শিরোনাম পর্ব-১২

0
113

#শিরোনাম
#পর্বসংখ্যা_১২
#মুসফিরাত_জান্নাত

তাড়াতাড়ি আজ বাড়িতে ফিরে এলো কমল।কাপড়চোপড় খুলে ফ্রেশ হয়ে বোনের ঘরে গেলো সে।দরজায় দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইলো,

“আসবো আপু?”

কমল জেরিনের বছর দু’য়ের ছোট।ছোট বেলা থেকে ঢের সখ্যতা তাদের।জেরিন বাড়ি ফেরার পর থেকে রোজ রোজ দোকান থেকে ফিরে তার ঘরে সময় কাটায়।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।জেরিন এতোটা পথ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে মাগরিবের নামায আদায় করে বিশ্রাম নিতে শুয়েছিলো।ভাইয়ের আগমনে উঠে বসলো সে।থ্রি পিছের ওড়না ঠিকঠাক সামলে নিয়ে বললো,

“আয়।অনুমতির কি আছে?”

কমল হাসলো। কিছু বললো না।ঘরে ঢুকে বিছানার এককোনে বসে প্রসঙ্গ পাল্টালো,

“গিয়েছিলো ও গ্রামে?”

জেরিন মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।কমল জানতে চাইলো,

“কেমন দেখলে?চলবে?”

“হ্যাঁ।গাছের পাতাগুলো আমার কাজের জন্য সম্পূর্ণ পরিপক্ক।গাছও অনেক।গ্রামের মেয়েদের সাথেও কথা বলে এসেছি।অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে।আশা করছি সফল হবো।”

কমল স্বস্তি পেলো এটা শুনে।জবাবে ভাবুক হয়ে বললো,

“তাহলে তো হলোই।এখন শহরে যেতে হবে একবার।লার্ভা, বাঁশের ছাঁচ সহ আনুষঙ্গিক অনেক কিছু কেনা প্রয়োজন।তুমি একটা লিষ্ট তৈরী করে দিও।আমি কালই সদরে গিয়ে নিয়ে আসবো।”

জেরিন দ্বিরুক্তি করলো,

“তোর দোকান কামাই দিয়ে যেতে হবে না।কর্মটা যেহেতু আমার।তাই আমি একাই যাবো।”

কমল প্রতিবাদ করতে চাইলো,

“কিন্তু আপু আমি থাকতে তুমি কষ্ট করবে কেনো?”

জেরিন জেদ ধরে বললো,

“আমার জীবন সংগ্রামে কারোর সাহায্য চাই না কমল।নিজে নিজে পুড়ে ঠিক কতটুকু অর্জন করা যায় তা দেখতে চাই আমি।যেহেতু বাঁচাটা নিজের জন্য।তাই নিজের ঢাল নিজেই ধরতে চাই।এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করিস না।কোনো লাভ হবে না।”

বোনের জেদ মেনে নিলো সে।সেও যেনো দেখতে চায় জেরিন নিজে নিজে সাবলম্বী হোক।যেনো দু’দিন পর তার বউ কিছু নিয়ে জেরিনকে খোঁটা দিতে না পারে।
তার বউ যতই ভালো হোক হাঁড়ি পাতিল এক সাথে থাকলে আওয়াজ ওঠেই।

জেরিনের পরিকল্পনা নিয়ে গল্প তুললো সে।আজ গ্রাম ঘুরে ও মেয়েদের সাথে কথা বলে জেরিনের পরিকল্পনা আরও বিস্তৃতি লাভ করেছে জানালো কমলকে।তার স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাড়ছে।আর এসব যদি ঠিকঠাক বাস্তবায়ন হয় তবে অনেক উপরে উঠবে জেরিন।সে নিজের জন্য বাঁচার সংগ্রাম দিয়ে শুরুটা করলেও অনেকের বাঁচার আশ্রয় হয়ে যাবে সে।কর্মসংস্থান হবে ঢের লোকের।জেরিনের হাত ধরে।

