#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৬
আফনান লারা
.
বাবার ঘর থেকে কোরআন শরীফ পাঠের সুমধুর ধ্বনি ভেসে চলেছে সম্পূর্ণ বাড়ি জুড়ে।নিচ তলা থেকে সুলতান শাহের ও কোরআন শরীফ পড়ার সুর ভেসে আসছিল।
মনটাকে শুদ্ধ করতে এই একটা সুরই যথেষ্ট। ফ্লোরে বসে ছিল অর্ণব।দুপাশ থেকে বিভিন্ন আয়াতের মিষ্টি সুর শুনছে চোখ বন্ধ করে।
বিছানায় ঘুমাচ্ছে কুসুম।
সেবার কথা হয়েছিল প্রতি ভোর বেলায় নামাজ শেষ করে বই পড়তে বসা হবে।অ,আ,১,২ শেখা হবে।
আর এখন তারে আমি ভোরবেলায় একটু শান্তিতে ঘুমোতে দেখি,সারাটারাত আমি তারে অসুস্থতার সাথে যুদ্ধ করতে দেখি।ভোরের দিকে এসে সে ঘুমায়।তার চোখ জিরোয়।কি করে তাকে বই পড়ার জন্য ডেকে তুলতাম?
ভাবতে ভাবতে উঠে এসে ওর গায়ে কাঁথা টেনে দিলো সে।পায়ের আলাতাটা উজ্জ্বল হয়ে আছে ওর।হলুদ শাড়ীর সাথে লাল আলতা ভীষণ মানিয়েছে।
——
সকাল সাতটা বাজতে না বাজতেই রান্নাঘরে দুজন বেয়ানের রান্নার ঢল পড়ায় আওয়াজে হইহুল্লড় জমে গেলো।
কুসুম আর শুয়ে থাকতে পারলোনা।চট করে উঠে বসে গেছে।উঠে বসাতে কান থেকে একটা জবা ফুল খুলে হাতের কাছে গিয়ে পড়লো।এটা এখানে কে রেখে গেলো ভাবতেই দোটানায় পড়ে যেতে হয়েছে।ও ভেবেছিল হয় অর্ণব নয়ত কলি।অর্ণব হঠাৎ এমন কেন করবে তাই ভেবে সে ধরে নিল এটা বুঝি কলির কাজ।মুখ ধুয়ে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করার পর সে জানলো এটা কলির কাজ ও নয়।তবে কি সত্যি অর্ণব করেছে?
ফুলটাকে খোঁপা করে কুসুম তাতে বেঁধে রাখলো।
সকালের নাস্তায় আজ একটা দারুণ খাবার তৈরি করেছেন দুই বেয়াইন মিলে।আর তা হলো শাহী সিমুই।
ঘ্রাণে চারিদিক মৌ মৌ করায় বাগানে সুলতান শাহকে এই নিয়ে দশবার পায়চারি করতে দেখা গেছে।কুসুম বিষয়টা উপলব্ধি করতে পেরে ওনাকে দাওয়াত করলো সকালের নাস্তার জন্য।পরে মা এসে বললেন শুধু তাকে কেন।বাকিদের ও আসতে বলুক।
এবার বাকিরাও এসে হাজির।বাসায় আর জায়গা নেই।জায়গার অভাবে কুসুম আর কলি বারান্দায় বসে সিমুই খাচ্ছিল।
মম ও ওদের পাশে এসে বসেছে।
‘তোমার খোঁপার জবা ফুলটা এই গাছের বুঝি?’
‘হ্যাঁ’
‘জানো এই গাছটা আমার যখন ১৫বছর বয়স,জন্মদিনে বাবা এটা বাগানে লাগিয়েছিল।যদিও জবা আমার পছন্দের নাহ তবে দেখতে সুন্দর আর এই গাছটা লতা টাইপের বলে বাবা এনেছিল।দেখোইনা দোতলা বাড়ির সৌন্দর্য্য কেমন করে তুলে ধরেছে??তোমার বুঝি এই ফুল অনেক প্রিয়?’
‘হুমমম অনেক।আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক গুলো গাছ আছে,গোলাপি আর সাদা জবা’
—
‘আর কয়বার তাকাবি?যা তোর বউয়ের পাশে গিয়ে বোস।দূর থেকে আর কত দেখবি?তোরই তো বউ’
অর্ণব মাথা চুলকে সরে দাঁড়িয়েছে।মৃদুল খেয়াল করলো তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে।ফোন নিয়ে দেখলো জুথির কল।একেবারে আকাশ থেকে পড়ার মতন অবস্থা।এটা কি সত্যি জুথির কাজ?
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।তাও বিশ্বাস অবিশ্বাসের বালাই ছেড়ে রিসিভ করলো সে।জুথি জানতে চাইলো ও কেমন আছে।
‘ভাল।আচ্ছা তোমার কি শরীর খারাপ?তুমি তো জীবনেও আমায় ফোন করোনা।তবে আজ কেন?কোনো সমস্যা হয়েছে কি?’
