#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(বিশ)
#Mst.Shah Mira Rahman
(গল্পের স্বার্থে আজকের পর্বে বেশ কিছু স্লাং ইউজ করা হয়েছে।তার জন্য দুঃখিত)
“তুই আমার বাপকে ছাড়বি,আমি তোর বোনকে সহি সালামতে তোর কাছে পৌঁছে দেব।ওমরের এক কথা ব্যারিস্টার।নিজের কথার খেলাপ এই ওমর কখনো করে না।”
পিট পিট করে চোখ মেলে আশেপাশে তাকালো আয়াত।বোঝার চেষ্টা করল কোথায় আছে সে।ছোট্ট একটা খুপরির মতো ঘর।কোনো বাতি নেই।বাইরে থেকে যতটুকু দিনের আলো আসছে তাতে ঘরের ভেতরের পুরোপুরি অন্ধকার কাটছে না।আয়াত ভ্রু কুঁচকালো।সবকিছু কেমন অপরিচিত ঠেকলো তার কাছে।একটু নড়ে উঠতেই খেয়াল করলো তার হাত পা বাঁধা চেয়ারের সাথে।আয়াত ভয় পেয়ে গেল। আশেপাশে ভালো করে তাকালো।কাউকে দেখল না।চোখ ছলছল করে উঠলো।মনে করার চেষ্টা করল সে কিভাবে এলো এখানে?সে তো মিনহাজের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল।লোকটা আসেনি বলে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরছিল ঠিক তখনই কেউ পেছন থেকে তার নাকে কিছু একটা চেপে ধরে।তারপর আর কিছুই মনে নেই তার।আয়াতের ভয় বাড়ল।আসন্ন বিপদের আভাস পেতেই বুক ধরফর করল।ছটফট করল ছোটার জন্য।কিন্তু ব্যর্থ হলো।হাত পা নাড়াতে নাড়াতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।ঠিক সে সময়ই এক বাজখাঁই ধমক ছুটে এলো তার দিকে।
“সমস্যা কি?কাদছিস কেন?কে মরছে তোর?”
আয়াত আতকে উঠলো।পেছনে তাকানোর চেষ্টা করল।পারলো না।এর মাঝে সামনে দরজা দিয়ে হ্যাংলা পাতলা মতোন একটা ছেলে ঢুকল। তাকালো তার দিকে।অতঃপর তার পেছনে তাকিয়ে কাউকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“ভাই,মাইয়া দেখি বাচ্চা গো মতোন কানতাছে।”
ওমর হাসল।এগিয়ে গেল আয়াতের দিকে।তার সামনে চেয়ার টেনে মুখোমুখি বসে তাকালো আয়াতের দিকে।আয়াত থমকালো।শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইল তার দিকে।দম আটকে গেল।বুকের ভেতর চিন চিনে সুক্ষ্ম ব্যাথা অনুভব করল।যাকে ঘিরে এতদিন যাবৎ নিজের অনুভূতি গুলো একটু একটু করে সাজাচ্ছিল।সেই লোকটা আজ তাকে এভাবে বেঁধে রেখেছে।অপহরণ করেছে।কেন?খারাপ কোনো উদ্যেশ্য?তা না হলে এভাবে কেন অপহরণ করবে তাকে? মুহূর্তেই যেন তার সাজানো অনুভূতি গুলো ভেঙে চুরমার হলো। অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে রইল মানুষটির দিকে।ওমর দেখল সেই দৃষ্টি।তাচ্ছিল্য হেসে চেয়ারে শরীর এলিয়ে দিয়ে বলল,
“কি দেখছিস এভাবে?আগে কখনও দেখিস নি আমায়?প্রথম দেখলি?”
আয়াত উত্তর দিল না।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল।যেই মানুষটাকে সে দেখেছিল চিনেছিল সে মানুষটা এ নয়।তার ব্যবহার আমায়িক।কথা বার্তা রুচিশীল।আয়াত কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে মুখ খুলল,
“আপনি?”
