রাঙা আলোর সন্ধ্যা পর্ব-৬২ এবং শেষ পর্ব

0
7

#রাঙা_আলোর_সন্ধ্যা
#অন্তিম
জাওয়াদ জামী জামী

পুলকের কি করার কিছুই নেই? সাহস হারালনা সে। যে করেই হোক আয়াসকে বাঁচাতে হবে। হাঁচড়েপাঁচড়ে এগিয়ে গেল আশফির কাছে। এক হাতে ছেলেকে জড়িয়ে নিয়ে আরেক হাতে আশফিকে জড়িয়ে ধরল। দু’জনকেই বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে হু হু করে কেঁদে উঠল। হয়তো ও কিছুক্ষণের মধ্যেই রক্তক্ষরণে মারা যাবে। কিন্তু আয়াসের কি হবে? কামরান মির্জা ছেলেটাকে কষ্ট দিয়ে মারবে। কথাটা ভাবতেই শরীর অবশ হয়ে আসল পুলকের। যেভাবেই হোক ছেলেকে বাঁচানোর তাড়না ওকে পেয়ে বসল। আশফিকে মেঝেতে শুইয়ে দিয়ে খাট ধরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হল। উপায় না পেয়ে আবারও হাঁচড়েপাঁচড়ে দরজার দিকে যায়। অনেক।কষ্টে সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেখল ড্রয়িং রুমে কয়েকজনের সাথে কথা বলছেন কামরান মির্জা। পুলক আবারও কষ্ট করে রুমের ভেতর আসল।
ও বুঝে যায়, এই বাড়ি থেকে বেরোনোর পথ বন্ধ। তবুও হাল ছাড়লনা সে। অনেক কষ্টে বেলকনিতে এসে দেখল দু’জন নতুন লোক গেইট পাহারা দিচ্ছে। হতাশ হয়ে আবারও রুমে আসল। ওর এভাবে যাওয়া আসায় রক্তের মোটা রেখা তৈরি হয় পুরো রুম জুড়ে।

***
হুট করেই তিয়াসার শরীর খারাপ হওয়ায় ওরা বাসায় ফিরে আসল। কিন্তু গেইটে এসে অবাক হয়ে যায় দু’জনেই। আগের দারোয়ানের জায়গায় নতুন দু’জন পাহারা দিচ্ছে। তারা গেইটের সামনেই শাহেদের গাড়ি থামিয়ে দেয়।

” আপনারা কারা? আগের দারোয়ান কোথায়? আর আমার গাড়ি আটকাচ্ছেন কেন? ” শাহেদ বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল।

” আমরা নতুন নিয়োগ পাইছি। আগেরগুলারে বিদায় কইরা দিছে পুলক স্যার। আর আইজ থাইকা বাসায় কারও ঢুকা নিষেধ। ” দু’জনের একজন বলে উঠল।

” আপনি জানেন আমি কে? গেইট খুলুন। আমি ভাইয়ের সাথে কথা বলব। ” শাহেদ ধমকে উঠল।

” স্যার ভেতরে নাই। ম্যাডামরে নিয়া বাহিরে গেছে। আপনি পরে আইসেন। ”

গেইট বন্ধ হয়ে গেল। শাহেদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে। গাড়ি ঘুরিয়ে একটু দূরে এসে পুলকের বেলকনির দিকে তাকায়। মুহূর্তই যা বোঝার বুঝে যায়।

” ভাইয়া না হয় বাহিরে গেছে, কিন্তু আশফি সে-ও বাহিরে গেছে? আশফি বাহিরে গেল আর আমাকে জানালনা? ” তিয়াসা জানতে চাইল। সেই সাথে ফোনও দিল আশফিকে। কিন্তু আশফির ফোন সুইচড অফ দেখাচ্ছে।

শাহেদ আনমনা হয়ে গেছে। ওর চিন্তা হচ্ছে পুলকের জন্য। ওর মন বলছে পুলক কোন বিপদে পরেছে।

