রেড রোজ পর্ব-০৫

0
7

#রেড_রোজ
পার্ট [০৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
নিজের রুমের ওয়াশ রুমে বাথটাবে শুয়ে আছে ঐশ্বর্য।নিড অ্যা ফিজিক্যাল পিচ,সে মনে করে গার্লস অ্যা টিস্যুজ।
ঐশ্বর্যের এই ধারণা কেউ কখনো বদলাতে পারেনি,আর না পারবে। দীর্ঘ এক ঘন্টা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে। সুঠামদেহী পুরুষের গায়ে আপাতত টাওয়াল ছাড়া কিছুই নেই।অফিসে যেতে হবে,সেই হিসেবে ফর্মাল গ্রেট আপে রেডি হয়। ড্রয়িং রুমে এসে ডাইনিং এ বসতেই মিস মুনা ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে দিলো।
রিকের ফোন টুং শব্দ করে বেজে উঠল। রিসিভ করতেই অপাশ থেকে পুরুষালী কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।

“হ্যালো ভাইয়া?”

ভাইয়া শব্দটি কর্ণ স্পর্শ করতেই থমকালো ঐশ্বর্য, ফুস করে শ্বাস টেনে নেয়।
“হ্যা বল।”

“ভাইয়া তুমি কী আর আসবে না? পাঁচ বছর হয়ে গেল।”

ঐশ্বর্য প্লেটে চামচ নাড়তে নাড়তে বললো।
“মিসেহ মহিলার সামনে আমি যেতে চাই না,সো প্লিজ রিকোয়েস্ট করা বন্ধ কর।”

ফোনের অপর পাশ থেকে ফের বললো।
“প্লিজ ভাইয়া, আমরা কিন্তু তোমার অপেক্ষায় আছি।”

ঐশ্বর্য ফোন রেখে দিলো, তৎক্ষণাৎ জিসান এসে বসলো।
“হোয়াট হ্যাপেন ব্রো?মুখ এমন চুপসে গেল কেন?”

ঐশ্বর্য ব্রেডে জে’ল লাগিয়ে বললো।
“কল এসেছিল, যাওয়ার কথা বলছে।”

জিসান জুসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে।
“তাহলে যেতে কী প্রবলেম?চল না যাই সবাই।’

“নো ওয়ে, আমি ওই মিসেস মহিলার সামনে যেতে চাই না।”

জিসান হতাশ হলো।
ঐশ্বর্য যতটা নিজেকে কঠোর দেখায় ততটা সে নয়।
ঐশ্বর্য খাবার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। জিসান মৃদু হাসলো। ব্যস হয়ে গেছে আজকে আর ঐশ্বর্য বাইরে যাবে না, নিজের মতো করেই থাকবে সে।

ঝলমলে রোদ উঠেছে, ঐশ্বর্য ছাদে গেলো।খুব বড় ছাদ, ঐশ্বর্য ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ দেখছে সে,আচমকা হেসে উঠলো। সেও তো চাইলে স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতো বড় হতে পারতো? কিন্তু হলো না।তার ক্ষেত্রে সব কিছু উল্টো হয়ে গেছে, ঐশ্বর্য পৃথিবীতে সম্পূর্ণ একা।এই জন্য হয়তো সে এত বাজে,এত খারাপ হ্যাভিট তার। গোপনে সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো ঐশ্বর্য। অতঃপর দিনটা একাকীত্বে কে’টে গেলো তার।
_____________
উৎসা পড়ার টেবিলে বসে আছে ঠিকই কিন্তু পড়ছে না।সিরাত এসে ওর পাশে বসলো।
“কী হয়েছে মুড অফ মনে হচ্ছে?”

উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“মা কে মনে পড়ছে।”

“ওহ্, তাহলে ফোনে কথা বলে নাও।”

উৎসা মৃদু হেসে বলে।
“যদি কথা বলতে পারতো তাহলে তো হয়েই যেতো।”

সিরাত কপাল কুঁচকে নেয়।
“কেনো উনি কি কথা বলতে পারেন না?”

