#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩১
আফনান লারা
.
সকাল হবার পর কুসুম চুপিচুপি বালিশটা আগের জায়গায় রেখে এসেছিল নাহলে অর্ণবের বাবা আবার ওকে ঝাড়তেন এ কারণে।অর্ণব তখনও ঘুমাচ্ছিল।বালিশটা রেখে সে অর্ণবের কাছাকাছি বসে হাত দিয়ে ওর কপালের উপর থেকে ছোটচুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো।মন চায় এভাবেই ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ে থাকতে।
-‘আচ্ছা উনি সবসময় পাঞ্জাবি কেনো পরেন?যদিও তাকে পাঞ্জাবিতে অনেক ভালো লাগে।’
মা অর্ণবকে দেখতে এসে দেখলেন কুসুম হাঁটু গেড়ে বসে গভীর মনযোগে অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে
বাবাকে ফিসফিস করে ডেকে দেখালেন দৃশ্যটা।
-‘দেখলে কত সুন্দর করে দেখছে আমাদের ছেলেটাকে।কত ভালোবাসে ওকে।আমাদের ছেলেটা সেটা বুঝতে চায়না’
-“বুঝবে একদিন।সেদিন না জানি দেরি হয়ে যায়’
—
অর্ণব জেগে গেলে ওকে দেখে বকা দেবে সে ভয়ে নিঃশব্দে চলে আসলো কুসুম ওখান থেকে।অর্ণব ঘুম থেকে ওঠার পর যখন চুপচাপ নাস্তা করছিল বাবা তখন টিভিতে সময় সংবাদ দেখছিলেন।সুযোগ পেয়ে অর্ণব বলে ফেললো সে আজ ঢাকায় ফিরে যাবে।রেজাল্ট প্লাস চাকরি আছে ওখানে।ঈদের ছুটিতে এসেছিল সে।
বাবা টিভিতে চোখ রাখা অবস্থায় উত্তর দিলেন যেতে পারে।
অর্ণব তো মহাখুশি হলো।কিন্তু তার খুশিতে পানি ঢেলে দিলো বাবার বলা দ্বিতীয় লাইন।বাবা বললেন কুসুমকেও সঙ্গে করে নিয়ে যেতে।
-“ওকে নেওয়া যাবেনা।’
বাবা এবার মাথা ঘুরালেন।গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলেন কেন নেওয়া যাবেনা।
-‘আমি থাকি মেসে।সেখানে ও কি করে থাকবে?আলাদা বাসা নিতে হলে আমায় আলাদা চাকরি খুঁজতে হবে।আলাদা বাড়িতে ভাড়া অনেক বেশি।তাছাড়া ও এখনও ছোট।কোনো কিছু বোঝেনা।একা কি করে থাকবে?কাজের কারণে আমি থাকবো সারাদিন বাহিরে।ও একা একা কি করে দিন কাটাবে?’
বাবা টিভিটা বন্ধ করে দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালেন।পাঞ্জাবি টেনেটুনে ঠিক করে সোজা হয়ে বললেন,’কুসুমকে না নেওয়ার হাজারটা কারণ দেখালে।এবার ওকে নেওয়ার একটা কারণ আমি তোমায় দেখাই।ও তোমার স্ত্রী।বিয়ে হয়েছে পরশু।ওকে তুমি সাথে করে নিয়ে যাবে যেখানে যাবে সেখানেই।’
অর্ণব বাবার পেঁচে পড়ে বললো,’আচ্ছা আমি নতুন বাসায় উঠলে নিয়ে যাবো’
-‘আমার টাকার অভাব?দরকার হলে তোর বাসা ভাড়ার টাকা আমি দেবো।’
-‘আমি ওকে এখন নিচ্ছিনা মানে নিচ্ছিনা।আমার এখন অনেক ব্যস্ততা।তোমরা কি চাও ও একা থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ুক?আমি সারাদিন বাহিরে থাকি।বাসায় রাতের দশটা ছাড়া ফেরা হবেনা আমার কোনোদিন।তাহলে ও একা একটা মেয়ে কি করে থাকবে একটা বাসায়?’
বাবা আর কিছু বললেননা।চলে গেছেন।অর্ণব রুমে আসলো ব্যাগ গুছাবে বলে।দেখলো কুসুম আগে থেকে সব গুছিয়ে রেখেছে।সব পরিপাটি করে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে এখন সে।
অর্ণব ব্যাগটা নিয়ে বললো,’আসি’
কথাটা বলে সে চলে যাওয়া ধরতেই কুসুম এগিয়ে এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো সেসময়ে।ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।মুখ দিয়ে কিছু বলতেও পারছেনা।অর্ণব ওর চোখের দিকে তাকালোনা।মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রেখেছে।কুসুম হাত বাড়িয়ে অর্ণবের পাঞ্জাবির বোতামগুলো ঠিক করে লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,’আপনি বাসা কবে নিবেন?’
