#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৭
আফনান লারা
.
অর্ণবের মজা করাকে কুসুম সত্যি ধরে নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে এক পর্যায়ে।শেষে বাধ্য হয়ে ওর মুখটা চেপে ধরতে হলো অর্ণবকে।ওর কানে ঠোঁট লাগিয়ে ফিসফিস করে সে বললো,’আমি মজা করতেছি’
এরপর ওর মুখ থেকে হাত ছেড়ে সে চললো নিচের দিকে।কুসুম ও তার পিছু পিছু আসতেছে।
মৃদুলদের বাসায় মানুষের সমাগম আরও বেড়ে গেছে।মনে হলো ছেলের আরও কিছু আত্নীয় এসেছেন পর দিয়ে।
সম্ভবত তারা ছেলের খালার পরিবার।
এখন এমন অবস্থা হয়েছে জায়গার অভাবে সোফার কিণারায় ও বসা আছে কেউ কেউ।মম মাথা নিচু করে বসে ছিল।তারই পাশে জিসান বসা।
দুজনে আস্তে আস্তে কথা বলছিল।ঠোঁট নড়ছিল তাদের।
বাকিরা বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার আলাপে ব্যস্ত।
অর্ণব বাসায় ঢোকার আগে বাহিরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল মৃদুলের সাথে।কুসুম ঘোমটা টেনে ঢুকে গেছে ভেতরে।জিসানের মা ওকে দেখে মমর মাকে বললেন,’আপা মেয়েটা কে?’
তখনই সবার চোখ গেলো কুসুমের দিকে।মিষ্টি কালারের শাড়ী আর খোলা চুলে এক আলাদা রকমের সৌন্দর্য্য বেয়ে পড়ছিল ওর সারা শরীর জুড়ে।তার রুপে মোহিত হয়ে গেলো জিসানের ছোট ভাই জানিম।
জানিম তার মায়ের দিকে তাকালো সঙ্গে সঙ্গে।তার মা আবার বললেন,’তোমার বাসা কই মা?কি হও মমর?’
মিজুয়ানা হেসে বললেন,’ও হচ্ছে কুসুম।আমাদের দোতলার ভাঁড়াটিয়া।একদম আমার মেয়ের মতন।অর্ণব কোথায় কুসুম?? ‘
‘বাহিরে ফোনে কথা বলছেন’
জানিম জিজ্ঞেস করলো অর্ণব কে।মিজুয়ানা উত্তর দিলেন সে কুসুমের স্বামী।এটা শুনে জানিমের মনটা খারাপ হয়ে গেছে।জিসানের মা তার শাশুড়িকে ফিসফিসিয়ে বললেন,’আমরা এতদিন কেমন মেয়ে খুঁজছি!সুন্দর সুন্দর মেয়েগুলো মিস হয়ে গেলো।’
‘ঠিক কইছো মা!এ দেখি চাঁদের টুকরো!ইশ আমাদের কপাল!’
সেসময়ে অর্ণব ও ঢুকেছে বাসায়।সে কুসুমের পাশে এসে দাঁড়ালো।ওদের দুজনকে দেখে জিসানের দাদি আবারও ফিসফিস করে বললেন,’নাহহহ।মেয়েটা তার মতনই সুন্দর একজন পেয়েছে।একেবারে দুজনকে মানিয়েছে বেশ।’
জানিম গাল ফুলিয়ে রেখেছে।অর্ণব কুসুমের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,’যাবে নাকি?শেয়াল ভ্রমণে?’
কুসুন আড় চোখে চেয়ে সরে দাঁড়িয়েছে।অর্ণব ও ওর পাশে ঘেঁষে দাঁড়ালো।এমন করতে করতে কুসুম একেবারে দেয়ালের সাথে লেগে গেছে।আর জায়গা নেই যাবার।এদিকে অর্ণব একেবারে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে সবার সাথে মাথা নাড়ছে।কুসুম ওকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গিয়ে হঠাৎ করে থমকে গেছে।অর্ণবকে খুব সুন্দর লাগছিল তখন।এক দারুণ উজ্জ্বলতা তার মুখ জুড়ে ঝল ঝল করছিল।মুচকি হেসে কুসুম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল।হঠাৎ মৃন্ময়ীর কথা মনে আসায় চোখ নামিয়ে নিয়েছে।
অর্ণব ওর দিকে চেয়ে আস্তে করে বললো,’জানো!মৃন্ময়ীকে মৃদুল অনেক পছন্দ করে।আই থিংক ওদের বোঝাপড়া হয়ে গেলে বিয়েটাও হয়ে যাবে’
কথাটা শুনে কুুসম প্রথমে অবাক হলো তারপর প্রশ্ন করলো মৃন্ময়ী মৃদুলকে পছন্দ করে কিনা
অর্ণব বললো হয়ত করে।কারণ এয়ারপোর্টে সে মৃদুলকে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিল।
