#রেড_হার্ট❤️
#সমাপ্ত_পর্ব
#লেখিকা_রামিশা_আঞ্জুম_বুশরা
বকুল নিচে যাবার আগেই কেউ তাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। চমকে তাকালো তাকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিটির দিকে। রিমি তাকে ধরে আছে। নিজের মতো করে টেনে ছাদের ফ্লোর টায় ফেলে দিল। কোমড়ে ব্যাথা পেল বকুল। রিমি তোয়াক্কা করলো না। হাপাতে হাপাতেই বকুলের গালে সপাটে চড় বসালো। বকুল বিস্ময়ে হা! সে গালে হাত দিয়ে নিষ্ফল চেয়ে রইলো রিমির পানে। মুখবায়ব বলে দিচ্ছে, তুই আমাকে কেন মেরেছিস। রিমি বুঝে নিলো। চেঁচিয়ে বলে ওঠলো,
” তোর কি মেন্টাল কোনো প্রবলেম আছে? আমি, এই আমি ঘর দোর ছেড়ে তোর পাশে থাকার চেষ্টা চালিয়েছি সর্বদা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তোর সাথ দিয়েছি। আর সেই তুই কিনা আমাকে ছেড়ে মরতে যাচ্ছিস? দুনিয়ায় মিহাদ, ফুপু, আয়না, ভ্রম কে আপন ভাবলি। আমি কি তোর কেউ হই না? হইনা কেউ? বান্ধবী বলে দূরে সরিয়ে দিবি? ”
বকুলের চোখের পানি অটোমেটিকলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে স্থীরে চলছে। রিমির বলা প্রতিটা বাক্য বিরবির করছে। সত্যিই তো, তাকে কেন সে ভাবে নি? সে আর রিমি দুজন মিলে তো মিহাদ কে খুঁজতে পারবে। কেন তবে এই বোকামি টা করতে গেল সে!
ভাবতেই দুচোখ জুড়ে জল এলো। উঠে গিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরলো রিমি কে। মাফ চেয়ে দুজনের ক্ষণস্থায়ী অভিমানের সমাপ্তি টানলো। এর মাঝেই উপস্থিত হলো ভ্রম, ভ্রমের মা-বাবা, ফুপু, আয়না আর মিহাদ। মৃত মানুষদের জীবন্ত দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তাদের। অবাকতা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে। সব প্রশ্নের উত্তর ভ্রম স্মুথলি দিয়ে দেয়। অতঃপর কিছুক্ষণ মেলোড্রামা হলো।
__________
সময় আর স্রোত কখনো কারোর জন্য অপেক্ষা করেনা। ক্যালেন্ডারের পাতায় এবার ২০১৮ ছাঁপিয়ে এসেছে ২০২৩ সাল। পরিবর্তন হয়েছে অনেক কিছু। বিয়ের প্রতি অনীহা দেখিয়ে চিরকার কুমারী থাকবে বলা ফুপু বিন্তি বিয়ে করেছেন। ভাইয়ের বন্ধু শায়ক কে। শায়ক নিজে যেখানে প্রস্তাব রেখেছে সেখানে মিস্টার খালেকুজ্জামান মানা করতে পারেননি। সবদিক বিবেচনা করেই বিয়ে দিয়েছেন তাদের। ফুপুর প্রথমে আপত্ত্বি থাকলেও এখন বোধহয় আর নেই! দিগন্তের জেল হয়েছিল দু’বছর। তার দু’বছরের মাঝে রিমির সাথে প্রণয় হয়। তারাও পরিবারের সম্মতি তে বিয়ে করে নেয়। বকুলের পরিবারে হত্যা আর কালোবাজারীর কেইসে আমরিনের বাবা-মায়ের ফাঁ/সি হয়েছে। আর আমরিনের ১৮ বছরের কারাবাস। বলতে গেলে আল্লাহর রহমতে এখন তালুকদার পরিবারে শোকের ছায়া কিংবা বৈরীতা নেমে গিয়েছে পূব আকাশে।