উত্তরে অর্ণব কিছু বললোনা।বোতাম লাগানো শেষে কুসুম শুধু শুধু বোতামে হাত রেখে দাঁড়িয়ে রইলো।অর্ণব কুসুমের হাতটাকে বুক থেকে সরিয়ে পাশ কেটে চলে গেলো।এরপর আম্মাকে জড়িয়ে ধরে মিশু ভাবীর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে চলে গেলো সে।কুসুম পিছু পিছু অনেকটা পথ ছুটে গেলো। অর্ণব বুঝতে পেরে থেমে পেছনে তাকালো।
-‘আমি সারাদিন একা থেকে রাত দশটায় আপনার মুখ দেখলেও একাকিত্ব ভুলে যাবো।আমাকে নিয়ে যাবেন?’
-‘যাও,বাড়ি ফিরে যাও! টইটই করে ঘুরাফিরা করবেনা।যাও বলছি!’
কুসুম অর্ণবের ধমক শুনে চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে চলে গেলো বাড়ির দিকে।
অর্ণবের খারাপ লাগলো।কিন্তু যাকে দুদিন সহ্য করতে ঘুম চলে গিয়েছিল তাকে দিনের পর দিন কি করে সহ্য করা যেতো?
বাসের টিকেট কাউন্টারে এসে টিকিট কেটে উইন্ডো সিট দেখে বসলো অর্ণব।
কুসুমের অশ্রুসিক্ত চোখজোড়া ভাসছে তার চোখের সামনে।এই মেয়েটা অনেক অল্পতে কষ্ট পায়।
ভাল হয়েছে রেখে এসেছি তা নাহলে আমার সাথে থেকে প্রতিদিন কষ্ট পেতো।
ফোন বন্ধ করে রেখেছে অর্ণব। সে যে ঢাকায় ফিরছে এ কথা কাউকে জানায়নি।
কুমিল্লা আসতে আসতে বিকেল হয়ে গেলো।মেসে ফিরে ফোন অন করেছে এবার।
অন করার দশ মিনিট পর বেজে উঠলো ফোন।অর্ণব ভাবলো জুথির কল।পেছনে তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিনে চেয়ে দেখলো মিশু ভাবীর কল।
সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করলো সে।
-“আসসালামু আলাইকুম’
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।কুসুম?’
-“পৌঁছে গেছেন?’
-“হ্যাঁ মাত্র’
-“খেয়েছেন কিছু?’
-“না।রাতে খাব।এখন তো বিকেল, এখন কি খাবো?’
-“চা বিসকুট ‘
-“এত এডভাইস দিতে হবেনা।বাই’
-“আচ্ছা আমি আর মিশু ভাবীর ফোন থেকে আপনাকে ফোন দেবোনা’
-‘দিও না।’
-“আপনার বাবা আমাকে একটা ফোন কিনে এনে দিয়েছে।ওটা থেকে ফোন দেবো’
-“এত আদর!!আমাকে ফোন দিয়েছিল ভার্সিটিতে উঠার পর।বাহ রে বাহ!!’
অর্ণব ফোন রেখে পাশে তাকাতেই দেখলো মৃদুল দাঁত কেলিয়ে ওকে দেখছে আর আঙ্গুল ফল খাচ্ছে।খেতে খেতে বললো,’তোর বউ তোরে কত্ত ভালোবাসে।পৌঁছানোর সাথপ সাথে ফোন দিলো।আহা ওমন বউকে রেখে এলি কেন?’
-‘ওকে আনলে আমার আর রাতে ঘুমের স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিতে হতো।যাইহোক,আমি অফিসে যাচ্ছি।এই কদিনে কি অবস্থা হয়েছে দেখে আসতে হবে।’
অর্ণব ব্যাগ রেখে পানি মুখে দিয়ে চললো তার অফিসের দিকে।অফিসে এসে বসতেই একের পর এক এসে শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেছে।মানে ওদের খবরটা কে দিলো?
-‘আমি স্যার!”
অর্ণব সামনে তাকিয়ে দেখলো জুথি হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।হাতে ফুলের তোড়া।এগিয়ে এসে অর্ণবকে দিয়ে বললো,’আপনার জন্য স্যার’
অর্ণব জুথির এমন ব্যবহার আশা করেনি।ফুলের তোড়াটা একপাশে রেখে বললো,’ভালো আছেন?’
-‘অনেক”
-‘চা খাবেন?বা কফি?’
-‘খাওয়ালে খাই’
অর্ণব একটা ছেলেকে ডাক দিলো কফি আনার জন্য সেসময়ে জুথি বললো,’আগের রেস্টুরেন্টে বসে খেতে সমস্যা? আপনার স্ত্রী রাগ করবে?’
-“না সেটা নয়।আসলে অনেক কাজ তো আমার।তাছাড়া আমি চাইনা আর কখনও আমাদের একজন আরেকজনের দেখা হোক।শুধু শুধু অতীত মনে করে কষ্ট লাগবে।’
জুথি হাসি দিয়ে চলে গেলো।বাহিরে এসে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে সে।অর্ণব কাগজপত্র ঠিক করে রেখে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।জুথি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে আবারও হাসি দিয়ে তাকালো।অর্ণব জিজ্ঞেস করলো কুমিল্লা থেকে এখানে একা এসেছে নাকি কেউ দিয়ে গেলো।
-‘আমি একাই এসেছি।সমস্যা আর কই?
