#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_উনিশ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
একটা কফিশপে অপেক্ষা করছে ভ্রমের বাবা, খালেকুজ্জামান। কোনো এক ভদ্রলোকের অপেক্ষায় আছেন তিনি। হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে চেয়ে সময়টা পরখ করে নিলেন। অলরেডি ১৫ মিনিট লেট। বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ সূচক শব্দ বেরিয়ে আসে। সামনেই ওয়েটার কে অর্ডার নিতে দেখেন তিনি। তাকে ডেকে কফি অর্ডার করলেন। তারপর মাথা টা দুহাতের মাঝে রেখে নিচু করে তাকিয়ে রইলেন। বন্ধু যে এইভাবে চিট করবে তা সে একটুর জন্যেও ভাবেনি। এদিকে সন্ধ্যাে গুড়িয়ে রাত্রি নামলো ধরণীর বুকে।
” স্যার আপনার অর্ডার। ”
ওয়েটারের গলা শুনতেই মাথা উচিয়ে কফিটা নিয়ে নিলেন। এক চুমুক দিতে না দিতেই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়েটারটা সোজা ওনার বরাবর বসে গেলেন। খালেকুজ্জামান পাত্তা দিলেন না। তখনই এক গম্ভীর কণ্ঠস্বর ওনার কানে বেজে উঠে,
” কিরে পটকা। দু মিনিট দেরি করেছি বলে একাই খেয়ে নিচ্ছিস? ”
খালেকুজ্জামান চকিতে তাকান। এহেন ডাকে কেবল ওনার বাল্যবান্ধু শায়ক’ই ডাকে। তাকানোর সাথে সাথে শায়ক কে দৃষ্টিগোচর হয়। অস্ফুটে বলে উঠে,
” আরে তুই! ”
” হ্যাঁ আমিই। দাম তো দিস নি। ”
” কিসের দাম রে। পরে সব শোধ করে দেবো। তবে আমি কিন্তু তোর আগেই এইখানে এসে পড়েছিলাম। তারপর দশ মিনিট তোর ধৈর্য শক্তির পরীক্ষা নিলাম এবং পাশ করেছিস তাই ফাইনাললি ওয়েটারের থেকে এক প্রকার জোবরদস্তি করে তোর কফিটা নিজের সার্ভ করার নিজস্ব অনুমোদন পাইনি। ”
” হ্যাঁ হয়েছে। কফ অর্ডার দে। ”
” দিয়েছি। চলেই আসবে। এবার বল কেমন আছিস? ”
অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের কুশল বিনিময় শেষ হয়। খালেকুজ্জামান আর শায়ক একে অপরের জানে জিগার দোস্তো যেনো! শায়ক ;গোয়েন্দার স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন দায়িত্বশীল অভিজ্ঞবান ।
” একবার পুরোটা বল। শুরু থেকে শেষ হই!
” বলছি তবে শোনো….!!
~~
হসপিটাল থেকে বাসা অব্ধি রিমি বকুলের সঙ্গে রয়েছিল। কিছুক্ষণ হলেও মেয়েটা তার সাথে কথা বলার সুযোগ টা পায়নি। কিন্তু ও বাসায় যেতেই এমন একটা টেক্সট ওকে করলো, যা দেখার পর থেকে আমরিনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে মন মানলো না।
” বক্কুল ফুল! ওয় আমরিন না সামরিন আপনার ঘরে থাকবো কইতাসে আর ভাইজান ও হ তে হ কইতাসে। ”
আয়নার কথা শুনে রেগে যায় বকুল। ঘর তার অতিপ্রিয় জায়গা, অনেক সময় নিয়ে সে এই ঘরটাকে সাজিয়েছে, অন্যের জন্য বুঝি? স্বামী নাহয় সে দেখে রাখতে জানেনা, অনিয়ম করেছে সেজন্যই তো স্বামী খসেছে। তাই তো এতে তার আপত্তি নেই। এদিকে বকুলকে চুপ থাকতে দেখে আয়না ফের আওয়াজ তুলে,
” আপা কিছু কইবেন না? আমার কিন্ত ভিত্তর ভিত্তর মেলা জ্বল*তাছে। কিছু করো বক্কুল ফুল। একদিকে এতো বড় প্রতারণার জাল, অপরদিকে গর্দভ বর। দুটোই তাকে জ্বালিয়ে মারবে। হচ্ছে তার! বান্দ*র তেন্দ*র কিনা আমার ঘরে শোবে? ”
