদম চুপ ফাজিল লোক কোথাকার। আজেবাজে কথা বলবেননা বলে দিচ্ছি। আমি আপনার এমন কথায় ভুলবনা। সারাদিন মানুষের পেছনে কলকাঠি নেড়ে বাসায় এসে সাধু সাজছে! এতক্ষণ যেখানে ছিলেন যান সেখানে গিয়েই বসে থাকুন, আড্ডার দিন যা খুশি করুন। ” আশফি রেগে গেছে। ওর সামনে যে মল্লিকা মির্জা বসে আছেন সেটা ওর খেয়াল নেই।
মল্লিকা মির্জা দু’জনের ঝগড়া দেখে মিটিমিটি হাসছেন। তার ছেলে যে এই মেয়েটার সামনে ভেজা বেড়াল হয়ে যায় সেটা তিনি আজ বুঝলেন। এতদিন তিনি জেনে এসেছেন, তার ছেলে আশফিকে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু আজ দেখলেন ভালোবাসার সাথে সাথে পুলক আশফিকে প্রচন্ড ভয়ও পায়। সাড়া শহরের মানুষ যেই পুলক মির্জার নাম শুনলে ভয়ে গুটিয়ে যায়, সেই পুলক মির্জা নিজের স্ত্রী’র সামনে ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছে বিষয়টা হাস্যকর।
” ও আম্মু, আমার আদরের বউটাকে একটু শান্ত হতে বলনা। তাকে একটু বোঝাও। সে যেন তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমি তার একান্ত বাধ্যগত স্বামী। তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ” পুলক দুঃখী দুঃখী মুখ করে মল্লিকা মির্জার কাছে আর্জি জানাল।
” সরি বেটা, আমিও আমার আদরের বউমার কথার বাহিরে যেতে পারবনা। আমিও আমার বউমার একান্ত বাধ্যগত শ্বাশুড়ি। আমি তোমার পক্ষ নিলে ভবিষ্যতে তোমার করা অন্যায়ের জন্য আমার নির্ধারিত খাবারের বরাদ্দও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেটা আমি কিছুতেই চাইনা। তাই নিজের খাবারের ভবিষ্যৎ ধরে রাখতেই তোমার বিপক্ষে আমার যেতেই হচ্ছে। ” মল্লিকা মির্জা পুলকের দিকে না তাকিয়েই বললেন। তাকালে তিনি দেখতে পেতেন পুলক চরম বিস্ময় নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” পেয়েছেন আপনার উত্তর? এবার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। আগামী সাতদিন এই বাসায় আপনার জায়গা নেই। বাসার আশেপাশে আপনাকে দেখলেই আমি নিজ দ্বায়িত্বে থানায় ফোন করে কয়েকদিন জেলের খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। আমি বাবাকে বলে সেই ব্যবস্থা করে রেখেছি। ”
আশফির কথা শুনে রাগে পুলকের মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। ওকে জব্দ করে মেয়েটা কেমন নির্বিকারে দাঁড়িয়ে আছে সেটা দেখেই ও রীতিমত অবাক হচ্ছে। অথচ এই মেয়েকে ও নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে! পুলক ভাবছে, কিছু একটা করতেই হবে। ওর পক্ষে কখনোই আশফির সাথে উঁচু গলায় কথা বলা সম্ভব নয়। ওকে ভালোবেসেই বশ করতে হবে।
” আম্মু, কাইন্ডলি কয়েক মিনিটের জন্য তোমার চোখ বন্ধ করবে? ”
হুট করে পুলকের এমন কথা শুনে একটু অবাক হন মল্লিকা মির্জা। তাকে হঠাৎ চোখ বন্ধ করতে বলল কেন পুলক?
