রিটেক পর্ব-২২+২৩

0
164

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:২২

নতুনভাবে চা বানানো শিখেছে ফাহাদ। টেস্ট করে দেখেছিলো। যতোটা ভালো হবে আশা করেছিল তার চাইতেও বেশি ভালো হয়েছে। দারুন ব্যাপার স্যাপার। দারুন এই ব্যাপারটা আমজাদ আলীর সাথে শেয়ার করতে পারলে ভালো লাগতো তার। কিন্তু এখন ভোর। পুরোপুরি ভোর না হলেও সকাল সাতটা কাউকে ডাকার মত উপযুক্ত সময় মনে করে না ফাহাদ। বৃদ্ধ দুইজন মানুষকে অযথা বিরক্ত করার মানে হয় না। হয়তো তারা এখনো শুয়েই আছে। কে জানে। নিজের কাপ হাতে ফাহাদ বাগানে চলে গেলো। পুরো বাগান ঘষামাজা করা শেষ। বাগানের একপাশে সবসময় ছায়া থাকে। বিশাল বড় একটা কাঠাল গাছের জন্যই এমন হয়। সে জায়গাটায় ফাহাদ এক সেট চেয়ার টেবিল রেখেছে। আমজাদ আলী খরচ দিতে চেয়েছিলেন। ফাহাদ নেয়নি। তার খরচ করার জায়গা কমে গেছে। আনোয়ারা বেগম থাকছেন মেয়ের সাথে। তাই নিজ উদ্যোগেই কাজটা করলো ফাহাদ। কি মনে হতে আরেক কাপ চা নিয়ে নিলো সে। বাড়তি কাপটা ঢেকে রেখে দিলো ছোট্ট টেবিলটায়। নিজের কাপে ছোটো ছোটো চুমুক বসাতে লাগলো। তার দৃষ্টি সদর দরজায়। দরজাটা বহু পুরাতন। সাদা রংটা আর সাদা নেই। জং ধরে জায়গায় জায়গায় খয়েরী রং হয়ে গেছে। এজন্য অবশ্য দরজাটাকে দেখতে তার কাছে খারাপ লাগছে না। বেশ ভালই লাগছে। আজকাল মানুষ বলে ভিন্টেজ। সেরকমই একটা অনুভুতি আসছে দরজা থেকে। তবে সমস্যা করছে শ্যাওলা। দুইদিন বৃষ্টি হতে না হতেই জায়গাটা স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেছে। দরজাসহ আশপাশে বেশ কিছু জায়গায় শ্যাওলা ছড়িয়ে গেছে। জায়গাটা দেখলে মনে হয় এই বাড়িটা বুঝি পরিত্যক্ত। কোনো মানুষের পায়ের ছাপ, গায়ের গন্ধ, হাতের স্পর্শ বোধহয় এতে লাগে না।

– ফাহাদ সাহেব! কেমন আছেন?
চমকে তাকালো ফাহাদ। আমজাদ আলী কখন এসেছে টের পায়নি সে।
– আসসালামু আলাইকুম দাদা। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আগে সালাম দিলাম।
বিজয়ীর হাসি দেখা গেলো ফাহাদের চোখেমুখে। এই বিষয়টায় সে কখনও সত্তরোর্ধ বৃদ্ধকে পেছনে ফেলতে পারেনি। ভদ্রলোক সবসময় আগে সালাম দেন। সালামের উত্তর নিয়ে হাসলেন আমজাদ আলী। সে প্রসঙ্গ কিছু না বলে চেয়ারে বসে বললেন,
– এই কাপ কার জন্য?
– আপনার জন্যই বানিয়েছিলাম দাদা। কিন্তু আপনি উঠেছেন কি না বুঝতে পারছিলাম না। তাই আর ডাকিনি।
– তাই এখানে নিয়ে বসে ছিলে?
বলেই হাসলেন আমজাদ আলী। সযত্নে চায়ের কাপ তুলে নিলেন। বললেন,
– আমি সাড়ে চারটায় উঠি। তোমার দাদী তারও আগে।
– এত আগে ওঠেন কেনো?
– সারাজীবন তো ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই পার করলাম। আর কত ঘুমাবো?
– তবুও। সুস্থ থাকতে হলে তো পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।
– আর ভালো লাগে না। চোখ বন্ধ হয়ে না গেলে নিজে থেকে করি না।
– কেনো?
– আমার বয়স সাতাত্তর। যদি দিনে ছয় ঘণ্টাও হয় তাহলে আমি প্রায় বিশ বছর ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। চিন্তা করতে পারো?
