#রেড_হার্ট ❤️
#পর্ব_এগারো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
শাশুড়ি মায়ের পছন্দ করে দেওয়া শাড়িটাই পড়েছে বকুল। লম্বা ঘন চুলগুলো বড় করে খোঁপা করা। তাতে গুঁজে দেওয়া রজনীগন্ধা ফুল। চোখে লেপ্টে দেওয়া কাজল আর আইলাইনার। ঠোঁটে মেরুন লিপিস্টিক।
নিজের কাছে নিজেকেই আজ দারুণ লাগছে তার। আয়নার সামনে এগিয়ে নিয়ে গেল ভ্রমের মা। বকুল চোখ তুলে তাকাল। সম্পূর্ণ রুপটা তার একটু আগের কল্পনার চেয়েও ভারী মিষ্টি। লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল। কিন্তু থেমে থাকলো না ভ্রমের মা। মেয়েকে লজ্জা দিতে একটা বেশামাল কথা বলেই ফেলেন।
— ভ্রম প্রথম দেখায় নির্ঘাত তোমায় চোখ টিপ দেবে!
লজ্জায় লাল হওয়া মুখশ্রী দুহাতে আড়াল করে নিল। ভ্রমের থেকে এইটা সে আশা করেনা কিন্তু কেউ এরম ভাবে লজ্জা দিলে নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারেনা। মাথাটা নিচু করে রইলো। ভ্রমের মা তাড়া দিয়ে বললেন,
— এই অনেক হয়েছে। এবার চলো, তোমার দেরি হয়ে যাবে।
বকুলকে ধরে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নামল তারা। দেখা হয় ভ্রমের বাবা খালেকুজ্জামানের সাথে।
— মা বকুল! চলো আজ আমি তোমায় ড্রপ করে দিয়ে আসি।
বাবার কথায় ঠোঁট এলিয়ে হাসলো বকুল। মার্জিত স্বরে জিজ্ঞাসা করলো,
— আপনার অসুবিধা হবে না?
— মেয়েকে এগিয়ে দিতে বাবার কখনো অসুবিধা হয় বাবা?
— না মানে আমি সেটা বলছি না। আপনার তো আরোও অনেক কাজ থাকতে পারে।
— মেয়ের চাইতে ইম্পোর্টেন্ট কাজ আর কিছুই হতে পারেনা।
শব্দ করে হেসে ফেললো ভ্রমের মা আর বকুল। তাদের হাসি দেখে ভ্রমের বাবা নিজেও হেসে ফেললেন।
— চলুন বাবা।
বলে এগিয়ে গেল সদর দরজার দিকে। তখনই বকুল ডেকে দাড় করিয়ে দেয় ফুপু। দাঁড়িয়ে যায় ভ্রমের বাবা আর বকুল। ফুপুকে দেখে এগিয়ে এসে শোধালো,
— কিছু বলবে ফুপু?
— হা কর তো। কত ভালো একটা দিন আজ তোর। আর মিষ্টিমুখ না করেই চলে যাচ্ছিস?
বলেই হাতে থাকা প্লেট থেকে একটা মিষ্টি উঠিয়ে বকুলের মুখের সামনে ধরলো। আবেগাপ্লুত হয়ে মিষ্টি টা মুখে নিয়ে জড়িয়ে ধরলো ফুপুকে। ধরা গলায় বলল,
— এতো কেন ভালোবাসো আমায় ফুপু?
— তুই আস্ত একটাই তো ভালোবাসা। তোকে ভালো না বেসে থাকা যায় বল? এবার চোখ মোছ। কাজল ছড়িয়ে যাবে। আমার ভাইপো দেখার আগেই তুই ভূতনি হয়ে যাবি, তার চেয়ে ওখানে গিয়েই ভূতনি হ!
হেসে উঠলো উপস্থিত সবাই। ‘আসি’ বলে প্রস্থান করলো তারা।
~~
শশুর বাবা তাকে ড্রপ করে দিয়ে গেছে অনেক সময় হলো। তার মাঝেই রিপোর্টার রা তাকে হানা দিয়ে বসলো। একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে কাহিল। ভ্রমকে একবারের জন্যেও তার নজরে আসেনি। প্রশ্ন একটাই, ‘লোকটা থাকবে কই?’
ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে রিমি কে টেক্সট করতে যাবে তখনই শাড়ির আঁচলে টান অনুভব করে। দাঁড়িয়ে যায় সে। পেছন ঘুরে এক সুদর্শন, সুঠাম দেহির পুরুষলোক কে আবিষ্কার করলো। ভ্রু কুচকে তাকালো। ছেলেটা আঁচলে ধরে দাড়িয়ে আছে।
— কি করছেন কি আপনি?
বকুলের গলায় রাগ স্পষ্ট। আচল ছেড়ে দিল ছেলেটা। মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে আমতা আমতা করে শোধালো,
— সরি মিস। একচুয়ালি আপনাকে আমি এতোক্ষণ ধরে ডেকেই যাচ্ছিলাম কিন্তু আপনি শুনতে পান নি। তাই বাধ্য হয়ে…!
মাথা চুলকে নিল ব্যক্তিটি। চোখ ছোট ছোট করে ফেলল বকুল।
— আপনি তো অন্য ভাবেও সামনে আসতে পারতেন। আঁচল ই কেন ধরতে হবে আপনাকে?
কনফিউজড হয়ে গেল লোকটা। খানিকটা ইতস্তত বোধ করে শোধালো,
— আমি এদেশের কালচার সম্পর্কে কিছু জানি না। তাই যদি কিছু ভুল হয়ে থাকে তবে আমি দুঃখিত।
খেয়াল হলো বকুলের। বাংলা ভাষায় কথা বললেও লোকটার মুখের আদল কিছুটা বিদেশি লোকেদের মতন।
— আপনি?
— আমি এই কলেজে নতুন এসেছি। তেমন কোনোই ফ্রেন্ড নেই। আপনাকে দেখে কেন যেন এগিয়ে আসলাম।
— ফ্লার্ট করছেন?
বকুলের সোজা উত্তর। লোকটা হেসে উঠলো।
— অবশ্যই না! এনিওয়েস, আমি ফানায়েত ফাতেহ দিগন্ত। এখানকার স্থানীয়ই বটে। আর আপনি?
বকুল ব্যাপার টা সহজ করেই নিল। উত্তর দিল।
— জি আমি বকুল আহমেদ। আর আপনার একটু কারেকশন করা উচিত। মিস নয় মিসেস। মিসেস ভ্রম।
দিগন্ত ছেলেটা মুচকি হাসলো।
— ইটস ওকে!
তাদের কথোপকথনের মাঝেই হাজির হল রিমি। বকুলকে চিনতে পেরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো রিমি। এদিকে আড়াল থেকে তাদেরকে কেউ পর্যবেক্ষণ করছিল। কারো ডাকে সেখান থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিটি সরে গেল।
— তোকে এই পেলাম!
— কেমন আছিস বল।
— বিন্দাস!
হেসে উঠলো দুজনেই। রিমি একপলক তাকালো পাশের ছেলেটার পানে। কিছু সময়ের জন্য সে হাসি থামিয়ে দিল। মায়াবী আদলে গড়া মুখশ্রী তার হৃদয়ে কম্পন ধরালো। বড় করে একটা শ্বাস নিল। অজানা কারোর প্রতি কোনোরকম আশা সে রাখবে না। পরিচয় শিউর হতে লোকটাকে ইশারা করে বকুলকে শোধালো,
— এই বকুল, এনিই কি তোর ভ্রম? কি দারুণ দেখতে রে দুলাভাই!
রিমির এটুকু বলাতেই ওর হাত চেপে ধরলো বকুল। চোখ পাকিয়ে শোধায়,
— না রে হ্যাবলাকান্ত! এ হচ্ছে নিউ ফ্রেন্ড। তোর আসার আগেই পরিচয় হল।
জিভে কামড় বসাল রিমি। অপরাধীর ফেস করে বকুলকে শোধালো,
— সরি ইয়ার! আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি।
— ইটস ওকে!
