রিমঝিম বৃষ্টি
কাজী জেবুন্নেসা
পর্ব ৮
বিকেলবেলা বৃষ্টিটা ক্লান্ত হয়ে ক্ষ্যান্ত দিল যেন। সাইকেলের চেপে লেকের পাড়ে যাচ্ছে রিমঝিম আর রুবায়েত। রাস্তাঘাট এত সুন্দর, গাছ গাছালি আর পানিতে টুই- টুম্বুর চারপাশ। রিমঝিমের খুব সুন্দর অনুভূতি হচ্ছিল, একদম রুবায়েতের সাথে ঘেঁষে বসে আছে। অবশ্য ছয় মাসের বিবাহিত জীবনে, এই পাশে থাকা ছোঁয়াছোয়ির অনুভূতি নতুন কিছু নয়। কিন্তু বেশ কিছুদিনের দূরত্বে এতোটুকু পাশে থাকাই যেন অনেক কিছু মনে হচ্ছে। সামনের দিকে তাকিয়ে রিমঝিমের মুখে ছোট একটা হাসি ফুটে উঠলো, সব দূরত্বগুলো আজকে রিমঝিম ঘুঁচিয়ে দিবে। ওর মনের ভিতর যেন রঙিন প্রজাপতি উড়ছিল,মুখে ফুটে উঠেছিল অযথাই হাসি।
এদিকে রুবায়েত ভাবছে, রিমঝিম তো কিছুই বলছে না। ডিভোর্স পেপারে বিষয়টা কি ও নিজেই খোলাসা করবে? বিষয়টা মনে হতে মুখে মৃদু হাসিখুশি উঠলো, এত সহজে কি রিমঝিমকে মাফ করা যায়! দেখা যাক!
লেকপাড়ে গিয়ে রিমঝিম পুরাই বাকহারা৷ ওর এই দৃষ্টি রুবায়েত উপভোগ করে, রিমঝিম কি এখন একটা গান করবে? মনে হয় না! লেকটা এত সুন্দর পানি এতো স্বচ্ছ পরিষ্কার। রিমঝিম ভাবে, রুবায়েত ওকে বলেছিল, – এই লেক এটি মূলত একটি পরিত্যক্ত চুনাপাথরের খনি, যা এখন নীলাভ স্বচ্ছ জলে পরিণত হয়েছে। শুধু কি তাই?
লেকের চারপাশে সবুজ টিলা এবং পাহাড়ের সমন্বয় আর লেকের একপাশে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের দৃশ্য দেখা যায়। কি অবিশ্বাস্য, অপার্থিব দৃশ্য। রুবায়েতের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে রিমঝিম,
“এই কয়দিন আনলে না কেন?”
বৃষ্টির জল জমে আছে লেকের কোলে। আকাশ মেঘলা, পাহাড়গুলো যেন সাদা শাড়ি জড়ানো কোনো ক্লান্ত অপ্সরীর মত বসে আছে দূরে। চারদিক চুপচাপ, শুধু পাখির ডাক, গরু আর ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে নির্বিঘ্নে, আর গাছ গুলো যেন গোছল সেরে উঠলো, পাতায় বৃষ্টির জমে থাকা পানি শিশিরের মত লাগছে। রিমঝিমের দিকে তাকালো রুবায়েত, কি স্নিগ্ধ সুন্দর লাগছে, পরিবেশের সাথে ওর শাড়িটা পুরাই মানানসই।
“আজ আনবো তাই।” হেসে প্রতিউত্তর দিল রুবায়েত।
রিমঝিম কপট রাগ দেখালো, “এত সুন্দর জায়গা, অথচ তুমি একাই উপভোগ করতে, একটুও কি মনে হয়নি আমার কথা? এই জায়গাটা আমার সাথে বসে বসে একসাথে বৃষ্টি দেখার জন্য?”
রুবায়েত হালকা হাসি দিল, একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, “ তোমাকে ছাড়া কোন কিছুই উপভোগ্য নয় রিমঝিম, মায়া বড্ড বাজে জিনিস। বাড়িয়ে কি লাভ?”
রিমঝিম এক দৃষ্টিতে রুবায়েতের দিকে তাকিয়ে ছিল। অনেক কথা বলার আছে, কিন্তু কথাগুলো যেন ভাষাহীন। রিমঝিমের সীমাহীন অনুশোচনার তাপে শব্দগুলো যেন দগ্ধ।এই লোক ডাক্তার, তাহলে কেন রিমঝিমের কষ্টগুলো সারিয়ে দিচ্ছে না। উলটো প্রতিনিয়ত সেগুলোকে নতুন করে উস্কে দিচ্ছে।
রুবায়েত না তাকিয়েও বুঝতে পারছে রিমঝিম এর অপলক দৃষ্টি। ঠোঁট কামড়ে ভাবল দুর্বল হওয়া যাবে না, আরেকটু প্রায়শ্চিত্ত করা দরকার আছে রিমঝিমের। ভালোবাসা বিশ্বাস এগুলো কোন ছেলে খেলা তো নয়।
“এসো ঐ টিলার উপর বসি, একটু কাদামাটি লাগুক না হয়, বৃষ্টির আর মাটির ঘ্রান নেই, আর এই মুহূর্তটাকে মনে রাখি সারাজীবন।” তারপর রিমঝিমের দিকে তাকায়, কন্ঠে রুক্ষতা এনে বলে, “ কে জানে আবার কবে…”
রিমঝিম, রুবায়েতকে থামিয়ে কথাটা পুনরাবৃত্তি করে, “আবার কবে…” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লেকের দিকে নজর ফেরায়। গুন গুন করে…
“এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায় স্বপ্ন মধুর মোহে
এ জীবনে যে কটি দিন পাবো! তোমায় আমায় হেসে খেলে কাটিয়ে যাবো, দোঁহে স্বপ্ন মধুর মোহে……
মাগরিবের সময় পাখিদের সাথে রিমঝিম আর রুবায়েত তাদের নীড়ে ফিরছিল। কাছাকাছি হতেই একটা হ্যাংলামত ছেলে দৌঁড়ে আসলো, চোখে মুখে কান্নার দাগ, “ আমার বাপেরে সাপে কাটছে!
