#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৭.
ভেজা বাতাসে বুনোফুল দোলে!
কিশোরী কন্যা তার চুলের বাঁধন খোলে,,
ও কন্যা এলিয়ে যদি দিবি তোর কেশ…..
“আর কত আওড়াবে এই লাইনগুলো বলো তো!”
শৈলী আপা বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে কথাটা বলল। সারাদিনের ঘুরাঘুরি শেষে হোস্টেলে ফিরেছে আলতা। ফেরার পর থেকেই ফোনের ওয়াল স্ক্রীণে তাকাচ্ছে আর গুনগুন করে গানের মত করে গাইছে লাইনগুলো। শুধু মাত্র একবার বিড়বিড় করে শিশির এই লাইনগুলো বলেছিলো তার পেছনে দাঁড়িয়ে। ওই যে চিকন আঁকাবাঁকা সিঁড়িটার মাথায় দাঁড়িয়ে ছবি তোলার সময় বাতাসে এলোমেলো হলো আলতার চুল। তখনি বলেছিলো লাইনগুলো কিন্তু আলতা নিজের স্মৃতি শক্তিতে অবাক হয়। মাত্র তো একবার বলেছে শিশির লাইনগুলো অথচ তার একটুও ভুল হচ্ছে না গুনগুন করতে। প্রতিটা শব্দ সে ঠিকঠাক মনে করতে পারছে। আজ শিশির তাকে আরও একটা কথা শুনিয়েছে, “শহুরে হাওয়া গায়ে লাগাতে চাইলে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিব। সুন্দর চুলগুলোকে একদম সেমাই বানিয়ে ছেড়েছে। তোর মুখ ছিলো না তুই বারণ করতে পারিসনি?”
কথাগুলো রেগে নয় কেমন যেন চিবিয়ে চিবিয়ে বলছিলো শিশির ভাই। মনে হচ্ছিলো চুলগুলো আলতার নয় তার নিজেরই বুঝি সোজা করে ফেলেছে। এই কথাগুলো শোনার পর থেকেই আলতা ফরফর করে ওড়ছে প্রজাপতির মত। শৈলী আপা দু চার কথা শুনিয়েই আবার বললেন, বয়সটা অল্প এখন চোখের ওপর রঙিন চশমা লেগেছে। যা দেখবে তাই ভালো লাগবে, যা শুনবে তাই আমোদময় মনে হবে তাই বলে ভুলে গেলে চলবে না নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার কথা। শিশিরকে তুমি খুব পছন্দ করো আবার শিশিরও তোমার প্রতি আসক্ত তা তোমাদের আচরণেই স্পষ্ট। কিন্তু এতে করে ভুলে গেলে চলবে না তুমি শহরে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছো। কি ঠিক বলছি না!
আলতা মাথা নাড়লো ‘হ্যাঁ’ সে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকা যেন মা তার নতুন জীবন সঙ্গীকে সহজে মন থেকে মেনে নিতে পারে। মন দিয়ে পড়াশোনা করে নিজের জন্যও কিছু করা যেন বাবা, মা কিংবা অন্যকারো ওপর তাকে নির্ভরশীল না হতে হয়। আরো একটা উদ্দেশ্য আছে তার আর তা হলো নিজের জন্য একটা বাসস্থান এর ব্যবস্থা করা যা করার জন্য হলেও তাকে শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হতে হবে। ছোট্ট মনেই তার অনেক ভাবনা। বাবার একটা নিজস্ব পরিবার আছে সংসার আছে সে চাইলেও সহজে সে সংসারে ঢুকে তাদের একজন হতে পারবে না। আর মায়ের কাছে থাকলে মা নিজের জন্য একটা ঘর, একটা সঙ্গী মানসিক ভাবে মানতে পারবে না। তাই ঘুরেফিরে তাকে সারাজীবন এই দুইজন মানে তার আপন বলতে দুজন মানুষ কখনোই তাকে পাশে রাখতে পারবেন না৷ না চাইতেও সে ওই দুজনের সংসারে বাড়তি ঝামেলার মত এক বস্তু। সত্যিই আলতা আজকাল শিশিরকে ভাবতে গিয়ে বেশিই বিভোর থাকে যার ফলে তার পড়াশোনায়ও ঢিলেমি চলছে। শৈলী আপা গম্ভীর স্বভাবের হলেও তিনি শুরু থেকেই আলতাকে খুব সাপোর্ট করে আসছে। আলতা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে একবার তাকালো শৈলীর দিকে। নিজের লক্ষ্যে দৃঢ় থাকার জন্য হলেও তাকে শৈলী আপার কথাগুলো মাথায় রাখতে হবে। সে রাতে আর শিশিরকে নিয়ে ভাবনা নয় বইয়ের পাতায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখলো আলতা। রাতের ঘুমটাও তার ঠিকঠাক ধরা দিলো না চোখে।
শরত দোকানে বসে একটা বই পড়ছিলো। দুপুরের দিকে কাস্টমার খুব একটা আসে না বললেই চলে। নতুন কর্মচারী ছেলেটি ভীষণ লক্ষী স্বভাবের। শরত আজকাল প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে বইয়ে ডুবে থাকে দোকানে বসেই। কখনো কখনো তো কাস্টমার এসে তাকে ডাকলেও সে শুনতে পায় না যেন কিন্তু এতে ক্রেতা বিরক্ত হওয়া বা ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। ছেলেটি নিজেই সামলে নেয় সব। আজ শরত দুপুরে বাড়ি যায়নি ইচ্ছে করেই। মা সারাদিন জোরাজুরিতে লেগে থাকবে মেয়ে দেখতে যাবে বলে। শরত কিছুতেই এখন বিয়ে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না৷ বিয়ে সে করবে কিন্তু মন থেকে আরেকটু ফিকে হয়ে যাক অলির সাথের স্মৃতিগুলো তারপর। এখন সে যাকেই বিয়ে করুক পরিপূর্ণ সুখী করতে পারবে না। সময়ে অসময়ে অলির সাথের সময়গুলো মনে উঁকি দেয় আর তখনই সে নিজেকে বেসামাল পায়। এক নারীর সামনে অন্য নারীকে নিয়ে তার দূর্বলতা সে প্রকাশ করতে চায় না। তারচেয়ে বরং আরেকটু ফিকে হোক অলির ভাবনা যখন সে অনায়েসে অতীতকে মনে করেও নিজেকে সামলে রাখতে পারবে তখনই বিয়ের কথা ভাববে। বইয়ে মুখ গুঁজে আবারও বুদ হয়ে থাকার চেষ্টা করলো শরত অমনি তার ফোন বাজলো। নাম্বারটা সেভ করেছিলো সে কাল ভোরেই তাই ‘সোহা’ নামটা দেখেই কপাল কুঁচকালো। মেয়েটার সমস্যা তো কালই সে দূর করেছিলো আজ আবার কেন কল দিচ্ছে!
বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ না করে হ্যালে বলল শরত। ফোনের ওপারে সোহা হাসিমাখা মুখে সালাম দিলো। শরত জবাব দিতেই সোহা আবার কথা বলল, “আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।”
“স্বাগত”
দুপাশেই এবার নীরবতা। সোহা ভেবেছিলো লোকটা আরো কিছু বলবে কিন্তু না সৌজন্যতা রক্ষার বাইরে কথাই বলছে না৷ আরো কিছু সেকেন্ড অপেক্ষা করে সোহা বলল, “অনুও খুব স্যরি করছে আপনাকে।”
সোহা কথাটা বলতেই শিশির কটমট চোখে তাকালো সোহার দিকে। অনু তো ঠাস করে একটা চড়ই মেরে দিলো তার বাহুতে। সোহা বন্ধুদের এসবে পাত্তা না দিয়ে শরতের উদ্দেশ্যে আবার বলল, “আবার কখনো ঢাকায় আসলে বেড়াতে আসবেন আমাদের বাসায়।”
শরত বিরক্তি ধরে রেখেই হালকা হাসিমুখ করে বলল, “আচ্ছা।”
আবার চুপ রইলো দুজনেই তবে শরত বলতে চাইলো, “আর কিছু কি বলার আছে না থাকলে কল কাটো।”
কিন্তু মুখে সে কথা বলতে পারলো না। এদিকে শিশির ইশারা করলো কল কাটার জন্য কিন্তু সোহা কিছুতেই তার কথা শুনতে চাইলো না। ওপাশ থেকে শরতই বলে বসলো, “ভালো থেকো।”
মন খারাপ হয়ে গেল সোহার কিন্তু সে কথা কি আর প্রকাশ করা যায়! সেও কল কেটে দিলো। ফোন রাখতেই অনু দুম করে কি”ল দিয়ে বসলো সোহার পিঠে, “ওই হা”রা’মী আমি কখন সরি বললাম ওই শরৎচন্দ্ররে! আমার অত ঠেকা পড়ে নাই ওই বল”দরে সরি বলতে হুহ।”
এ কথার পর শিশিরও একটা ঠোকা মে*রে বসলো অনুর মাথায়। সেও বলল, “তোর মতিগতি আমার ঠিক লাগে না অনু তুই আমার ভাইয়ের প্রেমে পড়িসনি তো আবার!” এ কথা শুনে অনু মুখ বাঁকালো, “ই*শ তোর আবুলমা*র্কা ভাইয়ের প্রেমে পড়তে আমার বয়েই গেছে।”
পরশু রাতে শরতকে ফোন করেছিলো এই বলতে, “শিশির তাদের সাথে কথা বলছে না।”
কিন্তু সে কথার আর সুযোগ হয়নি তার তবে পরেরদিন সকালে শরত যখন নাশতার জন্য বসেছিল তখনই আবার সোহা ফোন করেছিলো। তখনই সে শিশিরের রাগের কথা জানায় আর অনুর পক্ষ থেকেও পুনরায় সরি বলে সে। তখন শরত জানায় সে শিশিরকে বলবে যেন রেগে না থাকে। এ কথার পরই শিশিরের সাথে শরতের কথা হয় শিশির বান্ধবীদের ক্ষমা করে দেয় এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই অনু ঘুরতে যাওয়ার বায়না করে। মনোমালিন্য দূর হয়েছে তাই যেন সেলিব্রেট করা কিন্তু সে কথা আবার আলতা আর বাকি দুই ছেলে বন্ধুর অজানা৷
পড়াশোনা আর টিউশনিতে ব্যস্ত হয়ে শিশিরের দেখা কম মিলতে থাকল। বন্ধুরা আর আলতাও খুব মিস করতে লাগলো শিশিরকে অথচ ছেলেটা হঠাৎ করেই কেমন ডুব মে'”রে গেল। আলতাও পড়ায় মনযোগী হলো সেই সাথে নিয়ম করে মা আর বাবার খোঁজও রাখলো৷ নকশি আজকাল আর ছটফটায় না আলতার জন্য তবে মনকে পুরোপুরি শক্তও করতে পারেনি। জহির নিজের সাধ্যমত নকশিকে আগলে নিয়েছে এমনকি প্রতিটাক্ষণ আলতাকে নিয়ে যতোটা সম্ভব নিশ্চিন্ত রাখার চেষ্টা করে নকশিকে। নকশিও বোঝে মানুষটা তাকে ভালোবেসে তার কন্যাকেও আপন করে নিয়েছে খুব আর এ কারণে তার অপরাধবোধও হয় খুব। যে মানুষটা হরদম তার ভালো ভেবে তার সন্তানকে আপন করে নিতে চায় সে মানুষটাকে সে তার প্রাপ্য আজও বুঝিয়ে দিতে পারছে না বলে। অথচ লোকটা ধর্মমতে এখন অনেকটা পাওনাদার তার কাছে। দেনমোহরের পাই টু পাই তাকে কবুল বলা রাতটিতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু নকশি কি করবে! তার মন যে দৈহিক, মানসিক দু দিক থেকেই বিমুখী হয়ে গেছে৷ মনের ঘরে যে আগল টেনেছিলো অনেক বছর আগে সে আগল ভাঙতে যে আরো সময় লাগবে। হয়ত এতোটাও সময় লাগতো না কিন্তু কয়েকদিন ধরে জহিরের এক চাচাতো বোন হঠাৎ করেই নকশিকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে আলতার বিয়ে নিয়ে। সেই থেকেই নকশির মনে হচ্ছে মেয়েটা বড় হয়ে গেছে দেখতে দেখতে কলজেও পাশ করে যাবে। এরপর আর অপেক্ষা করা যাবে না মেয়ে বিয়ে দিতে হবে। আর এ বয়সে এসে সে নতুন বউয়ের মত সংসার করতে পারবে না। হতে পারে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিই তাকে এতোটা হীনমন্য করে তুলছে নিজের জীবন নিয়ে কিন্তু আলতা খুব করে চায় তার মায়ের জীবনটা আর দশটা নারীর মত সাংসারিক হোক। সেই সংসারে তার নিজস্ব স্থান, অবস্থান হয়ত নড়বড়ে থাকবে তবুও চায়। মা তো চাইলেই পারতো তার ছোট্ট বয়সেই নিজেকে অন্য কারো করে নিতে শুধু মাত্র তার কথা ভেবেই একাকীত্বকে আপন করেছিলো। মেয়ে হিসেবে তাই তারও চাওয়া মায়ের জীবনটা এখন সাধারণ রমনীর মত হোক। সময়ের আবর্তনে তাই হতে শুরু