বকুল আর দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্তে অটল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে যেই ঘর থেকে বের হতে যাবে ওমনি ধাক্কা লাগে পুরুষালি বক্ষে। এক ধাক্কায় বকুলের নাকটা যেনো বোচা হয়ে গেল।
বকুল আর ভ্রম একে অপরের মুখোমুখি। এই প্রথম তাদের কথা, দেখা বলা (পরকীয়া নিউজের পর)। দু’জনের চেহারা তেই কাঠিন্যতার প্রখর ছাঁপ। মৌনতায় শোনা গেল বকুলের জোরে জোরে নিঃশ্বাসের শব্দ। বকুল প্রশ্ন করলো,
” সতিন ঘরে ঢোকাবেন? ”
তিনি উত্তর দিলেন না। বকুল ফের জিজ্ঞাসা করলো,
” যাকে আপনি বিয়েই করেন নি তাকে বউ স্বীকৃতি দিতে আপনার লজ্জা করেনা? এই আপনি না পুরুষ? আচরণ তো ঠেকছে কাপুরু*ষের। ”
এমন কটু কথাতেও তাদের বকুল গলা উঁচিয়ে আওয়াজ তুললো না। অবশেষে মিনিট দুয়েক পর সে নিজ থেকেই মৌনতা ভেদ করে আওয়াজ তুললো,
” বাচ্চা টা কি…? ”
ভ্রম নিজের কথার সমাপ্তি করতে পারলো না। বকুল রাগের রোশাতলে সেটা খপ করে ধরে ফেললো।
” হ্যাঁ, আমার বাচ্চা। ”
বকুলের কথায় ভ্রম চকিতে তাকায় কিন্তু কোনো কথা বলে না। বকুল ফের আওয়াজ উঠায়,
” বাচ্চার বাবা কে জানিনা, তবে তার অবস্থান যেহেতু আমার শরীরে তাই সে আমার বাচ্চা। আর ভুলেও ভাববেন না আমি আপনার মতো পরকীয়া করেছি। ”
“আমি…”
” যান। আপনার অবৈধ স্ত্রী আমরিনের কাছে। হসপিটালের দরজা পেরিয়ে তাকে তো ঘর অব্ধি আনলেন। তো কি সিদ্ধান্ত নিলেন? বেডরুমেও তাকে থাকতে দেবেন? ”
ভ্রম মাথা ঘুরিয়ে নেয়। বকুলের দিকে তাকানোর সাহস তার হচ্ছেনা। ভেতর ভেতর যে দাবানলে সে পুড়ছে তা সে বলতে পারবে না। বললে মাটির নিচে সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে তার ভালোবাসার কবর হবে। যা সে পারবে না। সে নাহয় হুমকির মুখে পড়ে আমরিনের বাচ্চা টা স্বীকার করেছে কিন্তু বকুলের কি এমন হয়েছে যে সে অন্তঃসত্ত্বার ব্যাপার টা প্রথমে মানতে চাইলো না, এবরোশন করাতে চাইলো তো তারপর আবার মেনেও নিলো। কিন্তু কেন? ভেতর ভেতর তাকে বড্ড পোড়াচ্ছে। একে তো তার অক্ষমতা তাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিলো তার উপর বকুলের…। হাস্যকর! ভালোবাসা তার আর অস্তিত্ব অন্য কারোর। ”
” কি হলো, কি ভাবছেন? ”
স্ত্রীর কথায় মাথা নাড়িয়ে ভাবনা কে বিদায় জানালো। বড় একটা দম নিয়ে তার চোখে চোখ রেখে গলাটা টানটান করে বললো,
” হ্যাঁ, আজ থেকে ও আমার বেডরুমেই থাকবে। ”
বকুল হাঁটুর উপর হাঁটু রেখে ঠায় বসে পড়লো। রাগে সারা শরীর গরম হয়ে গিয়েছে তার। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলছে। নিজেকে যথাসম্ভব দমিয়ে রাখার প্রয়াসে চোখ বুজেঁ নিল। আর বললো,
” এই আমি বসলুম। দেখি আমার ঘরে কে এসে আধিপত্য জাগায়। ঘুঘু দেখেছে সে কিন্তু পাতা ফাঁদ দেখেনি। ”
” হেই বকুল ডার্লিং! আ’ম বেক। তুমিও প্রেগন্যান্ট আমিও প্রেগন্যান্ট চলো একটা হেন্ডশেক হয়ে যাক! ”
