#রেড_রোজ
পার্ট [৩১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
“বিয়ে করবি না মানে?আই উইল কি’ল ইউ, শেষ করে দেব।”
ঐশ্বর্যের দাবাং হাতের থা’প্প’ড় খেয়ে ফ্লোরে লু’টিয়ে পড়ে আছে। ঠোঁট কে’টে র’ক্ত বের হচ্ছে।
ঐশ্বর্য ক্লান্ত স্বরে বলল।
“সুইটহার্ট তুই আমাকে রাগাস কেন?”
উৎসা চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস টেনে নেয়। ঐশ্বর্য ভীষণ ভ’য়ংকর,এই তো কিছুক্ষণ আগেই মাহমুদ ডিরেক্ট উৎসার রুমে চলে এলো তার সঙ্গে কথা বলতে। উৎসা মাহমুদ কে দেখে প্রচন্ড রাগ হয়।
“একী মাহমুদ ভাইয়া আপনি আমার রুমে কেন?”
মাহমুদ বি’শ্রী হাসলো।
“উৎসা আমি তো তোমার সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি।”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।
“দেখুন ভাইয়া আপনি প্লিজ রুম থেকে বের হন।”
মাহমুদ চট করে উৎসার হাত ধরে ফেলল।
“উৎসা বিশ্বাস করো তোমাকে দেখলে হুঁ’শ থাকে না।”
“অস’ভ্য ছাড়ুন আমার হাত?”
“না জানু তোমাকে এত্ত সহজে কী করে ছাড়ি?”
উৎসা নিজের হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো,যেই মাহমুদের গালে চ’ড় দিতে যায় তৎক্ষণাৎ মাহমুদ ওর হাত ধরে ফেলে। অদ্ভুত ভাবে স্পর্শ করে, মোলায়েম ভাবে ছুঁতে লাগলো।
“নির্ল’জ্জ ছাড় আমার হাত।”
উৎসা মাহমুদ কে সজোরে লাথি দিয়ে দরজার উপর ফেললো।
“আর যদি কখনও আপনাকে আমার রুমে দেখি তাহলে……
আর কিছু বলার আগেই ঐশ্বর্য কে দেখতে পেলো উৎসা, তৎক্ষণাৎ মাহমুদ বেরিয়ে গেল।
মাহমুদ বের হতেই দরজা লক করে দেয় ঐশ্বর্য। আচমকা উৎসা কে সজোরে থা’প্প’ড় বসালো।
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“আপনার সঙ্গে থাকব না আমি, আমি আপনাকে বিয়ে করব না।”
বিয়ে করবে না! কথাটা ঝং’কার তুললো ঐশ্বর্যের কানে,আবারো গালে পড়লো ঠাস করে। এবারে টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেল উৎসা।
“সুইটহার্ট ভালো যখন বাসতে বাধ্য করেছো তাহলে তো এখন বিয়ে করতেই হবে! অন্য মেয়ে হলে জাস্ট একটা রাত ইউজ করে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু ইউ! তুমি ভালোবাসতে ফোর্স করেছো, এবার থাকতে তো হবেই।”
উৎসা শব্দ করে কেঁদে উঠলো,ব্যথা পেয়েছে সে।গাল দুটো লাল হয়ে আছে।
“খারাপ মানুষ কোথাকার! আমার গাল ফা’টিয়ে দিল।”
ঐশ্বর্য উৎসার সামনে ফ্লোরে বসে পড়লো। উৎসা কে টেনে বসালো।
“বেইবি সামথিং নিডস্।”
উৎসার প্রচুর রাগ হলো ঐশ্বর্যের উপর,লোকটা এই মাত্র এত গুলো বকা দিয়েছে,মে’রেছে। এখন আবার বলছে সামথিং?
