শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-৬২+৬৩

0
679

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_62
#Writer_NOVA

—এক্সকিউজ মি! হেই মিস!

ভাইয়ার বিয়ের দুই দিন পর কলেজে এসেছি।বাসার সব ঝামেলা এর মধ্যে শেষ হয়েছে।কলেজের ভেতরের রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছি। তন্বী, শারমিন ওয়াসরুমে গেছে। আমি ওদের সাথে যাবো না বলে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ পেছন থেকে একটা ছেলের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম৷ হাই লেভেলের গেটআপে একটা ছেলে দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসেছে। ছেলেটা কে এক দেখায় আমার কাছে ভাব ওয়ালা ছেলে মনে হলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বললাম,

— আমাকে বলছেন?

— জ্বি মিস আপনাকেই। আপনাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ে তো দেখতে পাচ্ছি না। ছেলেরা তো আর মিস হয় না।

— জ্বি বলুন।

— যুবরাজ ভাইয়াকে কোথায় পাবো বলতে পারেন?

— ইউভি ভাইয়া?

— হ্যাঁ, উনিই। যুবরাজ বললে চিনে না কেউ।

— তাকে সবাই ইউভি বলে ডাকে।

— তাকে কোথায় পেতে পারি?

— আমি জানি না। তাদের খবর আমি রাখি না।

— ওহ আচ্ছা। আপনি তো এটা বলতে পারবেন যুবরাজ ভাইয়ার খবর কার কাছ থেকে পেতে পারি?

— আপনি রওনক ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করুন।

— রওনক কে?

— যুবরাজ ভাইয়ার বদলে রওনক ভারপ্রাপ্ত ভিপি পদে আছে। সে বলতে পারবে যুবরাজ ভাইয়া কোথায় আছে। তবে এই রওনককেও একটু খুঁজে নিতে হবে। এই ছেলে সারাদিন টো টো করে ঘুরে। কোথাও দুদণ্ড শান্তিতে বসে থাকে না।

— ওহ আচ্ছা আপনি মেবি রনোর কথা বলছেন।

— রণো কে?

— রওনককে আমরা সংক্ষেপে রনো বলি।

— ওহ্ আমি জানতাম না।

—ইটস ওকে। সবাই তো আর সবকিছু জানে না। এখন বলুন ওকে কোথায় পেতে পারি?

— এই রাস্তা দিয়ে বরাবরি গেলে দোতালা একটা ভবন দেখতে পাবেন। সেখানে ওদের মিটিং রুম আছে। সেখানে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে বলে দিবে।

— Thanks

—😊😊

মন ভালো ছিলো বলে এত প্যাচাল পারলাম। নয়তো ত্যাড়া কথা বলে বেচারার মেজাজ খারাপ করে দিতাম।সে চলে যেতেই আমি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক ওপেন করলাম। ছেলেটা কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এলো। দুই হাত কচলাতে কচলাতে কুচোমুচো হয়ে বললো,

— আমার নাম আবির। আপনার নামটা কি জানতে পারি? যদি আপনার কোন সমস্যা না হয়।

আমি মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে, কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

— আমার নাম জেনে কি করবেন?

— না, উপকার করলেন। পরবর্তীতে যদি আপনার ঋণ শোধ করার কোন সুযোগ পাই।

— এই সামান্য ঋণ শোধ করতে হবে না মিস্টার চবির সরি আবির।

— ওকে।

আবির মাথার পেছনের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে এগিয়ে গেলো। পেছনে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিলো।ওর হাসি দেখে ভ্র জোড়া কুঁচকে গেলো। ছেলেটাকে এতখন ঠিক মনে হলেও এখন সুবিধার মনে হচ্ছে না। ছেলেটা কি ইচ্ছে করে সাহায্য চাওয়ার ভান করলো? নাকি সত্যি সাহায্য চাইলো? রওনককে চিনলে এটা কি জানে না ও এই কলেজের ভিপি? নাহ, এখন তো ছেলেটাকে অনেক বেশি সন্দেহ হচ্ছে আমার। নিশ্চয়ই এর মাঝে ঘাপলা আছে। নয়তো সামনে এক দল ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের জিজ্ঞেস না করে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলো? এতকিছু তো আমার মাথায় খেলেনি। কথায় আছে না চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আমারও হয়েছে সেম দশা। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর একে একে সব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

— কি রে নোভা কোন দুনিয়ায় আছিস তুই?

