শিরোনাম পর্ব-০৮

0
81

#শিরোনাম
#পর্বসংখ্যা_০৮
#মুসফিরাত_জান্নাত

পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী নামক প্রসঙ্গ উঠলে পুরুষেরা কাকের জাত হয়ে যায়।তখন তারা একে অপরের মাংস খেতে পছন্দ করে না।বরং ঐক্যবদ্ধ থেকে নারীদের তাদের নিকট মাথানত করা দেখতে পছন্দ করে।এমনিতেও জাতের প্রশ্নে এক পুরুষ অন্য পুরুষের অবজ্ঞা, অপমান, হেয় প্রতিপন্ন করে চলে না।অথচ নারীদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা ঠিক তার উল্টো।তারা নিজের চোখের সামনে অন্য নারীর সম্মাননা সহ্য করতে পারে না।নারীদের টেনে হিঁচড়ে নিচে নামানোর ক্ষেত্রে একজন নারীর অবদানই সবচেয়ে বেশি।কোনো ঘরে মেয়ে শিশু জন্ম নিলেও ঘরের নারীরা সবচেয়ে নারাজ হয়।এর কারণও অবশ্য আছে।কোনো নারীই চায় না তারা যতটুকু অসম্মান, অবজ্ঞা এ সমাজে পেয়ে এসেছে তার ঔরসজাত সন্তান সেই অসম্মানের শিকার হোক।ঠিক এই চিন্তাধারা থেকে নিজেরাই নিজেদের কষ্টের হেতু হয়ে যায়।ব্যপারটা ঈর্ষা, হিংসা, ভুল চিন্তাধারা যেমনই হোক না কেনো? এক নারীর চোখের পানি ফেলার কাজ অন্য নারী দ্বারা বেশিরভাগ সময় সংঘটিত হয়।জেরিনের কঠোরতার আড়ালে চোখে যত ব্যাথার দানা ছিলো তা স্পষ্টই দেখতে পেয়েছে কনা।আর পাবেই না কেনো?সে নিজেও তো এমন ব্যাথার দানা চোখে নিয়ে আগুন জ্বালাচ্ছে ভুবন মাঝে।সেই আগুনে একদিন ঝলসে যাবে এই সংসার।যে সংসার তার গর্ভের সন্তানকে গ্রহণ করতে অন্য কাওকে কষ্ট দিতে দুদণ্ড ভাবেনি।কনার রাগ লাগে এটা ভাবলেই।গর্ভাবস্থায় সে যে রাজ্যেই থাকুক, কাগজে কলমে জুবায়ের এর বউ হয়ে তাকে বাঁচতে হবে।সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পরই মিলবে মুক্তি। এই কয়টা মাস গলায় বিঁধে থাকা কাঁটার মতো জুবায়েরকে বয়ে বেড়াতে হবে তাকে।তীব্র মনোকষ্টে পুড়ে।তবে জুবায়ের ও তার পরিবারকে কেনো সে শান্তিতে থাকতে দিবে?মোকছেদ তাকে প্রায় ত্যাগ করেছেন।তিনি ভেবেছেন এমনটা করলে কনার কোনো যাওয়ার জায়গা থাকবে না।অগত্যা কনা জুবায়ের এর সংসার খা’মচে পড়ে থাকবে।মোকছেদ এর ধারণা ভুল।একজন শিক্ষিত নারী হিসেবে কনার নিজের জীবন নিজে চালাতে খুব একটা বেগ পোহাতে হবে না।নিজের ঠাঁই নিজেই গড়ে নিতে পারবে সে।কিন্তু সে এখন কোথাও যাবে না।যারা তার গলার কাঁটার মতো বিঁধে থেকে তাকে কষ্ট দিবে, তাদের উগলে দিয়ে নিজে মুক্তি পাওয়ার আগ অবধি তাদের ঘাড়ে বসে শোধ তুলে নিবে সে।এটা তাকে যতটা কষ্ট দিবে ততটাই প্রশান্তি দিবে।জুবায়ের এমনিতেও আজ জেলে যাবে।এ বাড়ি থাকবে শুধু মনোয়ারা।মাঝে মধ্যে জিনাতের দর্শন মিলবে।এদের দুজনের জীবন ন’রক বানাতেই থেকে যাবে সে।আর তা আজ থেকেই সংঘটিত হবে।