রুবায়েত বাসায় গিয়েই, এন্টিভেনম নিয়ে ছুটে ছেলেটার সাথে বের হয়ে যায়। রিমঝিম পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। ভাবে, আজকের বিকালটা সুন্দর ছিল সাথে বিষন্ন ছিল। কিন্তু আজকে রাতটা সুন্দর হবে কোন বিষন্নতা থাকবেই না। এখন কিছু জিনিস জোগাড় করতে হবে, গিট্টুর আসার কথা কচি কে নিয়ে দেখা যাক।
–——————–
মানুষের মন আজব রহস্য, মন কি কখনো কিছু দিয়ে বাধা যায়? আপনারা ভাল বলেন আর খারাপ বলেন, যাই বলেন না কেন মনের কিছু কিছু রহস্য খুব অদ্ভুত। রিমঝিম যে ডাইরি পুকুর পাড়ে ফেলে গিয়েছিল সেটা তুলে নিয়েছিল ময়না। ডাইরি পড়ে সে যেন ডাক্তারের প্রতি আরো আসক্ত হয়ে পড়ল। বুকের ভিতর তীব্র জ্বালা, ভালো-মন্দ বোধ গায়েব, ডাক্তারকে চাই। তাছাড়া ডায়েরি পড়ে বুঝতে পেরেছিল এই বউ নিয়ে রুবায়েত সুখী না। আসলে কি তাই? ডায়েরির পাতায় পাতায় চিৎকার করে লেখা ছিল যে রুবায়েত রিমঝিম কে কত ভালোবাসে।
এখন ময়না গানের প্র্যাকটিস করছে…
“ যাও পাখি বল তাকে সে যেন ভোলে না মোরে…
খোলা দরজায় হঠাৎ দাঁড়ায় তরু চাচী – মুখে হালকা রহস্যময় হাসি হাসমত চাচার বউ,চেয়ারম্যানের খাস লোক।চোখে রহস্য, কন্ঠে সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করে,
“ও … পাখিরে তুই কতা কইতে কইছস, কিন্ত তুই কারে কি বলবি, তারে ঠিক চিনছস তো?”
ময়নায় গান থেমে যায়, চাচীর দিকে দৃষ্টি দেয়,
” গান তো গানই, আর চাচী, কিছু পাখি তো উড়ার আগে চিহ্ন রাখে না… শুধু ছায়া ফালায়।”
তরু চাচীর এতক্ষণে এক পা ভেতরে, কণ্ঠে খোঁচা,
“ছায়া কিন্তু মাটি থেইকা দেইখা যায়… আমি তো চোখ মেইলেই দেখতে পাই, কার বুক পোড়ে, কার চোখ জ্বলে… ডাক্তারে লইয়া কার মনে কি গন্ধ!” মুখে ফিচেল হাসি।
ময়না ধীরে দৃষ্টি ফেরায়,
“আপনি এত কিছু দেখেন চাচী… কিন্তু কই, আমি তো এসব দেহি না।’’ বলে নখ অযথাই খুটতে থাকে মুখ লাল।
তরু চাচী চোখ সরায় না, সরু চোখে ময়নার সমস্ত বিষয় জরিপ করে,মনে সুখের আলোড়ন বয়ে যায়। জব্বর জিনিস আবিষ্কার করছে। আজ না বেশ কিছুদিন ধরেই নজরে আছে ময়না।
“ছায়া না দেখলে গন্ধে ধরা যায়। তোরে দেখতাছি, আর ভাবতেছি… ঠান্ডা বাতাসেও আগুন লাগে। আর তোর বুকে তো পিরিতের আগুন।”
ময়না চুপ করে থাকে, মাথা নিচু করে,
“গানের ভিতর যেই আগুন, ওটা কেউ নিভাইতে পারবো না চাচী। যেই পুড়ে, শুধু সে জানে,কার নাম কয়, কারে চায়… এডি বাদ দাও, মাথায় তেল দিয়া দাও, আহো।”
কিন্তু অল্প কথপোকথনে তরু ভেবে নেয় এই মেয়েই হবে ডাক্তার বধের হাতিয়ার, চেয়ারম্যান সাব এই কাজেই তো লাগায় রাখছে ওকে। ডাক্তারের কোন একটা দূর্বলতা আবিষ্কার।
______________________
রুবায়েত বড্ড ক্লান্ত, সাইকেলটা জায়গা মত রাখল। কপাল কুঁচকে গেল ঘর কেমন অন্ধকার। হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত হল, এই অজপাড়া গাঁয়ে রিমঝিম কে একা বাসায় থাকতে হয়। এটা ভালো কিছু না,গিট্টুর নানী এসে থাকে তবুও। নিজের উপরে রাগ হচ্ছে, দরজাটা খোলাই ছিল। ভিতরে গিয়ে আগে বাতি জ্বালানো, সব ঘরে খুঁজলো,বাথরুমেও নেই। বুকের ভেতরটা ফাঁকা হয়ে গেল যেমন হয়েছিল ঢাকায়, বাড়ি ফিরে যখন দরজায় তালা দেখেছিল। হঠাৎ নজর জানলা দিয়ে পুকুর পাড়ে গেল। হুস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো, কোমরে হাত। এই সন্ধ্যা বেলা রিমঝিম পুকুর পাড়ে বসে আছে কেন? তারপর আবার চারটা হারিয়ে কেন জ্বালিয়েছে, সেই আলোতে কিছু পোকা নাচানাচি করছে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। হেসে মাথা ঝাঁকালো, পাগল।
“এখানে কি করছো?”
রুবায়েতের কন্ঠ শুনে রিমঝিম ফিরে তাকালো। আশ্চর্য সুন্দর একটা পরিবেশ, পুকুরের টলটলে পানিতে মস্ত বড় চাঁদের ছায়া। আর এদিকে গাছের ফুলের সুবাস। চাঁদের আলোতে এমনি উঠোন পুকুরের জল সব মাখামাখি, তার উপরে হারিকেনের আলো। অপার্থিব একটি পরিবেশ, ঝিঁঝি পোকা ডাকছে, উড়ছে জোনাক পোকা। সেই আলোতে গোলাপি শাড়ি পরা খোপায় ফুল দেওয়া রিমঝিমকে দেখে রুবায়েতের ইচ্ছে করল বুকের ভিতর জড়িয়ে নেয়। কিসের এত রাগ অভিমান?– বলে চলো সব ভুলে যাই। কিন্তু বলা হয় না।
হঠাৎ হাতে রিমঝিমের হাতের স্পর্শ পায়,
“এসো আমার পাশে বসো, কথা আছে।চুপচাপ শুনবে, আর তুমিও আজকে মন খুলে কথা বলবে।আমাকে নিজের ডায়েরি ভেবে নিও।”
রুবায়েত চমকে যায়, “ তুমি কিভাবে জানো আমার ডায়েরির কথা?”