‘কিসের সমস্যা হবে?আমি আপনাকে কল করতে পারিনা?”
‘হাজার বার পারো।কিন্তু এমন তো করোনা।এই প্রথম করলে।তাই জানতে চাইলাম সব ঠিক আছে কিনা’
‘একদম ঠিক।মানুষের মন এতবার তো খারাপ হয়না তাই না?আমি বেশ ভাল আছি।’
‘ভাল আছো যখন তখন চলে এসো এখানে’
‘নাহ।এখন না।মন একেবারে ভাল হোক তারপর দেখা যাবে আর এটা সিঙ্গাপুর। ঢাকা বরিশাল না যে বললেই রওনা হয়ে যাব’
‘তবে কি মনে করে মৃদুলকে মনে নিলেন?কোনো বিশেষ কারণ?’
‘আজকে আমি বাংলা বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম।একটা কবিতার ব্যাখা বুঝতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।আপনি তো সিনিয়র ভাইয়া।বুঝিয়ে দেবেন?’
‘ধুর!ভাবলাম রোমান্টিক মুডে আছো। তোমার থেকে আসলে এসব আশা করাটাই বোকামি।কল কাটলাম।মাথা ঠাণ্ডা হলে আমি নিজেই ফোন দেবো’
মৃদুল কল কেটে গাল ফুলিয়ে চলে আসলো অর্ণবের কাছে।
অর্ণব ওর দিকে চেয়ে বললো,’ননির পুতুলের সাথে ভেজাল করে এসেছিস?তোর তো সাহস কম না’
অর্ণবের কথা শুনে মৃদুল ঢোক গিললো।ফোনটা পকেট থেকে আবার বের করে জুথিকে কলব্যাক করেছে।কিন্তু সে ধরেনি।কপালে হাত দিয়ে মৃদুল বললো,’ভুলে গেছি জুথি একটা ঘাঁড়ত্যাড়া মেয়ে।আসলে ওর সাথে কল কাটার মতন ব্যবহার এর আগে করিনি আমি।
জানিনা আর কোনোদিন কল ধরবে কিনা।এই প্রথমবার সে কল দিলো আর আমি কিনা কেটে দিলাম।ধুর!সবসময় সব মনে থাকে??’
‘আরে টেনশন নিস না।আস্তে আস্তে মানিয়ে নেবে।তাড়াহুড়োর কিছু নেই।জুথি বুঝাতে চাইছে সে রেগে আছে’
তখনই জুথির কল দেখে মৃদুল লাফিয়ে উঠলো।রিসিভ করে চুপ করে আছে ভয়ে।
জুথি বললো,’সরি ভাইয়া,আমি ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।কল দিয়েছিলেন?রাগ শেষ আপনার?’
মৃদুল ফোন সরিয়ে ফিসফিস করে অর্ণবকে বললো,’এরে রাগ করার কথা কার ছিল?আমার নাকি জুথির?’
‘জুথির’
‘তবে সে ক্যান বলতেছে রেগে আছি আমি,মানে মৃদুল’
‘এ্যাহ!কি বলিস!’
‘হ্যালো ভাইয়া?শুনতে পাচ্ছেন?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ।শুনছি।না না আমি একটুও রেগে নেই।তুমি বলো কি বলবে’
‘পড়াটা বুঝিয়ে দেবেন?ভিডিও কল দেবো?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ,পিজিক্স,কেমিস্ট্রি, বায়োলজি।কি পড়তে চাও বলো আজই পড়িয়ে দেবো’
‘আমি বাংলা ডিপার্টমেন্টের।বাংলা পড়ালেই চলবে’
—–
আজ অর্ণব তার কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারটা দেখতে গেছে।কুসুমের এর চেয়ে খারাপ আর কোনোদিন লাগেনি।ও চলে গেছে এক ঘন্টাও হয়ত হয়নি।অথচ এরই মধ্যে কতবার যে কুসুম দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে এসেছে এই চিন্তায় যে অর্ণব কখন আসবে।
অর্ণবেরও ভাল লাগছেনা অফিসে এসে।এতদিন কাজে গ্যাপ দেওয়ায় এখন সে জোর করেও মন বসাতে পারছেনা কিছুতে।মন চায় কুসুমকে একবার দেখতে।কি করছে কে জানে।
—-
এতদিন কুসুম তার ফোনটাকে আলমারিতে তুলে রেখেছিল।দরকার নেই বলে এই কাজটা সে করেছে।
কিন্তু আজ এই ফোনের বড়ই দরকার হয়ে দাঁড়ানোয় সে ফোন আলমারি থেকে বের করে হাতে নিয়েছে।
কল করবে নাকি করবেনা তাই ভাবছিল।কলি লাফিয়ে এসে ওর পাশে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,’বুবু তোমার ফোন দাও।গেমস খেলবো’
কুসুম ওর দিকে ফিরে বললো,’আচ্ছা তুই জানিস ছবি সমেত কল কি ভাবে করা যায়?’
