রেড রোজ পর্ব-০৮

0
8

#রেড_রোজ
পার্ট [০৮](ম্যাজিক)
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)

সকালের মিষ্টি রোদ মুখশ্রী জুড়ে আছে উৎসার।ঘুম থেকে উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো সে, আহ্ কত দিন পর রোদ দেখতে পাচ্ছে। একটু উষ্ণতা পাচ্ছে, কিন্তু জার্মানিতে তো ঠান্ডায় পুরোই জমে যাওয়ার উপ’ক্রম।
ফুরফুরে মেজাজে বাইরে বের হয় উৎসা, সবার জন্য চা বানিয়ে ফেললো দ্রুত।
শহীদ ড্রয়িং রুমেই বসে ছিল,উৎসা গিয়ে ওনাকে চা দিলো।
“এই যে মামা তোমার চা।”

শহীদ মৃদু হাসলো।
“থ্যাংক ইউ মা। পুরো দশ দিন পর তোর হাতের চা খাবো।”

উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
নিকি রুদ্র দুজনেই ল্যাপটপে কাজ করছে,উৎসা গিয়ে ওদের চা রুমেই দিয়ে আসে।বোন কে এত দিন পর নিজের কাছে দেখে ভীষণ খুশি হয় রুদ্র।
আফসানা পাটোয়ারী উৎসার সঙ্গে তেমন কথা বললো না।
বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠতেই তড়িঘড়ি করে দুতলা থেকে নেমে আসলো উৎসা।
“এই সময় আবার কে এলো?”

উৎসার দৃষ্টি গেলো দেয়ালে টা’ঙ্গানো বড় ঘড়ির দিকে। সকাল দশটা পনেরো বাজে মাত্র,এত সকাল আবার কে এলো?

উৎসা ধীর গতিতে এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুলে দেয়। মূহুর্তে উষ্ণ বাতাস এসে কপালে থাকা চুল গুলে এলোমেলো করে দেয় উৎসার। চোখ তুলে তাকালো সামনের দিকে, হৃদয় স্পন্দন থমকে গেলো।দ্রিম দ্রিম শব্দের প্র’খরতা বাড়তেই চলেছে।
অফ হোয়াইট শার্টের উপর নেভি ব্লু কালারের স্যুট পরা,চুল গুলো জেল দিয়ে বেশ গুছানো,হাত দুটো পকেটে গুজে রেখেছে।ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে জিসান আর কেয়া।
জিসান আর কেয়া ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক করে উৎসার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
উৎসা ঐশ্বর্য কে এখানে থেকে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছে।এই লোকটা এখানে কী করছে? নিশ্চয়ই কোনো মতলব আছে?এর আগের দিন তো কেমন করে কাছে আসছিল!

উৎসা নিজের মনে মনেই কথা বলছে।
এদিকে ঐশ্বর্য মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে উৎসার দিকে।পরণে তার লাল লং গোল জামা,সাথে চুই সালোয়ার ,আর টকটকে লাল ওড়না।একটা আস্ত রেড রোজ। উৎসা কোমড়ে দুহাত তুলে বললো।

“একদম ঠিক বুঝেছিলাম,আপনারা একে বারে জার্মানি থেকে চলে এলেন? নিশ্চয়ই আবার আমাকে অ’পমান করতে তাই তো?আর এই যে মিস্টার ভাইয়া!মানে মিস্টার চৌধুরী আপনাদের তো এখুনি দেখাচ্ছি মজা।একদম ভেতরে ঢুকবেন না।”

উৎসা দৌড়ে ভেতরে গেলো, এদিকে ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিসান ফিসফিসিয়ে বললো।
“ব্রো এই মিস বাংলাদেশী এখানে কেন?তুই কি ঠিক ঠিকানায় এসেছিস? না কি মিস বাংলাদেশীর বাড়িতে চলে এলাম ভুল করে!”

ঐশ্বর্য কিছু বললো না,কেয়া উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো উৎসা কে।
“রিক কিউট গার্ল গেল কোথায়?”

ঐশ্বর্য আনমনে জবাব দেয়।
“আই ডোন্ট নো।”

উৎসা বড় সড় একটা লাঠি নিয়ে এলো।লাল ওড়না ক্র’স করে বেঁধেছে।
“আজকে আপনাদের একদিন তো আমার একদিন। একবার বাড়িতে ঢুকে দেখুন,পা ভে’ঙ্গে দেবো ”

ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়, জিসান শুকনো ঢুল গিললো।মিস বাংলাদেশী ক্ষে’পে গেছে,কেয়া ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে আছে লাঠির দিকে।
“ও মাই গড!”