“আমার সতীনের কথা আমি জানব না?” রুবায়েতের দিকে পুর্ন দৃষ্টিতে তাকায় রিমঝিম। অবশ্য মনে একটা অস্বস্তি আছে, ডায়েরিটা খুঁজে পাচ্ছে না। কচি আর গিট্টুকে গোয়েন্দাগিরিতে লাগিয়েছে।
রুবায়েত কিছু বলে না, মুগ্ধ হয়েই রিমঝিমকে দেখে, কি সুন্দর লাগছে, স্নিগ্ধ। “সতীন শব্দটা দারুন। তুমি কি সত্যি আমার ডায়েরি হতে চাও।” বসলো রিমঝিমের পাশে, কার্বোলিক এসিডের ঘ্রান পাচ্ছে৷ যাক বুদ্ধি আছে বউ এর।
“হ্যাঁ চাই, তুমি জানো যারা ওভার থিংকার আমার মত তারা ভরসা চায়, কেউ একজন বলবে -আমি আছি।কিন্তু তুমি তো কখনো বলো নাই।” কন্ঠ কেঁপে যায় রিমঝিমের।
“ও আচ্ছা এখন সব দায় আমার।” পুকুরের দিকে দৃষ্টি দেয়ার রুবায়েত, কি সুন্দর চাঁদের আলো। “আমার দায় আছে, আমি তোমার উপরে আমার মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু তুমি তারজন্য ডিভোর্স লেটার অব্দি যাবে? সম্পর্ক ভাঙা এত সোজা।”
রিমঝিম, রুবায়েতের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে, আমি… আমি…
“নকল ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছিলে, তাই তো? আর এত তাড়াহুড়ো তোমার যে, যেটার উপর আমার আর তোমার নাম বসিয়ে, স্ট্যাম্পে প্রিন্ট করেছ, সেটার ভেতরের কথাগুলো পরিবর্তন করো নি।” রুবায়েত এবার গা দুলিয়ে হাসছে।
রিমঝিম তাজ্জব হয়ে তাকিয়ে রইলো, “ তুমি সব জেনেও তেজ দেখিয়ে এখানে চলে এসেছো আর…!” এবার রেগে যাচ্ছে রিমঝিম, নিজেকে জোকার মনে হচ্ছে।
রুবায়েত চট করে রিমঝিমকে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরল, ঘাড়ের কাছে মাথাটা রেখে, কানে লতিতে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল, “ ম্যাডাম বিষয়টা এত সরল না, আমি ডিভোর্স পেপারটা, দেখলাম মাত্র সেই দিন। এত হাসি পাচ্ছিল, এখানে কি লেখা জানো? বাচ্চার কথা!”
লজ্জা পেয়ে গেল রিমঝিম, “ কি করতাম তাহলে? তোমাকে একটা শিক্ষা দেওয়ার জন্য করেছি! যেন তুমি….” রুবায়েতের মাথাটা এখনো ওর ঘাড়ে হেলানো।
“পাগলের মত তোমার দুয়ারে ছুটে আসি! তাই তো?” হাসছে রুবায়েত,ওর কানের ঝুমকাতে একটা টোকা দিয়ে মাথা সোজা করে ওর চোখের দিকে তাকালো, “তো ম্যাডাম ছুটে এলেন যে।আমাকে তো সুযোগটা দিলেন না।”
“তোমার খুব মজা লাগছে তাই না? অথচ তোমার ডায়েরি পড়ে, আমি কষ্টের সাগরে ভেসে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি যদি কথাগুলো প্রকাশ করতে তাহলে হয়তো আমি এতটা ইনসিকিউরিটিতে ভুগতাম না। আর হ্যা আমার ডিভোর্স লেটার পাঠানো ভুল সিদ্ধান্ত ছিল, নকল হলেও তোমার তো কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না।” উষ্মা রিমঝিমের গলায়।
ওর কন্ঠনালীতে আঙুল স্পর্শ করলো রুবায়েত, “কিসের এত অবিশ্বাস তোমার? আর আমি কখনোই যেতাম না, আমার অভিমান বড্ড বেশি,মাফ করতে পারি না সহজে।”
“ তুমি জানো ইদানীং পরকিয়া কত বেড়ে গেছে? ডাক্তাররা কি, কি করে? আমি ভয় পাব না? তারপর আমার জামাই কিছুই বলে না, মিস্টার চুপচাপ।” অভিমান রিমঝিমের চোখে।
“তোমার কথা সত্যি, এই দুনিয়ায় কেউ ফেরেস্তা না। সচেতন থাকা ভালো, কিন্তু তুমি তো বিষয়টাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলে রিমঝিম।”
“হ্যা তারজন্য ই তো কাউন্সিলিং করাচ্ছি।”
“কি বললো ডাক্তার।” রিমঝিমের হাত এখন ওর ঠোঁটের কাছে।
“বললো তোমারো কাউন্সিলিং প্রয়োজন।” হাসছে রিমঝিম।
রুবায়েত হেসে ফেললো, “আচ্ছা, কিন্তু যদি তোমাকেই আমার ডায়েরি বানাই তবুও?”
“হুম, তবুও।”
এরপর কিছুক্ষন চুপচাপ, রুবায়ের রিমঝিমের হাতে গালে নিজের ঠোঁটের উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।
“আমাকে কি আরেকটা সুযোগ দিবে? নিরাবতা ভাঙে রিমঝিম, “ আমি তোমাকে বিশ্বাস করতে চাই, তোমার সাথে সংসার করতে চাই। আমি দু:খিত।”
রুবায়েত যত্ন করে রিমঝিমের চোখের জল মুছিয়ে অনেক আদরের স্পর্শে কষ্ট দূর করে দেয়। একটা গান শোনাও। এত কান্নাকাটি ভালো লাগছে না, তোমাকে কিছুদিন শাস্তি দিলাম।আজ শাস্তি শেষ শুধু ভালোবাসা!”
রিমঝিম রুবায়েতের গালে ঠোঁট স্পর্শ করে দেয়। তারপরে গান শুরু করে…
“আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে
আমার নয়ন দুটি শুধুই তোমারে চাহে
ব্যথার বাদলে যায় ছেয়ে
আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে..
রুবায়েতের নিজেকে আবার সবচেয়ে সুখি মানুষ মনে হয় নিজেকে, অপার্থিব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আর রিমঝিমের গলা সব মিলিয়ে এক অপূর্ব অনুভূতি। রিমঝিম গান করছে আর নৌকা বানাচ্ছে ডিভোর্স পেপার ছিড়ে ছিড়ে।
“কি করছ? এটা তো জাদুঘরে দেওয়ার মত জিনিস। নষ্ট করছ কেন?”
রিমঝিম নৌকার গায়ে, মার্কার দিয়ে কিছু লিখছে। শেষ করে দেখালো দেখ আমি আমার আজাইরা চিন্তা, সন্দেহপ্রবনতা কে ভাসিয়ে দিচ্ছি। দুইটা নৌকাতে লেখা “ আজাইরা চিন্তা”, “ সন্দেহপ্রবনতা।” তুমি কি ভাসাতে চাও?
“কিছুই না।” ঠোঁট কামড়ে হাসে রুবায়েত।
“ইশ! ভেংচি কাটে রিমঝিম, “ তোমার নীরবতা আর ডায়েরি।”
রুবায়েত ফোন বের করে, আজকেই রিমঝিমের কবিতাটা আবিষ্কার করেছে, নীচু কন্ঠে আবৃত্তি করে–
“তোমার না বলা কথাগুলো কে
একদিনের ছুটি দিও
তারা যেন আমার কানে কানে
ফিসফিস করে বলে
অনেক ভালোবাসা নিও।”
“রিমঝিম আমি তোমাকে ভালোবাসি। হয়েছে বলা বউ?”
