রেড রোজ পর্ব-২৭+২৮

0
6

#রেড_রোজ
পার্ট [২৭]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে পড়ে আছে উৎসা। ঐশ্বর্যের হাসি যেনো থামছেই না,বেশ বিরক্ত হয় উৎসা। রাগে দুঃখে এক মুঠো কাদা তুলে ঐশ্বর্যের উপর ছুড়ে দেয়।
“ইয়াক,হোয়াট ডিড্ ইউ ডু?”

উৎসা মুখ বাঁকিয়ে বললো।
“আমাকে বিরক্ত করার সময় মনে ছিলো না! এখন দেখুন আর কী করি?”

উৎসা কথাটা বলতে বলতে ঐশ্বর্যের হাত ধরে টেনে কাঁদায় ফেলে দেয়। ঐশ্বর্য চমকে উঠে, এমনিতেই তার এলার্জি আছে।তার উপর এখন এভাবে কাঁদায় মাখো মাখো হয়ে গেল।

“স্টপ রেড রোজ।”

ঐশ্বর্য উঠে গেল,উৎসা কে টেনে তুললো। ঐশ্বর্য দ্রুত বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।তার ইমিডিয়েটলি শাওয়ার নেওয়া প্রয়োজন।
_____________
“তোর সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে রিক।”

আফসানা পাটোয়ারী ঐশ্বর্যের রুমে এলো, ঐশ্বর্য আই প্যাড দেখছিল। আফসানা পাটোয়ারী কে দেখে ভ্রুক্ষেপ করলো না। কিন্তু আচমকা আফসানা পাটোয়ারী বলে তার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চায়। ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বলে।

“ফাইভ মিনিট.. যা বলার বলুন।”

আফসানা বিরক্তের রেশ টেনে বললো।
“তোমার প্রবলেম কী? কেনো এসেছো এখানে?বার বার কেন আমাদের বাড়িতে আসছো তুমি?”

ঐশ্বর্য এতক্ষণ যাবত আই প্যাডের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু এখন আই প্যাড ডিভানের উপর রেখে পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আফসানা পাটোয়ারীর দিকে।

“প্রথমত এটা আপনার বাড়ি নয় মিসেস মহিলা!আর সম্পর্কের টান যদি ধরি, তাহলে হয়তো এই বাড়িটা আমার ফুপা আর ফুপির তাই না!”

আফসানা দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল।
“দেখো তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো! আর কোন অধিকারে থাকবে হ্যা? সবসময় সব কিছু ছি’নিয়ে নেওয়া যায় না।”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“সিরিয়াসলি মিসেস মহিলা? আপনি বলছেন ছিনিয়ে নেওয়া যায় না! আচ্ছা অনেক গুলো বছর আগে যখন একজনের স্বামী কে ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তখন মনে ছিল না?”

“ঐশ্বর্য!”

“আস্তে কথা বলুন। আমি যা বলছি একদম সত্য,সেই মহিলার কী অবস্থা করেছিলেন মনে পড়েছে?তার সবচেয়ে বড় সম্পদ নিয়ে নিয়েছেন। এখন আবার আরেকজনের বাড়িতে তারই পদবী নিয়ে ঘুরঘুর করছেন।শেইম অন ইউ মিসেস মহিলা।”