শারমিন দুই বাহু ঝাঁকিয়ে আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করতেই আমার হুশ ফিরলো। আমি কিছুটা চমকে বললাম,

— কি কিছু না। এত দেরী হলো কেন?

— আর বলিন না। ওয়াসরুমে যা ভীড়।

— ক্যান্টিনে যাবি?

তন্বী আমার এক হাত ধরে অনুরোধের সুরে বললো,

— না ক্যান্টিনে যাবো না। চলো ফুচকা খেতে যাই।

শারমিনও তন্বীর কথার রেশ ধরে বললো,
— হ্যাঁ, চল। অনেকদিন ধরে ফুচকা খাওয়া হয় না। আজ ফুচকা খেতে যাই।

আমি মাথা থেকে আবিরের বিষয়টা ঝেড়ে ফেলে সিরিয়াস ভঙ্গিতে ওদের বললাম,

— ওকে চল তাহলে।

তিনজন একসাথে হাঁটতে লাগলাম। এখন অফ পিরিয়ড। সেই সুবাদে বাইরে ঘুরছি। ওরা দুজন হাসি-ঠাট্টা করতে লাগলো। ওদের সাথে আজ আমিও যোগ দিলাম। হাসির পাল্লায় পরে আবিরের কথা ওদেরকে বলতে বেমালুম ভুলে গেলাম। শারমিন হাসি থামিয়ে আমাকে খোঁচা মেরে বললো,

— কিরে তোর বিয়ের খবর কি? সব তো পাকা এখন। তাহলে দেরী কেন?

— ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিয়ে।

— এত দেরী কেন?

— সব দিক বিবেচনা করে শেষ দিকে দেওয়া হয়েছে।

— এখন নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়। তার মানে তোর বিয়ের আরো দেড় মাস বাকি। তোর আব্বু না বলেছিলো দুই সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দিবে।

— তোকে কে বললো?

শারমিন লাজুক হেসে ভ্রু-এর কাছটা চুলকে বললো,
— তওহিদ।

তওহিদের কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম। কিন্তু তন্বী বিস্মিত চাহনি দিয়ে চোখ কপালে তুলে বললো,

— ঘটনা কি শারমিন আপু? হাবভাব তো আমার ভালো ঠেকছে না। তওহিদ ভাইয়ার সাথে আজকাল তোমার বেশ কথা হয় দেখছি। ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে বুঝি?

শারমিন তন্বীর পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো,

— বেশি বুঝিস কেন?

— আমি বেশি বুঝছি না শারমিন আপু। যেটা সঠিক সেটাই বুঝছি।

— জ্বি না। তেমন কিছু না।

— তাহলে কেমন কিছু?

আমি হাত উঁচিয়ে দুটোকে থামিয়ে বললাম,
— এবার থাম তোরা। রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছিস? মানুষ দেখলে খারাপ বলে।

শারমিন বললো,
— বললি না বিয়ে এত পিছালো কেন?

