রেড রোজ পর্ব-০৯

0
8

#রেড_রোজ
পার্ট [০৯]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)

“তুমি এই বাড়িতে কী করছো?আর কে তুমি?”

উৎসা ঐশ্বর্যের ধমক শুনে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ায়। জিসান,কেয়া সোফায় বসে আছে, ঐশ্বর্য ওদের পাশে বসেছে।ডান পায়ের উপর বা পা তুলে বসে আছে,উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“আমি তো উৎসা,এই বাড়ির মালিকের মেয়ে!”

ঐশ্বর্য থতমত খেয়ে গেল, মিসেস মহিলার আরো একটা মেয়ে আছে?
“মিসেস মহিলার ছোট মেয়ে তুমি?”

উৎসা ব্যস্ত কন্ঠে বলে।
“না না, আমি তো সাবিনা পাটোয়ারীর ছোট মেয়ে।আর আফসানা উনি তো আমার মামী হন।”

ঐশ্বর্য ভেবে বলে।
“ওহ্ তাহলে তুমি উৎসা পাটোয়ারী?”

“হুঁ। আফসানা মামী আমাদের সাথে থাকেন আর পাটোয়ারী ইউজ করেন।আর এই বাড়িওআ আমাদে…..

বাকি কথা টুকু টুক করে গিলে নিল উৎসা, ঐশ্বর্য বুঝতে পারলো এই বাড়িও উৎসাদের।তাই তো নেইম প্লেটে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিলো পাটোয়ারী মঞ্জিল।
ঐশ্বর্য কথা ঘুরাতে বললো।
“তা কি এমন রিজনে তুমি একটু আগে দাঁত দেখাচ্ছিলে?”

মামাতো ভাইয়ের কথা মাথায় আসতেই উৎসা ফিক করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য সাথে সাথে বললো।
“স্টপ লাফিং।”

উৎসা ঠোঁট চেপে বললো।
“আসলে আপনি তো ভাইয়া ডাক পছন্দ করেন না, কিন্তু দেখুন ভাগ্য? আপনি আমার মামাতো ভাই বের হলেন।”

উৎসা হাসতে লাগে, কথাটা বোঝাতে পেরে কেয়া আর জিসান হেসে উঠে। জিসান ঐশ্বর্য কে খোঁ’চা দিয়ে বলে।
“রিক মিস বাংলাদেশী তোর নতুন বোন হু হু হু।”

কেয়া দুষ্টুমি করে শুধায়।
“ও মাই গড কিউট গার্ল তোর বোন আর আমাদের বলিস নি পর্যন্ত?দিস ইজ নট ডান!”

ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত নিয়ে বলে।
“জাস্ট শাট আপ,হেই ইউ ডোন্ট কল মি ভাইয়া।”

উৎসা দু পা সিঁড়ির দিকে দিয়ে বললো।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া, ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া। ঐশ্বর্য ভাইয়া।”

উৎসা ছুট লাগালো দুতলার দিকে। ঐশ্বর্য চমকালো,কারণ এই প্রথম ঐশ্বর্য নাম এতটা মোহিত করছে তাকে। খুব করে কানে লাগলো কথাটি, পরক্ষণেই ঐশ্বর্য চিৎকার করে বলে।
“স্টপ।”
______________
স্নিগ্ধ শোভন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের কাজ শেষ করে সবার জন্য খাবার আয়োজন করেছে উৎসা।
কলিং বেল বাজলো,উৎসা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ঐশ্বর্য জগিং স্যুট পরে দাঁড়িয়ে আছে, কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।উৎসা মুগ্ধ চোখে তাকায় ঐশ্বর্যের দিকে।

ঐশ্বর্য ভেতরে প্রবেশ করলো, প্রথমে উৎসা কে খেয়াল না করলেও দু পা এগিয়ে গিয়ে ফের পিছন ঘুরে তাকালো।
পরতে আকাশী রঙের গোল জামা,চোখে কাজল,হাতে দু’টো রেশমী চুড়ি। ফর্সা মুখে অধর দুটি গোলাপী হয়ে আছে, ওড়না গলায় ঝু’লিয়ে রাখা।সব থেকে বেশি নজর কাড়লো উৎসার পায়ের নূপুর গুলো।উৎসা টেবিলের দিকে এগুতেই ছনছন শব্দ করে নূপুর গুলো। ঐশ্বর্য বিড়বিড় করে আওড়াল।
“অ্যা রেড রোজ।”
উৎসা কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে ঐশ্বর্য।
দশ মিনিট পর সবাই ব্রেকফাস্ট করতে আসে, কিন্তু ঐশ্বর্য আফসানা পাটোয়ারী আর শহীদ কে দেখে দুতলার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।
নিকি বলে উঠে।
“ভাইয়া ব্রেকফাস্ট করবে না?”