ফাহাদের চোখ কপালে ওঠার দশা। সে এভাবে কখনও হিসাব করেনি। আমজাদ আলী চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
– প্রাপ্ত বয়স্ক হতে লেগেছে বিশ বছর। ঘুমিয়ে কাটিয়েছি বিশ বছর। তারপর টাকার পেছনে ছুটতে শুরু করলাম। যখন নিজের জন্য সময় পেলাম তখন দেখি জীবনের সন্ধ্যা নেমে গেছে। একটু পরেই অন্ধকার হয়ে যাবে। দিনের আলোয় নিজের দিকে তাকাতে পারলাম না, নিজেকে যত্ন করতে পারলাম না। রাতের অন্ধকারে না আছে আমার শক্তি না আছে সামর্থ্য। এই তো জীবন!
দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আমজাদ আলী। চায়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফাহাদকে ভাবুক দেখালো। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আমজাদ আলী বললেন,
– তুমি এখন জীবনের শীর্ষ সময়ে অবস্থান করছো। জীবনটা একট পাহাড়ের মত বুঝলে। বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে চূড়ায় উঠতে হয়। চূড়া পার হলে আবার সেই বন্ধুর পথ। পাহাড়ের শীর্ষের প্রস্থ কিন্তু ঢালের তুলনায় খুব কম। সেই সময়টুকু এনজয় করতে হবে। জীবনের মর্মবোধ বুঝে একে চিনতে হবে।
– এনজয়? কিভাবে?
ফাহাদকে বিভ্রান্ত দেখালো। এনজয় বলতে আমজাদ আলী আসলে কি বোঝাতে চাইছেন? আমজাদ আলী হাসলেন।
– এনজয় বলতে কি বোঝো? মনমর্জি করা? সেটাতো কেবল পাগলরাই পারে। সুস্থ সব মানুষই কোনো না কোনো নিয়মের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। জীবনদাতার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে পারলেই জীবনের প্রকৃত স্বাদ তুমি পাবে। অন্য কোনোভাবেই এটা সম্ভব না। জীবনের মালিক আমাকে এমন এক উপহার দিয়েছেন যার জন্য শেষবেলায় এসেও আমি হাসিখুশি থাকতে পারি।
আমজাদ আলীর চকচকে চেহারার দিকে তাকিয়ে ফাহাদ প্রশ্ন করলো,
– কি উপহার?
– আমার স্ত্রী।
তৃপ্তির হাসি হাসলেন বৃদ্ধ। ফাহাদের চোখে সেই হাসি বড়োই মনোরম দেখালো। পুরোটা চা শেষ করে বৃদ্ধ বললেন,
– তোমাকে একটা কথা বলি ভাই। কোনোদিন কারো সাথে আমি নিজে থেকে এই বিষয়টা শেয়ার করিনি। কিন্তু কেনো জানি মনে হচ্ছে তোমাকে বিষয়টা বলা উচিত।
আমজাদ আলীর চেহারায় গম্ভীরতা ভর করেছে। তাকে রাশভারী দেখাচ্ছে। কি অবলীলায় অনুভূতি মানুষের চেহারা নিয়ে খেলা করে! যে মানুষটাকে একটু আগে মনে হচ্ছিল হাস্যোজ্জ্বল তাকে হুট করেই গুরুগম্ভীর মনে হচ্ছে।
– বলুন দাদা। কোনো সিরিয়াস বিষয়?
