রেড রোজ পর্ব-৩৯

0
7

#রেড_রোজ
পার্ট [৩৯]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)
(কঠোর ভাবে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মু’ক্ত)

পুরুষালী হাতে থা’প্প’ড় খেয়ে বেডের সঙ্গে জড়সড় হয়ে বসে আছে উৎসা,কখন থেকে ফুপাচ্ছে।সাথে নাক টানা তো আছেই! এদিকে জিসান আর কেয়া বাইরে পায়চারি করতে ব্যস্ত, আল্লাহ জানে ঐশ্বর্য উৎসার সঙ্গে কী করছে?

ঐশ্বর্য চেয়ার টেনে উৎসার সামনাসামনি বসলো, দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বললো।

“প্রবলেম টা কোথায়?বাইক চালানোর এত্ত শখ?”

উৎসা নুইয়ে রাখা মাথাটা তুলল। পিটপিট চোখ করে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে। ঐশ্বর্যের মুখশ্রী লাল হয়ে আছে,রাগ উপছে পড়ছে তার। দৃষ্টি তার কপালে থাকা ব্যান্ডেজের দিকে।
এই তো উৎসা হসপিটালে আছে শুনে পাগলের মতো ছুটে এসেছে। এখন যখন এমনতর অবস্থা দেখলো নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি।

“এসব কী হ্যাঁ?হাত কপাল কী এসব?এই চুপ থাকা যাবে না।টেল মি হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস?”

উৎসা নাক টেনে মিনমিনে গলায় বলল।

“আসলে.. ওই আমরা বাইকে পড়….

কথাটা শেষ করতে পারলো না উৎসা, ঐশ্বর্য গিয়ে গাল চেপে ধরে।

“এত বাইকে উঠার শখ।তোর শখ মেটাচ্ছি আমি।”

ঐশ্বর্য আচমকা উৎসার হাত টেনে বেড থেকে নামিয়ে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেল।কেয়া আর জিসান ঐশ্বর্য কে হঠাৎ এত রেগে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো।

“রিক কী করছিস মিস বাংলাদেশী ব্যথা পাবে?”

“তুই সর জিসান, আমি কিন্তু….

কেয়া ঐশ্বর্যের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে উৎসার হাত এতটা শক্ত করে ধরেছে যে সে ব্যাথায় ক’কিয়ে উঠলো।

“রিক লুক কিউট গার্ল ব্যথা পাচ্ছে।”

ঐশ্বর্য কারো কথা শুনলো না,উৎসা কে টেনে হসপিটালের বাইরে নিয়ে গেল,গাড়িতে রিতিমত ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।

“আহ্….

ঐশ্বর্য উৎসার ব্যথায় কোনো ভাবান্তর দেখায়নি। খুবই স্পিডে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়।

কেয়া আর জিসান চিন্তায় পড়ে গেল, ঐশ্বর্য এখন কি করবে?
_____________
বাড়ির বাইরে এসে গাড়ি থেমেছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বাজে, আচমকা ঐশ্বর্য উৎসা কে টেনে নিজের কোলে টেনে নেয়। উৎসা ফের ব্যাথায় কঁ’কিয়ে উঠলো।

“উফ্!”

ঐশ্বর্য চুল গুলো মুঠি করে ধরে উৎসার! চোখ দুটো তার লালচে হয়ে উঠেছে।

“তোর কিছু হলে আমার কী হবে?এত পাগলামি কেন?টেল মি ড্যাম!”

উৎসা কেঁপে উঠলো, ঐশ্বর্যের রাগ দেখে কান্না পাচ্ছে তার।

“অ্যাম স্যরি।”

ঐশ্বর্য আচমকা উৎসা কে জড়িয়ে ধরে,তার শক্তপোক্ত শরীর টা কাঁপছে। উৎসা অনুভব করতে পারছে, ঐশ্বর্য মুখ তুলে তাকায়। উৎসার অধরে আলতো করে চুমু খেল।
উৎসা কে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল, দরজা খুলে উৎসা কে নিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলো। সোফায় বসিয়ে আঁ’ক’ড়ে ধরে উৎসার অধর দুটো। ম’ত্ত হয় উৎসাতে,উৎসা ঐশ্বর্যের শার্টের কলার ধরতেই ঐশ্বর্য সরে গেল । উৎসা পিটপিট চোখ করে তাকালো ঐশ্বর্যের দিকে, ঐশ্বর্য ফ্রিজের কাছে গিয়ে ঠান্ডা পানি বের করে ঢকঢক করে খেয়ে নেয়। আবারও ফিরে এলো উৎসার কাছে, আচমকা উৎসা কে সোফায় শুয়ে দিল। নিজের সম্পূর্ণ ভার তার উপর ছেড়ে দেয়, উৎসা ঐশ্বর্যের পাগলামি দেখছে। ঐশ্বর্য নিজের অবস্থান ভুলে গিয়েছে,সে ভালোবাসার অমৃত সুধা পান করতে ব্যস্ত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দুজনের নিঃশ্বাসের ঘনত্ব বেড়েছে।
সময়টা আটটা ছুঁই ছুঁই, ঐশ্বর্য কনুইয়ে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ফ্লোরের কার্পেটের উপর। দৃষ্টি তার উৎসার দিকে,ফিক করে হেসে উঠলো ঐশ্বর্য। উৎসা লজ্জায় চাদর টেনে মুখ ঢেকে ফেলল। ঐশ্বর্য চাদর টেনে আবারও উৎসার মুখের দিকে তাকায়। উৎসা ঐশ্বর্যের মুখে ধাক্কা দেয় সরাতে, কিন্তু ঐশ্বর্য ফের একই ভাবে তাকিয়ে থাকে।