‘ইন্টারনেট লাগে।তোমার ফোনে সেটা আছে?’
‘জানিনা তো’
‘তাহলে নাই।যে জানেই না তার ফোনে ইন্টারনেট আছে কিনা তার ফোনে এমবি থাকার কথানা।তা কি জন্য জানতে চাইলা?’
”না এমনি।’
‘দুলাভাইরে ফেন দিবে?’
‘না না’
‘চাচাজান দেখছিলাম দুলাভাইর বড় ভাইয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছে,তার ফোনে মনে হয় নেট আছে।তুমি তার ফোন দিয়ে দুলাভাইর সাথে কথা কইবা?’
‘আরে না থাক।কি ভাববেন উনি।আর তোর দুলাভাই তো জলদি চলে আসবেন।এত কিছুর দরকার নেই।তুই চল কাগজকলম নে।আমায় চিঠি লেখা শিখিয়ে দে।’
—-
কুসুমের ফোন বাজছে।এই নিয়ে পাঁচবার।সে গেছিল বাগানে।কলির ডাক শুনে ছুটে এসেছিল দোতলায়।হাঁপাতে হাঁপাতে কল রিসিভ করলো অবশেষে।
‘কই ছিলে তুমি?শরীর ভাল আছে?’
‘হ্যাঁ আমি ঠিক আছি’
‘তবে এত দেরি কেন?
‘বাগানে ছিলাম।দুপুরের খাবার খেতে আসবেন না?’
‘নাহ।আমার এখানে অনেক কাজ।তুমি খেয়ে নাও’
কুসুম মুখটা ফ্যাকাসে করে জিজ্ঞেস করলো তবে কখন আসবে।
‘সন্ধ্যা হতে পারে।’
‘ওহ।আমি ভাবলাম এখন আসবেন’
‘অনেক কাজ জমা হয়ে আছে।আমি না থাকায় কর্মচারী গুলা দোকানের অবস্থা খারাপ করে রেখেছে।সব সামলাচ্ছি।এক গ্লাস পানি খাবারও সময় পাইলাম না’
‘পানি খেয়ে নিন।’
‘তুমি বাসায় থাকো।বের হইওনা।বাগানেও যাওয়ার দটকার নেই।আমি বিকালে আবার কল দিব কেমন?’
—–
বিকাল শুরু হয় হয়ত ৩টা,৪টা থেকে।কুসুম সেই ৪টা থেকে অপেক্ষা করছিল অর্ণবের কল আসার।কোনো কল আসছেনা দেখে সে নিজেই নিল ফোন দেবে বলে।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত তার ফোনে একটা টাকাও নেই।
বাবার কাছে গিয়ে বলতে লজ্জা করছে বলে যেতেও পারছেনা।
উনার সাথে কথা বলা খুব দরকার, কিন্তু লজ্জার সাথে পেরে উঠতে না পেরে গালটা ফুলিয়ে বসে রইলো বিছানায়।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৭
আফনান লারা
.
রাত ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল কুসুম।অর্ণবের আসার কথা ছিল বিকেলে।বিকেলে একবার ফোন করারও কথা হয়েছিল।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে,সূর্য ডুবে অন্ধকারে ছেয়েছে সবটাতে।ঝিঁ ঝিঁ পোকা জানান দিয়ে গেলো সন্ধ্যা নেমে গেলো বলে।
সেই আবছা আলোর সন্ধ্যাটা শেষ হয়ে ছিল রাতের আগমনে।সেই আগমনের এখন রেশও চলে গেছে,অথচ কুসুমের অপেক্ষার প্রহর কেবল দীর্ঘতর হয়ে উঠছে।এত প্রহর গুনতে গুনতে একটা সময়ে সে ঘুমে কাতর হয়ে গেছে।ঠিক সেসময়ে অর্ণব এসেছে।
মায়ের কাছে জানতে পারলো কুসুম না খেয়ে ঘুমিয়েছে।
আজ দেরি হবার অন্য একটা কারণ আছে বৈকি।আর সে কারণ মুখে বলার সাহস অর্ণব পাচ্ছিলো না।কাজ থেকে ফেরার পথে হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করেছিল কুসুমের টিউমার নিয়ে।ডাক্তার বলেছেন যত দ্রুত সম্ভব বাহিরের দেশে চিকিৎসাটা করিয়ে নিতে নাহলে হাতে আর কটা দিন, বা মাস আছে।সঠিক করে কিছুই বলা যাচ্ছেনা।এই সময়ে এসেও অর্ণবের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে এসব কিছু সত্য।কুসুমের কিছু হয়নি এখনও সেটাই মাথায় ধরে বসে আছে সে।
বাবা মাকে বলতে পারছেনা ডাক্তারের কথাটা। এটা শুনলে সবাই ভেঙ্গে পড়বে ভেবে।
কটা দিন বলতে কি বুঝালো ডাক্তার?এতগুলো টাকা কই পাবো?