— আর আপনাকেও সরি।
কথাটা বললো দিগন্ত ছেলেটা কে। বকুল পরিচয় পর্ব সারলো,
— লুক রিমি। ও হচ্ছে দিগন্ত। ফানায়েত ফাতেহ দিগন্ত। আর দিগন্ত ও হচ্ছে রিমি। মাহবুবা খানম রিমি। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়িয়ে রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
— হ্যালো।
— হাই।
তিনজনেই মুচকি হাসলো। তখনই স্টেজে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয় সকলকে। তারা তিনজন ও ছুটলো সেদিকপানে। স্টেজে যাওয়ার সময় সিনিয়ররা তাদেরকে ছোট্ট একটা ফুলের বু’কে আর রেপিং পেপারে মোড়ানো একটা বর্গাকৃতির ছোট্ট বাক্স দিয়ে দিল। তাদের শুভেচ্ছা উপহার।
শুভেচ্ছা পর্ব শেষে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদেরকে শুভকামনা জানিয়ে শুরু হলো বিনোদন অংশ। বিনোদনের শুরুতেই উপস্থাপক অনাকাঙ্ক্ষিত একটি নাম নিয়ে অবাক করা একটা আবদার করে বসলেন।
আপনারা সকলেই জানেন গত চার বছরের শেষ রেকর্ড আমাদের কলেজের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ভ্রমকে দিয়েই শুরু হয়েছিল আর শেষ হলো এই বছরে। আমাদের ভ্রম পড়াশোনার দিক থেকে যেমন এগিয়ে তেমন অন্যসব কিছুতেও। তার গানের গলা একদম মাশা’আল্লাহ। আজ না জানিয়ে এইভাবে ডেকে নেওয়াতে সরি বলে নিচ্ছি। তবে ভ্রমকে পার্ফম করতেই হবে। ইহান তালুকদার ভ্রম! আপনাকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ করছি।
আচমকা এমন বলায় উপায় না পেয়ে এগিয়ে গেক স্টেজের দিকে। দিহান কে বলে নিজের গিটার টা আনিয়ে নিল। দক্ষ হাতে গিটারে সুর তুলে এক মিষ্টি কন্ঠস্বরে গাইতে লাগলো,
তোমার নামের রোদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাব কতদুরে এখনও
তোমার নামের রোদ্দুরে
আমি ডুবেছি সমুদ্দুরে
জানি না যাব কতদুরে এখনও
আমার পোড়া কপালে
আর আমার সন্ধ্যে সকালে
তুমি কেন এলে জানি না এখনও
ফন্দি আটে মন পালাবার
বন্দি আছে কাছে সে তোমার
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
হলো শুরু সাতদিনে
এই খেলাধুলো রাতদিনের
জানি বারণ করার সাধ্যি নেই আর আমার
তোমার নামের মন্দিরে
আর তোমার নামের মসজিদে
আমি কথা দিয়ে এসেছি বারবার
বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যাও
তুমি ইচ্ছেমত আমাকে সাজাও
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
মনের গভীরে, ঘুমের শরীরে
তোমাকে নিয়ে ডুবে যাবো
আমার কাছে কারণেরা আছে
নিজেকে আমি খুঁজেই নেবো
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও
তোমাকেই চাই
যদি সত্যি জানতে চাও
তোমাকে চাই, তোমাকে চাই
যদি মিথ্যে মানতে চাও।
গানের সমাপ্তি হলো, কিন্তু গান গাওয়া ব্যক্তিটির বকুলের পানে তাকিয়ে আছে অনিমেষ। করতালির আওয়াজে মুখরিত হল চারিপাশ। তবুও পলকহীন দৃষ্টি মেলে দিব্যি তাকিয়ে আছে। ব্যাপার টা খেয়াল করতেই বকুলের অন্তঃরাত্মা কেঁপে উঠলো। লোকটা তাকে উদ্দেশ্য করে গানটা গাইলো নাকি? সারাক্ষণ তো তার দিকেই তাকিয়ে রইল। দৃষ্টি ফেরাতে চেয়েও সে পারলো না। আজ ইচ্ছে করছে এই চোখে ডুবে যেতে। তখনই রিমি ধাক্কা মেরে বলে উঠলো,
— এইটাই কি ইহাম তালুকদার ভ্রম? দেখ চোখে একরাশ ভ্রম নিয়ে তোর পানে তাকিয়ে আছে।
#চলবে?
