#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:২
লম্বা করিডোরে দাঁড়িয়ে ক্লান্তির শ্বাস ছাড়লো রূপা। পেছন থেকে আসমা ডাক দিলো।
– কি রে! তোর আজকে এত দেরি হলো কেনো?
– আর বলিস না। বৃষ্টির দিন, রিক্সা তো গেছে হাওয়া হয়ে। হাঁটতে হাঁটতে আসলাম। পরে ক্যাফের সামনে থেকে..
– আমার বাইকে এসে বাইকটাকে ধন্য করেছে রূপা। এই রূপা! তুমি বাসায় যাবে না? আজ তো আর ক্লাস নেই। চলো তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।
নিজেদের মাঝে আকাশের হঠাৎ উপস্থিতি বেজায় বিরক্ত করলো রূপাকে। সাথে আসমার সামনে বেফাঁস কথাটা বলে দেওয়াতেও চটলো খানিকটা।
– থাক আকাশ ভাই। আমার ক্লাস নেই। আপনার তো আছে। আপনি ক্লাস করুন। আমি আজ আসমার সাথে যাবো।
ততক্ষণে আসমা আরেক দিকে চলে গেছে। আকাশের ভারাক্রান্ত মুখের দিকে তাকিয়েও রূপার মায়া হলো না। মনে হলো না দুঃখের ভারে আকাশ থেকে গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা তাকে ভিজিয়ে দিতে পারে।
– আসমা দাঁড়া!
– যার বাইকে এসেছিস তার কাছে যা।
– আরে দেরি হয়ে গিয়েছিল আর রিক্সাও পাচ্ছিলাম না তাই এসেছি।
– সব অজুহাত।
– ওকে তো আমি পছন্দ করি না। উঠলেও বা কি?
ঘুরে দাঁড়ালো আসমা। নিকাবের ফাঁকা দিয়ে দৃশ্যমান ঐ চোখজোড়ার দিকে তাকাতে পারলো না রূপা।
– তোর বোধ বুদ্ধি আছে বলেই বিশ্বাস করি রূপা। লোকটা তোকে পছন্দ করে। এটা তোকে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়েছে। তার কথায় যদি তুই তাল মেলাস সেটা হবে তার আহ্বানের প্রতি প্রচ্ছন্ন পক্ষ নেওয়া।
– তুই জিনিসটাকে প্যাচাচ্ছিস কেনো?
– যেটা তোর কাছে প্যাঁচ মনে হচ্ছে সেটা আকাশ ভাইয়ের কাছে পানির মতো পরিষ্কার। নয়তো এ বেলায়ও তোকে এই প্রস্তাব দিতো না। এর আগে কখনো দিয়েছে? আজকের এই সাহস তুই নিজেই দিয়েছিস।
– তো আমি কি করতাম? নাহলে আইটেম মিস হতো।
– স্যার আজকে বিশ মিনিট লেট করে এসেছেন। আর কিছু বলবি তুই?
– আচ্ছা আর কখনও ওর বাইকে উঠবো না। তুই রাগ করিস না প্লিজ!
– আমার রাগ দিয়ে তোর কি যায় আসে? তোর পেছনে মানুষের লাইন লেগে আছে।
– ধুরর! ওদের পাত্তা দেয় কে?
– রূপা! হিমেল স্যার তোমাকে ডাকছেন।
চমকে উঠলো রূপা। পাশ থেকে বার্তা দেওয়া মেয়েটা ততক্ষণে চলে গেছে। ওর মুখের স্পষ্ট পরিবর্তন আসমার নজর এড়ালো না। সটান দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে আসমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে রূপা বললো,
– ইয়ে.. স্যার ডাকছে। দেখা করে আসি আচ্ছা?
– আজ যে আর আমার সাথে যাওয়া হবে না সেটা বুঝতেই পারছি।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল আসমা।
– উনার হাতে আমাদের কতো মার্ক! এভাবে কি হেলাফেলা করা যায় বল!
– আমাকে ভূগোল বোঝাতে হবে না। নিজেকে সামলা রূপা। তুই গা ভাসিয়ে দিলে এই স্রোত তোকে কোথায় নিয়ে যাবে তুই নিজেও বুঝবি না।
– আচ্ছা যাই!
দ্রুত হাঁটতে শুরু করলো রূপা। কিছুক্ষণের মাঝেই শ্বাস প্রশ্বাসের পারদ চড়াও হয়েছে। ইন্টার্ন ডাক্তার হিসেবে কলেজের একজন শিক্ষকের আন্ডারে কাজ করছে হিমেল আশরাফ। তার রুমেই খানিকটা সময় দখল নিয়েছে সে। মৃদু শব্দে দরজায় টোকা দিলো রূপা।
– স্যার! আসবো?