রাতে গল্প করে খেয়েদেয়ে একটা নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দেয় সে।আনুষঙ্গিক কাজে আরও কিছু দিন কাটিয়ে দেয়। সব শেষে আজ শহরে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।কমল আবারও কি বুঝে সঙ্গী হতে চাইলে রাজী হয় নি এবারও।কোথায় কি আছে সব নিজে ব্যবস্থা করে নিবে জানায়।শহর থেকে এইচএসসি কমপ্লিট করা মেয়ের অন্তত এতটুকুতে বিশেষ অসুবিধে হবে না।ফলে হেলেনাও দ্বিরুক্তি করেননি।কিন্তু এমন সময় বাঁধা হয়ে আসে অন্যজন।রাত পার হতে না হতেই আগমন হয় ওয়াসীর মীর্জার।চোখ মুখ গম্ভীর করে সে এসে বলে,

“এসব কি ঠিক হচ্ছে জেরিন?আমি তোমাকে এত এত অফার দিলাম সেসব ঠেলেঠুলে এই পথই বেছে নিতে হইলো তোমার?এছাড়া কি অন্য কোনো উপায় ছিলো না?”

উত্তেজনায় আপনি সম্বোধন ভুলে আবারও তুমিতে নেমে এসেছে সে।জেরিন রাগে না এতে।এই তুমিতে চটচটে ভাব মিশে নেই।কিন্তু আচরণে বেশ ক্রোধ খুঁজে পায় সে।জবাবে নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে,

“না ছিলো না।এটাই আমার জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে।আপনার কোনো সমস্যা এতে?”

যেখানে এ সমাজে গ্রামের মেয়েরা আজও অনেকটা পিছানো মনমানসিকতা নিয়ে থাকে, বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবনটাকে গুটিয়ে রেখে নতুন সংসারে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালায়।সেখানে জেরিনের নিজের জন্য বাঁচতে চাওয়া ও কর্ম খোঁজাকে সাধুবাদ জানিয়েছিলো ওয়াসীর।সাধুবাদ জানিয়েছে গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গও।ওয়াসীর খুশি হয়ে একের পর এক চাকরির অফার করেছে তাকে।চেয়্যারম্যান হওয়ার সুবাদে কখনো সখনো আদমশুমারী বা ট্যাক্স আদায়ের মতো ক্ষণকালীন সরকারী কাজের দায়িত্ব দিতে চাইতো।অথবা অন্যকিছু যা তার আয়ত্তে আছে।শেষবার বলেছিলো গ্রাম থেকে খানিক দূরের বাজারে অবস্থিত কিন্ডারগার্টেনের হেড টিচার করে দিবে।তার কথায় এলাকার সবাই ওঠবস করে।ব্যাপারটা মেনে নিতে বাধ্য সকলে।কিন্তু মেনে নেয়নি জেরিন।অন্য কাওকে পদ থেকে সড়িয়ে নিজে সে পদে বসতে পারবে না সে।তাছাড়া অন্যের কাজ করে দিয়ে গুটি সামান্য বেতন পাওয়ার ইচ্ছাও তার নেই।তার ইচ্ছা বিশাল।সেই ইচ্ছাটা এতোই বিশাল যে এই ভোরের কুয়াশার কা’মড় সয়ে এখানে হাজির হতে করেছে ওয়াসীরকে।মাঝের দু সপ্তাহে নিজেকে যতটা ভালো আচরণের খোলসে আটকে রেখেছিলো তা উন্মোচন করতে বাধ্য করেছে।সে রুষ্ট হয়ে বললো,

“আমার জমিতে কাজ করা এতগুলো মেয়েকে নিজের কাজে পার্মানেন্টলি করে নিচ্ছো। আর বলছো আমার সমস্যা হচ্ছে কিনা?আজব!”