ঐশ্বর্য ফুস করে শ্বাস টেনে বলে।
“যার তার সাথে একই ডাইনিং এ বলে রিক ব্রেকফাস্ট করে না।”

নিকি বুঝতে পারলো ঐশ্বর্য কাদের কথা বলছে। আফসানা চোয়াল শক্ত করে নেয়,মনে মনে ঐশ্বর্য কে দুটো গা’লি দেয়। শহীদ মলিন মুখে নিজ স্থানে বসে রইল, কিছু বলার মতো ভাষা নেই তার।

ঐশ্বর্য রুমে চলে গেলো, জিসান আর কেয়া খেতে বসলো।তারা খুব এক্সাইটেড,এই প্রথম বাংলাদেশের ফুড খাবে,ভাবতেই জিসান খুশিতে গদগদ হয়ে যাচ্ছে।
উৎসা জিসানের প্লেটে ঘি দিয়ে ভাজা রুটি আর আলো তরকারি দিলো। জিসান দেখে বললো
“দেখ টেস্টি লাগছে।”

কেয়া বললো।
“জাস্ট অ্যামেজিং,ইয়াম্মি।”

উৎসা মৃদু হাসলো।নিকি ঐশ্বর্যের জন্য খাবার সাজিয়ে ট্রে উৎসার হাতে দিলো।
“বনু খাবার টা ভাইয়ের রুমে দিয়ে আয় তো।”

আফসানা তৎক্ষণাৎ বলে উঠে।
“এত দরদ দেখানোর কি প্রয়োজন নিকি?”

নিকি সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে স্পষ্ট ভাবে বললো।
“আমার ভাই তাই।”

আফসানা বেশ বিরক্ত, মেয়েটা অবা’ধ্য।

রুমের কাছে এসে ন’ক করলো উৎসা, কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ পেলো না।উৎসা খেয়াল করে দেখলো রুমের দরজা খোলাই আছে।উৎসা গুটি গুটি পায়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া? ভাইয়া আপনি কোথায়?”

আচমকা ওর হাতে টান পড়ল। ঐশ্বর্য উৎসার হাত থেকে ট্রে নিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে দিলো।উৎসা থতমত খেয়ে গেলো, ঐশ্বর্য ওকে টেনে দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে।উৎসা আরো এক দফা চমকে উঠে।

“ভভভাইয়া এটা কি করছেন আপনি?”

“হিসসস, ডোন্ট কল মি ভাইয়া আই রিপিট ডোন্ট কল মি ভাইয়া।”

উৎসা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, এদিকে ঐশ্বর্য উৎসার হাত খুব শক্ত করে।
“যত বার ভাইয়া ডেকেছো এখন ততবার হানিইইই বলে ডাকো।”

উৎসা চমকের অষ্টম আকাশ পাড় করলো।হানি?
“ককী?দদেখুন ঐশ্বর্য ভাইয়া হন আপনি আমার।”

ঐশ্বর্য রাগলো,চোখে মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল।
“ইউ আর লুকিং সো প্রীটি।দ্যান স্টে ওয়ে ফ্রম মি।”

উৎসা কিছুই বুঝলো না, ঐশ্বর্য উৎসা কে ছেড়ে দেয়,ডিভানে বসতে বসতে বললো।
“আমার জন্য আইস কিউব নিয়ে এসো।”

উৎসা বোকার মতো জিজ্ঞাস করে।
“আইস কিউব দিয়ে কী হবে?”

জিসান ঐশ্বর্যের রুমেই আসছিল হঠাৎ আইস কিউব শব্দটি কানে যেতেই হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকে উৎসা কে বলে উঠল।
“আরে সকালে ঐশ্বর্য পেটে একটু ব্যথা পেয়েছে তাই জ্বা’লা করছে,আইস কিউব দিলে একটু কমবে।”

উৎসা মৃদু কন্ঠে বলে।
“আচ্ছা।”

উৎসা বের হতেই ঐশ্বর্য নিজের মতো করে ফোন দেখতে লাগলো। জিসান ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দেয়, গিয়ে ঐশ্বর্যের পাশে বসলো।
“ড্যাম তুই কোন লেভেলের ইয়ে?”

