রেড হার্ট পর্ব-১৭+১৮

0
11

#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_সতেরো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা

সেদিনের পর কেটে গিয়েছে দু’মাস। আর এই দু মাসে পরিবর্তন এসেছে সবার জীবনেই। ভ্রম তুলনামূলক সুস্থ, নিয়মিত মেডিক্যালে যায় ; রাত দিন পুরোটা সময় প্রায় সে হসপিটালেই থাকে। বকুল মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে কলেজে বেশ নাম কামিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তাদের নিয়ে প্রায় ঝড় তোলা হয় যে ভ্রম মেডিকেল ওয়ার্ল্ডে যেমন ফেমাস ঠিক তেমন তার সহধর্মিণী’ও। খাপে খাপ মিলিয়েছে। বিন্তি ফুফু সহ খালেকুজ্জামান এবং ওনার স্ত্রী গিয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি বেড়াতে। বকুলকে নিতে চাইলেও পারেনি। কারণ ওর ফার্স্ট ইয়ারে অনেক চাপ যাচ্ছে।

বাড়িতে শুধু আয়না, ভ্রম আর সে। এই দু’মাসে তাদের সম্পর্কের উন্নতি খুব একটা হয়নি। ভ্রম ঠিক মতো কথা বলে না। প্রয়োজন পড়লে তবেই কথা বলে। আর ইচ্ছে করেই তো সারাদিন ফ্রেন্ডদের সাথে ওয়ার্ডে থাকে।

ঘড়িতে ৬ টার। কাঁটা ছুঁইছুঁই।
আজ কলেজে উপস্থিত থাকা চাই ৭ টার মধ্যে। সিনিয়র দের কড়া নির্দেশ। তাই আজ বকুল চার টা দিকে উঠে নামাজ পড়ে। তারপর চটপট গোসল সেরে নেয়। এই দুটো করতে করতেই ছ’টা বেজে গেল। এখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ড্রায়ার দিয়ে নিজের চুলগুলো খুব যত্ন সহকারে শুকাচ্ছে। তবে তার দৃষ্টি নিবদ্ধ আয়নায়। হঠাৎই রুমে প্রবেশ ভ্রমের। বকুল তাকে দেখেও কিছু বললো না। আজকাল লোকটার সাথে কথা বলতেও মন সায় দেয়না। কেমন যেন রোবোটিক হয়ে গিয়েছে লোকটা। কিছু জিজ্ঞাসা করলে মন সায় দিল্র উত্তর দেয় আর না দিলে চুপ করে থাকে।

এই ভাবতেই ড্রেসিন টেবিলের সামনে রাখা ফোনটায় নোটিফিকেশনের আওয়াজ আসলো। বকুল ড্রায়ার টা রেখে সেদিকে তাকালো। ততক্ষণে তার চুল শুকানো শেষ। তাকিয়ে দেখলো ভ্রম কে নিয়ে নতুন নিউজ। বান্ধবী রিমি সেটা ওকে শেয়ার করেছে।

দীর্ঘশ্বাস ফেললো বকুল। এইসব নিউজের ধারেকাছেও যায়না সে। চ্যানেলগুলো ইনকাম করতে ভুয়া সব নিউজ লিক করে। আর প্রত্যেকটা নিউজ কিনা রিমি দায়িত্ব নিয়ে শেয়ার দেয়। এই তো গত কয়েকদিন আগেও তাকে একটা নিউজ শেয়ার করেছিলো রিমি। যেখানে তাদের বাচ্চার ব্যাপারে কথা তুলেছিল। আদতে তেমন কিছু ছিলোই না। আবার সেটাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউস!

তবে যাকে নিয়ে এতো রচনা জল্পনা সেই লোকটাই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কেমন যেনো দূরত্ব বাড়াচ্ছে । এই ভেবে ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। একপ্রকার এভোয়েড করলো রিমির মেসেজ। কারণ একটু পরেই তো কলেজে দেখা সাক্ষাৎ হবে।

” আমার পারফিউম টা কোথায় রেখেছো? ”

ভ্রমের প্রশ্নে ফিরে তাকালো বকুল। প্রতিত্তুর করলো সে।

” কোনটা? ”

” Black Opeum. ”

” সেকেন্ড তাকে দেখো। ”

” দেখেছি, নেই। ”

” সরো, আমি বের করে দিচ্ছি। ”

এই বলেই বকুল চুলগুলো হাতখোপা করে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল। তাক গুলো খুজে পেয়েও গেলো। পারফিউম টা হাতে নিয়েই ভ্রমের চোখের সামনে ধরলো। আর বললো,