আফসানা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে তার মন চাচ্ছে এই ছেলে কে মে’রে ফেলতে। এত বড় সাহস তাকে অপমান করা!
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সব ঐশ্বর্যের আর আফসারর কথোপকথন শুনলো উৎসা।
মনের মধ্যে প্রশ্ন উঁ’কি দিচ্ছে,সে যতটুকু শুনেছে। ঐশ্বর্যের মায়ের সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পরেই আফসানার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে শহীদের। তাহলে এখন ওরা আবার এসব কী বলছে?
_________________
সন্ধ্যার আকাশ, সূর্য মামা ডুবে যাচ্ছে। চারিদিক লালচে আভায় আর’ক্তি’ম হয়ে উঠেছে,পাখিরা ফিরছে নীড়ে।
এই সময়টায় ঐশ্বর্য ঘুমাচ্ছে,কী অদ্ভুত তাই না! মাগরিবের আজান কর্ণ স্পর্শ করতেই ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসলো ঐশ্বর্য।
সে বিরক্ত,খুব বিরক্ত।একই তো এখানে কমফোর্টেবল ফিল করছে না।তার উপর ইদানিং তার ঘুমও কম হচ্ছে। এলোমেলো চুল গুলো ঠিক করতে করতে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো ঐশ্বর্য। মাথাটা ধরেছে,এই মুহূর্তে কড়া করে এক কাপ কফির প্রয়োজন তার।
ঐশ্বর্য রুম থেকে বের হয় ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্যে। ড্রয়িং রুমে এসে থমকে গেল ঐশ্বর্য, সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি কে দেখে হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে বেড়ে গিয়েছে।
এলোমেলো চুল গুলো কপালে ছড়িয়ে আছে,মুখে ক্লান্তির ছাপ।পরণের হালকা বাদামি রঙের ওড়না খানি দু’পাশে ঝুলছে। খুব সাধারণ সে, বাদামী রঙের সালোয়ার কামিজে অপূর্ব লাগছে। ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
উৎসা পাটোয়ারী,এক অদ্ভুত মেয়ে।এই মেয়ে কে দেখে বারংবার নিজেকে সংযত করতে অক্ষম ঐশ্বর্য।একেক সময় একেক রূপে নিজেকে প্রদর্শন করে এই মেয়েটি। এই তো জার্মানিতে জ্যাকেট জিন্স টপস্ পড়েছে।তাতেও বারবি ডল এর মতো লাগছিল।আর সেদিন রাতের লাল শাড়িতে নতুন ভাবে দেখিয়েছে।আর আজকে! একদম বাঙালি মেয়েদের মতো সালোয়ার কামিজ।

উৎসা এদিক থেকে ওদিক বারংবার যাচ্ছে আসছে,যার দরুন পায়ের নূপুরের ছন ছন শব্দ কানে তীব্র ভাবে লাগছে ঐশ্বর্যের।
আচমকা নিজের হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে উৎসা। ঐশ্বর্য!হাত ধরেছে তার। উৎসা খানিকটা বিব্রত বোধ করছে।
“কী হয়েছে?”

ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে বললো।
“কিছু মিছু।”

উৎসা থতমত খেয়ে গেল,চোখ পা’কিয়ে বলল।
“অস’ভ্য।”

ঐশ্বর্য আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ আছে কিনা?তবে কেউ থাকলেও পাত্তা দেয় না ঐশ্বর্য। আচমকা অদ্ভুত কান্ড ঘ’টিয়ে বসলো।
টুপ করে উৎসার গালে চুমু খায়,চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল উৎসার।মনে হচ্ছে এখুনি মনি কোঠা থেকে বেরিয়ে আসবে।উৎসা মুখ খুলে কিছু বলতে,তবে তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য আবারও চুমু খেল। উৎসা যেনো মূর্তি হয়ে গেছে, এদিকে ঐশ্বর্য সিস বাজাতে বাজাতে কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল।

সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে কেয়া ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। দৌড়ে বাইরে গেল সে, জিসান কে ঐশ্বর্যের কা’ন্ড বলতে।বের হতে গিয়ে ঘটলো আরও একটি বিপ’ত্তি। রুদ্রর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে হাতে খানিকটা ব্যথা অনুভব করলো কেয়া।
“উফ্ কী করছো মিস সিনিয়র!দেখতে পাও না নাকি?”

কেয়া ফুঁসে উঠে,একে তো ধাক্কা দিয়েছে,ব্যথাও সেই পেলো! এখন আবার বলছে চোখে দেখিনা?

“এই যে মিস্টার হ্যান্ডসাম একদম বাজে কথা বলবেন না।”

রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো।কেয়া বিরক্ত হয়ে বলল।
“আমি তো জিসানের কাছে যাচ্ছিলাম, আপনি তো সামনে চলে এলেন।ডিসকাস্টিং।”

রুদ্র বেশ ভাব নিয়ে বললো।
“সিনিয়র আপনারে হে’ব্বি লাগতেছে।”

কেয়া ভ্রু কুঁচকে নেয়।
“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই হে’ব্বি?