কুসুম তার আঁচলে গিট্টু করতে করতে বললো,’আপনি যেমন আমায় মেনে নিতে পারেননি হয়ত তিনিও মৃদুল ভাইয়াকে মেনে নিতে পারবেননা’
অর্ণবের এবার খারাপ লাগলো।তাই সে ওর থেকে একটু দূরে সোফায় জানিমের পাশে গিয়ে বসলো খালি জায়গা পেয়ে।এতক্ষণ ঐ জায়গায় জানিমের খালা বসে ছিলেন।
কুসুমের হাতে জাহান নুডুলসের বাটি ধরিয়ে চলে গেছে।নুডুলসের দিকে তাকাতেই ওর বমি ভাব মনে হলো।সে বাটিটা রেখে বাসা থেকে বেরিয়ে বাগানের দিকে চলে এসেছে ছুটে।
বমি ভাব হলেও বমি আসেনা।মাথা ধরে নিচে ঘাসের উপর বসে থাকলো সে।
অর্ণব ওকে ছুটে চলে যেতে দেখে সেও এখানে এসেছিল।এসে ওকে নিচে বসে পড়তে দেখে সে ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছে কি হয়েছে।কুসুম মাথা তুলে জবাব দিলো তার বমি ভাব হচ্ছিলো।
‘চলো বাসায় ফিরবে’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে না জানিয়েছে।সে যেতে চায়না এখন।
অর্ণব ওর পাশে ঘাসের উপর বসে বললো,’আমার খিধে পেয়েছে।রাতের জন্য যে খাবার কিনেছিলাম ওগুলো খাব, চলো।তুমি নাহয় পরে খেও।আমার পেটে কোকিল ডাকছে’
কুসুম ফিক করে হেসে ফেললো ওর কথা শুনে।ওর মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে দেখে অর্ণব ওর চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এবার।কুসুম অবাক হয়ে ওকে দেখছিল বলে সে বললো,’ভেবোনা।আমি অভিনয় জানিনা।এসব অভিনয় না।
স্কুলে যেমন খুশি তেমন সাজতে বলা হয়েছিল আর আমি সেজেছিলাম “একমাত্র আমি।”
আমার মতন চলাফেরা করেছি।বুকে কাগজ লাগিয়ে সেটাতে লিখে দিয়েছি “অর্ণব’
আমি আমার ব্যাক্তিত্বটাকে প্রচণ্ড গুরুত্ব দিই।আমাকে সবাই বুঝতে পারেনা।যারা বছরের পর বছর পাশে থাকে তারা বোঝে।যেমন ধরো মৃদুল তোমায় বলতে পারবে আমি কেমন মানুষ।অভিনয়ের কথা যদি সে শোনে তবে আচ্ছা করে তোমায় কড়া কথা শুনাবে।কারণ আমি অভিনয় জানিনা এটা সেও জানে।
আমি কেমন তা না তুমি জানলে, আর না মৃন্ময়ী জানলো।আফসোস!”
‘আপনি উনাকে ভালবাসেন তাইনা?’
অর্ণব রেগে গিয়ে কুুসুমের মাথার চুলগুলো মুঠো করে ধরে এক টান দিয়ে বললো,’আমি না ওরে বাসি আর না তোমায় বাসি।আমি কাউরে বাসিনা।কথা ক্লিয়ার?আর জানতে চাও?’
কুসুম মাথায় হাত দিয়ে অর্ণবের হাত ছাড়িয়ে নিলো চুল থেকে।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’নিশ্চয় বাসেন।তা নাহলে আপু ওমন কাঁদে কেন সবসময়?
একজন ভাল না বাসলে আরেকজন এরকম সারাক্ষণ কান্না করবেনা। আপনি বেসেছেন,এখন অস্বীকার করার কারণ কি সেটাই বুঝতেছিনা।আমি কি আপনাকে মারধর করবো এই নিয়ে?আমি তো নিজেই অনুতপ্ত আপনাদের বিচ্ছেদ ঘটিয়েছি বলে!’
‘এক মিনিট!কিসের বিচ্ছেদ? প্রেম হলে তো বিচ্ছেদ হবে।মৃন্ময়ী আমার ভাল বান্ধুবী ছিল।হয়ত তুমি আমার জীবনে না আসলে একদিন আমি ওরে বিয়ে করতাম কারণ আমার সেরকম মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলনা।জুথি যেহেতু সবসময় সামনা সামনি থাকতো সেহেতু একটা সময়ে লাইফ পার্টনার হওয়ার চান্স থাকা যেতো।ওসব কিছুই হয়নি তাহলে কেন তুমি ওগুলো বলে মেজাজ খারাপ করতেছো’
কুুসুম জবাব না দিয়ে চলে গেছে।অর্ণব মাথায় হাত রেখে ভাবছে চুপচাপ স্বভাবের মেয়েটা অতীত জেনে এখন রণচন্ডী হয়ে গেছে।সে ভাবছে তাকে আমি চিট করছি।
আদৌ সেটা করিনি আমি।আমি তো শুধু!ধ্যাত!!মেয়ে মানুষ এমন কেন!না বুঝে রাগ দেখায়।সবাই তার রাগ আমাকেই দেখাতে জানে।দুনিয়ায় রাগ দেখানোর মানুষের অভাব পড়ছে তাদের!”