করেছিলো কিন্তু সময় কোথাও না কোথাও আবারও পথরোধ করতে চাইলো। আলতার কলেজের সময়গুলো ভালো কাটলেও কয়েকদিন আগে শিফা মামীর কিছু কথা তাকে আবারও ভেতরে ভেতরে কেমন যেন নিষ্প্রাণ করে দিলো। হেমন্তের শুরুর এক বিকেলে মামী হঠাৎ করেই ফোন দিয়ে বললেন বাড়ি কবে আসবি? আলতার তখন প্রথম সেমিস্টার চলছিলো সে ভাবলো পরীক্ষার পর কয়েকটাদিন হাতে থাকবে তখন সে বাড়ি যাবে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো সে কোথায় যাবে, কোন বাড়িতে যাবে! জহির কাকার বাড়ি নাকি আব্বার বাড়ি? প্রতিটা মানুষেরই তো জন্মের পর একটা বাড়ি থাকে নিজের বলতে কিন্তু তার তো কোন বাড়িই নেই। জন্মের পর থেকে শিশির ভাইদের বাড়িটাকে নিজের বাড়ি বলে জানতো এরপর জানলো সেটা তাদের বাড়ি নয় তার বাবা আছেন তখন ভাবলো সেটা তাদের বাড়ি কিন্তু যেদিন সে প্রথম আব্বার সাথে সেই বাড়ি গেল তার ধারণা বদলে গেল সেদিনই। কারণ সে বাড়িতে একটা সৎ মা আছে, দুইটা ভাই আছে আর সেই বাড়িটা তাদেরই। যে বাড়িতে নিজের মা নেই সে বাড়ি তার নয়। এরপর মায়ের বলতে একটা বাড়ি হলো কিন্তু সে বাড়িতে তার বাবা নেই আছে মায়ের বর তার জহির কাকা। জহির কাকার বাড়ি কখনোই তার বাড়ি নেই। এই কথাগুলো ভাবতে গিয়েই কলি’জা ফাটা আর্তনাদ বুকের ভেতরটা ভেঙে চৌচির করে দিচ্ছিলো। বারংবার মনে হয়েছে সে এতিমের চেয়েও অসহায়। এতিমের তো বাবা মা কেউ থাকে না তাই তারা নিঃস্ব অথচ তার সব থেকেও সে নিঃস্ব। শুধু মনে হয়েছে মাকে কেন জোর করলো বিয়ে করতে! সে যদি এমন জোরাজুরি না করতো মাকে বাধ্য না করতো তবে আজ মা তার থাকতো শুধুই তার একার। মামীকে সেদিন খুব ইচ্ছে করছিলো বলতে, “মামী আমার অন্তরটা চি”রে গেছে ভেতরে খুব যন্ত্রণা আমার মাকে বলো আমার কাছে আসতে, আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতে আমি একা একা থাকতে পারি না। কিন্তু বলা হলো না সে কথা কারণ এই যন্ত্রণার মাঝেই মামী তাকে আরো একটা কথা বলেছিলো, ” আলতা তোর মায়ের যদি আরো একজন বাচ্চা হয় তুই কি খুশি হবি না? তোর আরো একটা ভাইবোন এলে কি তুই খুশি হবি নারে মা!”
না চাইতেও আলতার চূর্ণ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সেদিন ঝর্ণা বেয়ে নেমে আসা নদীর স্রোতের মত বয়েছিল। মায়ের জন্য খুশি হতে গিয়েও কেন জানি খুশি হতে পারেনি সেদিন আলতা। মামীকে মুখে বলেছিলো, “খুব খুব খুশি হবো মামী। আমি তো চাই আমার আরো কয়েকটা ভাইবোন হোক কত্তো ভালো হবে এতে। আমি তাদের জন্য ঢাকা থেকে কত কি কিনে নেবো।”
শিফা এ কথা শুনে কিছুটা সময় চুপ থেকে বলেছিলো, “তোর এই খুশি হওয়ার সুযোগ এসে গেছে। নকশি পোয়াতি কিন্তু…”
শিফা থেমে যেতেই আলতা নিজের কান্না লুকিয়ে প্রশ্ন করে কিন্তু কি মামী?
“নকশি বাচ্চাটাকে রাখতে চায় না। নিজের ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে রে সে। তার ধারণা তুই কষ্ট পাচ্ছিস তার বিয়ের জন্য৷ তুই দূর হয়ে গেছিস সে বিয়ে করেছে বলে। এখন এই সন্তান হলে তুই আর কখনোই তার কাছে আসবি না।”
মামীর কথা শুনে আলতার মন বলছিলো, “সত্যিই মামী আমি দূর হয়ে গিয়েছি আম্মার কাছ থেকে আরো হয়ে যাবো হয়তো!” কিন্তু মুখে বলল, “আম্মারে বুঝাও মামী এমন কিছু হবে না। আমি কথা বলবো আম্মার সাথে আমি বোঝাবো। এসব উল্টাপাল্টা কথা কেন ভাবে। আমি সত্যিই খুব খুশি হবো মামী তুমি আম্মার কাছে যেও। বুঝিয়ে এসো যেন নিজের ক্ষতি না করে কিছুতেই।”
শিফা জানালো, নকশি তাদের বাড়িতেই আছে। সে প্রেগন্যান্ট জানার পর থেকেই কেমন আজব আচরণ করছিলো তাই জহির খুব ভয় পেয়েছে। নকশিকে বাড়িতে একা রাখতেও খুব ভয় হয় তার তাই আহসানের সাথে কথা বলেই এ বাড়ি পাঠিয়েছে। আলতা সেদিন ফোন রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়ে খুব। মনে মনে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে যায় জাগতিক সকল ভাবনার বাইরে। ওপরওয়ালার কাছে শুধু প্রার্থনা করে তাকে যেন একা বেঁচে থাকার একটু শক্তি দেন৷ মন তার এত কেন স্বার্থপর হয়ে উঠছে সে জানে না। তার একটা ভাইবোন এলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে তার তো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু তার খুশি লাগেনি। মনটা শুধু বলছিলো এ দুনিয়ায় সে আরো একা হয়ে যাবে একদম একা! এ দুনিয়ার কোন সম্পর্ক তার আপন রইবে না আর।
চলবে
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৮.