ওমর সোজাসোজি বসল।আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হুম,আমি।”
আয়াত আবার ক্ষীণ হয়ে আসা কণ্ঠে বলল,
“আমাকে এখানে কেন এনেছেন?”
ওমর কথা বলল না।চেয়ে রইল আয়াতের দিকে।আয়াত কে সে ওঠাতে চায় নি।তার লক্ষ্য ছিল মীরা। এজন্যই কত কসরত করে ভুয়া কাগজ দিয়ে ক্ষমতাধর মানুষদের ব্যবহার করে ডাক্তার সেজেছিল সে।কিন্তু ঠিক সময়ে এসে ওই ব্যরিস্টার তার বউকে সরিয়ে নিয়ে গেছে।তবে ওমর কাচা খোলোয়াড় নয়।তার কাছে দ্বিতীয় অপশন আছে।আয়াত….যার সাথে সে ছয়মাস যাবৎ পিরিতের আলাপ করেছে।ওমর হাসল।আয়াতের দিকে খানিকটা ঝুকে উত্তর দিল,
“স্বর্থের জন্য।”
বুকের ভেতরটা মোচড় দিলো আয়াতের।ঠকে গেছে সে।খুব বাজে ভাবে ঠকে গেছে।সে কারো খেলার গুটিতে পরিণত হয়েছে।ব্যবহার করা হচ্ছে তাকে।তার ভাবনার মাঝে আরেকটি কণ্ঠ কর্ণপাত হলো।
“ভাই,মাইয়া তো বিয়াইত্তা।”
ওমরের ভ্রু কুঁচকে এলো।তাকালো আয়াতের দিকে।
“তোর বিয়া হইছে?”
আয়াত আতকে উঠল।বুঝল তারা হায়াতের কথা বলছে।এরা হায়াতে কোনো ক্ষতি করতে চাইছে না তো? আয়াত কে কিছু বলতে হলো না তার আগেই নির্মল আবার বলল,
“হো ভাই,আমি দেখছি তো ওইদিন কোর্টে। কিন্তু তখন চিকনা আছিল।এখন একটু মোটা হইছে।বিয়ার পর তো মাইয়া গো শরীর এমনেই বাড়ে বুঝেনই তো।”
ওমর আয়াতের শরীরের উপর থেকে নিচে দৃষ্টি ফেলল।সেই দৃষ্টিতে আয়াতে গা ঘিন ঘিন করে উঠলো।চোখ সরিয়ে নিল অন্যদিকে।
“ভালোই তো খেলতে পারিস।ঘরে একজন রেখে বাইরেও নাগর জোটানোর ধান্দা আছিল।মা*গীর দেখি জ্বালা অনেক হা?”
আয়াতের পুরো শরীর ঘৃণায় রি রি করে উঠল।কঠিন চোখে তাকালো ওমরের দিকে।ওমর পাত্তা দিল না সেই দৃষ্টি।ঠোঁটের কোণে বিকৃত হাসি ঝুলিয়ে বলল,
“কয়জন লাগে তোর?একজন দিয়া মন ভড়ে না?”
আয়াতের কান গরম হলো।সহ্যের সীমা ছাড়ালো।রাগে ঘৃণায় জ্ঞানশূন্য হয়ে থুতু ছুড়ল ওমরের দিকে।ওমর হতভম্ব।নিজের বুকের ওপর থুতুর অস্তিত্ব অনুভব হতে মাথায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো তার।চোখ মুখ শক্ত করে এগিয়ে এলো আয়াতের কাছে।শক্ত হাতে খামচে ধরল আয়াত কোঁকড়ানো চুল।মাথা টেনে নিয়ে এলো নিজের মুখ বরাবর।
“শা*লী তোর এতো বড় স্পর্ধা তুই আমাকে থুতু ছুড়িস।”
“ভাই আস্তে ধরেন।নাজুক মাইয়া।”
ওমর চোখ গরম করে তাকালো নির্মলের দিকে।নির্মল দমে গেল।চোখ নামিয়ে নিল।ওমর আবার তাকালো আয়াতের দিকে।সাথে সাথে চোখে চোখ পড়ল।থমকালো ওমর।সাথে তার হৃদস্পন্দন।জলে টইটম্বুর বিলের ন্যায় আঁখি জোড়ায় চেয়ে রইল কিছুক্ষণ।সেই চোখে কি যেন ছিল আলগা হয়ে গেল আয়াতের চুল খামচে ধরা ওমরের হাত।চোখ সরিয়ে নিয়ে দূরে সরে এলো।নির্মল কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“এই শা*লীরে আমার সামনে থেকে সরা নাইলে আ….”