“আমি কাওকে কাজের প্রস্তাব দেইনি।ওরা সেচ্ছায় আমার কাজ করতে এসেছে।ওদের মানাতে পারলে আপনি নিয়ে নিবেন।আমি বাঁধা দিয়েছি নাকি?”

গা ছাড়া ভাবে জবাব দিলো জেরিন।সে জানে এই মেয়েদের যে কাজ সে দিবে তা থেকে এক চুল নড়বে না ওরা।ওয়াসীর সিজনের কাজ করায় এদের দিয়ে। অন্য সময় ওরা বেকার থাকে।তার উপর পারিশ্রমিক দেয় যৎসামান্য।তার কাজ করার জন্য জেরিনের সারাবছরের কাজের অফার ছেড়ে দেওয়া আহাম্মক ছাড়া কেও করবে না।আর তাদের নির্যাতন করে নীল চাষ করানোর মতো দেশ এখন নেই।ফলে তাদেরকে জোর করতে সাহস করবে না ওয়াসীর।অন্তত পরবর্তী নির্বাচনের সময় ওদের ভোট প্রয়োজন।তাই কিছু বলতে পারবে না।এজন্যই না জেরিনের কাছে সে এসেছে।

জেরিনের গা ছাড়া ভাব আরও জ্বালিয়ে দিলো পুরুষটাকে।সে হুমকি দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

“কাজটা তুমি ঠিক করছো না জেরিন।জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়তে চাইছো?ফল ভালো হবে না বলে দিলাম।এমনি তুমি ডিভোর্সী নারী ভুলে যেও না।”

ডিভোর্সী নারী শব্দটা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো জেরিনের।চোখ মুখ শক্ত করে ফেললো সে।শক্ত গলায় জবাব দিলো,

“নিজেকে কুমির ভেবে আমাকে চুনোপুঁটি ভাবার কোনো কারণ নেই চেয়্যারম্যান সাহেব।আমার সাথে লড়তে আসলে আপনার ফলাফলও ভালো হবে না বললাম।ডিভোর্সী নারী বলে হেয় করলেন তো?ডিভোর্সী নারীরা রাগলে কি করতে পারে তা এবার থেকে না হয় সচক্ষে দেখবেন।আপনি চলে যেতে পারেন এবার।আমাকে বুঝিয়ে লাভ হবে না।ওদেরকে ছাড়ছি না আমি।ওরা এখন আমার লোক।আমার!”

মুখের উপর অপমানিত করে ওয়াসীরকে তাড়িয়ে দিলো জেরিন।রাগে গা জ্বলছে ওর।পারলে দু চার ঘা লাগিয়ে দিতো সে।তা সম্ভব নয়।তবে ভবিষ্যতে যা করবে তা ওয়াসীর এর জন্য মোটেও কল্যানকর হবে না।আগুন নিয়ে খেলতে এলে কতটুকু পুড়তে হয় তা সে দেখিয়ে ছাড়বে ওয়াসীরকে।মেয়েদের হেয় করা তাই না?

এতোদিন হলো হাটে মাঠে ঘাটে সব জায়গায় জেরিনকে ফলো করার কারণ এবার স্পষ্ট হয়ে গেলো।জেরিন অবশ্য আগেই আন্দাজ করেছিলো ব্যাপারটা।তবে কিছুটা রাখ ঢাক ছিলো।এখন থেকে তা আর রইলো না।ফলে বিষয়টা সহজ হয়ে উঠলো জেরিনের জন্য।তাকে আর অস্বস্তি নিয়ে ওয়াসীরকে সঙ্গ দিতে হবে না।সে নিজের মতো চলতে পারবে।একা অথচ শক্তপোক্ত বটবৃক্ষ হয়ে।

রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো ওয়াসীর।এমন সময় সে বাড়িতে প্রবেশ করে দু ক্রোশ দূরে অবস্থিত গ্রামের ঝি হালিমা।এ পাড়ায় শ্বশুর বাড়ি তার।দারুন একটা খবর আছে এমন মুখোভঙ্গি নিয়ে সে বলতে বলতে ঢুকলো,

“অন্যায়ের বিচার আল্লাহ করে রে জেরিন।ঘটনা শুনছোস নাকি?….”