” তুমি বাসায় ফিরে যাও। আমি কিছুক্ষণ পরই আসছি। ”

” কোথায় যাবেন আপনি? ”

” বাসায় ঢুকব। ”

” কিভাবে? দারোয়ান তো ঢুকতেই দিলনা? ”

” জানোনা এটা কার বাড়ি? পুলক মির্জার বুদ্ধি সম্পর্কে তোমার কোনও ধারনাই নেই। ”

” আমিও যাব আপনার সাথে। ”

” পাগলামি করোনা। আমি ভেতরে গিয়ে শুধু দেখে আসব। ”

” আপনাকে একা ছাড়বনা আমি। আপনি ভেতরে গেলে আমাকেও নিয়ে যাবেন, ব্যাস। ”

তিয়াসার জিদের সাথে পেরে উঠলনা শাহেদ, ওকে নিয়েই মির্জা মহলের পেছন দিকে চলে গেল, তবে ঘুরপথে গেল। দারোয়ানদের বুঝতে দিলনা।

মির্জা মহলের ঠিক পেছনে রয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা । তিনপাশে বড় বড় বিল্ডিংয়ের পেছন দিকটায় তার অবস্থান। দিনের বেলায়ও এখানে সূর্যের আলো ঠিকঠাক পৌঁছায়না। যার ফলে জায়গাটা বেশ স্যাঁতসেঁতে। চিকন একটা গলি পেরিয়ে যেতে হয় পেছনে। তিয়াসা জায়গাটাযয় এসে বিরক্তি নিয়ে শাহেদের দিকে তাকায়।

” এখানে আসলেন কেন? এই ঘুপচির মধ্যে নিয়ে এসে আমাকে মারার প্ল্যান করেছেন? ”

শাহেদ হেসে এগিয়ে যায় মির্জা বাড়ির ঠিক পেছনে। ও তিয়াসার কথার প্রত্তুত্যর করলনা। ড্রেনের ঠিক পাশে একটা লোহার সরু গেইট। শাহেদ এদিকওদিক তাকিয়ে গেইট খুলে ভেতরে ঢুকে তিয়াসাকেও ঢুকতে ইশারা করল। তিয়াসা ভেতরে ঢুকে শাহেদের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। ততক্ষণে শাহেদ এগিয়ে গেছে বারান্দার দিকে। বারান্দা সংবলিত রুমটা সব সময়ই বন্ধ থাকে। শাহেদ গ্রীলে কিছু একটা করছে। কিছুক্ষণ পর তিয়াসা দেখল গ্রীলে একটা দরজা। ও কাছে গিয়ে ভালোভাবে দেখল গ্রীলের ছোট্ট একটা অংশে নাট বল্টু লাগানো আছে। শাহেদ কায়দা করে সেগুলো আলাদা করতেই দরজাটা দেখা যাচ্ছে।

” এসব কি! আপনি কি নিশ্চিত ভাইয়া বাসায় আছে? ” তিয়াসা ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল।

” ভাইয়ের বুদ্ধি ছিল এটা। ছোটবেলায় বন্ধুরা ডাকতে আসলে মামী তাকে বের হতে দিতনা। অনেক সময় মামী বলত ভাইয়া বাসায় নেই। তাই ভাই একটা বুদ্ধি বের করেছিল। তার রুমের বেলকনির একটা বাল্ব অন করে রাখত যখন সে বাসায় থাকত। আর এটা দেখেই সবাই বুঝে যেত ভাই বাসায় আছে। এই অভ্যাসটা আজও থেকে গেছে। আমি বেলকনিতে বাল্ব অন করা দেখেছি। তারপর একদিন মামা-মামীর অনুপস্থিতিতে ভাই একজন মিস্ত্রি ডেকে এখানে কারসাজি করে নেয়। এটা আমি আর ভাই ছাড়া কেউ জানেনা। ”