বাকি জীবনটা তো একাই কাটাতে হবে’
সেসময়ে রিকশা একটা ধরিয়ে দিলো অর্ণব।জুথি সেটাতে গিয়ে বসলো।রিকশা চলে যাবার সময় অর্ণব থামাতে বলে এগিয়ে এসে জুথির বাম হাতটা টেনেনধরলো।হাতটাকে ব্লেড দিয়ে কেটেছে জুথি।এতক্ষণ খেয়াল করেনি সে।যখন জুথি উঠতে গেলো রিকশায় তখন নজরে পড়লো ওর।জুথি হাতটা সরিয়ে নিয়ে বললো,’আসি”
-“এটা কেন করলেন?দাঁড়ান মামা’
অর্ণব জুথির সাথে রিকশায় উঠে পড়লো।জুথির হাতটা টেনে ধরে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,’আপনাকে আমি ম্যাচিউর ভাবতাম।কিন্তু না! আপনি তো কুসুমের চেয়েও কম না।বরং ওর চেয়ে বেশি মাত্রার বাচ্চামো করে বসলেন।’
জুথি মুখটা মলিন করে বললো,ওকে এতো মিস করেন?’
অর্ণব কথার উত্তর না দিয়ে একটা ফার্মেসীর দোকানের সামনে থামলো।সেখান থেকে মলম কিনে রিকশায় এসে বসে দেখলো জুথি কাঁদছে।
নিরবে ওর হাতে মলম লাগিয়ে অর্ণব রিকশা থেকে নেমে যাওয়া ধরতেই জুথি হাত ধরে থামিয়ে বললো,’প্লিজ।একটা কফি।আর চাইবোনা’
অর্ণব নামলোনা।বসে থাকলো।জুথি হাতটা ওড়না দিয়ে ঢেকে বললো,’এটা তো বাহিরের ক্ষত।এর চেয়ে বেশি যে কষ্ট পেলাম সেটার মলম কই পাওয়া যাবে?আচ্ছা, আপনাকে বলতে হবেনা।আমি জানি সেটা কই পাওয়া যাবে।সেটা হলেন আপনি।অন্তত ফ্রেন্ড হিসেবে থাকবেন?যেমনটা আগে ছিলাম?’
-‘সেদিন কি বলেছিলেন?আমি যেন আর কখনও আপনার চোখে চোখ না রাখি।কল না রিসিভ করি!আপনি একা সব পারবেন। তাহলে এখন এসব কি?’
-“মুখে বলতে সহজবোধ হলেও তা পালন করতে গিয়ে আজ আমার এই হাল হলো।আচ্ছা আমি কি দোষ করেছিলাম বলতে পারেন?
অর্ণব চুপ করে আছে।জুথি সামনের দিকে ফিরে বললো,”হুম।আম্মু ঠিক বলেছে।যে আমার না,তার কাছাকাছি থাকলে আমার এত কষ্ট হবে যে ঐ মানুষটা যার তার থেকে ছিনিয়ে আনার মনোভাব সৃষ্টি হতে পারে।কিন্তু আমি তো তা চাইনা।আমি এই মাসেই চলে যেতাম আম্মুর কাছে।কিন্তু আমাদের প্রথম ইনকোর্স পরীক্ষা সামনে।যেতে পারছিনা।কি করি!আপনার থেকে দূরে থাকা অভ্যাস ছিল না আমার।পারছিনা।সময় তো দিবেন?’
-‘আমাকে দূর্বল করে দিচ্ছেন আপনি।আমার দিকটা একবারও কেউ ভেবেছে?আমি কিসের মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি??
আমি কত কষ্টে আছি?পুরুষ মানুষ বলে আমি কষ্ট প্রকাশ করতে পারছিনা।ভেতরে ভেতরে বুকটা পুড়ে যায় আমার।
তা কেউ বোঝে?না আপনি বোঝেন আর না কুসুম বোঝে।
সবাই তাদের ব্যাথা অনুভব করে।কেউ আমার ব্যাথা অনুভব করে না, করতেও চায়না।যদি সামর্থ্য থাকতো সব ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতাম আমি।আর পারছিনা টানাপোড়নে আটকে থাকতে।শরীর খারাপ হয়ে গেছে আমার এমন বিস্বাদের দুটো দিন যাপন করে।আর কটা দিন এমন ভাবে কাটিয়ে যেতে হবে কে জানে।এর ভেতর আপনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।ভেবেছিলাম আপনি অন্তত আমায় বুঝবেন!’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩২
আফনান লারা
.
আগেরবার যে দিনে তারা কফি খেতে এসেছিল আজ ও সেদিন।মঙ্গলবার।
অথচ আগেরবার তাদের মনে যে অনুভূতি ছিল সেটা আজ থাকার পরেও কেমন যেন বিলীয়মান।
ওয়েটার ভুল করে পাশের একটা কাপলের রিলেশনশিপ এ্যানিভার্সারির কেকটা ওদের টেবিলে রেখে চলে গেলো। কেকটাতে লেখা “ভালোবাসা চিরন্তন ‘
জুথি কেকটার দিকে চেয়ে ছিল গভীর মনযোগে।অর্ণব ওয়েটারকে ডেকে কেক নিয়ে যেতে বলে দিয়েছে।এরপর তাদের কফি অর্ডার করে চুপ করে থাকলো আগের মতন জুথি পাশের রোডটার দিকে গ্লাসের উপর দিয়ে চেয়ে থেকে বললো,’এই মেয়েটা সে না যাকে আপনি কখনও বিয়েই করতে চাননি?’