রিমঝিম নৌকা ভাসিয়ে দিচ্ছিলো খিল খিল করে হেসে ফেলে, “ চল উঠি।”
“হুম চল”, বলে রুবায়েত উঠে দাঁড়ালো।
“তুমি আরেকটু রোমান্টিক হলে, এখন এই পরিবেশ আমাকে কোলে তুলে নিতে।” পেছনে দাঁড়িয়ে বললো রিমঝিম।
রুবায়েত মাথা ঘুরিয়ে তাকালো, “ তারপর?”.
“বাসায় নিয়ে যেতে।”
“তারপর?” মুখে দুষ্টু হাসি।
সেদিক তাকিয়ে, “ রান্নাঘরে নামিয়ে দিতে।” হাসি চাপলো রিমঝিম।
“হুশ! রান্নাঘরে নামিয়ে দেওয়ার জন্য, এত ওজনদার জিনিস আমি কোলে তুলতে পারবো না।”
রিমঝিম ভেংচি কেটে আগে হেটে যাওয়া ধরতেই, রুবায়েত ওকে কোলে তুলে নিল। দুই হাতের গলা জড়িয়ে, রিমঝিম ওর চোখের দিকে তাকালো, “এখন নিলে কেন?”
“নিজের ইচ্ছায় নিলাম,নিজের ইচ্ছাতে নামাবো, আমার আবার বেডরুম পছন্দ।” ফু দিয়ে রিমঝিমের কপালের চুল উড়িয়ে দিল।
রিমঝিম আবার খিল খিল করে হেসে ফেললো, “তোমার দুষ্টু বুদ্ধিগুলোকে ভাসানো হল না, আফসোস।”
“সেগুলো ভাসালে তোমারি লস বউ, জামাই এমনিতেই চুপচাপ তার উপর…!”
রিমঝিম তাজ্জব হয়ে গেল, “ কিসের চুপচাপ, আজাইরা কথার ওস্তাদ।
#রিমঝিম_বৃষ্টি
#কাজী_জেবুন্নেসা
চলবে….
রিমঝিম বৃষ্টি
কাজী জেবুন্নেসা
পর্ব-৯
ফজরের আজানের সময় ঘুম ভেঙে রুবায়েত আবিষ্কার করে রিমঝিম ভেজা চুলের পানি ওর মুখের উপর ঝাড়ছে,
“ আরে ভাই, কী করছ?” রুবায়েত চোখ মুছে উঠে বসে।
“যাক ঘুম ভাঙ্গলো, আমি তো ভেবেছিলাম মুখে এক মগ পানি ঢালা লাগবে।” হাসি রিমঝিমের মুখে। “দ্রুত নামাজ পড়ে আসো।”
রুবায়েত চোখ কচলে, জানলা দিয়ে বাইরে তাকালো, কি অপূর্ব চারিদিক।স্নিগ্ধ আলোয় চারপাশ যেন মন ভালো করার জন্য সাজানো।
নামাজ শেষ করে রুবায়েত রিমঝিমকে বলল, “চা কর, পড়তে পড়তে তোমার গান শুনি।”
রিমঝিম কিছু বলে না। চুপচাপ বসে থাকে। ভেজা চুল থেকে পানি টপটপ করে বিছানায় পড়ে যাচ্ছে।
রুবায়েত একটা তোয়ালে নিয়ে ওর চুল মুছিয়ে দিতে থাকে। “তোমার ঠান্ডা লাগবে তো! এত অস্থির কেন? চুলও ঠিকমতো মুছো না।”
রিমঝিম ফিরে তাকায়। চোখে একটা চাপা ক্ষোভ।
“আমার তো সবকিছুতেই দোষ। আমি অস্থির, আমি ওভারথিংকার, আমি সন্দেহপ্রবণ!”
রুবায়েত থমকে যায়।অবাক হয়ে তাকালো, এই সকাল সকাল মেয়েটার আবার কি হলো? “ কি হয়েছে তোমার?”
“রিমঝিম এক নিশ্বাসে বলে ওঠে, “আমি তোমার জন্য তোমার প্রিয় গানগুলো শিখেছিলাম। তুমি ডায়েরিতে আমার জন্য তোমার মুগ্ধতা লিখেছো, কিন্তু আমাকে মুখে কখনো বলেছো?
আর তোমার তো ফুলের রেণুতে অ্যালার্জি—তাও তুমি তা চেপে গেছো, শুধু আমার জন্য। এটা কখনো বলেছো তুমি?”
রুবায়েত আচমকা রিমঝিমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মাথাটা ওর কাঁধে রাখে।
“কি বলতে চাইছো, ম্যাডাম?” রুবায়েত কৌতুকের ছলে বলে।
রিমঝিম দুই একবার বার ধাক্কা দিলো নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার প্রয়াসে, কিন্তু রুবায়েত আরো জড়িয়ে ধরল। “ সবসময় শারীরিক স্পর্শ মনের কষ্ট কমায় না রুবায়েত। আমাদের বিবাহিত জীবনে আমি তোমাকে বোঝার চেষ্টা করিনি। তুমি করেছ?” বিরক্ত কন্ঠ রিমঝিমের।
রুবায়েত কাঁধ ঝাঁকায়, “আমি আবার কী করলাম?”
“তুমি কখনো আমাকে কিছু বলেনি এটাই সমস্যা, ঠিক আছে আমি ভুল করেছিলাম। তুমি আমাকে মিতার কথা বলেছিলে আমি ওভার রিয়েক্ট করেছিলাম।কিন্তু, কেন করেছিলাম? তুমি সারাদিন হাসপাতালে থাকতে, বাসায় এসে তোমার পড়াশোনা। শুধুমাত্র রাতের বেলা পাশাপাশি ঘুমিয়ে অথবা শারীরিক স্পর্শ মনের তেষ্টা কিন্তু মিটায় না। হতে পারে তোমার সেরকম কিছু মনে হয় না, তুমি বিষয়গুলো উপলব্ধি করো ডায়েরি লিখ এটা তোমার ভালোলাগা। আবার হতে পারে, তোমার কাছে ব্যাপারগুলো অত গাঢ় নয়, কিন্তু আমি তোমার সঙ্গ চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, তুমি তোমার মুখে আমার প্রশংসা করবে।”
রুবায়েত ধীরে ধীরে রিমঝিমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তাকিয়ে থাকে ওর চোখের দিকে।
রিমঝিম চোখে চোখ রাখে, “তুমি সব জানার পরেও যে ডিভোর্স লেটারটা নকল ছিল, সেটা দিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়েছো। আমাকে বাধ্য করেছিলে তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে, আমাকে হৃদয়ের আগুনে জ্বলতে ছেড়ে দিয়েছিলে। আমি কাল কিছু না বললে, আমাদের সম্পর্ক আগের মতই থাকতো, তাই না? কেন?”