উৎসা কে রিতিমত অগ্রাহ্য করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো ঐশ্বর্য।
উৎসা পিছু পিছু গেলো।
“আরেহ এভাবে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারেন না আপনি।এই যে আপনাকেই বলছি।”

ঐশ্বর্য যেনো উৎসার কথা শুনলোই না।উৎসার চেঁচামেচি শুনে সবাই ধীর গতিতে ড্রয়িং রুমে নেমে আসে। আফসানা পাটোয়ারী ঐশ্বর্য কে দেখে তম্বা খেয়ে গেলো। ঐশ্বর্য আফসানা পাটোয়ারী কে দেখে ভুবন ভোলানো হাসি টেনে বলে।
“হ্যালো মিসেস মহিলা।”

আফসানা পাটোয়ারী নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“তুমি! তুমি কখন এলে?”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“অবাক হলেন বুঝি?আই নো অবাক হওয়ারই কথা। এক্সুয়েলি আই লাভ ইট।”

জিসান আর কেয়া ভেতরে আসলো। শহীদ নিচে এসে নিজের বড় ছেলে কে দেখে রিতিমত নির্বাক।
“ঐশ্বর্য! তুমি?”

“ডোন্ট কল মি ঐশ্বর্য,কল মি রিক।”

শহীদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো, ছেলেটা সেই আগের মতোই আছে।
“ভাই।”

রুদ্র দ্রুত পায়ে এসে ঐশ্বর্য কে জড়িয়ে ধরে।
“ভাই আমি জানতাম তুমি আসবে,পুরো পাঁচ বছর পর।”

ঐশ্বর্য রুদ্র কে ছাড়িয়ে নিলো।
“ডোন্ট, আমি মায়া বাড়াতে পছন্দ করি না।”

উৎসা আশ্চর্য হয়ে গেছে, ঐশ্বর্য কে? সবাই এভাবে ওর সাথে বিহেভ করছে কেন?
ঐশ্বর্য বাঁকা হেসে আফসানা পাটোয়ারীর উদ্দেশ্যে শুধায়।
“সো মিসেস মহিলা আমি আসাতে আপনার অসুবিধা হয়ে গেল বুঝি?”

আফসানা সোজাসুজি বললো।
“কার স’তিনের ছেলে আসলে সুবিধা হয় শুনি?”

ঐশ্বর্য মুখের ভাবান্তর বদলে নেয়।
“তাই নাকি! মিসেস মহিলা এত বছরেও আপনার লজ্জা হয়নি তাই না?”

আফসানা পাটোয়ারী গর্জে উঠলো।
“বুঝে কথা বলো বেয়াদব, আমি তোমার বড় এটা কী ভুলে গেছো? না কি এটুকু শিক্ষা নেই?”

“মিসেস মহিলা আপনার সাথে যে কথা বলছি এটাই আপনার ভাগ্য,আর আমার শিক্ষা নিয়ে আপনার মত চিপ মহিলা কথা না বললেই বেটার হবে।”

“ঐশ্বর্য!”

“অ্যাম রিক।”

আফসানা পাটোয়ারী চরম পর্যায়ে রেগে গেলেন,এই অস’ভ্য ছেলেটা কে স’হ্য করতে পারছেন না তিনি।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“আফসানা পাটোয়ারীর সঙ্গে এমন ভাবে কথা বলার সাহস হলো কী করে?”

ঐশ্বর্য কানে হাত দিয়ে শুনার ভান করে বলে।
“কী কী? আফসানা পাটোয়ারী? কার পদবী নিয়ে ঘুরছেন মিসেস মহিলা? আমার জানা মতে তো মিস্টার শহীদের কোনো পদবীই/ নেই? পাটোয়ারী আবার আসলো কোথা থেকে?”

আফসানা পাটোয়ারী অ’পমানিত বোধ করলেন। কিন্তু ঐশ্বর্য যা বলছে একদম সঠিক। শহীদ কে বিয়ে করার পর সাবিনা পাটোয়ারী মানে শহীদের চাচাতো বোনের বাড়িতে চলে আসে সবাই। এখানে এসেই আফসানা নিজের নামের সঙ্গে পাটোয়ারী ইউজ করে।

“ঐশ্বর্য তুমি কিন্তু নিজের লিমিট ক্র’স করছো?”

“ইওর ফা’কিং লিমিট নিজের কাছেই রাখুন।”

শহীদ ঐশ্বর্য কে থামানোর চেষ্টা করে বলে।
“ঐশ্বর্য বাবা প্লিজ তুমি থামো।”

“ওহ্ প্লিজ ইউ জাস্ট শাট আপ। ডোন্ট কল মি বাবা! আপনার বাবা টাবা কিছুই নই আমি।”

এতক্ষণ বাদে উৎসা বুঝতে পারলো এই হলো শহীদ মামার আগের পক্ষের বড় ছেলে।তার মানে তো উৎসার মামাতো ভাই!
চমকে উঠে উৎসা, ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল তার।
শহীদ চাইলেও কিছু বলতে পারছে না।তার মুখ নেই কিছু বলার!
আফসানা পাটোয়ারী দাঁতে দাঁত চেপে ফের বললো।
“এখানে এসেছো কেনো হ্যা? জার্মানিতে কী অস’ভ্যতামো করে মন ভরেনি?”