” কেন বেটা, চোখ বন্ধ করব কেন! ”
” তোমার সামনে কি আমি আমার বউকে কোলে নিতে পারব! এতটুকু লজ্জাতো আমার আছে। নাকি আমাকে তোমার নির্লজ্জ মনে হয়? ”
আশফি পুলকের কথা শুনে হা করে তাকিয়ে থাকল। বিস্ময়ে ও হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল।
” কাম অন, বেটা। এই আমি চোখ বন্ধ করলাম। তুমি তোমার মিশন কমপ্লিট কর। মনে রেখ, মা সব সময়ই তোমার পাশে আছে। অবশ্য তুমি চাইলে আমার সামনেই বউমাকে কোলে নিতে পার। আমি সিটি বাজিয়ে তোমাকে উৎসাহ দিলাম। ” মল্লিকা মির্জা উৎসাহ নিয়ে বললেন।
আশফি সবিস্ময়ে একবার পুলকের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার মল্লিকা মির্জার দিকে তাকাচ্ছে। কোন শ্বাশুড়িযে এমন উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারে তা আশফি মল্লিকা মির্জাকে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতনা।
” মা, আপনি না গুরুজন! গুরুজনের এসব দেখতে আছে! কোথায় আপনি ছেলেকে শাসন করবেন সেটা না করে তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন! আপনি আসলে কোন পক্ষের সেটা আগে বলুন। ”
” শোন বউমা, আমি কিছুক্ষন আগে যেমন তোমার পক্ষ নিয়েছিলাম কারন তুমি সঠিক ছিলে। এখন আমার ছেলের পক্ষ নিচ্ছি কারন ও এখন সঠিক। কাজেই পরিস্থিতি বুঝে আমি দুই পক্ষের হয়েই কাজ করব। বেটা ফটাফট তোমার কাজ কর, আমি চোখ বন্ধ করছি। ” মল্লিকা মির্জা একহাতে নিজের চোখ ধরে বললেন।
মল্লিকা মির্জাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে পুলক আশফিকে কোলে তুলে নেয়। আশফি রাগে হাত-পা ছুঁড়ছে। কিন্তু পুলকের হাত থেকে ছাড়া পায়না।
***
” আমার সোনা বউ, বোকা পাখি, রাগ করোনা। তুমি রাগ করলে আমার বুকের মধ্যে ধড়ফড় করে সেটা কি জানো? হার্টবিটেরা আমার সাথে বেইমানী করে। চোখ আমার বিপক্ষে যায়। ” পুলক আশফিকে বিছানায় বসিয়ে ওকে জড়িয়ে রেখেছে।
” আসছে ঢং করতে। ছাড়ুন আমাকে। আপনার ছোঁয়া এই মুহূর্তে আমার বিরক্ত লাগছে। মানুষের রক্ত বোধহয় তার শরীরে এখনো লেগে আছে। অন্যের রক্ত শরীরে মেখে মানুষ এত ঢং করতে পারে সেটা আপনাকে না দেখলে কোনদিনও জানতামনা। মানুষের আর্তনাদ না শুনলে রাতে বুঝি আপনার ঘুম হয়না? আপনি কি জানেন, আপনি পিশাচ শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত? যারা রক্ত ছাড়া কিছুই বোঝেনা। একটা মানুষের কতরকম রূপ থাকে বলুনতো? ” আশফি ভিষন রেগে গেছে। ও পুলককে কি বলছে সেটা ওর মাথায় নেই।
আশফির দিকে পুলক নিনির্মেষ চেয়ে থাকে। মেয়েটা ওকে যতই আঘাত দিয়ে কথা বলুক, ওর সাধ্য নেই মেয়েটার সাথে উঁচু গলায় কথা বলার।তাই ওকে ইচ্ছেমত কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে পুলক।
আশফি একের পর এক কথা শুনিয়েই যাচ্ছে। আর পুলক চুপচাপ সেগুলো শুনছে। পুলকের ফোন বেজে উঠলে আশফি থেমে যায়।
” তুই কি জানিস, তুই সব সময়ই আমাকে রং টাইমে ফোন দিস? তোরও একটা বউ আছে রে শাহেদ, কিন্তু তারপরও কেন এমন ভুল করিস বলতো? আমার বউটা আমাকে কি সুন্দর আদর করছিল, কিন্তু তুই তাতে বাগড়া দিলি। ” পুলক দাঁতে দাঁত পিষে কথা বলল।