— কি আর বলবো বল? আম্মু স্কুলে চাকরি করে। আমার বিয়েতে না হলে ৭ দিন ছুটি নিতে হবে। তাতেও হবে কিনা সন্দেহ। আব্বু তো সহজে ছুটি পায় না। এখন বিয়ে হলে অনেক আত্মীয়-স্বজন আসতে পারবে না। সামনে তাদের বাচ্চাদের পরীক্ষা। তাই সবদিক বিবেচনা করে ডিসেম্বরের শেষে ফেলা হয়েছে। ঐ সময় সবারি পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। শীতকালীন ছুটি থাকবে। আমাদের যে ডিসেম্বরে একটা সেমিস্টার আছে তা কি ভুলে গেছিস তুই? এখন বিয়ে হলে পাক্কা আমি সেমিস্টারে খারাপ করবো।এনাম ভাইয়ারও এই মাসের শেষ দিকে এক্সাম আছে। মাত্র একটা দেবর আমার। এনাজের আপন বলতে শুধু এনাম ভাইয়াই। উনি যদি বিয়েতে না থাকতে পারে তাহলে কি কারো ভালো লাগবে বল? তাই ডিসেম্বরের শেষ দিকেই ঠিক আছে। কারো কোন এক্সাম থাকবে না, কব্জি ডুবিয়ে বিয়ের খাবার খাবে।

তন্বী মুখটাকে শুকনো করে বললো,
— সেই সময়ে কনকনে ঠাণ্ডা থাকবে। গ্রামে যেই শীত। তোমার অনুষ্ঠানে আমাকে গায়ে কম্বল জড়িয়ে বসে থাকতে দেখবে। সামাদ ভাইয়ার বিয়ের সময় হালকা শীত ছিলো। তাতেই আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম সর্দি-কাশি তে পায় নাকি। এখন কি হবে আল্লাহ মালুম।

আমি শারমিনকে বললাম,
— তোর কিন্তু গায়ে হলুদের আগের দিন যেতে হবে।

শারমিন নিরাশ কন্ঠে বললো,
— দেখ আমাকে শুধু বিয়ের দিনের জন্য যেতে দেয় কিনা! জানিসই তো আমার পরিবার কিরকম।

— তুই চিন্তা করিস না আন্টিকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের। সব ব্যবস্থা করে ফেলবো। দশটা না পাঁচটা না একটামাত্র বেস্টু আমার। তোকে ছাড়া কি আমি বিয়ে করতে পারি বল।

শারমিনকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলার সাথে সাথে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সেই হাসিতে আমিও খুশি। বিয়ের তারিখটা সব দিক মাথায় রেখেই ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফেলা হয়েছে। আব্বু তো চেয়েছিলো দুই সপ্তাহের মধ্যে বিয়েটা সেরে ফেলতে। যদিও সেটা খুব তাড়াহুড়ো হয়ে যায়। সবাই একসাথে যখন বসলো তখন দেখা গেলো নানাজনের নানা সমস্যা। সবার সাথে প্রায় তিনঘণ্টা কথা বলে, সব দিক মাথায় রেখে, সবার মতামত নিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্স করা হলো ডিসেম্বরের শেষে। সেই সময় কারো কোন সমস্যা নেই। মানে আরো দেড় মাস পর বিয়ে।

💖💖💖

কথা বলতে বলতে কলেজ গেইট পার হতেই সামনে এনাজকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। উনি এখানে কি করেন? তার তো এখন অফিসে থাকার কথা। তার সামনে গিয়ে দুই হাত কোমড়ে রেখে বললাম,

— এই যে মিস্টার এনজিও সংস্থা এখানে কি?

এনাজ মুখে হাসি হাসি একটা ভাব রেখে রওনক ও তওহিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো। আমার কন্ঠ পেয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমার টিডি পোকাকে এক নজর দেখতে এসেছি।

তার উত্তর শুনে তওহিদ ভাইয়া, রওনক “ওহো” বলে চেচিয়ে উঠলো। আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। রওনক বললো,

— ইস, আমার ভাইয়ের লজ্জাবতীটা।

আমি রওনকের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,

— এখন যেমন আছো তেমনি থেকো ভাবী। তোমাকে পূর্বের মিস ঝগড়ুটে রূপে যাওয়ার কোন দরকার নেই।

রওনকের কথা বলার অঙ্গিভঙ্গিতে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। হঠাৎ আবিরের কথা মনে হতেই হাসিটুকু আমার মিইয়ে গেলো। মৃদু গলায় বললাম,

— রওনক ভাই আপনাকে একটা ছেলে খুজছিলো।

রওনক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— যে খোঁজার খুঁজুক। যার দরকার হবে সে আবার আসবেই। সবসময়েই এত ঝামেলা ভালো লাগে না।

তওহিদ ভাইয়া আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। তারপর শারমিনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আমাকে বললো,

— তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে হবু মিসেস এনাজ?