তিক্ত কণ্ঠস্বর শুনেই চোখ দুটো এক ঝটকায় মেলে দাঁড়িয়ে যায়। এতে পড়তে গিয়েও খাটের কোণায় ধরে দাঁড়িয়ে যায়। হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হেন্ডশেক করবে বলে হাতটা বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেটা বকুলের আর সইলো না। ধপ করে এক দলা থুথু ওর হাতে ফেলে দিল।
” স্বামী নিয়েছো কিছু বলিনি কিন্তু রুম নেবে? কলিজা কেটে রেখে দেব। এইটা আমার আর ওর বেডরুম। নিজের যদি বেডরুমের এতোই অভাব পড়ে তবে যা না, নতুন কোনো রুম কে বেডরুম বানিয়ে নে। আর খবরদার যদি রুমের কোনো জিনিসে হাত দিয়েছিস তো একেবারে…যা ফাট! ”
মুহূর্তের মধ্যেই যেন বকুল রণচণ্ডী রুপ ধারণ করলো। এগিয়ে গেল ভ্রম। এদিকে আমরিন ইয়াক থু বলতে বলতে বাহিরে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
” এইসব কি বললে? ”
ভ্রমের কথায় আয়না এগিয়ে এসে বকুলের কপালে শব্দ করে চুমু খায় আর তাকে উদ্দেশ্য করে শোধায়,
” বক্কুল ফুল সলিড কথা কইছে। আপার লগে দুইনাম্বারি করবেন না আপনে। আপা যেডা কয় ওইডা শুনেন আর বান্দ*র তেন্দ*র দূর করেন। নয়তো আমনের পুরা পরিবার আম্নেরে বাড়ি থাইক্যা বাইড় করার সিদ্ধান্ত নিবো। হু! ”
আজব ব্যাপার স্যাপার। শেষ পর্যন্ত আয়না’ও তাকে কথা শোনাচ্ছে? এই তাহলে তার বর্তমান পরিস্থিতি?
~~
তালুকদার বাড়িতে আসার পর বাহিরে বেরোনোর কোনো ওয়ে পাচ্ছেনা আমরিন। এদিকে ডাক্তার ওনাকে একের পর এক কল করেই যাচ্ছে। কথা বলার মতো স্পেস এসে থেকে পায়নি। বাড়ির কাজের মেয়েটা বাড়াবাড়ি করছে। একটু পর পর রুমে এটা ওটা বলে বলে আসছে। ওদিকে কল রিসিভ না করায় টেক্সট এলো ডাক্তারের নিকট থেকে। মেসেজ টা এমন—
” ম্যাম সেরোগেটিং এ একটা প্রবলেম হয়ে গিয়েছিল। প্রবলেম টা ছোট তবে পরিণতি ভয়াবহ। ”
মেসেজ টা দেখেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আমরিনের থেকে। ডাক্তার লাহেরির নম্বর থেকে এসএমএস এসেছিলো। তাই আর কোনো স্পেস খুঁজলো না। ডিরেক্ট কল ব্যাক করলো ডাক্তার লাহরির নাম্বারে। কয়েকবার রিং হতেই সেটা রিসিভ হলো। আমরিনের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর,
” জি বলুন। ”
” ম্যাসেজ টা দেখেছেন? ”
” হ্যাঁ, দেখেছি। কি প্রবলেম সেটা ক্লিয়ার কাট বলুন। ”
আমরিনের কথায় ডাক্তার লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে যা বললো তাতে আকাশ ভেঙে পড়লো তার উপর। নিজের অজান্তে এই কি করে ফেললো সে! এখন চাইলেও তো সে এবরোশন করাতে পারবে না। করালে যে এদের সংসার ধ্বংস করা হবে না। তাই বলে কি অন্যের সন্তান নিজে বইবে?।
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।
#রেড_হার্ট❤️
#পর্ব_বিশ
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
ডাক্তারের সহিত আমরিনের কথা কিছুটা এইরকম ছিলো—
” ম্যাম, প্রবলেম বলতে সারোগেটিং এ আপনার নয় বরং তৃতীয় ব্যক্তির… ”
” আপনি বলতে চাইছেন ওইটা আমার ছিলনা? ”
” না ম্যাম! ”
” ইউ…! ”
” সরি ম্যাম। একচুয়ালি এটায় আমার কোনো হাত ছিলনা। আমাদের নার্স যিনি ছিলেন ওনি নিউ ট্রেইনার। তাই…। ”
” তো আপনি আজ এইটা বলছেন কেন? ”