” আজাইরা কথা বলোনা, ভাই। আমি ভালো করেই জানি ভাবী এই মুহূর্তে তোমাকে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম সবই দিচ্ছে। যেগুলো একটু আগে আমাকেও দেয়া হয়েছে আর নির্বিকারচিত্তে সেগুলো গ্রহন করেছি। তোমার পরিস্থিতিও সেইম। হাসিমুখে সেগুলো গ্রহন করছ। তাই আমার কাছে সাধু সেজে লাভ নেই। ”
” সবই যখন জানিস, তখন কেন ফোন দিয়েছিস? আমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে? সেটা যদি করেছিস তবে তোকে আমি কান ধরে উঠবস করাব বলে দিলাম। ”
” তুমি ভালো করেই জানো আমি তোমার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেবনা। দিলে মরিচের গুঁড়ো দেব। ”
” শাহেদের বাচ্চা, তোকে সামনে পেলে আমি থাবড়িয়ে তোর কান গরম করে দিতাম। ”
” ছিহ্ ভাই, এভাবে বলছ কেন! ভাবী তোমার পাশে আছেনা? সে যদি এসব শোনে তবে ভিটামিনের মাথা বাড়িয়ে দেবে কিন্তু। ”
” কেন ফোন দিয়েছিস সেটা বলে ফোন রাখ, ফাজিল। ”
” তোমাকে একটু জ্ঞান দিতে চাই, যেই জ্ঞান একটু আগে আমার বউয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। ”
” আজ যে খুব বউ বউ করছিস! তোর বউ কিন্তু আমার বউয়ের বড় বোন। তাই বউয়ের ছোট বোনের হাসবেন্ডের সামনে নিজের বউয়ের গুনগান করা বন্ধ কর। একটু লজ্জা আমার কাছ থেকে ধার নে। ”
আশফি দুই ভাইয়ের কথা শুনে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। এই মানুষের থেকে নাকি শাহেদ লজ্জা নেবে! এর কি আদৌও কোন লজ্জা আছে! কথাটা মনে মনে ভাবার সাথে সাথেই মুখেও বলে ফেলল সে।
” এই আপনার লজ্জা আছে বলতে চাচ্ছেন! একটু আগেইনা আমাকে কোলে করে নিজের মা’য়ের সামনে থেকে এই রুমে নিয়ে আসলেন! চরম নির্লজ্জ ব্যক্তি আবার লজ্জা ধার দিতে চায়! ”
আশফির কথা শুনে ওপাশ থেকে শাহেদ হো হো করে হেসে উঠল। শাহেদের হাসি পুলককে আরও রাগিয়ে দেয়।
” ঐ ফাজিল, তুই হাসি বন্ধ করবি? নাকি আমি তোর বাড়িতে গিয়ে কানের নিচে কয়টা দিয়ে আসব? ”
অনেক কষ্টে শাহেদ হাসি বন্ধ করে বলল,
” রাগ না করে আমার কথাটা আগে শোন। এই বাসায় আসলে আমার বউ তোমাকে কয়টা কথা শুনিয়ে দেবে। তারচেয়ে বরং কিভাবে বউয়ের মন ভালো করবে সেটা জেনে নাও। ”
পুলক শাহেদ অনেকক্ষণ কথা বলল। শাহেদের কথা শুনে পুলকের মন ভালো হয়ে গেছে। তাই শাহেদের কথামত কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
চলবে…
#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#পার্ট_৩৬
জাওয়াদ জামী জামী