আমার উত্তর দেওয়ার আগে তন্বী রওনকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তওহিদ ভাইয়াকে বললো,

— ফুচকা খেতে যাবো আমরা।

রওনক মুখটাকে বাঁকিয়ে বললো,
— এই ভরদুপুরে ফুচকা!

তন্বী ভেংচি কেটে বললো,
— জ্বি।

তওহিদ ভাইয়া এনাজকে বললো,
— চল এনাজ আমরা তাহলে তাদের সাথে যাই। বসে আলাপ-আলোচনা করা যাবে।

এনাজ পকেট থেকে মোবাইল বের করে টাইম দেখে নিয়ে পুনরায় মোবাইল পকেটে রেখে বললো,

— হুম চল।

শারমিন এতখন চুপ করে থাকলেও তওহীদ ভাইয়ার কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

— কিসের আলাপ-আলোচনা?

তওহিদ ভাইয়া এক চোখ মেরে দুষ্টুমীর সুরে বললো,

— বিয়ের। এনাজ,নোভার বিয়ের প্ল্যানিং-এর কথা বলছি আমি।

তওহিদ ভাইয়া দাঁত বের করে হে হে করে হাসতে লাগলো। শারমিন মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলো। রওনক, তন্বী একে অপরের সাথে চোখে ইশারা করে কি কথা বলছে আল্লাহ মালুম। ওদের কথা ওরাই বুঝছে।যার দরুন একটু পরপর দুজনেই মিটমিট করে হাসছে। আমাদেরকে স্পেস দিয়ে ওরা চারজন একসাথে হাঁটতে লাগলো।আমরা কিছুটা পেছনে। কলেজ থেকে সাত মিনিট পশ্চিমে হাঁটলে একটা ফুচকার স্টল। আমরা এখন সেদিকেই যাচ্ছি। আমি ও এনাজ পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। দুজনেই চুপ। নীরবতা ভেঙে আমিই প্রথম কথা বলে উঠলাম।

— হাতের ঘড়ি কোথায়?

— নষ্ট হয়ে গেছে।

— কিনবেন না?

— না আগেরটাই ঠিক করিয়ে নিবো। সামনে বিয়ে আমার। টাকা জমাচ্ছি। এখন অযথা খরচ করতে চাই না। মধ্যবিত্ত ছেলে আমি। অযথা খরচ মানায় না আমার। তাছাড়া সামনে সংসারী হবো। আমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্যও তো কিছু রাখতে হবে।

তার কথায় খুশি হয়ে মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— গুড।

— নূর ভাবী চলে গেছে?

— হ্যাঁ, আজ সকালে।

— আম্মু, আব্বু তো গত পরশু চলে গেছে?

— হ্যাঁ আম্মুর স্কুল খোলা তো।

— বিয়ের শপিং-টা তোমায় সাথে নিয়ে করতে চাইছি। তোমার কসমেটিকস, ড্রেস তুমি চয়েজ করে নিবে।আমি মেয়েদের কোন জিনিসপত্রের ধারণা নেই।

— ওকে। আপনি আজ অফিসে যাননি?

— কি মনে হয়?

— পরনে তো অফিসের গেটআপ দেখা যাচ্ছে। তারমানে গিয়েছিলেন।

— আজ হাফ ডে ছিলো। ১ টার দিকে সব ছুটি হয়ে গেছে। আমি ভাবলাম আমার পোকাটার সাথে দেখা করে আসি। দুদিন ধরে তো দেখা হয় না।

আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম,
— আমি পোকা?