” ও আসলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সেজন্য আমাকে বলেনি। কিন্তু, আজ না পেরে বলে দিয়েছে। ”
আমরিন কেবল শিট বলে কলটা ফট করে কেটে দিয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বিরবির করে নিজেকেই শোধালো,
” বকুলের পেটে থাকা বাচ্চা টা তবে ওর আর ভ্রমের! আমার আর ভ্রমের নয়। ”
কাল বিলম্ব না করে দ্রুত কল দেয় বাবার নাম্বারে। মিনিট কয়েক পর কলটা রিসিভ হয়ে গেলো। আমরিন নিজের কণ্ঠে যথেষ্ট উৎকণ্ঠা নিয়ে বাবাকে পুরোটা বলতে লাগলো। সব শুনে আমরিনের বাবা উত্তর দিলেন,
” ওয়াট আ জোক মামুনি ? ”
” বাবা। সিরিয়াস ম্যাটার বলছি। ”
” আচ্ছা, তবে কি করবে ভেবেছো? ”
” আর কিহ! বকুলের বাচ্চাটাকে মেরে ফেলতে হবে। ”
” তাহলে প্ল্যান তো ফ্লপ হয়ে যাবে। ”
” গেলে যাক। তাতে কিছু যায় আসেনা আমার। এই আমরিনের জন্য একটা নয় হাজার টা ওয়ে খোলা রয়েছে বাবা। ভুলে যাচ্ছো তুমি? ”
মেয়ের কথায় তার হাইপার হওয়াটা প্রকাশ পেলো। মেয়েকে শান্ত করতেই তিনি পজিটিভ থট টা ব্যবহার করলেন।
” আই নো মাই ডিয়ার। এখন বলো কি বলতে চাচ্ছো তুমি ? ”
” ওই বকুল কে প্রাপ্তিতা দেওয়া যাবে না! ”
মেয়ের কথাটা ওনি ঠাহর করতে পারলেন না। বললেন,
” প্রাপ্রিতা? ”
বাবার প্রশ্নে মেয়েটা বেশ তেঁতে উঠে বলে,
” তা নয়তো কি ? ভ্রম তো আর কোনোদিন বাবা হতে পারবে না। চান্স থাকলেও থাকবে ০.০১ পার্সেন্ট। আর বর্তমানে ওর স্ত্রী বকুলের গর্ভে ওদের ই সন্তান। তাহলে এইটা কি বকুলের প্রাপ্তিতা না বাবা? ”
মেয়ের কথায় বাবা কেবল ছোট্ট করে উত্তর দিলেন,
” হুম। ”
” বাবা! ”
” হ্যাঁ মা। ”
” ভিলেইনেস কাকে বলে জানো? ”
” না! ”
” ভ্রম যাকে ভালোবাসে ; যাকে দইয়ে ও ওর ভালোবাসা টা স্টার্ট করেছে, তার কাছে দিয়ে আসাটা আমার ভিলেইনেস না। বরং তাকে ভালোবেসে তার পুরো জীবনটাই ধ্বংস করে দেওয়াটাই ভ্রমের গল্পের বেস্ট ভিলেইনেস। ”
” খলনায়িকা হতে চাচ্ছো? ”
” নায়িকা নাই বা হতে পারলাম। খলনায়িকার রোল যখন স্টার্ট করেছি, তখন বিচ্ছিরি ভাবে তা এন্ড করবো। ”
” আমরিন! ”
” হ্যাঁ বাবা। আমি ভ্রমের গল্পে ভিলেইনেস! ”
~~~
তার পরের দিন সকাল বেলা। বকুল, বকুলেরর শশুর খালেকুজ্জামান এবং তার বন্ধু শায়ক এসেছেন সকাল সকাল হসপিটালে। সেখানের সবচেয়ে চমকিত ব্যাপার হচ্ছে উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে তারা আন্দাজ করতে পারছে বাচ্চার ডিএনএ ভ্রমের সাথে ম্যাচ করে যেতে পারে। (এখানে রিয়েল কিছুর সাথে কম্পিয়ার করবেন না। কেবল রহস্য উন্মোচন কিংবা গল্পের স্বার্থে এই টাইপ টা ইউজ করা হয়েছে।)
” ডাক্তার এইটা কিভাবে পসিবল? ”
” সেটা আমি তো বলতে পারছিনা। যেহেতু বাচ্চাটা আকৃতি তে খুবই ছোট, সেহেতু তার শণাক্তকরণে নিশ্চয়তা দিতে পারছিনা। আদারওয়াইস আপনাদের মেয়ে এই ব্যাপারে আপনাদের হেল্প করতে পারে। ”
ডাক্তারের কথা শুনেই খালেকুজ্জামান এবং শায়ক বকুলের দিকে তাকায়। মেয়েটা থ হয়ে বসে রয়েছে। হঠাৎই সে পেটে হাত রাখলো। মনে করলো রাতের স্বপ্নের কথা। যেখানে ভ্রম আর সে একে অপরের সাথে কথা বলছে। তাও ডিভোর্স নিয়ে!