“মানে বিউটিফুল,একটু বেশি সুন্দর।”

কেয়া চোখ গুলো ছোট ছোট করে নেয়।
“উঁহু, আমি আপনার সিনিয়র।”

রুদ্র হামি তুলে বললে।
“ব্যাপার না, তবুও আপনাকে বাচ্চাদের মতো দেখতে।আর আমাকে আপনার সিনিয়র মনে হয়,তবে একটা কথা বলি। আপনার আমার জুটি কিন্তু সেই লাগবে।কি বলেন মিস সিনিয়র?”

কেয়া মুখ বাঁকিয়ে নেয়।
“হুউ ডার্টি ম্যান।”

“হেই।”

কেয়া যেতে যায়, রুদ্র ওর হাত ধরে। কেয়া নিষ্পলক তাকালো, রুদ্র ঠোঁট গোল করে চুমু ছু’ড়ে দেয়। কেয়ার ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল, শুকনো ঢুক গিললো সে।এই প্রথম ভেতরে ভেতরে কিছু ফিল হচ্ছে তার। এর আগেও অনেকবার সঙ্গে ডেটে গিয়েছে, আরো কত কী?সব কিছুই মজার ছ’লে করেছে। কিন্তু আজ প্রথম ভেতর থেকে কিছু অনুভব করছে সে।
“ছাড়ুন,ধুরা ধুরা পাগল মানুষ।”

রুদ্র কেয়ার কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো। কেয়া দৌড়ে জিসানের কাছে যেতে লাগল। রুদ্র বুঝলো, মেয়েটা অবুঝ।যতই শরীরে বড় হোক! মনের দিক থেকে এখনো বাচ্চা।
__________________
“তুই কি সত্যি ঐশ্বর্যের সঙ্গে থাকতে চাস উৎসা?”

উৎসা নিজের রুমে কাপড় গুছিয়ে আলমারি থেকে রাখছিল।সেই সময় মিহি ওর রুমে এসেছে। হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছে উৎসা।
মিনমিনে গলায় বলল।
“হঠাৎ এই প্রশ্ন আপু?”

মিহি বিছানার কাছে বসলো।
“দেখ বোন আমি জীবনে যে ভুলটা করেছি,তা তোর জীবনে রিপিট হোক তা আমি চাই না।”

উৎসা বুঝলো,তার বোন এখনও নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বি’শ্রী ঘটনা ভুলতে পারেনি।
“প্লিজ আপু তুমি এসব বলো না।ভুলে যাও সব কিছু।”

মিহি মলিন হাসলো,চাইলেই কি সব ভোলা সম্ভব?
“দেখ আমি সব আস্তে আস্তে ভুলার চেষ্টা করছি। এখন তুই বল,কী ব্যাপার ঐশ্বর্যের?”

উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,কি বলবে? ঐশ্বর্য তো তাকে ভালোই বাসে না।
“কী রে চুপ কেন?বল?”

“জানি না আপু,তবে…….

“রেড রোজ কাম ফার্স্ট।”

ঐশ্বর্য উৎসার কথার মাঝখানে এসে উৎসা কে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।মিহি কিছুই বুঝলো না।

ঐশ্বর্য উৎসা কে রুমে এনে ডোর লক করে দেয়
“আরে কী করছেন?ছাড়ুন, সবসময় এত টানাটানি করেন কেন?”

ঐশ্বর্য উৎসার হাতের উল্টো পিঠ চুমু খায়।
“তুমি কাছে আসো না বলেই এত টানাটানি করতে হয় বেইবি।”

উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।
“সবসময় বাজে কথা বলেন।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো। উৎসা নাক মুখ কুঁচকে বলে।
“আচ্ছা আমাকে কেন ডেকেছেন?”

ঐশ্বর্য ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
“এমনি, ভালো লাগছিল না,তাই ভাবলাম তুমি কিছুক্ষণ কাছে থাকো। তুমি কাছে থাকলে ভালো লাগে।”

“আচ্ছা তাই নাকি? আপনি আর আপনার বন্ধু গন, সবাই আস্ত পাগল।আর এই সব পাগল আমাদের বাড়িতে এসে হাজির।”

ঐশ্বর্য বিছানায় গিয়ে বসলো। উৎসা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
ঐশ্বর্য বললো।
“সত্যি তুমি ভালো লাগছে না ইদানিং।”

উৎসা চুপসে গেল, তবুও কী এই লোকটা বলবে ভালোবাসে না?
“লাভ মি?”