বাকি কথা উচ্চারণ করতে পারল না।তার আগেই আবারো একদলা থুতু এসে পড়ল তার কোমড়ের একপাশে।ওমর ক্ষিপ্ত হলো।লাথি দিয়ে সামনের চেয়ারে ছুঁড়ে ফেলে গর্জন করে উঠলো,
“তোরে কইছি এই মাইয়া রে আমার সামনে থেইকা সরাইতে।তাইলে দাড়ায় আছোস ক্যান শু*য়োরের বাচ্চা?”
কথা শেষ করে ওমর নিজেই দাড়ালো না ওখানে। ছোট্ট কুটির টা থেকে বেরিয়ে এলো।নির্মল ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। মুখের ভঙ্গিমা অদ্ভুত করে বলে উঠলো,
“যত দোষ নির্মল ঘোষ।সরাইতে কইছে কিন্তু সরামু কুন জায়গায়?এনে কি আলাদা কোনো ঘর আছে নি!”
____
রাগে মাথা ছিড়ে যাচ্ছে ওমরের।এইটুকুন একটা মেয়ে তাকে দুই দুই বার থুতু দিয়েছে।কত বড় স্পর্ধা এই মেয়ের।এই মেয়েকে তো সে কেটে টুকরো টুকরো করে…..আর ভাবতে পারলো না।চোখের সামনে ভেসে উঠলো আয়াতের নির্মল চোখ জোড়া।কি ছিল সেই চোখে।রাগ ঘৃণা হতাশা কষ্ট?ওমর ছটফট করল।অদ্ভুত ভাবে তার রাগ কমে এলো।বুকের ভেতর বিরাজ করল এক অসস্থিকর অস্থিরতা।অসহ্য এক অনুভূতিতে ছেয়ে গেল হৃদয়গ্রাহী।কেন যেন তার সহ্য হচ্ছে না আয়াতের ওই দৃষ্টি।ওমর দুই হাতে তার মুখমন্ডল চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস ফেলল।অতঃপর একহাতে মাথার চুল খামচে ধরে এদিক ওদিক করতে করতে বিড়বিড় করলো,
“এ বিবাহিতা।ও বিবাহিতা ওমর।”
_____
সন্ধ্যায় খাবার জন্য আয়াত কে শুকনো রুটি ডাল দেওয়া হলো।দুপুর থেকে কিছু খাওয়া হয়নি তার। সকালে বেরিয়েছিল।তারপরই এরকম একটা ঘটনা।নির্মল তার হাতের বাঁধন খুলে দিল। কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল আয়াতের শরীরের ওপর।আয়াতের গা ঘিন ঘিন করে উঠলো।মুখ ফিরিয়ে নিল অন্যদিকে।নির্মল তার হাত খুলে রুটির থালাটা এগিয়ে দিল।
“এই নে খেয়ে নে এটা। দুপুরে তো কিছু খাসনাই।”
আয়াত কথা বলল না।ঘৃণা হচ্ছে তার এই লোকগুলোর প্রতি।ওমর এগিয়ে এলো। তাকালো আয়াতের দিকে।
“কি সমস্যা? দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
“ভাই,খাচ্ছে না তো?”