“আমি বাইরে যাবো,সরুন।”
ঐশ্বর্য ছাড়লো না,উঠে দাঁড়ালো।উৎসাকেও টেনে তুলে।উৎসা সরে যেতে নিলে ঐশ্বর্য ডান হাতে উৎসার কোমড় টেনে ধরে।
“আই লাভ ইউ।”
উৎসার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, শ্বাস আটকে আসছে। ঐশ্বর্য উৎসার লম্বা চুল গুলো ঘাড়ের সাইড থেকে সরিয়ে সেখানে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
“কাম অন রেড রোজ আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।”
উৎসা ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠলো।
“আ,, আমি যাই।স,, সবাই খারাপ ভাববে!”
ঐশ্বর্য তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে উৎসার পেটে স্লাইড করলো।
“ডু সামথিং সুইটহার্ট। আমি সামলাতে পারছি না নিজেকে।”
উৎসা দু পা উঁচু করে ঐশ্বর্যের কপালে চুমু খায়।
“ওকে?”
“উঁহু।”
উৎসা আবারো ঐশ্বর্যের দু গালে চুমু খায়।
“এখন?”
“উঁহু।”
ঐশ্বর্যের আবার নাহুচে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেল উৎসা। কিছু একটা ভেবে উৎসা ঐশ্বর্যের বুকের কাছের ট্রি শার্ট অল্প একটু উপরে তুলে কালো তিলটাতে চুমু খায়।
ঐশ্বর্যের বুকের মাঝখানে তিল আছে,সেটা গত কাল রাতে দেখেছে উৎসা।
“এবার?”
“হুঁ, উম্মাহ্।”
__________________
মনিকা চৌধুরী বাংলাদেশের মেয়ে হলেও বড় হওয়া তার জার্মানিতে। পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই প্রথম ছিলেন, কিন্তু কে জানতো জীবন যু’দ্ধে পিছনে যাবেন?
সাল ১৯৯১ প্রথম বার জার্মান পা রেখেছিল শহীদ নামে এক বাংলাদেশী।মনিকাদের কোম্পানিতে চাকরি করে, মনিকা মাঝে মাঝে অফিসে যেতো। ভাই রাজেশ চৌধুরী এবং মনিকা চৌধুরী দু’জনে মিলে এত বড় বিজনেস দাঁড় করায়।
বছরের মধ্যে মনিকা আর শহীদের মধ্যে সম্পর্কের শুরু হয়।যেহেতু মনিকা বাংলাদেশী মানুষ পছন্দ করতো সেই জন্য শহীদ আরো বেশী মন কা’ড়ে মনিকার। কিন্তু কে জানতো শহীদ তার থেকে অনেক কিছু চেপে যাবে?
বছর ঘুরতে লাগলো, এদিকে মনিকা আর শহীদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো।
মনিকা যখন প্রেগন্যান্ট সেদিন খুশির অন্ত নেই মনিকার।
সে চেয়েছিল শহীদ কে সারপ্রাইজ দিতে, এদিকে শহীদ ভীষণ ভাবে মানসিক চাপে ছিলো।তার এক্স গার্লফ্রেন্ড আফসানা,যার সঙ্গে কিছু দিন আগেই ব্রেক আপ হয়েছে। কিন্তু এখন শহীদের জীবনে আবার ফিরতে চাইছে আফসানা।
শনিবার দুপুরে মনিকা শহীদ কে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে পৌঁছায়।
“মনিকা আমরা এখানে কেন?”
মনিকা হাস্যোজ্জ্বল মুখে বললো।
“ডিয়ার আমি চাই আমাদের বিয়ে হোক।”
শহীদ অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
“কিন্তু এভাবে কাউকে না জানিয়ে!”