ঐশ্বর্য চোখ বুজে জড়ানো কন্ঠে বলে।
“নো।”

“উঁহু,ইউ লাভ মি।”

“আই ডোন্ট লাভ ইউ!”

“সত্যি?”

“ইয়া।”

উৎসা নিশ্চুপ, ঐশ্বর্য আর কিছু বললো না।কিয়ৎক্ষণ চললো নিরবতা। অতঃপর? অতঃপর ঐশ্বর্য টুকরো টুকরো চুমু খায় উৎসার ঘাড়ে ‌। মৃদু কেঁপে উঠলো উৎসা, ঐশ্বর্য কে কিছুটা ধাক্কা দিলো। ঐশ্বর্য উৎসার পেট চেপে ধরে আরো জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের সঙ্গে। ঐশ্বর্যের বেসামাল স্পর্শে ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠছে উৎসা। ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো,উৎসা আবেশে চোখ বুজে নিঃশ্বাস টেনে নেয়।
“ছাড়ুন, আমাকে ছুঁবেন না।”

“বাট হোয়াই? তুমি তো আমার ওয়াইফ।”

উৎসা ঐশ্বর্যের হাত ছাড়িয়ে দূরে সরে গেল।
“ওয়াইফ ওই পেপারে, ইসলামী শরিয়তে কবুল বলিনি।যান সরেন।”

“হেই সুইটহার্ট…..

উৎসা দাঁড়ালো না, দৌড়ে বেরিয়ে গেল। ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়। ইসলামী শরিয়তে কবুল! প্রয়োজন হলে বলিয়ে নেবে।

চলবে………….।✨

#রেড_রোজ
পার্ট [২৮]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

“অ্যাম রিয়েলি স্যরি।নিকি প্লিজ আমার উপর অ্যাংরি হয়ে থেকো না!”

নিকি মুখ ঘুরিয়ে নিলো, জিসান আসার পর থেকেই তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিকি তেমন একটা পাত্তা দেয়নি। ইভেন জিসানের সামনে পর্যন্ত খুব একটা যায়নি।
এই তো কিছুক্ষণ আগেই রুম থেকে বের হতেই জিসান কে দেখতে পেলো সে।নিকি বরাবরের মতো নিজের পথ বদলে বাইরের দিকে চলে গেলো। জিসান ওর পিছু পিছু যায়,নিকি হাঁটতে হাঁটতে বাগানে এসে দাঁড়িয়েছে। জিসান গুটি গুটি পায়ে এসে নিকির পিছনে দাঁড়ালো।

“মাই অ্যাংরি বার্ড অ্যাম স্যরি।”

অ্যাংরি বার্ড শুনে ভ্রু কুঁচকে নেয় নিকি।
“আপনার সঙ্গে কথা বলব না আপনি। ইংরেজি সাহেব বলে নিজেকে সেলিব্রিটি ভাবা বন্ধ করুন।”

নিকির কথা শুনে ঠোঁট কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল জিসানের।সে সেলিব্রিটি ভাব নিয়ে ঘুরে?ও মাই গড!

“নো নো অ্যাংরি বার্ড তুমি ভুল বোঝচ্ছো।”

নিকি দুহাত বুকে গুজে বললো।
“ওহ্ তাই নাকি।তা কারো ম্যা’সেজের রি’প্লা’ই না দেওয়া,কল রিসিভ না করাকে কী বলে হ্যা? অবশ্যই সেলিব্রিটি,তাই তো এত ভাব নিচ্ছিলেন।”

জিসান অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো নিকির দিকে।মলিন মুখে বলে।
“অ্যাম স্যরি।”

নিকি গললো না, জিসান বুঝতে পারছে না এই অ্যাংরি বার্ডের রাগ কি করে ভা’ঙাবে?
জিসান ফট করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল,কান ধরে বাচ্চাদের মতো করে বলে।
“অ্যাম স্যরি অ্যাংরি বার্ড।”