হেমন্ত পেরিয়ে প্রকৃতি এখন কুয়াশায় মুড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে। শীত এসেছে সেই সাথে এসেছে ঘাসের ডগায় মুক্তো রুপে শিশির বিন্দু। গাছের পাতারা সেই কবে থেকেই ঝরছে সাথে বাতাসে নিয়ে আসছে হিমালয়ের হাড়কাঁপানো শীত। গায়ের চামড়া সত্তর পেরোনো বুড়ির মতই কুঁচকে কেমন রুক্ষতায় খসখসে হয়ে গেছে। নকশির আজকাল কোন কাজই করতে ইচ্ছে হয় না। স্কুলেও আর যেতে ইচ্ছে হয় না তার। আলতার জন্য ভীষণ রকম মন কেমন করে। পেটের ওপর হাত রাখতেই মনে হয় মেয়েটাকে সে হারিয়ে ফেলল আজীবনের মত। মাত্র কয়টা বছর সে তার মেয়েটাকে কাছে পেলো এই শেষ। আর কখনো তার মেয়ে তাকে ভালোবাসবে না। নিশুতি রাতে কখনো জড়িয়ে ধরে বলবে না, “ঘুম আসছে না আম্মা চুলে বিলি কাটো। আমার ভাত খাইতে মন চাচ্ছে না একটু খিচুড়ি রান্না করো। আমার পা ব্যথা করে স্কুলে যাব না। কখনো বলবে না আর আমারে একটু ঘুরতে নিয়া যাও।”
পেটে বাচ্চা এলো সাড়ে তিন মাস চলে আর এই কয় দিনেই নকশি হাসপাতালে গিয়েছে পাঁচ বার৷ জহির এক রকম জোর করেই তাকে হাসপাতাল নিয়ে যায় প্রতিবার। মনে মনে বিরক্ত হয় নকশি তার মনে হয় এত আদিখ্যেতা না দেখালেও হয়৷ এই বাচ্চা দুনিয়ায় না থাকলেই ভালো হবে। রেগে একবার শিফার সামনে বলেই ফেলেছিলো কথাটা আহসানুল্লাহও সামনেই ছিলো তার। কথাটা শুনে তখন শিফা অনেক বুঝিয়েছে তাকে, “এমন কখনো বলিস না নকশি৷ তোর কাছে সব অসহ্য লাগছে এই সন্তানের কারণ তোর আরেকটা সন্তান তোর থেকে দূরে আছে বলে। তোর ধারণা এই বিয়ে, এই সন্তান এসবই তোকে আলতার থেকে আলাদা করে দিচ্ছে। এসব তোর মনের ভুল ধারণা। আলতাকে তোর কোন একদিন দূরে পাঠাতেই হতো। তুই নিজেও তোর জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছিস জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কত জরুরি। তুই কি চাস না তোর মেয়ের তোর মত জীবন না কাটুক!”
আহসানও যোগ করলো, “তোকে যদি আবার বিয়ে নাও দেওয়া হতো তখনও আলতা দূরে যেত পড়াশোনা করতে। জীবনে উন্নতি করতো, প্রতিষ্ঠা হতো তারপর তাকে বিয়ে দিয়ে ঠিক স্বামীর ঘরে পাঠাতে হতো তখন কি তুই মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থাকতি? না তোকে ছেড়ে গিয়ে আলতা নিশ্চিন্তে সংসার করতো? কিন্তু এই যে তুই এখন কারো স্ত্রী হয়েছিস, তোর মাথার ওপর ছাঁদ হিসেবে জহির আছে এটাই একটা সময় তোর মেয়ের স্বস্তির কারণ হবে। কারণ এখন আলতার জীবন শুধু তোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও আর ক’দিন পর তেমন নাও থাকতে পারে। মেয়ে বড় হচ্ছে তার জীবনে তুই, আমরা ছাড়াও কেউ এসে জায়গা করে নিবে। সে নিজ ইচ্ছায়, নিজ পছন্দে কাউকে আপন না করলেও আমরা বছর কয়েক পরে তাকে কারো হাতে তুলে দিব তখন তার ভয় থাকবে না তোকে নিয়ে। আর এই যে অনাগত সন্তান এও তোর একসময় শান্তি, সুখের কারণ হবে। এখন মুখে উল্টা বলে ফেলিস না পরে আফসোস না হয়। আল্লাহ তা’য়ালা কখন কার কোন কথাটা কবুল করে নিবেন তা কিন্তু আমরা মানুষরা জানি না তাই মুখে যা ইচ্ছা বললেই চলবে না।”
আহসান আর শিফা সেদিন এমন আরো অনেক কথা বলেছিলেন নকশিকে। মন কিছুটা শান্ত হয়ে এলেও পুরোপুরি স্থির হতে পারেনি। খুব করে আজকাল বায়না করছে ঢাকায় যাবে। জহিরও ভেবেছিলো নিয়ে যাবে কিন্তু আলতাই বারণ করেছে। শীত শুরু হয়েছে সবে কিন্তু এ মাসের শেষেই তার চার দিনের ছুটি মিলেছে টিউশনি থেকে। স্টুডেন্ট এর পরিবার ট্যুরে যাচ্ছে বলে আলতার সুযোগ মিলে গেছে এদিকে কোচিংয়েও সে শিশিরকে দিয়ে কথা বলিয়েছে ছুটির জন্য। সেমিস্টার শেষ হয়েছে বলে ছুটিটাতে সমস্যা হবে না ফিরেই পড়াগুলো সে কমপ্লিট করে নিবে। শিফা মামী যেদিন জানিয়েছিল তার মায়ের প্রেগ্ন্যাসির খবরটা সেদিন আলতা কেঁদেছিলো আকাশ পাতাল এক করে। তারপরের কয়েকটাদিনও তার কেটেছিলো জরাগ্রস্তের মত। দেখতেই মনে হতো জী*বন্ত কোন লা*শ বুঝি আলতা৷ শিফার সাথে কথা বলার সময় কোনভাবে শিশির জানতে পারলো নকশি প্রেগন্যান্ট আর সে কথা আলতাও শুনেছে। এরপরের সময়গুলোয় আলতার জীবনে চমৎকার এক সময় এসেছিলো। শিশির একদিন বিকেলে হঠাৎ করেই এসে হাজির হলো হোস্টেলের সামনে। আলতার সেদিন টিউশন ছিলো না বলেই বি নিয়ে বসেছিল। পড়ায় মন ছিলো না দৃষ্টি ছিলো জানালা দিয়ে বাইরের নীলাভ আকাশের সাদা এক গুচ্ছ বেলার মত মেঘের ওপর। শুভ্র সাদা সেই মেঘের ভেলা যেন আটকে গিয়েছিল অসীম আকাশের সেই একটুখানি জায়গাতেই। আলতা দেখছিলো আর ভাবছিলো তার জীবনটাও কি এমনভাবে কোথাও আটকে যেতে পারে না! যেখানে সে নিশ্চিন্ত মনে একটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারবে। যে জীবনে থাকবে না আপন মানুষ হারানোর যন্ত্রণা, মনের বিপরীত কোন সিদ্ধান্ত। শুধু থাকবে প্রিয় মানুষগুলোর আনাগোনা আর সুখের নীড়ে রাত্রিযাপন। আলতার ভাবনা আরো প্রসার হওয়ার আগেই তার ফোনের টোন বাজলো। শিশিরে নামটা ভেসে উঠলো ফোনের পর্দায়। কোলের ওপর রাখা বইটা বন্ধ করে ফোন ধরতেই শিশির বলল, “পোশাক বদলে বাইরে আয়।”
শুয়ে বসে পড়ার কারণে পরনের জামাটা কুঁচকে ছিলো আলতার। শিশিরের কথা শুনে বুঝলো কোথাও যেতে হবে কিন্তু ইচ্ছে করলো না জিজ্ঞেস করার কোথায় যাবে!