বিপদের ঘন্টা বাজিয়ে ছুটে চলেছে এম্বুলেন্স। গন্তব্য ঢাকা মেডিকেল। আতিক মির্জার মুখে অক্সিজেন মাস্ক। তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। তার পাশে পুলক মির্জা স্থির হয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর পর সে চোখ মুছছে। পুলকের পাশেই আছেন মল্লিকা মির্জা। তিনি বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আশফি। শাহেদ ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আতিক মির্জার দিকে। এই মানুষটা ওকে অসম্ভব ভালোবাসে। বাবা-মা’র মৃত্যুর পর তিনি কখনো শাহেদকে বাবা-মা’ র অভাববোধ করতে দেননি। আজ একটা বুলেট সেই মানুষটার বুকের ডানপাশ এফোঁড়ওফোঁড় করে দিয়েছে! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পুলকের হাতে হাত রাখল শাহেদ। পুলকের দিকে তাকালেই বুক ধক করে উঠছে ওর। তার মনে কি চলছে সেটা শাহেদ বুঝতে পারছে।
” ভাই, টেনশন নিওনা। মামা সুস্থ হয়ে যাবে। তোমাকে এখন শান্ত থাকতে হবে। তুমি ভেঙে পরলে মামীকে কে সামলাবে? ”
” আব্বুকে যে আঘাত করেছে তাকে আমি ছাড়বনা, শাহেদ। তাকে মরতে হবে আমার হাতে। ” কথাটা বলেই আরেকবার চোখ মুছল পুলক। আজ কিছুতেই চোখের পানি আটকাতে পারছেনা সে।
তিনদিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে গেলেন আতিক মির্জা। খবরটা শুনে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল পুলক। মল্লিকা মির্জা জ্ঞান হারিয়ে হসপিটালের বারান্দায় পরে গেলেন।
***
মির্জা বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। তিনদিন পরও বাড়ির কেউ স্বাভাবিক হতে পারেনি। কামরান মির্জা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। তিনি চারদিকে লোক লাগিয়ে রেখেছেন, কে তার ভাইকে খুন করেছে সেটা খুঁজে বের করতে। পুলক হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে খুনিকে। কিন্তু কোন কূলকিনারা করতে পারছেনা। শাহেদ ছুটি আরও কয়েকদিন বাড়িয়ে নিয়ে পুলকের সাথেই আছে। অবশ্য ওর অফিস থেকে এতদিন ছুটি দিতে চায়নি। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর চাকরিটা করবেনা। এবং অফিসেও ওর সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। ওর সিদ্ধান্ত শোনার পর অফিস থেকে আরও পনেরদিনের ছুটি দিয়েছে।
মল্লিকা মির্জার জ্ঞান এখনো ফিরেনি। গত তিনদিন ধরে তিনি অজ্ঞান হয়ে আছেন। মাঝেমধ্যে যা-ও একটুআধটু জ্ঞান আসছে, পরক্ষণেই আবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। পুষ্পিতার অবস্থাও মল্লিকা মির্জার মতই। ও বাবার মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেনা।
আশফি মলিন মুখে তাকিয়ে আছে মল্লিকা মির্জার দিকে। কিভাবে এই মানুষটাকে সামাল দেবে সেটা ভেবে পাচ্ছেনা মেয়েটা। ঐদিকে পুলককে দেখে ওর ভালো লাগছেনা। মানুষটা কিছু একটা ঘটানোর জন্য তৎপর হয়ে গেছে। সে আশফির সামনে আসছেনা। কিংবা ওর সাথে কথাও বলছেনা। গতকাল বাসায় এসে কিছুক্ষণ মল্লিকা মির্জার কাছে চুপচাপ বসে থেকে আবারও বেরিয়ে গেছে। তারপর থেকে আর বাসায় আসেনি। আশফি পুলকের চিন্তায় অস্থির থাকে।
তিয়াসা গত কয়েকদিন থেকেই এই বাসায় আছে। শাহেদের চাচা ফুপু সবাই প্রতিদিন আসছে মল্লিকা মির্জার কাছে। তার জ্ঞান ফেরার সময়টুকুতে নানানভাবে শান্তনা দিচ্ছেন। কিন্তু মল্লিকা মির্জা কোন শান্তনাতেই স্বাভাবিক হচ্ছেননা।