নিকি চমকালো, ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার।এই ছেলেটা বোকা। ইশ্ কী সব করে?
“আরে কী করছেন? উঠুন।”

নিকি জিসান কে টেনে তুললো। জিসান সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো।
“অ্যাংরি বার্ড তোমাকে মিস করেছি।”

নিকির মুখশ্রী জুড়ে লজ্জারা বিড় জ’মা’লো।
“পাগল।”

“ইয়া অফকোর্স। তোমার জন্য অ্যাংরি বার্ড।”

নিকি ফিক করে হেসে উঠলো।
_____________

ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে আছে ঐশ্বর্য। অনেক দিন ধরে অফিসের কাজ করেনি, আজকে কিছু কাজ এগিয়ে রাখবে বলে ভেবেছে। ঐশ্বর্যের পাশেই ফাইল নিয়ে বসে আছে জিসান।
“এই দেখ এই ফাইল গুলোতে কিছু ডিল এর ক’পি আছে।”

জিসান ঐশ্বর্যের দিকে ফাইল গুলো এগিয়ে দিলো, ঐশ্বর্য চোখ বুলিয়ে নেয় ফাইল গুলোতে।
“আচ্ছা তুই বরং যারা যারা আছে এই ফাইলে, ওদের একটা লিস্ট কর।আর ওইটা হ্যারেন কে পাঠিয়ে দে।”

জিসান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো।
“হ্যারেন তো ছুটিতে আছে।”

ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত হয়।
“আচ্ছা তুই আগে লিস্ট কর, এরপর বাকিটা দেখছি।”

“ওকে।”

“আসবো?”

মিহি কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। ঐশ্বর্য শান্ত ভাবে বললো।
“হ্যা এসো।”

মিহি ধীর গতিতে রুমে প্রবেশ করেছে।
“স্যরি তোমাদের ডিস্টার্ব করছি।এই যে তোমাদের কফি।”

মিহি ঐশ্বর্য আর জিসান দুজনের হাতেই কফি দিলো। জিসান সৌজন্য মূলক হাসলো।
“ঐশ্বর্য তোমাকে কিছু বলতে চাইছি!”

ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দিয়ে বললো।
“হ্যা বলো।”

মিহি সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে বললো।
” দেখো ঐশ্বর্য আমার বোন উৎসা কিন্তু খুবই সহজ সরল।ও ততটা প্যাঁ’চ বুঝে না। আমি যতটুকু শুনলাম তোমরা বিয়ে করেছো।”

ঐশ্বর্য সুঁচালো চোখ করে তাকালো।
মিহি ফের বলতে শুরু করলো।
“তুমি যদি সত্যি আমার বোন কে ভালোবাসো তাহলে আমার কোনো প্রবলেম নেই। কিন্তু যদি শুধু….. আমি কিন্তু চাই না আমার বোনের জীবন আমার মতো হোক।তাই আশা করি অন্তত একটু তুমি বুঝবে।”

ঐশ্বর্য মাথা দুলালো।মিহি বের হয়ে গেল, জিসানও নিজের কাজে বের হলো।
ঐশ্বর্য বেশ বিরক্ত, সত্যি কী সে উৎসার সঙ্গে অন্যায় করছে?উৎসা একদম সাধারণ, নিজেকে অন্যদের মতো করতে চায় না।এই ব্যাপারটা বেশ টানে ঐশ্বর্য কে,সে চায় উৎসা সবসময়ের জন্য তার সঙ্গে থাকুক।
কথা গুলো ভাবতেই ভেতরে থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো। ঐশ্বর্য বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো, চোখ গুলো গেল বাগানের দিকে। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সামনের মেয়েটির দিকে।উৎসা ফুল গাছ গুলোতে পানি দিচ্ছে,আশপাশটা পরিষ্কার করছে নিজে। ঐশ্বর্য এখানে আসার পরেই অনেক বার দেখেছে,মালি থাকতেও উৎসা নিজে গাছ গুলোর যত্ন নেয়।উৎসা জবা ফুলের কাছে গেল, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কী না? যখন দেখলো কেউ নেই তৎক্ষণাৎ টুক করে ফুলে একটা চুমু খেল সে। ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য উপরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখলো।সেও মৃদু হাসলো।
ঐশ্বর্য একটু হতাশ, সত্যি ভুল করেছে।উৎসার প্রতি ফিলিংস টা বোঝাতে পারবে না কাউকে।তবে এটার নাম কি ভালোবাসা দেওয়া যায়?

বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে। আফসানা পাটোয়ারী বড় ভাইয়ের ছেলে মাহমুদ।সেই উপলক্ষে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে আফসানা পাটোয়ারী।
ঐশ্বর্য ওনার এইসবে সবসময় বিরক্ত বোধ করেন। অন্যের জীবন শেষ করে দিয়ে নির্ল’জ্জের মতো এখনও বেঁচে আছে।

রুমে প্রবেশ করতেই কপাল কুঁচকে নেয় ঐশ্বর্য। শহীদ আগে থেকেই ওর ঘরে বসে আছে।

“এ কি? আপনি এখানে কেন?”

শহীদ মিহি হাসলেন।
“তোমার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।”

ঐশ্বর্য ডিভানের উপর গিয়ে বসলো।
“যা বলার তাড়াতাড়ি বলুন। এমনিতেই আপনার কোনো কথা শুনার ইচ্ছে বা আগ্রহ নেই।”

শহীদ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো,তবে সত্যি তার কথা বলাটা জরুরি।

“আচ্ছা ঐশ্বর্য সত্যি করে বলবে মনিকা কোথায়?”

ঐশ্বর্য খানিকটা অবাক হয়, কিছুটা বিব্রত বোধ করে। কিন্তু তা প্রকাশ করেনি, বরংচ মুখে গাম্ভীর্য টেনে বলে।

“মাম্মা কে আপনার এত কিসের দরকার? না মানে বুঝতে পারছি না! হঠাৎ আমার মাম্মার খবর নিচ্ছেন!”

শহীদ কিছুটা বিব্রত বোধ করেন।
“দেখো ঐশ্বর্য,উনি তোমার মা হওয়ার আগে কিন্তু আমার ওয়াইফ।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,যা তাচ্ছিল্য বলে মনে হচ্ছে শহীদের কাছে।
“ওয়াইফ! সিরিয়াসলি! আমি সত্যি আজ অবাক হচ্ছি। আচ্ছা ওয়াইফ এটা আপনার আগে মনে ছিলো না? আমাকে একটা কথা বলুন যখন আমার মাম্মা কে ছেড়ে চলে এসেছিলেন, তখন ওয়াইফ হয় উনি। এটা কি মনে ছিলো না!”

“দেখো ঐশ্বর্য…….

“চুপ করুন। আপনার সঙ্গে অহেতুক কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাই না আমি।চলে যান এখান থেকে।”

“কিন্তু ঐশ্বর্য মনিকা সত্যি মা’রা গেছে?”

ঐশ্বর্য রাগে ফুসে উঠে।
“সেগুলো আপনাকে বলতে বিন্দু মাত্র ইন্টারেস্ট নেই আমার।”

শহীদ আর কিছুই বলতে পারলো না। রুম থেকে বের হতেই ঐশ্বর্য ডিভানে সজোরে ঘু’ষি মা’রলো।এই লোকটা কে আর মিসেস মহিলা কে একদম স’হ্য করতে পারে না সে।কেউই বা স’হ্য করবে?ওরা দু’জন মিলে ওর মাম্মার জীবন শেষ করে দিয়েছে। ঐশ্বর্য চাইলেও ওদের কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।
_________________
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ঐশ্বর্য।
“উঁহু..

মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে মৃদু হাসলো ঐশ্বর্য।উৎসা এসেছে,তা বেশ বুঝতে পারছে ঐশ্বর্য।

“কী ব্যাপার জিসানের মিস বাংলাদেশী! হঠাৎ এত রাতে?”

রাত সাড়ে বারোটার কাছাকাছি।উৎসা কিছু জানতে চায় ঐশ্বর্যের কাছে থেকে তাই তো আসা।হাতে আছে দু কাপ কফি।উৎসা এগিয়ে গিয়ে ছাদে রাখা দোলনায় বসে পড়লো।

“এমনি ঘুম আসছিল না। তাই ভাবলাম ছাদে যাই! কিন্তু এখানে এসে তো দেখলাম আপনাকে,এই জন্য কফি নিয়ে এসেছি।”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো।
“তাই!”

