রেড রোজ পর্ব-৩৫+৩৬

0
5

#রেড_রোজ
পার্ট [৩৫]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)

সকাল সকাল কলিং বেল বেজে উঠল,মিস মুনা গিয়ে মেইন ডোর খুলে দিলো। মিস্টার রাজেশ চৌধুরী ভেতরে প্রবেশ করে।
মিস মুনা ঐশ্বর্যের রুমে গিয়ে ন’ক করলো।

“স্যার? স্যার মিস্টার চৌধুরী এসেছেন।”

ঐশ্বর্য ঘুম জড়ানো চোখে উঠে বাইরে গেল। মিস মুনা কিচেনের দিকে চলে গেলেন।
শর্ট প্যান্ট তার উপর একটা ট্রি শার্ট জড়িয়ে বাইরে এলো ঐশ্বর্য।

“হ্যালো আঙ্কেল।”

ঐশ্বর্য কে দেখে মিহি হাসলেন রাজেশ চৌধুরী।

“রিক মাই বয় কাম।”

ঐশ্বর্য গিয়ে রাজেশের পাশে বসলো।
“রিক তুমি নাকি বিয়ে করেছো?”

ঐশ্বর্য মাত্র পানির গ্লাস মুখে নিয়েছে, রাজেশের কথায় থেমে গেল।

“তোমাকে কে বললো আঙ্কেল?”

সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলল রাজেশ চৌধুরী। কাল রাতে জিসান তাকে সব কিছু বলে দিয়েছে, প্রথমে বেশ অবাক হয়েছিল রাজেশ চৌধুরী। কিন্তু পরক্ষণেই ভাবলো কি হবে ঐশ্বর্যের?যদি রাজেশ না থাকে তাহলে ঐশ্বর্য সবসময়ের জন্য একা হয়ে যাবে।এর থেকে ভালো ওর একজন জীবন সঙ্গী হোক।

“এক্সুয়েলি আঙ্কেল আমি…

“কাম অন মাই বয় বিয়ে করেছো তাতে প্রবলেম টা কোথায়?এনি ওয়ে ছবি দেখাও কুইনের।”

ঐশ্বর্য আমতা আমতা করে ফোন বের করলো, উৎসার বিয়ের সাজে তোলা কয়েকটি ছবি দেখায়।রাজেশ চৌধুরী অধর বাঁকিয়ে হাসলো।

“বিউটিফুল, তোমার জন্য একদম পারফেক্ট।”

ঐশ্বর্য আড় চোখে তাকায় উৎসার ছবির দিকে। মেয়েটা অতিরিক্ত সুন্দর, ছুঁতে মন চায়। ধুর বাবা ভালো লাগে না তার ইচ্ছা করছে এখুনি গিয়ে তুলে নিয়ে আসতে।
_______________

“হ্যা সিরাত বলো!”
“উৎসা তুমি কী আর জার্মানি ফিরবে না? কয়দিন পরেই তো তোমার সেমিস্টার।”

পিলে চমকে উঠে উৎসার,সে তো সব কিছু ভাবতে গিয়ে নিজের পড়াশোনার কথা ভুলেই গিয়েছে।একজন পুরুষের জন্য কি সে তার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে? মোটেও না।

“সিরাত আমি তোমাকে কালকেই জানাচ্ছি।”
“ওকে, বাট উৎসা তুমি কিন্তু ফিরে এসোই। তুমি খুফ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তোমার সামনে অনেক কিছু আছে।’

উৎসা মিহি হাসলো,জীবন যে তাকে কোথায় নিয়ে এসেছে তা শুধু সে-ই জানে।
আচমকা নিকি ভেতরে এলো।

“এই শুন রুদ্র ভাইয়া তোর ফ্লাইটের টিকিট রেডি করে দিয়েছে দু দিন পর ফ্লাইট।”

নিকির কথা কিছুই বুঝতে পারলো না উৎসা।

“মানে?কী বলছো আপু? আমি আবার কোথায় যাচ্ছি?”

নিকি এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো,কিয়ৎক্ষণ ভেবে বলে।

“আরে তুই কী আবার ভাইয়ের কাছে ফিরবি নাকি?তোকে তো পড়তে হবে।তাই ভাইয়া আর আমি ঠিক করেছি তুই জার্মানি ব্যাক করবি।”

উৎসা নিশ্চুপ,সে যদি জার্মানি যায় তাহলে কোনো না কোনো ভাবে অবশ্যই ঐশ্বর্য রিক চৌধুরীর সঙ্গে তার দেখা হবেই!
নিকি উৎসার দিকে তাকিয়ে তার ভাবান্তর বোঝার চেষ্টা করলো।যে করেই হোক কোনো ভাবে উৎসা কে আবার জার্মানি পাঠাতেই হবে।

“আমি….