কনার এই মনোভাব অজানা তাদের। ফলে তার থেকে যাওয়া দেখে খুশিই হয় জুবায়ের-এর পরিবার।পুলিশ যখন তোড়জোড় করে জুবায়েরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আর একটু সময় নেয় সে।কনার হাতে বাড়ির চাবি বুঝে দিয়ে বলে,

“আমার নিশ্চিত কারাদণ্ড হবে।কয় বছরের জন্য তা জানি না।এতোদিন এই সংসারের হাল ধরে রেখো তুমি।আমার মা বোনকে দেখে রেখো।আমার অনাগত বাচ্চার খেয়াল রেখো।আর আমাকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করো।এ দেশে ঘুষ দিলে সবই সম্ভব।দ্রুত জামিন মিলবে আশা করছি।”

জুবায়ের এর করুন কণ্ঠের কথা শুনে বাঁকা হাসে কনা।হেঁয়ালি করে বলে,

“নিজের খেয়াল আমি ষোলআনাই রাখবে।অনাগত সন্তানের খেয়াল কতটুকু রাখবো তা পরে ভেবে দেখবো।তবে তোমার মা বা বোনের কোনো খেয়াল আমি রাখতে পারবো না।তোমার জামিন নেওয়ার জন্য কোনো উকিলও ধরবো না।তুমি জেলে পঁচে ম’রলেও আমার কিছু না।এ সংসারের সবকিছু পায়ের উপর পা তুলে ভোগ করবো আমি।কিন্তু কোনো দায় দ্বায়িত্ব নিতে পারবো না।ওসব তোমার মা বোনকে বুঝে দিয়ে যাও।বাড়ির চাবি ও টাকার হিসাবটুকু কেবল আমার থাকুক।”

কনার এমন কথায় ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ ঘটলো যেনো।জুবায়ের বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বললো,

“কি বললে এটা?আমি জেলে পঁ’চে মরলেও তোমার কোনো কিছু না?এগুলো কোনো আদর্শ স্ত্রীর কথা হতে পারে?”

কনার বাঁকা হাসি আরও প্রশস্ত হয়।সে গাছাড়া ভাবে বলে,

“আমি তো কোনো আদর্শ স্ত্রী নয় জুবায়ের।তোমাদের কাছে তো আদর্শ স্ত্রীর কোনো মূল্যায়ন নেই।তোমাদের কাছে মানুষেরও কোনো মূল্য নেই।মূল্য কেবল সন্তান জন্মদানে।ও মেয়ে আদর্শ স্ত্রী ছিলো।এতো যত্নে সংসার আগলে রেখেও তোমাদের কাছে মূল্যায়ন পায়নি।আমি তাই ওর মতো কাজ করে এ সংসার আগলে রাখতে পারবো না।তোমার মা বা এ পরিবারের অহেতুক কোনো দ্বায়িত্বও আমি নিতে পারবো না।আমি কেবল পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে বসে খাবো। আর বছরে বছরে নতুন সন্তান আসার সুখবর দিবো।ওদের পেলেপুষে বড় করার জন্য শক্তি সামর্থ্য তোমার মা ও বোনকে অর্জন করতে বলো।ভাগ্যক্রমে জেল থেকে ফিরলে নিজে সেই প্রস্তুতি রেখো। বাচ্চার কোনো ত্যানা কাঁথা থেকে শুরু করে কিছুই আমি ধুয়ে দিবো না।তাদের সামলাতে গিয়ে সব নাজেহাল কেবল তোমরা ভোগ করবে।তোমার মা’কে ভালোমতো সেসব বুঝিয়ে দিয়ে যেও।হবু বংশের বাতির ও বাতিঘরের কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে পারবে তো?না হলে কিন্তু এ বাড়ি তার ঠাঁই হবে না বলে দিলাম।”