” গৌন্তব্য যদি বিচ্ছেদ ই হবে তবে বিধি কেন একত্র করলেন? ”
” ধরে নাও দুঃখ নামক বিষাদ যন্ত্রণা উপভোগ করাতে। ”
বকুলের সর্বাঙ্গ কাটা দিয়ে উঠলো। তার ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপছে। নিজের অজান্তেই তার হাত চলে যায় পেটে। ভ্রমের পানে একপল তাকিয়ে পেটের দিকে ইশারা করে বললো।
” ওর কি হবে? ”
ভ্রম ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।
” ও আমার বাচ্চা বুঝি? ”
ব্যাস! দমে গেল বকুল। কিছু বলার ভাষা সে খুঁজে পেলো না। নির্বিকার চিত্তে দৃষ্টি ফ্লোরে নিক্ষেপ করলো। সেকেন্ড কয়েক অতিবাহিত হওয়ার পর নেতিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর নিয়ে বললো ,
” সব তো ঠিক ছিল! আমি আপনি দুজনেই ঠিক ছিলাম। আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কুড়িও জন্মেছিল। কেবল প্রকাশ হওয়া বাকি ছিল। কিন্তু কি হলো? আমি-আপনি দুজনেই…! আচ্ছা সেসব বাদ দিন। ডিভোর্স পেপার সন্ধ্যায় ঘরে পাঠিয়ে দিয়েন, আমি সাইন করে দেবো। ”
স্বপ্নের কথা মনে করতেই বকুলের সর্বাঙ্গ ঝাড়া দিয়ে উঠলো। যেটা শায়ক খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করলো।
” আর ইয়্যু ওকে? ”
” জ,জি! ”
কপাল খানিক উচিয়ে নড়েচড়ে বড় একটা শ্বাস নিয়ে উত্তর টা দেয় বকুল। দম বন্ধ লাগছে তার। এদিকে রিমি কল করেছিলো হসপিটালে আসবে বলে। এসেছে কি না তাও জানায় নি।
” তাহলে আজ আমরা আসি ডাক্তার? ”
” জি, আসুন। ”
খালেকুজ্জামানের উত্তরে ডাক্তার এইটাই বললেন। তারা অগ্রসর হলো বাহিরে বের হতে। তখনই কল আসে বকুলের ফোনে। রিমি নামক নাম্বার টা জ্বলজ্বল করছে। ও দেরি না করেই ফোনটা তুললো।
” হ্যাঁ , কতদূর এসেছিস? ”
” এই হসপিটালের সাথে ফুচকা ওয়ালার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ”
” তো এইদিকে আয়? ”
” ন’তলায় আমি যেতে পারবো না। ”
” লিফট আছে তো! ”
বকুলের নাছোরবান্দা কথায় তীব্র সত্যিটা ফাঁস করেই দিল রিমি। জোরেসোড়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে,
” ফুচকা খাচ্ছি ভাঈ! ”
” আরে থাম থাম! কানের পোকা মরে যাবে যেভাবে চিল্লাচ্ছিস। তুই ওইখানেই থাক, আমিই আসছি। ”
~~
শশুড় আর শশুড়ের বন্ধুকে পাঠিয়েছে শপিং মলে। আজ রাত বারোটায় রিনা বেগমের জন্মদিন। ছোট খাটো ভাবে পালন করবেন। তাই সহধর্মিণীর জন্য নিজ পছন্দে উপহার কিনতে বেরোলেন খালেকুজ্জামান আর বন্ধুর বউয়ের জন্যেও কিছু কিনতে পা মিলিয়েছেন খালেকুজ্জামানের সাথে। কেবল কেইক টা নেওয়া হবে বকুলের পছন্দে।
এদিকে বকুল ফুচকার দোকান ছেড়ে ক্যাফেতে এসেছে রিমির সাথে। আর এইগুলোই এক্সপ্লেইন করছিলো প্রাণপ্রিয় বান্ধবী রিমির সাথে। কথার একপর্যায়ে রিমি বলে,
