রেড রোজ পর্ব-১১

0
8

#রেড_রোজ
পার্ট [১১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উ’ন্মুক্ত।)
দরজা বন্ধ করে ডিভানের উপর বসে আছে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী।
গায়ে তার কোনো কিছুই নেই,পরণে শুধু একটা শটার। ঐশ্বর্য দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে,ভেতর জ্ব’লছে তার। বারংবার উৎসার নিষ্পাপ চাহনির মুখশ্রী মনে পড়ছে। ঐশ্বর্য ত্বরিতে গিয়ে কাভার্ড খুলে ব্যাগ থেকে সিরি’ঞ্জ বের করে হাতে পু’শ করে। মৃদু কেঁপে উঠল তার বলিষ্ঠ দেহ খানি,ফের ডিভানে এসে গা এলিয়ে দেয়।
নিঃশ্বাস ধীর গতিতে চলছে,যখন ঐশ্বর্য বেশী উত্তে’জিত হয় ঠিক সেই সময়েই ড্রা’গ নেয়। আজকেও তাই করলো ঐশ্বর্য।
দীর্ঘ এক ঘন্টা পর ওয়াশ রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। বেলকনিতে যেতেই বাগানের দিকে চোখ পড়লো।উৎসা কেয়া নিকি এক সঙ্গে আছে।
নিকি আর উৎসা মিলে কেয়া কে জাম্পিং খেলছে।কেয়া কোনো রকমে দরিটা নিয়ে খেলার চেষ্টা করছে, কিন্তু বারংবার পায়ে আটকে ফের আউট হচ্ছে।
ঐশ্বর্য বেলকনির রেলিং ধরে দেখতে লাগলো,কেয়া আউট হতেই উৎসা হাতে নিলো দরিটা।সে খেলা শুরু করে,উৎসার প্রতিটি জাম্পিং এর সাথে সাথে ওর বুক ওঠানামা করছে। ঐশ্বর্যের ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল,শুকনো ঢুল গিললো সে। দ্রুত বেলকনি থেকে সরে এলো।
_____________
“কাল যাবি মানে?”

উৎসা জার্মানি ব্যাক করছে কথাটা শুনে রুদ্র অবাক হলো।উৎসা রুদ্র করে বুঝাতে বললো।
“ভাইয়া আমার যাওয়াটা জরুরি, কলেজে কিছু বলিনি এভাবে হুট করে চলে আসাতে প্রবলেম হচ্ছে।তার উপর হোস্টেলে…..

উৎসা চুপ করে গেল, রুদ্র বললো।
“হোস্টেলে কী হয়েছে?”

উৎসা জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বলে।
“না না কিছু হয়নি,বলতে চাইছিলাম যদি দেরী হয় আর হোস্টেল থেকে বের করে দেয় তখন কী হবে?”

রুদ্র স্বস্তি পেল।
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোর টিকিট বুকিং করছি।”

“থ্যাংকস ভাইয়া।”

“যা আপদ বিদায় হো।”

মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো উৎসা, আফসানা পাটোয়ারী দাঁড়িয়ে আছেন। এতক্ষণ ধরে উৎসা আর রুদ্রের কথা শুনছিল।
রুদ্র অকপটে বলে উঠলো।
“মা বোনের সঙ্গে ভালো ভাবে কথা বলো, আমার কিন্তু এসব পছন্দ নয়!”

আফসানা পাটোয়ারী বললো।
“তুমি চুপ করো, ওদের সাথে এমন ভাবেই কথা বলা উচিত।”

“কী ব্যাপার মিসেস মহিলা সকাল সকাল গটের মতো চেঁচামেচি করছেন কেন?”

আচমকা ঐশ্বর্য রুমে প্রবেশ করে, আফসানা পাটোয়ারী কে সরাসরি অ’পমা’ন করে কথা বললো।
ঐশ্বর্য কে দেখে পিটপিট চোখ করে তাকালো উৎসা। আফসানা পাটোয়ারী বললো।
“ভদ্র ভাবে কথা বলো বেয়াদব।”

ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বললো।
“মিসেস মহিলা আপনার এই স্বভাব টা যাবে না তাই তো?ওই আপনাদের বাঙালিদের কথায় আছে না!যে থালায় খায় সেই থালাই ফুটো করে।হাউ ফানি!”

আফসানা পাটোয়ারী বুঝতে পারলো ঐশ্বর্য ঠিক কী বলতে চাইছে?
“ভালো হয়ে যান ভালো হতে পয়সা লাগে না।যাদের দয়ায় আই মিন যাদের ব্যবসা দখল করে খাওয়া দাওয়া করছেন আপনার আবার তাদের সাথেই গলা বা’জি?দিস ইজ নট ডান মিসেস মহিলা!”