-“হুম’
-‘আর এখন সে আপনার স্ত্রী।ভাগ্যের চাকা কখন ঘোরে আসলে কেউ বলতে পারেনা’
—
অর্ণবের বড় ভাইয়া বিদেশ থেকে ফিরবে এই মাসেই।ইচ্ছে ছিল ঈদের আগেই আসার কিন্তু দেরি হয়ে গেলো।মিশু ভাবী তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবেন এমন অবস্থা তার।
কুসুম শুধু তার খুশি দেখছে।তিনি সব কাজ সেরে বললেন পার্লারে যাবেন।সাতদিনের কিসের একটা ট্রিটমেন্ট করাবেন এতে করে নাকি গোটা এক মাস স্কিন ভাল থাকে।কুসুম বললো সেও করবে কিন্তু মিশু ভাবী বললেন ওর স্কিন এমনেই সুন্দর।নতুন করে ঘঁষামাজার প্রয়োজন নেই।কুসুমের সারাটা দিন একা লাগলো।মা আর মিশু ভাবী ঘরের কাজ করেন।ওকে রান্নার কাজ করতে দেননা।শুধু ঘরটা গুছাতে দেয়।কিন্তু সেটা তো অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায়।টিভি দেখতেও ভাল লাগেনা।শুধু অর্ণবের কথা মাথায় ঘুরপাক খায়।মিশু ভাবীকে বলেছিল ওকে ফোন চালানো শিখিয়ে দিতে কিন্তু ভাইয়া আসবে বলে তিনি মহাব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।কোনোমতে ফোনে টিপাটিপি করে ছবি তুলতে পারলেও কাউকে কল করা শিখলোনা কুসুম।শেষে বাধ্য হয়ে বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে।বাবা সানন্দে ওকে ফোনে কল করা শিখিয়ে দিলেন।শুরুতে অনেক কঠিন মনে হলেও পরে শিখে গেলো সে।তারপর অর্ণবের ফোন নাম্বারটাও সেভ করে দিলেন তিনি।ওকে দেখিয়ে বললেন এটাতে টাচ করলে কল যাবে।কুসুম মাথা নাড়িয়ে ছুটে চলে আসলো রুমে।
অর্ণব সবে কফিতে চুমুক দিয়েছিল সেসময়ে আননউন নাম্বার থেকে হঠাৎ কল আসায় কফি রেখে রিসিভ করলো।
-‘আসসালামু আলাইকুম।কে বলছেন?’
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আমি বলছি’
-“এটা আবার কার নাম্বার?’
-“আমার নিজস্ব।’
-‘এ্যাহ!!যেভাবে বলতেছো যেন সম্পত্তি!!হাহাহা!’
অর্ণবকে কুসুমের সাথে কথা বলতে যেয়ে খিলখিল করে হাসতে দেখে জুথির কষ্ট লাগলো।কফি রেখে চলে গেলো সে।অর্ণব খেয়ালই করলোনা।সে কুসুমের কথা নিয়ে হাসতে হাসতে শেষ।হাসি থামিয়ে বললো,’রাখছি।’
ফোন রেখে সামনে তাকিয়ে জুথিকে না দেখে
ওকে খুঁজতে এদিক ওদিকে চোখ বুলিয়েও কোথাও নজরে আসলোনা।
বুঝে নিলো চলে গেছে।বিল পে করে অর্ণব এবার সোজা মেসে ফিরে আসলো।
সাগর ভাইয়ার আসার কথা সেও জানে।তাকে যে যেতে হবে এটাও জানে।
একদিন থেকে চলে আসবে তাই ভেবে রেখেছে আগে থেকে।বিছানায় বসে চাকরির একটা সাজেশন বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলো সে।মৃদুল নেই।আড্ডাতে গেছে।অর্ণবেরও যাওয়ার কথা।কিন্তু গেলেই সবাই বিয়ের কথাটা তুলবে।যেতে ভয় হয় উত্তর দেবার।
দিতে দিতে তিক্ততা এসে গেছে। এক মাস এসব থেকে দূরে থাকলে সবার মন থেকে চলে যাবে অর্ণব বিয়ে করেছে।
বন্ধুদের কথা থেকে বাঁচা অনেক কঠিন তাই আপাতত মন ঠিক হবা অবধি দূরে থাকবে।
ওমা আবার ও কল!সেই নাম্বারটা থেকেই।অর্ণব বিরক্ত হয়ে রিসিভ করলো।তারপর চুপ করে রইলো।কুসুম বললো,”একটা আছেনা? চেহারা দেখা যায়।ঐ যে মিশু ভাবী বলেন ভাইয়ার সাথে।সেটা কি করে দেয়?আপনার বাবাকে বললাম, বাবাও নাকি জানেনা।’
-“আলহামদুলিল্লাহ্। জানতে হবেনা’
-“শিখিয়ে দিননা।আমি দেখবো আপনাকে’
-“তোমার সাহস তো কম না!বাই।আর একবার কল করলে ব্লক করে দেবো।ব্লক মানে কি সেটা বাবাকে জিজ্ঞেস করো গিয়ে।’
অর্ণব লাইনটা কেটে দিলো।কুসুম ফোন রেখে ভাবলো ফোনের সব বাটনে একবার করে টিপে দেখবে।কাজ হলে হবে।নাহলে হবেনা।টিপে দেখতে তো সমস্যা নেই।এমনটা করার পর দেখলো ফোনই বন্ধ হয়ে গেছে।
ওমা অনই হচ্ছেনা।গোটা দিনটা শেষ হয়ে গেলো।
কুসুমের আর কোনো কল না পেয়ে অর্ণব ভাবলো ব্লকের অর্থ জেনে হয়ত ভয় পেয়ে আর কল করেনি।কিন্তু সে তো জানেনা তার বউ ফোন নষ্ট করে বসে আছে। বাবা ফোন নিয়ে বাজারে গেছেন ঠিক করাতে।কুসুম মন খারাপ করে প্রহর গুনছে কখন অর্ণবের সাথে কথা বলতে পারবে আবার।
মা সেসময়ে অর্ণবকে ফোন দিয়েছিলেন।
-‘মা কেমন আছো?’