—–
বাসায় ফিরে কুসুম খাবারগুলো প্লেটে নিচ্ছিলো।অর্ণব এখনও বাগানে ঘাসের উপর গালে হাত দিয়ে বসে আছে।ডাক্তার ফোন করে জানিয়েছে যে দুজন ডাক্তারের সাথে আলাপ করার কথা তারা এখনও হাসপাতালে পৌঁছায়নি বলে আলাপ হয়নি।তারা অতিব্যস্ত।
আপাতত কুসুমকে বাসায় ট্রিটমেন্টের উপর রাখতে হবে।ওকে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে।মাথায় যেন কোনো প্রকার চাপ না পড়ে।
অর্ণব একটা বিষয় খেয়াল করেছে।সে যখনই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।রাগ করে প্রচুর তখন তার ঐ লেভেলের রাগটা বেশি সময় আর থাকেনা।
পানি হয়ে যায়।ঠিক এখনও হয়েছে তাই।সে ইচ্ছে করেও কুসুমের সাথে বেশি সময়কাল রাগ করে থাকতে পারেনা।অটোমেটিক রাগ গায়েব হয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যায়, আবার সে বিষয়ে রাগ হয়।আবার পানি হয়।
এসব ভেবে উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবি ঝাড়তে ঝাড়তে বাসায় চলে আসলো সে।
টেবিলে খাবার সাজানো দেখে বসেও পড়লো খেতে কিন্তু কুসুমের কথা মাথায় আসায় খাওয়া হলোনা।তাই বসে থেকেই ডাক দিয়েছে সে ওকে।কিন্তু কুসুম শুনেও না শুনার ভান করে শুয়ে আছে।অর্ণব উঠে দরজার ফটকের কাছে এসে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’এই যে! সেদ্ধ ডিমের কুসুম!খেতে আসেন।নাহলে তুলে নিয়ে আসবো’
কুসুম উঠে বসে গোমড়া মুখে জবাব দিলো তাকে একা থাকতে দিতে
অর্ণব মনে মনে নিজেকে বলছে-কন্ট্রোল অর্ণব!! নিজের রাগ বাড়াও!কুসুমকে ভয় দেখাও।রাগ বাড়াও!!নিজের দাপট দেখাও! শক্তি দেখাও!!
“আপনি ওমন বিড়বিড় করে কি বলছেন?’
অর্ণব একটা ধমক মেরে দিয়েছে ততক্ষণে, যার কারণে কুসুমের কথা মাঝ পথেই আটকে গেছে।এরপর ওর কাছে এসে হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,’চলো বলছি!নাহলে মেরে খাওয়াবো তোমায়।আমি তোমার স্বামী হই।আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য!’
—-
সারাদিন নিজের রুমের আলো নিভিয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে জুথি শুয়ে থাকে।ওর আম্মু বুঝতে পেরেছেন দেশে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে যার কারণে ও এখানে ফিরে এসেছে।তাই বেশি জ্বালান না।ওকে একা থাকতে দেন।ফোন চার্জে ফেলে রেখে সারাদিন ঘুমে কাতর থাকে জুথি।অবশ্য এমন ঘুম আসার পেছনে কারণ আছে বৈকি।
গাদা গাদা ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ঘুমায় সে।এ কথা কেউ জানেনা।দেশ থেকে আসার সময় কিনে এনেছিল।
মৃদুল বারবার ফোন করেও ওকে না পেয়ে করিম আঙ্কেলের বাসা থেকে জুথির মায়ের নাম্বার জোগাড় করে এনেছে।এরপর কল ও করেছিল।
জুথির মা কল ধরতেই সে প্রথম ১০সেকেন্ড চুপ ছিল পরে হালকা কেশে বললো,’আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আমি মৃদুল,হয়ত চিনবেননা।আমি জুথির ফ্রেন্ড’
জুথির আম্মু সালাম নিয়ে বললেন,’তোমাকে চিনি আমি।জুথি বলেছিল’
‘সত্যি?কি বলেছিল?’
‘ছবি দেখিয়েছিল।তা হঠাৎ আমায় কল করলে?’
‘আন্টি একটু জুথিকে ফোনটা দেবেন?আমি ওকে কতবার কল করেছি!ও ধরছেনা’
‘এখন তো মনে হয় ঘুমাচ্ছে।আচ্ছা দাঁড়াও ডেকে দিচ্ছি।মনি!!মনি!!মৃদুল ফোন করেছে।কথা বল ধর’
মৃদুলের নাম শুনে জুথি মাথা তুলে তাকালো।চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে আসছে।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৮
আফনান লারা
.
মৃদুল যে এতদূর পর্যন্ত পৌঁছে যাবে সে ভাবতেই পারেনি।কপালে হাত দিয়ে মায়ের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো সে।
ওপাশ থেকে কাড়ি কাড়ি বকাঝকার ঢল আসতে শুরু হয়ে গেছে একের পর এক।জুথি মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে আছে, মৃদুল মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছিল।দীর্ঘ দশ মিনিট ধরে বকাবকি করার পর সে চুপ হলো।জুথি এবার সোজা হয়ে বসে উত্তর দিচ্ছে
‘আমি এখানে এসেছি সব কিছু থেকে দূরে থাকতে।আমাকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিত আপনার।তা না করে পাগলামো শুরু করে দিয়েছেন’
‘পাগলামো?আমাকে কি তোমার ভাল মানুষ মনে হয়?আমি আগেও পাগল ছিলাম আর এখনও পাগল আছি।না বেড়েছে আর না কমেছে।এই আর নতুন কি’
‘আমি বোঝাতে চেয়েছি….’