#রেড_হার্ট ❤️
#পর্ব_বারো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
মেডিকেল স্টুডেন্ট রা পড়াশোনা আর সংস্কৃতি সব দিক থেকেই এগিয়ে। তাইতো দুর্দান্ত সব পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। এক মিনিটের জন্যেও বোরিং ফিল করেনি বকুল। হঠাৎই রিমি গুতা মারলো বকুলকে। ভয় পেয়ে গেল সাথে সাথে।
— কি হয়েছি কি। গুতা মারছিস কেন?
— তোকে কেউ ডাকছে।
— কে ডাকবে?
— ওইদিকে তাকিয়ে দেখ।
রিমির বলা শেষ হতেই দৃষ্টি অনুসরণ করলো বকুল। ভ্রম দাঁড়িয়ে আছে গাছে হেলান দিয়ে। রিমিকে তখন বলা হয়নি এইটাই যে ওর স্বামী। হঠাৎই কেন তাকে ডেকে পাঠালো বুঝতে পারলো না। তাই রিমির হাতটা আগলে ঠেলে এগিয়ে গেল।
— কিরে, আমায় টানছিস কেন?
— আমার বর দেখতে চেয়েছিলিস না?
— হ্যাঁ!
— তাহলে আমার সাথে চল।
— কোথায়।
— এই যে আমায় যিনি ডাকলো তার কাছে।
— তোকে ডাকছে তো আমায় টানছিস কেন?
— আমার বেস্টফ্রেন্ড তুই তাই।
চাপা শ্বাস ফেলে বান্ধবীর পায়ে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চললো।
— কেন ডেকেছেন?
বকুলের কন্ঠে টানটান ভাব, কণ্ঠ খানিকটা ক্ষীণ।
— অতিরিক্ত কথা বলো কেন?
— কোথায় বলেছি? (অবাক হয়ে)
দৃষ্টি ফেলে বকুলের পাশে।
— এই মেয়েটাকে তোমার সাথেই দেখছি সকাল থেকে, কে হয় এ? জানো না চেনো না সারাদিন মিশবে?
ভ্রমের কথায় মনে মনে হোচট খেল বকুল। লোকটা তো একটু আগেই আসলো। কই তাকে তো আসা অব্ধি চোখে পড়েনি, তাহলে সে সারাক্ষণ রিমির সাথে থাকলো এইটা জানলো কি করে? নিজে ফলো করছেন নাকি তার পেছনে কাউকে লাগিয়ে দিয়েছেন!
— কি হলো, কথা বলো?
— কি বলবো?
ভ্রম কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। পাত্তা দিলো না বকুল। খানিকটা হেলা করে বললো,
— ও আমার বেস্টফ্রেন্ড। তাই সারাক্ষণ ওর সাথে চিপকে আছি।
বকুলের কথায় ভ্রম আপাদমস্তক পরখ করে নিলো। সন্দেহবাতিক দৃষ্টিতে তে রিমিকে শোধালো,
— নাম কি আপনার?
ওরকম পালোয়ানী হাবভাবে রিমি ভড়কে গিয়েছিলো। এবার তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে গোয়েন্দা ট্যাগ টা লাগিয়ে দিল। চোখ দুটো ছোট ছোট করে বকুল কে এক হাতে ঠেলে পেছনে সরিয়ে ভ্রমের সামনে এসে দাড়ালো।
— আপনাকে কেন বলবো হ্যাঁ?
— জিজ্ঞাসা করেছি তাই!
— বলবো না।
রিমির ত্যাড়ামি তে ভ্রম কোমড়ে দুহাত দিয়ে দাড়ালো। বিরক্তিমাখা কণ্ঠ আর হাবভাব দেখিয়ে শোধালো,
— তোমার বেস্টফ্রেন্ড তো দেখছি তোমার থেকেও বেয়াদব।
— এই কাকে বেয়াদব বলছেন আপনি?
— আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। এই মেয়ে বকুল! এনাকে যেতে বলো। তোমার সাথে কথা আছে আমার।
এই কথায় রিমি ভেংচালো। বিকৃত করে বললো,“ উহ!টোমার টাটে আমাট কটা আটে। শখ কত!”
রগচটা স্বভাবের ভ্রম রেগে গেল মুহূর্তেই। কথা বললেই বাড়বে। মেয়েটার যে ঝগরুটে স্বভাব আছে সেটা সে বুঝে নিলো। তাই আর দেরি না করে বকুলের ডান হাতটা মুঠোয় নিয়ে নিলো।
— চলো।
বলে পা বাড়ালো। থামিয়ে দিলো রিমি।
— ওকে নিয়ে যাচ্ছেন কোথায়। আর হাত ছাড়ুন।
— আপনি পন্ডিতি করছেন কেন?
— আমার সেই অধিকার আছে।
— আমার সম্পর্কে জানেন কতটুকু?
— স্টেজ ফাংশনে গান শুনে ভেবেছিলাম ভালো হবে এখন তো দেখছি ক্যারেক্টারলেস।
— জাস্ট শাট আপ!
চিল্লিয়ে বলে উঠলো ভ্রম। বকুল আর চুপ থাকলো না। দুদিকে হাত নাড়িয়ে বললো,
— থামো তোমরা। রিমি, কি শুরু করে দিয়েছিস?
— তো করবো না? আমার বান্ধবীর হাত ধরে অধিকার দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া। হচ্ছে ওনার!
— আরেএএ…
— কোনো আরে বারে নেই। এই আপনি জানেন না ও বিবাহিত? তাও ঢেং ঢেং করে ওর কাছে এসেছেন কেনো?
উফফ বলে হাতটা ছেড়ে মাথাটা দুহাতে চেপে ধরলো ভ্রম। অতঃপর ঠোঁট কামড়ে রাগ নিবারণ করার চেষ্টা চালিয়ে কিছু বলতে নেবে তখনও রিমি বলে উঠে,
— কোনো রাইট আছে আপনার? আপনি তো…
থামিয়ে দেয় বকুল। রিমির গরম হয়ে যাওয়া মাথায় হাত বুলিয়ে বকুল মিনমিনিয়ে শোধালো,
— দোস্ত! এনিই আমার স্বামী।
পিলে চমকে উঠে রিমির। এক লাফে পিছিয়ে গিয়ে আতঙ্কিত হয়ে দ্রুততার সাথে বলে উঠে,
— ওহ মাই আল্লাহ। এনিই কি তোর দানব হুতুম পেঁচা বর। এনিই সেই ডাইনোসর আগে বলবি তো। ইশরে…. সরি ভাইয়া, আ’ম রিয়েলি ভেরি সরি। আ,আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আ, আমি আসলে… এই তুই যা সাথে। কথা বল। না না, তোরা থাক, আমিই বরং গেলাম।
বলে একপ্রকার ছুট্টে চলে আসলো রিমি। লোকটার কাজ আর কথার বর্ণনা তেই গলা শুকিয়ে আসতো তার। আর আজ সেই রগচটা লোকটাকে আবোল-তাবোল সব বলে দিয়েছে। দোষটা বকুলের। বর নিয়ে সারপ্রাইজ দেবে বলে এখন ও নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেল।
হাতটা ছেড়ে দিয়ে তড়িতে চুলে হাত চালালো।
— মেয়েটা না হয় তোমার বেস্টফ্রেন্ড তো ছেলেটা কে ছিল?
— কোন ছেলে?
— চেনো না বলছো?
— আরে আগে পরিষ্কার করে বলবেন তো।
— তখন যে ছেলেটা তোমার প্রসংশা করলো। সে।
— ওহ দিগন্তের কথা বলছেন?
— ছেলেটার নাম দিগন্ত?
— হ্যাঁ। ও কলেজে নতুন। ছেলেটা ভালো।
বকুলের কথায় গাল চুলকে কিছুটা অধিকারের সুর নিয়ে শোধালো,
— ছেলেটার সাথে মিশবে না।
বকুল ভ্রমের কথায় অবাক না হয়ে পারলো না। নাক মুখ কুচকে প্রশ্ন ছুড়লো,
— কেন?