আফসানা তে’তে উঠল।
“তুমি তো ফ্যামিলির মেম্বার না তাহলে এত কথা বলছো কেন?”

ঐশ্বর্য সজোরে লা’থি দিয়ে কেবিন ফেলে দেয়, আঁ’তকে উঠে সবাই। ঐশ্বর্য হিসহিসিয়ে বলল।
“ডোন্ট টক টু মি লাইক দ্যাট।”

ঐশ্বর্য বের হতেই আফসানা পাটোয়ারী বেরিয়ে গেলেন।উৎসা ফুস করে শ্বাস টেনে নেয়। অদ্ভুত!
________________
কাল চলে যাবে সেই জন্য একটু শপিং এ বেরিয়ে উৎসা, ওর সঙ্গে আছে জিসান ,নিকি, রুদ্র আর কেয়া। সাথে ঐশ্বর্য আছে। কিন্তু বরাবরই ঐশ্বর্য এসবে বিরক্ত হয়,তার কাছে সব কিছু ডিসকাস্টিং মনে হয়।
সিলেটের সবচেয়ে বড় শপিং মল সিটি সেন্টারের ভেতরে প্রবেশ করলো সবাই। ঐশ্বর্য কানে হেডফোন লাগিয়ে নেয়, ওদিকে উৎসা কেয়া জিসান নিজেদের মতো শপিং করছে।উৎসা কে টেনে নিয়ে গেলো জিসান।
“মিস বাংলাদেশী এগুলো কী?টেল মি।”

জিসানের হাতে কুর্তা আর পায়জামা।উৎসা মৃদু হাসলো।
“এটা কুর্তা আর পায়জামা। এগুলো ছেলেদের।”

“রিয়েলি?”

জিসান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,উৎসা ভালো দেখে একটা কুর্তা আর পায়জামা নিয়ে জিসানের হাতে দেয়।
“এইটা ট্রাই করো ভাইয়া আপনাকে ভালো লাগবে।”

জিসান জামা নিয়ে ট্রায়েল রুমে গেলো, ঐশ্বর্য আড় চোখে দেখছে উৎসা কে।উৎসা সাদার মধ্যে একটা কুর্তা আর পায়জামা এনে ঐশ্বর্যের সামনে ধরলো।
“ঐশ্বর্য ভাইয়া এটা দেখুন আপনার জন্য।”

ঐশ্বর্য নির্নিমেষ তাকালো উৎসার দিকে, মূহুর্তে চোয়াল শক্ত করে নেয়।উৎসা ভয় পেলো, হয়তো ভাইয়া ডাকটা পছন্দ হয়নি ওর।
“স্যরি। এটা দেখুন।”

ঐশ্বর্য উৎসার হাত সরিয়ে নেয়।
“আই ডোন্ট লাইক দিস,মুভ ইট।”

ঐশ্বর্য সরিয়ে দেয়, মূহুর্তে উৎসার মুখটা মলিন হয়ে গেল। ঐশ্বর্য কে বেশীরভাগ সময়ই সাদায় দেখেছে উৎসা,তাই তো ভাবলো এটা পছন্দ হবে।
উৎসা গিয়ে কুর্তা আর পায়জামা রেখে দিলো, এরপর নিজের জন্য কিছু জামা আর লেডিস জিন্স আর জ্যাকেট এবং টপস নিলো।যাতে জার্মানি গিয়ে পড়তে পারে।
জিসান বেরিয়ে এলো,তাকে বেশ সুদর্শন লাগছে।নিকি আচমকা ওর দিকে চোখ পড়তেই থমকে যায়, অসম্ভব সুন্দর লাগছে এই ছেলে কে।
জিসান এগিয়ে এলো।
“গাইস হাউ ডু আই ফিল ইন দিস ড্রেস?”

উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
“লুকিং লাইক ওয়াও।”

নিকি দুষ্টুমি করে বলে।
“বাঁদর।”

জিসান নিকির কানে ফিসফিস করে বলল।
“লুকিং সো হট অ্যাম রাইট?”