শাহেদ প্রথমে তিয়াসাকে ভেতরে ঢুকতে বলল
এরপর সে নিজে ঢুকল। খুব সাবধানে ওরা পেছনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠল। এই সিঁড়িও পুলকের বুদ্ধিতেই পরে করা হয়েছিল। ও দাদুকে পটিয়ে কাজটা করে নেয়।

রুমে ঢুকেই শাহেদ তিয়াসা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে গেল পুলকের কাছে। পুলক ছেলেকে কোলে নিয়ে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। ওর পায়ে রেখেছে আশফির মাথা। ও একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আশফির দিকে। দুচোখ বেয়ে ঝরছে আশ্রুধারা।

” ভাই, তোমাদের এই অবস্থা কে করেছে? ভাই, কথা বল। ” শাহেদ আর্তনাদ করে বলল।

তিয়াসা আশফিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে।

” তোরা শব্দ করিসনা। নিচে কেউ থাকলে ওরা আশফির মত তোদেরও শেষ করে দেবে। দেখ মেয়েটা কেমন শান্তিতে ঘুমাচ্ছে? ওর বোধহয় আমার কথা মনেই নেই। ও ভুলেই গেছে, আমরা দু’জন একসাথে পথ চলার শপথ নিয়েছিলাম। ” শান্ত গলায় বলল পুলক।

” ক…কে ভাই, সেই বেইমান? ওয়েট এসব পরে শুনব তার আগে তোমাকে ডক্টরের কাছে নিতে হবে। তুমি একটু অপেক্ষা কর আমি এ্যাম্বুলেন্স ডাকছি। ”

” এত অস্থির হোসনা। এ্যাম্বুলেন্স আসলেও আমাকে মরতে হবে। এমনকি তোরাও বাঁচবিনা। তুই আমার ছেলেকে বাঁচা। ওকে নিয়ে পালিয়ে যা। তিয়াসা, তুমি আমার ছেলেকে মা’য়ের আদর দিয়ে বড় করতে পারবেনা? ”

” ভাইয়া, এসব কি বলছেন? কিছুই হবেনা আপনার। আমরা আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাব। ” তিয়াসা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

” হ্যাঁ ভাই, তিয়াসা ঠিক বলেছে। আমরা তোমাকে হসপিটাল নিব। ”

” গেইটে দু’জন দাঁড়িয়ে আছে দেখিসনি? তোর কি মনে হয় ওরা আমাদের জ্যান্ত বের হতে দেবে? কামরান মির্জা নিজের পথ ক্লিয়ার রাখতে সব কিছুই করতে পারে। তোরা বেরিয়ে যা। কমরান মির্জা এসে পরলে তোদেরও মেরে দেবে৷ প্লিজ তোরা যা। আমার ছেলেকে বাঁচা। ” ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পুলক ওদের অনুরোধ করল।

পুলকের মুখে কামরান মির্জা নামটা শোনার পর শাহেদ তিয়াসা একযোগে ফিরে তাকায় পুলকের দিকে। ওদের মনে অনেকগুলো প্রশ্ন এসে জমা হয়। কিন্তু পুলকের প্রস্তর কঠিন মুখটা দেখে নিমেষেই সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়। ঠিক তখনই ওরা গেইটের বাহিরে গাড়ির হর্ণ শুনতে পায়। শাহেদ দৌড়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখল কামরান মির্জার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ও আর দেরি না করে রুমে আসল।

” ভাই, তুমিও আমাদের সাথে যাবে। তোমাকে মৃত্যুর মুখে ফেলে আমি কোথাও যাবনা। ” কেঁদে উঠল শাহেদ।