“তুই এদিকে আয়।”

উৎসা কিছু বলতে চেয়েছিল, কিন্তু নিকি বলতে দেয়নি। বরং সে বলতে শুরু করে।

“দেখ উৎসা যে কারো জন্য তুই কি নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করবি? তোর তো উচিত দেখিয়ে দেওয়া, আমি হেরে যাওয়ার মেয়ে নই।”

উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল। নিকি ফের বললো।

“তুই আবার পড়াশোনা কর, এরপর দেখিয়ে দে তোর কারো সাহায্য সা’পো’র্ট লাগবে না।”

উৎসা বুক ভরে নিঃশ্বাস টেনে নেয়, সত্যি তো তার পরোয়া কেউ করেনি। তাহলে কেন সে সবার ওদের পরোয়া করবে? উৎসা যাবে জার্মানি,আবারো পড়বে।কে দেখলো না দেখলো তাতে কিছু যায় আসে না।
_______
” থ্যাংক ইউ সো মাচ নিকি।তুই না থাকলে সুইটহার্ট আসতো না!”

নিকি হাসলো, ঐশ্বর্য বলেছে উৎসা কে পাঠিয়ে দিতে।যদি ঐশ্বর্য তাকে নিতে চায় সে কখনও আসবে না। অন্তত একটু বুঝে গেছে উৎসা প্রচন্ড জে’দি একটা মেয়ে। ঐশ্বর্যের ভেতর টা পু’ড়ছে,তার উৎসা কে লাগবেই।

“ভাইয়া দেখো আমি তোমার ভরসায় কিন্তু উৎসা কে পাঠাচ্ছি, তুমি প্লিজ ওর খেয়াল রেখো।”

ঐশ্বর্য মিহি হাসলো।

“আই প্রমিজ এই বারে আর উৎসা কোনো কষ্ট পাবে না।ওর সব দায়িত্ব আমার।”

নিকি খানিকটা স্বস্তি পেলো।সে এটুকু জানে তার ভাইয়ের মনটা খারাপ নয়। জিসানের থেকে যতটুকু বুঝেছে ঐশ্বর্য তাকে ভালোবাসে। কিন্তু ঐশ্বর্য নিজের ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড।

ঐশ্বর্য ফোন রেখে ডিভানের উপর গিয়ে বসলো।দু আঙ্গুল কপালে ঠেকিয়ে বলে বিড়বিড় করে আওড়াল।

“সুইটহার্ট সুইটহার্ট, আমাকে ম্যাড বানিয়ে তুমি হ্যাপি থাকবে ভেবেছো?নো ওয়ে, অন্তত ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী যত দিন আছে এটা তো হবে না!”

ঐশ্বর্য ক্রূর হাসলো,ডিভানের মাথা হেলিয়ে ছাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ফের বললো।

“রেড রোজ মিসড ইউ ,সো মাচ প্রীটি গার্ল। একবার এসো গড প্রমিজ জান খেয়ে ফেলব।”

ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো,হাসিটা এই বন্ধ চার দেয়ালের ভেতরে অন্য রকম ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
________________
আবারও জার্মানি, আশ্চর্যের ব্যাপার যেখান থেকে ওদের গল্প শুরু হয়েছিল আবারো সেখানে এসে থামলো।
উৎসা ফের হোস্টেলে উঠেছে, অনেক কষ্ট করে ম্যানেজ দিয়েছে সবটা।সিরাত উৎসা কে দেখে আনন্দে জাপটে ধরেছে। উৎসার এই বিষয়টা বেশ ভালো লাগলো, অন্তত একটা মেয়ে এখানে নিঃস্বার্থ ভাবে উৎসা কে হেল্প করে গিয়েছে। উৎসা ভেবে নিয়েছে এখন থেকে পড়তে হবে, অন্তত নিজেকে তৈরি করতে হবে। রাতের শেষ প্রহর, এখনো জেগে আছে উৎসা। পর্দা সরিয়ে বাইরেটা দেখার চেষ্টা করলো, অবশ্য জানালা খুললো না। গার্ড আবার চেঁচামেচি করবে।

“রিক মিস বাংলাদেশী জার্মানি ব্যাক করেছে?”