“ওহ্ কাম অন শহীদ আমরা পড়ে আবার বড় করে সেলিব্রিট করে ফাংশন অ্যারেঞ্জ করে সবাইকে জানাবো।”
শহীদ মিহি হাসলো, সত্যি তো মনিকা কে সে কত ভালোবাসে! আর মনিকাও কতটা ভালোবাসে!এভাবে একটা মেয়ে কে ঠকানো উচিত হবে না।
শহীদ সেইদিন মনিকা কে বিয়ে করে। মনিকা খুব বড় একটা ফাংশন অ্যারেঞ্জ করেছে পরের দিন,যাতে জানাতে পারে সে প্রেগন্যান্ট। কিন্তু ঘন কালো মেঘ ছেয়ে যায়, শহীদ পরের দিনই বাংলাদেশ ব্যাক করে।অথচ মনিকা কে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।
মাস কয়েক দিনের মধ্যে ফিরবে বলে শহীদ ফিরলো না, মনিকা আস্তে আস্তে মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়তে লাগলো,সে জেদ করলো বাংলাদেশ যাবে। কিন্তু মিস্টার রাজেশ চৌধুরী বোনের এমন অবস্থা দেখে আর চুপ থাকতে পারলো না। অবশেষে মনিকা কে সব সত্যি কথা বলে দেয়। শহীদ বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ে করেছে, সংসার করছে। এটা শোনার পর দীর্ঘ তিন দিন হসপিটালে ভর্তি ছিলো মনিকা।
সে অনেক বার শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছে, কিন্তু শহীদ কোনো যোগাযোগ রাখেনি। অবশেষে দেখতে দেখতে বছর ঘুরে গেল, মনিকার ফুটফুটে একটা ছেলে হয়। মনিকা খুব শখ করে তার নাম রাখে ঐশ্বর্য রিক, রাজেশ চৌধুরী ঐশ্বর্য রিকের সঙ্গে পদবী চৌধুরী লাগিয়ে দেয়।
গুনে গুনে ঠিক দু’টো বছর পর শহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মনিকা। শহীদ যখন নিজের বড় ছেলের ছবি দেখেছে সেদিন হাপিত্যেশ করেছে। ছেলেটাকে একটি বার ছোঁয়ার জন্য, কিন্তু পারেনি। আফসানার জন্য, শহীদ চেয়েছিল ফিরে আসতে, কিন্তু মনিকা চায়নি একটা মানুষের সংসার ভেঙ্গে যাক। এদিকে সে তো আর কটা দিন! মরণ ব্যাধি ক্যা’ন্সারে আ’ক্রা’ন্ত হলো,এর থেকে ভালো ওরা সুখে সংসার করুক।
শহীদ ছেলে কে ছুঁতে না পেরে সেদিন কেঁদেছিলো। ঐশ্বর্য বড় হতে লাগলো, নিজের মা বাবার সম্পর্কে রাজেশ তাকে সব কিছুই বলে। বাবার প্রতি তীব্র ঘৃ’ণা সৃষ্টি হয় ঐশ্বর্যের মনে। সাথে আফসানার প্রতিও, বাবার কাছে আসতে চায়নি ঐশ্বর্য। কিন্তু মনিকা চেয়েছে শহীদ ঐশ্বর্য কে একটু স্পর্শ করুক, মাথায় হাত বুলিয়ে দিক।
মায়ের ইচ্ছাতেই প্রথম বার বাংলাদেশ শেখ এসেছিল ঐশ্বর্য। শহীদের সঙ্গে দেখাও করেছে,তবে বাবা বলে একবারের জন্যও ডাকেনি।
মাত্র দুটি দিন থেকেছে ঐশ্বর্য,ভাই রুদ্র আর ছোট বোন নিকি ঐশ্বর্য ভাইয়া বলতে পাগল ছিল।হবেই বা না কেন? শহীদ বড় ভাই নিয়ে তাদের মনে আকাশ সম ভালোবাসার জন্ম দিয়েছে।
সেই ঠিক পাঁচ বছর আগে একবার বাংলাদেশ এসেছিল ঐশ্বর্য। এরপর তার মা…..