– সিরিয়াস তো বটেই। জীবনের সবকিছুই সিরিয়াস। শুধু আমরা তাকে সিরিয়াসলি নেই না বলে।
পুরো কাপ শেষ করলেন আমজাদ আলী। সন্তর্পনে সেটা টেবিলে রাখলেন। ফাহাদের চা শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই।
– তোমার দাদীর সাথে যখন আমার বিয়ে হয় তখন তার বয়স চৌদ্দ আর আমার বিশ। পড়াশোনার সুবাদে তখন আমি বাইরে থাকতাম। বাড়িতে যেতাম ছুটিতে। তোমার দাদী তখন ছোট মানুষ, একেবারে বাচ্চা। পুতুল নিয়ে খেলত। আমিও থাকতাম মেসে। তাই ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করিনি। ভেবেছিলাম বাচ্চা মানুষ, আব্বা আম্মার কাছেই থাক। আর আমার চিন্তা ছিল পড়া শেষ করে গ্রামেই স্থায়ী হবো। শহরে থাকার চিন্তা আমার কোনোকালেই ছিল না। সে যাক। আমার বাপ চাচারা তিন ভাই। সবাই একসাথেই থাকতেন। আমার এক চাচাত ভাই ছিল আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। কাজকাম করতো না বলে চাচা ওর বিয়ে দিতে চাইতেন না। ওর আগেই আমার বিয়ে হলো। বউ থাকে এক দেশে আমি আরেক দেশে।
থামলেন আমজাদ আলী। ফাহাদ বুঝলো না এখানে সিরিয়াস বিষয় কোনটা। আমজাদ আলী বলা শুরু করলেন,
– আমার ঐ ভাইয়ের মনে আমার প্রতি যে বিদ্বেষ জমতে শুরু করেছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু সেটা প্রকাশ পেলো তোমার দাদীর উপরে। অন্যভাবে। তোমার দাদী আমাকে খুব ভয় করতো। কেনো জানিনা ভয়টা একেবারে বদ্ধমূল হয়ে গেলো। কোনোভাবেই আমি কাটাতে পারি না। এমনও হয়েছে আমার সাথে রাতে থাকবে না বলে আমার আম্মার কাছে থেকেছে। পরে আর কি করার আমি আর আব্বা আরেক ঘরে ঘুমিয়েছি। আম্মা আমাকে বলতেন যেনো ওর সাথে ধমকাধমকি না করি, বাচ্চা মানুষ একটু আদর যত্ন করি। কিন্তু আমার একটা ভুল হয়েছিল। ওর আস্থার জায়গাটা আমি আগে নিতে পারিনি। আমার আগেই সে জায়গাটা আমার চাচাত ভাই নিয়ে নিয়েছিল। তার সাথে তোমার দাদীর খুব ভাব হলো। আমি দেখি কিন্তু কিছুই বলতে পারি না। অধিকার ফলাতে হলে আগে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সেটাই তো তোমার দাদীর সাথে তখনও হয়নি। আমার ছুটি শেষ হলো। শহরে ফিরে গেলাম। এবার একটা চিঠি বেশি লিখলাম। আম্মার পাশাপাশি তোমার দাদীর জন্য। সে চিঠি পড়তো আর রেখে দিতো। কোনো জবাব দিতো না। আম্মার কাছে শুনতাম সে ভালো আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারতাম না কিভাবে এই দূরত্ব মেটাবো। মাসের পর মাস যায় তোমার দাদীর সাথে আমার কোনো যোগাযোগ হয় না।

বৃদ্ধের দৃষ্টি কাঁঠাল পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে উঁকি দেওয়া আকাশের দিকে। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই তার মুখ শক্ত হয়ে গেলো। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন।
– বিয়ের তিন মাস পর আমি আবার ছুটি পেলাম। যাওয়ার জন্য গোছগাছ করছি তখন বাড়ি থেকে চিঠি এলো। বিষয়টা অন্যরকম লেগেছিল কারণ আম্মাকে আমি বলেছি যে কিছুদিনের মধ্যেই যাবো। ততদিনে তোমার দাদীকে আর চিঠি দিতাম না। প্রতি উত্তর না পেয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। যাই হোক। চিঠি পড়তে যেয়ে আমার মনে হলো পুরো দুনিয়াটাই ঘুরে গেছে। কিভাবে কি করবো, কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। পরদিন যাওয়ার কথা থাকলেও তৎক্ষণাৎ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে গেলো। আমাকে পেয়েই বাড়িতে বিচার বসলো। মধ্যমনি আমার স্ত্রী এবং চাচাত ভাই।

ফাহাদ বেশ ভালোভাবেই চমকালো। আমজাদ আলী কথা বলেন খুব সুন্দর করে। তাই তার এত বড় বক্তব্য শুনতেও খারাপ লাগেনি। বরঞ্চ দৃশ্যটা চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে গেছে। ভেতরে ভেতরে অদম্য কৌতূহল অনুভব করলো সে। চৌদ্দ বছরের একটা মেয়ে আর বাইশ বছরের একটা ছেলে। তাদের কেনো বিচার হবে? দোষটা কি? আমজাদ আলী সেই কৌতূহল মেটালেন।
– ঘটনা হলো, আমার আম্মা আব্বা ফুপু বাড়ি গিয়েছিলেন। ফুপুর শ্বশুর অনেক অসুস্থ ছিলেন তাকে দেখার জন্য। তোমার দাদীকে রেখে গেলেন আমার চাচীর কাছে। বাড়িতে আরো মানুষ আছে। আমার এক চাচাতো বোনকে বললেন যেনো রাতে তোমার দাদীর সাথে থাকে। সন্ধ্যা থেকে সে আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথেই খেলছিলো। সকাল বেলা আমার ভাই আর তোমার দাদীকে এক ঘরেই পাওয়া গেলো।
বিস্ময়ের যেটুকু বাকি ছিল সেটুকুও পূর্ণ হলো। ফাহাদ বুঝলো না তার কি প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ। শ্রোতা হিসেবে কি বলা উচিত সেটাও বুঝতে পারল না। তবে একটা জিনিস বুঝলো সেই চৌদ্দ বছরের মেয়েটাই এখন দাদার শান্তি। কিন্তু কিভাবে?