টাকার চিন্তায় বিভোর হয়ে বাবার রুমের দরজার কাছে এসে থেমেছে সে,দশ মিনিট হলো সে এখানে,তাও বুকে সাহস জুগিয়ে নিতে পারছিলনা।
শেষে বাবা ওকে দেখতে পেয়ে ভেতরে আসতে বললেন।ভেতরে গিয়ে চুপচাপ বাবার সামনে বসে আছে সে।তাও টাকার প্রসঙ্গে কিছু বলতে পারছেনা।
বাবা ওর মুখ দেখে আন্দাজ করতে পারলেন হয়ত টাকার বিষয়ে কথা বলতে ওর এখানে আসা তাই তিনি নিজেই কথা বলা শুরু করেছেন।
‘শুন অর্ণব,জমি দুই জায়গার দুইটা বিক্রি করবো বলে ভাবছি।এখন সমস্যা হলো দাম একেবারে কম দেবে বলে ঠিক করে সবাই।
তুই কি বলিস?ডাক্তার কি বলেছে?আর কটাদিন অপেক্ষা করলে সমস্যা হবে?আসলে যারে ধরেছি সে একেবারে পানির দামে কিনতে চায়।লসের উপর লস।
যদি ক্ষতি না থাকে তবে আমি আরও কটাদিন পর জমি বিক্রি করবো।তোর কি মত?’
অর্ণব কিছু বলতে পারছেনা।বুক ফেটে কান্না আসছে তার।কোনোরকমে কান্না দমিয়ে উঠে চলে আসলো।রুমের আলো নেভানো।সে ইচ্ছে করে জ্বালায়নি।অন্ধকারে ওরই পাশে বসেছিল।কুসুমের হাতে এক জোড়া বালা আছে।স্বর্নের নয়,সিটি গোল্ডের।এগুলো ওর মা কিনে দিয়েছিল।এপাশ থেকে ওপাশ করতেই ওগুলোর আওয়াজ শোনা গেছে।অর্ণবের চিন্তা গুলো সরে তার মন গেলো কুসুমের দিকে।কথাটা বাবাকে জানাতেই হবে ভেবে বিছানা থেকে উঠতে চাইলো সে।কিন্তু কুসুমকে ছেড়ে এই মূহুর্তে এক কদম ও নড়তে ইচ্ছে করে না।
—–
‘দেখ জুথি!এবার মা ও আমার সাথে দেশে যাবে।তোকে আমি একা বাড়িতে রেখে যেতে পারবোনা। আমার সাথে তোকে যেতেই হবে।দরকার পড়লে তুই যে দেশে ফিরছিস এ কথা কাউকে জানাবিনা।তাহলেই তো হয়’
‘আমাকে বুঝি বাহিরে মৃদুল ভাইয়া দেখবেনা?’
‘কি করে দেখবে?তুই তো বলেছিলি মৃদুল নাকি তার বাবার বাড়িতে এখন।আর মেসে থাকবেনা।তাহলে সে তোকে কি ভাবে দেখবে?’
‘আচ্ছা ডিসিশান পরে জানাবো।আপাতত আমি এইসবে নাই’
—
‘বাবা কিছু খাবিনা?’
‘হুম?কি বললে মা?’
মা রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে দেখলেন অর্ণব কুসুমের মাথার কাছে বসে আছে।মা আরেকটু কাছে এসে আবারও বললেন কিছু খাবে কিনা।
‘খিধে নেই’
‘কুসুম না খেলে তোর খিধে নেই?এত ভালবেসে ফেলেছিস?’
‘বেসে আর লাভ হলো কৈ?সব হারানোর পথে নেমেছি’
‘মানে?’
‘কিছুনা।আমি সন্ধ্যায় পুরি খেয়েছি।খিধে নেই।বুকে জ্বালা করছে,কঠিন জ্বালা।এই জ্বালাতে গলা দিয়ে ভাত নামবে না।তুমি গিয়ে ঘুমাও বরং’
মা আর জোর করলেননা।চলে গেছেন।অর্ণব আগের কাজে মন দিলো।অন্ধকারে কুসুমের চুলে বেনী করছিল।
এখন আলোতে করছে।বেনী শেষ করে হাতে নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ চোখের পাতা ভারী হয়ে এসেছে।কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।এই ফুলের মতন মেয়েটা সত্যি বিলীন হয়ে যাবে?তবে সে ফুল কেন হলো!কেন সে ফুলের মতন হলো?ফুলের মতন নেতিয়ে যাওয়াই যদি তার শেষ অবস্থা হয় তবে সে ফুল কেন হতে গেলো।কেন!!
কেন আর কটা বছর সে সুখে থাকার অধিকার হারালো!’