কনা কথায় কি ইঙ্গিত দিচ্ছে তা বুঝতে পেরেই চিন্তায় হাঁড় হিম হয়ে আসে মনোয়ারার।তিনি কম্পিত গলায় বলেন,

“এসব তুমি কি বলতেছো বউ?কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এগুলা বলে?”

কনা তাচ্ছিল্য করে বলে,

“বিবেগ বোধ সম্পন্ন কোনো সুস্থ মানুষ তো এতো আয়োজন করে কারো ঘরও ভাঙতে পারে না আম্মা।সব জেনেশুনে বিয়ে করে তার সবকিছু ভোগ করে তার মনকে তো এভাবে ভাঙতে পারেনা।আপনারা তো সেটাই করেছেন।তার মানে আপনারাও সুস্থ নয়।অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষদের ভীরে থেকে নিজের মস্তিষ্ক সুস্থ রাখি কি করে বলুন?”

“ও মা, এগুলা কি শুনতাছি আমি?জুবায়ের এইটা কেমন মেয়ে বিয়ে করছে?”

ভেসে আসে জিনাতের আফসোসের সুর।কনা হাসে।সবে তো আফসোসের সুচনা।এটার সমাপ্তি কোন পর্যায়ে যেয়ে হবে কে জানে?জুবায়ের এর সাথে কনার বিচ্ছেদ ঘটার আগ অবধি কত যে দুর্ভোগ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে তা কে জানে?সব সুদে আসলে তুলে নিবে কনা।সবটুকু অন্যায়ের শোধ তুলবে।তার বাবা ও দাদীর প্রতি শোধ তুলবে।শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।কনা হেঁয়ালির সুরে বললো,

“একজন প্রকৃত মানুষকে দূরে ফেলে দিয়ে কেবলই সন্তান জন্মদানে সক্ষমতা সম্পন্ন মেয়ে বিয়ে করেছে আম্মা।চিনতে পারছেন না এখনো?”

বাঁকা হেসে কথাটা বললো কনা।যা শুনে আহাম্মক হয়ে গেলো জুবায়েররা।আর কনা?সে রহস্য করে হেসে শাড়ির আঁচলে চাবি বাঁধলো।ডান হাত দিয়ে চাবি দুলাতে দুলাতে সেখানে থেকে প্রস্থান করতে উদ্যত হলো।হুট করে কি মনে হতেই পা থামালো।ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,

“তোমাদের ফুলের বিছানায় কাঁটা হিসেবে আমাকে ঢুকিয়েছো জুবায়ের।কেবলই অন্য নারী ফুলটাকে ক্ষ”তবিক্ষ’ত করে এ বাড়ি থেকে বিদায় করতে।অথচ কাঁ’টা তো কাঁ’টাই।সে নারী বা পুরুষ কিছুই চেনে না।সে অন্ধ চোখে সবাইকেই ক্ষ’তবিক্ষ’ত করে।এই কাঁটার আঘা’তে তুমিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে মনে রেখো।নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই ফে’সে ম’রবে।”

জুবায়ের নরম কণ্ঠে জবাব দেয়,

“চিন্তা করো না কনা।ওই অন্ধ চোখে দেখার আলোটুকু আমি সযত্নে জ্বেলে দিবো।তোমাকে ভালোবাসা ফুলটুকু সযত্নে তুমিই ঘিরে রাখবে তখন।অন্য ফুলের কবল থেকে তোমার ফুলের নিরাপত্তা দিতে।”

“আলো যদি সত্যিই জ্বেলে দাও। নারী কাঁটা হওয়ার দরুন নারী ফুলকেই নিরাপত্তা দিবো।কোনো প্রতারক পুরুষকে নয়।”