” বলেছিলাম না? এটা এখানেই ছিল। ”

ভ্রম কথা বাড়ালো না। হাত থেকে পারফিউম টা নিয়ে অন্যদিকে চলে গেল। বকুল ও আলমারি থেকে মেরুন কালার হিজাব টা নিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ পড়েছে হলুদ রঙের মেরুন পাড় করা জামা, ডেনিম প্যান্ট। তারপর হাতে থাকা হিজাব টা পড়ে নেয়। এদিকে ভ্রম কে হাতে এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ নিয়ে রুম থেকে বের হতে দেখলো। আজব লোক! যাচ্ছে একই কলেজে তবে আলাদা আলাদা যাবে।

~~
কলেজের গেইটে পা বাড়াবে তার আগেই একদল লোক বকুল বকুল বলে ছুট্টে আসলো বকুলের উদ্দেশ্যে। আচমকা এতোগুলো লোক কে কলেজে প্রবেশ করতে দেওয়া যায়না। তাদের পোশাক আশাক বলে দিচ্ছে তারা একেকজন রিপোর্টার। তাই মুহূর্ত দেরি না করে দারোয়ান টা গেইট আটকে দিলো। বকুল থতমত খেয়ে গেলো। এইভাবে সাংবাদিক রা তার দিকে ধেঁয়ে আসাতে খানিকটা ভড়কে যায় সে।

ওদের উদ্দেশ্য করেই বললো,

” প্লিজ, প্লিজ। দূরত্ব বজায় রাখবেন। ”

বলেই গেইটে থেকে সরে পাশে এগিয়ে গেল। রিপোর্টার রা সেদিকে এগিয়ে গেল। একের পর এক মাইক্রোফোন তার সামনে ধরা হলো। সাথে সাথে এম মেয়েলি রিপোর্টারে মুখে তেজী কণ্ঠে প্রশ্ন শুনে আকাশ থেকে পড়ে যাওয়ার মতো অনুভব করে সে। প্রশ্নটা কিছুটা এমন—

” ম্যাম! মিস আমরিনের অন্তস্বঃত্ত্বা হওয়ার পেছনে মিস্টার ভ্রম রয়েছে। এতে আপনার মতামত কি? ”

বকুল বিরবির করে বললো, আমরিন, প্রেগন্যান্ট আবার ভ্রম দায়ী?
মানে এগুলোর কোনোটাই তার মস্তিষ্ক সেট আপ দিতে পারছে না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সাংবাদিকদের প্রশ্নের ফেরে প্রশ্ন করে বসলো,

” কি সব জোকস শোনাচ্ছেন সকাল সকাল? কি সব বলছেন? আমরিন ভ্রমের বেস্টফ্রেন্ড। নিউজ করতে কি আর। কিছু পান নি? ”

বকুলের কথা শেষ হতে না হতেই পড়ে যাওয়া কথাটা দৌড়ে আসা এক রিপোর্টার নিয়ে নিলেন। তারপর এক বিভৎস প্রশ্ন করে বসেন।

” বেস্টফ্রেন্ড তো হয় বিবাহ না করা আরেকটা বউ। সেজন্যই তো শেষমেষ বউ কে ছেড়ে বেস্টফ্রেন্ডে আটকে দিয়েছে। বলছিলাম যে আপনি কি ওনাকে কাছে আসতে দেন না নাকি? এতো ভালো ডাক্তারের পেছনে পেছনে যে এই বাজে চরিত্র থাকবে তা আদতেও ছিল বুঝি? ”

বকুল কথার মানে খুঁজে পেল না। তবে বাজে ইঙ্গিতে বলা কথাটা সিলেক্ট করে নিল। সেইসাথে রিপোর্টারের চেহারা+ গলায় ঝুলোয়া আইডির দিকে চোখ বুলিয়ে নেয়

” ম্যাম। আই থিং আপনি নিউজ টা জানেন না। নিউজ টা হচ্ছে মিস্টার ভ্রমের বেস্টফ্রেন্ড আমরিন তার প্রেগ্ন্যাসির কথা…”

সাংবাদিক কে কথাটা শেষ করতে দিলো না বকুল। ক্ষেপে গিয়ে প্রতিত্তুর করলো,

” তো? সে প্রেগন্যান্ট হয়েছে তাতে আমার বা ভ্রমের কি? আপনারা আমার কাছে কেন কিছু শুনতে এসেছেন? ”