“না ভরে নি তাই এসেছি, আপনার কোনো প্রবলেম?”

“হ্যা অবশ্যই,কারণ এই বাড়িটা আমাদের।”

ঐশ্বর্য চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে নাটকীয় ভঙিমায় শুধায়।
“ও মাই গড ইজেন্ট ট্রুথ? মিসেস মহিলা যদি এই বাড়ি আপনি দাবী করেন তাহলে আমিও দাবী করতে পারি, ভুলে যাবেন না এটা তাহলে আমার মায়ের বাড়িও। মিস্টার শহীদের সঙ্গে কিন্তু আমার মায়ের ডিভোর্স হয়নি, আপনি চিপ তাই আমার মায়ের সবচেয়ে বড় সম্পদ সো কল্ড ফাদার কে নিয়ে নিয়েছেন।”

“ঐশ্বর্য মুখ সামলে কথা বলো।”

“ওয়ার ইউ সাউডিং মিসেস মহিলা?সত্য কথা স’হ্য হয় না বুঝি?অবশ্য হবেই বা কী করে?”

“এখুনি এই বাড়ি থেকে চলে যাও।”

আফসানা পাটোয়ারীর কথা শুনে ঐশ্বর্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো, স্যুট ঠিক করে বললো।
“এমনিতেও আমি এখানে থাকতে আসিনি,বাই দ্যা ওয়ে আপনার এই মুখ দেখেই বম্মেট আসছে।তাই চলে যাচ্ছি।বা বাই।”

ঐশ্বর্য বাড়ি থেকে বের হতে চায়, শহীদ আটকাতে বলে উঠল।
“রিক যেও না। রিকোয়েস্ট করছি।”

ঐশ্বর্য থামলো, তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
“আপনার কী আদেও রিকোয়েস্ট করার জায়গা আছে?”

শহীদ মাথা নিচু করে নেয়, ঐশ্বর্য ফের বললো।
“সো প্লিজ..

ঐশ্বর্য পা বাড়াতেই কেউ এসে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে।
“ভাইয়া।”

ঐশ্বর্য থমকালো চমকালোও।নিকি কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।
“ডোন্ট।”

নিকি আদুরে হাতে ফের জড়িয়ে ধরলো।
“ভাইয়া ডোন্ট গো প্লিজ।”

“হো আর ইউ?”

নিকি মাথা তুলে তাকালো।
“আমি নিকি ভাইয়া, তোমার বোন।”

ঐশ্বর্য ফের চমকালো, পাঁচ বছর আগের ছোট্ট নিকি বড় হয়ে গেছে। অদ্ভুত সুন্দর দেখতে হয়েছে।তার বোন?হাহ্।

“প্লিজ আমি মায়ায় পড়তে চাই না।”

“প্লিজ ভাইয়া থেকে যাও প্লিজ প্লিজ।”

নিকির কথায় রুদ্র জোর করলো।
“প্লিজ ভাইয়া থাকো না কিছু দিন।”

ঐশ্বর্য পারলো না,তবে গুরুগম্ভীর স্বরে বলল।
“ওকে ফাইন,থাকবো। কিন্তু ঠিক কত দিন থাকবো ওইটা আমার মুডের উপর নির্ভর করছে।”

নিকি খুশিতে আ’ত্মহারা হয়ে উঠে।
“আমি এখুনি তোমার রুম রেডি করছি।”

নিকি আর রুদ্র দৌড়ে গেল। আফসানা পাটোয়ারী হনহনিয়ে রুমের দিকে গেলো, শহীদ ওনার পিছু পিছু গেলো।
এতক্ষণ ধরে উৎসা নিরব দর্শক হয়ে সব কিছু দেখছিল, কিন্তু আর নিরব থাকতে পারলো না। আচমকা শব্দ করে হেসে উঠলো।
“ওরে আল্লাহ।”

কথাটা বলতে বলতে হাসতে লাগলো উৎসা,এক সময় পেট চেপে ধরে উৎসা। ঐশ্বর্য বললো।
“স্টপ।”

উৎসা কিয়ৎক্ষণ থামলো, কিন্তু ফের শব্দ করে হেসে উঠলো,হাসতে হাসতে কাউচের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে কার্পেটের উপর পড়ে গেলো।তবে তখনো হাসছে উৎসা।
জিসান আর কেয়া উৎসার অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো।
যে কেউ উৎসার এই ভুবন ভোলানো হাসি যে কারো মন ভুলাতে সক্ষম, কিন্তু আপাতত এই হাসি রাগের কারণ হচ্ছে ঐশ্বর্যের।
উৎসা কে থামতে না দেখে ঐশ্বর্য পাশে কেবিনেটের উপর থাকা ফুলদানি তুলে ছু’ড়ে ফেলে চিৎকার করে উঠল।
“আই সে স্টপ।

চলবে………..।✨