কথা গুলো বলে থামলো ঐশ্বর্য, না না তাকে থামতে হয়েছে।কেউ ফুঁপিয়ে কাঁদছে,সেই কান্নায় আর কিছু বলতে পারলো না ঐশ্বর্য।
পাশেই বসে আছে উৎসা, ঐশ্বর্যের কাছে জানতে চেয়েছে মনিকার সম্পর্কে।তার মনে হাজারো প্রশ্ন, কোথায় তিনি? কেনো শহীদের সঙ্গে ওনার ডিভোর্স হয়েছে?
ঐশ্বর্যের মুখে সব শুনে ভেতরটা খাঁ খাঁ করছে উৎসার
আফসানা পাটোয়ারী তো মনিকার স্বামীই নিয়ে নিলো। কিন্তু তবুও কিছু বললো না, এত ভালো মানুষটার শেষে কী না এত ভ’য়’ঙ্কর পরিণতি?
“ইডিয়েট।”
ঐশ্বর্যের মুখে ইডিয়েট শুনে চুপ করে গেল উৎসা।
“কাঁদার কী হয়েছে?”
উৎসা ঝাপটে ধরে ঐশ্বর্য কে।
“আপনি এত কষ্ট একা স’হ্য করেছিলেন?”
ঐশ্বর্য উৎসার কাঁধে কা’ম’ড় বসিয়ে দিল।
“একা কোথায় ছিলাম?এত এত গার্লস ছিল!”গার্লফ্রেন্ড ছিল।”
উৎসা ঐশ্বর্যের বাহুতে কি’ল বসিয়ে দেয়।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী,যান।”
উৎসা দোলনা থেকে কবর উঠে গেল, ঐশ্বর্য ওকে আবার টেনে কোলে বসায়।
“লিসেন রেড রোজ অ্যাম নট গুড পার্সন, ট্রাস্ট মি।আর না কখনও ভালো হতে চাই। তুমি থেকো দ্যাটস্ এনাফ ফর মি।”
উৎসা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে।
“চেনা হয়ে গেছে আপনাকে।হায় আল্লাহ আপনাকে কত মেয়ে…..
উৎসা নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেছে, ঐশ্বর্য ঠোঁট আঁকড়ে ধরেছে উৎসার। সম্পূর্ণ কথাটা করতে পারলো না উৎসা,তার পূর্বেই এমনতর কান্ড করলো ঐশ্বর্য। মিনিটের ব্যবধানে ছেড়েও দিল।
“সত্যি বললেই গায়ে লাগে তাই না! আমিও এবার থেকে ছেলেদের… আহ্!”
ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়। উৎসার নরম গান চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলল।
“ডোন্ট ইউ ডেয়ার আমার সামনে আর কখনও অন্য ছেলের কথা বললে! আদ্যারওয়াইজ আই উইল কি’ল ইউ।”
উৎসা ত মে’রে গেল,কী সাং’ঘাতিক লোক রে বাবা!
_______________
বিয়ের জন্য রিতিমত পাগল হয়ে উঠেছে ঐশ্বর্য,এই তো জিসান কে দিয়ে জোর করে ডেকোরেশন করিয়েছে। কালকে রাতেই ওদের আংটি বদল অনুষ্ঠান করবে, অবশ্য ঐশ্বর্য শুধু একবারই শহীদ কে সবটা বলেছে। কাল আংটি বদল দু দিন পর মেয়েলি যা রিচুয়েল আছে এরপর রাতেই ঐশ্বর্য বিয়ে করবে।
জিসান,কেয়া নতুন ঐশ্বর্য কে দেখে রিতিমত নির্বাক হয়ে গেছে।
“ব্রো ব্যাপার কী মিস বাংলাদেশী পাগল করছে না কি?”
ঐশ্বর্য চোখ রাঙিয়ে তাকালো, কেয়া আর নিকি কিটকিটিয়ে হেসে উঠলো।
নিকি বললো।
“এই শুনো কেউ আমার ভাইয়ের সঙ্গে লাগবে না, আমার ভাইটা বিয়ে করবে এটাতো আনন্দের বিষয়। এখন কথা হচ্ছে উৎসা কী এমন করলো?”