-“ভাল।সাগর আসবে তো তাই কাজ বেড়ে গেলো।তুই কেমন আছিস?রাতে খেয়েছিস?’
-“হুম।”
মা চুপ করে রইলো।অর্ণব বললো,’কুসুম কোথায়?’
-‘আছে।কথা বলবি?’
-‘না না।এমনি জিজ্ঞেস করলাম।আচ্ছা রাখি ‘
কুসুম ওপাশ থেকে শুনতে পেলো।মনে মনে খুশি হলো অর্ণব ওর কথা জিজ্ঞেস করেছে শুনে।খুশিতে গদগদ হয়ে পেছনে তাকাতেই মিশু ভাবীক দেখে এক ঝটকা খেলো।উনি তো রুপসী হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা।
সানগ্লাস হটিয়ে বললেন,’কেমন লাগে আমাকে?’
-‘অস্থির! ‘
কুসুমের কথা শুনে ভাবী লজ্জায় লাল হয়ে তার রুমে চলে গেলো।কুসুম তার পিছু পিছু গিয়ে বললো ছবি দেখা যায় সেরকম কল কি করে করে সেটা শিখবে।ভাবী বললেন ইমো একাউন্ট খুলতে হবে।পরে একদিন খুলে দেবেন।
কুসুম তাই মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রুমে।কাল এই বিছানায় অর্ণব ছিল আর আজ নেই।পুরো রুমটা যেন তার অপেক্ষা করছে।অথচ তিনি আমার কথা জিজ্ঞেস করলেও কথা বলতে চাইলেন না।কি হতো বললে?’
বাবা বাড়িতে এসে কুসুমকে ডেকে বললেন ফোন নিয়ে যেতে।ঠিক করে এনেছেব।কুসুম ছুটে গিয়ে ফোন নিয়ে আসলো।কি যে ভালো লাগছে তার।এবার অর্ণবকে সে ফোন দেবে।বিছানার মাঝখানে গোল হয়ে বসে ফোন টিপে অর্ণবের নাম্বার খুঁজতে লাগলো।বাবা একটা ফুলের ইমুজি দিয়ে সেভ করেছেন যাতে কুসুম জলদি খুঁজতে পারে।
—
অর্ণবদের মেসের সামনে একটা বাড়ির ছাদে বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে।সেখানে #লীলাবালি গানটা চলছিল।গানটা কানে আসতেই অর্ণবের ঐদিনটার কথা মনে পড়ে গেছে।বই বন্ধ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে জানালার পর্দা টেনে দিলো সে।গানটা খুব জোরে শোনা যাচ্ছে।মনে হলো অর্ণব তার চোখের সামনে সেদিনের সম্পূর্ন দৃশটা আবারও দেখছে।মাথা ব্যাথা করছে এবার।মেসে সে একা।মাথা ব্যথা গিয়ে এবার মাথা ঘুরছিল।
ঠিক সেসময়ে ফোন বাজলো।ঘোর থেকে বেরিয়ে ফোনের কাছে এসে দেখলো সেই পরিচিত নাম্বার।স্বাভাবিক হয়ে বসে ফোন কানে ধরলো সে।
-‘ভালো আছেন?’
-“না।বিয়ে হয়েছে বলে আর ভালো নেই।শরীর খারাপ।মনে হয় বেশিদিন বাঁচবোনা’
-“আমি থাকলে মাথায় ঠাণ্ডা তেল মালিশ করে দিতাম,বাতাস করতাম,চা বানিয়ে খাওয়াতাম’
-“তাও তোমায় আমি এখানে আনবোনা’
-“দেখলেন?আমি না থাকলেও আপনার শরীর খারাপ হয়’
অর্ণব চুপ করে রইলো।কুসুম আবার বললো,’কি খেয়েছেন রাতে?’
-‘পাউরুটি কলা।’
-“ওগুলো কি রাতের খাবার নাকি!ভাত খাবেননা?’
-“ওসব বাদ দাও।তুমি ব্লকের মানে জেনেই বুঝি কল করলেনা বিকাল থেকে?’