রুবায়েত মাথাটা একটু তুলতে যায়, রিমঝিমের থুতনিতে হাত রাখতে চায়, কিন্তু রিমঝিম হালকা ঘাড় নাড়ে।
“উহু! আগে উত্তর দাও।”
রুবায়েত এবার অসহায় বোধ করে, বউ তাকে পুরাই কাবু করে ফেলেছে। রিমঝিম এ চোখের দিকে তাকায়, “কি চাও তুমি? আমি ক্ষমা চাই? আচ্ছা, আমারও ভুল ছিল। আমিও তো তোমাকে বোঝার চেষ্টা করিনি।”
এই বলে ও উঠে বসে।রিমঝিমের দুই গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। রিমঝিম চোখ বন্ধ করে স্পর্শ টুকু অনুভব করে কিন্তু মুখের ভাব বদলায় না।
“ইয়ে… কোথায় যেন আঘাত করেছিলাম, ভুলে গেছি।” রুবায়েত বলে লজ্জিত কন্ঠে।
রিমঝিম উঠে দাঁড়ায়, “আঘাত করেছিলে আমার মনে, শরীরটা কি? শরীর কিছু না, মনের একটা অবলম্বন মাত্র। মনটাই সব।”
“এখন মনে কিভাবে আদর করবো?” অবাক হয় রুবায়েত, “মন কি স্পর্শ করা যায়?”
রুবায়েতের বোকা বোকা চেহারার দিকে তাকিয়ে রিমঝিমের খুব হাসি এসে যায় কিন্তু হাসে না। “অবশ্যই যায়, মন স্পর্শ করা যায় মন দিয়ে।”
_______________________
রুবায়েত চলে গেলে রিমঝিম একা হয়ে গেল। ডাইরিটা কোথায় যেতে পারে ভাবছিল, উঠানের দিকে নজর গেল, কি সুন্দর রোদের খেলা, পুকুরে ও রোদের ছায়া পড়েছে।হঠাৎ গানের শব্দ শুনতে পেল একতারার বাজনা। মনে মনে আউড়ালো বাউল গান!! মনে পড়ে গেল, সুনামগঞ্জ হচ্ছে বিখ্যাত বাউল সাধক হাছন রাজা ও রাধারমন দত্তের জন্মভূমি। এই জেলা বাউল সংগীতের জন্য বিখ্যাত। ট্রেনে করে আসার পথে শুনেছিল। শরীর মন চনমন করে উঠলো।
“এই মিনতি করি তোমায়
ছেড়ে যাইও না
আমি তো জানি রে বন্ধু
তুমি আপনা
আমি তোমায় ভালোবাসি
মন্দ বলে পাড়াপড়শি
বলে বলুক যার যা খুশি
আমি শুনবো না
ছাড়িয়া সকলের আশা
করেছি তোমার ভরসা
মিটাও আমার প্রেম-পিপাসা
নিরাশ করিও না….
গান গাইতে গাইতে দলটা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। রিমঝিম জানলায় দাঁড়িয়ে শুনতেই থাকলো।কি অপূর্ব লাগছে।
ময়না ধীর পায়ে উঠানে প্রবেশ করলো, ডাইরিটা যেন এখন গলার কাঁটা। কচি আর গিট্টু খুব খোঁজাখুঁজি করছে। মুখ বাঁকিয়ে ভাবল, সামান্য কয়টা বিস্কুট আর চকলেট এর জন্য ছেলে দুইটা গোলাম হয়ে গেছে রিমঝিম ভাবীর। চট করে ঘরে ঢুকে গেল, এদিক সেদিক তাকিয়ে ডায়েরিটা টেবিলের উপর রেখে দিল। রিমঝিম তখন তন্ময় হয়ে গান শুনছে, এই গান ময়না শরীরেও দোলা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সেই দুইটা লাইন, “আমি তোমায় ভালোবাসি মন্দ বলে পাড়াপড়শি বলে বলুক যার যা খুশি
আমি শুনবো না….”
“ময়না যে! কখন আসলে?” রিমঝিম পুকুরের পারে ময়নাকে দেখে শুধোয়।
“এই তো এক্ষুনি।” হাতে একটা রুমাল পেঁচাচ্ছে, মুখে কেমন হাসি। “ ভাবি পুকুরের পানি খুব সুন্দর না! সাঁতার পারেন?”
“ না” দৃষ্টি যায় ময়না রুমালের দিকে, বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠে। এই রুমালটা সম্ভবত রুবায়েতের, রিমঝিমি কিনে দিয়েছিল। আজকাল টিস্যুর যুগে রুমাল কে ব্যবহার করে? কিন্তু রিমঝিমের রুমাল জিনিসটা পছন্দ, ছেলেবেলা একটা বাংলা গান শুনে ছিল– –”রুমাল দিলে ঝগড়া হয়, চিঠি দিলে বন্ধু হয়।” ছেলেবেলায় কাউকে রুমাল দিলে বিনিময় এক টাকা অথবা দুই টাকা নিয়ে নিত। যেন ঝগড়া না হয়। এর রুমালটা রিমঝিম চিনতে পারছে কারণ রুমালে এক্রেলিক দিয়ে আর শব্দটা রিমঝিমি একে দিয়েছিল। খুব ছেলে মানুষের কাজ যদিও কিন্তু তবুও জোর করে রুবায়েতের পকেটে পুড়ে দিত।
ময়না রুমাল দোলাচ্ছে আর রিমঝিমের মুখের ভাব দেখছে একটা দুষ্টু হাসি, রুমালটা একদিন এখানে পড়েছিল, উঠানে। সেখান থেকে তুলে নিয়েছিলো।
“রুমালটা তুমি কোথায় পেলে?” আর না পেরে প্রশ্ন করে রিমঝিম।
“ইটা? ডাক্তার সাহেব ফেলে আসিছিলেন আমাদের বাসায়, এরপর আমি দিতে চাইলাম উনি নিলেন না।”
“উনি তোমাদের বাসায় অনেক যান বুঝি?”
“আগে যেতেন, আপনি আসার পর কম যান।”
রিমঝিম দেখে ময়নাকে চুলে একটা মিষ্টি ঘ্রান পাচ্ছে…” চুলে কি তেল দাও।” কথা খুঁজে পাচ্ছে না, মেয়েটাকে অসহ্য লাগছে।
“ই তেল আমার মা কি কি দিয়ে জানি বানায়, আপনাকে দিব নে।”
এরপর আর কথা খুঁজে পায় না রিমঝিম। বুকের মধ্যে কিছু একটা খচ খচ করতে থাকে। মাথাটাও ঝিমঝিম করে, অনেক রকম চিন্তা আসে। আস্তে করে ওখান থেকে ঘরে চলে যায়। ওমা ডাইরিটা দেখে হৃদপিন্ডে একটা ধাক্কা খায়। এখানে কিভাবে? খুশি হয়ে তুলে নেয়….।
আরেকটা আছে যেটা শুরু করবে আজ। সেটা সুনামগঞ্জ আসার পরের ডায়েরি সেখানে কি ময়নার কথা আছে?