উৎসা ফের হাসলো।
“হুঁ পারতো,তবে এখন আর পারে না। আমার মা প্যারালাইসিস।”

সিরাত মূহুর্তে থমকে যায়,তার ভীষণ খারাপ লাগলো।উৎসার হাতের উপর হাত রেখে বলে।
“চিন্তা করো না আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।”

উৎসা মৃদু হাসলো।মনে মনে ভাবলো সবার আগে তাকে নিজের বোন কে খুঁজে বের করতে হবে।মিহি এখন কোথায় আছে এটা ঠিক কেউই জানে না।দু বছর হয়ে গেছে,মিহি কে চোখের দেখা দেখেনি কেউ। নিজের বয়ফ্রেন্ড এর সাথে পা’লিয়ে জার্মানি এসেছে সে, এরপর কোথায় আছে কী করছে? কেউই জানে না। আপাতত সে যে ঠিকানা পেয়েছে সেই বাড়িতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কাল কলেজ অফ আছে তাই উৎসা ঠিক করলো কালকেই সে ওই বাড়িতে যাবে।
_____________
বিছানায় শুয়ে আছে সাবিনা পাটোয়ারী,নিকি এসে ওনাকে চেঞ্জ করিয়ে স্যালাইন দিয়ে গেছে।
রুদ্র রুমেই বসে ছিলো, তৎক্ষণাৎ শহীদ এসে ওর পাশে বসলো।
“কী করছিস রুদ্র।”

রুদ্র নিজের বাবা কে দেখেও কিছু বললো না, ওদের কোনো টান নেই নিজের বাবার প্রতি, অবশ্য থাকবেই বা কেন?
রুদ্র অস্ফুট স্বরে বলল।
“কিছু না।”

রুদ্র ওয়াশ রুমে চলে গেলো, শহীদ তৎক্ষণাৎ রুম ত্যাগ করলেন, নিজের ঘরে গিয়ে বেলকনির পাশে রকিং চেয়ার টেনে বসলেন।
এই জীবন তার বৃথা,কতই না অন্যায় করেছেন সে।তাই তো শেষ বেলায় এই অবস্থা তার। নিজের পারতো তাহলে নিজের ভুল গুলো শুধরে নিতো।
বুক পকেট থেকে একজন মহিলার ছবি বের করলেন।বেশ সুন্দর দেখতে, শহীদের চোখ দুটো ভিজে উঠলো।এই মানুষটি কে কতই না কষ্ট দিয়েছে!তাই তো আজ এমন অবস্থা তার।

“এত বছরের পুরোনো ভালোবাসা উতলে পড়ছে না কি?”

আফসানা পাটোয়ারীর কথায় থমকে গেলেন শহীদ, খুব গোপনে ছবিটি নিজের বুক পকেটে রেখে দিলেন। আফসানা পাটোয়ারী এগিয়ে এলো, কঠোর ভাবে বলে উঠে।
” শুনো শহীদ এই যে এখন তুমি ভালো মানুষের যে নাটক করছো না?তা বন্ধ করো।”

শহীদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
“নাটক আমি? হাহ্, তুমি যে কত নাটক পারো তার থেকে আমার টা কমই আছে।”

আফসানা পাটোয়ারী তে’তে উঠল।
“এই শুনো….