” পাগলামি করার সময় এখন নয়। তোরা যা এক্ষুনি। আমার আম্মুকে দেখিস। আব্বুকে হারিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে ছিল এতদিন। কিন্তু আমি না থাকলে সে পাগল হয়ে যাবে। তাকে আমার অভাব বুঝতে দিসনা। পুষ্পিতাকে সামলে রাখিস। তিয়াসা, তুমি আমাকে কথা দাও আমার পরিবারকে দেখে রাখবে? আমার ছেলেকে নিজের সন্তানের পরিচয়ে বড় করবে? ওকে কোনদিন রাজনীতিতে আসতে দেবেনা? ” কেঁদে ফেলল পুলক আর কিছুই বলতে পারলনা।

” মামী কখনোই বুঝতে পারবেনা তার ছেলে নেই। ” শাহেদ কান্নার দমকে কথা বলতে পারলনা।

তিয়াসা পুলকের কোল থেকে আয়াসকে বুকে জড়িয়ে নিল। আশফির কপালে চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়াল। শাহেদ উঠে দাঁড়াতেই পুলক ওর হাত ধরল। ইশারা করল দেয়ালে ঝুলানো ছবির দিকে।

” ঐখানে গোপন ক্যামেরা সেট করা আছে। আমি বাহিরে থাকলে ছেলেকে দেখতাম, ওর কান্নার শব্দ শুনতাম, ওর হাসি দেখতাম। ক্যামেরায় সব রেকর্ড হয়েছে। পরে এটা কাজে লাগবে। আর তুই যাওয়ার আগে আমার আলমারির লকারে পিস্তল রাখা আছে, সেটা দিয়ে যা। কামরান মির্জা আমাকে লড়াই করার সুযোগ না দিয়ে হুট করে আক্রমণ করেছে। এবার তার চমকানোর পালা। ”

পুলকের কথামত শাহেদ লকার খুলে ওয়ালথার পিপিকে পুলকের হাতে তুলে দিয়ে, রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বারাবার পেছন ফিরে চাইল সে। ভাইকে একা রেখে যেতে চাইছেনা। কিন্তু ও নিরুপায়। ভাইয়ের কথা রাখতেই ওকে যেতে হল।

***

” আরে পুলক বেটা, তুমি এতক্ষণ টিকে আছ! আমি ভেবেছিলাম রক্তক্ষরণেই বুঝি তুমি টপকে গেছ। কিন্তু তোমার তো দেখছি কৈ মাছের প্রান। তুমি বোধহয় আমার হাতেই মরতে চাও? ”

কামরান মির্জা রুমে ঢুকে ব্যঙ্গ করে বললেন। কিন্তু পরক্ষণেই পুলকের কোলে আয়াসকে না দেখে এদিকওদিক তাকিয়ে খুঁজে দেখলেন। কিন্তু রুমের কোথাও আয়সাকে না দেখে রাকিবকে বললেন খুঁজে দেখতে। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে।

” তোমার ছেলে কোথায়? কি ভেবেছ, ওকে লুকিয়ে রাখলেই ও বেঁচে যাবে? ওকে ও মরতে হবে। ”

পুলক এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কামরান মির্জার দিকে। ওর চোখে ক্রোধের অনল। ও আশফিকে বুকে জড়িয়ে রেখেছে।

” আংকেল, লিলিপুটটাকে কোথাও দেখলামনা। ”

” রাকিব, তুমি এমন ব্যবস্থা কর যেন, এদের মৃত্যু হতাহত বলে চালিয়ে দেয়া যায়। অথবা ডাকাতদের কাজ হবে এমন কিছু। মোটকথা আমাদের নাম আসা চলবেনা কিছুতেই। ”

” আপনি চিন্তা করবেননা, আংকেল। সব প্ল্যান করাই আছে। ”

” তোর প্ল্যান কখনো সাকসেসফুল হবেনা, বেইমান। আমি হতে দেবনা। ” সাথে সাথেই গর্জে উঠল পুলকের পিস্তল।

রাকিব লুটিয়ে পড়ল মেঝেতে। পুলকের হাতে পিস্তল দেখে কামরান মির্জা চমকে গেছেন। তিনি যা বোঝার বুঝে নিলেন। কিন্তু এটা অসম্ভব!