— আমি বলেছি যে, তাই।
কিছু সময় নিলো বকুল। চুপ করে রইলো। তারপর মাথা উচিয়ে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলো,
— আমি কার সাথে মিশবো, কথা বলবো এইসব কি আপনি বলে বা ঠিক করে দেবেন নাকি?
— দরকার হলে তাই করবে।
বিরক্তি ভাব ফুটে আসলো বকুলের চোখ-মুখে।
— অধিকার দেখানোর কেউ না আপনি।
— ভুলে যেও না আইনত তুমি আমার স্ত্রী, অর্ধাঙ্গিনী।
— মানেন তো আর না।
— মানি বা না মানি, সময়ে-অসময়ে আমার কথা মানতে বাধ্য তুমি।
— এইসব আজাইরা ফাউল কথা বলাদ জন্য ডেকেছেন?
— ছেলেটার সঙ্গ বাদ দেবে কি না বলো।
— জেলাস?
— কেনো?
— এই যে আমি অন্য একটা পুরুষের সাথে মেলামেশা করছি। তাতে আপনার হিংসা হচ্ছে?
— একদমই না।
— তাহলে কথা বলতে মানা করছেন কেন?
বকুলের সোজা প্রশ্নে দমে গেল ভ্রম। মস্তিষ্ক’ও তাকে জিজ্ঞাসা করলো কেন বকুলকে সে এইরকম কথা বলছে। মেডিকেলে একটা ছেলে আরেকটা মেয়ে কথা বলতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবুও ব্যাপারটা মানতে পারছেনা সে। সকালে যখন ইয়াদ বকুলের প্রশংসা করতে শুনলো আর তাদের হাসি-ঠাট্টা দূর থেকে দেখলো, সরাসরি জানালো তাকে। দূর থেকে বকুল আর ছেলেটার সেসময়ের ছবি ক্যাপচার করে তাকে পাঠিয়েছে। এরপর থেকেই তার ভেতর ভেতর অস্থিরতার শেষ হচ্ছে না।
— কই উত্তর দিচ্ছেন না কেন?
ভ্রম জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা উপর-নিচ করতে করতে শোধালো,
— ভুলে যাচ্ছো তুমি তালুকদার বাড়ির বউ। আর তালুকদার বাড়ির বউয়েরা পরপুরুষের সহিত কথা বা পরিচিত হতে পারে না।
বকুল মুচকি হাসলো। লোকটা তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে তবে। কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেনা। লোকটার এই জেলাসি তাকে ভীষণ ভালো লাগাচ্ছে। সে বুঝেও না বোঝার মতো করে বললো,
— কই এমন রুলস তো শুনি নি।
— শুনো নি, শুনে নাও।
— নিলাম, তবে আমি মানতে পারবো না।
— মানবে না তো?
ভ্রমের রাগ, বিরক্তি মেশাল ভাবটা দেখে বকুল পাশ ঘুরে শব্দহীন হাসি হাসলো। তার আর ভ্রমের দূরত্ব কিছুটা কমিয়ে নিল। মুখটা ঘাড়ের কাছে নিয়ে মৃদ্যু আওয়াজে শোধালো,
— শুনুন মিস্টার তালুকদার। না চাইতেও আপনি অসহ্যকর কারোর প্রেমে পড়েছিলেন। ধীরে ধীরে তা কনভার্ট হয়েছে ভালোবাসায়। এবার পালা মায়া জন্মানোর।
ভ্রম এক কদম পেছনে সরে আসে। অবাক করা চাহনি নিক্ষেপ করে কাঠকাঠ কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,
— কি বলতে চাচ্ছো। আমি তোমায় ভালোবাসি?
— উমম… প্রশ্ন না করে নেশা লাগানো কণ্ঠে সুন্দর করে বলুন। আমি ফিরতি রিপ্লাই করছি। আর এইটা করো না, ওটা করো, ওটা করো না, এইটা করো; এইসব বলে না কাউকে ধরে রাখা যায়না। যে থাকার সে আপনার মন বুঝে স্বেচ্ছায় থেকে যাবে।
#চলবে