আলতা জামা বদলে তুলে রাখা জামাগুলো থেকে একটি ভালো সুতি জামা পরে নিলো। চুলগুলো বেণী করে একপাশে নিলো আর বাইরে হালকা শীত শীত লাগে বলেই পাতলা শাল চাদরটা লম্বা ভাজে হাতে ফেলে রাখলো। শিশিরের সাথে বের হলে তাকে কখনো এক টাকার খরচও করতে হয় না বলে পার্সব্যাগটা সে সাথে নিলো না তবে মোবাইলটা নিতে হলো। গেইট পেরিয়ে বের হতেই দেখা গেল রাস্তার কিনারায় অস্থিরভাবে পায়চারী করছে শিশির। হাঁটার সময় তার বা হাতটা বারবার ঘাড়ের পিছনে নিয়ে ঘাড় ঘষছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে ছেলেটার বুঝি ঘাড়ে ব্যথা হয়েছে। আলতা বোঝে শিশির ভাই যখন কোন বিষয়ে চিন্তিত থাকে তখন এমন করে আবার রেগে গেলেও তার হাতটা ঘাড়ে চলে যায়। আলতা রাস্তা পেরিয়ে ওপাশে যাওয়া ধরতেই শিশির ইশারা করলো তাকে দাঁড়াতে। শিশির এলো রাস্তা পার হয়ে তারপরই সে সি এনজি নিলো ধানমন্ডি লেকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। দুপুরের পরের সময়টা এই শীত আগমনী সময়েও কেমন ঝিমিয়ে পড়া মনে হল আলতার। সে সিএনজিতে বসেই অনুভব করলো আজ শিশির ভাই অপ্রস্তুত অবস্থায় আছে। কিছু কি হয়েছে বাড়িতে অথবা শিশির ভাইয়ের সাথেই! আলতা ভাবতে থাকে আরো অনেক কিছু কিন্তু মুখ ফুটে একটা শব্দও উচ্চারণ করে না। সিএনজি যখন গন্তব্যে পৌঁছুলো তখন আলতার ফোনটা বেজে উঠলো মৃদু সুরে। রিং ভলিউম কম থাকায় আলতা নিজেই খেয়াল করতে পারেনি প্রথমে৷ শিশির সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে আলতাকে বলল, “ফোন ধর।”
সে ফোন তুলল; শৈলী আপা কল দিয়েছে তিনি রুমে ফিরে আলতাকে না পেয়ে জানতে চাইলেন কোথায় সে। শিশিরের সাথে এসেছে শুনে আর কোন প্রশ্ন করলেন না৷ আলতাকে নিয়ে শিশির লেকের পাড়ে হাটতে থাকলো। হাটার এক পর্যায়ে সুন্দর সবুজ ঘাস দেখে বলল, “বসি এখানে?”
আলতা অবাক হলো, ‘শিশির ভাই তাকে জিজ্ঞেস করছে এখানে বসবে কিনা!’ বিষ্ময়ে ভেতরে ভেতরে হা হয়ে গেলেও আলতা মুখে বলল, “আচ্ছা”
হোস্টেলে কিংবা ঢাকার রাস্তায় যেমন শীতের আমেজ টেরই পাওয়া যায় না এখানে তেমন লাগলো না আলতার। বিকেল এখনো গড়ায়নি অথচ এখনই বাতাসে সে হিম টের পাচ্ছে। শীতল এক স্পর্শ বাতাসের সাথে এসে গালে লাগলো তার। সে আনমনেই ভাবতে লাগলো এখানে আসার কারণ কি হতে পারে! কোন দুঃসংবাদ আছে কি! ভয় লাগলো এবার একটু একটু কিন্তু তার ভয়কে হাওয়া উড়িয়ে দিয়ে শিশির বলল, ” ফুপুআম্মাকে মিস করিস না আলতা?”
আলতা পাশ ফিরে তাকালো শিশিরের দিকে। চোখে তার অশ্রুর চিহ্ন নেই তবে হঠাৎই বিষন্নতা এসে ঝুপ করে বসে পড়লো। সে মনকে বোঝালো প্রকাশ করিস না দুঃখ, দূর্বলতা। মন শুনলো কিছুটা সে উত্তর দিলো, “করি তো।”
“তুই কি মন থেকে মানতে পেরেছিস ফুপুআম্মার বিয়েটা?”
“না মানার কিছুই নাই শিশির ভাই। আমি নিজেই তো আম্মাকে সবরকম জোর করে বাধ্য করছি বিয়ের জন্য।”
“তুই নিজেকে একলা ভাবিস না আলতা। ফুপুআম্মা খুব কষ্ট পান তোর জন্য তুই মন খুলে তোর কষ্ট গুলো বলে দে না আমায়।”
কি কথার মাঝে কি বলল শিশির তা বুঝি সে নিজেও জানলো না। আলতার চোখের বিষন্নতায় এবার হাহাকারও যোগ হলো। শিশিরের মুখের কথা আর চোখের আকুলতা তাকে আরো একটু বড় করে দিলো এই মুহুর্তে। সে নিজেকে আরো একটু সামলে নিয়ে বলল, “আমার আবার কষ্ট কি?”