-“নাহ।আমি আসলে কি যেন ভুল করেছিলাম।ফোন নষ্ট হয়ে গেছিলো পরে আপনার বাবা বাজারে নিয়ে ঠিক করে আনলেন’
-“তোমাকে না বললাম বাঁদরামি করবানা বেশি?ঠিক হয়েছে।ফোন আবার নষ্ট হলে কথা বলা হাওয়া হয়ে যাবে এক্কেরে।’
-‘আপনি আমায় মনে করেছিলেন?আপনি চাচ্ছিলেন আমি আবার ফোন দেই?’
-“একদম না।ব্লক করে দিব।আর ফোন দিবানা।আমাকে আমার কাজে মন দিতে দাও।এভাবে জ্বালালে আমি কাজে মন দিতে পারবোনা’
-‘আমি সকালে,দুপুরে,বিকেলে আর রাতে ফোন দিব।এর বেশি দিবোনা সত্যি।’
-“আর বাকি আছে সময়ের?😒উফ!
আমি এই মেয়েটাকে শাস্তি দিতে পারছিনা কেন?জীবনে কত মেয়েকে ব্লক দিলাম, এরে ব্লক দিতে পারছিনা কেন!’
-‘আচ্ছা আমি ঘুমোই।আপনি ও ঘুমান।এবার নিশ্চয় আপনার ভাল ঘুম হবে?আমি নেই।আছে ভূত!’
-‘কেউ নেই।আমি একা।ভূত বলতে কিছু হয়না।মৃদুল এসে পড়বে এখন।তুমি আমায় ভয় না দেখিয়ে নিজেকে বাঁচাও।আমার রুমটা যে ঠাণ্ডা তার উপর বাগিচা সামনে।ভূত না জানি গ্রিল ভেদ করে এসে তোমার গলা চেপে ধরে।’
কুসুম এক চিৎকার করে উঠলো সঙ্গে সঙ্গে।কল কেটে গেছে।অর্ণব ও ভয় পেয়ে গেছে।কল কাটা গেলো দেখে চিন্তায় পড়ে সে নিজ থেকে কল দিলো কুসুমকে।কুসুম কলটা ধরে বললো,’আমাকে কেন ভয় দেখাচ্ছেন?আপনি তো ছেলে।আপনাকে ভয় দেখালে তো আর আপনি ভয় পাবেননা।কিন্তু আমাকে ভয় দেখালে আমি তো ভয় পাবো।এখন আমার ভয় করছে।কেন ভয় দেখালেন?’
-“বারান্দার পর্দা টেনে ঘুমাও।আইছে আমাকে ভয় দেখাতে।একদম ঠিক হইছে।খুশি হইছি আমি।ভূতদের সাথে বসে বসে আড্ডা দেও এবার।আক্কল হোক তোমার’
কথা শেষ করে অর্ণব দেখলো রাত বারোটা বাজে।আশ্চর্য হয়ে ঘড়ির দিকে দু মিনিট তাকিয়ে রইলো সে।যে মেয়েটাকে দু চোখে দেখতে পারেনা তার সাথে কিনা নব প্রেমিকের মতন রাত জেগে এত সময় ধরে কথা বললো!অবাক করার মতন বিষয় হলো কথার ছলে অর্ণব নিজ থেকেই ফোন করেছে।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৩
আফনান লারা
.
কুসুম ও ঘুমিয়ে পড়েছিল।তবে শুরুর দিকে ভয় করছিল বাগিচার দিকে চেয়ে।সত্যি কি ওখানে ভূতের বসবাস?
যদি ছুটে এসে গলা চেপে ধরে?ঘেমে একাকার হয়ে তারপর যখন মনে আসলো অর্ণব আজ তার সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছিল তখন সব ভূতের ভয় চলে গেলো তার।খুশিতে আটখানা হয়ে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিলো সে।
পরেরদিন সকাল সকাল উঠে গেছিল ফোনের শব্দে।একটা আননউন নাম্বার।স্টিকার ছিলনা বলে কুসুম বুঝলোনা এটা কার নাম্বার।ধরতেই ওপাশ থেকে একটা ছেলে ভুলভাল কথা শুরু করলো।একেবারে জঘন্য ভাষা।কুসুম থতমত খেয়ে লাইন কেটে দিছে।দুনিয়ায় এমন আজাইরা মানুষ ও আছে?এমন সকাল সকাল ফোন করে এগুলো কি বললো?আমি আরও ভাবলাম উনি ফোন করেছেন।এটা কে!কি বলছিল এসব!আমাকে চেনে কেমনে!