এনাজ আমার দুই গাল টেনে দিয়ে বললো,
— হ্যাঁ, আমার টিডি পোকা।

— আপনি তো এনজিও সংস্থা।

— হুম জানি।

টুকটাক কথা বলতে বলতে পথ চলছিলাম। আমি একা একা হাত নাড়িয়ে কথা বলছিলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি এনাজ নেই। পেছনে তাকিয়ে দেখি সে আমার থেকে অনেকটা দূরে। তার মানে এতখন আমি একাই বকবক করছিলাম। এনাজ দৌড়ে আমার পাশে এসে হাঁপাতে লাগলো। আমি কিছুটা কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

— কোথায় গিয়েছিলেন? আমি তো একা একা কথা বলছিলাম। আপনি যে আমার পাশে নেই সেটাও খেয়াল করিনি। ভেবেছি আপনি আমার সাথেই আছেন। আপনার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আপনি নেই।

— ঐ তো ঐ মোড়ে একজন বৃদ্ধ লোক বসে ভিক্ষা করছিলো। আমার অনেক খারাপ লাগলো তাকে দেখে। তাই পানি ও কিছু খাবার কিনে দিয়ে এলাম।

তার কথা শুনে যতটুকু রাগ হয়েছিলো তা উড়ে গেলো। আমার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। নাহ্ আমি কোন ভুল মানুষকে নিজের জন্য পছন্দ করিনি। এই মানুষটাকেই আমার চাই। আমি কথা বলতে বলতে দিকপাশ ভুলে যাই। আর উনি সবদিকে খেয়াল রাখে। খুশিমনে তার এক বাহু দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলাম। উনি রাস্তার মাঝে আমার অদ্ভুত আচারণ দেখে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে ফেললো। আমি ধীর কন্ঠে বললাম,

— আমাকেও বলতেন আমিও একটু সাহায্য করতাম।

— আমি আর তুমি কি আলাদা হলাম নাকি? আমি করেছি মানে তুমিও করেছো। আমার সবকিছুতে তো তোমার অধিকার।

আমি তার কথার বিনিময়ে কিছু না বলে হুট করে বললাম,

— ভালোবাসি!

— আমিও।

— চলুন যাওয়া যাক। রাস্তার মাঝে কি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?

উনি অবাক হয়ে বললো,
— তুমি আমার বাহু ধরে হাঁটবে?

— কেন কোন সমস্যা?

— একটুও না। তুমি তো সচারাচর এমনটা করো না। তাই কনফিউজড হচ্ছি।

— আমার হবু বরের হাত আমি ধরে হাঁটবো কার কি?

— হ্যাঁ তাও ঠিক। তবে মাঝে মাঝে তোমার কি হয় আমি নিজেও বুঝি না। অদ্ভুত পাগলামি করো।

আমি দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,

— রাস্তায় বেশি মানুষ নেই। তাই হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছে হলো। বেশি মানুষ থাকলে কি এমন পাগলামি করি?

— যতখুশি পাগলামি করতে মন চায় করো। কিন্তু এখন জলদী করে চলো। ওরা বোধহয় স্টলে চলে গেছে। কল দিচ্ছে আমাকে।

— আচ্ছা চলুন।

এনাজের কাঁধের থেকে মাথা সরিয়ে তার বাহু জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলাম। আমাদের উচ্চতার ডিফারেন্ট খুব বেশি নয়। মাত্র ছয় ইঞ্চি। পায়ে উচু গোড়ালির জুতো পরে থাকায় অনায়াসে তার কাঁধে মাথা রাখতে পারেছি আমি। উনি একবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে সামনে নজর দিলো। আমি তো তার বাহু ধরে হেলেদুলে হাঁটছি। তাকে জ্বালানোর জন্য। কিন্তু সে মোটেও বিরক্ত নয়।চুপচাপ খুশিমনে সহ্য করে নিচ্ছে।

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_63
#Writer_NOVA

দুই দিন পর………..