জিসানের চমকে যাওয়া ফেইস দেখে হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো ঐশ্বর্য।

“ইয়া,বাট অবাক হওয়ার কী আছে?”

জিসান কনফিউজড, ঐশ্বর্য কে বুঝতে পারছে না একদম।

“ঠিক আছে ও ফিরতেই পারে,বাট নিকি বললো তুই বলেছিস এখানে….

“ইয়েস, আমি ছাড়া কে বলবে? অভ্যিয়েসলি আমি বলেছি।”

ঐশ্বর্য উঠে গিয়ে কিচেন থেকে কফি কাপ নিয়ে এলো। জিসান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, প্রচন্ড রাগ হলো ঐশ্বর্যের উপর।

“রিক তুই কী বলবি ঠিক কী চাইছিস?”

ঐশ্বর্য স্বভাব সুলভ হাসলো,সে তো এক রহস্য তাকে বোঝা এত সহজ?

“লিসেন জিসান রেড রোজ আমার ওয়াইফ। অবশ্যই তার আমার সঙ্গে থাকা উচিত, এখন তাকে চলে বলে কৌশলে আনতে হোক বা….

“বা কী?”

ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাস করে জিসান। ঐশ্বর্য কফি কাপে চুমুক দিয়ে বলে।

“সামথিং সামথিং।”
_______________

কলেজ শেষে সিরাতের সঙ্গে কলেজ থেকে কিছুটা দূরে ক্যাফেতে গিয়ে বসলো উৎসা।
আজকে অনেক গুলো পড়া কালেক্ট করেছে উৎসা। এখনো কিছু বাকি আছে,উৎসা সে গুলো লিখছে বসে। এর মধ্যে সিরাত হাত ধুতে ওয়াশ রুমে গেল, তৎক্ষণাৎ উৎসা সম্পূর্ণ দৃষ্টি লেখাতে দিয়েছে।
ব্ল্যাক মার্সিডিজ কার এসে ক্যাফের সামনে থামলো। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ঐশ্বর্য আর জিসান। অফ হোয়াইট শার্ট সাথে ব্ল্যাক প্যান্ট, হাতে ব্র্যান্ডের ওয়াচ,চোখে সানগ্লাস।বড়লোকি ভাব সাব, কিন্তু বাইরের দিকে দৃষ্টি নেই উৎসার।কে কী করছে কিছুই দেখছে না উৎসা।

ঐশ্বর্য ধীর গতিতে ক্যাফেতে ঢুকে, উৎসা কে দেখে চমকালো।পরণে মেরুর রঙের ট্রি শার্ট,তার উপর জ্যাকেট,লেগিংস।চুল গুলো লম্বা হওয়ার দরুন উঁচু করে বাঁধা।এক মনে কলম চালাচ্ছে সে। ঐশ্বর্য জিসান কে ইশারা করে, জিসান একে একে সবাই কে বের করে দিল।একটা ছেলে কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু জিসান চুপ করিয়ে দেয়। পুরো ক্যাফে খালি করিয়ে দেয় ঐশ্বর্য,এক পা দু পা করে এগিয়ে গিয়ে উৎসার সামনাসামনি দাঁড়ালো।উৎসা লেখা শেষ হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,যেই উপরে চোখ তুলে তাকায় বড়সড় ধাক্কা খেলো। নিজের চোখের সামনে ঐশ্বর্য রিক চৌধুরী কে দেখে পিলে চমকে উঠে তার। ঐশ্বর্য উৎসার দিকে তাকিয়ে ভুবন ভোলানো হাসি হাসলো,উৎসা আশেপাশে তাকিয়ে দেখে জিসান ছাড়া কেউ নেই।

“আ,, আপনি?”

ঐশ্বর্য উৎসার দিকে পা বাড়াতেই উৎসা পিছনে যেতে নেয়, আফসোস চেয়ারে পা আটকে পড়তে গেল। কিন্তু ঐশ্বর্য তার রেড রোজের হাত টেনে ধরে।

“সুইটহার্ট বি কেয়ার ফুল।”

উৎসা রিতিমত কাঁপছে।
“ছাড়ুন!”

ঐশ্বর্য ছেড়ে দিল উৎসার হাত।

“আপনি এখানে কেন সিরাত কোথায়?”