‘ব্যস।আবার সেই ডায়ালগ!আমাকে একা থাকতে দেন দেন মৃদুল ভাইয়া!আমি আপনাকে ভালবাসিনা।হ্যানত্যান।
আমার প্রতি তোমার কি পরিমাণ অনুভূতি কাজ করে সেটা প্রকাশ পাবে একদিন পর’
‘কি হবে একদিন পর?’
‘আমি একটা মেয়েকে ধরে বিয়ে করবো।হোক সে ৩০+, হোক সে অশিক্ষিত,হোক সে ১৬+,হোক সে বোকা।বিয়ে করবোই করবো।জানো আমি ওরে পেয়েও গেছি।তার নাম হইলো মৌটুসি।
হ্যাঁ ভাই কার্ডটা সুন্দর করে ছাপাইয়েন,এটার মত করে।কাল গায়ে হলুদ।আজকের মধ্যেই লাগবে’
‘কিহ!আপনি সিরিয়াস?’
‘তা নয়ত কি!ভিডিও কল দাও।কার্ড ছাপানো দেখাই।তুমি তো আমায় বিশ্বাস করবেনা।কল কাটো।
মেসেঞ্জারে ভিডিও কল দিয়ে তোমায় প্রমাণ দিচ্ছি।’
জুথি কল কাটার আগেই মৃদুল কেটে দিয়েছে।এরপর ওকে মেসেঞ্জারে ভিডিও কল ও দিছে।
জুথি নড়েচড়ে বসে রিসিভ করলো।মৃদুল সত্যি সত্যি ছাপাখানায়।
একটা কার্ড তুলে ওকে কার্ডের উপরে মৃদুল নাম ও দেখালো,সাথে মৌটুসী নাম।জুথি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে।
”হুহ!বাই।আমি এখন খুব ব্যস্ত। বউকে সময় দিতে হবে।বিয়ের আগে হালকা পাতলা সময় দিতে হয়।যেমন ধরো বাবু খাইছো ঐ টাইপ আর কি।টাটা’
মৃদুল লাইন কেটে দিছে।জুথি ফোন রেখে ভাবছে এটা সত্যি নাকি মিথ্যে।হঠাৎ নোটিফিকেশান আসলো ফেসবুকের।সে ফোন হাতে নিয়ে চেক করে দেখলো মৃদুল ফেসবুকে পোস্ট দিছে” গট এঙ্গেজড্।”
তার মানে সব সত্যি??
প্রথমে বিশ্বাস না হলেও যতই সব দেখে ততই বিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে।
—-
মৃদুল মেসে ফিরে শুয়ে শুয়ে ফোন টিপছে।ফেসবুকে সবার রিপ্লাই দিচ্ছে।
তমাল এক পা, এক পা করে এগোচ্ছিল ওর দিকে।ওর একদম কাছে এসে খাটের স্ট্যান্ডটা ধরে ক্ষীণ গলায় বললো,’এই মৃদুল ভাই।তোমার নাকি বিয়ে?’
মৃদুল শুরুতে ভয় পেয়ে গেছিলো।পরে বুকে থুথু দিয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,’এ কথা তুই জিজ্ঞেস করছিস নাকি জুথি তোকে দিয়ে জিজ্ঞেস করাচ্ছে?’
‘জুথি আপুর সাথে আমার যোগাযোগ হবে কি করে?উনার বিদেশী নাম্বারই তো নেই আমার কাছে।আর ফেসবুকে উনাকে মজা করে একটা কমেন্ট করেছি বলে ব্লক মেরেছিল সেই কবেই।তুমি কি কথা ঘুরাতে চাইতেছো?’
‘ওহ।তার মানে তুই নিজ থেকে জানতে চাস আমার বিয়ে কিনা।
তাহলে শোন,বিয়ে হচ্ছেনা।সব ভং’
তমাল ব্রু কুঁচকে বললো,’তাহলে ওমন ঢাক ঢোল পেটাচ্ছো কেন?তোমার স্টেটাসের জন্য ফেসবুকে ঢুকতে পারছিনা।তোমার শত শত মেয়ে ফ্যানস মরাকান্না জুড়ে দিয়েছে ফেসবুকের ওয়ালে।তা কি জানো?’
‘তাই তো ট্যাগ করা অপশান বন্ধ করতেছিলাম বসে বসে।আচ্ছা জুথিকে কি কমেন্ট করছিলি যে ব্লক দিলো?’
‘দিনে একটা করে পোস্ট দেবে তাও বিচ্ছেদের।তাই কমেন্ট করছিলাম”দুনিয়াতে মনে হয় তুমিই ছ্যাঁকা খেয়েছো আপু’
ব্যস দিলো ব্লক।ভাবো আমার কি দোষ?’
মৃদুল শোয়া থেকে উঠে ওর গায়ে ধুরুম করে কিল একটা মেরে বললো,’আমার বউ হয় সে।সুন্দর কমেন্ট করবি, তা না করে এসব কি কমেন্ট করেছিস।বেশ হয়েছে ও তোকে ব্লক মেরেছে’
‘তোমার কেমন বউ সে?? বিদেশ কেন থাকে তাহলে?’