বিপরীতে দরজা খুলে গেলে আকাশকে বের হতে দেখা গেলো। ইতস্তত করে একপাশে সরে গেলো রূপা। তবে সরলো না আকাশের দৃষ্টি।
– আকাশ! সম্ভবত আপনার কাজ শেষ।
ভেতর থেকে ভেসে আসা গুরুগম্ভীর আওয়াজ আকাশের ধ্যান ভাঙিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ আগেই যার প্রত্যাখান পেয়েছে তার অস্থিরতা লুকানোর চেষ্টা আকাশকে যেনো আরো বেশি কষ্ট দিলো। হতাশ শ্বাস ছেড়ে সে প্রস্থান নিলো।
– ভেতরে আসুন।
অগোছালো কদমে ভেতরে ঢুকলো রূপা। দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো।
– দুইদিন আপনার কোনো খোঁজ নেই। সমস্যা কি?
আপনি সম্বোধন পাশাপাশি প্রবেশ করা মাত্রই আসন গ্রহণের যে আদেশ ছিলো মুখস্থ বাণীর মতো সে জায়গায় অন্য কথা হজম করতে রূপাকে বেশ বেগ পেতে হলো। মুখ উঁচিয়ে অপর পাশের মুখটা দেখে নিলো রূপা। ঐ খাড়া নাক, ঘন ভ্রু, তার নিচে আসন গেঁড়ে বসা এক জোড়া ছোট্ট ছোট্ট চোখ দেখে যখন নিজের হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক গতি বুঝতে পারলো তখন আরো একটা প্রশ্নের তীর ওর দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
– সমস্যা কি আমার মুখে?
লজ্জা পেলো রূপা। তার সূক্ষ্ম লজ্জার বহিঃপ্রকাশ দেখে মজা পেলো হিমেল। হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসে সামনে রাখা ফাইল অযথাই ওল্টাতে শুরু করলো। কণ্ঠকে আর একটু ভারী করে বললো,
– কেউ চাইলে বসতে পারে।
চট করে বসে পড়লো রূপা। আত্মপক্ষ সমর্থনের উদ্দেশ্যে বললো,
– ভাইয়ার বিয়ে ছিলো তাই কলেজে আসতে পারিনি।
– ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেলো আর আমি একটা খবর পেলাম না! ফ্যান্টাস্টিক!
– আসলে তেমন কিছু হয়নি। পরশু মেয়ে দেখতে গিয়ে পছন্দ হয়েছে সেখানেই আকদ করানো হয়েছে। আর এসব ঝামেলাতেই গতকাল আটকে গিয়েছিলাম।
– ব্যস্ততা এতই ছিলো যে একটা ফোনকল করাও সম্ভব হয়নি।
– যখন তখন যাকে তাকে ফোন দিতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না।
এই পর্যায়ে রূপার স্বর কিছুটা কঠিন শোনালো। মজা করার উদ্দেশ্য থেকে তড়িৎ বেরিয়ে এলো হিমেল।
– তুমি কি আমাকে রাস্তার মানুষের কাতারে ফেলছো?
– কোনো কাতারে ফেলছি না। কোন কাতারে ফেলা উচিত?
রূপার সরাসরি দৃষ্টি হিমেলকে কিছুটা নাড়িয়ে দিলো।
– কি বলতে চাইছো সরাসরি বলো।
– কিছুই বলতে চাইছি না। তোমাকে হুটহাট ফোন দেবো এমন সম্পর্ক নিশ্চয়ই আমাদের না?
– ইন্টার্ন করা ডক্টরকে তুমি করে বলছো। সম্পর্ক কি এটা তো নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না?
– এই সম্পর্কের কোনো নাম নেই। সমাজ এটাকে গোণে না।
– আরে সমাজকে কে গোণে? এসব কথা তোমার মাথায় ঢোকাচ্ছে? তোমার ঐ বান্ধবী তাই না?
– আমাদের মাঝে তৃতীয় কাউকে টানবে না হিমেল। আমার মাথায় কেউ কিছুই ঢোকাচ্ছে না। আমি বরাবরই তোমাকে বিয়ের কথা বলে এসেছি।
– বিয়ে তো বললেই হলো না। এখনও আমি নিজের অবস্থান শক্ত করতে পারিনি। এখন একজনের দায়িত্ব নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
বলতে বলতে উঠে এলো হিমেল। রূপার খুব কাছে অবস্থান করে আবহাওয়ার উত্তাপ বোঝার চেষ্টা করলো। হিমেলের উত্তর শুনে রূপাও আর বসলো না। ঝট করে দাঁড়িয়ে বললো,
– বেশ! যখন দায়িত্ব নিতে পারবে জানিও। এর আগে আর..