এতটুকু শুনে পা থামালো ওয়াসীর।সে ভাবলো কথাটা তাকে ইঙ্গিত করে বলা হলো।বাকিটা শুনতে পিছন ঘুরে চাইলো সে।হালিমা তার তোয়াক্কা না করে বললো,

“জুবায়ের এর মা আর বোনের পাঁচ বছরের জেল হয়ে গেছে।জানিস কিছু?…”
________
মেয়েরা বোধহয় মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে তিনবার।প্রথম কনসিভ করার পর।দ্বিতীয়ত বেবির প্রথম মুভমেন্ট অনুভব করার পর।আর তৃতীয়ত ডেলিভারির পর।সে হিসেবে কনা আজ দ্বিতীয় বারের মতো মাতৃত্বের স্বাদ পেলো।মাঝের কয়েকমাস টিউশনি, পড়াশোনা সহ নানাবিধ ব্যস্ততায় কেটেছে তার।দিনগুলো এত ব্যস্ততায় কেটেছে যে এর মাঝে জুবায়েরদের বা তার বাবা ও দাদী কারোর দেয়া আ’ঘা’ত মনে করার ফুরসত পায়নি।তার ধ্যান জ্ঞান এখন একমাত্র সন্তানকে ও নিজের জীবনকে ঘিরে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তার মাঝের ক মাসের অতীত ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট লোকেদের ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছে সে।তাতে সফলও হয়েছিলো খানিক।কিন্তু এ মুহুর্তে এসে তা ভেস্তে গেলো।তার প্রথম বার মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার পরপরই যেমন ঝড়ের মতো এক বিদঘুটে ঘটনা ঘটলো জুবায়ের এর সত্যিটা জেনে।আজও তেমন মুরাদ এসে তার মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করাকে তিক্ত অভিজ্ঞতায় পূর্ণ করে দিলো।যে অতীতের ছায়া সে তার ও তার অনাগত বাচ্চার জীবন থেকে সড়িয়ে রাখতে চাইছে তা ব্যর্থ হয়ে গেলো হোস্টেল এর গেস্টরুমে এসে মুরাদের উপস্থিতি দেখে।
সে কাঠ হয়ে গেলো।গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করলো,

“আপনি এখানে এসেছেন কেনো?”

মুরাদের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।ততদিনে শীত চলপ গিয়ে গরম পড়ে গিয়েছে।শার্টের হাতায় মুখের ঘামটুকু মুছে সে জবাব দিলো,

“আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

কনা কাঠ হয়ে দাঁড়ালো।থমথমে মুখে বললো,

“ও বাড়ি সংক্রান্ত কোনো কথা বলে বিরক্ত করবেন না আশা করছি।ওদের বিষয় সম্পত্তি নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।ওসব দেখভাল আমি করতে পারবো না।ওদের সাথে সম্পর্কটা আমি মানি না।আশা করছি বুঝতেই পারছেন।”

মুরাদ প্রতিবাদ করলো,

“ব্যাপারটা তা নয়।আমি নিজের প্রয়োজনে আপনার কাছে এসেছি।”

কনা ভ্যাবাচ্যাকা খায়। মুরাদের নিজের প্রয়োজনে এসেছে তার কাছে?সে কি কোনো সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা বড় মাপের কেও নাকি যে তার কাছে কেও নিজের প্রয়োজনে আসবে?যেখানে সে নিজেই নিজের প্রয়োজন মেটাতে ব্যস্ত সেখানে এই আহাম্মক আবার বলে কি?অবাক না হয়ে সে পারলো না।মুরাদ বলতে লাগলো,