“তোমার ফা’ল’তু কথা শুনার সময় নেই আমার।”

রাস্তার মাঝে বেখেয়ালে হাঁটছে উৎসা, মস্তিষ্ক বারংবার বলছে মিহি কোথায়?
কিছুক্ষণ আগেই সে মিহির বয়ফ্রেন্ড হ্যাভেনের বাড়িতে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে জানতে পারে হ্যাভেন বিয়ে করেছে এবং ভ্যাকেশনে আছে। কেয়ার টেকারের কাছে বিয়ের কথা শুনে উদগ্রীব হয়ে ওয়াইফের ছবি দেখতে চেয়েছিল উৎসা। কিন্তু যখন ওয়াইফের ছবির জায়গায় নিজের বোন কে না দেখে অন্য কাউকে দেখলো তখন থেকেই পাগলের মতো লাগছে তার।
“মিহি আপু তুমি কোথায়? তোমার সাথে খারাপ কিছু হয়নি তো?”

ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে উৎসার, সামনের দিকে গাড়ি আসছে তা দেখতেই পাচ্ছে না উৎসা।
গাড়িতে বসা লোকটি বার বার হ’র্ন দিচ্ছে।
“হেই…

আচমকা নিজের হাতে কারো স্পর্শ পেতেই আঁতকে উঠে।কেউ একজন হ্যাঁচকা টানে তাকে গাড়ির নিচে পড়া থেকে বাঁচিয়ে নেয়।
নিজের সামনে ঐশ্বর্য কে দেখে শুকনো ঢুল গিললো উৎসা। ঐশ্বর্য দাঁতে দাঁত চেপে অ’গ্নি চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
জিসান দৌড়ে ওদের কাছে আসলো।
ব্যস্ত কন্ঠে শুধায়।
“আর ইউ ওকে মিস বাংলাদেশী?”

উৎসা কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই ঐশ্বর্য ওর হাত চেপে ধরে।
“হেই আর ইউ ম্যাড?চোখ কি হোস্টেলে রেখে এসো যে রাস্তায় এত বড় গাড়ি দেখতে পাও নি?”

উৎসা ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নেয়।
“সস্যরি, আসলে আমি খেয়াল করিনি।”

জিসান কপাল চুলকায়,উৎসার হাতে পার্স দেখলো।
“তুমি কী কোথাও যাচ্ছো?”

উৎসা মৃদু কন্ঠে বলে।
“হ্যা ওই আর কী?”

“ওয়েট ওয়েট তুমি না বললে তুমি কিছুই চিনি না এই শহরের? তাহলে যাচ্ছো টা কোথায়? উপ্স স্যরি ইউ অ্যা কল গার্ল, ঠিক ধরেছিলাম।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়, কান্না পাচ্ছে তার।এই ছেলেটা বার বার তার চরিত্র নিয়ে কথা বলে।

“চুপ করুন কী ভাবেন নিজেকে? আপনি যেমন ভাবেন সবাই কী তাই? সেদিন ক্লাবে আমি ভুলবশত গিয়েছি, আমাকে চাকরি দেবে বলে নিয়ে গিয়ে ওই সব করেছে।আর আজকেও আমি চাকরীর জন্য ঘুরছি বুঝতে পেরেছেন? আমি একজন স্টুডেন্ট,সো পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করতে চাই।”

ঐশ্বর্য শুনলো, জিসান ছলছল চোখ করে তাকালো।
“রিক আই থিংক আমাদের মিস বাংলাদেশী কে হেল্প করা উচিত।”

ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
“ওকে। লিসেন মিস বাংলাদেশী আপনি তো কলেজে পড়েন তাহলে অবশ্যই বড়সড় পদ দেওয়া যাবে না।তবে একটা কাজ আছে!”

উৎসা বেশ আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞাস করে।
“কী কাজ?”

“আমার বাড়িতে একজন কেয়ারটেকার লাগবে, তুমি চাইলে জয়েন করতে পারো।কী রে জিসান তাই না?”

জিসান তম্বা খেয়ে গেল, কেয়ারটেকার মিস মুনা থাকতে আবার নতুন কেয়ারটেকার রেখে কী হবে? ঐশ্বর্য ইশারা করলো, জিসান কিছু বুঝলো না তবে সায় দেয়।
“হ্যা হ্যা একদম।মিস বাংলাদেশী তুমি কিন্তু জয়েন করতেই পারো।”

উৎসা ভাবনায় পড়ে গেলো , তার তো কলেজ আছে! কেয়ারটেকার হলে তো সারাদিন থাকতে হবে।
“না না আমি পারব না।”

জিসান অবাক হয়ে গেল।
“বাট হোয়াই?”