“যা ভাগ’
—-
কুসুম ঘুমায়।খাবার খেয়েই ঘুমায়।রাত বারোটা চব্বিশ বাজে এখন।আজ কুসুমের ঘুমের দৃশ্যটা দেখার মতন।কারণ সে অর্ণবের বাম হাতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।অর্ণব এর কারণে ঠিকমত নড়তেও পারছিলনা তাও সে মুগ্ধ নয়নে ওকেই দেখে যাচ্ছে সেই এগারোটা থেকে।
নিজের জীবনসঙ্গী পাশে শুয়ে থাকলে সেটার অনুভূতি কতটা মধুর রুপ ধারণ করে তা অর্ণব বেশ করে টের পাচ্ছে।
মেয়েটাকে সহ্য করতে পারতোনা আর এতদিনে তার সঙ্গ ওকে কতটা বদলে দিলো তা সে নিজেও খেয়াল করেছে।কুসুমের নরম ঠোঁটজোড়া ওর কুনুইয়ের সাথে লাগছিল বারবার।
সুড়সুড়ি লাগলেও মনের ভেতর ভাললাগা কাজ করছিল।গভীর রাত,রাতের হালকা বাতাস এসে জানালার পর্দাটাকে হাওয়ায় দোল খাওয়ায়।জঙ্গল থেকে ছোট বড় পোকার একসাথে মিশে হয়ে যাওয়া আওয়াজ ভেসে আসে কানে।তখন ইচ্ছে করে কাঁথার নিচে মিশে যেতে।ছোটকালে তো ভয়ে মাকে জড়িয়ে ধরা হতো।আর এখন!
কুসুম নড়ছিল হঠাৎ।অর্ণব টের পেয়ে ওর দিকে চেয়ে আছে।দেখার অপেক্ষায় আছে সে ঠিক কি করে।হঠাৎ কুসুম উঠে ছুট লাগালো ওয়াশরুমের দিকে।অর্ণব ভাবেনি সে উঠে এমন দ্রুত চলে যাবে।মনে ভয় হওয়ায় সেও পিছু পিছু গেলো দেখতে।
কিছুক্ষণ পর কুুসম বমি করে বের হতেই ওকে সামনে দেখে পা বাড়ালোনা আর।
‘আমাকে ডাকলেনা কেন?’
“এই আর নতুন কি।আমি তো প্রতি রাতেই এ সময়ে বমি করি।আপনি ঘুমে থাকেন।আজ ঘুমাননি?’
‘প্রতি রাতে?আর আমি টেরই পায়না।আজ জেগে না থাকলে হয়ত জানতাম ও না।শরীর খারাপ লাগে এখন?’
“নাহ।বমি হওয়ায় শান্তি লাগছে।এবার শান্তির ঘুম এসে যাবে।’
কথাটা বলে কুসুম সোজা বিছানায় উঠে কিণারায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে।অর্ণবের মাথায় হাজারও চিন্তা বাসা বাঁধছে।
এরকম অসুস্থতা কেন হলো ওর।একটু ভাল জীবন কি সে পেতে পারেনা।এমন ব্যবহার করছে আজকাল যেন ওর অভ্যাস হয়ে গেছে সবকিছু।
বিছানায় ফিরে অর্ণব বসে থেকে ওকে দেখছে মনযোগে।ঘটনাক্রমে কুসুম বিয়ের পর থেকে যা যা করত তার সব এখন অর্ণব করে।আর অর্ণব যেমন ব্যবহার করত সে সব ব্যবহার এখন কুসুম করে।
আশ্চর্য ট্রান্সফরমেশন ঘটেছে।অর্ণব ঝিমুতে ঝিমুতে কুসুমের খুব কাছে মাথা গুজে শুয়ে পড়ে।ওর শোয়ার আবাস পেয়ে কুসুম পেছনে তাকিয়ে দেখলো অর্ণব ওর খুব কাছে এসে শুয়েছে।এদিকে দেয়ালের এপারে বাড়তি জায়গা নেই সরার।
কুসুম চওড়া হয়ে শুলো তাই।
উনার এমন ব্যবহারে সে অবশ্যই খুশি।এতদিন অভিনয় মনে হলেও এখন সত্যি লাগে।কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় তার মনে এখনও মিননয়ি আপু রয়ে গেছেন।তার স্থান হয়ত আমি কখনও পাব না।পেতে চাই ও না।আচ্ছা এই মানুষটা কি সে রকম অনুভব করে যেমন আমি করি?
হাত বাড়িয়ে ওর কপাল ছুঁলো সে।চোখ বুজে বসে থাকলে এরপর।
সবসময় মনে হয় এই সুখ বেশিদিন থাকার নয়।
সুখ হলো শুকনো পাতার মতন।গাছে সবসময় সবুজ তাজা পাতা থাকে।শুকনো দু একটা পাতা নিচে ঝরে পড়ে।
ঝাঁক ঝাঁক শুকনো পাতার সময় কেবল বসন্তে আসে।বসন্ত যাবার সময় গাছের ঢালে ঢালে নতুন পাতার কলি রেখে যায়।
ঠিক সেরকম মানুষের জীবনে সুখের সময়কাল খুবই অল্প।তবে ঐ সময়টুকু দারুণ আনন্দের হয়।বসন্তে প্রকৃতি যেমন নতুন করে সাজে তেমনই আমরা মানুষেরা সুখে আলাদা আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকি।এরপর দুঃখের সময়ে মলিন মুখের আগমন।’
‘আমার জ্বর নেই’
অর্ণবের কথা শুনে কুসুম চট করে তার হাত সরিয়ে নিলো ওর কপালের উপর থেকে।অর্ণব মাথা তুলে বললো,’আমার কপালে হাত দিয়ে কি দেখছিলে?’
