লীলাবালি পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
352

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৭
আফনান লারা
.
অর্ণবের মায়ের ডাক শুনে কুসুম ছুটে চলে গেছে।বাড়ির দিকে যাবার পথে ফোন বেজে উঠলো অর্ণবের।মৃদুলের কল।সেদিন যে গেলো এরপর মেসেও বেশি দেখা হলোনা ওর সাথে।যাক এখন ওর কল পেয়ে মনটা ভালো হয়ে গেলো।
হাসি মুখে রিসিভ করলো সে।ওপাশ থেকে দু লাইন শোনা গেলো “অর্ণব জলদি ঢাকায় ফিরে আয়।মৃন্ময়ীর অবস্থা খারাপ।হাসপাতালে ভর্তি।’

লাইন কাটা গেলো।অর্ণব চিন্তায় পড়ে ওকে আবারও কল করেছে।প্রথম দুবার ধরেনি,পরেরবার ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে উত্তর দিচ্ছে।জানালো জুথি নাকি সকাল থেকে চোখ খুলছিলনা দেখে ওর বাবা ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।মদের ওভারডোজের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।জীবন বাঁচানো নিয়ে টানাটানি এখন।
অর্ণব কি করবে ভেবে না পেয়ে বাড়িতে এসে নিজের ব্যাগ গোছানো শুরু করে দিলো।কুসুম চায়ের কাপ আর বিসকুটের বাটি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মা এসে জিজ্ঞেস করলেন ব্যাগ গোছায় কেন।

-“মা আমাকে আর্জেন্ট ঢাকায় ফিরতে হবে।আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ হয়ে পড়েছে।ওকে দেখতে যেতে হবে’

কুসুম দূর থেকে দেখছিল।কাছে আসেনি।
মা বললেন,’কে?সেদিনের ঐ মেয়েটা?বিষ খেয়েছে বুঝি?’

অর্ণব মাথা তুলে তাকালো মায়ের দিকে।কিছুই বললোনা।ব্যাগটা গুছিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সাগর ভাইয়াকে ডেকে বললো সে ফিরে যাচ্ছে।

ভাইয়া এসে বললেন,”কিরে এত জলদি যাস কেন?তোর না কাল সকালে যাবার কথা ছিল?’

-“নাহ।জরুরি একটা কাজ পড়ে গেছে।আমাকে যেতে হবে’

কথাটা বলে কুসুমের দিকে একবার তাকালো সে।সেও এক দৃষ্টিতে দেখছিল ওকে।অর্ণব চলে গেলো।ওর জন্য বানানো চিনি ঠিকঠাকের চা টা হাতেই রয়ে গেলো কুসুমের।
হুট করে মন খারাপ হয়ে যাবে তা সে ভাবেনি।হয়ত কাল সকালে গেলে এত বেশি মন খারাপ হতোনা।যে সময়ে যাবার কথা সেসময়ে না গিয়ে অন্য সময়ে চলে গেছে বলে মনটা খারাপ লাগলো একটু বেশিই।কি মনে করে কাপটা নিয়ে দৌড় লাগিয়েছে কুসুম।অর্ণবপর পাঞ্জাবি আটকে গেছিল একটা ঝাড়ের শুকনো গাছের ঢালের সঙ্গে।কুসুম ছুটে ততদূর এসে ওকে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি ফোটালো।ভেবেছিল হয়ত চলে গেছে।পাঞ্জাবিটা ছাড়িয়ে নেবার পর কুসুমকে দেখে অর্ণব পা চালালো না।থেমে থাকলো

-‘চা খেয়ে যান।আমি বানিয়েছিলাম’

-‘এখন সময় নেই।যাচ্ছি’

-“আজ চুমুক দিই নাই।’

অর্ণব ভ্রু কুঁচকে ওর হাত থেকে কাপটা নিয়ে অল্প চা খেয়ে কাপটা আবার ওর হাতে দিয়ে বললো,’বাহিরে বেশি ঘুরঘুর করবেনা। এখন আমি থাকবোনা বাঁচাতে’

অর্ণব চলে যাচ্ছে।
কুসুম গলার জোর বাড়িয়ে বললো,’মিনননয়ি আপুর কি কোনো অসুখ হয়েছে?কেমন আছে এখন?’

অর্ণব পুনরায় থেমে গেছে।পেছনে না তাকিয়েই বললো,’তা জেনে তোমার কাজ নেই’

-“আপনার কাজ আছে?’