কোলিং বেল বাজতেই কপালে ভাজ পরলো আমার। এই অসময় আবার কে? এত সকালে তো কারোর আসার কথা নয়। ফজরের নামাজ পরে সোফায় এসে বসে আছি। সোফা থেকে উঠে দরজা খুলতে এত কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার দুরত্ব। আলসেমি ধরলে সারা শরীরে জং ধরে যায় আমার। খালামণি কিচেনে চা বানাচ্ছিলো। এদিকে কোলিং বেল বেজেই চলছে। খালামণি আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,

— নোভা উঠে দেখ না কে এসেছে?

— উঠতে কষ্ট লাগে খালামণি।

— আসবো লাঠি নিয়ে।

— আসো তাহলে সেই ভয়ে দৌড়ে খুলে দিবো।

— যা খুলে দে।

— উফ, অসহ্যকর। এতবার কেউ কোলিং বেল বাজায়? বিরক্ত লাগে এই জিনিসটা আমার। দরজার বাইরের মানুষটা কেন বুঝে না যে দরজা খুলবে সে হেঁটে হেঁটে আসবে উড়ে উড়ে না।

— তোর মতো আলসেমি করলে দরজা খুলতে সারাদিন লাগবে।

— যাচ্ছি, যাচ্ছি।

বিরক্ত নিয়ে দরজা খুললাম। দরজার ওপরপাশে কাউকে না দেখে মেজাজ চটে গেল। চেচিয়ে খালামণিকে বললাম,

— দেখ খালামণি কেউ নেই।

— তুই যে ঢিলামি করে দরজা খুললি এতে বেচারা হয়রান হয়ে চলে গেছে।

— আমার কি দোষ! একটু দেরী করলে কি হতো?

— দরজা বন্ধ করে চলে আয়।

খালামণির কথামতো দরজা বন্ধ করতে নিলেই নিচের দিকে চোখ পরলো। মাঝারি আকারের একটা গিফটবক্স রাখা। আমি হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। গিফট বক্সটা বাসার ভেতর নিবো কি নিবো না সেই দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেলাম। এক সময় ভাবলাম নিয়েই যাই। আমাদের বাসার সামনে রেখেছে তার মানে এটা আমাদেরই। কিন্তু কে দিলো? গিফট বক্সটা নিয়ে দরজা আটকাতেই আমার মোবাইলে কল এলো। এত সকালে আম্মুর কল দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। সচারাচর আম্মু এত সকালে কল দেয় না। বাসার কারো কোন বিপদ হলো না তো। রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সালাম দিলাম,

— আসসালামু আলাইকুম আম্মু।

— শুভ জন্মদিন।

আম্মুর মুখে জন্মদিনের কথা শুনে ভয় কেটে গিয়ে বিস্ময়ে রূপান্তরিত হলো। অবিশ্বাস্য গলায় বললাম,

— আজকে আমার জন্মদিন?

— না, আমার পালক মেয়ের জন্মদিন।

— দেখছো আমি ভুলেই গিয়েছি।

— তোর জন্মদিন তোর আবার কবে মনে থাকলো?

— তাও ঠিক কথা। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তো তুমি আছো। তাহলে আমি কেন মনে করবো?

— নে তোর আব্বুর সাথে কথা বল।

— হুম দাও।

এটা সত্যি কথা আমার জন্মদিনের দিন আমারি মনে থাকে না। কিন্তু আম্মু কখনও ভুলে না। প্রতিবার আম্মু সকালে উঠে আমাকে ঘুমের মধ্যেই কপালে চুমু দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতো। এবার শুধু তাদের থেকে দূরে। দেড় মাস পরে তো সারাজীবনের জন্য দূরে চলে যাবো। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। চোখের পানি পরার আগেই মোবাইলের অপরপাশে আব্বুর কন্ঠস্বর পেলাম।

— আসসালামু আলাইকুম বড় মা। কেমন আছো?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?