গোঁয়ার হয়ে পাল্টা জবাব দেয় কনা।তার তিরিক্ষি কণ্ঠে অসহায়বোধ করে জুবায়ের।পুলিশ কনস্টেবল আর সময় দেয় না তাকে।ধরে নিয়ে চলে যায় শিকের খাঁচায় বন্দি করতে।মনোয়ারা ও জিনাত হু হু করে কেঁদে ওঠে ভাঙা পায়ের ভাইকে জেল বন্দী হতে দেখে।জিনাত পিছু ছুটে আশ্বাস দিয়ে বলে,

“তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া।এই কাল নাগিনী আমাদের
কিছু করতে পারবে না।একে উচিত শিক্ষা আমি ঠিকই দিয়ে ফেলবো।মা আমার ভরসায় থাকবে।তোমাদের জামাইকে দিয়ে ঠিকই তোমায় ছাড়িয়ে আনবো।তুমি নিশ্চিন্ত থেকো।…”

ধোঁয়া উড়িয়ে পুলিশের জিপ গাড়ি চলে যায়।জিনাতের কথা আর শোনা যায় না।জুবায়ের শুনতেও চায় না।সে তখন বিষম ভাবনায় ডুব দিয়ে আছে।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে ভাবছে, ভাগ্য তাকে এ কোন নদীতে ফেলে দিলো?তার বুকে যে আশ্রয় খুঁজে বাঁচতে চেয়েছিলো তাকে সে ঠাঁই দিলো না।যাকে সে তার বুকে ঠাঁই দিলো সে পরিস্থিতির চাপে থাকলো ঠিকই।কিন্তু ভালোবেসে না।চরম নির্মমতায় তার বুককে দলিত মথিত করে।তার বুকে অতি আগ্রহের সহিত আশ্রয় খোঁজা নারীকে ক্ষণে ক্ষণে মনে করিয়ে দিয়ে।তাকে মানসিক ও শারিরীক ভাবে নিঃস্ব করে দিয়ে।
_______
সময়ের বহমানতায় খুব দ্রুতই দিন কতক চলে গেলো।জেরিন সেদিনই মামলা দায়ের করেছিলো।জুবায়েরকে থানায় বন্দী রাখা হয়েছিলো।নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মামলা মোকদ্দমা চালিয়ে আজ তার রায় হলো।জুবায়ের এর সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়ার চেষ্টা জেরিনের সফল হলো।প্রায় সাত বছর কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে কষ্টের সাথে দিনাতিপাত করতে হবে তাকে।তালাকনামায় সই করার আগেই কাবিনের বিপুল সংখ্যক টাকা দিতে গা কা’মড়ালেও দিতে হয়েছে তার পরিবারকে।কনা সত্যি কোনো উকিল ধরেনি।জুবায়ের এর পক্ষে কোনো উকিল লড়তে চাইলে তাদেরও জুবায়ের এর অর্থ দিয়ে থামিয়ে দিয়েছে।কৈ এর তেলে কৈ ভাজার মতো জুবায়ের এর জীবন এই কয়দিনেই ভাজা ভাজা করে ফেলেছে মেয়েটা।তার অন্তরের আগুন দিয়ে ঝলসে দিয়েছে জুবায়েরকে।তার আর রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।কনার প্রতি চরম বিতৃষ্ণা মনে চেপেছে জুবায়ের এর।জেরিনের প্রতি অবশিষ্ট থাকা মনের শীতল কোন কঠোর হয়ে গিয়েছে।অনুতাপ তখনও ঠিকঠাক জ্বলে ওঠেনি।কিন্তু জ্বলে গিয়েছে তার জীবন।ভাঙা পায়ে বদ্ধ কারাগারের দূর্ভোগময় জীবন পেয়ে।তার অসহায় অবস্থায় যেখানে কেও তার এতটুকু সাহায্য করবে না।কেও না।
________
জুবায়ের জেরিনকে তালাক দিতে চায়নি।কিন্তু জেরিনের সিদ্ধান্তের জয় হয়েছে।আজ রায় মোতাবেক আনুষ্ঠানিকভাবে কোর্টে বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের।এতে জুবায়ের এর পরাজয় ও জেরিনের জয় হলেও থমকে আছে জেরিন। বুকের মাঝে উত্তাল ঝড় বইছে যেনো।সে যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না বিচ্ছেদটা সত্যি হলো।সি নিজেই এই বিচ্ছেদ নিলো।কেমন এক ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে সে।কোর্টে কাজ শেষ হলেও বারান্দায় তখনও দাঁড়িয়ে আছে।কেমন এক অনুভুতি হচ্ছে তার।সে জুবায়েরকে পেয়েও দেখেছে।আজ হারিয়েও দেখলো।সে আজ বুঝতে পারলো এতো ভালোবাসার মানুষগুলো কাছে পেয়ে পাগলামি কমে আর না পেলে ধীরে ধীরে পাগলামি কেনো বাড়ে।কেনো হারানোর যন্ত্রণায় মানুষ পাগল হয়?না পাওয়ার কষ্ট যে পাওয়ার আনন্দের চেয়ে কতটা তীব্রতর, কতোটা যন্ত্রণাদায়ক, তা আজ বুঝলো সে।বুক ভেঙে যাচ্ছে তার।হৃদয় চুরমার হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে বুকের উপর পাহাড় ধ্বসে পড়ছে।যার ভার সইতে না পেরে মাটির বুকে মিশে যাচ্ছে সে।অথচ সকল খারাপ সময়ে প্রেমিকের বুকে মিশে যাওয়ার কথা ছিলো তার।মানুষের ভাগ্য বুঝি এভাবেই বদলায়?কষ্টে বুকে পাহাড় জমে।বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।চোখ তার তখনও শুকনো।কষ্ট কি ছুঁয়ে দেয় না তাকে?নাকি কষ্টে কেবল চোখ দু’টো জ্বলেই যায়, ভিজতে চায় না?জানে না জেরিন।তবে সে আজ অন্য কিছু জেনেছে।পাশে দাঁড়ানো মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,