অর্ণব চলে গেছে ততক্ষণে।কুসুম চায়ের কাপের বাকি চা টুকু আনন্দের সঙ্গে খেয়ে নিলো।সে জানতো অর্ণব পুরো চা খাবেনা।বাকিটা নিজে খাবে বলেই এতদূর অবধি ছুটে আসা।
“””যে মানুষটার গামছার গন্ধ ভালো লাগে,যে মানুষটার শোয়া বিছানায় শুতে ভালো লাগে, তার অর্ধেক খাওয়া চায়ের বাকি অংশ তো দারুণ লাগার কথা।
এত খারাপ লাগার মাঝে ঐ টুকু চা বিশাল ভালো লাগা মনে ধরিয়ে দিছে।আফসোস তিনি বুঝলেননা!’
—-
ঢাকায় পৌঁছাতে অর্ণবের রাত নয়টা বেজে গেলো।ব্যাগ হাতে সোজা হাসপাতালে এসেছে।মৃদুল বাহিরে করিডোরের একটা সিটে বসেছিল সাথে ছিলেন জুথির বাবা।উনাকে সালাম করার পর উনি কিছু বললেননা।মুখটাকে অন্যদিকে এমন ভাবে ফিরিয়ে নিলেন যেন কোনো কথাই বলতে চাননা।এড়িয়ে গেলেন।
এসবের জন্য তিনি অর্ণবকে দায়ী মনে করছেন।অর্ণব উনার গম্ভীর ভাব দেখে মৃদুলকে প্রশ্ন করলো জুথি কোথায়।সে হাত বাড়িয়ে দেখিয়ে দিলো।
রুমের দরজা খুলে অর্ণব ভেতরে গেছে।জুথি জেগেই ছিল যেন সে জানতো অর্ণব আসবে।ওকে দেখে হেসে দিয়েছে।অর্ণব একটা টুল কাছে টেনে বসে বললো,’মদ কবে থেকে খান?’

-“জেনে কি হবে?এখন তো খারাপ মনে করছেন।কবে থেকে খারাপ সেটা জেনে আর কি লাভ?’

-‘আমি জানতে চাই এই বদঅভ্যাস আমার কারণে হয়েছে নাকি আপনার পুরোনো অভ্যাস এটা’

জুথি অন্যদিকে ফিরে বললো,’আমি মরে গেলে আপনার নাম নিতাম না।টেনসন ফ্রি থাকেন’

-“এসব কেমন কথা?আপনি জানেন আমি আপনার এই ঘটনার কথা শুনে ছুটে চলে এসেছি?সেটার কি দাম নেই?
আমি আর কি করে বোঝালে বুঝবেন?কেমন পাগলামি এগুলো?আপনি যথেষ্ট ম্যাচিউর।তাহলে কেন বাচ্চাদের মতন বিহেভ করছেন?’

-‘ঠিক।আমি ম্যাচিউর।আর তাই মদ খেতে পেরেছি।এটা আমার একান্তই ব্যাক্তিগত বিষয়’

-“তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু যে ব্যাক্তিগত বিষয়ে নিজের জান যায় যায় অবস্থা,হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় সেটা আর ব্যাক্তিগত থাকেনা।আমাকে যদি সম্মান করে থাকেন তবে আর কখনও ঐ মদ মুখে তুলবেননা।আপনি জানেন আপনার কিছু হলে সবাই আমায় দোষারোপ করবে??এরপর যদি কিছু করে বসেন তবে ভাববো আমাকে সবার সামনে ছোট করতে এসব করে যাচ্ছেন’

কথাগুলো বলে অর্ণব রাগ করে চলে যাওয়া ধরতেই জুথি ওর হাতটা ধরে ফেললো।

-‘প্লিজ!বসবেন একটু?ছয় মিনিট? ‘

অর্ণব বসলো আবার।জুথি উঠে হেলান দিয়ে বসে তারপর অর্ণবের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’আমি এই মাসে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছি।আর কখনও জ্বালাতন করতে আসবোনা।আপনাকেও কেউ দোষ দেবেনা।একটা জিনিস দেওয়ার জন্য আটকালাম।’

কথাটা বলে জুথি পাশের ছোট টেবিল থেকে তার পার্সটা নিয়ে সেটার ভেতর থেকে একটা রিং বের করে বললো,’এটা আমি অনেক আগে কিনে রেখে ছিলাম ব্যাগটাতে।কোনো নির্দিষ্ট মানুষের জন্য না।ভেবে রেখেছিলাম যে আমার প্রথম ভালোবাসা হবে তাকে দেবো।কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস!!প্রথম ভালোবাসা তো হলো তবে সেদিনই ঐ মানুষটা আরেকজনের স্বামী হয়ে গেলো।তারপরেও রিংটার দাবিদার একমাত্র আপনি।
যদি রেখে দেন তবে আমি অনেক খুশি হবো।
কখনও কুসুম জিজ্ঞেস করলে বলে দেবেন আপনি কিনেছেন।আমি চাইনা এই রিং ওর মনে সন্দেহের সৃষ্টি করুক।’

অর্ণব রিংটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’তার ছোট মাথায় এখনও সন্দেহ ঢোকেনি।তাকে তার নানি যে কয়েকটা আচার আচরণ শিখিয়েছে শুধু সেসবই এখনও প্রয়োগ করে আসছে।’

জুথির চোখে পানি এসে গেলো।অর্ণব ওর সামনে বসে কুসুমের অভ্যাস বর্ণনা করছে বলে বুকটা আবারও জ্বলে যাচ্ছে।রিংয়ের বক্সটা অর্ণবের হাতে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে ফেলেছে সে।অর্ণব বুঝতে পেরে কুসুমের কথা বন্ধ করে দিলো।
জুথি চুপ করে আছে বলে অর্ণব বললো,’কয় তারিখে চলে যাবেন?’

-‘তারিখ জেনে কি হবে?পৌঁছে দিতে যাবেন?’

-‘জানিনা।জানতে ইচ্ছে হলো।আচ্ছা কবে ফিরবেন?’