” কে এসেছিল বাসায়? ” এবার পুলকে কপাল লক্ষ্য করে গুলি চালালেন কামরান মির্জা।

কিন্তু পুলক একটু নড়ে উঠল। আর তাতেই মিস হয়ে গেল। ঠিক তখনই গর্জে উঠল পুলকের পিস্তল। গুলি কামরান মির্জার গলা ভেদ করে বেরিয়ে গেল। গলা কাটা মুরগির মত ধপ করে মেঝেতে পরে তড়পাতে থাকে কামরান মির্জা। পুলক তার শরীর লক্ষ্য করে পরপর তিনটা গুলি করল।

” হ্যাপি জার্নি ডিয়ার, বেইমান চাচ্চু। ”

পুলক এতটুকুই বলতে পারল। একটা গুলি এসে এফোড়ওফোড় করে দিল ওর বুক। দরজার দিকে তাকাতেই দেখল কামরান মির্জার সেক্রেটারি পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। পুলকে হেলে পরতে গিয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করল অনেক কষ্টে। কাঁপা কাঁপা হাতে পিস্তল তুলে ধরল। চোখের পলকেই সেক্রেটারি মেঝেতে ধরাশায়ী হল।

***

” উফ্ অবশেষে পৌঁছালাম। আমি পিচ্চুকে দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। এতদিন ওকে ফোনে দেখেছি। এবার ওকে ছুঁতে পারব। একসাথে মামী আর ফুপি হয়েছি, এটা কি কম পাওয়া। ”

নিলাশা খুশিতে লাফাচ্ছে। রিফাত ওর পাগলামি দেখে হাসছে। ওদের গাড়ি মির্জা বাড়ির সামনে আসলে মানুষের ভীড় দেখে অবাক হয়ে যায়।

***

রিফাত তাকিয়ে আছে আশফির দিকে। থেকে থেকেই ডুকরে কেঁদে উঠছে। অবহেলা, অনাদরে বেড়ে ওঠা বোন আজ কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে। ওর পাশে ঘুমিয়ে আছে আশফির ভালোবাসার মানুষটি।

তিয়াসা আয়াসকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদছে।
মল্লিকা মির্জা আইসিইউতে। পুষ্পিতারও জ্ঞান নেই।

আফজাল হোসেন মেয়ের লাশের পাশে আহাজারি করছেন। মাঝেমধ্যেই জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।

মির্জা বাড়ির খুণ এখন টপ অব দ্য কান্ট্রি। পুলকের কথামত শাহেদ গোপন ক্যামেরা খুঁজে বের করে প্রশাসনকে দেয়। এতেই সব ক্লিয়ার হয়ে যায়। প্রশাসন কামরান মির্জার অপরাধ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

***

” আপনার জীবনের আপদ বিদায় হয়েছে। আশফি চলে গেছে, আমিও চলে যাচ্ছি। আশফির জন্যই এখানে আসতাম। এখন ও আর নেই হয়তো আমিও আর আসবনা। তবে প্রতিমাসে আপনাকে টাকা পাঠিয়ে দেব। ভালো থাকবেন। ” রিফাত আফজাল হোসেনের কাছ থেকে বিদায় নিল।

” এভাবে বলোনা। নিজের অপরাধবোধ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আশফি চলে গেছে। এখন তুমিও যদি না আস তবে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাব। তুমি প্রতিমাসে একবার আমার কাছে এস। আমরা বাবা-ছেলে মিলে আশফির কবর জিয়ারত করব। আমার মেয়েটার শান্তির জন্য দোয়া করব। পুলকের জন্য দোয়া করব। ” হু হু করে কেঁদে উঠলেন আফজাল হোসেন।