“সব সময় পেয়েও পাওয়া হয় না জানো?আবার না হারিয়েও হারানো হয়ে যায়।সম্পর্ক বর্তমান থেকেও তা অতীত হয়ে যায়।সকল অধিকার থেকেও অধিকার নাই হয়ে যায়।আজ জুবায়ের এর উপর সকল সম্পর্ক হারালাম আমি।নিজে চেয়েই হারালাম।তাও মানতে পারছি না।কি অদ্ভুত!”

হুট করেই চোখ ভর্তি আঁধার অশ্রু আসতে চাইলো।মুখে বোবা হাসি ফুটায় সে।সে খেয়ালও করেনি পাশে তার মা নেই।তবে অন্য কেও ঠিকই দাঁড়িয়ে আছে।জেরিন চেনে তাকে।লোকটাও জেরিনকে চেনে।মেয়েটি অতি পরিচিত তার।তাই তো পরিচিতার মনে চাপা বেদনায় নির্ভার হয়ে জবাব দেওয়ার দ্বায়িত্ব লুফে নেয়।জেরিনের সুরে সুর মিলিয়ে উদাস গলায় বলে,

“সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা বোঝা বড়ই দায়।মাঝে মধ্যে না হারিয়েও হারানো হয়ে যায়।আবার চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে জেনেও ফের পাওয়া হয়ে যায়।আসলেই অদ্ভুত!”

কথাটা বলেই সুক্ষ্ম হাসি ছড়িয়ে দেয় খোঁচা দাঁড়িতে আবৃত সুচারু মুখশ্রীতে।সুঠাম দেহী পুরুষটিকে দেখে জেরিন চমকায়,

“আপনি?”

চলবে