কথাটা বলতে গিয়ে যতখানি ঠোঁট প্রশস্ত হলো আবার ততখানিই কান্নার প্রলেপ পড়লো ঠোঁটের কোণে। কি এক অদ্ভুত দুঃখ, বিষাদে ছেয়ে আছে তার মন তা শিশির যত বুঝতে পারছে ততোই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। আলতা আরো বলল, “আম্মার বিয়ে নিয়ে আমার একটুও কষ্ট নেই। আম্মার সন্তান আসবে মানে আমার আরো ভাইবোন হবে তাতেও আমার কোন কষ্ট নেই৷ আমার আব্বার বাড়ি আমি কখনো আপন মানুষ হয়ে থাকতে পারবো না তাতেও কষ্ট নেই আমার নিজের বলতে কোন বাড়ি নেই তাতেও কন কষ্ট নেই শিশির ভাই। আমার শুধু কষ্ট হয় দিন শেষে আমার একান্ত বলে আমার আম্মা থাকবে না মনে পড়লেই। আমার জীবনে আম্মার একচ্ছত্র অধিকার থাকলেও আম্মার জীবনে আর কখনো আমার একলার অধিকার নেই মনে পড়লেই কষ্ট হয়৷ আমি আর কখনো আমার অসুস্থতার রাতগুলোতে মাথা রাখতে আম্মার কোল পাবো না , আমি আমার দুঃখ সুখের সময়গুলোও না জানালে আম্মাকে আমার পাশে পাবো না। আমার ছোট্ট দুনিয়ায় আর আম্মা আমার একার নয় ভাবতে গেলেই আমার কষ্ট হয়। আমার আব্বা আছে তবুও আমি একা আমার আম্মা আছে তবুও আমি একা। এমনটা কেন হলো শিশির ভাই কেন তোমাদের মত আমার আব্বা, আম্মা একসাথেই আমার হলো না?” একের পর এক কি বলে চলছে আলতা তার নিজেরও আর খেয়াল রইলো না৷ কখন যে সে হাঁটু মুড়ে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়লো আর তার হুঁশ রইলো না। শিশির স্থবির অপলক চেয়ে আছে আলতার দিকে। সে একটুও চেষ্টা করলো না কান্না থামানোর। তার মনে হলো এই অশ্রু বিসর্জনই আলতার ভেতরের গুমোট হাওয়া দূর করবে। তাকে একটু একটু করে শক্ত করার জন্য হলেও ভেতরের দূর্বলতাকে কান্না রূপে বেরিয়ে যেতে দেওয়া দরকার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে ছুঁই ছুঁই। আলতা কাঁদছে আর শিশির নিষ্পলক চেয়ে আছে। সময়টা কেটে যাচ্ছে সাথে যাচ্ছে বিষাদের মেঘ। এই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরলেই দৃষ্টিগোচর হবে মেঘের আড়ালের সূর্যরশ্নি। আলতা যখন কান্না থামার অবস্থায় তখন সে ঘাড় উঁচিয়ে তাকায় শিশিরের দিকে। শেষ মুহূর্তের কান্নাও তখন থেমে গেল শিশিরের চাহনি দেখে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শিশির তার দিকে। চোখের পলক একটুও কাঁপছে না তার। আরো কিছুটা সময় শিশির চুপচাপ তাকিয়ে থেকেই প্রশ্ন করলো, “হয়েছে?”
“কি?” বোকার মত প্রশ্ন করলো আলতা।
“তোর দুঃখ বিসর্জন? বাব্বাহ্ এমন কান্না জুড়ে দিলি যেন আমি তোকে তুলে এনেছি। এখনই বুঝি খু*ন ক*রবো বলে মৃ*ত্যু ভ*য়ে কেঁদে ম*রছিস!”
লজ্জা পেয়ে গেল আলতা। সেই কখন থেকে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো আর থামার কথাই ভুলে গেল। শিশির বলল, “তখন কি বলছিলি তোর নিজের বাড়ি নেই? তোর আপন কেউ নেই? আর কি কি যেন বললি!”
ভ্রু কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে প্রশ্ন করতে লাগলো শিশির। আলতা বুঝে গেল এতক্ষণ কান্নার জন্য সে যে কত বড় ভুল কথা বলে বসেছে শিশির ভাইয়ের সাথে। শিশির আরো কিছু বলতে শুরু করতেই দেখলো ফোন বাজছে তার। সোহা কল করেছে কিন্তু সে ফোন তুলে বলল, “একটু বাইরে আছি সোহা তোমাকে পরে কল দেই।”
ব্যস, দুঃখ বিসর্জনে ষোলোকলা পূর্ণ করে নতুন দুঃখ যোগ দিলো আলতার মনে। শিশির ভাইয়ের মুখে এই একটা নাম শুনলেই তার সকল দুনিয়াদারী জ্বা*লিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। সোহাকেই একদম খু*ন করে ছাই চাপা না মাটি চা*পা দিতে ইচ্ছে হয়।
শিশির তাড়া দিলো আলতাকে ফিরে যাবে বলে। আলতা বসা উঠলো মুখ গোমড়া করে। শিশির ভাবলো হয়ত, কান্নাকাটির জন্য এখন মুখ এমন করে আছে। সে আর ঘাটালো না তাকে শুধু বলল, “আওলাদ চাচাকে বারণ করেছি তোকে ছুটিতে নিতে আসতে।”
আলতা বড় বড় চোখ করে তাকালো শিশিরের দিকে। আব্বা আসবে তাকে নিতে তিনি না আসলো সে গ্রামে যাবে কার সাথে? এদিকে আম্মার সুস্থতার জন্য হলেও তাকে এই ছুটিতেই যেতে হবে একবার। কিন্তু তার ভাবনা প্রশস্ত হওয়ার আগেই শিশির আবার বলল, “আমি বাড়ি যাব আগামী সপ্তাহে তোর ছুটির সময়ে।”
আলতা মনে মনে খুশিই হলো শিশির ভাইয়ের সাথে যাবে বলে। কিন্তু আবারও শিশির তার আনন্দকে মাটি করে বলল, “সোহা, অনুও যাবে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে তাই তখনই তোকেও সাথে নিয়ে যাব।”
আনন্দে মনটা যখন পাখির মত ডানা মেলে ওড়ার প্রস্তুতি নিলো ঠিক তখনি শিশির কাঁচি হাতে ঝট করে কে*টে দিলো তার ডানা দুটি। উড়ন্ত মনটা মুখ থুবড়ে পড়ে গেল আকাশ থেকে সোজা মাটিতে।
চলবে
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
(২য় খন্ড)
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
৯.
সন্ধ্যের পর হোস্টেল থেকে বের হতেই দেখা গেল কালো শার্টের ওপর কালো রঙের হুডি গায়ে শিশির দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা ব্যাগ থাকলেও সেটা যে কাপড়ের নয় তা বোঝা যাচ্ছে। বাড়ি আসা যাওয়ার জন্য এই সুবিধা তার তাকে কখনো পোশাকআশাক নিয়ে ভাবতে হয় না। যা বাড়িতে আছে সেখানে তাই পরবে আর এখানে যা আছে তা এখানে পরবে। কিন্তু তার পেছনেই দেখা গেল তার দুই বান্ধবীকে। একজন জিন্স, বুট এর সাথে হাফ লং কূর্তির ওপর হুডি পরা হাতের তার ট্রলি ব্যাগ আর অন্যজন সেলোয়ার-কামিজ পরা সাথে শাল ছড়িয়ে নেওয়া কাঁধের ওপর। আলতা খেয়াল করেছে সোহা আজ একটু বেশিই সাধারণ মেয়েলি সাজে আছে অন্যান্য সময় তাকে দেখা যায় প্যান্ট, কূর্তি, কাফতান মানে ওড়নাবিহীন পোশাকই বেশি পরতে দেখা যায়। তার মনে হলে সোহা মেয়েটা পরিবেশ বুঝে চলতে পারে খুব৷ কিন্তু অনু একদমই ভিন্ন তার কোন বাছ বিচার নেই পরিবেশ পরিস্থিতির। সব জায়গাতেই কেমন মেয়েলি আচরণকে ইগনোর করে। ছেলেদের মত চলাফেরা, কথাবার্তা এমনকি সিগারেট খাওয়ার ব্যাপারেও সে ছেলেদের টেক্কা দিতে চায়। আলতার মনে হয় এই মেয়েটা গ্রামে গেলে ভীষণরকম একটা ঝামেলা হবে। ইতোমধ্যে সে একটু আধটু টের পেয়েছে মেয়েটা শরত ভাইকে কল দেয় মাঝেমধ্যে। সে এক মুহূর্ত কল্পনা করে মেয়েটিকে শরত ভাইয়ের সাথে। সাধারণ, শান্ত, গম্ভীর শরত ভাই তার পাশে উ*শৃংখল, উড়ন*চণ্ডী, বে*য়াদব, সিগারেটখোর অনু আর তাদের সামনে রাগী বড় মামী। ইয়া আল্লাহ! কল্পনাতেই তো আলতা ছোট খাটো এক ঝ*ড়ের আভাস পায়। বাস্তবেই যদি এই মেয়ের সাথে শরত ভাইয়ের কিছু একটা হয় তাহলে তো বাড়িতে ধ্বং*সলী*লা ঘটবে! আতংকে শিউরে ওঠে আলতা তওবা করে মনে মনে এ কথা সে আর ভুল করেও ভাববে না। আলতাকে দেখে শিশির এগিয়ে এসে তার হাত থেকে ব্যাগটা নেয়।
“কিরে এত কি নিয়েছিস ব্যাগ ভারী কেন?”