ঐশ্বর্য ফোনে দৃষ্টি রেখেই বললো।
“কেনো তুই কি আজ নতুন জানলি?”

জিসান বললো।
“ছে,মিস বাংলাদেশী যদি জানতে পারে তোর ব্যাড হ্যাভিটের কথা তাহলে তো….

“সো হোয়াট?আই ডোন্ট কেয়ার।”

জিসান আর কিছু বলতে যাবে তার পূর্বেই ওর দৃষ্টি গেলো ফোনে।
“এহহ কী দেখছিস তুই এটা?”

ঐশ্বর্য জোম করে বললো।
“সফট্ প’র্ণ ভিডিও!দেখবি?”

জিসান নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“শেইম লেস ম্যান।”
________________
বাগানে দাঁড়িয়ে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছে কেয়া, হঠাৎ সেখানে একটা ছেলে কে দেখতে পেলো।কখন থেকেই কেয়া কে লক্ষ্য করছে ছেলেটা, কেয়া এগিয়ে গেলো।
“হাই হ্যান্ডসাম।”

ছেলেটি অবাক হলো, এখানে কোনো মেয়েই নিজ থেকে কথা বলে না, সেখানে কেয়া নিজ থেকে এসে হ্যান্ডসাম বলছে কথাটা বেশ অবাক করলো ছেলেটি কে।কেয়া ফ্লা’ট করছে,আচমকা সেখানে রুদ্র চলে এলো।
“উঁহু উঁহু।”

পুরুষালী কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো কেয়া। মৃদু চমকে উঠে সে। রুদ্র দেখতে কী সত্যি সুদর্শন।কেয়া আনমনে বলে উঠে।
“ওয়াও।”

রুদ্র এগিয়ে গেলো,আসলে ছেলেটা ছিলো দুধ ওয়ালা। এই ছেলেটা রোজ পাটোয়ারী মঞ্জিলে দুধ দিয়ে যায়।
“কী রে অভি দাঁড়িয়ে আছিস কেন?দুধ দিয়ে তাড়াতাড়ি যা।”

অভি কাচুমাচু করতে করতে দুধ দিতে গেলো ভেতরে।
কেয়া বুঝলো না,দুধ?
“ওয়ান সেকেন্ড, ছেলেটা মিল্ক দিতে যাচ্ছে কেন?”

রুদ্র বললো।
“তুমি যার সঙ্গে এতক্ষণ ধরে ফ্লার্টিং করছো সে এই বাড়ির দুধ ওয়ালা।”

কেয়া নাক মুখ কুঁচকে নেয়, এটা কী হলো? হ্যান্ডসাম ছেলেটা দুধ ওয়ালা? ইয়াক।”

রুদ্র কেয়া কে নিয়ে মজা করে বললো।
“ইউ আর দুধ ওয়ালী।”

কেয়া বেশ লজ্জা পেলো, ফার্স্ট টাইম কেউ এভাবে তাকে নিয়ে মজা করছে।রাগে দুঃখে কেয়া হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো। রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো।

সোফার কুশন কভার গুলো চেঞ্জ করছে উৎসা,এর মাঝে কেয়া এসে বললো।
“কিউট গার্ল শুনো না।”

উৎসা ভুবন ভোলানো হাসি মুখে টেনে বলে।
“হ্যা বলো।”
“তোমার মতো বিউটিফুল করে সাজিয়ে দাও আমাকে, তোমার মেকআপ আর ড্রেসিং জাস্ট ওয়াও।”

উৎসা নিজের দিকে বোকা ভাবে তাকালো। সিরিয়াসলি এই মেকআপ সুন্দর?
উৎসা তো শুধু একটু কাজল, হাতে দু’টো চুড়ি আর পায়ে নূপুর ছাড়া কিছুই পড়েনি। তবুও কেয়া জোর করলো, ঐশ্বর্য জিসান কেয়া তিনজনে মিলে ঠিক করেছে সিলেট ঘুরবে। অবশ্য ঐশ্বর্যের মত তেমন একটা ছিলো না,কী বা ঘুরবে? বাংলাদেশ তার একদম পছন্দ নয়।যাই হোক জিসান আর কেয়া জোর করেছে ঐশ্বর্য কে,যার দরুন ঐশ্বর্য রাজী হয়েছে।
উৎসা তৈরি হয়ে নেয়,মনে মনে ঠিক করে আজ এই বিদেশির বাচ্চা কে ভালো করে জ’ব্দ করবে।

চলবে……………।✨