– এই নিয়েই বিচার বসানো হলো। আমার শ্বশুড় শ্বাশুড়ীকেও ডেকে আনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তারা তোমার দাদীর দুই গাল লাল করে ফেলেছেন। গ্রামের মানুষ হাজার রকম গালির বৃষ্টি নামিয়েছে। তবে আমার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মনে হলো না সে চিন্তায় আছে। ঘটনাটায় যে সে মজা পাচ্ছে সেটা ওর চেহারা দেখেই আমি বুঝলাম। তোমার দাদীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। একদম আমার চোখের দিকে। মজার বিষয় কি জানো? এর আগে কোনদিন আমি তাকে আমার মুখের দিকে তাকিয়েও কথা বলতে দেখিনি। ওর চোখ দেখেই আমি বুঝলাম ওটা কোনো অপরাধীর চোখ না। আমার আম্মা দূরদর্শী মহিলা। তিনিও বুঝতে পারলেন না আসলে কি হয়েছে। তখনই আমি ঘোষণা দিলাম আগে তোমার দাদীর সাথে কথা বলব। একা। কেউ খুব বাকা নজরে তাকালো। তাতে আমার কি? আমি তোমার দাদীর নিয়ে ঘর বন্ধ করে দিলাম। উদ্দেশ্য ছিল ঘটনা ওর মুখ থেকেই শুনবো। কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই সে আমার পায়ে পড়ে গেলো। হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে কি বললো কিছুই বুঝলাম না। ছোটো মানুষ। তার উপর রোগা। দেখতে আরো ছোট লাগে। বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলাম। ওর মুখে ঘটনা শুনলাম। রাত বাড়লে যখন তোমার দাদী আমার বোনকে ডাকতে যেতে চাইলো তখন ভাই গেলো তাকে ডাকতে। কিন্তু বোন এলো না। ভাই এসে বলল সে নাকি তোমার দাদীর সাথে থাকতে চায় না। ভয়ে ভয়ে তোমার দাদী একাই থাকলো। বুদ্ধি করে যে নিজে একবার ডাকতে যাবে সেটা করলো না। আমার যতদূর ধারণা আমার ভাইই মেয়েটাকে আসতে নিষেধ করেছিল। শুভাকাঙ্খী সেজে সে আবার বলল যেনো ছিটকিনি না আটকায়। কোনো সমস্যা হলে যেনো কাউকে ডাক দেয়। তোমার দাদী বোকা, দরজা না লাগিয়েই ঘুমালো। সেটাই সর্বনাশের কারণ হলো। সকালে উঠে ও দেখলো আমার ভাই ঐ ঘরে। সবাই দেখলো আমার চাচাত ভাই আর আমার স্ত্রী এক ঘরে।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আমজাদ আলী। সম্ভবত একসাথে এতো কথা বলে হাঁপিয়ে গেছেন।
– ওর আর আমার পরিচয়ের তখনও বেশিদিন হয়নি। দূরত্বও মেটেনি। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়েই আমি বুঝতে পেরেছিলাম ওর একটা কথাও মিথ্যা নয়। হয়তো কিছু দোষ ওর ছিলো কিন্তু যেটা মনে করে ওরা সালিশ বসিয়েছে তার কিছুই যে হয়নি সেটাও বুঝত পেরেছিলাম। বিচারের পুরোটা সময় আমি চুপ ছিলাম। আমাকে বলা সব কথা সবার সামনে বললেও কেউ ওর কথা বিশ্বাস করলো না। মুরুব্বীরা ঘোষণা দিলেন আমি ওকে তালাক দিয়ে যেনো বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। শ্বশুর শাশুড়ি নীরবে মেনে নিলেন। আম্মার মুখ এইটুকু হয়ে গেলো। শুধু আব্বা বলল, “যা করবে ভেবে করো।” ঐ মুহূর্তেই আমি ঘোষণা দিলাম তোমার দাদীকে তালাক দিবো না। যেহেতু চাচাত ভাইয়ের অপরাধ স্পষ্ট করার জন্য প্রমাণ আমার কাছে ছিল না তাই সবার সামনে ওকে কিছু বলতে পারলাম না। কিন্তু আমার কথা কেউ মেনে নিল না। সবাই বলল এই মেয়েকে রাখতে হলে আমাকে গ্রাম ছাড়তে হবে। সেটাই করলাম। ওকে নিয়ে ঐ মুহূর্তে বাড়ি ছাড়লাম। সাথে আমার আব্বা আম্মাও।

ফাহাদ অভিভূত হলো। বৃদ্ধের চেহারার দিকে তাকিয়ে তার যুবক বয়সের মুখটা আন্দাজ করতে চেষ্টা করলো। বিশ্বাসী মুখ, মাথা না নামানোর দৃঢ় প্রত্যয়। স্ত্রীর এক কথায় পুরো গ্রামের বিরুদ্ধে চলে যাওয়া নিশ্চয়ই চাট্টিখানি কথা নয়! ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো,
– তখন থেকেই আপনারা এখানে থাকেন?