ঐশ্বর্য চেয়ার টেনে উল্টো করে বসলো।

“উফ্ সুইটহার্ট দিন দিন কিউট হচ্ছো।”

উৎসা এই মূহুর্তে ঐশ্বর্য কে একদম আশা করেনি, উল্টো ভয় লাগছে।

“দেখুন আমি কিন্তু…সিরাত কোথায় বলুন?”

ঐশ্বর্য সুযোগের সদ্ব্যবহার ভালো করেই করতে পারে। জিসান কে ইশারা করতেই সে একটা ফাইল নিয়ে এগিয়ে এলো। একটা সাদা কাগজ সামনে দেয়, ঐশ্বর্য সেটা উৎসা কে দেখিয়ে বলে।

“সুইটি এটাতে সাইন করে দাও।”

উৎসা কপাল কুঁচকে নেয়।

“মানে? আমি কেন সাইন করতে যাবো?”

ঐশ্বর্য হাত দিয়ে সিল্কি চুল গুলো ব্রাশ করে পিছনে ঠেলে দেয়।
“সিরাত চাই তো? তাহলে গুড গার্ল এর মতো সাইন করে দাও।”

উৎসা হাঁসফাঁস করছে,এই ঐশ্বর্য চাইছে কী?

“কেন এমন করছেন আপনি? প্লিজ চলে যান।”

ঐশ্বর্য ঠোঁট উল্টে তাকালো।

“বেইবি আমি চলে যাবো বাট সাইনটা!লেইট হচ্ছে তো।”

ঐশ্বর্য ঘড়ি দেখলো, উৎসা তখনও নিশ্চুপ। ঐশ্বর্যের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল, আচমকা উৎসার গাল চেপে ধরে বলে।

“সাইন করো না রেড রোজ, তাহলে কিন্তু আমি সিরাত ছেড়ে দেব।ইউ নো অ্যাম নট গুড পার্সন ইয়ার।যদি কথা না শুনো সিরাত টা টা বাই বাই।”

ঐশ্বর্যের কথায় কান্না পাচ্ছে উৎসার,সে দ্রুত সাইন করে দিলো। ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে উঠলো, ইশ্ ইনোসেন্ট রেড রোজ তার।
সে তো জানেই না কী করলো,কাল সকাল থেকে শুরু হবে তার খেলা। রেড রোজ তার কাছ থেকে চাইলেও যেতে পারবে না।দ্যা গেইম ইজ স্ট্যার্ট নাউ।

চলবে……………।✨

#রেড_রোজ
পার্ট [৩৬]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মু’ক্ত)
“আপনি এখানে কেন এসেছেন? প্রবলেম কী আপনার?”

সকাল সকাল কলেজের জন্য বের হয়েছে উৎসা,আজ সিরাত আসেনি।কিছুটা দূরে আসতেই ঐশ্বর্যের গাড়ি সহ ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। বরাবরের মতই ঐশ্বর্য কে অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। উৎসা গুরুত্ব দিলো না,সে নিজের মতো রাস্তা পাড় করে যেতে নিলো। তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য এসে উৎসার সামনাসামনি দাঁড়ালো,চোখে থাকা সানগ্লাস খুলে বলে।

“হেই সুইটহার্ট।”

উৎসা যেনো শুনেও শুনলো না, ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার হাত টেনে ধরে। হেঁচকা টানে ভয় পেয়ে গেল উৎসা।
ঐশ্বর্য এখানে কেন জিজ্ঞেস করতেই বাঁকা হাসলো।

“কেয়ারটেকার ছাড়া ভালো লাগছেনা না,দ্যান আমিই চলে এলাম।”

উৎসা দু হাত ভাঁজ করে নেয়।

“আচ্ছা নতুন কেয়ারটেকার?তা ওখানে না গিয়ে আমাকে ফলো করছেন কোন দুঃখে শুনি?”

ঐশ্বর্য বুকে হাত রেখে বলল।

“ইশ্ ইটস্ হার্ট রেড রোজ, দুঃখে কেন হবে?বলো সুখে।”

উৎসা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য উৎসার কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো।উৎসা কিছুটা বিব্রত বোধ করছে।

“আমার পথ ছাড়ুন।”

দাঁতে দাঁত পিষে বললো উৎসা, ঐশ্বর্য হাসলো।

“তাহলে আমার বাড়ির কাজ কে করবে?”