” আশফি, তুই পুষ্পিতাকে সাথে নিয়ে খেয়ে নে। মেয়েটা গত তিনদিন থেকে না খাওয়া। খাওয়া শেষ হলে পুষ্পিতাকে নিয়ে মামীর কাছে বসাতে হবে। ”
” আমি পুষ্পিতাকে অনেকবারই খেতে ডেকেছি। কিন্তু ও খেতেই চাচ্ছেনা। শুধু কান্নাকাটি করছে। আমি কিভাবে ওকে শান্তনা দিব ভেবে পাচ্ছিনা। যখনই জ্ঞান আসছে মা তখনই কান্নাকাটি করছে। এত অসহায় লাগছে তোকে কি বলব। আমারও তো বাবা’র জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা। আমি যে এই বাড়ির বউ, সেটা বাবা কখনোই বুঝতে দেননি। তিনি পুষ্পিতার মতই আমাকেও ভালবেসেছেন। ” ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল আশফি।
” আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা, মামাকে কেউ এত নির্মমভাবে মারতে পারে! মামী এই শোক সামাল দেবে কিভাবে সেটা ভাবতেই আমার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ভয় হচ্ছে ভাইয়াকে নিয়ে। খুণির পরিচয় পেলে ভাইয়া যে তার কি অবস্থা করবে, সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউই জানেননা। ” তিয়াসার গলায় উৎকন্ঠা চাপা থাকেনা।
” আমিও সেটাই ভাবছি। উনার দিকে তাকালেই আমার কেমন ভয় হচ্ছে। উনার এমন হিংস্র রূপ আমি আগে দেখিনি। ” কথার মাঝেই আশফি লক্ষ্য করল মল্লিকা মির্জা নড়ে উঠেছেন। তাই ও আর কিছু না বলে অধির আগ্রহে তাকিয়ে থাকে মল্লিকা মির্জার দিকে।
চোখ খুলেই নিজের পাশে তিয়াসা আর আশফিকে দেখে কেঁদে উঠলেন মল্লিকা মির্জা। তিয়াসা তার ডান হাত ধরে রাখল। তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে।
” মামী, শান্ত হোন। আপনি এভাবে কাঁদলে পুষ্পিতা, ভাইয়াকে কিভাবে সে সামলাবে! ভাইয়া বাসায় আসছেনা ঠিকমত। পুষ্পিতাও কেঁদেই যাচ্ছে। প্লিজ মামী, ধৈর্য্য ধরুন। ” তিয়াসা চেষ্টা করছে মল্লিকা মির্জাকে শান্তনা দেয়ার।
বড়মাকে রুমে আসতে দেখে আশফি একটু ভরসা পায়। রত্না পারভিন এসে মল্লিকা মির্জার পাশে বসলেন। তিনি মল্লিকা মির্জার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে নানানভাবে শান্তনা দিচ্ছেন।
***
একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলক তার বাবা’র হত্যাকারীর পরিচয় জানতে পারলনা। এদিকে মেয়রের মৃত্যুতে শূন্য পদে আবারও নির্বাচন হবে। দলের সবাই পুলককে পরবর্তী মেয়র হিসেবে দেখতে চাইছে। তাও ও সিদ্ধান্ত নেয় মেয়র পদে লড়বে। যদিও আশফি কিংবা মল্লিকা মির্জা কেউই চাইছিলনা পুলক নির্বাচন করুক। কিন্তু পুলক কারও কথা শোনেনি। ও পুরোদমে প্রচারনা শুরু করেছে।
আশফি লক্ষ্য করছে আগের পুলক মির্জা আর এখনকার পুলক মির্জার মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ। এখনকার পুলক মির্জা হাসতে ভুলে গেছে। সে কঠোরতার শক্ত খোলসে নিজেকে আবৃত করেছে। আতিক মির্জার মৃত্যু সব পাল্টে দিয়েছে। আশফি পুলকের এমন বদল মানতে পারছেনা। ওর সেই আগের পুলককেই চাই। কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব?