– না। আমাদের তো এখানে বাড়ি ছিলো না। হুট করে ভাড়াও পাওয়া যায় না। এক বন্ধুর বাসায় ওদের তিনজনকে রাখলাম। এক দিনের মাঝেই একটা ছোটখাট বাড়ি খুঁজলাম। এই বাড়ি হয়েছে অনেক পরে। আমার চাকরি পাওয়ারও প্রায় দশ বছর পরে।
ফাহাদ কিছু বলল না। তার চোখের সামনে এখনও ভাসছে এক তেজী যুবকের স্ত্রীর হাত ধরে গ্রাম ছাড়ার দৃশ্য।
– এতগুলো কথা তোমাকে বললাম একটা জিনিস বোঝার জন্য। কি বলতো?
ফাহাদের ধ্যান ভাঙলো। কিন্তু বৃদ্ধের মর্মবাণী সে উদ্ধার করতে পারল না।
– বুঝত পারলাম না।
মুচকি হেসে আমজাদ আলী বললেন,
– তোমার দাদী ভুল করেছিল। পরপুরুষ যে কখনও চরম বিশ্বাসের জায়গা হতে পারে না এটা সে বুঝতে পারেনি। পরে জেনেছি আমাকে নিয়ে ওই ভয় দেখিয়েছিল তোমার দাদীকে। আমাকে বিশ্বাস না করে আরেকজনের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যে এরপর কতবার তোমার দাদী ক্ষমা চেয়েছে তার হিসাব নেই। মানুষ মাত্রই ভুল করে। কিন্তু কি জানো? বিষয়টা অনুতাপের। যার ভুল যতো মারাত্মক অনুতাপ হতে হবে তত গাঢ়। অনুতাপ,অনুশোচনা হলো কষ্টিপাথরের মত। এর মধ্য দিয়ে মানুষ সোনা হয়ে যায়। না এর চেয়েও বেশি। সেদিন কি যেনো বললে? প্লাটিনাম। হ্যাঁ ওটাই। যে যত গাঢ় অনুতাপের মধ্য দিয়ে গেছে সে নিজেকে ততো উন্নত করে নিয়েছে। তোমার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে জীবনে যদি এমন কাউকে পাও তাহলে তাকে হেলাফেলা করো না। অনুতাপের অনলে পোড়া একটা মানুষ হলো খাঁটি একজন।
নীরবতায় ছেয়ে গেল আশপাশ। ফাহাদ আমজাদ আলীর কথা অনুভব করতে পারছে। সে নিজে তার গত হওয়া জীবনের অনেক বিষয় নিয়ে অনুতাপ করে। আমজাদ আলী বললেন,
– অনেক লম্বা কথা বললাম দাদাভাই। কিছু মনে করো না। আমার কেনো যেন মনে হলো এটা তোমাকে বলা দরকার। চায়ের জন্য ধন্যবাদ। রেসিপিটা দাও। তোমার দাদীকে বানিয়ে খাওয়াই।
ফাহাদ হাসিমুখে বলল। কিন্তু তার ভাবনার ঘরের যে দরজা আমজাদ আলী খুলে দিয়েছেন সেদিক দিয়ে যে হুড়মুড়িয়ে বাতাস ঢুকছে সেদিকে খেয়াল করলো না।

চলমান।

#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:২৩

“তোমার কি কারো সাথে সম্পর্ক আছে রূপা?”