“আই লাভ ইউ।”

উৎসা মৃদু হেসে বলল।

“ভালোবাসি দুই। তবে মনে আছে ঠকিয়েছেন!”

ঐশ্বর্য ঝু কে উৎসার কপালে চুমু খেল।

“স্যরি।”

“আপনি এমন কেন?”

ঐশ্বর্য ভ্রু যোগল কুঁচকে নেয়।

“কেমন?”

“পাগল, অদ্ভুত পাগলামি করেন।”

ঐশ্বর্য উৎসার গালে দাঁত বসিয়ে দেয়।

“আমি পাগল, ক্যারেক্টারলেস সব। নতুন নতুন রূপে দেখাবো।”

ঐশ্বর্য উৎসার পেটে হাত রাখতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো উৎসা।

“কাতু কুতু লাগছে।”

ঐশ্বর্য চিন্তিত কন্ঠে বলে।

“এখনো?”

উৎসা ফের হাসলো।

“না।”

ঐশ্বর্য আরো কিছুক্ষণ উৎসা কে জড়িয়ে ধরে রইল,মিনিট দশেক পর উঠে উৎসা কে কোলে তুলে রুমের দিকে এগিয়ে গেল। উৎসা কে কাউচের উপর বসিয়ে নিজে ফ্রেশ হয়ে এলো, এরপর উৎসা কে বাথরুমে দিয়ে আসে।
উৎসা ফ্রেশ হতে গেল, তৎক্ষণাৎ ঐশ্বর্য কিচেনে গিয়ে গরম গরম স্যুপ তৈরি করে নিলো।
ঐশ্বর্য এক কাপ কফি নিয়ে জানালার কাছে বসলো,উৎসা বেরিয়ে এলো। ঐশ্বর্য হাত বাড়িয়ে উৎসা কে টেনে নেয়,উৎসা গুটিসুটি হয়ে ঐশ্বর্যের কোলে বসে রইল। অন্ধকার রাত্রি পাশে,উৎসা টেবিলের উপর থেকে কফি কাপ তুলে চুমুক বসালো। ঐশ্বর্য সেই একই কাপ থেকে কফিতে চুমুক দেয়।

“আমরা দেশে যাবো না?”

ঐশ্বর্য মুখ নিচু করে উৎসার দিকে দেখে,উৎসা ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

“কেন এখানে ভালো লাগছে না?”

উৎসার মুখ চুপসে গেল, এখানে একা লাগে।

“উঁহু, এখানে একা লাগে। বাংলাদেশে তো সবাই আছে।”

ঐশ্বর্য উৎসার কপালে পড়ে থাকা ভেজা চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে বলে।

“আচ্ছা, তাহলে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ফিরবো। ঠিক আছে?”

উৎসার চোখ মুখে আনন্দ উপছে পড়ছে।

“সত্যি?”

“হুঁ। এখান ঘুমাতে হবে,লেটস্ গো।”

ঐশ্বর্য উৎসা কে নিয়ে রুমের দিকে চলে গেল। আপাতত দুজনের ঘুম প্রয়োজন, ঐশ্বর্য যে পরিমাণে উৎসা কে জ্বা’লায় তাতে মেয়েটা সত্যি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঐশ্বর্য নিজ মনে ক্রূর হাসলো, ইশ্ বউ তার!
______________

“মা তুমি কী পাগল হয়ে গেছো?কী হচ্ছে এসব? আমার বিয়ে ঠিক করেছো অথচ আমি জানি না?”

নিকি কে দেখতে আসবে কাল,এই কথাটা রিতিমত কানে ঝংকার তুলেছে নিকির।মেয়ের মুখে এমনতর কথা শুনে আফসানা পাটোয়ারী ভীষণ বিরক্ত লাগছে।

“হ্যা তো কী হয়েছে?”

নিকি নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলে।

“দেখো মা তুমি এভাবে আমাকে না জানিয়ে বিয়ের ডিসিশন কী করে নিতে পারো?”

আফসানা পাটোয়ারী বেজায় ক্ষে’পে গেলেন।

“তোকে জিজ্ঞাস করে নিতে হবে নাকি?”

“হ্যা অবশ্যই। আমার পছন্দ আছে কী না কিছু জিজ্ঞেস করবে না?”