” শ্বাশুড়ি আম্মা, ভালো থাকবেন। আশফি নামক আপদ আপনার জীবন থেকে চিরতরে দূর হয়েছে। ওর জন্য আপনাকে আর বিব্রত হতে হবেনা। ভাইয়াও আপনাকে আর বিরক্ত করবেনা। খুশি হওয়ার কথা আপনার। তিয়াসা ভাবী আয়াসের দ্বায়িত্ব নিয়েছে । যদিওবা আমিই নিতে চেয়েছিলাম আয়াসকে। বাচ্চাটার চিন্তাও আপনাকে করতে হবেনা। ”

” এম্নে কইওনা। আমি আসফিরে ভালোবাসিনি ঠিকই, কিন্তু হেয় চইলা যাওনে আমি খুশি হইনাই। আমিও তো মা। আশফির জায়গায় পৃথা থাকলে আমার যে কষ্ট হইত, এখনো সেই কষ্টই হইতাছে। অনেক কষ্ট দিছি তারে। কিন্তু মাইয়াডা মাফ চাওনের সুযোগ দিলনা। ওরে অবহেলা করছি, কিন্তু ওর পোলারে সেইডা করমুনা। ও রিফাত, তুমি একবারে যাইওনা। মা মনে কইরা আমারে ক্ষমা কইর। ” রিনা আক্তার পাগলের মত কাঁদছে। আশফির মৃত্যু সে কিছুতেই মানতে পারছেনা।

***

” ভাইয়া আয়াসের দ্বায়িত্ব নিলাশাকে না দিয়ে আমাকে দিল কেন? আমি কি ভালো মা হতে পারব? ”

” তুমি একজন ভালো মা সেটা ইতোমধ্যেই প্রমান করে দিয়েছ। ভাই সেটা বুঝতে পেরেছিল। ” শাহেদ আর কিছু বলতে পারলনা। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।

***

রিফাত, আফজাল হোসেন, শাহেদ দাঁড়িয়ে আছে কবরস্থানে। তাদের চোখে পানি। আফজাল হোসেন অঝোরে কাঁদছেন। তার মেয়ের মুখ আর দেখতে পাবেননা, মেয়েটা তাকে ‘ আব্বা ‘ বলে ডাকবেনা। তিনি কাঁদছেন এতিম নাতির কথা চিন্তা করে।

***

মল্লিকা মির্জা বর্তমানে এ্যাসাইলামে আছেন। তিনি কাউকেই চিনতে পারছেননা। থেকে থেকেই হাউমাউ করে কাঁদছেন। পুরোদমে তার চিকিৎসা চলছে।

পুষ্পিতা দেশের বাহিরে যাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অসুস্থ মা’কে ফেলে কোথাও যেতে চায়না।

***

আয়াস তিয়াসার কাছে আদরে বড় হচ্ছে। ও তিয়াসার প্রান। প্রিয় বোন, বান্ধবীর আমানত ও।যত্নে রাখার পণ করেছে। ঘুমন্ত আয়াসের দিকে তাকিয়ে দু ফোঁটা চোখের পানি ফেলল তিয়াসা। যেন জীবন্ত একটা ফুল ঘুমিয়ে আছে। বাবা-মা দু’জনের আদলের মুখের গড়ন ওর। পরম মমতায় আয়াসের কপালে চুমু দিল তিয়াসা। ছেলের পাশে শুয়ে পরল।

বিঃদ্রঃ গত বুধবার আমার মিনি স্ট্রোক হয়েছে। অসুস্থতার জন্য লিখতে পারিনি। আজ অনেক কষ্টে লিখেছি। অসুস্থতার কারনেই গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করতে হল। জানিনা গল্পটা কেমন হয়েছে, আপনাদের মন ছুঁতে পেরেছে কিনা। আমি নিজের মত করে লিখার চেষ্টা করেছি। বাকিটা আপনাদের হাতে। হয়তো নতুন গল্প আসতে কয়েকদিন দেরি হবে। সুস্থ হয়েই তবে লিখতে পারব। আপনাদের দোয়ায় রাখবেন। ভালো থাকবেন সবাই।

সমাপ্ত