সে মুখটাকে নিচু করে লুকিয়ে ফেলে ধীর গলায় জবাব দিলো,’যেদিন অর্ণব নামের মানুষটাকে মনে পড়লে বুকে জ্বালা করবেনা সেদিন ফিরবো’

অর্ণব উঠে চলে গেছে। রুম থেকে বের হতেই জুথির বাবার মুখোমুখি হলো সে।উনি এখনও কিছু বললেন না।

অর্ণব মৃদুলের সাথে হাঁটা ধরলো করিডোর দিয়ে।
মৃদুল জানালো জুথির ফোন থেকে মৃদুলের নাম্বার পেয়ে ওর বাবা কল করে বললেন যেন সে অর্ণবকে সাথে নিয়ে আসে।অর্ণবকেও কল করেছিলেন কিন্তু ওর ফোন নাকি বন্ধ ছিল।
ওখান থেকে অর্ণব মেসে ফিরে এসেছে।ব্যাগটাকে হাত থেকে রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

কিছু সময় পরে হঠাৎ করে ব্যাগটার দিকে চোখ পড়তেই সে দেখতে পেলো একটা ঝিনুকের মালা ঝুলছে।সেটা কুসুম কখন লাগিয়েছে অর্ণব জানেনা তবে ঐ মালাটা ওর কথাই মনে করিয়ে দিলো সর্বপ্রথম।সোজা হয়ে বসে মালাটা খুলে হাতে নিলো সে।তারপর ফোনের দিকে তাকালো।হয়ত কুসুম এখন ফোন নিয়ে ঘুরঘুর করছে কল করবে নাকি করবেনা সেটা ভেবে।আচ্ছা নাহয় একদিন আমিই কল করি।
চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৮
আফনান লারা
.
অর্ণব কিছু সময় ধরে ভাবছিল কল করবে নাকি করবেনা।ফোনটাকে উল্টে পাল্টে ঘুরাচ্ছিল তাই ভেবে।কুসুম ও সেসময়ে ফোন নিয়েছিল কল করবে বলে।অর্ণবের আগেই সে আজকেও কলটা করেছে।অর্ণব সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ করে হ্যালো বললো।
কুসুম সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো রাতে খেয়েছে কিনা।

-‘হুম।তুমি খেয়েছো?এখন তো বলবে বমি পায়’

-“না খাইনি।পরে খাবো।মিননয়ি আপু ভাল আছে?’

-“হুম’

-“কি হয়েছিল তাঁর?’

-‘তোমার এত জেনে কি হবে?ঘুমাও।’

-‘আচ্ছা উনাকে নিয়ে কিছু বলছিনা।কবে আসবেন আবার?’

-‘আর আসবোনা।নেক্সট টাইম রোজার ঈদে আসা হবে।’

-“ওহ!বাসা নিবেন কবে?’

-‘তোমার এত তাড়া কেন এখানে আসার?আমার বাবা মায়ের সাথে থাকো।তাদের খেয়াল রাখো।’

রাগ করে অর্ণব কল কেটে দিছে।কুসুমকে আজ তার স্বার্থপর মনে হলো।কেন সে বারবার এখানে আসতে চায়?

‘তাকে এখানে আনলে আমার কাজে মনই বসবেনা।সবসময় জ্বালাতন করে সময় নষ্ট করবে আমার।মানুষ বাসায় ফিরে মানসিক শান্তির জন্য।আর আমি ওরে এখানে আনলে মানসিক অশান্তুিতে ভুগবো।দরকার নেই জেনে শুনে প্যারা ঘরে তোলার।’