______________________
আজ বৃষ্টির নাম নাই। চেয়ারম্যান বাড়ির উঠানে বড়শি আকৃতির পাটের খাট পাতা। পাশে দুইতলা দালানের ছায়া পড়তেছে। আমগাছের পাতা টুপটাপ পড়ছে। মজিদ বেপারী খাটে আধশোয়া, একহাতে হুক্কার পাইপ ধরা, ধোঁয়া টানছে গম্ভীর মুখে। যদু নীচে বসা, চোখেমুখে চাটুকারিতা। পাশে দাঁড়ানো হাসমত হাত কচলাচ্ছে, পেট চুলকাচ্ছে, মুখে কেমন একটা অস্বস্তি মাখা হাসি।
“তা কাম হইলো রে?!”
মজিদ ব্যাপারী এক টান দিয়ে হুক্কার গর্জন তুলল, ধোঁয়া ছাড়লো, চোখ বন্ধ, কপালে কয়েক ভাঁজ।
হাসমত মাথা নিচু করে, মুখে কেমন যেন বোকা বোকা হাসি এখন,
“হইব হুজুর, রগ যহন ধরেছে…”
“এখনো হইব মানে কি রে?”
ধোঁয়ার ফাঁক দিয়া হাসমতের দিকে তাকায় মজিদ ব্যাপারী, ঠোঁট খিঁচে উঠে একটু।
“না অই হুজুর, ময়না হুনে হুনে রাজি অইতেছে না, বউটা চেষ্টা কইরা যাচ্চে।”
আবারো হাসে হাসমত।
“ও মা*গি! এত সুন্দরী হইয়া ব্যাটাডারে বাগে আনতি পারে না?”
মজিদ এবার হুক্কার পাইপ এক পাশে রাখে, হাঁ করে হাই তোলে, মুখ ঘুরিয়ে থুতু ফেলে যদুর ধরা চিমনিতে।
“পারম হুজুর, পারম। আপনে টেনশন নাইন।”
হাসমতের কণ্ঠে ভরসা আছে, কিন্তু চোখ ভীত।
“বুকডা জ্বলতেছে রে ভাই!”
মজিদ চোখ গোল করে ঠোঁট চাটে। এর পর ক্রুর হাসে,
“আচ্ছা শোন।” ঠোঁট চাটে “ঐ পাড়ার সালামের বউ… জব্বর মাল! একবার যদি প্যাঁচাইতে পারস, সালামরে কইরা ফালাইবি।”
একটা বাঁকা হাসি খেলে যায় তার মুখে।
“খুব পারমু হুজুর, মুরগির খামারডা তো ওর, কাম হইয়া যাইব।”
হাসমতের চোখ চকচক করে ওঠে, যেন কিছু ভাবছে রসালো।
এই দিকে আম গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যানের তৃতীয় বউ চুপচাপ যাচ্ছিলো মুখ ঢাকা কাপড়ে। কানে স্পষ্ট শুনে ডাক্তার আর ময়নার নাম। মুখ শক্ত, থেমে দাঁড়ায় এক মুহূর্ত।
মনে মনে বলে—
“কি লোকের ঘরে আইছি রে আল্লা! গা খাইতাছে। এই ডাক্তার কত উপকার করছে এই বাড়ির, আর এই খচ্চর? মেয়ের বয়সী মাইয়াডারে ভোগ করতে না পেরে এখনো ভিতরে ভিতরে পুইরা মরতেছে।” উঠানে থুতু ফেলে।
আকাশটা যেন বড় আপন, বড় নীল। হাওরের পাড়ে বসে কেউ যদি চুপচাপ তাকিয়ে থাকে, তার বুক ভরে যায় অচেনা ভালোবাসায়। দূরে পানিতে ছায়া পড়ে আছে মেঘের, বাতাসে ধানের গন্ধ, আর পাকা ধানের ঝমঝম শব্দ।
ময়না আজ সেই হাওরের বাতাস গায়ে মেখে বসে আছে ঘরের পুরানো কাঠের দরজার ঠেস দিয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো,
“আমার এত কপাল খারাপ ক্যান রে আল্লাহ?” নিজেই নিজের সাথে কথা বলে।
তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে, হঠাৎ হালকা গলায় গাইতে শুরু করল,
“প্রেমে পড়িয়া বাউল হইলাম,
তোর লাগি বনে বনে ঘুরি,
তুই না এলে মনরে কেমনে বুঝাই,
তোরে ছাড়া কিছুতে না জুড়ি…”
তার কণ্ঠে তেমন সূর নেই, আছে বিষন্নতা। তার গলার বাউল গান যেন হাওরের বাতাসে মিশে একেকটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় আকাশের দিকে।
তরু চাচী ওকে ধরে ফেলছে, কথায় কথায় উপদেশ দেয়। — “তুই এ কাজ করবিনে? হ খালি বইসা থাকবি? সাধু হইছো?”
ময়না ভাবে, চাচীর উপদেশে লাভ নাই। যেই সব বুদ্ধি দেয়, ওর দ্বারা হয় না। কিছুতেই না।
নিজেই যা করার, নিজেই করবে।
হাতের আয়নাটা তুলে তাকায় নিজের চোখে, ঠোঁটের কোণে একটুকরো কঠিন হাসি।
“আজ রাইত ডাক্তার এই ঘরে আসবেই।”
ঠিক সেই সময় বাবার গলা ভেসে এল, “ময়নার মা, ভাত দাও!”