উৎসা ঐশ্বর্যের কোনো কথাই বুঝতে পারছে না।

“মানে?”

“মানে এটাই যে তুমি এই সময় আমার বাড়িতে যাবে,ভুলে গেলে কী করে সুইটহার্ট তুমি তো আমার কেয়ারটেকার!”

উৎসা চরম পর্যায়ে রেগে গিয়ে বলল।

“ফা লতু কথা একদম বলতে আসবেন না। আমি আপনার কোনো কেয়ারটেকার নই বুঝেছেন? আমার সঙ্গে একদম…..

উৎসা চুপ করে গেল, ঐশ্বর্য ওর সামনে একটি পেপার ধরে। উৎসা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলো এটাতে তার সাইন করা।

“এটা?কী এসব?”

ঐশ্বর্য পড়তে শুরু করে।
“এখানে সুন্দর করে লেখা আছে তুমি আমার কেয়ারটেকার,আর আগামী তিন বছর আমার বাড়িতে কাজ করবে।আর যদি তুমি কাজ না করো তাহলে জ রিমানা হিসেবে ৫ কোটি টাকা দিতে হবে।”

উৎসা তম্বা খেয়ে গেল কোন বুদ্ধিমান লোক এমন ফা লতু কাজ করে? এটা কেমন কাজ কর্ম?
উৎসা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

“এই জন্যই কাল এটাতে সাইন করিয়েছেন?”

ঐশ্বর্য মাথা দুলালো,উৎসার প্রচন্ড রকম রাগ লাগছে।কী যে করবে সে?

“দেখুন মিস্টার চৌধুরী আমি আপনার মুখ তো দূরের কথা আপনার আশেপাশে পর্যন্ত থাকতে চাই না। তাহলে আপনি ঠিক কী করে ভাবলেন আমি আপনার কেয়ারটেকার হবো?”

ঐশ্বর্য হাত সামনে ধরে।

“তাহলে পাঁচ কোটি দাও।”

উৎসা ভাবনায় পড়ে গেল এত টাকা কোথা থেকে দেবে সে? ঐশ্বর্য চায় কী?

“আপনি কি চান?”

“তোমাকে।”

ঐশ্বর্যের সহজ স্বীকারোক্তি,উৎসা নাক মুখ কুঁচকে নেয়।

“হাস্যকর, আমাকে দিয়ে কী হবে?”

ঐশ্বর্য ফিসফিসিয়ে বললো।

“তোমাকে দিয়েই হবে, তুমি না থাকলে কাকে দিয়ে হবে! আফটার অল আমার বেবির মাম্মা তুমি । তুমি আমার হার্ট, তোমাকে ছাড়া চলছে না সত্যি!”

উৎসা শব্দ করে হেসে উঠলো।

“রিয়েলি? আপনি অন্তত শ’য়তা’ন একটা মানুষ।এত কিছু করার পর কী করে ভাবলেন আমি আবার আমাকে আপনার হাতে তুলে দেব?”

ঐশ্বর্য মাথা দুলিয়ে বলে।

“তুলে দিতে হবে না সুইটহার্ট,রিক ছি’নিয়ে নিতে পারে।”

উৎসা দু কদম পিছিয়ে গেল।

“একদম আমার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবেন না।”

উৎসার বলতে দেরী, ঐশ্বর্যের তার কাছাকাছি এসে দাঁড়াতে দেরী হলো না।

“বিউটিফুল লেডিদের এত রাগ করতে নেই। চলো লেইট হচ্ছে।”

ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরতেই চেঁচিয়ে উঠলো সে।

“ডোন্ট টাচ।”

“টাচ,টাচ টাচ।”

ঐশ্বর্য হাত বারংবার স্পর্শ করছে,উৎসা ফোঁস করে উঠলো।রাগে শরীর রি রি করছে তার!

“আমি কিন্তু এখন…..