পুলককে রুমে প্রবেশ করতে দেখে সন্তর্পনে চোখ মুছল আশফি। এই মানুষটার প্রতি তার মনে এক আকাশ অভিমান জন্মেছে। ওকে ভালবাসা শিখিয়ে, সে-ই আবার ভালবাসাহীনতায় ভোগাচ্ছে।
” রুমেই খাবেন নাকি ডাইনিং এরিয়ায় যাবেন? ” ছোট্ট করে বলল আশফি।
আশফির কথা শুনে ওর দিকে তাকায় পুলক। মেয়েটা বেশ শুকিয়ে গেছে৷ গত একমাসে মেয়েটার দিকে তাকানোর সুযোগ পায়নি সে। আজ হঠাৎ করেই অপরাধবোধে ছেয়ে যায় পুলকের মন। বাবার হত্যাকারীকে খুঁজতে গিয়ে এই মেয়েটার খোঁজ নিতে ভুলে গিয়েছিল!
” আম্মু, পুষ্পিতা খেয়েছে? ”
” হুম। আমি তাদের জোর করে খাইয়ে দিয়েছি। ”
” তাহলে আমাদের খাবার রুমেই নিয়ে এস। অনেকদিন একসাথে খাইনা। ”
পুলকের কথায় কান্না পায় আশফির। ও অনেক কষ্টে কান্না চেপে নিচে গেল।
” এক প্লেটে খাবার নাও। অনেকদিন তোমাকে খাইয়ে দেইনা। ” আশফি খাবার আনলে পুলক ওকে বলল।
পুলকের কথা শুনে আরও একবার অবাক হয় আশফি। ততক্ষনে ওর অভিমান গলতে শুরু করেছে।
পুলক আশফির মুখের সামনে খাবারের লোকমা ধরলে কেঁদে উঠল আশফি। অনেকদিন পর মানুষটাকে স্বাভাবিক হতে দেখে ওর ভালো লাগছে। পুলকও ওকে কাঁদতে বাঁধা দিলনা।
***
” আপনাকে এত ঘনঘন ছুটি দিচ্ছে অফিস থেকে! ” শাহেদ বাসায় আসলে প্রথমেই কথাটা জিজ্ঞেস করল তিয়াসা।
” ছুটি না দিলে চাকরি ছাড়ার হুমকি দিয়েছি। আর আমার মত এমপ্লয়িকে তারা হারাতে চায়না বলেই ঘনঘন ছুটি দিচ্ছে। ” শাহেদ নির্বিকারভাবে জবাব দিল।
” ওহ্। আমি ভেবেছিলাম, আপনি বোধহয় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার ভাই মেয়র হবে আর আপনি হবেন তার চ্যালা। তাকে সুপরামর্শ, কুপরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। আপনি তো আবার ভাইয়ের ভক্ত। ”
” অবশ্যই আমি ভাইয়ের ভক্ত। কিন্তু তাই বলে তাকে কুপরামর্শ কখনোই দেবনা। চাকরির পাশাপাশি তার পাশে থাকব আমি। আচ্ছা আমার এমন কেন মনে হচ্ছে, তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছ? ”
” ইনসাল্ট করব কেন! আমি শুধু মন্তব্য করেছি। সুপরামর্শই যখন দেবেন, তখন তাকে একটা পরামর্শই দিন, যেন সে রাজনীতিতে না জড়ায়। মামার পরিনতি দেখেও কি তার শিক্ষা হয়নি! আমার বোনটার জীবন তার সাথে জড়িয়ে গেছে। মেয়েটা ছোটবেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছে। তাকে আর কষ্ট পেতে দেবেননা। আপনি ভাইয়াকে নিষেধ করুন। ” তিয়াসা অনুনয় করে বলল।