বাবার গলা শুনে ময়না ছুটে গেল রান্নাঘরের দিকে।
“মা তো নাই, আমি দিতেছি।”
বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটু থমকে গেলেন। কষ্ট চাপা দিলেন দীর্ঘশ্বাসে।
“শোন, একটা প্রস্তাব আইছে। কাল কথা কইতে যামু।”
“ক্যামন প্রস্তাব?” নিরাসক্ত কন্ঠ ময়নার।
“ছেলে ভালা, কিন্তু বয়স একটু বেসি। দুইডা পোলাও আছে। তয় কি হইছে? তোরে তো পার করতে হইব। আয়নাও তো আছে ঘরে…”
ময়না থমকে গেল। ভাতের থালাটা ধরে চোখ নামিয়ে রাখল। চোখে পানি
“বাপ, তুমি আমারে এত কম জানো? আমি কি গরু, যে যারে পছন্দ সে নিবে, আমি চুপ কইরা থাকমু? ও বার মরি নাই ই বার মরমু।”
“তোরে বুঝাইতে পারি না ময়না। এই সমাজে মাইয়া মানুষরে অনেক কিছু মানতে হয়।”
ময়না কিছু না বলে আবার দরজার ধারে গিয়ে বসে। একটুখানি গুনগুন করে গায়, যেন হাওরের বাতাসে উড়িয়ে দেয়,
“আমি মানুষে ঘর করি, মানুষে ঘর করি না রে…
মানুষের মত যদি না হই, মানুষরে ধরে কি করিম রে…”
______________
রিমঝিম দুপুরে খেয়ে, রুবায়েতের আরেকটা ডায়েরি খুলে বসলো,মুখের ভাব ছিল প্রফুল্ল, যেন মনের মধ্যে এক ধরনের শান্তির প্রশান্তি। উঠানে কবুতরের দল দানা খাচ্ছে, রিমঝিম ই দানা ছিটিয়েছে খানিক আগে। দূর থেকে মৃদু একটা বাতাস এসে লাগছিল, যেন তার সমস্ত দুঃখ, সমস্ত কষ্ট যেন মুছে যাচ্ছিল। আজ সবুজ শাড়ি পরেছে, যেন আশেপাশের সবুজের একটা অংশ রিমঝিম। পুরোপুরি প্রকৃতির মধ্যে হারিয়েই গেল যেন হয়ে।
সকালের রুবায়েতের সেই বোকা বোকা চেহারা মনে করে, মন থেকে ভেসে আসলো লতা মঙ্গেশকরের একটি গান—
“পুড়েছে হৃদয়, ভালোবাসার আগুনে,
তুমি যদি কাছে থাকো, মনে হয় সুখী আমি,
জানো তুমি, আমার জীবনে তুমি…
চুপি চুপি তোমাকে ভালোবাসি আমি…”
এরপর ডায়েরি খুলে বসলো–
৮.৬.২০২৫
সুনামগঞ্জের এই গ্রামটা খুব সুন্দর, খুব ভোরে মেঘালয় পাহাড় দেখা যায়। আর অন্যান্য পাহাড় টিলা তো আছেই। আছে হাওড়, পুকুর জলাশয়। মনে এত অশান্তি না থাকলে খুব উপভোগ করতাম। এখানে এসে উপলব্ধি করলাম ভালো খাবারের মত, সুন্দর দৃশ্য ও একা উপভোগ করা যায় না, প্রিয় মানুষ ছাড়া। প্রিয় মানুষ, হ্যাঁ সে আমার ভীষণ প্রিয়। অথচ আমাকে এক কলমের আঁচড়ে পর করতে সে দ্বিধা করেনি আচ্ছা রিমঝিম কি আবার বিয়ে করবে? আমি কি করব? ন্যাড়া আর বেল তলায় যাবে না। আচ্ছা কখনো যদি রাস্তায় দেখি রিমঝিম কারো হাত ধরে খিলখিল হাসছে! উফ! ভাবতেই পারছি না। এখন ঘুমাই….ঘুম ও আসে না। পাশে রিমঝিম নেই, অভ্যাস কি ভীষণ জিনিস।
রিমঝিম কুন্ঠিত হল, রুবায়েত রিমঝিমকে কি মনে করে হ্যাঁ, দ্বিতীয় পুরুষ এত সহজ জিনিস। বিষয়টা মনে হলেই তো কেমন লাগে। নিজের ভালোবাসা নিয়ে এর গর্বের শেষ নাই,কখনো কি চেষ্টা করেছে বুঝার রিমঝিমের ভালোবাসা। ডায়েরির ফাঁকা অংশে লিখলো,
“রিমঝিমের জীবনে একজন পুরুষদের অস্তিত্ব আছে যার বিচরণ রিমঝিমের রুহ থেকে কায়া অব্দি। রিমঝিম অন্য কাউকে ভালোবাসবে বিয়ে করবে এ ভাবনা ভাবার দু:সাহস কে রিমঝিম ঘৃনা করে। আই হেট ইউ।”
পাতা উল্টালো,
১০.৬.২০২৫
আজ গ্রামে প্রথম ডাক্তারি করলাম। ময়না নামের অল্প বয়স্ক একটা মেয়ে হাতের রগ কেটে ফেলেছিল,স্বামী পরিত্যাক্তা। যাইহোক অল্প কেটেছিলো, বেশি গভীর করে কাটতে পারে নাই। আমি যে ডাক্তার সবাই বুঝে গেল এখন। মন্দ না পেশা, নেশা আর সেবা সব এখন এটাই। এরজন্য সব হারালাম।
একটা ডিভোর্স অনেক কঠিন। কিন্তু কারো জন্য অনেক সহজ। আমার ইদানীং মনে হয় রিমঝিমের মুখোমুখি দাঁড়াই, জিজ্ঞেস করি কেন এরকম করলো? ও কি জানে কি করেছে ও। আর এদিকে আমি সব জায়গায় ওকে অনুভব করি। এই যে এখন লিখছি আর অনুভূত হচ্ছে ও রান্নাঘরে গান করছে আর চা বানাচ্ছে। সত্যি! আর কি গানটা হচ্ছে, “ আমি চিরতরে দূরে চলে যাব…তবু আমারে দিব না ভূলিতে।” আমি জানি না কেন এমন হচ্ছে।প্রতিদিন মনে হয় ফোন দেই, ছুটে চলে যাই। কিন্তু না…আমার দাম যেখানে নেই সেখানে গিয়ে কি হবে?
রিমঝিম এক পাশে লিখলো, “ গেলে না কেন আমাকে আনতে রুবায়েত?এত কিসের অহংকার তোমার? আমি তো তৈরি ছিলাম তুমি যাবে। আমার সেই বিশ্বাস ভেঙে খুব অভিমান আর তেজ দেখিয়ে চলে এসেছো এখানে হুহ!আমিও সব জায়গায় তোমাকে অনুভব করেছি। জানো, সব জায়গায় তোমার অল্প হাসি, পারফিউমের ঘ্রান আর কন্ঠ আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখতো। তুমি বুঝতে চাওনি কখনো আমি কি চাই, কি ভাবি? আমার মনটা বড্ড তৃষ্ণার্ত, একটু ভালোবাসার বারি বর্ষন করবে কি?”