“মাঝের এ কয়েকটা মাস হন্যে হয়ে খুঁজেছি আপনাকে।কোথাও পাইনি।কলেজে এসেছি বেশ কয়েকবার।মেসে মেসে ঘুরেছি।হোস্টেলে এসেছি।কিন্তু কেও খোঁজ দিতে পারেনি।আপনার সার্টিফিকেট নাম তো আর জানি না।কলেজে হোস্টেলে কনা নাম বললে কনা নামের অন্যান্যদের দেখায়।আপনার বাবা বা দাদীও কোনো খোঁজ দিতে পারেনি।কত জায়গায় যে খুঁজলাম!…”

তপ্ত শ্বাস ছাড়লো সে।যোগ করলো,

“…অতঃপর কাজী অফিসে গিয়ে আপনার নাম দেখলাম ফারজানা ইয়াসমিন লেখা।জুবায়েরও বললো এ নামে খোঁজ করতে।অতঃপর আজ এসে পেলাম আপনাকে।”

এসব কেচ্ছা শুনতে বিরক্ত লাগছিলো কনার।সে বিরক্ত মুখে বললো,

“এসব না বলে যে দরকারে এসেছেন তা বলুন।”

তার আচরণের মাঝে বিরক্ত স্পষ্ট।মুরাদ অপমানিত বোধ করলো না।এমনটা হবে সে জানতো। তাচ্ছিল্য করে হাসলো সে।নিজেকে সামলে রেখে বললো,

“বিরক্ত হচ্ছেন মশাই?জিনাত ও মায়ের করা অত্যাচারে আপনি যে সেদিন জ্ঞান হারালেন। আপনাকে পরোক্ষভাবে সেদিন কে বাঁচিয়েছিলো তা জানেন?আপনি নিশ্চয়ই ওইদিন ট্রিপল নাইনে কল দেওয়ার অবস্থায় ছিলেন না তাই না?তাহলে কে কলটা দিয়েছিলো তা কখনো জানতে চেয়েছেন?”

প্রশ্নটা চট করে মাথায় এলো কনার।সেদিন মনোয়ারা ও জিনাতের ধাক্কায় দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো সে।উঠে দাঁড়ানোর শক্তি ছিলো না।ট্রিপল নাইনে কল দেওয়া বহু পরের বিষয়।অথচ সে শুনেছে ট্রিপল নাইনে কল দেওয়া হয়েছিলো।পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করেছে।তাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে।লোকেদের ধারণা কনাই কল করেছিলো।অথচ সে কল করেনি।জানতে চায়নি কে কল করেছে।নামলা ঠুকে দেওয়ার কাজটা করে দিয়ে ওদের পাঠ চুকে ফেলেছে।আজ এতদিন পর সেই প্রশ্নটা শুনে মনের মাঝে খচখচানি শুরু হলো তার।মুরাদ রহস্যময় হাসলো।বিদ্রুপ করে বললো,

“আপনার এতো বড় একটা উপকার সবার অগোচরে কেও করলো আর জানতে ইচ্ছে করলো না মালিকটি কে?অদ্ভুত মেয়েলোক!”

মুরাদের ভাষ্যে খানিক তাচ্ছিল্য ফুটে উঠলো।মেয়েলোক বলে তাকে এভাবে তুচ্ছ করায় রাগ লাগলো কনার।সে ত্যাড়া কণ্ঠে বললো,

“সেটা আমার ব্যাপার।আপনি নিশ্চয়ই কলটা দেননি যে এটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন?”

মুরাদের হাসি বিস্তৃত হলো।সে হেঁয়ালি করে বললো,

“যদি বলি কলটা আমিই দিয়েছিলাম?”