রূপাকে কথা শেষ করতে দিলো না হিমেল। নিজেদের মাঝে দূরত্বটুকু মুহূর্তেই নিঃশেষ করে দিলো। মেয়েটাকে কাছ থেকে দেখছে প্রায় বছর হতে চলল। ওর দুর্বলতা টের পেতে বেশিদিন সময় লাগেনি। সেটাকেই মোক্ষম সময়ে ব্যবহার করলো সে।
থমকে গেলো রূপা। এই ছোটো ছোটো স্পর্শগুলো যেনো তাকে আরো ভাবিয়ে তোলে। হঠাৎ মনে হয় যেনো সে নিজেকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। আসমার বলা স্রোতের মতো। আচ্ছা এই স্রোত ওকে গন্তব্যে নিয়ে পৌঁছাতে পারবে তো? নাকি মাঝ নদীতেই সে হারিয়ে যাবে খড়কুটোর ন্যায়?
••••••
পথিমধ্যে নীরবের ফোনকল ফাহাদকে থামিয়ে দিলো। নীরব ছেলেটা তার নামের মতোই নীরব। তার কাছে নিজেকে ভাঙতে হয় না ফাহাদকে। ছেলেটার সামনে বসে চুপচাপ বসে থাকলেও যেনো শান্তি পায় ফাহাদ। এই বছরই বাইরে থেকে ফিরেছে নীরব। বর্তমানে তার অবস্থান একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির এম ডি পদে।
– হ্যালো!
– হ্যালো! ফাহাদ তুই কি ব্যস্ত আছিস?
– না।
– তাহলে একবার আমার অফিসে আয়।
– আচ্ছা।
অজানা গন্তব্য পরিবর্তন করে বন্ধুর কর্মক্ষেত্রে গেলো ফাহাদ। ঘণ্টা না পেরোতেই বন্ধুর উপস্থিতি নীরবকে বেশ অবাক করলো।
– এতো তাড়াতাড়ি চলে এলি? অর্ধেক পথ এসেই ছিলি নাকি?
– না। এমনি বের হয়েছিলাম। তুই ফোন দিলি।
হালকা হেসে জবাব দিলো ফাহাদ। সেই হাসির অর্থ বের করতে কষ্ট হলো না নীরবের।
– যাই হোক। যে জন্য ডাকলাম! শোন আমি লটারিতে সেন্ট মার্টিন ট্যুরের দুটো টিকিট পেয়েছি। আর পনেরোদিন পরেই। ভাবিকে নিয়ে চলে যা।
– হঠাৎ লটারি পেলি কোথায়? আর আমিই বা যাবো কেনো?
– আসলে তেমন লটারি না। একজন গিফট করেছে। মা কে নিয়ে যেতাম। কিন্তু মা অসুস্থ। দুইদিন ছুটি নিয়ে একটু চেকাপ করাতে যাবো। তুই যা। একটা ছোট হানিমুন ট্রিপ হয়ে যাবে।
মনে মনে আনন্দিত হলেও সেটা প্রকাশ করলো না ফাহাদ। ভাব ধরলো এমন যেনো নীরব তাকে জোর করে গছিয়ে না দিলে সে যেতো না।
– তাহলে তো অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে।
– নে। এমনিতেও তুই তো বেশি মিস দিস না। নিষেধ করবে না বোধ হয়।
– হু দেখি।
উঠে পড়ল ফাহাদ। নীরবকে একটা ধন্যবাদ দিতে চাইলো। কিভাবে বলবে বুঝতে না পেরে জড়িয়ে ধরলো নীরবকে। আকুতি নিয়ে বলল,
– আমার শান্তির জন্য দুআ করিস দোস্ত।
হেসে বন্ধুর পিঠ চাপড়ালো নীরব। ট্যুর দিতে তার খুব বেশি অসুবিধা হতো না। কিন্তু বন্ধুর নব দাম্পত্য জীবনে অশান্তি জানতে পেরে একটা টিকিটকে নিজ উদ্যোগে দুটো বানিয়ে ফেলেছে সে। বন্ধুটা তার বড্ড ছেলেমানুষ!