নিকি মুখ বাঁ’কিয়ে নেয়।
ঐশ্বর্য কিছু একটা ভেবে অন্য দিকে চলে গেলো। ঘন্টাখানেক পরেই সবাই ব্লু ওয়াটার মার্কেটে গেলো,সেখান থেকে বেশ শপিং করে নেয়।
কিছুক্ষণ পরে সবাই ওয়াকওয়ে পার্কে গেলো, এটা মূলত কাপলদের জন্য। তবুও সবাই ভেবেছে আজকে একটু আনন্দ করা যাক।
খড়ের ছাউনি আর বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি উন্মুক্ত ঘর। ভেতরে পাতা আছে বাঁশের বেঞ্চ। উন্মুক্ত ঘরের ভেতরে ও আশপাশে লাল-নীল বৈদ্যুতিক আলোর রোশনাই।
সবাই গিয়ে গাছের পাশের একটা বেঞ্চে বসলো,উৎসা আর জিসান গিয়ে সবার জন্য ডাবের পানি নিয়ে আসে। কিন্তু ঐশ্বর্য এর আগে কখনও খায়নি,উৎসা ঐশ্বর্য কে বললো তাকে অনুসরণ করতে।
নিকি জিসান কে দেখে দিচ্ছে, এদিকে কেয়া কখন থেকে রুদ্র কে দেখে দেখে পাইপ দিয়ে টেনে খাচ্ছে।
উৎসা পুরো ডাব উল্টো করে মুখে ধরে পানি খাচ্ছে,যার দরুন কিছুটা পানি গলা দিয়ে বুকের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঐশ্বর্য শুকনো ঢুল গিললো, মূহুর্তে যেনো তার মধ্যে সব কিছু শুকিয়ে গেলো। ভীষণ তৃষ্ণার্ত মনে হচ্ছে তাকে,উৎসা খাওয়া শেষে স্বভাব সুলভ হাসলো।
“এবার আপনি ট্রাই করুন।”

ঐশ্বর্য খেলো, পুরোটাই। তবে এখনও তার তৃষ্ণা মেটেনি, মিটবে কী করে? তার পৌরুষ জেগে উঠেছে।এই অস’ভ্য মেয়ে যখন তখন কেমন একটা আচরণ করছে? ঐশ্বর্যের মন চাচ্ছে ওকে পি’ষে ফেলতে।
ঐশ্বর্য বেঞ্চে হাত শক্ত করে চেপে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় সবার, তার মাঝে সবাই মিলে কাচ্চি ডাইনে ডিনার করে নেয়।
বাড়িতে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় উৎসা,কাল সকালে সে চলে যাবে। উফ্ আবারো একা হয়ে যাবে ওখানে গেলে। বিরক্ত লাগছে উৎসার,এত দিন পর ঐশ্বর্য কেয়া জিসান নিকি রুদ্র সবাই এক সঙ্গে থাকবে আর উৎসা?উৎসা কী না ওই জার্মানিতে পচ’বে?
হতাশ হলো উৎসা,কী করবে? যেতে তো হবেই।

আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো উৎসা, তৎক্ষণাৎ তার রুমে প্রবেশ করলো কেউ হয়তো আ’গুন্তক। এদিকে উৎসা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। আগুন্তক ধীর পায়ে এগিয়ে এলো উৎসার পাশে। জানালার খোলা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে উৎসার মুখশ্রী। আগুন্তক গিয়ে ওর পাশে বসলো, কপালে তর্জনী আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়।তাতে যেনো আগুন্তকের সত্ত্বা নড়ে উঠে। আগুন্তক ধীর গতিতে উৎসার ওড়না সরিয়ে দেয়,গলার দিকে হাত ছোঁয়াতেই উষ্ণতা অনুভব করে।

গভীর ঘুমের মাঝে তন্দ্রা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসে উৎসা, পিটপিট চোখ করে তাকানোর চেষ্টা করছে।কী আশ্চর্য!সে তাকাতেই পারছে না। কিন্তু কেউ যেনো তাকে গভীর ভাবে স্পর্শ করলে, উৎসা মৃদু কেঁপে উঠলো।
__________
রুমে ঢুকেই নিজের বেডে জিসান কে শুয়ে থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হলো ঐশ্বর্য।
“হেই ডে’ভিলের বাচ্চা!ওয়ার ইউ হেয়ার?”

জিসান অসহায় ফেস নিয়ে বলল।
“ব্রো আমার রুমে আমার রুমে ককরোজ।”

“সো হোয়াট!তুই কি মেয়ে? গার্লস আর আ্যাফরাইড অফ ককরোজ।”

“আই ডোন্ট নো, আমি কিন্তু আজকে তোর রুমেই থাকবো।”

“নো ওয়ে গেট আউট।”

“প্লিজ ব্রো?”

ঐশ্বর্য জুতা খুলে ওর উপর ছু’ড়ে দেয়।
“তুই কি আমার গার্লফ্রেন্ড? আমার রুমে থাকবি!”

জিসান মজা করে বললো।
“ওকে মনে কর একদিনের জন্য আমি তোর গার্লফ্রেন্ড।অ্যাম ইওর গার্লফ্রেন্ড ফর অ্যা ডে।”

ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো।
“ওকে ফাইন আয় তোর সঙ্গে ফিজিক্যাল নি’ডস্ করি!”

জিসান নাক ছিটকে বললো।
“রিক,ইয়াক ইয়াক।সর সর।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।
“তুই তো বললি!”

“নো ওয়ে, আমি এসবে নেই।”

“ওকে,থাক তবে জাস্ট ফর টুডে।”

“ইয়েস।”

চলবে……………..✨।