উৎসা উপর নিচ মাথা দুলায়।কফি কাপ এগিয়ে দেয় ঐশ্বর্য কে।
“সুগার ফ্রি।”

ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দেয়,উৎসা হাঁসফাঁস করছে।তার মনে হাজারো প্রশ্ন,সে গুলোর উত্তর চাই।

“বলছিলাম কী চলুন একটা গেইম খেলি!”

ঐশ্বর্য কপাল কুঁচকে নেয়।এই রাতবিরেতে গেইম?
“গেইম!”

উৎসা কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলে।
“হুঁ হুঁ।দারুন একটা গেইম।খেলবেন আপনি?”

ঐশ্বর্য হা করে শ্বাস টেনে নেয়।
“ওকে।লেটস্ স্টার্ট।”

উৎসা খেলা বুঝিয়ে দেয়।
“ধরুন আমি আপনাকে প্রশ্ন করব! সেটার সত্যি সত্যি উত্তর দিতে হবে কিন্তু?আর আপনিও আমাকে প্রশ্ন করবেন,আমিও সত্যি সত্যি উত্তর দেব।”

ঐশ্বর্য বাঁ’কা হাসলো।
“ওকে।”

উৎসা কিছুটা স্বস্তি পেলো।যাক লোকটা অন্তত ঘাড় ত্যা’রামো করেনি।

“তো আপনি আগে প্রশ্ন করুন?”

ঐশ্বর্যের মাথা দুষ্টু বুদ্ধি এলো।
“লাইফে কখনো কাউকে ফ্রেঞ্চ কিস করেছো?”

উৎসা বেজায় ক্ষে’পে গেল।কী শ’য়তা’ন লোক রে ভাবা!কী সব জিজ্ঞাস করে?

“কী হলো বলো?”

উৎসা ফুস করে উঠে।
“কখনও না। আমি কী কোনো ছেলেদের সঙ্গে মিশি নাকি? আশ্চর্য!”

ঐশ্বর্য উৎসা কে বিরক্ত করে বেশ মজা নিলো।
উৎসা বললো।
“এবার আমার টার্ন। আচ্ছা আপনার মা কোথায়?”

ঐশ্বর্য মিহি হাসলো।সে প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছে উৎসা তার সম্পর্ক জানতে চায়।তাই তো এই রাতবিরেতে খেলার কথা বলেছে।অথচ অন্য সময় হলে ঐশ্বর্যের কাছাকাছি আসলেই ভয়ে সিঁ’টিয়ে যেতো উৎসা।
ঐশ্বর্য কফি কাপ রেখে উৎসার দোলনায় এসে বসলো।

“আমাকে জানার এত ইন্টারেস্ট?”

উৎসা চুপসে গেল, মিনমিনে গলায় বলল।
“আমি তো কনফিউশন দূর করতে চাচ্ছিলাম।”

ঐশ্বর্য উৎসার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে টিপুনি কে’টে বলে।
“আহারে বেচারি!”

উৎসা মুখ বাঁকিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো।উৎসা অন্য দিক তাকিয়ে বলে।

“বলবেন কি না বলুন? না হলে আমি আমার বিউটিফুল ঘুম টা নষ্ট করে এখানে আসতাম না।”

ঐশ্বর্য উৎসার বাচ্চামো গুলো দেখলো। আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে উৎসা কে।উৎসা চমকালো,ভ’ড়কালোও বটে।
“রেড রোজ তুমি অন্তত থেকে যাও! সবাই চলে গিয়েছে,অ্যাট লিস্ট তুমি থাকো।”

ঐশ্বর্যের কথা সব মাথার উপর দিয়ে গেল উৎসার। সবাই চলে গেছে মানে? আচ্ছা ঐশ্বর্যের কী হয়েছে?সে কী সত্যি খারাপ?নাকি তার আশেপাশের মানুষ গুলো তাকে খারাপ বানিয়েছে?

চলবে…………..।✨