রেড রোজ পর্ব-০১

0
20

#রেড_রোজ
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

“আমি এখনও ভা’র্জিন আছি চাইলে চেক করতে পারো,কাম অন।”

ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর এহেন কথায় ছি’টকে দূরে সরে গেলো অষ্টাদশী কন্যা উৎসা।ওষ্ঠাদয় তীর তীর করে কাঁপছে তার,একটা মানুষ কী করে এত খারাপ হতে পারে তা জানা ছিলো না এই ছোট্ট মেয়ের।
ঐশ্বর্য উৎসা কে চুপ থাকতে দেখে ফের বললো।
“কী হলো সুইটহার্ট কাম অন,চেক করে দেখো তো একবার!”

উৎসার চোখ দুটো ইতিমধ্যেই অশ্রু কণায় ভরে উঠেছে, ঐশ্বর্যের থেকে দু হাত দূরে সরে গিয়ে মিনমিনে গলায় বলল।
“আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না ভাইয়া। আমি কিন্তু আপনার বোন!”

ঐশ্বর্য মূহুর্তে নিজের মুখশ্রী বদলে নেয়। চক্ষুদয় জ্ব’ল’জ্ব’ল করে উঠলো তার, কিয়ৎক্ষণ পূর্বের রাগ মূহুর্তে যেনো মাথা নাড়া দেয়। শক্ত হাতে সপাটে থা’প্প’ড় বসালো উৎসার নরম গালে।উৎসা ফ্লোরে পড়ে যায়, ঐশ্বর্য ফের উৎসা কে টেনে দাঁড় করিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“লিসেন মিস উৎসা না তোর বাপের সাথে আমার মায়ের কিছু ছিলো!আর না আমার বাপের সাথে তোর মায়ের কিছু ছিলো।সো ডোন্ট কল মি ভাইয়া, আমি তোর ভাই নই ইজেন্ট ইট ক্লিয়ার?”

উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“কী বলছেন আপনি এসব? আপনার বাবা আমার মায়ের খালাতো ভাই হয় তো! আপনি কী করে এত খারাপ ই’ঙ্গি’ত করছেন?যদি ওরা ভাই বোন হয় তাহলে তো সেই হিসেবে আপনি আমারো ভাই…

“জাস্ট শাট আপ বা’স্টার্ড।তুই আমার বোন টোন কিছুই না, আমার এসব বোন লাগে না,নাউ গেট লস্ট।”

ঐশ্বর্য কথাটা বলেই উৎসা কে ধাক্কা দিয়ে ড্রয়িং রুম থেকে মেইন ডোর দিয়ে বাইরে বের করে দিলো।
তুষারপাত হচ্ছে, ঠান্ডায় জমে যাওয়া উপক্রম হয়েছে উৎসার।সময়টা বছরের শেষ দিকে, বার্লিন শহরে আসার পর থেকেই উৎসা কে এই ঠান্ডার সাথে প্রতি নিয়ত লড়তে হচ্ছে। বছরের শেষ ডিসেম্বরের দিকে তাই ঠান্ডাটা বেশ জেঁ’কে বসেছে।
দরজায় বার কয়েক নক করা সত্বেও কেউ দরজা খুলল না। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো উৎসা।আপাতত রাস্তা পুরো তুষারের কারণে ডাকা পড়েছে, কোথায় যাবে কিছু বুঝতে পারছে না উৎসা।
নিজেই দু’হাতে ঘষে উষ্ণতা খুঁজছে,পরণের শুভ্র রঙা ওড়না ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নিয়েছে সে।
হায় রে ভাগ্য তার! নিজের ভাগ্যের কথা ভেবে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো উৎসা।

“স্যার বাইরে তুষারপাত হচ্ছে আপনি যদি এখন ম্যাম কে এভাবে বাইরে রাখেন তাহলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে!”

“উফ্ শাট আপ মিস মুনা, প্লিজ আপনি গিয়ে নিজের কাজ করুন।”

মিস মুনা একজন কেয়ারটেকার,বহু বছর ধরেই এই দেশে তার বসবাস। ঐশ্বর্যের মা মিসেস মনিকা থাকা কালীন থেকে মিস মুনা কাজ করছেন।
হতাশ হয়ে মলিন মুখে জায়গা ত্যাগ করলেন মিস মুনা।
অতীত
বাংলাদেশের সিলেট শহরে বেশ বড়সড় বাড়ি পাটোয়ারী মঞ্জিল। মিস্টার আহমেদ পাটোয়ারী মা’রা গিয়েছে অনেক বছর।আপাতত বাড়িটা মিসেস সাবিনা পাটোয়ারীর নামেই আছে।
বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে উৎসা আচমকা মুখের উপর বালতি ভরা পানি পড়তেই হকচকিয়ে গেল উৎসা।
“তুই কী কোনো মহারানী?”