ঐশ্বর্য নিকির মাথায় টোকা দিয়ে বলল।
“ভালো হয়ে যা না হলে জিসানের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেব।”
নিকি লজ্জায় কুঁকড়ে গেল, জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো।আড় চোখে তাকায় নিকি, জিসান চোখ টিপে।নিকি তম্বা খেয়ে গেল।
চলবে……………।✨
#রেড_রোজ
পার্ট [৩২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
পুরো বাড়ি সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
আর সন্ধ্যার ঐশ্বর্য এবং উৎসার এংগেইজম্যান্ট পার্টি।
সকাল প্রায় ১১ টা ছুঁই ছুঁই শপিং করতে বেরিয়েছে উৎসা, ঐশ্বর্য এক প্রকার জোর করেই নিয়ে গেছে। ছোট্ট করে হিজাব বেঁধে নেয় উৎসা।
মার্সিডিজ কারে বসে আছে ঐশ্বর্য, অপেক্ষা করছে উৎসা আর কেয়ার।নিকি সেই কখন চলে,পিছনের সিটে নিকি, রুদ্র, জিসান, বসেছে। সামনের সিটটা ওরা ইচ্ছে করেই উৎসার জন্য খালি রেখেছে। কেয়া আর উৎসা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এলো, দুজনেই একই রকম লং জামা পড়েছে ড। ওড়না এক পাশে দিয়ে বড় করে হিজাব বেঁধেছে।কেয়া ভীষণ খুশি বাঙালি স্টাইলে হিজাব বেঁধে, রুদ্র ঠোঁট টিপে হাসলো। মেয়েটা কে দারুণ মানিয়েছে।
ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে,গুলুমুলু মুখটা ইশ্ কী কিউট লাগছে! হিজাবে দ্বিগুণ সুন্দর দেখাচ্ছে,কেয়া গিয়ে পিছনের সিটে বসলো। উৎসা ঐশ্বর্যের পাশেই বসলো, ঐশ্বর্য দক্ষ হাতে ড্রাইভ করছে।
গাছ পালা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের গাড়ি, কিন্তু জিন্দাবাজার যেতেই জ্যামে আটকে গেল। বরাবরই জিন্দাবাজারের এই দিকে অনেক জ্যাম থাকে, ঐশ্বর্যের প্রচন্ড রকম বিরক্ত লাগছে।
কখন জ্যাম ছাড়বে আর কখন ওরা মার্কেটে যাবে?
জার্মানি হলে এতক্ষণে গিয়ে সব শেষ করে ফিরে আসতো।
গাড়িতে বসে আছে সবাই, অপেক্ষা করছে জ্যাম, ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণ খেয়াল না করলেও আচমকা চোখ পড়লো উৎসার। ঐশ্বর্য অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে,তার পেট গুড়গুড় করছে। মন চাচ্ছে এই রেড রোজের গালে ঠাস করে দুটো চুমু খেতে। উফ্ স্মুথ স্কিন।
“এভাবে কী দেখছেন?”
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“এই মূহুর্তে কী ইচ্ছে করছে জানো?”
উৎসা কিছুটা কেঁপে মিনমিনে গলায় বলল।
“কী?”
ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে বললো।
“চুমু, কিস কিস।”
উৎসা চোখ বড় বড় করে তাকালো,পিছনে তাকিয়ে দেখে যে যার মতো বসে আছে। উৎসা ঐশ্বর্যের মতো ফিসফিসিয়ে বললো।
“অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য পরিবর্তন হয়ে গেল, সেকেন্ডের মধ্যে উৎসার গালে ভ’য়ংকর চুমু খেলো।পর মূহুর্তে জেন্টালম্যান হয়ে গেল, শুধু থমকে গেল উৎসা। নিঃশ্বাস গলায় আটকে আছে,কী বলবে বুঝতে পারছে না।
ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।
“কেউ দেখেনি।”
তৎক্ষণাৎ পিছন থেকে রুদ্র বলে উঠে।
“উপ্স স্যরি দেখে ফেলছি।”
উৎসা পিছনে তাকিয়ে দেখে রুদ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো, রুদ্র পরেই জিসান বলে উঠে।
“আমি কিন্তু সত্যি কিছু দেখিনি।”
উৎসা এবার জিসানের দিকে তাকালো, জিসান কপালে হাত রেখে সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। এদিকে কেয়া আর নিকি হাসতে হাসতে শেষ।
উৎসার নাকের পাটা ফুলে ওঠে,ঠাস করে ঐশ্বর্যের বাহুতে কিল বসিয়ে দিল।
“অস’ভ্য অস’ভ্য রিক চৌধুরী।”
ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো, ইশ্ বেইবি তার সামথিং ফিল দিচ্ছে।
প্রায় আধ ঘন্টা পর আলহামরা মার্কেট পৌঁছে গেল,এখানে কিছু পছন্দ হলো না কারোই। ঐশ্বর্য ইউনিক কিছু নেবে, ব্যস হয়ে গেল। সবাই মিলে চললো ব্লু ওয়াটার মার্কেটে।
একে একে লেহেঙ্গা দেখছে উৎসা,নিকি আর কেয়া দুজনেই দেখছে। উৎসা কে কোন টাতে মানাবে? সবাই একে বারে বিয়ের শপিং করেই বাড়ি ফিরবে বলে ঠিক করেছে।
উৎসা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা মিষ্টি কালারের মধ্যে লেহেঙ্গা দেখছে। ঐশ্বর্য এসে পিছনে দাঁড়ালো,তার চোখে পড়ে একটা লাল টকটকে লেহেঙ্গা।ওইটা হাতে তুলে নেয়।
“রেড রোজ এটা ট্রাই করো।”
উৎসা ঐশ্বর্যের হাত থেকে লাল লেহেঙ্গা নিলো,গায়ে ধরতেই ঐশ্বর্য মৃদু হাসলো।
“মাই রেড রোজ।
উৎসার নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগছে। উফ্ ঐই লোকটা আস্ত নির্লজ্জ।
কিয়ৎক্ষণ পর পার্টির জন্য একটা গাউন নিলো উৎসা,নিকি বললো এটা ট্রায়াল রুমে গিয়ে ট্রাই করে আসতে। উৎসা গাউন নিয়ে ট্রায়াল রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
ঐশ্বর্য পিছন পিছন যেতে থাকে, জিসান দেখে বলে উঠল।
“শেইম লেস ম্যান।”
ঐশ্বর্য ঠোঁট গোল করে চুমু ছুড়ে বলে।
“আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ, সামথিং নিডস্!”
জিসান কপাল চুলকে নেয়,এই ছেলে ভালো হবে না।
___________
“তুমি কী সত্যি ওদের বিয়েতে মত দিয়েছো শহীদ?”
আফসানার এহেন প্রশ্নে বিরক্ত বোধ করলো শহীদ।
“তো আমি কী তোমার মত নাটক করি?”
আফসানা দাঁত কটমট করে বললো।
“আমি নাটক করি?”
শহীদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।
“কেন কয়েক বছর আগে যে নাটক করেছিলে তা কী ভুলে গেছো?”
“মুখ সামলে কথা বলো শহীদ!”