“কিছুনা।ঐ মশা মনে হলো’
‘তেজপাতা ফ্লেভারের কয়েল জ্বালিয়েছি। মশা থাকার কথানা।অন্য বাহানা বলো’
কুুসুম মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েছে।অর্ণব আবার বললো,’কথায় না পারলে পারো শুধু মুখ ঘুরিয়ে নিতে।শেয়াল দেখবে?’
কুসুম কাঁথা টেনে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে ততক্ষণে।ঠিক সেসময়ে শেয়াল দুটো একসাথে ডাক দিয়ে উঠলো।কুসুমের ভয়ের লিমিট চলে গেছে শেষ পর্যায়ে।ভয় পেয়ে উঠে বসে জানালা থেকে সরতে সরতে অর্ণবের সাথে ঘেঁষে বসে পড়েছে সে।অর্ণব শুয়ে থেকে খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে।
‘আপনার ভয় করছেনা?’
“শেয়াল জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকবে?জানালা তো বন্ধ’
“ওহ হ্যাঁ তাই তো।না তাই তো না।বাতাসে পর্দা নড়ছে।জানালা তো দেখি খোলা!’
কথাটা বলে কুসুম পাশে চেয়ে অর্ণবকে দেখলোনা।জানালা খোলা শুনে সে ফুলের টব নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৬৯
আফনান লারা
.
‘আচ্ছা তার মানে আপনি আমার চেয়েও বেশি ভয় পাচ্ছেন?মেয়ে আমি নাকি আপনি?’
অর্ণব হাতের টবটা উঁচু থেকে নিচু করে গোমড়া মুখে বললো,’ছেলেরা ভয় পেতে পারেনা?’
‘অন্তত আমি জানি ছেলেরা ভীষণ সাহসি হয়।মেয়েরা ভয় পেলে বরং তারা এসে আগলে রাখে’
অর্ণব টবটা এবার হাত থেকে রেখেই দিয়েছে।আস্তে আস্তে দরজা থেকে সরে এদিকে আসতে আসতে বললো,’ওহহ।হ্যাঁ তাই তো!আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম না।দরজাটাও জানালার মতন খোলা কিনা দেখতে গিয়েছিলাম।এমন কি তোমাকে বাঁচাতে টবটাও হাতে তুলে নিয়েছিলাম জানো?’
কুসুম তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়েছে চুপচাপ।অর্ণব ও শোয়ার জন্য আসতেছিল সে সময় ফোন বাজার আওয়াজ পেয়ে ফোনের কাছে গিয়ে হাতে নিয়ে দেখলো একটা বিদেশী নাম্বার থেকে কল এসেছে।কৌতুহল নিয়ে রিসিভও করলো সে।
জুথির গলা শুনে হাত থেকে ফুলের টবের প্লাস্টিকের ফুলটাই নিচে পড়ে গেছে।অবশ্য কোনো আওয়াজ হয়নি তাতে, কুসুমও জানতে পারলোনা।সে অন্যদিকে ফিরে শোয়া ছিল।
‘হ্যালো??আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’
‘হুম’
‘ওহ।কুুসুম পাশে বুঝি?’
‘হ্যাঁ’
‘আমি প্রেমালাপ করতে কল করিনি।একটা কথা জানতে ফোন করেছিলাম।এসব যদি কুসুম শুনেও থাকে তবে কোনো সমস্যা হবেনা আশা করি’
‘বলেন শুনছি’
‘মৃদুল ভাইয়ার কি বিয়ে কাল?’
‘বিয়ে?কার?’
কলিংবেল বেজে উঠলো সেসময়ে।অর্ণব জুথির কল হোল্ডে রেখে গেলো দরজা খুলতে।সুলতান শাহ লোক পাঠিয়ে কলিংবেল ঠিক করিয়েছিলেন রাতেই।তার মতে জিসানের পরিবারের কেউ যদি কুসুম অর্ণবের বাসা দেখতে এসে দেখে কলিংবেল নষ্ট দেখে তখন আবার কি ভেবে বসে।
কুসুম উঠে বসে ওর পিছু পিছু আসার সময় ওর চোখ গেছে জ্বলে থাকা ফোনটার দিকে।
—
‘কিরে তুই!এত রাতে!!এখানে?’
মৃদুল ভেতরে চলে এসে বললো,’আগে বল জুথি তোকে ফোন করেছিল?’
‘হোল্ডে আছে।মাত্রই করেছিল’
‘নিশ্চয় জিজ্ঞেস করেছে আমার বিয়ে কিনা?’