উৎসা কে কিছু বলতেই দিচ্ছে না ঐশ্বর্য,তার আগেই গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে লক করে দিলো।দক্ষ হাতে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে। ঐশ্বর্য রাগে ঐশ্বর্যের ঘাড়ে অনেক শক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। হঠাৎ আ’ক্র’মণে কিছুটা ব্যথা পায় ঐশ্বর্য, কিন্তু তবুও নড়লো না।

আধঘন্টা পর বাড়িতে এসে গাড়ি থামালো ঐশ্বর্য।উৎসা মনে মনে ভেবে রেখেছে ঐশ্বর্য গাড়ি থেকে নামলেই উৎসা দৌড় দেবে।
কিন্তু তা আর হলো না, ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরেই নামলো।উৎসা কে এক প্রকার টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল উৎসা।

“আমি এবার সত্যি সত্যি…

“ভালোবেসে ফেলেছি, সত্যি সত্যি।”

উৎসার কথার মাঝখানে বলে উঠে ঐশ্বর্য। উৎসা থমকালো চমকালোও, কিন্তু তা মোটেও বুঝতে দেয় না ঐশ্বর্য কে।

“তো? আপনি ভালোবাসেন না বাসেন আমার কিছু যায় আসে না।”

ঐশ্বর্য উৎসা কে কাউচের উপর বসালো, ফোঁস করে নিঃশ্বাস টেনে বলে।

“অ্যাম স্যরি সুইটি।আই লাভ ইউ, আমার তুমি ছাড়া চলবে না সত্যি।”

ঐশ্বর্য উৎসার গালে আলতো হাত ছুঁয়ে দেয়,উৎসা হাত সরিয়ে নেয়।

“আমার সঙ্গে এত বড় অন্যায় করে আপনি কী ভাবছেন আমি ক্ষমা করে দেব?”

ঐশ্বর্য অধর বাঁকিয়ে হাসলো।

“আমার উপর রাগ হচ্ছে?রাগ মিটিয়ে নাও, মা’রো আই ডোন্ট মাইন্ড।বাট প্লিজ একবার সুযোগ দাও!”

উৎসা মুখ ফিরিয়ে নেয়,এই ছল পুরুষের ছ’লনায় একদম কান দেবে না উৎসা। ঐশ্বর্য উৎসার পায়ের কাছে বসে পড়লো।

“অ্যাম স্যরি,আই প্রমিজ আর কখনও কষ্ট দেবো না।”

ঐশ্বর্য উৎসার হাত ধরতে চাইলো কিন্তু উৎসা ফের হাত সরিয়ে নেয়। ঐশ্বর্য দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। আচমকা উৎসার গালে চুমু খায়।

“স্যরি সুইটহার্ট, বিকেলে মান ভাঙাতে আসবো আপাতত অফিসের লেইট হচ্ছে।”

ঐশ্বর্য বাইরে থেকে দরজা লক করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল। উৎসার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে, এভাবে তাকে বোকা বানিয়ে চলে গেল? অস’ভ্য রিক চৌধুরী।
একদম ভালো না।
______________

“আই লাভ ইউ।”

রুদ্রর মুখে আই লাভ ইউ শুনে চুপ করে গেল কেয়া।
সত্যি মিস্টার হ্যান্ডসাম তাকে ভালোবাসে?

“সত্যি?”

কেয়া কে অবাক হতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসলো রুদ্র।

“ইয়েস ম্যাডাম। সিনিয়র আপা পছন্দ হয়েছে,তাই ভাবলাম প্রপোজ টা করেই ফেলি।”

কেয়া ফিক করে হেসে উঠলো, কিন্তু পরক্ষণেই মনটা কেমন খারাপ হয়ে আসছে।

“কিন্তু আপনার ফ্যামিলি?”

রুদ্র ফের হাসলো।

“আমি আছি তো, এবার তুমি আর ঐশ্বর্য ভাইয়া চলে এসো। এরপর একে বারে আমার করে নেব।”

কেয়া ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি টের পেলো, অতঃপর তারও কেউ আছে যে এত ভালোবাসে। ফ্যামিলি বলতে রিক, জিসান আর গ্রে মা ছাড়া কেউ নেই কেয়ার। এখন এই ফ্যামিলিতে আরো একজন এসেছে।

কাবার্ডের পেছনে লুকিয়ে আছে উৎসা, একদম ঐশ্বর্যের সামনে যাবে না। এদিকে ঐশ্বর্য বাড়িতে এসে উৎসা কে দেখতে না পেয়ে কেমন হাঁসফাঁস করছে!

“রেড রোজ? সুইটহার্ট? ওয়ার আর ইউ?”