” ম্যাম! কথা শেষ করতে তো দিবেন। ”

এই কথা শুনে বকুল কিছুগা শান্ত হলো। শান্ত হয়েই গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো,

” জি, কথা শেষ করুন। ”

” আমরিন তার প্রেগ্ন্যাসির কথা তার সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করেছেন এবং দাবি করেছেন বাচ্চার বাবা আপনার হাসবেন্ড। আই মিন ইহান তালুকদার ভ্রম। ”

দু’পা পিছিয়ে গেল বকুল। আকাশসম বিস্ময়তা তার মাঝে ভর করলো। চারিদিকের আওয়াজ তার কান অব্ধি পৌঁছুলো না। কেবল শ্বাস প্রশ্বাস ধীরস্থীর করে বড় বড় পলক ফেললো।

” আমরা আসলে জানতে চাইছি আপনার এই বিষয়ে মতামত কি? মানে আপনি ওনার অর্ধাঙ্গিনী হিসেবে কি মনে করেন। আমরিনের কথার সত্যতা কি? ”

শেষের কথাটা নোট করে উত্তর দিল।

” আমি নিউজটা আপনাদের থেকেই শুনেছি তাই যাচাই-বাছাই না করে বাড়তি কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে পার্সোনাললি বললে বলবো প্রমাণ ছাড়া আমি কোনো মতামত দেবো না। তাই আজকের জিজ্ঞাসা এখানেই বন্ধ রাখুন। অলমোস্ট আমার কলেজ টাইম ১০ মিনিট লেট। ধন্যবাদ। ”

কথাগুলো বলেই সে আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না। সরাসরি দারোয়ান মামাকে বলে নিজ দায়িত্বে গেইট ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল। আর পেছনে একেক চ্যানেলের একেক রিপোর্টার নিজের মতো করে এক্সট্রা তেল মশলা মিশিয়ে নিউজ বানাতে ব্যস্ত হলো।

~~

” হ্যাঁ, আমিই আমরিনের বাচ্চার বাবা। ”

আমরিনের হাত ধরে সহজ সরল স্বীকারোক্তি ভ্রমের। আমরিনের চোখে মুখে নজরকাড়া হাসি, যা সাংবাদিকদেরা মিলে ক্যাপচার করে নিচ্ছে। মূলত কলেজের সবার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রম স্বীকার করে নিল ভয়ংকর বাচ্চা সত্যটা। এদিকে বকুল এসেছিলো ভ্রমের কাছে। সত্যতা যাচাই করতে। আর এসেই ভ্রমের স্বীকারোক্তি শ্রবণ করে নেয়। পা গুলো সেখানেই থেমে যায় তার। একপ্রকার সে সৌভাগ্যক্রমে জিজ্ঞাসা করার আগেই শুনে নিল চরম সত্যিটা। সারাটা শরীর তার কাঁটা দিয়ে উঠলো। একজন স্ত্রী হিসেবে কীভাবে মেনে নেবে সে এই চরম সত্যিটা?

পেটটা উগলে এলো। সকালে কিছু খেয়ে বের হয়নি সে। যার ফলস্বরুপ মাথাটা চক্কর দিচ্ছিলো। ক্লাস শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। আর তারপর তো…

না চাইতেও তার চোখ দুটো ভীষণ জ্বালা করলো। গাল দুটো ক্রমশ গরম হতে লাগলো। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অভিপ্রায়ে পা চালাতে শুরু করলো। “ঘরে বিবাহিত স্ত্রী রেখে শেষে কিনা পরকীয়া?” নিউজ চ্যানেলের আজকের সর্বশেষ শিরোনামে ঝুলন্ত থাকবে বোধহয় এই শিরোনামটি।

হাঁটতে গিয়ে বেকায়দায় পা ফেলতেই সে পড়ে যায় ফ্লোরে। ইষৎ ব্যাথ্যা অনুভব করলেও উঠতে গিয়ে জ্ঞান হারালো। ভ্রমের দিকে নজর দেওয়া লোকজন তাদের দৃষ্টিগোচর করলো বকুল কে। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কেউ এক পা এগিয়ে তার কাছে এলো না।

চলবে ইন’শা’আল্লাহ।

#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_আঠারো
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা

প্রেগ্ন্যাসি কিট টা হাতে নিয়ে পলকহীন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে বকুল। কিট টায় দুটো দাগ দেখাচ্ছে। মানে সে প্রেগন্যান্ট? কিভাবে! অলৌকিক কিছু কি? না না! তা কি করে হবে? কতগুলো প্রশ্ন জমেছে মনে, কিন্তু একটার ও সঠিক উত্তর নেই। সে ভাবছে, হয়তো কিট টায় কোনো প্রবলেম রয়েছে। এই ভেবে নিজেকে যথেষ্ট শক্ত করে কিট টা ডাক্তার শায়মীর নিকট বাড়িয়ে দেয়।

” ম্যাম। আপনি আমায় আরেকটা কিট দিন। এইটায় প্রবলেম আছে। আমি প্রেগন্যান্ট সেটা হতেই পারেনা। আমি কোনো ফিজিক্যাল রিলেশনে যাইনি এ অব্ধি। মিরাক্কেল তো হবার কথাই না! ”

ডাক্তার শায়মী নিজের পেশেন্টের কথায় কি বলবেন ভেবে পাচ্ছে না। এই পেশেন্ট টা এসেছিলো ঘন্টা দুয়েক আগে। লক্ষণ দেখে তিনি একপ্রকার জোর করিয়ে প্রেগ্ন্যাসির পরীক্ষাটা করালেন। ফলাফল পজিটিভ এলো অর্থাৎ ডাক্তার শায়মীর সন্দেহ’ই সঠিক। পেশেন্ট টা অন্তঃসত্ত্বা। যখন থেকে মেয়েটাকে জানানো হয় তখন থেকেই বিপত্তি বাঁধে। সে কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না যে সে অন্তঃসত্ত্বা।

” কি হলো আরেকটা কিট দিন? ”

বকুলের কথায় ডাক্তার শায়মী হাঁটু গেঁড়ে বসে গেলেন তার সামনে। কোমল কণ্ঠে শোধালেন,

” ব্যাট্যা তুমি অলরেডি ৭ টা কিট ইউজ করে ফেলেছো। সবগুলোই পজেটিভ। সত্য কে মানতে না পারলেও সত্য তোমায় তার দ্বারপ্রান্ত ঘুরে দেখাবে। ”

” কিন্তু ম্যাম! ”

” তুমি এদিকে এসো। পুরোটা আমায় খুলে বলো। আও উইল ট্রাই মাই বেস্ট টু সলভ দিস প্রবলেম। ”

ডাক্তারের বলা কথায় আশ্বস্ত হয় বকুল। সোফা থেকে উঠে গিয়ে চেয়ারে বসে।

” কেন মতো নে হচ্ছে তুমি প্রেগন্যান্ট হতে পারো না সেটা বলো। ”

বকুল খানিকটা জড়তা নিয়েই প্রতিত্তুরে বলে,

” আমার হাসবেন্ড আছে ঠিকি তবে ওনার সাথে ভালো মতে কথা বলার সম্পর্ক টুকু হয়েও হয়নি। এস ইউজুয়াল ওনিও কাছে আসেন নি। একচুয়ালি বিয়েটা ছিল ফোর্সড ম্যারেজ। সুতারাং সেখানে আমি কি ভাবে প্রেগন্যান্ট হবো? হাউ ইজ দিস পসিবল? ”

” মেডিকেল লাইফে অনেক মিরাক্কেল ঘটে ধরে নাও তুমিও সেটার অন্তর্ভুক্ত! ”

~~
এদিকে মেডিকেলে নার্সের ছোট্ট একটা ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই। যেখানে বকুলের এবরোশন করার কথা চলছে অর্থাৎ শেষের দুটো লাইন ভিডিও তে আওয়াজ তুলছে। মাত্র ৮ সেকেন্ডের ক্লিপ যা সাড়া ফেলে দেয় পুরো ফেসবুকে। নার্স টা ভাইরালের চক্করে ওটা শেয়ার করেছিল কিন্তু তা যে এই রূপ নেবে তা অকল্পনীয়।
রিপোর্টার রা সকালের ঘটনার পর ভ্রম কে ছেড়ে বকুল কে নিয়েছে।