চলমান।
#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৩
সারাটা রাস্তা ঘোরের ভেতরে কাটালো রূপা। ভবিষ্যত চিন্তায় সে অস্থির। বাড়ি ফিরেও স্থির হতে পারলো না। নতুন ভাবির সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছের কথা আর মনেই হলো না। তার বদলে যখন ঘরের দুয়ার আটকে দিলো তখনই যেনো নিজ রাজ্যে নিজেকে একা পেলো। সারাদিনার সমস্ত কথা এক এক করে মাথায় আসতে লাগলো। হিমেলের আচার আচরণে স্পষ্ট সে রূপাকে চায়। কিন্তু কিভাবে চায়? সে ইন্টার্ন করছে। আজ হোক কাল হোক ডাক্তার তো হবে। তাহলে এতো গড়িমসি কিসের? তাদের ক্লাসের দুইজন ছেলেমেয়েই তো দুই মাস আগে বিয়ে করে নিয়েছে। কানাঘুষা হচ্ছিলো তারা নাকি লুকিয়ে প্রেম করতো। যদিও তাদের মাঝে তেমন কিছু কখনোই কারো চোখে পড়েনি। মেয়েটা বলেছিলো ছেলেটা নাকি সরাসরি তার বাসায় প্রস্তাব দিয়েছে। তারপর পারিবারিকভাবেই সব এগিয়েছে। তাহলে? থার্ড ইয়ারে থাকতেই যদি ঐ ছেলেটা বিয়ে করতে পারে তাহলে হিমেল এখনও কেনো রাজি না? ভাবনার জল বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারলো না। তার আগেই কামরুন্নাহারের কণ্ঠে সাজানো তাসের ঘর ভেঙে পড়লো।
– কি হয়েছে মা?
দরজা খুলে ক্লান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো রূপা। তবে তার কণ্ঠের ক্লান্তি কামরুন্নাহারকে ছুঁতে পেরেছে বলে মনে হলো না। সোৎসাহে ঘরে ঢুকে মেয়েকে নিজের পাশে বসালেন তিনি। সারাদিনের জমা করা কথা উগড়ে দিতে শুরু করলেন।
– কি আবার হবে? তুই এসেই দোর দিয়েছিস কেনো? এ আবার কোন স্বভাব? তমার সাথে একটু কথা বলবি না!
– আমার মাথাব্যথা করছে মা। তাই যাইনি। একটু শুয়ে ছিলাম।
নিভু নিভু চোখে বললো রূপা। শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতে পারলেই যেনো তার শান্তি। কিন্তু মেয়ে পরবর্তী কথা বুঝতেই তার ঘুম উড়ে গেলো দূরদেশে। চোখ বড়ো বড়ো করে জিজ্ঞেস করলো,
– কি বললে!
– ভূত দেখার মতো চমকাচ্ছিস কেনো? ছেলে ভালো। তমা আমাকে বলেছে। ওর আপন ফুপাতো ভাই। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে এখন বড়ো কোম্পানিতে চাকরি করে। বেতনও অনেক। ঢাকায় নিজেদের বাড়ি আছে। কোনো বোন টোন নেই।
– থামো থামো! তোমাকে কে বলেছে আমি এখন বিয়ে করবো?
– বলতে হবে কেনো? আমি কি কিছুই বুঝি না? বিয়ের বয়সে বিয়ে করবি না তো কি বুড়ি হলে হয়ে করবি?
– আমার মাত্র তেইশ মা!
– এটাই সঠিক সময়। আর দেরি করা উচিত হবে না।
– আচ্ছা মা আমাকে আর দুইটা বছর সময় দাও তুমি। তারপর যা করার করো। বিয়ের জন্য আমি এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুত না।
শেষ কথাটা বলেই রূপা বুঝলো এটা ডাহা মিথ্যে কথা হয়েছে। আজ সকালেই বিয়ের কথা হিমেলকে বলে এসেছে। প্রস্তুত না থাকলে কিভাবে বললো?
– তমা এতো করে বলল!
– বিয়ে দিতে না দিতেই ঐ মেয়ে তোমার আপন হয়ে গেলো। আমি যে এতো করে বলছি তার কি?