***
সন্ধ্যার লাল আকাশে বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ। টিনের চালে সেটা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ধরা দিলো। তালুকদার পরিবার ঘুরতে এসেছে রাঙামাটিতে। এক আত্মীয়ের বাড়ি আছে এখানে। তারা আসবে শুনে সে বাড়ির মালিক তাদের থাকতে বলে। তারা রাজি হয়ে যায়। বিশাল আয়তন নিয়ে বানানো হয়েছে বাড়িটি। টিনের তৈরি হলেও প্রতিটা ঘরেই আছে শৌখিনতার ছোঁয়া। ভ্রম ও বকুল, ভ্রমের মা-বাবা, ভ্রমের ফুফু ও বাবার বন্ধু শায়ক, রিমি আর দিগন্ত সবাই একটা করে রুম নিয়েছে চারটি। আজ মিহাদ বাবু দাদু-দিদার সাথে থাকবে, তাই সে সেখানে। রুমে কেবল বকুল আর ভ্রম। ভ্রম বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু অফিশিয়াল কাজ করছে, আর বকুল বাহিরের বেলকনি তে দাঁড়িয়ে আছে।
আচমকা বজ্রপাতের শব্দ শুনে ভ্রমের খেয়াল হলো বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। চকিতে সহধর্মিণীর খোঁজ লাগায়। নজর আটকে যায় বেলকনিতে। সেথায় দাঁড়িয়ে আছে তার কাঙ্ক্ষিত নারীসত্ত্বা টি। পড়নে তার মেরুন রঙের শাড়ি, চুলগুলো খোলা যা কোমড় ছাড়িয়ে আছে। না চাইতেও ভ্রম বিভ্রমে পড়ে গেল। সম্মোহনী হয়ে ল্যাপটপ ছেড়ে ধীর পায়ে বকুলের কাছে এগিয়ে গেল। বেলকনিতে পা রাখতেই শীতল একটা বাতাস তার গায়ে দোলা দিয়ে গেল। ভ্রম সেটা চোখ বুঁজে আপন করে নিল। টিনের চালে বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ, প্রিয় রমণী, মৃদ্যু মন্দ দোল খাওয়ানো বাতাস সবই যেন আজ তাকে মাতাল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। সে আর দেরি করলো না। বকুলের কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিল। অতিপরিচিত স্পর্শে বকুল শিউরে উঠলো। হাতদুটো ভ্রমের হাতজোড়ায় রাখলো। মাথাটা ভ্রমের দিকে এলিয়ে দিল। কানে ভেসে আসলো প্রিয় কণ্ঠস্বর।
” রেড হার্ট! ”
সে কি আদুরে নরম কণ্ঠের ডাক! বকুল গলে গেল। তার চেয়েও কোমল হয়ে প্রতিত্তুর করলো। ভ্রম শক্ত করে নিজের সঙ্গে লেপ্টে নিল। ধরা গলায় নেশালো সুর টেনে বললো,
” ইউ নো ওয়াট! ইউ আর মাই সুইটহার্ট। মাই অনলি ওয়ান রেড হার্ট। ”
বকুল শুনেও প্রতিত্তুর করলো না। কেবল বুঝে নিলো ভ্রম তাকে ভালোবাসতে চায়। আবারো ভ্রমের আওয়াজ শোনা গেল। সে শান্ত কণ্ঠে বলছে,
” আল্লাহর কি লিখন দেখো? একদম নিঁখুত লিখন! যাতে নেই একটুখানি ফাক-ফোকড়, যেন চাইলেও কেউ যেতে পারবে না। যার জ্বলন্ত প্রমাণ আমরা দুটি। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে আজ আমরা সবাই একসাথে! শুকরিয়া আদায় করো? ”
বকুল মুচকি হেসে আলহামদুলিল্লাহ বললো। যা শুনে ভ্রম বকুলের গালে শব্দ করে চুমু খেলো। বকুল কেবল ‘পাগল হয়ে গিয়েছেন’ বলে ভ্রমের চুলগুলো এলোমেলো করে দিল। ভ্রম শব্দহীন হাসলো। নিজ থেকেই আবদার করে বসলো,
” শুনো? ”
” জি! ”
” আমি কি দ্বিতীয়বার বাবা হতে পারি? ”
বকুলের লজ্জা পাওয়ার কথা, কিন্তু সে পেলো না। ভ্রমকে অবাক করে দিয়ে এলো হেসে বললো,
” অবশ্যই পারেন! ”
সমাপ্ত।