” একি ঘটনা স্বামীর পর নজরে এলো স্ত্রীর পরকিয়া। স্বামী বেস্টফ্রেন্ড নামক বান্ধবীর সঙ্গে করলেন পরকীয়া কিন্তু স্ত্রী কার সাথে করলেন তা এ অব্ধি জানা গেল না। স্বামী পরকীয়া এবং বাচ্চাকে স্বীকার করেনি স্ত্রী নিজের পরকীয়া। একপ্রকার বলা যায়, বাচ্চাটার ব্যাপারে কোনো প্রকার স্বীকারোক্তি ছাড়াই স্ত্রী করাবেন এবরোশন। মানে ভাবা যায়? আর সেই স্বামী স্ত্রী আর কেউ না স্বয়ং ভ্রম এবং বকুল। যারা কীনা একসময়ের আদর্শ ছিল। আজ তারাও নোংরা কাজে মত্ত হয়েছে। ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছে তারা নিজস্ব চাহিদায়! আশ্চর্যজনক কথা, একে অপরের চাহিদা মেটাতে কি এমন কমতি ছিল তাদের মধ্যে যে আজ এই দিনটা আসলো? আর আজকের নিউজে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা আর কিই বা হতে পারে!

রকিং চেয়ারে ঝুলে ঝুলে নিউজটা শ্রবণ করছে আমরিনের মা-বাবা। তাদের মনুষ্যত্ব বোধ থেকে তাদের জন্য খারাপ লাগলেও পরক্ষণে মেয়ে খুশি এইভেবে নিজেরাও অন্যের খারাপ মুহূর্ত উপভোগ করতে লাগলেন।

~~
মাত্র এক সপ্তাহের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন ভ্রমের পরিবার। আর এসে যে এইসব খবর শুনবেন তা কল্পনার বহির্ভূত ছিল। ছেলের টা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের টানা পোড়নে পড়লেও বকুলের খবর টা তারা মানতে নারাজ। কারন বাড়ির প্রতিটা সদস্য বকুলকে চেনে, জানে। বকুল কেমন ধরণের মেয়ে সে ব্যাপারে তাদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে।

বিচক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী খালেকুজ্জামান দ্বিধায় রয়েছেন। ওনার মস্তিষ্ক একটাই প্রশ্ন করছে, একই সময়ে দুটো প্রেগ্ন্যাসি, তাও স্বামী স্ত্রী’র পরকীয়া? কাকতালীয় হতে পারে কিভাবে। বকুল তো প্রয়োজনের বাহিরে বাইরে গিয়ে সময় ওয়েস্ট করেনি আর বাড়িতে আচার-আচরণে’ও কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে কি বকুল কে কেউ ফাঁসাতে চাচ্ছে? কিন্তু এতো বড় শত্রু কেন ওর হবে? ও তো মা-বাবা, ঘরহীন মানুষ। তেমন কেউ না যে হারহামেশা বড় শত্রু তৈরি হবে।

হঠাৎই ওনার দু’মাস আগের ঘটনা মনে পড়লো। যেখানে বকুল ভ্রম দুজনেই অজ্ঞাত ছিল যে তারা এতো সময় কোথায় ছিল। অনেক গবেষণা করেও তিনি এর রহস্য বের করতে পারেননি। আর আজও একই কাহিনী। সেদিন কাকতালীয় ভেবে উড়িয়ে দিলেও আজ তিনি বুঝতে পারছেন ব্যাপার টা উড়িয়ে দেওয়া ওনার জন্য কতটা ভয়ানক কাজ হয়েছে।

” খালাম্মা, খালুজান! আমার গলায় যদি কেউ ছুরিও চালায়া এই কথা বিশ্বাস করতে কয় তবুও আমি করুম না। আমি বক্কুল ফুল রে চিনি। বক্কুল ফুলের মতোই মন ডা সাদা সাদা। মনে হয় যেন সাবানের ফেনা। ”

বুয়া আয়নার কথায় ফুফু বিন্তিও মাথা নাড়ালেন। বড় একটা শ্বাস নিয়ে বললেন,

” আমি নিশ্চিত কেউ না কেউ খুব বড় একটা ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু কে করবে। এরা তো বাচ্চা মানুষ! ”

” হতে পারে। কিন্তু আমার ছেলে কাজ টা করলো কি। ওকে আমি এই শিক্ষা দিইয়েছি? ”

ভ্রমের মা রিনি বেগমের কথা। উত্তরে খালেকুজ্জামান বললেন,

” যে ছেলে মায়ের বিয়ে আটকাতে নিজে বিয়ে করে ফেলে, সে ছেলে আর যাই হোক এমন অন্যায় বকুলের সাথে করবে না। তুমি দেখোনি বকুলের প্রতি ওর দূর্বলতা? কিন্তু কোনো একটা দিন থেকেই যেন ওদের দূরত্ব ক্রমশ বেড়েছে। কিন্তু আমি এখনো কারণ খুঁজে পেলাম না। তোমার ছেলে আর ছেলে বউ কে আলাদা করতে কেউ অনেক বড় একটা প্ল্যান সাজিয়েছে। ”