‘হ্যাঁ।কি হচ্ছে কিছুই তো বুঝতেছিনা।’
মৃদু্ল কোমড়ে হাত দিয়ে গান শুরু করলো।
গাড্ডি তে না চারদি”” গাড্ডি তে না চারদি”””
গাড্ডি তে না চারদি””” গাড্ডি তে না চারদি”””
বলো তারারা বলো তারারা
‘ভাই থাম!আগে বল ঠিক কি ঘটেছে?জুথিকে কি বলবো এখন?তোর কি সত্যি সত্যি বিয়ে?’
‘আরে না।খাঁচার পাখি খাঁচায় ফেরাতে চাল চেলেছি।এবার তুই কল আনহোল্ড করে বলবি আমার কাল গায়ে হলুদ।ঠিক আছে?আগে এটা বলে আয় তারপর সব বলছি তোকে’
অর্ণব রুমে ফিরে এসে দেখলো কুুসুম ফোনের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মৃদুলকেও আসতে দেখে আঁচল টেনে ঘোমটা দিলো সঙ্গে সঙ্গে।
অর্ণব জুথিকে বললো সত্যি সত্যি মৃদুলের বিয়ে।এরপর লাইনটা কেটে দিলো।মৃদুল দাঁত কেলাচ্ছে শুধু।
অর্ণব ওর ঘাঁড় ধরে বাহিরে নিয়ে এসে বললো,’এবার বল এমন মিথ্যে কথা রটালি কেন?’
‘ঐ যে বললাম!খাঁচার পাখি।
সে আমায় পছন্দ করে কিন্তু স্বীকার করবেনা।এবার আমি স্বীকার করাবো’
‘জুথি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে।ওকে এরকম টাইপের যুক্তি দিয়ে ফাঁদে ফেলতে পারবিনা’
‘ফাঁদে ফেলেছি অলরেডি।নাহলে সে তোর সাথে কি পরিমাণ রেগে থাকার পরেও সেসব ছেড়ে কল করেছে শুধুমাত্র এটা জানতে যে আদৌ আমার বিয়ে হচ্ছে কিনা’
কথাটা বলে মৃদুল মুখ বাঁকিয়ে নাচতে নাচতে চলে গেছে।অর্ণব কপালে হাত দিয়ে বললো,’পাগল একটা!!’
—
মৃদুল মেস থেকে ব্যাগ নিয়ে সোজা অর্ণবদের বাসায় ঢুকেছিল।এরপর নিচ তলায় এসে কলিংবেলে চাপ দিয়ে ব্যাগ থেকে চশমা বের করে চোখে দিয়ে রাখলো।জাহান এসে দরজা খুলেছে তাও অনেক দেরিতে। দেরি হবারই কথা।রাতের ১টা বাজে এখন।
মৃদুলকে দেখে সে এক চিৎকার করে উঠেছে।অনেক বছর পর মৃদুল বাসায় ফিরেছে তাই হঠাৎ ওকে দেখে সে ইমোশান কন্ট্রোলে রাখতে পারেনি।
মৃদুল ওকে চিৎকারের আওয়াজ কমাতে বলছে ইশারা দিয়ে ততক্ষণে ওর চিৎকারে সুলতান শাহ লাঠি হাতে ছুটে এসেছেন তার রুম থেকে।
এসে মৃদুলকে দেখে তিনিও ঝটকা খেলেন।এমন ঝটকা খেলেন যে তার বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা মৃদুল নাকি অন্য কেউ।চোখ ডলে চেয়ারে বসে জাহানকে বললেন পানি দিতে।মিজুয়ানা উঠে এসে মৃদুলকে দেখে খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরে ভেতরে নিয়ে আসলেন।
‘মা কেমন আছো?’
‘খুব ভাল।মায়ের কথা মনে পড়লো তাহলে!আমি তো ভাবলাম আমাকে ভুলেই গিয়েছিস’
‘দুইদিন ভিডিও কল দিই নাই বলে এটা বলছো?’
সুলতান শাহ পানি খেয়ে বললেন,’এই থাম!গরু ছাগল!তুই আসলি ঠিক আছে তাই বলে কেউ এত রাতে আসে?তোকে মেস থেকে বের করে দিয়েছে বুঝি?’
মৃদুল সোফায় বসে বললো,’তা কেন হবে?আমাকে তো ওরা হাতে পায়ে ধরে আটকে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু আমি এখন গ্র্যাজুয়েট হয়ে গেছি।মেসে থেকে আর কি হতো তাই চলে আসলাম।জাহান আমাকে কফি বানিয়ে দেও।মম কোথায়?’
মিজুয়ানা মৃদুলের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,’ঘুমায়।আজ তো ওকে দেখতে আসছিল ছেলে পক্ষ।ওদের মমকে খুব পছন্দ হয়েছে। কাল পরশুর দিকে আমরা দু পরিবার মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করবো’
‘থামো তুমি।আমাকে ওর সাথে কথা বলতে দাও।এই তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন?একদম বাসা থেকে বের করে দেবো’
মৃদুল ব্যাগ হাতে নিতেই মিজুয়ানা এসে ওর হাত ঝাঁপটে ধরে রাগান্বিত স্বরে বললেন ‘তোমার কি সমস্যা? ছেলেটা এতদিন পর বাড়ি ফিরেছে, আসার পরপরই এসব কথা বলতে হবে?আর ছেলে আছে তোমার?’