—-
চুলে একবার টান লাগায় কুসুম জেগে গেছে।অর্ণব জানেনা ওর যে ঘুম ভেঙে গেছিল।সে বেনীতে রাভার বাঁধছে।
কুসুম হঠাৎ উঠে বসায় কিছুটা অবাক হলো সে।চেয়েই রইলো চমকে গিয়ে।
‘আপনি কখন এলেন?’
‘আধ ঘন্টা হলো’
‘এত দেরি হলো যে?’
‘অনেক কককককাজ…’
অর্ণবের গলায় কথা আটকে গেলো।বাকিটা বলতে পারলোনা।গলা ব্যাথা করছে।কুসুম ওর চোখ মুখ দেখে বললো,’ডাক্তার কিছু বলেছে আমায় নিয়ে?’
‘আমি তো ডাক্তারের কাছেই যাইনি’
‘তবে কাঁদছিলেন কেন?’
‘কই??কাঁদিনি তো’
‘আপনার চোখ ফুলে আছে।আমার কাছে লুকিয়ে কি হবে?ডাক্তার কি বলেছে?আর বাঁচবোনা তাই তো?’
অর্ণব হ্যাঁ/না কোনো উত্তরই দেওয়ার সাহস পাচ্ছেনা।কুসুম অবশ্য ওর উত্তরের আশাতে চেয়েও থাকেনি।বিছানা থেকে নেমে গেছে।যাবার পথে বলে গেছে খেতে আসতে, ও নাকি খাবে।অর্ণবের আসার অপেক্ষায় তারও খাওয়া হয়নি।
অর্ণবের হাত পা চলছেনা।একের পর এক ঝটকা সামলানোর ক্ষমতা হারিয়ে বসে আছে।
সব সাজিয়ে কুসুম যখন আবারও এসেছিল ওকে ডাকতে,এসে দেখলো মাথায় হাত রেখে সে তো ঘুমায়,নাকি জেগে বোঝা দায়।
ওর একদম কাছে এসে কুসুম আরও একবার ডাক দিলো ওকে।অর্ণব জবাবে বললো আর কটা মিনিট পর আসবে।
কুসুম মাথা নাড়িয়ে চলেই যাচ্ছিল।
এই প্রথমবার তার সুতির শাড়ীর আঁচলে সে টান খেয়েছে।এই টান খাটের সঙ্গে বিধে নাই।
এই টান লাগার কারণ অর্ণব ধরেছে আঁচলটাকে।কুসুম প্রথমে ধরে নিলো আঁচলটা বুঝি খাটে কোনো কোণার সাথে লেগেছে।তাই ভেবে পেছনে না তাকিয়েই স্বাভাবিক ভাবে কটা টান দিয়ে সে চলে আসতে চাইলো।কিন্তু যখন টানের পরেও ছুটলোনা তখন সে পেছনে ফিরলো।
অর্ণবের মুষ্টিবদ্ধে তার আঁচলের কিঞ্চিত অংশ দেখে কুসুম প্রথমে হতবাক হয়ে গেছে।
অর্ণব ওকে ওমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,’আমার মাথাটা একটু টিপে দেবে?তোমার মাথার যন্ত্রনা কম করতে গিয়ে আজ আমার মাথাই ছিঁড়ে যাচ্ছে যন্ত্রনায়’
এক সেকেন্ড ও দেরি না করে কুসুম এগিয়ে এসে ওর কপালে হাত রেখেছে।এ প্রথমবার সে অর্ণবের গায়ে স্ব-ইচ্ছায় হাত রাখলো।হাত প্রথম প্রথম কাঁপছিল অনেক।কিন্তু অর্ণব যখন মজবুত করে আঁচলটা ধরেছিল তা দেখে ওর ভয় কেটে গেছে।মনে হয় ইনি অনেক আপন,অনেকদিনের আপন।এনার সামনে লজ্জা,ভয় খাটেনা।
কুসুমের নরম হাতের ছোঁয়ায় অর্ণব এতটাই মায়া পেয়েছে যে সে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়ে দিয়েছে।বেশ কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলাবার পর ওর ঘুমের কথা বুঝতে পেরে কুসুম আলো নিভিয়ে চলে গেলো খাবার যেখানে রাখা সেখানে।পেটে ভীষণ খিধে,আর এদিকে একটা ধর্ম।
সে না খেলে যেমন অর্ণব না খেয়ে থাকে সেরকম অর্ণব না খেলে তার ও না খাওয়া ধর্ম।
খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকলে যে লোভ জন্মে,অর্ণবের প্রতি প্রেম সেই লোভটাকে মুছে দেয় বারবার।যতবার লোভ আসবে ততবার মুছে দেবে।
প্রেমের কি শক্তি!!!