শহীদ প্রচন্ড রেগে গেলো।
“তোমার লজ্জা বলতে তো কিছুই নেই,আরে এবার তো কিছুটা লজ্জাবোধ করো।ছিহ্।”
আফসানা বেশ বিরক্ত,বছর কয়েক আগে শহীদ কে ছেড়ে আফসানা চলে গিয়েছিল। কিন্তু যখন শুনলো শহীদ জার্মানিতে খুব বড় একটা কোম্পানিতে কাজ করে সেদিন বেশ অবাক হলো আফসানা।মনে মনে খুব আফসোস জাগে তার,সে চেয়েছিল আবার ফিরতে।সেই হিসেবে জার্মানিতে শহীদের খুঁজ খবর নিতে শুরু করে।
খুঁজ নিয়ে জানতে পারে শহীদ আর মনিকা চৌধুরী নামে একটি মেয়ে সম্পর্কে। আফসানা ভীষণ পরিমাণে রেগে গেল,সে চাইছিল শহীদ তার কাছে ফিরুক। কিন্তু কিছুদিন পর জানতে পারে শহীদ আর ওই মেয়ে বিয়ে করেছে।
আফসানা এবার আর থাকতে পারলো না, একদিন সকালে শহীদ কে ফোন করে বলে সে প্রেগন্যান্ট।যা পুরোটাই নাটক ছিল।
শহীদ ভীষণ পরিমাণে ঘাবড়ে গেল, আফসানা যাই করে থাকুক। তাদের বাচ্চার তো কোনো দোষ নেই! শহীদ কে এটা সেটা বুঝিয়ে আবার ফিরতে এক প্রকার বাধ্য করে আফসানা। শহীদ বাচ্চার কথায় বাধ্য হয়ে সব ছেড়ে ছুড়ে বাংলাদেশ ফিরে এলো।
বাংলাদেশ এসে শহীদ জনসম্মুখে আফসানা কে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের চার মাসের মাথায় জানতে পারে আফসানা প্রেগন্যান্ট না।সবই তার মিথ্যে নাটক ছিল।
আফসানা কে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিল শহীদ, কিন্তু ছয় মাসের মাথায় আফসানা কনসিভ করে। এবারেও বাধ্য হয়ে শহীদ আফসানা কে মেনে নেয়। গুনে গুনে অনেক গুলো বছর পর শহীদ জানতে পারে তার আরও একটি ছেলে আছে। রুদ্রর বড় ভাই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী, শহীদ মনিকার সঙ্গে যোগাযোগ করে।মনিকা কোনো অভিযোগ করলো না, শুধু চেয়েছিল তার স্বামী তার ছেলেকে একবার ছুঁয়ে দেখুন।
ঐশ্বর্য এসেছিল, শুধু দুদিনের জন্য, সেই ঐশ্বর্য কে দেখে ভেতর জ্ব’লে উঠে আফসানার।স’তীনের ছেলে মেয়ে কে কেউ বা দেখতে পারে?
নিজের অতীত মনে পড়তেই রাগে ফুসে উঠে আফসানা।
✨
“আহ্!”
ট্রায়াল রুমে প্রবেশ করা মাত্র হুড়মুড়িয়ে কেউ একজন ঢুকে দরজা লক করে দেয়।পিলে চমকে উঠে উৎসার।
“আপনি!”
ঐশ্বর্য কিঞ্চিৎ ঘাড় বাঁকালো, আচমকা উৎসা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
“আরে কী করছেন? উফ্!”
উৎসা কিছুই বলতে পারলো না,আর না বুঝলো।তার কিছু বুঝে উঠার আগেই ঐশ্বর্য এলোপাথাড়ি চুমু খায় পুরো মুখশ্রীতে।
“বেইবি সামথিং ফিল।”
উৎসা নেতিয়ে পড়ছে, ঐশ্বর্যের বেসামাল হাতের স্পর্শে।ঘাড়ে হাজার বার নিজের অধর ছুঁয়ে দিচ্ছে।
উৎসা মিনমিনে গলায় বলল।
“যেখানে সেখানে শুরু হয়ে যায়!”
উৎসার এ কথা বলা মাত্রই ঐশ্বর্য ঘাড়ে কা’ম’ড় দেয়।
“ইশ্!”
ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে গভীর দৃষ্টিতে তাকালো, উৎসা আন্দাজ করতে পেরে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
ঐশ্বর্য ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো।
“সুইটহার্ট ক্যান আই কিস ইউ!”
উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়, শ’য়তা’ন লোক একটা। এতক্ষণ জোর করলো, এখন পারমিশন নিচ্ছে? বাহ্ রে মানবতা!
“একদম না, আমি কিন্তু চিৎকার করব।”
ঐশ্বর্য খানিকটা সরে গিয়ে দরজার সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো।
“করো চিৎকার,দেখি কে কী করতে পারে!”
উৎসার মুখ খানি চুপসে গেল, ঐশ্বর্য এগিয়ে এসে উৎসার ললাটে শব্দ করে চুমু খায়।
ঐশ্বর্য সিস বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে পড়ল। উৎসা ভারী নিঃশ্বাস ফেলে,সে এটুকু বুঝে গেছে এই লোক শোধরানোর না।
শপিং শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেল সবার।
জিসান নিকির জন্য কিছু নিয়েছে, আপাতত লুকিয়ে রেখেছে।সময় মতো দিয়ে দেবে, কিন্তু ম্যাডাম তো তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না!
বেচারা জিসান,মনে মনে হতাশ হলো। জার্মানির কত মেয়ে তার জন্য পাগল,অথচ এই মেয়ে তাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে!
সবাই যে যার মতো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ল, সবাই একে বারে ডিনার করেই ফিরেছে।
উৎসা ড্রয়িং রুমের লাইট অফ করে রুমের দিকেই যাচ্ছিল। তৎক্ষণাৎ কানে এলো গিটারের টুংটাং শব্দ, উৎসা ঘাড় ঘুরিয়ে উপরে দেখার চেষ্টা করলো।
শব্দটা মূলতঃ ছাদ থেকে আসছে, বিড়বিড় করে আওড়াল।
“এত রাতে ছাদে কে?”
উৎসা বড় বড় পা ফেলে ছাদের দিকে এগিয়ে গেল। দরজা আগে থেকেই খোলা ছিল, ভেতরে উঁকি দিতেই দেখলো ঐশ্বর্য আর জিসান বসে আছে।
“এ কি মিস বাংলাদেশী তুমি এখনও জেগে আছো!”
জিসানের কথায় মৃদু হেসে বলল উৎসা।
“না আসলে…
“বুঝতে পেরেছি, আমার ফ্রেন্ড কে মিস করছো।”
উৎসা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল, ঐশ্বর্য ফিক করে হেসে উঠলো। উৎসা কিঞ্চিৎ লজ্জা পেল।
“আমি অন্য একটা কাজে এসেছি। গিটারের শব্দ পাচ্ছিলাম।”
জিসান জিভ কা’ট’ল, ঐশ্বর্য আমতা আমতা করে বলল।
“কিসের গিটার?”
উৎসা মাথা চুলকে বলে।
“আমি তো শুনতে পেলাম।”
“ভুল শুনেছো,কানে প্রবলেম। ডক্টর দেখাও।”
ঐশ্বর্য এক প্রকার উৎসা কে ধমক দিয়ে চলে গেল। উৎসা কিছুই বুঝলো না।
“যা বাবা জিজ্ঞেস করাতে এত রাগলো কেন?”
জিসান দাঁত কে’লিয়ে বলে।
“ভুল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ফেলেছো।চলো চলো ঘুমাতে যাও।”
উৎসা গুটি গুটি পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেল, বন্ধু আর সে দুজনেই পাগল।কখন কী হয় কেউই জানে না, আস্ত পাগল।
উৎসা যেতেই ঐশ্বর্য উঁকি দিয়ে দেখল, জিসান শব্দ করে হেসে উঠলো, ঐশ্বর্য ফের ছাদের দিকে গেল। সাথে গেল জিসান, দু’জনে মিলে একটা বড় সারপ্রাইজ দিতে চাইছে উৎসা কে।
চলবে………….।✨