” ওহ! যেটা বলতেই এসেছি। সেটা আগে শোন। প্রথমদিনের ছেলেটা মনে আছে? ”
বকুল ভ্রু কুচকায়।
” এতো ডিটেইলে যাচ্ছিস কেন, সেটা বল। দিগন্তের সাথে প্রেম করতে চাইছিস? ”
” আররেহ! ভাঈ! দিগন্ত ভালো টালো বাসার যোগ্যই না। ও আমরিনের কাজিন। মন আর বাহির দুটোও আমরিনের মতোন। ”
বকুল নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলোনা। কি রিয়েকশন দেবে তা ভুলে গেল। কেবল মনে পড়লো রিমি তো একবার বলতে চেয়েছিলো দিগন্তের ব্যাপারে তখন তো সময় আর সুযোগের অভাবে রিমি বলতেই পারেনি আর ওর জানাই হয়নি। তাই এবার পূর্ণ মনযোগ নিক্ষেপ করে রিমিকে জিজ্ঞাসা করলো,
” তুই এইগুলো জেনেছিস কিভাবে? ”
” আরে শোন। এই কয়দিন ওর আর আমার মধ্যে বন্ধুত্বের পর্যায় টা গভীরতায় গিয়েছিলো। ওর হাব-ভাব কিছুটা সন্দেহ জাগালো আমার মনে। তারপর আমি তোর ব্যাপারে কিছু নেগেটিভ মন্তব্য করি। ওকে বোঝাই যে আমি কেবল তোর সাথে রয়েছি যেন মেডিকেল টা পাশ করে যাই। তো ওই ও বিশ্বাস করে নেয়। তারপর পেটপাতলা কথার ঝোঁকে আমাকে বলেই দেয় যে ও আমরিনের কাজিন। তারপর পুরোটা বলতেই নিচ্ছিলো তখনই আমরিন ওকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর আর দিগন্তের কোনো খোঁজ পাইনি। ইভেন ওর কন্টাক্ট আইডি+ নাম্বার সবই বন্ধ পেয়েছি। আর এইটুকুনিও তোকে জানানোর প্রয়োজন বোধ হচ্ছিলো। তাই ঘটা করে ডেকে এনে জানিয়ে দিলাম। ”
সাথে সাথে বকুলের মস্তিষ্ক কিছু একটা ধরে ফেললো কিন্তু তৎক্ষণাৎ ঠাহর করতে পারলো না। মনযোগ দিল ব্যস্ত নগরীর রাস্তায়। একের পর এক শা শা করে গাড়ি ছুটেই চলেছে। এটা দেখে বকুলের বলতে ইচ্ছে হলো, ‘আহা! কি সুন্দর এই গাড়িদের জীবন। যেদিকেই নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা সেখানেই নিয়ে চলে। মানব জীবন যদি এমন হতো? তবে অনায়াসেই উপভোগ করা যেতো মানব জীবন!
এইটুকু ভাবতেই পাশের টেবিল থেকে আওয়াজ আসলো ফোনের। যেখানে নিউজে বলছে, ‘সেরোগেসি পদ্ধতিতে গর্ভধারণ করায় যেখানে শিশু মৃত্যুর হার ছিলো খানিক শতাংশের তা আজ তথ্য প্রযুক্তির সহয়তায় পরিবর্তিত হয়ে নেমে এসেছে শূণ্যের কোঠায়।
কথাটুকু শুনতেই গা টা ঝাঁকি মেরে উঠলো বকুলের। অবিশ্বাস্য চোখে তাকায় পাশের টেবিলে। যেখানে পুরুষ লোকটি তার পাশে বসে থাকা স্ত্রী কে এইটা দেখিয়ে আঙুল উঁচিয়ে শোধাচ্ছেন,
” দেখেছো? কোনো ভয় নেই আমাদের। তোমার ও কিছু হবে না আর আমাদের বেবির ও কিছু হবেনা। ”
পুরুষ লোকটির কথা শেষ হতেই মহিলাটি তার পেটে হাত রাখলেন। তা দেখে পুরুষটিও হাত বাড়িয়ে দিলেন।
বকুলের গলা শুকিয়ে এলো। সে কি তবে একটা ক্লু পেয়েই গেল?
চলবে ইন’শা’আল্লাহ।