প্রেম আর লোভের গণনা করতে করতে কুসুম একটা চিরকুটে তার নাম লিখে ফেলেছে।নিজের নাম লিখে ছুটে রুম থেকে অর্ণবের একটা খাতা নিয়ে আসলো।এটাতে অর্ণব একবার সবার নাম লিখে ওকে দেখিয়েছিল।অর্ণবের লেখা কুসুম আর ওর লেখা কুসুম মিলিয়ে দেখলো তার হাতের লেখা বড়ই বিচ্ছিরি।তবে কিছুটা মিলেছে বলে অনেক বেশি খুশি হলো সে।
‘কুসু…..’
কুসুম মাথা ঘুরিয়ে চেয়ে দেখলো ঘাঁড়ে হাত রেখে হাই তুলতে তুলতে অর্ণব আসছে এদিকে।ওর মুখে কুসু শুনে বুকে ধুক করে উঠেছিল।কুসু শুধু মা আর বাবা আদর করে ডাকতেন প্রায় সময়।কিন্তু আজ অর্ণবের মুখে কুসু শুনে সে তো অবাক।আজ সব কিছুতে অবাক হওয়া হচ্ছে।এতদিনকার অর্ণব আর আজকের অর্ণবের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ।
অর্ণব চেয়ারে বসে বললো,’তোমার সেবায় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।এমন জানলে রোজ কপাল টেপাতাম তোমাকে দিয়ে।নাও শুরু করো খাওয়া।রাত সাড়ে বারোটা বেজে গেছে’
‘আচ্ছা,ডাক্তার কি বললো বলবেন না আমায়?’
‘ডাক্তার বললো তোমায় বেশি আদর,যত্ন করলে বহুদিন বাঁচবা’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৭৮
আফনান লারা
.
আকাশে চাঁদ না থাকলে আকাশটা অসুন্দর লাগে? একদমইনা।চাঁদ ছাড়া আকাশের আবার রুপ অন্যরকম।
তারা আছেনা??তারা’রা একাই একশো।
পা ঝোলানো বারান্দায় বসে সেই তারার মেলার আকাশটা দেখা হচ্ছে কুসুমের।অর্ণব ও চেয়ার টেনে ওরই পাশে বসা ছিল।
চাঁদবিহীন আকাশটা ওর কাছে অপরুপ লাগলেও অর্ণবের কাছে একেবারে অসুন্দর মনে হয়।তবে কুসুমের এই আকাশের প্রতি অগাধ মুগ্ধতা তাকে এই আকাশকে সুন্দর বলতে বাধ্য করেছে।
তার পরেও সে ঐ আকাশটাকে দেখা প্রয়োজন বোধ করলোনা।সে দেখছিল কুসুমকে।
ওর পা দোলানোটাও দেখছে সাথে।বেশ কিছুক্ষণ দেখা শেষে বললো,’জানো কুসুম?আমি জুথিকে ভালোবেসে ছিলাম কিনা আদৌ জানিনা।তুমি বলতে পারবে ওকে ভালবেসেছিলাম কিনা?’
কুসুম পা দোলাতে দোলাতে বাড়ির সামনের সেই ফাঁকা পাকা পথটা দেখছিল।অর্ণবের প্রশ্নের জবাবে বললো,’না বাসেননি’
অর্ণব গালে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো সে কি করে জানে।
‘যদি বাসতেন তবে বিয়েটা আটকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাতেন।সব কিছুর উর্ধ্বে গিয়ে হলেও আপনি মিননয়ি আপুকে নিজের করে নিতেন।’
‘ধরো পারিনি,নিয়তি জোর করলো,তবে?’
‘তবে বিয়ের পরেরদিনই সব যোগাযোগ বন্ধ করে ফেলা আপনার জন্য এত সহজ হতোনা।আজকালকার বুড়োরা ভালবাসা কি সেটাই জানেনা।নামেই এত বয়স হলো’
কথাটা বলতে বলতে কুসুম উঠে চলেও গেছে।কিন্তু অর্ণবের গায়ে লাগলো কথাটা একেবারে তীক্ষ্ণ কাঁটার মতন।
এত বড় খোঁচা!
‘আমি বুড়ো?আমি ভালবাসা চিনিনা?
না না,ঠিকই তো বলেছে।আসলে খোঁচা দিয়ে যেটা বলা হয় সেটা সত্য কথা হয়, নাহলে গা জ্বলতোনা।
আমি সত্যি জানিনা ভালবাসা কি।জুথিও জানেনা!ও ভাবছে আমি ওরে ভালবাসি,ও আমাকে ভালবাসে।একচুয়ালি আমরা একজন আরেকজনকে ভালোই বাসিনি।দুদিনের মোহে দুজন দুজনকে প্রাক্তন উপাধি দিয়ে দিয়েছি।ধুর সত্যি আমি বুড়ো হয়ে গেছি’
কুসুম বিছানায় বসে মিটমিট করে হাসছিল পাশ থেকে ওর কথাগুলো শুনে।অর্ণব চেয়ার থেকে উঠে রুমে ফিরে আসতেই কুসুমকে মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকাতে দেখে ফেলেছে।বুড়ো বলে সে যে কত মজা নিচ্ছে তার হুটহাট প্রমাণ।
অর্ণব কোমড়ে হাত রেখে কপাল কুঁচকালো।চেষ্টা করলো একটু রাগী লুক আনার।কিন্তু পারেনি।
তারপর বুক ফুলিয়ে ঠোঁট কামড়ে বললো,’বয়স কত তোমার?নাক টিপলে দুধ বের হবে উনি আমায় বুড়ো বলেন,হুহ!’