” হ্যাঁ ভাইয়া, আমারোও তাই মনে হয়। ”

” তোমাদের নিয়ে রাতে আমার একটা প্ল্যান আছে। আপাততো আজ রাতের রান্নার ব্যবস্থা করো আমার বন্ধু সায়ক আসবে বাড়িতে। ”

বলেই আর কথা বাড়ালেন না তিনি। উদ্দেশ্য বকুল, ভ্রমের কলেজ। পকেট থেকে ফোনটা বের করে সদর দরজার দিকে পা বাড়ালেন। কারোর ফিড টা স্ক্রল করে প্রিভিয়াস লাইভ টা শেয়ার করলেন একটি নির্দিষ্ট নাম্বারে।

~~

” তুমি কি শিউর বাচ্চাটা এবরোশন করাবে? ”

বকুল শক্তপোক্ত কণ্ঠে উত্তর দিল,

” জি। অবৈধ ভাবে আসা বাচ্চা কে কোনোমতেই গ্রহণ করবো না। যা হয়েছে তা আমার সজ্ঞানে নয়, অজ্ঞানে হয়েছে। কার না কার বাচ্চা আমি পারবো না ভার বইতে। ”

” ঠিক আছে। আমি ডেইট ফিক্সড করে দিচ্ছি। তুমি সেদিন এসো। ”

” ও এবরোশন কিচ্ছু করাবে না। ”

তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজে ওরা দুজনের তার দিকে নজর দেয়। এই সময়ে বকুল নিজের শশুড় মশাইকে মোটেও আশা করেননি। ওনাকে দেখেই বকুল মাথা টা নুইয়ে নেয়। এগিয়ে আসেন খালেকুজ্জামান। বড় একটা দম ফেলে বকুলকে উদ্দেশ্য করে শোধালেন,

” সে যদি পরকীয়ার বাচ্চাকে জন্ম দিতে আগ্রহী থাকে তবে, তুই কেন আল্লাহ প্রদত্ত বাচ্চাকে জন্ম দিতে পিছপা হবি? বল! ”

বকুল চকিতে শশুড়ের দিকে তাকায়।

” বাবা! ”

” আমার বিশ্বাস তুই খারাপ কিছু করিস নি। ”

” কিন্তু… ”

” বাড়ির কেউ ই তা বিশ্বাস করেনি। ”

” তারমানে? ”

” আমরা আমাদের ছোট্ট অতিথি কে সাদরে বরণ করতে চাই। ”

আনন্দে বকুলের চোখ থেকে টপ করে পানি পড়লো। এনাদের সামনে নিচু হয়ে যাবেন বলেই তো সে এবরোশন করতে চেয়েছে। আর আজ? এই ভালোবাসা টুকু যেন একটু বেশিই! খালেকুজ্জামান তার মাথায় হাত রাখলেন,

” আল্লাহ তোর সহায় হোক। চল বাসায় যাবি। ”

শশুড়ের কথায় সায় জানায় সে। ডাক্তার শায়মীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হতে ‘আজ তবে আসি’ বলে পা বাড়ায় কেবিনের বাহিরে। তখনই ছুটে আসতে দেখা যায় রিমিকে। দেখে যেন মনে হচ্ছে কারোর তাড়া খেয়ে এসেছে। দ্রুত এগিয়ে গেল বকুল। ধারে গিয়ে শুধোলো,

” কি হয়েছে? এই ভাবে দৌড়ে এসেছিস কেন? ”

” ভাই! আমরা যাকে আপন ভেবেছি দিনশেষে ওরাই আমাদের ঠকিয়েছে। ”

” কি বলতে চাইছিস? ”

” দিগন্ত আমাদের সাথে….”

রিমি কথার সমাপ্তি টানতে পারলো না। তাকে ঠেলে রিপোর্টার রা এক এক করে মাওক্রোফোন রুলে ধরলো বকুলের সামনে। বকুল অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ভেতরের খবর লিক হলো নাকি? তখনই একজন রিপোর্টারের একটি প্রশ্নে মাথা উচিয়ে তাকায় বকুল। পবিত্র থাকার চেষ্টা চালিয়েও, অপবিত্র নাম নিয়ে দু’সেকেন্ড ও যে থাকা যায়না আজ সে হারে হারে টের পেল।

চলবে ইন’শা’আল্লাহ।