“না, আমার মনে হয় না জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন আছে। তুই যে ওই ঐশ্বর্যের বন্ধু জিসান কে পছন্দ করিস তা জানতে বাকি নেই আমার।”

নিকি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আফসানা ওকে থামিয়ে দিল।

“আমি কিছু শুনতে চাই না,তোকে পাত্র দেখতে আসবে আর তুই ওকেই বিয়ে করবি।”

নিকি রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কান্না পাচ্ছে তার, সবসময় তার উপর নিজের ইচ্ছে চা’পিয়ে দেয় আফসানা পাটোয়ারী।
রুমে এসে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল নিকি, বিছানায় বসে পড়ে।কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না?বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোন হাতে নিয়ে কল করলো জিসান কে।

জিসান সবে মাত্র শুয়ে ছিল, নিকির কল পেয়ে ঘুম জড়ানো চোখে তাকায়।ধরতে যাবে তার আগেই কে টে গেল। জিসান উঠে বসলো, তৎক্ষণাৎ ফের ফোন বেজে উঠে।

“হ্যা নিকি বলো।”

“আপনি কি হ্যা?কত বার কল করতে হয়,একবারে ফোন ধরতে পারেন না?”

“আরে আমার অ্যাংরি বার্ড কী হয়েছে?”

নিকি এমনিতেই রেগে আছে,তার উপর জিসানের কথায় মেজাজ তার তু’ঙ্গে।

“শুনুন একদম মজা না।”

জিসান এবার একটু সিরিয়াস হলো।

“আচ্ছা ঠিক আছে,বলো না কী হয়েছে? এত রেগে কেন?”

নিকি আচমকা কেঁদে ওঠে,সে ভেঙে পড়ার মেয়ে না। কিন্তু আজ তার মধ্যে কিছু ঠিক নেই,সব কিছু উল্টো পাল্টা হয়ে গেছে।

“জিসান আমাকে পাত্র দেখতে আসছে।মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”

জিসান বিয়ের কথা শুনে স্তম্ভ হয়ে গেল।

“মানে কী? এভাবে হঠাৎ বিয়ে?”

“হ্যা, কিন্তু আপনি তো কিছু করবেন না! বরাবরের মতো হাতে হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন।”

জিসান বুঝতে পারছে নিকি রেগে আছে,আপাতত নিকি কে শান্ত রাখতে হবে। না হলে কী থেকে কী করে ফেলবে?

“আচ্ছা ঠিক আছে আমি কিছু করছি, তুমি প্লিজ চিন্তা করো না নিকি।”

নিকি সূক্ষ্ম শ্বাস ফেললো, কষ্ট হচ্ছে তার।

“আপনি আসবেন প্লিজ? আমার প্রচুর একা লাগছে!”

“উঁহু,একা না তো, আমি আছি তো অ্যাংরি বার্ড।”

“প্লিজ তাড়াতাড়ি চলে আসুন।”

“হ্যা আমি রিকের সঙ্গে কথা বলছি। প্লিজ টেনশন করো না। আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি।”

জিসান কোনো রকমে নিকি কে বুঝিয়ে শান্ত করে।
________________

“ব্রো কিছু কর! আমি সুইসাইড করব!”

সকাল সকাল ঐশ্বর্যের কাছে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে জিসান।সে যতই নিকি কে বুঝিয়ে দিক, কিন্তু ওই মহিলার উপর বিশ্বাস নাই।এক মাত্র ঐশ্বর্য ছাড়া কেউ কিছু করতে পারবে না।

“আরে জিসান কী করিস তুই?”

উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।

“জিসান ভাইয়া এত টেনশন নিচ্ছেন কেন?এই যে অস’ভ্য রিক চৌধুরী তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ চলুন ভাইয়ার বিয়ে দিয়ে দি।”

ঐশ্বর্য কিয়ৎক্ষণ ভেবে বললো।

“চিল ইয়ার আমি আছি তো!দেখ আমার বোন তোকে পছন্দ করেছে তাই তোর সাথেই ওর বিয়ে হবে।”

জিসানের চোখ দুটো চকচক করছে।

“রিয়েলি? তাহলে চল এখুনি যাই!”

ঐশ্বর্য কপাল চা’প’ড়াচ্ছে।

“ইয়ার সব রেডি কর,আমরা রাতেই ব্যাক করব।”

জিসান ত্বরিতে বেরিয়ে গেল,আপাতত সব কিছু গুছিয়ে নিতে হবে।
জিসান যেতেই উৎসা গিয়ে ঐশ্বর্যের পাশে বসলো।

“ভাইয়া আপুকে অনেক ভালবাসে তাই না?”

ঐশ্বর্য এক হাতে উৎসা কে জড়িয়ে বলে।

“আমিও ভালোবাসি, আমার ভালোবাসা কে।”

উৎসা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। ঐশ্বর্য আদুরে চুমু খায় উৎসার কপালে।

চলবে……………..।✨