‘ছোটরাই তো বড়দের বুড়ো বলে।এটাই তো নিয়ম’
‘রাখো তোমার নিয়ম।আমার শরীর দেখেছো?দেখে মনে হয় একটা বাচ্চার ভাই’
‘কিহ?বাচ্চার বাপ শুনেছি।বাচ্চার ভাই এ প্রথম শুনলাম’
‘শুনবে কি করে?চোখের সামনে তো সব বুড়ো দেখে বড় হয়েছো।আমি শুনেছি কলির থেকে।তুমি ভারতে যেখানে থাকতে ওখানে বৃদ্ধাশ্রমের পাশেই তোমাদের বাসা ছিল।বুড়ো দেখে দেখে বড় হয়েছো।’
‘কি কপাল ভাবেন।বিয়েও করেছি বুড়োকে।আজীবন আমায় বুড়ো দেখে যেতে হবে ‘
অর্ণব এগিয়ে এসে ওর গাল টিপে ধরে বললো,’আমি কি?’
‘জোয়ান এবং জোয়ান,হিরো’
‘হুমম।আমার বয়স কত হবে?’
‘আমার সমান’
‘আমি দেখতে কেমন?’
‘সুন্দর,নায়কের মতন’
‘ছেড়ে দিলাম গাল।আর কোনোদিন বুড়ো বললে আবার ধরবো।’
চোরকে যেন বলা হয়েছে চুরি না করতে।কুসুম আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে গেলো।অর্ণব শুরুতে বোঝেনি।এরপর কুসুম নেমে দৌড় দেওয়ার আগে বলে গেলো,’বুড়ো!’
অর্ণব তখন এক পা বিছানায় উঠিয়ে ছিল শোয়ার জন্য।কুসুমের মুখে আরও একবার বুড়ো শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখলো সে উধাও।
এত দুষ্টামি ওর আসে কই থেকে।
ছুটে রুম থেকে বের হয়েছে সে ওকে ধরবে বলে।ঘুমাতে যাবার আগে সমস্ত লাইট নিভিয়ে এসেছিল তখন।এখন এই অন্ধকারে তো ওকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।যে দুষ্টুর দুষ্টু!লাইট না জ্বালালে জীবনেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
লাইটে টিপ দেওয়ার আগে সে খেয়াল করলো রুমের আলো নিভে গেছে।তার মানে কারেন্ট ও চলে গেছে।তারপরেও সিওর হতে কয়েকবার সুইচ টিপ দিলো।
নাহ!সত্যি সত্যি কারেন্ট গেছে।
কোনে উপায়ান্তর না পেয়ে অন্ধকারে পা ফেলে চললো সে।কেউ যাতে জেগে না যায় তাই ফিসফিস করে বলছে,’কুসুম!!এ্যাই কুসুম!!শুনতে পাও?তুমি কই?দেখো অনেক রাত হয়েছে।এখন মজা করার সময় না।ঘুমাতে যেতে হবে।’
কুসুমের কোনো সাড়া নেই।অর্ণব ভেবেছে ও বুঝি বারান্দাতে লুকিয়ে।
তাই সবার আগে ওখানেই পা রাখলো।কিন্তু তার ধারণা ভুল হলো।কুসুম সেখানে নেই।
কোমড়ে হাত দিয়ে ভাবছিল এবার কোথায় গিয়ে খুঁজবে ওকে ঠিক সেসময়ে কানের কাছে ফিসফিস আওয়াজে শুনতে পেলো,’বুড়ো,বুড়ো বুড়ো’
কুসুম কথাটা বলে পালাতেই চাইছিল কিন্তু অর্ণব আন্দাজ করে ওর হাতের কব্জি ধরে ফেলেছে।
কুসুম অন্ধকারের মাঝে হাতটাকে ছাড়ার অনেক অনেক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ।অর্ণবের শক্তির কাছে তার শক্তি একটা পিঁপড়া সমান।অর্ণব বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বললো,’ধরে ফেললাম।এইবার বলো কি বলছিলে?’