আফসানা পাটোয়ারী সকাল সকাল এসেই উৎসা কে কথা শোনানো শুরু করেছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো উৎসা, আফসানা পাটোয়ারী উৎসার বড় মামী,তিনি উঠতে বসতে উৎসা এবং ওর মা সাবিনা পাটোয়ারী কে ক’টু কথা বলেন।

“স্যরি বড় মামী উঠতে লেইট হয়ে গেছে!”

আফসানা পাটোয়ারী দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
“আরে তুই স্যরি বলবি কেন?স্যরি তো আমাদের বলা উচিত, তোদের মা মেয়ের এত ঢং স’হ্য করছি।”

উৎসা নিশ্চুপ, বলার মতো ভাষা নেই তার। বাড়িটা তাদের হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোনো অধিকার নেই।মা নামক মানুষটি প্রায় তিন বছর ধরে প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। ওনার চিকিৎসার টাকা পর্যন্ত আফসানা পাটোয়ারীর থেকে চেয়ে নিতে হয়।
“এখন কী বসে থাকবি না কাজ করবি?”

আফসানার কথা শুনে দ্রুত পায়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো উৎসা।সাড়ে ছয়টা বাজে নয়টার দিকে কলেজে যেতে হবে,তার পূর্বে সব কাজ শেষ করতে হবে তাকে।
আফসানা পাটোয়ারী হু’কু’ম দিয়ে ফের ঘুমাতে চলে গেলেন।
উৎসা দ্রুত বাড়ির কাজ গুলো করতে লাগলো, বাড়িতে কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও তাকে দিয়েই এত কাজ করানো হয়।
সকালের ব্রেকফাস্ট টেবিলে সাজিয়ে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে নেয়।
“উৎসা উৎসা,,, আমি বেড টি কোথায়?”

নিকির চেঁচামেচি শুনে উৎসা চায়ের ট্রে আর সাথে কুকিজ নিয়ে নিকির রুমের দিকে রওনা দেয়।
নিকি আফসানা পাটোয়ারীর ছোট মেয়ে,আর রুদ্র ওনার বড় ছেলে।
“আপু এই যে তোমার চা।”

নিকি অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে গেছে কখন!উৎসা কে দেখে ওর হাত থেকে ট্রে নিয়ে বেড সাইড টেবিলে রাখলো।
“আয় আয় তাড়াতাড়ি খেয়ে নে এরপর আমি তোকে কলেজে ড্রপ করে দেবো।

“কিন্তু আপু এগুলো তো তোমার জন্য।”

“উফ্ এত কথা বলিস না।”

নিকি উৎসা কে টেনে বিছানায় বসিয়ে চা আর আর বিস্কুট হাতে ধরিয়ে দিলো।
“তাড়াতাড়ি খেয়ে নে,দেখ একদম জ্ঞান দিবি না।দেখ তোকে তাড়াতাড়ি পড়তে হবে,তার পর অফিসের দায়িত্ব নিতে হবে!”

উৎসা সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল।
“আপু আমি এসব অফিসের দায়িত্ব নিতে চাই না, আপাতত আমি পড়ালেখা শেষ করে জার্মানি যেতে চাই। আমাকে মিহি আপু কে খুঁজতে হবে।”

নিকি মৃদু হাসলো।
“ইয়েস পারবি তো,কিছু দিন আগেই না স্কলার্শিপের জন্য এক্সাম দিলি? ওইটার কী খবর?”