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, রিমঝিম মাগরিবের নামাজ পড়ে, উৎসুক হয়ে রুবায়েতের অপেক্ষা করছে। ডায়েরির চারটা লাইন মুখে হাসি এনে দিচ্ছে,
“তুমি নেই কিন্তু তোমার পদধ্বনি শুনতে পাই,
যেন তুমি কোন অশরীরী আত্মা।
তুমি নেই তোমার অধর দুইটা ছুঁয়ে যায় আমাকে
যেন আমার অধরে এক জনমের পিপাসা।”
আহারে ব্যাটা মানুষ এদের জন্য নারীর উপস্থিতি মানেই শারিরীক কিছু, স্পর্শ। হঠাৎ দেখলো কচি উর্ধশ্বাসে দৌড়ে আসছে,
“ভাবী ডাক্তার পাহাড় থেইকা পইড়া গেইছে।”
রিমঝিম কচির সাথে ছুটে এসেছে।রাস্তা মোটামুটি অনেকদূর,এখন একটা ভ্যানে চেপে বসেছে৷ চারিদিক এত্ত সুন্দর, গোধূলির রঙ আকাশে। কিন্তু কিছুই রুমঝিমকে আকর্ষণ করতে পারে না। নেমে খেয়াল হয়, টাকা তো আনে নাই।
এদিকে ভ্যান চালক জব্বার মিয়া টাকার কথা শুনেই জিভ কাটলো। “কিতা কইছেন! আপনের টাকা লইলে পাপ হইব।”
রিমঝিম আর কথা বাড়ায় না, রুবায়েত কই? আত্মা কাঁপছিলো। জায়গাটা এত্ত সুন্দর আলো এখনো মিলিয়ে যায় নি, এক পাশে বিল, আরেকপাশে একটা পাহাড় মতো বেশি উঁচু না। রিমঝিম আঁঁচলে মুখে চেপে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে, টেনশনে গলা শুকিয়ে কাঠ।
“এই যে ম্যাডাম আমাকে খুঁজছেন।” রুবায়েতের গলা ঠিক ঘাড়ের কাছে।
রিমঝিম ফিরে তাকায়, “ তু..তুমি ঠিক আছো?” গলা কাঁপছিলো, তারপর নজর কঠিন হল, “ মিথ্যে বলে আমাকে এখানে এনেছো? আমি এদিকে চিন্তায়…!”
“কই আবেগে জড়িয়ে নিবা…আর এগুলো পুরান কথা, তুমি আর তোমার টেনশন। এখন আমার হাত ধর তো আজ তোমার মন স্পর্শ করবো।” রুবায়েতের হাসি হাসি কন্ঠ।
“ঘোড়ার ডিম করবা। কচিকেও মিথ্যে শিখিয়েছো,,নির্লজ্জ ব্যাটা।” রেগেই আছে রিমঝিম, তবে মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ বলেছে।
“মন আর ঘোড়ার ডিম দুইটাই একই জিনিস, অস্তিত্ব নাই। এখন চল, যত বকাবকি করার রাতে করবা।”
পাহাড়ে তাও শাড়ি পড়ে, রিমঝিম ভয়ে ভয়ে উঠতে লাগলো, রুবায়েত সাহায্য করছে। পেছনে কচি ও আছে। ছোট পাহাড় উঠে গেল। কচি আবার নেমে গেল।
“এবার চোখ বন্ধ কর!” রহস্য করে বলে রুবায়েত।
“ধাক্কা দিবে নাকি!” চোখ সরু করে রিমঝিম।
“দিতেও পারি, না ও পারি।” মুখে হাসি।
সেদিকে তাকিয়ে, রিমঝিম চোখ বন্ধ করলো, “আমি আমার ভরসা তোমাকে দিলাম।”
খানিক বাদে, রুবায়েত রিমঝিমেকে পেছন থেকে জড়িয়ে, গালে গাল ঠেকিয়ে বললো, “চোখ খুলো।”
চোখ খুলে রিমঝিম আকাশের দিকে তাকিয়ে অবাক আকাশে কতগুলো ফানুশ! দুই হাতে মুখ চেপে ধরলো। “সুবহানাল্লাহ!” বিল, পাহাড় গাছ, আর জমে থাকা অন্ধকারে পুরো বিষয়টা ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল। “ রুবায়েত!! এগুলো কি?” কন্ঠে উচ্ছ্বাস।
রুবায়েতও হাসছে, “নাও তুমিও দুইটা উড়াও আজ এগুলোর সন্ধানে সারাদিন গেল। তবুও আল্লাহ জানে কারো মনের নাগাল পাই কিনা!” আড় চোখে তাকালো রিমঝিমের দিকে। “জানো লোকালয়ে ফানুশ বিপদজনক। তাই ঢাকায় তোমার বায়না শুনি নাই।”
রিমঝিমের খুব মনে আছে, ও একবার খুব আবদার করেছিলো, “ তোমার মনে আছে?” ভেজা কন্ঠ রিমঝিমের।
রুবায়েত কিছু বলে না, মুগ্ধ হয়ে রিমঝিমের উচ্ছ্বাস উপভোগ করে। অনেকের ধারনা পুরুষ শুধু স্পর্শ খুঁজে কথাটা সঠিক কিন্তু কখনো প্রিয় মানুষের উচ্ছাস ও তাকে তৃপ্ত করে। “ চল যাই, কাল ভোরে মিশন নাম্বার দুই।” রিমঝিমের হাত ধরলো
“সেটা কি?” অবাক রিমঝিম, “ আর কিসের মিশন এগুলো।”
“কাল কি সেটা হল, সিক্রেট। আর মিশন ঘোড়ার ডিম সরি তোমার মন স্পর্শ করার।” মুচকি হাসলো রুবায়েত। তারপর, “কচি” হাঁক লাগালো, -”ভাই টর্চ নিয়ে আসো একটু।”
রুবায়েতের হাত ধরে রিমঝিমের মনে হল এই লোকটা ওর আত্মা পর্যন্ত স্পর্শ করে ফেলেছে। ভুল ভেবেছিল ও, প্রিয় মানুষের স্পর্শের আকাঙ্খা নারীর ও হয়, যখন তার মন সন্তুষ্ট থাকে। এই যেমন এখন মন চাচ্ছে রুবায়েতের আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে। কি অবাধ্য, অসহ্য অনুভূতি কিন্তু পুরুষদের মত মুখে প্রকাশের নয়। অস্থির হয়ে হাতের চাপ বাড়ালো।
রুবায়েত ফিরে তাকালো, “ কি?”
রিমঝিম শুধু নি:শ্বাস ফেললো, “ কিছু না।”
“কিছু না কেন? কিছু তো একটা আশা করলাম।”
রিমঝিম অন্ধকারে চোখ রাঙালো।
তক্ষুনি আলো নিয়ে হাজির কচি। সেই আলোতে রিমঝিমকে অপূর্ব লাগছিলো।
নীচে নেমে হাঁটতে হাঁটতে রুবায়েত বির বির করলো……
“তোমার উপস্থিতি আমায় পোড়ায়
তুমি ক্ষত বিক্ষত কর আমায়,
তবুও বেহায়া এ মন
তোমায় দেখে হৃদয় জুড়ায়।”
রিমঝিম স্বভাব মত খিলখিল করে হেসে ফেললো, “কবি হলে কবে?”
“তোমার বিরহে আর দূরত্বে।” রুবায়েত ও হাসছে, “কিছুই হয় না যদিও।”
“শুনেন জনাব,আমিই পোড়াব আবার আমিই মলম লাগাবো। আমিই ভালোবাসার রিমঝিম বৃষ্টি হয়ে ঝরব তোমার ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ে।”
রুবায়েত হাত ধরে বললো, “ দ্রুত হাঁটো, আমার এখন আমার নিজস্ব রিমঝিম বৃষ্টিতে ভেজা খুব প্রয়োজন।”
রিমঝিম মনে মনে, “ আমারও তোমার ভালোবাসার।”
#রিমঝিম_বৃষ্টি
#কাজী_জেবুন্নেসা
চলছে…..