“কয়েকটা জামা আর বই।”
“বই মানে! যাচ্ছিস চারদিনের জন্য বই কি সবই নিয়েছিস সাথে?”
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে শিশির। সত্যিই আলতা বই, নোটস, খাতা, কলম মিলিয়ে অনেক কিছু নিয়ে নিয়েছে ব্যাগে। আসলে সে গ্রামে গিয়ে কোথাও বের হবে না বলেই ঠিক করেছিলো। প্রথমে তো শিশিরদের বাড়িতেই যাবে তাই বুদ্ধি করে বই নিয়েছে। পড়ার বাহানায় সে চারটা দিনের বেশিরভাগ সময় সে ও বাড়িই থাকতে চাইছে। সেখানে রাতে জয়তুন মামীর সাথে ঘুমাবে দিনটা বইয়ে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিবে। জহির কাকার বাড়ি সে যাবে মায়ের সাথে দেখা করতে সেখান থেকে বইগুলোর বাহানাতেই ফিরে আসবে সে। হয়ত আব্বাও তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইবে সেখানেও সে গিয়ে আবার বইয়ের বাহানা ফিরে আসবে। বিধ্বস্ত মন জানে না আগামী সময়গুলো তার কেমন করে কাটবে তবুও পূর্বপ্রস্তুতির নামে কিছু বাহানা সে প্রস্তুত করে নিচ্ছে সাথে। শিশির একবার আলতার মুখের দিকে তাকালো ঝাড়ি মারবে বলে কিন্তু ফ্যাকাশে মুখটার দিকে চেয়ে তা আর সম্ভব হলো না। শিশিরের বান্ধবীরা বলেছে তারা ট্রেনে করে যাবে তাই ট্রেনের টিকেট কেটে রেখেছে শিশির আগেই। কথা ছিলো দু’জন ছেলে বন্ধুও যাবে শেষ মুহূর্তে এসে ভিন্ন কাজে দুজনকেই ব্যস্ত হতে হয়েছে তাই শুধু মেয়েরাই যাচ্ছে। রিকশা করে কমলাপুর যেতে হবে বলে শিশির দুটো রিকশা ডাকলো। আলতা একবার অনু আর সোহার সাথে কথা বলে নিয়েছে। রিকশা ডাকতেই শিশির বলছিলো অনু আর সোহা একটায় বসতে আলতা তো একদমই কিছু চেনে না আর বাচ্চা মানুষ তাই শিশিরের সাথে রাখতে চাইলো। অনু বরাবরই তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তার অজানা নয় আলতার প্রতি শিশিরের অনুভূতি। বন্ধুকে একটু জ্বালানোর সুযোগ পেয়ে অনু বলল, “আয়শা আমার সাথে আসো এই রিকশায় সোহা তুই শিশিরের সাথে যা।”
আলতার ফ্যাকাশে মুখ এবার একদমই রক্তশূন্য হয়ে উঠলো। অনু দেখলো চেয়ে একবার আলতা আরেকবার শিশিরের মুখটা। মজা পাচ্ছে সে কিন্তু সোহা বলল, “আয়শা শিশিরের সাথে যাক আমি আর তুই…. ”
“তুই চুপ কর তো” বলেই অনু আলতাকে নিয়ে রিকশায় উঠে গেল। রেলস্টেশনে পৌঁছে শিশির চেক করলো ট্রেন আসেনি। আধঘন্টার মত লেট হবে আরো তা দেখে শিশির টুকটাক শুকনো খাবার কিনে আনলো। আলতা প্লাটফর্মের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছিল। তার পাশােই সোহা আর অনুও ছিলো। আলতার ডান দিকে কিছুটা অংশ খালি এবং তার একটু দূরত্বে একটা সাতাশ আটাশ বছর বয়সী লোক দেখতে ভদ্র মতন বারবার আলতাকে দেখছিল। লোকটার পোশাক দেখে ভদ্রলোক টাইপ মনে হলেও চোখের দৃষ্টি কুৎসিত। আলতার পরনের ওড়ানাটা গলার সামনে থেকে একটু সরে যাওয়ায় যেন চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে তাকে। অনেকটা সময় ধরেই একটু সিগারেটে সুখটান দেবার ইচ্ছে হচ্ছিলো অনুর কিন্তু আলতা সাথে থাকায় সে নিজেকে সংযত রাখতে চাইছিলো। কিন্তু এবার আর একদমই পারছে না বলে একটু দূরে সরে সিগারেট বের করলো গলায় ঝুলানো তার ছোট ব্যাগটি থেকে। লাইটার জ্বালিয়ে মুখের কাছে নিতে নিতেই সে একবার আলতাকে দেখছিলো মেয়েটা আবার দেখে ফেলে কিনা! চোখে আটকায় লোকটা নিজের জায়গা থেকে সরে এবার একদম আলতার গা ঘেঁষার চেষ্টা করছে। লোকটা হাতটাও যে বারবার নাড়াচাড়ার নামে আলতাকে ছোঁয়ার এক অভিনব চেষ্টা চালাচ্ছে তা আর বুঝতে দেরি হয়নি অনুর। বলা যায় সে এই মুহুর্তগুলোর সাথে আরো বছর কয়েক আগেই পরিচিত হওয়ায় তার বুঝতে অসুবিধা হয়নি। হাতের সিগারেটটা ছুঁড়ে ফেলে ঝড়ের বেগে সে গিয়ে দাঁড়ালো আলতার পাশে আর সাথে সাথেই কলার চেপে ধরে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দিলো লোকটার গালে। ঘটনার আকস্মিকতায় লোকটা এবং আলতা সোহা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনু এলোপাতাড়ি কয়েক লাথি আর ঘুষিও মে*রে বসল অনু। মিনিট খানেক এর মধ্যে জায়গাটিতে ছোট খাটো ভীড় জমতে শুরু করলে লোকটা ফাঁক খুঁজে দৌড়ে পালায়। সব দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে আলতা আর সোহা তবে জমে ওঠা ভীড়ের পুরুষেরা অনেকেই ঘটনা আঁচ করে নিয়েছে ততক্ষণে। কেউ কেউ তো খিস্তি দিয়ে বলতে লাগলো, “শা*লারে ধইরা আরো কিছু দিতে পারলে ভাল হইতো।কেউ কেউ আবার অনুর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করেই বলে উঠলো এটা মেয়ে না অন্য কিছু। কেমন করে এমন তাগড়া যুবককে কাৎ করে ফেলল!”