উৎসা শ্বাস প্রশ্বাস পর্যন্ত থামিয়ে দিয়েছে, ঐশ্বর্য ভ্রু কুঁচকে নেয়। অতঃপর আই প্যাড নিয়ে রুমের সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে লাগল। ঐশ্বর্য বাঁকা হাসলো,আই প্যাড রেখে বেড রুমে গেল।উৎসা কাবার্ডের পেছনে আছে, ঐশ্বর্য খপ করে গিয়ে ধরে ফেলল।উৎসা কেঁপে উঠল, ঐশ্বর্য শব্দ করে হেসে দেয়। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো,উৎসা ভয়ে চুপসে গেছে।

“উফ্ ষ্টুপিড রেড রোজ ভুলে গেলে সি সি ক্যামেরা?”

উৎসা চোখ বুজে বিরক্ত প্রকাশ করে। সত্যি সে ভুলে গেছে ক্যামেরার কথা।উৎসা শুকনো ঢোক গিললো, ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

“সুইটহার্ট আই লাভ ইউ।”

উৎসা ভয় পাচ্ছে,তার উচিত হয়নি এখানে আসা। জার্মানি আসাই সবচেয়ে বড় ভুল, এখন এই অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাকে ভয় দেখাচ্ছে।

“দদেখুন আমি…

“হিস ডোন্ট…

ঐশ্বর্য উৎসার ঠোঁটে তর্জনী আঙ্গুল ছুঁয়ে দেয়। দৃষ্টি তার ঠোঁটের দিকে, ঐশ্বর্য অসহায় চোখে তাকায়।

“পারছি না থাকতে, সত্যি।অ্যাম…হেই সুইটহার্ট আই কান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ।আই লাভ ইউ, পারব না থাকতে তুমি ছাড়া।”

উৎসার কান্না পাচ্ছে, কিন্তু সে চাইছে না কাঁদতে।চোখ তো আর কথা শুনে না, কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দু ফোঁটা অশ্রু।

“আপনি অনেক খারাপ মানুষ, আপনি শুধু আমার সঙ্গে…. শুধু এসবেরই জন্য আমার সাথে নাটক করেছেন এত দিন?”

ঐশ্বর্য উৎসার চোখের পাতায় চুমু খেল আশ্লেষে চুষে নিল নোনা জল।

“আই সয়ার সব নাটক ছিল না, আমি ফিলিংস নিয়ে কনফিউজড ছিলাম। আমার কাছে শুধু তোমার আ’স’ক্তি কাজ করতো। আমি পারব না আর তুমি ছাড়া থাকতে রোজ।আই কান্ট… প্লিজ।”

উৎসা শুনলো না,সরতে চাইলো। ঐশ্বর্য হাতে চুমু খেল।

“অ্যাম স্যরি।”

উৎসা ঐশ্বর্যের হাতে কা’ম’ড় বসিয়ে দেয়।

“আই হেইট ইউ অস’ভ্য রিক চৌধুরী। আপনি প্রচন্ড বাজে মানুষ, আপনার সঙ্গে,, আমি থাকব না।”

ঐশ্বর্য মিহি হাসলো,উৎসা কে কোলে তুলে নেয় আলতো ভাবে।উৎসা ছটপট করতে লাগলো।

“ছাড়ুন আমি আপনাকে ঘৃ’ণা করি।”

“বাট আই লাভ ইউ।”

“হেইট ইউ।”

“লাভ ইউ।”

“আই…

“লাভ ইউ।”

উৎসা ঐশ্বর্যের বুকে ঘু’ষি দেয়,তাকে কিছু বলতেই দিচ্ছে না এই লোকটা।

ঐশ্বর্য উৎসার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে, উৎসা থমকে যায়। অদ্ভুত মানুষ,কখন কী করে কিছু বোঝা যায় না।এই দেখা গেল একটু পরে আবার উৎসা কে ব্যবহার করে ছুটে ফেলে দিচ্ছে।উৎসা ঐশ্বর্যের ঘুমানোর অপেক্ষা করছে। ঐশ্বর্য ঘুমাতেই উৎসা পা টিপে টিপে মেইন ডোরের দিকে গেল।কী অদ্ভুত দরজা লক করা, পাসওয়ার্ড সিস্টেম।উৎসা রাগে ফুঁসছে, এখন যাবে কী করে?উৎসা কিছুই ভাবতে পারছে না, কিন্তু ঐশ্বর্যের কাছাকাছি থাকবে না। দরজার সামনে বসে রইল উৎসা, অস’ভ্য রিক চৌধুরী কী কখনও সভ্য হবে না? হওয়া উচিত ছিল,এই মানুষটি হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত মানুষ।

চলবে………………।✨