‘কিছুনা’
‘বলো বলো।দেখি তোমার কত সাহস’
‘আপমি নায়কের মতন দেখতে।অনেক সুন্দর।’
‘তুমি যে স্বভাবের।এখন আমি হাত ছেড়ে দিলে যেতে যেতে আবারও বুড়ো বলবে আমায়।’
‘না সত্যি।আর কোনোদিন আপনাকে বুড়ো বলবোনা’
——
‘মা জুথির জামাকাপড় গুলো সব গুছিয়ে নেও তো।ঐ ঢংগী তো নিজের জামাকাপড় নেবেই না।বলতে গেলে টেনে হিঁচড়ে নেওয়াচ্ছি।কাল তো আমরা সময় পাবোনা।সারাদিন পাসপোর্ট অফিসে কেটে যাবে’
জুথির নানু ওর জামাকাপড় সব ব্যাগে পুরছেন তার রুমে এসে।আর সে মাথা ঝুলিয়ে শুয়ে ছিল বিছানায়।নানুর কাজ দেখে বলো,’মাকে অন্তত বোঝাও,আমি যাব না।আমার ভাল লাগছেনা’
‘তুই মা হলে বুঝতি, মেয়েকে একা বাড়িতে রেখে যাওয়ার কথা ভাবাও যায়না।এখন যদি তোর ভাই -বোন থাকতো এখানে,তবে রাখা যেতো।কিন্তু একা একটা মেয়েকে এত বড় বাড়িতে রেখে যাওয়াকে আমি নিজেই সম্মতি দেব না,এবার বল দেখি আমার বাংলা বলা কেমন হলো?গুগল দেখে প্র্যাক্টিস করেছি দু সপ্তাহ ধরে।’
তাঁর কথার জবাব না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে জুথি ফোন হাতে নিয়েছে।মৃদুলের অনেকগুলো মিসড কল এসে ভীড় জমিয়েছে।
ছেলেটা দিন দিন বেশি করে পাগলামো করছে।রাগ করে ফোনটা রেখে দিয়ে শুয়ে থাকলো সে।দু মিনিটের নাগাদ মনে হলো একবার কলব্যাক করা উচিত।তাই ভেবে এখন কলটা দিয়েছে সে নিজেই।
ওমা রিং হতে না হতেই রিসিভ করে ফেললো মৃদুল।যেন ফোন হাতে নিয়ে তাকিয়ে ছিল,কখন জুথি কল দেবে।
‘হ্যালো!!কি খবর?’
‘প্রতি এক ঘন্টায় কেউ যদি জিজ্ঞেস করে কি খবর,তখন খবর আর খবর থাকেনা।’
‘এক ঘন্টাতেও খবর বদলায়।যেমন ধরো আমি এক ঘন্টা আগে তোমার সাথে যখন কথা বলছিলাম তখন বিছানায় ছিলাম,আর এখন ও বিছানায়।খবরটা হলো কিছুইনা।
দেখো, এই কিছুইনা ও কিন্তু একটা খবর।
কি ডট ডট ছ ডট ডট ু-কার ডট ডট ন আ-কার’
বুঝলে?খবরের সংজ্ঞাটাই কত বড়।তার মানে খবর আর খবর।আর তুমি বলো খবর নেই?আসলে তুমি কথা বলতে চাও না সেটা বলো’
‘অসহ্য!’
‘ঘুমাবেনা?’
‘আপনি ঘুমাতে দিলে তো ঘুমাবো’
‘কেন?ও তুমি তো আবার লেট করে ঘুমাও।চলো আমরা গল্প করি।
‘আচ্ছা, আপনি নাহয় পাগল।তাই বলে আমার সুস্থ মস্তিষ্ক টাকে আপনার মতন পাগলাটে বানাতে এমন উঠে পড়ে লেগেছেন কেন বলুন তো?অনামিকা আপুর উপরের রাগ আমার উপর ঝাড়তে চাইছেন?’
‘মোটেও না।ওর উপর তো আমার রাগ নেই।থাকলেও সেটা কয়েক মাসে শেষ হয়ে গেছে।এখন আমি স্মৃতি ভুলে যাওয়া ব্যাক্তি।কেউ অনামিকার নাম না নিলে তাকে মনে পড়েনা।
মানে এখন আমি হইলাম শিশুর মনের মতন।নতুন করে আবার শুরু।’
‘এ্যাই জুথি তোর কোন জামাটা দেশে নিবি?এখানে দেখি সব ওয়েস্টার্ন, দেশে গিয়ে এসব পরবি নাকি?’
নানুর কথা শুনে জুথি ফোন চেপে ধরেছে।মৃদুল বললো,’তোমার নানু কি বলে?দেশে আসতেছো নাকি? হিহি’
‘হেহে!!নানু মজা করতেছে’
‘তাই না?মধ্য রাতে নানু মজা করতেছে??আমাকে বোকা পাইছো?কাল থেকে আগামী দশ দিন আমি এয়ারপোর্টে মৌমাছির মতন ঘুরঘুর করবো,সিঙ্গাপুরের যত ফ্লাইট আছে সব নোট করে।
আমাকে ফাঁকি দেওয়া এত সহজ না মিস মৃন্ময়ী।’
চলবে♥