#রেড_রোজ
পার্ট [০২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(ক’ঠোর ভাবে প্রা’প্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মু’ক্ত)
(ট’ক্সি’ক লাভার যারা পছন্দ করেন না এড়িয়ে যাবেন।)
“লিসেন বেইব আমি খুব একটা ভালো ভাবে আচরণ করব না! আমি যা করব ভ্যারি হার্ড।সো বি কেয়ারফুল!”
নাইট ক্লাব থেকে একটি বাংলাদেশী মেয়ে কে নিয়ে হোটেলে ঢুকেছে ঐশ্বর্য।এটা নতুন কিছু নয়,রোজই এমন,হয়। ঐশ্বর্য বরাবরই মেয়েদের টিস্যুর মতো ইউজ করে।আজকেও তাই, কিন্তু ঐশ্বর্যের আচরণের জন্য তার কাছে কোনো মেয়েই আসতে চায় না।
কলিং বেল বেজে উঠতেই মিস মুনা গিয়ে গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিলেন। জিসান দাঁড়িয়ে আছে।
“গুড মর্নিং মিস মুনা।”
মিস মুনা সৌজন্য মূলক হাসলো।
“গুড মর্নিং স্যার, প্লিজ আসুন।বড় স্যার নিজের রুমে আছেন।”
জিসান ত্বরিতে প্রবেশ করলো ভেতরে, গায়ের জ্যাকেট খুলে কাউচের উপর রেখে ছুট লাগালো ঐশ্বর্যের রুমে।
“রিক,,স্টুপিড কোথায় তুই?”
সবে মাত্র ঘুম লেগেছিল ঐশ্বর্যের এর মধ্যে জিসানের কন্ঠস্বর শুনে ডোর খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো জিসান।
“কী রে প্যাঁ’চা! সকাল সকাল আমার আরামের ঘুম হারাম করতে ষাঁ’ড়ের মত চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?”
জিসান বিরক্ত হলো,আপাতত ঝগড়া করা যাবে না।এই ঘাড় ত্যা’রা কে বোঝাতে হবে।
“লিসেন রিক তুই জানিস কাল রাতে যে মেয়েটার সাথে ছিলি সে এখন হসপিটালে ভর্তি আছে?”
ঐশ্বর্য ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।
“ওহ্ রিয়েলি!”
ঐশ্বর্য আশ্চর্য হওয়ার ভা’ন ধরে, জিসানের রাগ হলো।
“ব্লা’ডি তোর কী রোজ রোজ মেয়ে লাগে?”
ঐশ্বর্য ওয়াটার বোটাল ফ্রিজে রেখে জিসানের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো।
“আয় তোর সাথে করি?”
জিসান ঐশ্বর্যের কথা শুনে ছি’টকে দূরে সরে গেল।
“ইয়াক ইয়াক, আমি কী ইয়ে নাকি যে তুই আমার সাথে করবি?”
ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো। জিসান ফের শুধায়।
“ব্রো তোর এত ফিজিক্যাল নি’ড কিসের?”
“রং,নট ফিজিক্যাল নিড! ইটস্ সে’ক্সু’য়াল নিড।”
জিসান হতাশ,গালে হাত দিয়ে ডিভানের উপর গিয়ে বসলো। ঐশ্বর্য গিয়ে ওর পাশে বসলো।
“কী?”
“আমি আমার হবু ভাবী নিয়ে ভ্যারি টেনশনে আছি।”
ঐশ্বর্য দুষ্টু হাসলো।
“এখন একবার ভাবী আসলে অনেক বার।”
“শেইমলেস একটা।”
“ওকে টপিক চেঞ্জ কর, এখন বল কেয়া কোথায়?”