শিশির আসতে আসতে ঘটনার কিছুই দেখতে না পেলেও আলতার রক্তিম মুখ দেখে ভড়কে গেল।
ট্রেন ছাড়লো সন্ধ্যা সাতটায়। আধ ঘন্টার জায়গায় একঘন্টা বিলম্বে ট্রেনে চড়লো শিশির আলতারা। এক বগিতে মুখোমুখি দুই দিকে তারা চারজন এবং বিপরীত দিকে তিন সদস্যের এক পরিবার। শীতের রাত ঢাকার দিকটায় খুব একটা আঁধার চোখে না পড়লেও শহর ছেড়ে বের হতেই রাতের ঘনত্ব আর শীতের মাত্রা টের পেল প্রত্যেকে। সোহা গ্রামে যাবে ভেবেই ভারী সোয়েটার ব্যাগে নিয়েছে কিন্তু সেলোয়ার-কামিজ এর সাথে মিলিয়ে গায়ে শাল জড়িয়েছিলো। কিন্তু এখন এই শীতের মাত্রা তার গায়ে কাঁপন তুলল। আধো আলোয় শিশির তা খেয়াল করেই বলল, “সোহা তুমি জ্যাকেট , সোয়েটার কিছু পরে নিলে না কেন এখন তো শীতে কষ্ট পাবে। এর পরের পুরো রাস্তা আর আমাদের গ্রামেও কনকনে শীত সইতে পারবে না।”
“সোহা বলল, তাইতো দেখছি৷ আমার ব্যাগটা নামিয়ে দাও তো শিশির জ্যাকেট আছে একটা ওপরের দিকে সেটাই পড়ে নেবো।”
আলতা বসেছিলো শিশিরের পাশেই। সে কথাগুলো শুনে একবার শিশিরের দিকে ফিরে তাকালো। তার মনে হলো আজ এদের সাথে তার না গেলেই ভালো হতো৷ শিশির ভাই তারই পাশে বসে অন্য একজনের প্রতি যত্ন দেখাচ্ছে এটা যেন তার গায়ে জ্বা*লা ধরিয়ে দিচ্ছে। শীত তো তারও খুব লাগছে। তার নিজেরও খুব কাঁপুনি দিচ্ছে শরীর কই এসব তো চোখে পড়ে না লোকটার! মনে মনে ক্ষোভ ঝাড়লেও তা বেড়ে ওঠার আগেই শিশির কথা বলল, “আলতা তোর শালটা দে তো!”
বলার সাথে সাথেই শিশির নিজের হুডিটা খুলে আলতার দিকে এগিয়ে দিল। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সোহা আর অনু। এই ছেলেটা এত কেয়ারিং কেন আলতার প্রতি। তার এত যত্ন দেখেই সোহার মনে হয় জীবনে এমন একজন মানুষ প্রত্যেকটা মানুষের থাকা দরকার। আলতা শাল খুলবে কি খুলবে না ভাবতে ভাবতেই শিশির হুডিটা তার কাঁধে রেখে বলল শালটা দে তো আমি শীতে কাঁপবো এখন তোর জন্য!”
ধম*কবিহীন শিশির ভাইকে আলতার অচেনা লাগে। এখন এই ধ*মক শুনে মনের সকল হিংসা যা সোহাকে নিয়ে হচ্ছিলো তা উবে গেছে। আপাতত ভালোলাগায় শীতের মাঝেও উষ্ণতা অনুভব হচ্ছে তার। হুডি পরে ওড়না দিয়ে মাথা, গলা পেঁচিয়ে বসেছে আলতা আর শিশির তার শাল জড়িয়ে সিটে হেলে বসেছে। রাত পেরিয়ে ভোর হওয়ার আগেই ট্রেন পৌঁছুলো নির্দিষ্ট স্থানে। ভোর হতে আরো অনেক বাকি। অনু তার হাতের ঘড়িটাতে সময় দেখপ আঁতকে উঠলো, “ওহ মাই গুডনেস! রাত তিনটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট শিশির। এই মেয়েদুটোকে নিয়ে গ্রামের ভেতর কি করে যাবো এখন? আমি শুনেছি শীত কালে ডা*কা*তি হয় খুব আর…” থামে অনু সোহা ব্যগ্র গলায় প্রশ্ন করে আর কি!
“আর মেয়েদের পেলে ধর্ষ*ণও করে।” নাটকীয় ভঙ্গিমায় অনু বলতেই শিশির বলল, “যেভাবে বলছিস মনে হচ্ছে মেয়ে শুধু ওরা দুটোই আর তুই একটা পুরুষ।”
“তার চেয়েও কম নই। আজ যা ঘটতে যাচ্ছিলো আমি যদি এদের মত মেয়ে টাইপ হতাম তো তোর আয়শা…”
আলতা হঠাৎ অনুর হাত চেপে ধরলো। সে চাইছে না শিশির ভাই এখন কিছু জানুক। আপাতত বাড়ি যাওয়া হোক। শিশিরও ফোন হাতে কাউকে কল করায় ব্যস্ত থাকায় কথাটা খেয়াল করেনি। প্লাটফর্মের প্রতিটি বাতি কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে বলেই হয়তো আলোর মাঝেও পুরো রেলস্টেশন আবছা অন্ধকারে ডুবে আছে৷ আশপাশে মানুষ বলতে দু চারজন চোখে পড়ছে সেই সাথে দু জন নৈশপ্রহরী এক কোণায় বসে গল্পে মশগুল। শিশির দু বার ফোন করতেই শরত ধরলো।
“ভাই স্যরি এত রাতে জাগালাম। আসলে একটা বিপদে পড়ে গেছি ভাই তুমি একটু রেলস্টেশনে আসতে পারবা?”
“কি বিপদ শিশির! তুই না সকালে বাড়ি আসার কথা?”
ঘুমের রেশ কাটেনি এত রাতে শিশিরের কল পেয়ে ভড়কেছে শরত। নিজেকে ধাতস্থও করতে সময় লেগে গেল তার কিছুটা।
চলবে