সুন্দর ফ্ল্যাট।একটি তিনতলা দালানের দোতলায় সেটা।
কাঠের দরজাটা চাবি দিয়ে খুললে চোখের সামনে দেখি ভেতরে বেশ বড়সড় একটা রুম।সেটা হয়ত সোফার রুম।তবে ওখানে সোফা নেই,নিচে তোষক বিছানো,তাতে রঙিন বিছানার চাদর আর রঙিন কভারের কিছু কুশান।পাশেই একটা সবুজ গাছ টব সমেত।সেই রুমটার ডান পাশে গেলে ফ্লোর থেকে ছাদ ছুঁই ছুঁই গ্রিলের দরজা।সেটা খুললে ছোট আকারের মোটামুটি চলার মতন একটা বারান্দা।ঐ রুমটার পরে আরও তিনটে রুম দেখা গেলো।বাম পাশেরটা রান্নাঘর,দুই তাকের সংমিলিত ছোটখাটো বটে।বাকি দুটো রুম বেডের।
ঐ দুটোর মাঝে সুন্দর একটা বেডরুম দেখা গেলো গোলাপি রঙের চাদর বেছানো।দুচোখ প্রথমে সেদিকেই গেছে।
রুমটা পরিপাটি ছিল।বিছানার পাশে কাঠের ঝকঝক করা ওয়ারড্রব একটা। সেটার পাশ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে আছে এক তরুণী।এলোমেলো কোঁকড়া চুল তার গোটা পিঠ জুড়ে।লাল রঙের শাড়ীর আঁচল ফেলা হলেও তার কারণে ঐ চুল ঢাকা গেলোনা।
মেয়েটা হঠাৎ ঘুরে আমার দিকে ফিরলো।কি তার চোখ!এক টুকু কাজল মাখা ছিলনা অথচ আমি তার চোখে কাজলের ভান্ডার দেখতে পাচ্ছি।
তার ছোট চোখগুলো যেন বড় লাগলো।ডাগর ডাগর।হাতে দুটো বালা।স্বর্নের।
হঠাৎ দেখতে পেলাম আমার হাতে একটা রক্তজবা,এটা কখন নিলাম জানিনা,বুঝলাম ও না।
তবে আরও দেখতে পাচ্ছি ঐ তরুণীর কান স্পর্শ করে তার পাশের চুলগুলোকে কানের ওপারে নিয়ে দিয়েছি আমি।এরপর হাতের সেই ফুলটা কানে গুজে দিয়েছি।
তরুণীর চোখ আমার চোখ বরাবর।
আশ্চর্য! বোধ হয় আমি তার ঠোঁটের দিকে তাকালাম।হঠাৎ করে সে মাথা নিচু করে ফেলেছে আমার চাহনি দেখে।তার ঐ ঠোঁটে যেন জবার পাপড়ি ডলে দেওয়া।আমার হাত কাঁপে।আমি তাকে ছোঁয়ার সাহস পাচ্ছিনা।হাত অনবরত কাঁপছে কেন।কি হচ্ছে আমার!!
চোখটা এক সেকেন্ডের জন্য বন্ধ করে পুনরায় যখন খুললাম তখন আমি সেই তরুণীকে সামনে দেখলামনা।কষ্ট হলো মনে।ভীষণ কষ্ট।আমি তাকে পাগলের মতন খুঁজতে গিয়ে হাতে সেই জবাটার সবুজ রঙের পাতা আবিষ্কার করলাম।তার মানে সে সত্যি এখানে ছিল আমার সামনে??
এরপরই ঐ বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ানো সেই মেয়েটাকে আমি আবারও দেখলাম।সে হাসছে আর আমাকে তার কাছে ডাকছে।আমি তার সামনে অবধি এসেও পড়েছি।হাতটা ধরে বললাম তার একটি বিশেষ নাম।
কি নাম ছিল যেন!!

রাত দুইটা পাঁচ মিনিটে এসে স্বপ্নটা ভেঙ্গে গেলো হঠাৎ।হাঁপাতে হাঁপাতে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে অর্ণব বুকে হাত দিলো।শীতের রাতে কিনা ঘেমে পাঞ্জাবি ভিজে গেছে।গরমে পাঞ্জাবিটা খুলে ফেললো সে।স্বপ্নে কাকে দেখলাম??
হুম ওটা কুুসুম ছিল! কিন্তু কি নামে ডেকেছিলাম তাকে??মনে পড়ছেনা।তাকে ওমন করে কেন দেখছিলাম।তাকে ছুঁতে চেয়েছিলাম!!এসব কেন আসলো মনে!!’

মৃদুল ও জেগে গেছে অর্ণবকে এমন করে উঠে যেতে দেখে।আলো জ্বালিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো সে।মৃদুলকে দেখে অর্ণব হাঁপ ছাড়ালো এরপর জিজ্ঞেস করলো জুথির কি অবস্থা।মৃদুল জানালো আসার সময় দেখেছে ঘুমাচ্ছিল।

-‘কি দেখলি যে একেবারে পাঞ্জাবি খুলে ফেললি ?কেউ তোরে আগুনে ফেলছে নাকি?’

-“সেটার চেয়েও মারাত্মক! যাকে সহ্য করতে পারিনা তাকে ছুঁতে যাচ্ছিলাম একটুর জন্য’

-“হাহাহা!!এগুলো ভাবিস তাহলে?মানুষ দিনে যেটা ভাবে কিন্তু ইগনর করে সেই ভাবনাটাই রাতে স্বপ্নে সিনেমার পর্দার মতন শো করে।তোর হয়েছে ঠিক তাই!’

-“সেটা নয়।আমি কেন কুসুমকে নিয়ে ওসব ভাববো?জানিনা কেন এমনটা দেখলাম।ঘুমা এখন’

অর্ণব শুয়ে পড়লো আবার।
ওদিকে কুসুম জেগে বসে আছে।বিয়ের আগের দিনগুলো যেভাবে একা কাটতো,অর্ণবের অপেক্ষা ছিল।এখনও তাই।তফাৎটা হলো বিয়ে হয়েছে।সে বিবাহিত। অথচ বিবাহিত ছাড়া আর কিছু বলতে সে পারেনা।বিয়ে হওয়া আর না হওয়া একই রকম মনে হয়।অর্ণব তাকে কি পরিমাণ অপছন্দ করে তা তো সে জানতো।কিন্তু সে তো পছন্দ করে।চেয়েছিল আর কখনও কাউকে নিজের স্বামীর জায়গা দেবেনা।যার কারণে ঐদিন সে সবার চোখ এড়িয়ে কবুল বলেছিল।অথচ যার থেকে লুকানো সে দেখে ফেললো।
স্বাক্ষী হিসেবে দেখলেন কাজী ও।
যা সে ভেবেছিল তা কেন হলোনা?অর্ণবের স্ত্রী হয়ে ভারত চলে যেতে পারতো সে।দায়বদ্ধতা রাখতোনা কোনোদিন।কিন্তু অর্ণব যেটা করলো সেটাতে এই বিয়েটা সমাজের সামনে এসে পড়েছে।তিনি চাইলেই পারতেন অস্বীকৃতি জানাতে।কেন সেটা না করে এটাকে সবার সামনে তুলে ধরলেন?এখন নিজে কষ্ট পান সবসময়।আমিও কষ্ট পাই।কিন্তু ভারত চলে গেলে যে কষ্টে থাকতাম এখনও একই কষ্টে আছি।প্রিয় মানুষটাই আমার থেকে দূরে থাকতে চান।পালিয়ে বেড়ান।যেন আমার জীবনে হ্যাঁ আর না এর কোনো পার্থক্য নেই।আমি যেটা ভালো নামে পাই আসলে সেটা খারাপই।