” আমি এই বিষয়ে কখনোই ভাইয়াকে কিছু বলবনা। কারন ছোট থেকেই রাজনীতিই ছিল ভাইয়ার ধ্যান-জ্ঞান। সে রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে। আমি হাজার চেষ্টা করলেও তাকে এই পথ থেকে ফেরাতে পারবনা। ”
শাহেদের কথা শুনে রাগ হয় তিয়াসার। সে চেষ্টা করার আগেই হাল ছেড়ে দিচ্ছে। বিষয়টা মানতে পারছেনা তিয়াসা। তাই সে মুখ কালো করে জিজ্ঞেস করল,
” কয়দিন থাকবেন? রাতে কি বাসায় খাবেন নাকি ভাই আর তার চ্যালাদের সাথে খাবেন? ”
হঠাৎ প্রসঙ্গ বদল করায় অবাক হয় শাহেদ। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তিয়াসার দিকে। মেয়েটার গোমড়ামুখ দেখে ওর ভ্রু কুঁচকে যায়। ওর গোমড়ামুখের কারন কি সেটা বুঝতে না পারায় নিজের ওপরই রাগ হয়।
” দুইদিন পর ঢাকা ফিরব। কতদিন পর বাসায় এসেছি, আমাকে বাহিরে খেতে বলছ! ”
” আপনার তো আবার শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব নেই। তারা আপনার অপেক্ষায় থাকে। কত কাজ আপনার। সেজন্যই বলছিলাম। ”
” শুভাকাঙ্ক্ষী তো আমার বাসাতেও আছে। সে-ও আমার অপেক্ষায় থাকে। আমার পছন্দের খাবার রান্না করে আমার জন্য অপেক্ষা করে। এই শুভাকাঙ্ক্ষীর মন খারাপ করে দিয়ে বাহিরে খাওয়ার সাহস আমার নেই। ”
শাহেদের কথা শুনে হাসি ফুটল তিয়াসার ঠোঁটের কোনে। যেটা শাহেদের চোখে ঠিকই পরেছে। শাহেদ কিছুদিন থেকে বুঝতে পারছে তিয়াসা পাল্টে গেছে। ও শাহেদের ভালোমন্দের খোঁজ রাখে। শাহেদের পছন্দ-অপছন্দের কথা ভাবে।
” ফিহার সাথে কথা হয়েছে আপনার? কিছু বলেছে আপনাকে? ”
শাহেদের ফুপু চাচারা কয়েকদিন আগেই যে যার দেশে ফিরে গেছে। আতিক মির্জার মৃত্যুর পর তারা বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে ছিলেন। কিন্তু একটা মৃত্যু সবকিছু এলোমেলো করে দেয়ায় তারাও আপসেট হয়ে যান। এছাড়া শাহেদ, তিয়াসা মির্জা মহলে একপ্রকার থেকেই গেছিল। শুধু মাঝেমধ্যে তিয়াসা তাদের জন্যই শ্বশুর বাড়িতে আসত। তারা চাননি মল্লিকা মির্জা আর তার পরিবার রেখে তাদেরকে সময় দিক তিয়াসা৷ তাই তারা সিদ্ধান্ত নেন যে যার দেশে ফিরে যাবে। তবে যাওয়ার আগে জানিয়ে গেছেন এক বছর পর তারা আবারও বাংলাদেশে আসবেন।
” নাহ্। আমি কয়েকদিন ব্যস্ত ছিলাম। ওর ফোন রিসিভ করতে পারিনি। কি হয়েছে? ”
” ওর বিয়ের কথা হচ্ছে। ছেলেটা বাংলাদেশী। কিন্তু ও একটা পাকিস্তানি ছেলেকে পছন্দ করে। আর তাকেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ফুপি সেটা চায়না। এটা নিয়ে বোধহয় বাসায় ঝামেলা হচ্ছে। ” ফিহা তিয়াসাকে ওর সমস্যার কথা বলেছে। সে শাহেদের কাছ থেকে সমাধান চেয়েছে। তাই তিয়াসা শাহেদকে জানিয়ে দেয়।