—
অর্ণব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।সারারাত ভাল ঘুম হয়েছে।এখনও হচ্ছে।আজ আর অফিসে যাবেনা।দুদিনের ঘুম একদিনে যাবে।ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে দু পুক্ষের কলের ভয়ে।
কুসুম পুরো বাড়ি ঝাড়ু-টারু দিয়ে এখন ফোন টিপে অর্ণবকে কল করে শুনলো নাম্বার বন্ধ।হঠাৎ ফোন বন্ধ করলো কেন সে বুঝতে পারলোনা।ফোন রেখে এবার সে রান্নাঘরে গেলো ভাবীকে সাহায্য করবে বলে কিন্তু দেখলো সব উল্টো। ভাবী রান্নাঘরেই আসেননি।ভাইয়া আসবেন বলে যে সাজ তিনি দিয়েছিলেন সেটা নাকি রান্নাঘরে আসলে তাপে নষ্ট হয়ে যাবে।
মা তাই একা কাজ করছেন।কুসুম ও কাজে হাত লাগালো।কিছু শুকনা পিঠা বানাচ্ছিলেন তিনি।কুসুম হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো শুকনো পিঠা সাগর ভাইয়ার বুঝি অনেক পছন্দের।মা বললেন না এটা অর্ণবের অনেক পছন্দের।এক বোয়াম এক বসাতে শেষ করতে পারে সে।সাগর আসবে বলে তার ও আসা হবে তাই বানাচ্ছেন।সাগর ভাইয়ার জন্য তো সব পিঠা আগে থেকেই বানিয়ে তুলে রেখেছেন।
কুসুম পেলো মহা সুযোগ।মাকে কাজ থেকে উঠিয়ে নিজে বানাতে বসলো।সে অর্ণবের জন্য পিঠা বানাবেই।কারোর কথা শুনবেনা।মা আর কি করবেন,কুসুমের সাথে ত্যাড়ামিতে না পেরে চলে গেছেন নাস্তা করতে।যেতে যেতে বলে গেলেন কুসুম যেন কাজটা রেখে নাস্তা করতে আসে।
কুসুম বসেছে তো বসেছেই।
বেলা বারোটার দিকে অর্ণবের ঘুমটা পুরোপুরি ভাঙ্গলো।অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে চোখ মুখ ফুলে গেছে তার।ফ্রেশ হয়ে এসে সবার আগে ফোন খুললো সে।তারপর ফোনটা পকেটে পুরে চললো কাছের একটা হোটেলে।ভাত খাবে।মেসে যা রান্না হয়েছে তা ভাল লাগেনা।পাতলা মুসুর ডাল,পোয়া মাছ!না না এটা খাওয়া যেতোনা।অপছন্দের মাছ!
হোটেলে এসে ভাত,ডাল আর মুরগী এক পিস অর্ডার দিয়ে বসলো সে।
তখনই কল আসলো কুসুমের।এতক্ষণ সে ভাবছিল সকাল থেকে অফ পেয়ে বাড়িতে থেকে নিশ্চিত তান্ডব মাতিয়েছিল।হেসে দিয়ে কানে ধরলো ফোন।
-‘আসসালামু আলাইকুম’
অর্ণবের সালাম শুনে কুসুম লজ্জায় লাল হয়ে সালামটা নিয়ে নিজেও সালাম দিলো।তারপর জিজ্ঞেস করলো অর্ণব খেয়েছে কিনা।
-‘খেতে বসলাম’
-“সকাল থেকে আপনাকে ফোন দেবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ বলছিল।ইচ্ছে করে বন্ধ রেখেছিলেন?’
-“হ্যাঁ’
-“কি দিয়ে খাচ্ছেন?’
-‘তোমার এত জেনে কি হবে?তোমাকে না বললাম আমাকে বেশি ফোন দেবেনা।শুধু শুধু এতবার কেন ফোন দাও?’
-“কই দিলাম?সকালে তো আপনার ফোন বন্ধই ছিল।আমি কি করবো আমার সময় কাটেনা এখানে’
-“এবার বুঝো।আমি তোমায় এখানে নিয়ে আসলে তোমার তো হলেমূলেও সময় কাটতোনা’
-“তখন বেশ কেটে যেতো।কারণ তখন তো আপনার পাশে থাকতাম।সময় দৌড়ে দৌড়ে শেষ হতো তখন’
-“রাখছি’
অর্ণব লাইনটা কেটে দিয়ে ভাবছে এবার কুমিল্লা গেলে বাবা না জানি জোর করে কুসুমকে ধরিয়ে দেয়।কোনোমতে খাবারটা সেরে সে তার অফিসের দিকে গেলো।
এই চাকরিটা ছেড়ে দেবে নতুন পেলে।একম ঝামেলার চাকরি ভাল লাগেনা।
না পারতে করছে সে।অফিসে আসার পর জানতে পারলো জুথি এসেছিল।কিসের জরুরি কারণে এসেছিল কেউ জানেনা।বলে যায়নি।অর্ণবের খোঁজ নেওয়ার জন্য এসে আবার চলেও গেছে।
অর্ণব আর ফোন করলোনা ওকে।কথা বললে কথা বাড়বে।দরকার মনে করলোনা।
—-
কুসুম দেখলো মিশু ভাবী তার বিছানায় নতুন বিছানার চাদর বিছিয়েছেন।এ কদিন ধরে ওনার মুখ থেকে হাসি যেন নড়ছেইনা।কত দিন পর সাগর ভাইয়া আসবেন খুশিতে তিনি খাওয়া দাওয়া ও বন্ধ করে দিছেন।কুসুম শুধু তার খুশি দেখে যায়।
আর ফোন হাতে ভাবে অর্ণবকে কল দেবে কিনা।অর্ণবের হুটহাট রেগে যাওয়াকে সে অনেক ভয় পায়।যার কারণে এখন ফোন দিতে প্রচণ্ড ভয় লাগে।
রাতে খাবার খাওয়ার আগে সাহস করে আরেকটিবার ফোন দিলো সে।কিন্তু রিসিভ করেনি অর্ণব।সে তখন ওয়াশরুমে ছিলো।কুসুম ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছে।সাগর ভাইয়া নাকি আজ দেশে আসবেন রাতে।