“””””কাগজ কে দো পাংখ লেকে উড়া চালা যায় রে
জাহান নাহি জানা থা ইয়ে ওয়াহিন চালা হ্যায় রে
উমর কা ইয়ে তানা-বানা সমাজ না পায়ে রে
জুবান পে জো মোহ-মায়া, নামক লাগায়ে রে
কে দেখে না, ভালে না, জানে না দায়ে রে
দিশা হারা কেমন বোকা মনটা রে!
দিশা হারা কেমন বোকা মনটা রে মানে:
কত বোকা এই দিশাহীন হৃদয়।””””””

গানটা চলছিল জুথির ফোনে।ঘুম আসেনা বলে ইউটিউবে ঢুকতেই গানটা সামনে এসে গেলো।
অর্ণব ফেসবুকে ঢুকতেই দেখলো জুথির শেয়ার করা সেই গানের ভিডিও।গানটা সেও প্লে করেছে।
ওদিকে কুসুম ছাদে এসে বসার পর নিজের মুখে গানটা গাইছিল।একটা সখী শিখিয়েছিল এই গানটা।কত বার যে ভারতে সে এই গানটা গেয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল।

“”””””ফতেহ কারে কিলে সারা, ভেদ যায়ে দেওয়ারেইন
প্রেম কই সেন্ড লাগে রে লাগে
আগর মাগর বাড়ি বাড়ি জিয়া কো ইউন উছলে
জিয়া নাহি গেন্ড লাগে..

মাটি কো ইয়ে চন্দন সা মাঠে পে সাজায়ে রে
জুবান পে জো মোহ মায়া নামক লাগায়ে রে
কে দেখে না ভালে না জানে না দায়ে
দিশা হারা কেমন বোকা মনটা রে””””””

কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেললো কুসুম।
তারপর আবার হুট করেই হাসলো। হাসতে হাসতে বললো,’আমি সত্যি বোকা!আমার মন বোকা!’

কুসুমের ফোন বাজছে।মা বলতো যাকে স্বপ্নে দেখবি সে যদি তোর পরিচিত কেউ হয় তবে তার সঙ্গে যত দ্রুত উচিত কথা বলবি।তাহলেই স্বপ্নটা ভুলতে পারবি।
তা ভেবে কুসুমকে অর্ণব কল করেছে এই সময়ে।কুসুম জানেনা।সে ঠাণ্ডার মাঝে ছাদে বসে আকাশ দেখছিল। আজ বাগিচার ভয় তাকে ধরছেনা।কষ্টের সামনে ভয় হার মেনেছে।
সে জানেনা অর্ণব তাকে এই মূহুর্তে মনে করতে পারে।চোখ মুছতে মুছতে ঘরে চলে আসলো।রুমে এসে ফোনটাকে দেখতে যেয়ে মিসড্ কলের নোটিফিকেশান পেলেও বুঝতে পারলো না এর মানে।কিন্তু অর্ণবের নাম্বার উঠে আছে দেখে কল করলো সে।অর্ণব জেগে ছিল তখন।কল আসায় ধরে বললো,’ঘুমাওনি?’

-“আসেনা।আপনি ঘুমাননি?’

-“জেগে গেলাম হঠাৎ।কল করেছিলান ধরোনি যে?’

-“আমি…. আমি একটু বারান্দায় বসে ছিলাম।’

-‘আচ্ছা ঘুমাও’

অর্ণব আবার ফোন রেখে দিয়েছে।কুসুম সব ভুলে হাসলো অর্ণবের সাথে কথা বলতে পেরে।।খুশিতে শুয়ে পড়েছে সে।
অর্ণব চোখ বন্ধ করলেই সেই স্বপ্নে ঘটে যাওয়া ঘটনা আবার দেখে ফেলে।চোখ বন্ধই করতে ইচ্ছে করছেনা।মৃদুল উপুড় হয়ে শুয়ে গভীর নিদ্রায় আছে।আর এদিকে অর্ণবের চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুম নেই।না জানি এই স্বপ্নের রেশ আর কতক্ষণ থাকবে।ভালো লাগছেনা কিছু।যেন স্বপ্নের বাকি অংশ দেখার জন্য চোখ ডাকছে।কিন্তু দেখার সাহস নেই ওর।ভয় লাগে।স্বপ্নের উপর তো আর নিজের কন্ট্রল থাকেনা।যে স্বপ্ন সে দেখবে তাতে যদি এমন কিছু দেখে যেটা সে চাইবেনা।ভয়ের কারণে উঠে বসে পড়লো আবারও।
সে আজ পর্যন্ত কুসুমকে ছোঁয়ার কথা ভুল করেও ভাবেনি। -‘তবে মৃদুল যে বললো যা ভাবি তাই দেখি?
কিন্তু আমি তো কিছুই ভাবিনি!’