সুলতান শাহ রান্নাঘরের দিকে চেয়ে বললেন,,’এই জাহান!মৃদুলের কফিতে চিনি কম দিবা।’
মৃদুল মায়ের দিকে তাকাতেই তিনি চোখ বড় করে বললেন,’এই জাহান তুই চিনি বেশি দিবি।
শুরু হয়ে গেলো তোমার কিপটামো!!এসবের জন্য আমার ছেলেটা সবসময় আমার কাছ থেকে দূরে থাকে।’
‘আমি চিনি কম দিতে বলেছি কারণ আমার ডায়াবেটিস। মৃদুলের উচিত নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করা।নাহলে বংশগত হয়ে ওর ও ডায়াবেটিস দেখা দেবে।পরে কেঁদেও কূল পাবেনা’
‘বাবা শোনো!রোগ যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তবে চিনি খেলেও হবে,না খেলেও হবে।কফিতে চিনি না দিলে তেতো কফি গেলা যাবে?’
‘গলা নামিয়ে কথা বলবি।এতদিন পর এসেছে,কোথায় গলা জড়িয়ে ধরে পড়ে থাকবে সেটা না করে গলা তুলে কথা বলছে।আমার কপালে এসব লেখা ছিল!!জানলে তোরে ছোটকালে টিকা দেওয়ার সময় অটিস্টিক হয়ে যাবার একটা টিকা ধরিয়ে দিতাম তাতে করে….’
‘থামবে তুমি?মৃদুল যা তুই নিজের রুমে।আমি খাবার আনছি।কফু খেয়ে খাবারটা শেষ করে শুয়ে পড়বি।বাবা আমার কলিজার টুকরা !!”
মৃদুল মুচকি হেসে চলে গেছে।
—–
“জুথি শুধু মৃদুলের খোঁজ নিতে ফোন করেছিল।এর বাহিরে কিছু বলেনি’
কুসুম বসে বসে হাতে ১,২,৩ গুনছিল।অর্ণবের কথা শুনে বললো,’আমি তো আপনার থেকে জানতে চাইনি’
‘তোমার তো সন্দেহের বাতিক আছে।পরে ভাববে গভীর রাতে বউ ঘরে রেখে আলাপ জমিয়েছি ওর সাথে।আগে থেকে জেনে রাখা ভাল’
‘হুম অনেক ভাল’
‘তুমি কি এখনও সন্দেহ করছো?’
‘মোটেও না।ঘুমান।অনেক রাত হয়ে গেলো’
‘নাহ।ঘুম নাই আমার।তুমি ঘুমাও,আমি দেখি’
‘কি দেখবেন?’
‘দেখার জিনিসের অভাব নেই।ফুল,ফুলের টব,চেয়ার,টেবিল,আলমারি,ওয়ারড্রব,কার্পেট,দরজা,জানালা,লীলাবালি,মশারি,বিছানার চাদর,আয়না,বারান্দা’
‘আপনি লীলাবালি বললেন?’
‘কানে মনে হয় অতিরিক্ত শোনো।লীলাবালি কেন বলবো আমি?তোমাকে ঘুমাতে বলেছি, ঘুমাও’
—-
মৃদুল ফ্রেশ হয়ে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখতে পেলো মৃন্ময়ীর আইডি থেকে দশটা ফটো এসেছে মেসেঞ্জারে।আগ্রহ নিয়ে ফটো গুলোতে ক্লিক করে দেখলো একটা বিদেশী ছেলের ঘাঁড়ে হাত রাখা,হাতে হাত রাখা জুথির কতগুলো ছবি।
মৃদুল তো আকাশ থেকে পড়লো এমন অবস্থা।মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলো ছেলেটা কে।জুথি জানালো ছেলেটা নাকি ওকে অনেক ভালবাসে।
মৃদুল সঙ্গে সঙ্গে ওকে কল করেছে।
‘এ্যাই তুমি এসব কি বলতেছো!সাদা চামড়ার বাঁশটা কই থেকে জুটলো?এতদিন তো শুনিনি’
“ওর নাম মোরকো।আমার ছোটবেলার বন্ধু।এন্ড হি লাভস্ মি সো মাচ’
‘তোমার মাচ তোমার কাছে রাখো।আমাকে তরকারির কথা বলো।ঐ ছেলে কি আমার চেয়েও পাগলা তোমার জন্য?’
‘অবশ্যই।সে আমাকে বিয়ের পরে কিস করবে বলেছে।অথচ এখানকার বেশিরভাগ ছেলেই বিয়ের আগে কিস- টিস সব সেরে ফেলে।তাহলে ভাবেন কত ভালবাসে আমায়।’
‘সব ভং।বিশ্বাস করবানা ঐ বাঁশরে।বিয়ের আগেরদিন তোমাকে পটিয়ে চুমুটুমু দিয়ে দেবে।এই খবরদার!ওর থেকে দূরে থাকো।আমার কোনো বিয়ে -টিয়ে হচ্ছেনা।সব মিথ্যে,সাজানো নাটক’
‘আই নো!!
আমার গুলাও সাজানো নাটক’
চলবে♥