– আচ্ছা বুঝলাম এভাবে বলিস না। বেচারী আমাকে খুব সম্মান করে।
– করলেই ভালো। আমি একটু ঘুমাবো।
বিরস মুখে উঠে এলেন কামরুন্নাহার। যতোটা উৎসাহ নিয়ে এসেছিলেন এখন ঠিক ততটাই নিরুৎসাহিত হয়ে ফেরত যাচ্ছেন। দরজার দিকে তাকাতেই মন হলো তমাকে যেতে দেখলেন। কিন্তু কিভাবে? ও তো ঘুমাচ্ছে। মনের ভুল ভেবে নিজের ঘরে গেলেন। ছেলেটার বিয়ে হলো। মেয়েটার একটা গতি না করা পর্যন্ত তিনি শান্তি পাচ্ছেন না।
বিছানায় পিঠ ঠেকিয়ে দিলো রূপা। এভাবে কতোদিন বিয়েটা আটকে রাখতে পারবে সে? কিন্তু হিমেল নিজের অস্তিত্বের স্পর্শে তাকে যেভাবে বেঁধে ফেলেছে সেখানে অন্য কাউকে কল্পনা করতেও রূপার বুক কেঁপে ওঠে। অসম্ভব! এটা সে কোনোভাবেই হতে দেবে না। যেকোনোভাবেই হোক, হিমেলকেই সে বিয়ে করবে।
• • • • • •
খুব উত্তেজনা নিয়ে বাড়ি ফিরল ফাহাদ। দীপ্তির সাথে এবার বোধহয় তার সম্পর্কটা আরেকটু সহজ হবে। বিয়ের পর সেভাবে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। স্বামী স্ত্রী হিসেবে বন্ধন তৈরী হলেও যেনো দীপ্তি সেখানে নির্ভার না। নাহলে কেনো ফাহাদের উপস্থিতি তাকে অস্বস্তিতে ফেলবে? আনন্দটা ভাগ করতে মা কে ফোন দিলো ফাহাদ। আনোয়ারা বেগম মোবাইলের পাশেই ছিলেন। খপ করে সেটা ধরে কানে ঠেকিয়ে বললেন,
– কে ফাহাদ? কেমন আছো বাপ?
– আসসালামু আলাইকুম আম্মা। আগে তো দেখবা কে ফোন দিলো। নাকি সবার ফোন ধরেই এমন করে বলো?
আনোয়ারা বেগমের বুকে স্বস্তি খেলে গেলো। ছেলেটা কতদিন পর এভাবে কথা বলছে! বিয়ের পর থেকেই কেমন যেনো মনমরা হয়ে থাকতো। আনোয়ারা বেগম বুঝতেন না কারণ। মেয়েটা ভালো। খোঁজখবর নিয়েই তো তার ফাহাদের জন্য বেছে নিলেন। যাক! এখন ছেলের গলা ভালো শোনাচ্ছে। ভালো থাকলেই ভালো।
– ওয়ালাইকুম সালাম। দুরো! ঐ সব তুই বাদ দে। তুই কেমন আছিস? বউমা কেমন আছে?
– সবাই ভালো। তুমি আসবা কবে আম্মা?
– ফাহিমা তো আমারে ছাড়ে না। কয় আম্মা আর কয়দিন থাকো।
– তুমি কি আপার একার আম্মা নাকি? আমি এই মাসের শেষেই তোমারে আনতে যাবো বলে দিলাম।
আনোয়ারা বেগম হাসেন। স্বস্তির হাসি। বাপ মাকে ঠেলে দেওয়ার যুগে ওরা ভাইবোনেরা মাকে নিয়ে টানাটানি করছে। প্রশ্রয় মাখানো সুরে বলেন,
– আসিস বাপ।
– আম্মা!
– বল।
– একটা ছুটি পেয়েছি। ভাবছি দীপ্তিকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।
– কই যাবি?
– সেন্ট মার্টিন।
– যা। সুন্দর জায়গায় থাকবি। সাবধানে যাবি। কবে যাবি?
– পনেরোদিন পর।
– যাওয়ার আগে ফোন দিবি। পৌঁছায়েও ফোন দিবি।
– আচ্ছা দিবো। তোমার ওষুধ সব আছে তো?
– আছে। পরশু ফাহিমার জামাই আবার নিয়া আসছে একগাদা।
– শরীরের যত্ন নিবা আম্মা। আপাকে বলবা রাতে যেনো আমাকে কল দেয়।
– আচ্ছা।
কল কেটে রিকশা থেকে নামলো ফাহাদ। বাড়ি যেতে বেশি সময় লাগলো না। কলিং বেল টিপে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রইলো দীপ্তিকে খবরটা জানানোর জন্য।
– দীপ্তি! একটা গুড নিউজ আছে।
দরজা খুলতে না খুলতেই ফাহাদের এমন অভিব্যক্তি দীপ্তিকে ভরকে দিলো বটে।
– কি গুড নিউজ?
দীপ্তির বিরস মুখে জবাবও আজ ফাহাদকে দমাতে পারলো না।
– পনেরোদিন পর আমরা ট্যুরে যাচ্ছি। সেন্ট মার্টিন!
– আমরা মানে? তোমাকে কে বললো আমি যাচ্ছি?
চলমান।