মৃদুল হঠাৎ মাথা তুলে বললো,’কে বলেছে তুই ভেবেছিস?’

অর্ণব মৃদুলের দিকে ফিরে তাকালো।সে উঠে চশমা খুঁজছে।ভোর রাতে উঠে পড়তে বসা ওর পুরোনো অভ্যাস।অর্ণব প্রশ্ন করলো,’ তাহলে কে ভেবেছে?’

-”তোর মন ভেবেছে’

চলবে♥

#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৩৯
আফনান লারা
.
পরেরদিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠেই অর্ণব হাজির তার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে।সেখানে বসে কাগজপত্র দেখাশুনা করছিল।কদিন ধরে ভালোমতন সময়ই দেওয়া হয়না।কাল রাতের স্বপ্নটা যেন আর ভয় না জাগায় তার জন্য নিজেকে ব্যস্ত রাখছে সে।
জুথির একবার খোঁজ নিয়েছিল মৃদুলকে দিয়ে।ওকে নাকি রিলিজ দেওয়া হয়েছে।এখন বাসায় চলে গেছে।গিয়ে দেখা উচিত মনে হলো কিন্তু জুথির চোখে চোখ রাখতে কেমন যেন লাগে।ঐ কেমন লাগাতে মিশে আছে অপরাধ বোধ,কষ্ট,অসহায়ত্ব।প্রথম বোধটা জুথির প্রতি আর বাকি দুটো বোধ নিজের।
সকাল থেকে অফিসের কাজেই ডুবে ছিল সে।বেলা বারোটা বাজার পর নিজের মনকে শক্ত করে তুললো জুথিকে দেখতে যাবে বলে।কিছু আপেল কিনে রিকশা নিলো জুথিদের বাসায় যাবার জন্য।
মিনিট বিশেকের ভেতরে এসেও গেছে।মৃদুলকে নাকি জুথির বাবা ছাড়ছেননা।জুথির প্রতি ওর এত কেয়ার,দৌড়ঝাঁপে তিনি প্রসন্ন হয়েছেন বেশ।মৃদুল তো জুথিকে অর্ণবের প্রাক্তন মনে করে,নিজের প্রাক্তন ভাবী মনে করে সব করে যাচ্ছে।অথচ তিনি ভেবে বসে আছেন সে বুঝি জুথিকে পছন্দ করে।
অর্ণব বাসায় এসে মৃদুলকে সোফাতে বসা দেখলো।ফলগুলো টেবিলে রেখে সে জিজ্ঞেস করলো জুথির বাবা কোথায়।মৃদুল জানালো তিনি বাহিরে গেছেন।জুথি তার রুমেই।গিয়ে দেখতে পারে।অর্ণব তাই সেদিকে গেলো।মৃদুলকেও আসতে বললো।একা একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে কেমন একটা বোধ হয়।জুথি সম্পর্কে তার কিছু হয়না এখন।যদি ঘটনাটা বিয়ের আগে হতো তাহলে পরিস্থিতি অন্য কথা বলতো।দরজা আস্তে আস্তে খোলার পর সে দেখলো অন্ধকারে ছেয়ে আছে সম্পূর্ণ রুম।
মৃদুল এগিয়ে এসে আলো জ্বালিয়ে বললো,’কতবার বলেছি রুম অন্ধকার করবে না’

সঙ্গে সঙ্গে জবাব আসলো’জাহান্নামে যান আর আমাকে একা থাকতে দিন ‘

ঝাড়ি শুনে মৃদুলের মুখের কথা হাওয়া।জুথি তার কথা বন্ধ করে ফেলেছে মৃদুলের সাথে হঠাৎ অর্ণবকে দেখে।অর্ণব মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,’আমার বন্ধু দিনরাত এক করে আপনার খেয়াল রাখছে তার এই প্রতিদান দিলেন?’

-‘এরকম কেয়ার আমার ভালো লাগেনা।যে কেয়ার মনে বিরক্তি সৃষ্টি করে সে কেয়ার আমার প্রয়োজন নেই।আপনার যাবার সময় উনাকেও নিয়ে যাবেন।এখানে থাকলে আমার মাথা খাবে।সারাদিন আপেল খাও,কমলা খাও। পানি খাও!’

-‘কিরে? এসব সত্যি?’

মৃদুল মাথার চুল ঠিক করে বললো,’দোষ করেছি বলেই তো জাহান্নামে যেতে বলে দিলো।আর কি বলবো আমি!’

অর্ণবের ফোন বাজছে।মৃদুলকে রেখে বাহিরে বেরিয়ে ফোন কানে ধরতেই সাগর ভাইয়ার গলা শুনলো।

-‘অর্ণব তুই কোথায়?’

-‘কেন ভাইয়া?আমি তো কাজের জন্য এক জায়গায় এসেছি।কি হলো?সব ঠিক আছে তো?”