ওমর এগিয়ে এলো। নির্মলের হাত থেকে থালাটা নিয়ে আয়াতের হাতে জোড়ে চেপে ধরে বলল,
“চুপচাপ খাবি।একদম দে*মা*গ দেখাবি না।তোর দে*মা*গ দেখার জন্য এখানে কেউ বসে নেই।”
কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে আসার জন্য পা বাড়িয়েও থেমে গেল। নির্মলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?যা এখান থেকে।”
নির্মল থতমত খেয়ে আয়াতের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চলে গেল ওখান থেকে।ওমর ও আর দাঁড়ালো না। কুটির থেকে বেরিয়ে এলো। আয়াত হাতের থালাটা ছুড়ে ফেলতে চেয়েও ফেলল না।সে ভীষন খাদ্যপ্রেমী মেয়ে।ক্ষিদে সহ্য করতে পারে না। সেখানে আজ সেই সকালের পর থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি।আয়াত স্থান কাল পরিস্থিতি ভুলে রুটি ছিড়ে মুখে দিল।
____
মির্জা বাড়ির সকলেই চিন্তিত।হুট করে আয়াতের গায়েব হয়ে যাওয়াটা হজম হচ্ছে না কারোরই। শাহানা মির্জা কেঁদে কেটে অস্থির। সালমান সুলেমান এখনো বাড়ি ফেরেনি।এখন রাত দশটা।আয়াতের পরিচিত সবার কাছেই খোঁজ নেওয়া হয়েছে কোথাও নেই আয়াত। সুলেমান পুলিশ নিয়ে সাথে সাথে কোথাও একটা বেরিয়েছে।সালমান তখন ও এখানে ওখানে খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে।
____
রাত এগারোটার দিকে নির্মল ছুটে এলো ওমরের কাছে। আতংকিত গলায় বলল,
“ভাই,ওরা আমাদের খোঁজ পেয়ে গেছে।ব্যারিস্টার পুলিশ নিয়ে এদিকেই আসছে।”
ওমরের ভ্রু কুঁচকে গেল।তার এই গোপন আস্তানার কথা তার দলের লোকেরাও জানে না।এমন কি তার বাপ ও নয়।তাহলে সুলেমান জানলো কিভাবে?হাতের সিগারেট টা মাটিতে ফেলে পা দিয়ে পিষে কুটিরের ভেতর ঢুকলো ওমর।আয়াত হাত পা বাঁধা অবস্থায় ঝিমুচ্ছে।ওমর এগিয়ে গেল তার দিকে।হুট করে তার গলায় থাকা লকেট টা হাত দিয়ে চেপে ধরল।আয়াত চমকে উঠল।ভয় ধুকপুক করল বুক।ওমরের সোজা প্রশ্ন,
“এই লকেট কে দিছে তোরে?”
আতংকে জর্জরিত আয়াত চটপট বলে ফেলল,
“ভাই দিয়েছে, সুলেমান ভাই।”
রাগে চোয়াল শক্ত হলো ওমরের।হাত দিয়ে লকেটটা ছিড়ে দূড়ে ছুড়ে ফেলল।শা*লার ব্যারিস্টারের মগজ এতদূর অবধি চলেছে।লকেটের মধ্যে লোকেশন ট্র্যাকার সেট করেছে।আয়াত ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। গলায় লাল দাগ পড়ে গেছে।হয়তো ছিলেও গেছে অনেকাংশ।ওমর আয়াতের হাত পায়ের বাঁধন খুলে তার বাহু খামচে ধরে টানতে টানতে কুটির থেকে বেরিয়ে গেল।
____
সুলেমান যখন পুলিশ নিয়ে কুটিরের ভেতর আসে তখন কুটির সম্পূর্ণ ফাকা।শুধু একটা চেয়ারে কিছু দড়ি এলোমেলো ভাবে পড়া। সুলেমান এদিক ওদিক তাকালো।আয়াতে লকেট টা পড়ে থাকতে দেখল একপাশে। সুলেমান হাতে তুলে নিল সেই লকেট টা।চোয়াল শক্ত হলো। বুকের ভেতরটা মোচড় দিলো।আয়াত ঠিক আছে তো?
চলবে🌺