অর্ণব আসবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল সবার মনে।কুসুম ভাবলো সে বুঝি আসবেনা।ভোর চারটার দিকে সাগর আর অর্ণব দুইভাই একসাথে বাড়ি ফিরলো।সাগরকে এয়ারপোর্ট থেকে অর্ণব রিসিভ করে একসাথে কুমিল্লা ফিরেছে তারা।মিশু সেজেগুজে তৈরি ছিল।মায়ের পেছনে দঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছিল সে।
সাগর মিশুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছে।অর্ণব তার ব্যাগটা নিয়ে ওর এসে দেখলো তার বাচ্চা বউ ফোন বুকে ধরে ঘুমোচ্ছে।লাইট জ্বালানো।নেভায় ও নি।ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে সে লাইটটা অফ করে আবার চলে গেলো সাগরের কাছে।সাগর বললো সে এখন কিছু খাবেনা।আসার পথে খেয়েছিল।
বাবা বললেন কুসুমকে ডেকে আনতে।সাগর ওকে থামিয়ে দিলো।
বললো সকালে কথা বলা যাবে।ঘুম থেকে উঠানোর দরকার নেই।
এসব বলে সে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।অর্ণব আবার রুমে চলে আসলো।কুসুমের ফোনটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলো সকালে একটা আননউন নাম্বার থেকে কল আসায় কুসুম দু মিনিট কথা বলেছিল।আড় চোখে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ভাবলো এটা কে হতে পারে।সেসময়ে অর্ণবের ফোনে এলার্ম বেজে উঠেছে।রিমাইন্ডার সেভ করেছিল।এ সময়ে ভাইয়াকে আনতে যাবে।ভাইয়া তো আরও আগেই এসেছিল।শুধু শুধু এটা সেভে দিয়ে রাখছিল সে।
অফ করার আগেই কুসুম নড়েচড়ে অন্যদিকে ফিরে শুয়েছে।
অর্ণব ফোন হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেলেছিল আওয়াজে ও জেগে যাবে বলে।
ও আজ এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছিল।শাড়ী পরতে জানেনা।কদিন ধরে শিখছিল।তো সেই শেখার ফল হলো তার এখন শাড়ী গায়ে সঠিকভাবে নেই।ঘুরে শুতেই তার পেট দেখে অর্ণব চমকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।কোনোমতে বারান্দায় গিয়ে চেয়ারে বসলো।
শাড়ী দিয়ে ঢেকে দেবার সাহস তার নেই।ইচ্ছাও নেই।যেমন আছে তেমন থাকুক।নিজে নিজেরটা দেখে ঠিক করে নেবে।
আমি এখানেই বসে থাকি।
পাঁচটার দিকে কুসুমের ঘুম ভাঙ্গলো।সে এখনও জানেনা অর্ণব এসেছে।সোজা হয়ে বসে চোখ ডলতে ডলতে বিছানা ছাড়লো।শাড়ীর আঁচলটা কোনো মতে গলায় ঝুলিয়ে বারান্দায় গেলো হাই তুলতে তুলতে।
সেখানে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে বললো,’চুইট সকাল।পাখিরা ওঠো।দেখো সকাল হয়ে গেছে।চুইট পাখিরা ওঠো!!সুন্দর ভুবনের স্বাদ নাও পাখিরা!
আমার সোনার ময়না পাখি রে…..এএএএ…হে হে হে
কই গেলি……’
অর্ণব ওর ভাষণ না গান যাই হোক! উদ্ভট বক্তৃতা শুনে জেগে গিয়ে আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে ছিল।এটা কে?চুল দেখে সিওর হলো এটা কুসুম।তারপর আবার সেই এলোমেলো শাড়ীর পরন দেখে হালকা কেশে উঠে দাঁড়িয়ে কুসুমের পাশ দিয়ে রুমে চলে গেলো সে।কুসুম সবেমাত্র অর্ণবকে দেখলো যেটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।
নিশ্চিত হতে পেছনে তাকিয়ে চেয়ে রইলো শুধু।অর্ণব বিছানায় বসতেই দেখলো কুসুম রোবটের মতন দাঁড়িয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে।যা বোঝা গেলো ধমক ছাড়া এসব ঠিক হবেনা।
বড়সড় একটা ধমক মেরে অর্ণব বললো,’আমি এসেছি!ঠিক আছে?তুমি স্বপ্ন দেখতেছোনা।এখন এমন শাড়ীর বেশ পাল্টাও।তোমার কি লজ্জা করছেনা একটুও?’
অর্ণবের কথায় কুসুম বোকার মতন নিজের দিকে তাকিয়ে শাড়ীর এমন অবস্থা দেখে বিদ্যুৎতের গতিতে ওয়াশরুমের দিকে ছুট লাগিয়েছে।
অর্ণব এসেছে নাকি আসে নাই সেটা পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে।আগে শাড়ী ঠিক করতে হবে।
চলবে♥