-“আমি তোর ভাবীকে নিয়ে ঢাকা এসেছি,আমার শ্বশুরবাড়ি যাবো।তো সঙ্গে কুসুম ও এসেছে।বাবা বললেন ওকে তোর কাছে রেখে যেতে।তুই এসে নিয়ে যাবি নাকি আমি সোজা ফার্মগেট চলে যেতাম?’

-‘কি বলছো!কুসুমকে কেন এনেছো?’

-‘আমি জানতাম তুই এটা বলবি।বাবা শুধু শুধু মেয়েটাকে আমার সঙ্গে দিলেন।আচ্ছা সমস্যা নেই।আমার শ্বশুর বাড়ি তো ভালোই। যৌথ পরিবার,কত মানুষ।
ওখানে থাকলে ওর ভালই লাগবে।বেশিদিন থাকবো ও না।পাঁচ /ছয়দিন থেকে আবার আমরা কুমিল্লা চলে যাব।তাহলে ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই,কি বলিস?’

-‘নাহ!তোমরা স্টেশনে অপেক্ষা করো। আমি আসতেছি ওকে নিতে”
—-
মিশুর ছোট ভাই শামীম এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।
বয়স অনুযায়ী তার চরিত্র কতটা উন্নত তা এলাকা ছেড়ে পুরো ঐ গোটা স্থানের মানুষেরা জানে।এরই মধ্যে দুটো মেয়ে নিয়ে ভেগে গিয়েছিল সে।তার আচরণে মিশু ভাবী সহ তাদের গোটা গুষ্টি মহা চিন্তায় থাকে সবসময়।এইখবর অর্ণব ও জানে।কুুসমকে পেলে শামীম এত বড় সুযোগ হাত ছাড়া করবেনা এটা ভেবেই অর্ণব কুসুমকে ঐ বাসায় যেতে দিলোনা।
স্টেশন আসতে আধ ঘণ্টা সময় লেগে গেছে।ভাইয়াকে কল করে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পেলো তাদেরকে।কুসুম বোরকা পরে এসেছিল এখানে।যে দুচোখ তার দেখা যায় তা খুশিতে টলমল করছিল।সে খুশি,কারণ অর্ণব তাকে নিতে এসেছে।

-‘কি হতো কুুসম আমাদের সঙ্গে গেলে?’

-“না থাক ভাইয়া।তোমরা যাও’

-“তুই থাকিস মেসে।কুুসুমকে মেসে কি করে নিবি?’

-“ওসব আমি ভেবে একটা উপায় বের করবো।তোমরা যাও’
—–
ভাইয়া আর ভাবী চলে গেছেন।কুসুম কাছে এসে বললো,’আমি সকাল থেকে অনেকবার ফোন করেছিলাম আপনাকে।ধরলেন না যে?’

-“এমনি’

-“কোথায় যাব এখন?’

অর্ণব কিছু বললোনা।রিকশা থামিয়ে উঠতে বললো ওকে।দুজনে চুপচাপ বসে আছে এখন।পথ থেমে থাকলেও রিকশা চলছে।কুসুম ঢাকার বড় বড় অট্টালিকা দেখছিল অবাক চোখে।অর্ণব নিজেও জানে মেসে ওয়াইফ এলাউ করবেনা।আপাতত একটা হোটেলে উঠবে দুজন তারপর যা হবার হবে।
বিশাল এ শহরে কুসুমের আপন বলতে একমাত্র অর্ণব।এত বড় শহর দেখতে পাবার সুযোগ পেলেও কুসুম সেটা বেশি সময় কাজে লাগায়নি।তার চোখ ঐ মানুষটার দিকে।শুরু থেকে অর্ণবের দায়িত্বগুলোকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আসাটাতেই সে মন দিয়ে বুঝে এসেছে।এর বাহিরে যে অধিকার অর্ণব ওকে দেয়নি আজ পর্যন্ত সেটা বুঝতে চায়নি কুসুম।মাথাতেই আনেনি আজ।
অর্ণবের পিছু পিছু রিকশা থেকে নেমে হেঁটে চলেছে।সে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে চলে যাবে।অর্ণব একটা হোটেলের রুম নিলো।রুমটাতে আসার পর কুসুম বললো,’রান্নাঘর নেই?’

-‘এটা হোটেল।এখানে রান্নাঘর আসবে কেন?’

-“তো আপনি বাসা নিবেননা?’

-“এত সহজ না।
বাবার সাথে কথা বলতে হবে।সময় করে তোমায় কাল কুমিল্লা দিয়ে আসবো আমি’

কুসুমের মন আবার খারাপ হয়ে গেলো।ভেবেছিল আর ফিরতে হবেনা।অর্ণবের সাথে থাকা হবে সবসময়।কিন্তু সে তো তাড়াহুড়োয় আছে কখন আবার দিয়ে আসবে তাকে।এক রাশ মন খারাপের ঝুড়ি নিয়ে জানালার গ্রিল ধরে নিচে তাকিয়েছে সে।পাঁচতলায় তারা।নিচের মানুষ গুলোকে কেমন ছোট লাগে দেখতে।
অর্ণব বাবাকে কল করেছে দুবার।বাবা ধরেননি।তাই সে ফ্রেশ হতে চলে গেছে।কুসুম তার বোরকাটা খুলে বিছানায় বসে থাকলো।অর্ণব ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ব্যস্ত হয়ে তোয়ালে খুঁজছে।
শেষে একটা কাপড় পেয়ে টেনে মুখ মুছলো।মোছা শেষে মাথা তুলে দেখলো এটা কুসুমের পরনের শাড়ীটার আঁচল ছিল।অর্ণব আঁচলটা ছেড়ে দিয়ে বললো,’সরি।আমি ভাবলাম গামছা’