জিসান নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“আর কোথায়?দেখ গিয়ে কার সাথে ফ্লার্ট করছে!শেইমলেস ওয়ে ম্যান এন্ড শেইম লেস ম্যান।”
ঐশ্বর্য বিদ্রুপ করে বলে।
“উপ্স মাই শুদ্ধ পুরুষ,তৎপুরুষ সবই তুই। আমার শেইমলেস ঠিকই আছি।”
জিসান কিছু বললো না আর, ঐশ্বর্য ফ্রেশ হয়ে বের হয় ওয়াশরুম থেকে তৎক্ষণাৎ জিসান ভেতরে ঢুকে। ঐশ্বর্য ল্যাপটপ নিয়ে বসলো,সাথে কানে হেডফোন।নু’ড দেখছে সে, তৎক্ষণাৎ জিসান হাক ছাড়লো।
“রিক তোর আন্ডারওয়্যার আমায় দে।”
ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়।
“ননসেন্স তোর কী নেই?”
“ভিজে গেছে দে না তোর টা।”
ঐশ্বর্য ল্যাপটপের শাটার অফ করে বলে।
“নো ওয়ে।”
জিসান ওয়াশ রুম থেকেই বলে।
“প্লিজ ভাই দে না? না হলে কিন্তু তোর সব আন্ডারওয়্যার তেইফ করে ব্ল্যাক মার্কেটে বিক্রি করে দেবো।”
ঐশ্বর্য কপাল চুলকায়,এই জিসানের ভরসা নেই একদম। অতঃপর সে ওয়াড ড্রফ থেকে একটা আন্ডারওয়্যার বের করে ছুঁ’ড়ে দিলো জিসানের মুখের উপর। জিসান দাঁত কেলিয়ে বলে।
“থ্যাংকস ব্রো।”
_____________
“আপু আপু সুখবর আছে।”
উৎসা দৌড়ে গিয়ে নিকি কে জড়িয়ে ধরে। রুদ্র পিছন পিছন আসে।নিকি উৎসার হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী দেখে শুধায়।
“কী রে কী এমন হয়েছে এত খুশি লাগছে?”
রুদ্র বললো।
“তুই জানিস নিকি আমাদের উৎসা স্কালার্শিপ পেয়ে গেছে।”
নিকি চমকালো।
“সত্যি?”
উৎসা আনন্দের সাথে বললো।
“হ্যা আপু। আমি সত্যি খুব খুশি। মায়ের সাথে দেখা করে আসি।”
উৎসা দৌড়ে দুতলায় গেলো।নিকি রুদ্র কে বলে।
“ভাইয়া তুমি তাহলে তাড়াতাড়ি উৎসার যাওয়ার ব্যবস্থা করো,মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে। অ্যাটলিস্ট এখন একটু শান্তি ডিজার্ভ করে।”
“হ্যা বোন আমি সব রেডি করছি।”
সব কিছু শুনলেন আফসানা পাটোয়ারী,তার মোটেও বিষয়টি ভালো লাগছে না। তবে উৎসা চলে যাবে এটাতে স্বস্তি পাচ্ছে। কিন্তু সাবিনা পাটোয়ারী কে রেখে যাবে এটা মোটেও পছন্দ নয় ওনার।উৎসার বাবা মা’রা যাওয়ার পরপরই আফসানা পাটোয়ারী বাড়ির কর্ত্রী হয়ে বসে আছেন, বিজনেস থেকে শুরু করে সব কিছু দ’খ’ল করে রেখেছে।তিনি মোটেও চান না উৎসা কখনও এসব দা’বী করুক!
বিছানায় নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে সাবিনা পাটোয়ারী। দৃষ্টি তার সিলিং ফ্যানের দিকে, অদ্ভুত!