” ও পাকিস্তানি ছেলেকে বিয়ে করতে চাইলে করবে। এতে ফুপি আপত্তি করবে কেন! ফুপি কি কোনভাবে ব্যাকডেটেড মায়েদের মত আচরণ করছে? এটা মোটেও ঠিক নয়। ফুপির উচিত ফিহার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো। ”
শাহেদের কথা শুনে ওর দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল তিয়াসা। বোঝাই যাচ্ছে শাহেদের কথা ওর পছন্দ হয়নি।
” কি বলছেন যা তা! ফুপি মেয়ের জন্য জামাই পছন্দ করতে পারেননা? তার তো অধিকার আছে মেয়ের বিয়ে ঠিক করার। তিনি ফিহাকে জন্ম দিয়েছেন, ওকে কোলেপিঠে করে বড় করেছেন, ওর জন্য অনেক কিছু স্যাক্রিফাইস করেছেন। বাবা-মা কি সন্তানের খারাপ চায়? প্রত্যেক বাবা-মা’ই চায় তাদের সন্তান সুখে থাকুক। ”
” বাবা-মা চাইলেই কি সব সন্তানেরা সুখী হয়? আর যাই হোক জোর করে কখনো সুখী হওয়া যায়না। তাই সব সময় নিজের সিদ্ধান্তকে সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে নেই। মানছি বাবা-মা সন্তানের জন্য নিজের জীবন বির্সজন দিতে দুইবার ভাবেনা। তারা নিজের জীবনটাকেই সন্তানের জন্য স্যাক্রিফাইস করে দেয়। তাই বলে জীবন স্যাক্রিফাইস করা আর নিজের পছন্দমত বিয়ে দেয়া একই বিষয় নয়। এটা তোমার-আমার থেকে কেউই ভালো জানেনা। তাই সব জায়গায় অধিকার খাটেনা। অধিকারের বাহিরেও কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমাদের মানতে হবে। ”
শাহেদের কথা শুনে চমকে উঠল তিয়াসা। ও বিষয়টা সহজভাবে ভেবেছে, অথচ একই বিষয় শাহেদ অন্যভাবে ভাবছে। শাহেদ বিষয়টাকে এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ভাববে সেটা তিয়াসা কল্পনাই করেনি। অবশ্য শাহেদের যুক্তিও ফেলে দেবার মত নয়। সত্যিই তো ওরা বিয়ের ছয়মাস পরেও সুখী হতে পারেনি। ওর বাবা-মা ‘ র সিদ্ধান্ত যে ওদের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে, সেটা ওরা দু’জন বৈ আর কেউই জানেনা। যে সিদ্ধান্ত দু’জন মানুষকে কাছে নিয়ে আসার পরিবর্তে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। তবে কি এই দূরত্ব আজীবনের? কখনো কি ঘোচবার নয়? তিয়াসাতো চায়না আজীবনের দূরত্ব। আর সে-ও ভালো করেই জানে শাহেদও চায়না এই দূরত্ব নামক ব্যাধী।
তিয়াসাকে চুপ থাকতে দেখে হাসল শাহেদ। ও জানে, ওর কথা শুনে তিয়াসার খারাপ লেগেছে। হয়তো কষ্টও পেয়েছে। তবুও কথাগুলো বলতেই হত।
চলবে…