প্রশ্নটা রূপাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিলো। বৃষ্টিভেজা প্রকৃতির রূপ আস্বাদনের ইচ্ছেকে মন থেকে সরিয়ে দিয়ে যখন সে বইয়ের পাতায় ডুব দেয়ার চেষ্টা করছিল তখন পুরোনো স্মৃতিগুলো তাকে টেনে হিঁচড়ে বাস্তব জগৎ থেকে দূরে নিয়ে গেছে। কখন যে অশ্রুগুলো ফোঁটায় ফোঁটায় নিউজপ্রিন্টের পৃষ্ঠাগুলো ভেজানো শুরু করেছে খেয়ালই করেনি রূপা। তমার কথায় চট করে চোখ সরালে দেখতে পায় তার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে তমা। কথা বলার চেষ্টা করে রূপা। কিন্তু তার গোলা রোধ হয়ে আছে। কয়েকবার চেষ্টার পর বলে,

– না তো ভাবি।
– সত্যি?
রূপার চোখ মুছে দেয় তমা। মেয়েটা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। পানি এলো কোত্থেকে? নিজে তড়িঘড়ি করে বাকিটুকু মুছে বলে,
– সত্যি ভাবি। তোমার এই কথা মনে হলো কেনো?
মনে মনে প্রমোদ গুনলো রূপা। তমা কি কোনোভাবে কিছু জানতে পেরেছে? তবে সেও তো মিথ্যা বলেনি। সত্যিই তো কারো সাথে তার আর সম্পর্ক নেই।
– কেনো যেনো মনে হলো।
– ওহ।
– রূপা?
– বলো ভাবী।
– তোমাকে ছোট্ট একটা সাজেশন দেই?
– অবশ্যই।
– আমি জানিনা কেনো তুমি এখন বিয়ে করতে চাইছো না। সেটা একান্তই তোমার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আমার সাজেশন থাকবে নিজেকে নিয়ে ভাবো। সবকিছুর একটা পার্ফেক্ট টাইমিং আছে। তুমি শিক্ষিত মেয়ে। অতো ভেঙে বলতে হবে না নিশ্চয়ই?
তমা চলে গেলো। রূপা কি বলবে? “ভাবী আমি তো ডিভোর্সী”? কিভাবে নিজের অবস্থান কারো কাছে বলবে। তার যে পা বাড়ানোর আর পথ রইলো না। নিজের খোড়া ফাঁদে উল্টে পড়ে সে নিজেই সামনের পথ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। রূপা জানেনা কিভাবে সে পরিস্থিতি সামাল দেবে। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করলো রূপা।
– মাবুদ! আমি নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিলাম। বাকিটুকু তুমি সামলে নাও।

নীরব এবং আসমার পরিবার একটা রেস্টুরেন্টে একত্রিত হয়েছে। উদ্দেশ্য বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা। আসমা আসতে না চাইলেও তাকে জোর করে নিয়ে এসেছেন আলিমা বেগম। মেয়ের নিজের একটা মতামত আছে না? আসমার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে রূপাকেও আসতে হচ্ছে। রূপা মাঝে মাঝে অবাক হয়। সবসময়ের শক্তপোক্ত পেয়েটা হঠাৎ হঠাৎ কেমন নার্ভাস হয়ে পড়ে। আসমার স্বভাব রূপার জানা। তাই আর না করেনি সে। ডার্ক ব্লু কালারের বোরখার সাথে সেই রঙেরই একটা হিজাব পেঁচিয়ে নিলো মাথায়। বোরখাটা কিনেছে বেশিদিন হয়নি। তবে যেদিন থেকে পড়েছে সেদিন থেকেই সংকল্প করেছে এই জিনিস আর ছাড়বে না। তৎক্ষণাৎ ফলাফল পেলে কে-ই বা ছাড়তে চাইবে? মোড়ের দোকানের একটা ছেলে তাকে টিজ করার সুযোগ পেলে মুখের লাগাম ছেড়ে দেয়। বোরখা পরে যেদিন যায় সেদিন সেই ছেলের বিতৃষ্ণা ভরা দৃষ্টি সে দেখেছে। কি যে আনন্দ লেগেছে তার! ছেলেটা টিজ করবে কিভাবে! তার টিজ করার প্রসঙ্গই তো ঢাকা পড়ে গেছে। তবে কলেজের মেয়েরা তাকে খুঁচিয়ে মা-র-তে ছাড়েনি। “হঠাৎ বোরখা ধরলে কেনো? হিমেলের বিরহেই কি এই পরিবর্তন? কোথাও কি বিয়ে ঠিক হয়েছে?” ইত্যাদি প্রশ্নের পাহাড় তার মাথায় চড়িয়েছে। রূপা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, কিছু এড়িয়ে গেছে। তবে হিমেলের বিষয়টা নিয়ে সে নিজেও ভেবেছে। হিমেল ছিলো তার জীবনের মস্ত একটা ভুল। যেই ভুল তাকে ভেঙে চুরে নতুন আকৃতি দিয়ে গেছে। তার চিন্তার জগতে আঘাত হেনেছে। পাল্টে দিয়েছে ভাবনার রাজ্যের সাজসজ্জা। ফলাফল তার ব্যক্তিত্বেও স্পষ্ট। সেদিন তো কেয়া বলেই ফেলল,