একটা মানুষ জীবিত হয়েও ম’রার মতো আছে।
রুমে এসে মায়ের মাথার কাছে বসলো উৎসা।মাথায় আদুরে হাত বুলিয়ে বললো।
“জানো মা আমি জার্মানি যাওয়ার চান্স পেয়েছি।মা তুমি দেখো আমি ঠিক মিহি আপু কে খুঁজে নিয়ে আসবো। তুমি আপু কে দেখতে চাও তাই না!আর অপেক্ষা করতে হবে না, তোমার উৎসা রকেটের মতো যাবে আর মিহি আপু কে নিয়ে আসবে।”
সাবিনা পাটোয়ারী কিছুই বলতে পারলেন না , তবে হয়তো বুঝেছেন তাই তো আঁখিদয় অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে।উৎসা নিজের হাতে চোখ মুছে দিলো,কিছুটা ঝুঁকে মায়ের কপালে চুমু এঁকে বলে।
“আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি মা।”
✨
বার্লিন ব্র্যান্ডেনবার্গ বিমানবন্দরে গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। অপেক্ষা করছে নিজের এক বন্ধুর,সিরাত নামের এক যুবতীর অপেক্ষা করছে।
সিরাত বাংলাদেশী একজন মেয়ে,নিকি বলেছে সিরাত ওকে গার্লস হোস্টেলে নিয়ে যাবেন।সিরাত নিকির এক কলিগের ফ্রেন্ড যার দরুন উৎসা কে একা পাঠিয়ে একটু স্বস্তি পেয়েছে নিকি।
ব্রাউন রঙের একটা লেডিস ট্রি শার্ট তার উপর জ্যাকেট জড়িয়ে ল্যাকেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উৎসা। ভীষণ ঠান্ডা, এখুনি হিম হয়ে যাচ্ছে উৎসার নরম তুলতুলে শরীরটা।
“উৎসা?”
নিজের নাম মেয়েলি কন্ঠস্বরে শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসা। জিন্স তার উপর লেডিস ট্রি শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে একটু ফর্সা মেয়ে।
“আর ইউ উৎসা?”
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“জ্বি আমি উৎসা। কিন্তু আপনি…
“আমি সিরাত,নিকি আপু বললো তোমাকে এয়ার পোর্ট থেকে রিসিভ করতে, তুমি তো কিছুই চিনো না।”
“হ্যা আমি তেমন কিছুই চিনি না।”
“ওকে ফাইন নো প্রবলেম, চলো আমার সাথে।”
সিরাত একটা গাড়ি বুক করে, পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সেটা চলে এলো। অতঃপর তারা রওনা দিলো হোস্টেলের দিকে।
সন্ধ্যা বেলা আকাশ এক অদ্ভুত রঙ ধারণ করেছে।লালচে হয়ে উঠেছেন সমগ্র আকাশ,কনকনে শীতে রুমের জানলা খুলে দেয় উৎসা। উফ্ কী সুন্দর শহর!এক কথায় চমৎকার।
“উৎসা মে আই?”
সিরাতের কথা কর্ণ স্পর্শ করা মাত্র জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেয় উৎসা।
“হ্যা আসুন।”
সিরাত ভেতরে এসে বেতের সোফায় বসলো।
“উৎসা তুমি আমাকে আপনি বলো না, আফটার অল আমরা তো সেইম এইজের!”
উৎসা মৃদু হাসলো।
“আচ্ছা।”
“তোমাকে কিছু জরুরী কথা বলছি শুনো।”
সিরাত বেশ ধীর কন্ঠে বলছে,উৎসা মন দিয়ে শুনছে।
“দেখো এখানের মেয়েদের সাথে একদম মেলামেশা করবে না।”
উৎসা অবাক হলো।
“কিন্তু কেন?”
“আস্তে আস্তে সব বুঝতে পারবে।”
“আচ্ছা।”
উৎসা বুঝলো কী না তা জানা নেই তবে শুনলো,যখন সিরাত ঘুমিয়ে গেছে,তখন আকাশ দেখছে উৎসা।
অন্য দিকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ঐশ্বর্য। দুটি আলাদা মেরুদন্ডের মানুষ অতঃপর একই আকাশের নিচে। ভাগ্য হয়তো অপেক্ষা করছে দু’টো মানুষ কে মেলানোর।এক নতুন গল্প লেখার।
যার সূচনায় ঐশ্বর্য, উপসংহারে উৎসা।
চলবে…………✨।