“ওটার রেজাল্ট কাল দেবে,আই হোপ যাতে স্কালার্শিপ টা যেনো পেয়ে যাই।”

“গ্রেট।”
_______________
জগিং শেষে ঘেমে একাকার হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।পরণে তার নেভি ব্লু জগিং গ্রেট আপ,হাতে ওয়াটার বোটাল।এক হাতে ড্রাইভিং করছে অন্য হাতে মুখের উপর ওয়াটার বোটাল ধরে নিজেকে ভিজিয়ে নিচ্ছে ঐশ্বর্য।

“রিক এক্সিডেন্ট হবে ব্রো।”

বেশ ব্যস্ত কন্ঠে আওড়ালো কেয়া,ওর কথায় সহমত প্রকাশ করে জিসান।
“তুই সর রিক আমি ড্রাইভ করছি।”

ঐশ্বর্য শুনলো কী না তা জানা নেই,তবে গাড়ির স্পিড বেড়েছে দ্রুত গতিতে।
কেয়া আর জিসান বেশ ভয় পাচ্ছে,এই রিকের কোনো ভরসা নেই।দেখা গেলো তাদের মে’রে নিজে পা’লিয়ে গেছে।কেয়া বেশ চিৎকার করে উঠল।
“রিক স্টপ ইট,রিক!”

রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে গাছগুলো কে পিছনে ফেলে মার্সিডিজ কার নিয়ে ছুটে চলেছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। অতঃপর কেয়া আর জিসানের চেঁচামেচি শুনে গাড়ি থামালো।গাড়ি থামার সাথে সাথে কেয়া নেমে গেলো।

ঐশ্বর্য আর জিসান নামলো।কেয়া ঐশ্বর্যের উপর রাগ দেখিয়ে বলে।
“হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস রিক?

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো, কেয়ার অবস্থা দেখে বলে।
“জাস্ট চিল মাই ডিয়ার।”

জিসান ঐশ্বর্যের বাহুতে ঘু’ষি মে’রে বলে।
“ব্লা”ডি তোর জন্য আমার হবু বাচ্চাদের বংশ এখুনি নি’র্বংশ হয়ে যেতো!”

ঐশ্বর্য তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে জিসানের দিকে।
“তোদের কী মনে হয় এই রিক থাকতে তোদের কিছু হতো?”

কেয়া বুকে হাত গুজে বলে।
“অবশ্যই আমার অ্যাটলিস্ট মনে হয় তুই থাকতে আমার ম’রবো না?”

ঐশ্বর্য কিছুই বললো না, কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলে।
“লেটস্ গো।”

জিসান উদগ্রীব হয়ে শুধায়।
“কোথায় যাবি?”

ঐশ্বর্য গাড়িতে বসতে বসতে বলে।
“ক্লাবে,নিড অ্যা ফিজিক্যাল পি’স।”

জিসান একবার কেয়ার দিকে তাকালো, কেয়া নাক মুখ কুঁচকে নেয়। জিসান ঐশ্বর্যের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
“শেইমলেস একটা।”

ঐশ্বর্য গায়ে মাখলো না।ফের ড্রাইভ করতে লাগলো।
জার্মানির বার্লিন শহরের বিশাল আলিশান বাড়িতে থাকে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী, কেয়া এবং জিসান ঐশ্বর্যের বেস্ট ফ্রেন্ড।ছোট থেকেই এক সাথে আছে তিন জন,কেয়া চাইল্ডহোমে বড় হয়েছে,আর জিসান ঐশ্বর্যের সাথেই বড় হয়েছে।
ঐশ্বর্য গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির এক মাত্র মালিক ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী। আপাতত কোম্পানির শেয়ারে আছে তার আঙ্কেল মিস্টার রাজেশ চৌধুরী।
ঐশ্বর্য শৌখিন একজন মানুষ, ট্রাভেলিং অ্যাডভেঞ্চার গেম কার রেসিং,সব কিছুই করতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে তাকে গিটার হাতে সিংগিং করতেও দেখা যায়।এক জায়গায় থেকে অভ্যস্ত নয় ঐশ্বর্য,আজ এই দেশে তো কাল ওই দেশে,আর ওর সঙ্গী হয় কেয়া এবং জিসান।
ঐশ্বর্য একটা কথাটা কে ভীষণ ভাবে মানে,লাইফ ইজ বিউটিফুল সো জাস্ট এ’নজয় করতে হবে।
ফ্রেন্ডদের সাথে যেমন ঐশ্বর্য ফ্রি ঠিক অন্যদের বেলায় ততটা গম্ভীর এবং অ’স’ভ্য।এই অসভ্য লোকটা কে সভ্য করতে আদেও কী কেউ আসবে?

চলবে…………..।✨