– রূপা! আজকাল তোকে অন্যরকম লাগে। একদম অন্যরকম। মনে হয় কোত্থেকে যেনো তোর ভেতরে একটা স্পিরিট চলে এসেছে। আই লাভ ইট। কেউ এখন তোর মাথায় কাঁঠাল ভাঙতে পারবে না।
রূপা সেদিন নীরবে হেসেছে। কেয়া,অর্পি দুটো মানুষই তার গোপন বিবাহ সম্পর্কে জানে। কিন্তু একদিনও তাকে এই নিয়ে বিব্রত করেনি। তাদের দেখলে মনেই হয় না হিমেল বলে তারা কাউকে চেনে। নিজেকে শেষবার আয়নায় দেখে বের হলো রূপা। কামরুন্নাহারের কাছে বলতেই তিনি বললেন,
– নিজেকে নিয়েও ভাব মা।
– আমার নামের উপর কতো ট্যাগ লেগে গেছে। কে নেবে এমন মেয়ে?
– আমার মেয়ে সোনার টুকরো। যে চিনবে সেই নেবে।
– সেই আশায় তুমি থাকো।
রূপা চলে গেলো। আজকাল মায়ের স্নেহপূর্ণ দৃষ্টির সামনে সে দাঁড়াতে পারে না। নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হয়। রিকশায় উঠতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রূপা।
রেস্টুরেন্টের সামনে রিকশা থামলে সে দেখলো সামনের অনেকটা পার্কিং এড়িয়া। রিকশাওয়ালাকে বলল,
– মামা একটু ভেতরে রাখেন।
– এইখানে কি রিকশা ঢুকতে দিবো?
আশপাশে তাকিয়ে রূপা বলল,
– কোথাও তো এমন কিছু লেখা নেই। আপনি যান।
গেটের সামনে এসে রিকশা ভাড়া মেটাতে গেলেই পেছন থেকে একটা প্রাইভেট কার এসে রিকশায় ধাক্কা দিলো। রিকশাওয়ালা হায় হায় করে উঠলেন। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে এক লোক বের হয়ে এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো।
– শালার অসভ্য মানুষজন! এইটা কি রিকশা আনার জায়গা?
রূপা যারপরনাই অবাক হলো। রিকশাওয়ালা উত্তর দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। রিকশার পেছনের ভাঙ্গা অংশ জানান দিচ্ছে আজকের রোজগারের কিছুই সে নিজের জন্য খরচ করতে পারবে না। পরিবারের মানুষ তার আশায় বসে আছে। তিনি কিভাবে খালি হাতে যাবেন? সহসাই তার চোখ ঝাপসা হয়ে গেলো। রূপা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।
– আশ্চর্য মানুষ তো আপনি! নিজে গাড়ি দিয়ে রিকশায় ধাক্কা দিলেন আর এখন নিজেই চিৎকার করছেন।
– ও এখানে রিকশা আনবে কেনো?
লোকটার চোখ যেনো রাগে বেরিয়ে আসতে চাইছে। রূপা নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো,
– সম্মান দিয়ে কথা বলুন। এখানে কোথায় লেখা আছে রিকশা ঢোকানো যাবে না? কোথাও নেই। রিকশার পেছনে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় ধাক্কা আপনি দিয়েছেন। আপনার উচিত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্ষমা চাওয়া। সেটা না করে ব্যবহারের মাধ্যমে বলে দিচ্ছেন কে আসলে অসভ্য।
– মাইন্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ!
– এন্ড ইওর বিহেভিয়ার!