“আমার তো কলেজ আছে, কেয়ারটেকার হলে তো সারাদিন থাকতে।”

ঐশ্বর্য বললো।
“নো প্রবলেম তুমি বরং কলেজে যাওয়ার আগে বাড়িতে এসে কাজ করে এরপর কলেজে চলে যাবে, এরপর আবার কলেজ থেকে সোজা বাড়ি।”

“তবুও হবে না।”

এবার ঐশ্বর্য বেশ রাগান্বিত কন্ঠে বললো।
“কেনো?”

“হোস্টেলে সন্ধ্যার পর অ্যালাও করে না!”

ঐশ্বর্য জোরপূর্বক হেসে বলল।
“ওকে তুমি বরং ইভিনিং এর আগেই চলে যাবে।”

উৎসা অধর টেনে হাসলো।
“আচ্ছা আচ্ছা, তাহলে আমি রাজী আছি।”

“তাহলে কাল থেকেই জয়েন করো।”

উৎসা হ্যা বলে দ্রুত হোস্টেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। জিসান ঐশ্বর্যের বাহুতে ধরে বললো।
“ব্যাপার কী?মিস মুনা থাকতেও তুই মিস বাংলাদেশী কে রাখতে চাচ্ছিস কেন?”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“ফিজিক্যাল নিডস্”

জিসান চমকে গেল।
“হোয়াট?তুই কী এখন এই মিস বাংলাদেশী কে…….

“সো হোয়াট?”

জিসান অস্থির হয়ে বললো।
“লিসেন রিক মেয়েটা খুবই সরল,তুই কেনো ওভাবে?”

“দেখ ফিজিক্যাল নিডস্, সে’ক্সুয়াল নিডস্ ছাড়া কিছুই ম্যাটার করে না।”

“তাহলে ক্লাবে যা!ওর মধ্যে তো তেমন কিছু নেই।”

ঐশ্বর্য গাড়িতে বসতে বসতে বলল।
“জাস্ট ফান, ফিজিক্যাল রিলেশন করব। তার পর ম্যাটার ক্লোজ।”

“রিকককক। ছোট্ট মেয়ে তোর মতো ইয়াং ম্যান কে ট্রলারেট করবে কী করে?”

ঐশ্বর্য পাত্তা দিলো না জিসানের কথা। বেচারা জিসানের উৎসার জন্য মায়া হচ্ছে, মেয়েটা কত সহজ সরল,কী সুন্দর ভাইয়া বলে ডাকে।রিক যা করছে আসলেই কী ঠিক? মেয়েটা হেল্প চেয়েছে, এখন কী কোনো বিপদে না পড়ে যায়?
“এবার কী দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি যাবি? তাড়াতাড়ি যেতে হবে।”জিসান ঐশ্বর্যের কথা শুনে নাক ফুলিয়ে বলে।
“কেন আবার গিয়ে আইস কিউব দিবি নাকি?”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“ফুল, অফিসে যেতে হবে, আঙ্কেল কী বলেছে ভুলে গেলি?”

জিসান ছলছল চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের । ঐশ্বর্য গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো।
আপাতত উৎসার প্রতি কিছু অনূভুতি কাজ করছে ঐশ্বর্যের, যার নাম দিয়েছে ফিজিক্যাল নি’ডস্।সে একটা কথাই জানে, কোনো মেয়ের প্রতি অনূভুতি জাগ্রত হলে সেটা ফিজিক্যাল অর সে’ক্সুয়াল নিডস্ ছাড়া কিছুই নয় আদতেও এটা কী সত্যি?

চলবে…………।✨