কথাটা হজম করতে পারলো না কনা।আকাশ থেকে পড়ার যোগাড় হলো এমন জবাব পেয়ে।সে শুনেছিলো মুরাদ সেদিন নিজেকে বাঁচাতে মনোয়ারা ও জিনাতকে রেখে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়েছে।সেই মুরাদ কল দিয়েছিলো ট্রিপল নাইনে?এটা আদৌ সম্ভব?সে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে বললো,

“অসম্ভব!আপনি সেদিন নিজেকে বাঁচাতে পালিয়েছিলেন।”

দৃঢ় কণ্ঠে জবাব ভেসে এলো,

“তবুও সত্যি এটাই।আর সত্যিটা আপনাকে মানতে হবে।আমি নিজেকে জিনাত ও মায়ের ওই ব্যাপারটা জেনে যাওয়া থেকে বাঁচাতে পালিয়েছিলাম।সেদিন ও বাড়ি যাওয়ার কথা আমার ছিলো না।লোক মারফত আপনাকে ঘরবন্দী করার খবর শুনে ট্রিপল নাইনে কল দিয়ে জানাই।অতঃপর ও বাড়ি গিয়ে দুজনকে আগাম পূর্বাভাস দিয়ে পালিয়েছি।এতে আপনি যেমন লাভবান হয়েছেন।তেমনি আমার কাছে ঋনগ্রস্ত হয়ে গিয়েছেন।এটা মেনে নিন।”

বাক্যগুলো বলে চকচকে দৃষ্টিতে তাকালো সে।কনা ভ্রু কুঁচকালো।এই লোক ধুরন্দর কিছিমের তা সে আগেই টের পেয়েছিলো।তবে এতোটা ধুরন্ধর তা সে আশা করেনি।কনার হয়ে বউ ও শাশুড়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই বড় কোনো স্বার্থে।তা না হলে কেও ঘরের বউকে পুলিশে দেয় না।যার উপর নাখোশ হয়ে আছে তাকে সাহায্য করে না।তা আদায় করতেই যে কনার হদিস জানতে এতেটা হন্য হয়েছে লোকটা তা স্পষ্ট হলো।সে বিচক্ষন হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“ঋনের শোধ নিতে এসেছেন?”

মুরাদ চমৎকার হাসলো কনা বুদ্ধিমত্তায়। বললো,

“বলতে পারেন সেটাই।”

“কি চাই আপনার?”

থমথমে মুখে জানতে চাইলো কনা।মুরাদ নড়েচড়ে বসে বললো,

“সেটা বলার আগে নিশ্চয়তা চাই আপনি আমার চাওয়াটা রাখবেন।আপনাকে ওয়াদা করতে হবে।”

“এতে যদি ঋন শোধ হয় তবে কথা দিবো।শর্ত থাকবে আপনি আর কখনো আমার সামনে আসবেন না।আমার খোঁজ করবেন না।”

কাঠ হয়ে বলা বাক্যযুগলের বিপরীতে সম্মতি জানায় মুরাদ,

“তাই হবে।তবে কি কথা দিলেন ধরে নিবো?”

কনা ভাবুক মুখে বললো,

“হ্যাঁ,বলুন কি চাই।”

“ভেবে বলছেন তো?”

“হ্যাঁ।”

কনা মুখে স্বীকার করলেও মুরাদ জানে কনা ভাবতে পারেনি সে এ মুহুর্তে কি চাইতে পারে।মুরাদের জিনাত ও মনোয়ারাকে জেলে পাঠিয়ে দেওয়ায় তার হাত রয়েছে শুনে কনা যতটা না অবাক হয়েছে। তারচেয়েও অধিক অবাক মেয়েটি এখন হবে।ভাবতেই রহস্যময় হাসলো সে।প্রস্তাবে রয়েসয়ে বললো,

“জিনাতের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিবেন।এটাই চাই।”

প্রস্তাবটা শুনে হতভম্ব হলো কনা।এ কেমন ধরনের খেলা?মুরাদ যি সত্যি জিনাতদের পুলিশে দিয়ে দেয়। তবে এখন ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে?কি স্বার্থ এর পেছনে?প্রশ্নগুলো অস্থির করে তুললো তাকে।

চলবে