রূপার শান্ত আওয়াজ যেনো লোকটার রাগের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে। রিকশাওয়ালার দিকে তাকিয়ে রূপার মনটা অনুশোচনায় ছেয়ে গেল। রূপার কথাতেই সে ভেতরে ঢুকেছে নয়তো সে তো ঢুকতেই চাইছিলো না। ব্যাগের ভেতর হাত দিলো সে। রিকশাওয়ালার কাছে যেয়ে বলল,
– মামা! মাফ করবেন। আমার জন্যেই আপনার এই ক্ষতিটা হলো। এটা রাখেন। ঠিক করতে কত টাকা লাগবে?
রূপার চোখ ছলছল করছে। গলার কাঁপন লুকাতে পারলো না সে। রিকশাওয়ালা বোধহয় এই মানবিকতাটুকু আশা করেনি। চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলেন তিনি।
– মামা?
– হাজার বারোশ তো লাগবোই। মাঠঘাট পুরাই ভাইঙ্গা গ্যাছে।
হাতের পাঁচশ টাকা রিকশাওয়ালাকে দিয়ে রূপা বলল,
– এইটা নিন মামা। আর আপনার নাম্বারটা দিন। আমার কাছে তো এখন বারোশ টাকা নেই।
– এই নিন।
পাশ থেকে কেউ এক হাজার টাকার একটা নোট বাড়িয়ে দিলো। রূপা তাকিয়ে দেখলো এক যুবক হাত বাড়িয়ে আছে। রিকশাওয়ালার বিস্ময় এবার আকাশ ছুঁলো। সে উত্তরের আশায় রূপার দিকে তাকালে রূপা যুবককে উদ্দেশ্য করে বলল,
– আপনি দেবেন কেনো? আমিই দেবো। আপনার নাম্বারটা দিন মামা।
– আপনি তো অনেককিছুই দিচ্ছেন। এটুকু নাহয় আমিই দিই।
– মানে?
– ধরেন মামা। এই আপা দিলেও যা আমি দিলেও তা। আপনার রিকশা ঠিক হলেই হলো।
রূপার প্রশ্নের তোয়াক্কা করলো না যুবক। রিকশাওয়ালা ইতস্তত করে অবশেষে টাকাটা নিয়েই নিলো। প্রাইভেট কারওয়ালা অতিষ্ট ভঙ্গিতে চলে গেলো। সম্ভবত এতো মানবিকতা তার চোখ সহ্য করতে পারছে না।
– আপনি টাকা দিলেন কেনো? আমি আপনার থেকে সাহায্য চেয়েছি?
– আপনি টাকা দিলেন কেনো?
রূপার মেজাজ তিরিক্ষি হলো। ছেলেটা তার সাথে মজা করছে। কত্তো বড় সাহস!
– আমি টাকা দেবো না তো কে দেবে শুনি? আমি তার যাত্রী ছিলাম। আমার জন্যই বেচারা এই সমস্যায় পড়লো।
শেষটায় রূপার গলা নরম হয়ে এলো। রিকশাওয়ালা ততক্ষণে প্রস্থান নিয়েছে। যুবক হেসে বলল,
– দেয়া নেয়ার সম্পর্ক তো কেবল শুরু ম্যাডাম। চলুন ভেতরে যাই।
কথা শেষ করেই যুবক হাঁটা ধরলো। রূপা যেনো ধাঁধায় পড়ে গেলো। আসমার কাছে ফোন দিলো সে।
– কোথায় আছিস?
– তুই আসিস নি এখনো?
– এসেছি। নিচে আছি।
– ওর বন্ধু যে গেলো তোকে আনতে। তাকে পাসনি?
– অদ্ভুত! ওর তার বন্ধুকে আমি কিভাবে চিনব? আর সে-ই বা আমাকে কিভাবে চিনবে? মাঝে মাঝে যে কি করিস তুই!
আসমা বোকা হাসলো। আসলেই তো! ফাহাদ রূপাকে চিনবে কিভাবে। কিন্তু রূপার মনে হলো ঐ লোকটাই বোধহয় নীরবের বন্ধু। বিরক্ত হয়ে বলল,
– আচ্ছা আমি মনে হয় ঐ ব্যাটাকে পেয়েছি। রাখ তুই।
সামনের লোকটা বেশ কিছুদূর চোখে গেছে। তার পেছনে গেলো রূপা। একটু এগিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
– আপনিই কি নীরব ভাইয়ের বন্ধু?
হাসি হাসি মুখে ফাহাদ ঘুরে তাকালো।
– জি।

চলমান।