কুসুম আঁচল টেনে চুপ করে আছে।বাবা এবার নিজে ফোন করেছেন।অর্ণব রিসিভ করে বললো কুুসুমকে সে কাল দিয়ে যাবে।

-‘দিয়ে যাবি মানে?এত নাটক করার কি দরকার ছিল?সাগরের সাথে ওকে মিশুর বাপের বাড়ি যেতে দিতি।তুই আবার কুসুমকে থামিয়ে দিতে গেলি কেন?শামীম তো ভালো ছেলে।কত ভালো সেটা আমিও জানি,তুইও জানোস।তাহলে তোর কিসের ভয়?কুসুমরে তো দু চোখে দেখতে পারিস না’

অর্ণব চুপ করে আছে।বাবা আবার বললেন,’হয় সাগরের শ্বশুর বাড়ি ওরে দিয়ে আসবি নাহয় বাসা ভাঁড়া নিবি।টাকার প্রয়োজন হবার কথা না।তোর বিকাশ চেক কর গিয়ে।আমি এক মাসের বাসা ভাঁড়ার টাকা এডভান্স পাঠিয়ে দিয়েছি।আমার কুসুম মাকে ভাল রাখতে তোর আর কিছুর প্রয়োজন আছে?
যাই করিস না কেন! কুমিল্লা ওকে নিয়ে ফিরতে পারবিনা আগামী রোজার ঈদ ছাড়া’

অর্ণব ফোন রেখে দিলো রাগ করে।নোটিফিকেশন চেক করে দেখলো বাবা সত্যি সত্যি টাকা পাঠিয়ে দিয়েছন।
কুসুম চুপিসারে দেখছিল অর্ণবকে।
অর্ণব মাথার চুল টেনে কিছুক্ষন বসে থাকলো তারপর মৃদুলের নাম্বার ডায়াল করে কল করলো।বাসা ভাঁড়ার ব্যাপারে ওর কাছে ভালো আইডিয়া পাওয়া যাবে।

-‘আচ্ছা আমি একটা কথা বলবো?’

-“না’

-“আপনার যেহেতু সমস্যা অনেক আমি এখানে আসায় তাহলে আমি বরং মিশু ভাবীর বাসায় চলে যাই?ওদের বাসা চেনেন আপনি?’

-“না।ঐ বাসায় তোমায় যেতে হবেনা’

-“কেন?’

-‘কারণ ওখানে রাখালের মতন ছেলে আছে।এবার বলো যাবে??’

-“না না থাক।’

-‘ওয়েট। হ্যালো মৃদুল?ভাই বিপদে পড়েছি আমি।কুসুম, ভাইয়া ভাবীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছে।তো তারা চলে গেছে ফার্মগেট।এদিকে কুসুমকে নিয়ে তো আমি আর মেসে উঠতে পারবোনা’

-‘স্যার ভালো আছেন?’

-“আশ্চর্য! তোরে এতক্ষণ কি বললাম?তুই আমাকে স্যার বলছিস কেন?’

-“ওকে স্যার।আমি রচনা জমা দেবো কালকেই।ডোন্ট ওয়ারি’

-“চুপ!কি বলিস এসব?’

-“স্যার আসলে আমি মৃন্ময়ীর বাসায় তো।ঐ যে ফার্স্ট ইয়ারের মৃন্ময়ী?চিনছেন?চিনার কথা তো!’

-ওহ!বুঝলাম।তুই এখনও ঐ বাসায়?ফ্রি হয়ে কল দিস।দরকার আছে আমার।’

মৃদুল লাইন কেটে দিয়েছে।জুথি হেলান দিয়ে বসেছিল।মৃদুলের কথা শেষ হওয়ায় বললো,’কিসের জন্য কল করেছিলেন স্যার?কোন স্যার কল করেছিলেন?’

-“ঐ আমাদের রাজনীতি তত্ত্বের স্যার।তুমি চিনবেনা।আচ্ছা রেস্ট নাও।আমি যাই’

মৃদুল চলে যাওয়া ধরতেই জুথি বললো দাঁড়াতে।
এরপর নড়েচড়ে বসে বললো,’থ্যাংকস!’

-“জাহান্নামে যেতে বলে এখন থ্যাংকস?’

-“না আসলে তখন মেজাজ খারাপ ছিল আমার।সরি।তবে আর আসবেননা।আমি একা থাকতে চাই।নিজের সাথে নিজেই কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চাই’

-“উইথ বিয়ার?’

জুথি মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।মৃদুল যেতে যেতে বললো,’তবে তাই হোক।থাকুন একা।আমি কিন্তু বিছানার তলা থেকে সব বোতল নিয়ে ফেলে দিয়ে এসেছি।গুড নুন’
চলবে♥