— আলহামদুলিল্লাহ। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

— শুকরিয়া আব্বু।

— পড়াশোনা ঠিকমতো করো।

— দোয়া করো তোমরা।

— এনাজ কেমন আছে? ওর সাথে কি দেখা হয়?

— আছে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। দুদিন আগে দেখা হয়েছিলো। প্রতিদিন কলে কথা হয়।

— সাবধানে থেকো। এই নাও ইভা কথা বলবে তোমার সাথে।

— আচ্ছা, মোবাইল দাও ওর কাছে।

ইভা মোবাইল নিয়ে চেচিয়ে বললো,
— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মোটু। গত ২২ বছর আগে তোমার মতো একটা শয়তান মেয়ের জন্ম হয়েছিল।

— এসে নেই বাড়িতে। তোর পিঠের হাড্ডি ভাঙবো আমি।

— তোমার জন্মদিন তো তোমারি মনে নেই। অবশ্য মনে ছিলো কোনদিন। সে যাই হোক যে যা গিফট করবে সেগুলো আমাকে দিয়ে দিয়ো। তোমার তো সামনে বিয়ে। ঐ বিয়েতে অনেক কিছু পাবা। তাই জন্মদিনেরগুলো আমার।

— ইভু মার খেতে না চাইলে আজাইরা বকবক বন্ধ কর। যা গিয়ে পড়তে বস।

— এর জন্য বলে কারো ভালো করতে না। আমি কত সুন্দর করে উইশ করলাম আর তুমি আজকের দিনেও আমাকে বকতেছো।

— ভাগ্য ভালো তুই সামনে নেই। নয়তো মার খেতি।

— আচ্ছা রাখি ভালো থেকো। পরে কথা হবে। জন্মদিনের ট্রিট পাই আমি। সেটা দিতে ভুলো না। ভুলে গেলে জামাই বাড়ি যেতে দিবো না।

—ওকে, দেখা যাবে।

কল কেটে গিফট বক্সের দিকে তাকালাম। আমার বার্থডে উপলক্ষে কি কেউ গিফট পাঠিয়েছে? হতে পারে। গিফট পেপার ছিঁড়ে ফেললাম। বক্সের ঢাকনা খুলে দেখি এক ডজন চুড়ি। চুড়ি দেখে আমার মেজাজ গরম। চুড়ি আমার কোনকালেই পছন্দ নয়। মেয়েদের আলাদা একটা শখ থাকে চুড়ির। কিন্তু আমার কেন জানি চুড়ি দেখলেই রাগ লাগে। আমার কালেকশনে মাত্র দুই মুঠ চুড়ি আছে। তাও এক মুঠ ইভার, আরেক মুঠ তন্বী গিফট করেছিলো। তন্বী আবার চুড়ি বলতে অজ্ঞান। মনে মনে ভেবে ফেলেছি চুড়িগুলো ইভা,তন্বী আর নূর আপিকে দিয়ে দিবো। বক্স বন্ধ করার আগে টুপ করে একটা ছোট টুকরো কাগজ পরলো। আমি উবু হয়ে সেটা উঠিয়ে ভাজ খুললাম। সেখানে লেখা ছিলো,”নয় নাম্বার বিপদ সংকেত ” আজব লেখাটা পরে কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। খালামণি আমাকে ডেকে বললো,

— থম মেরে কি করিস?

— কিছু না খালামণি।

— তন্বী কি ঘুমিয়ে গেছে?

— সেই কখন।

— তোর চা পাতিলে আছে। গরম করে নিস।

— আচ্ছা। তায়াং ভাইয়া কি ঘুমে?

— তায়াং তো সকালে নামাজ পরতে গিয়েছিল। এখনো তো এসেনি।

খালামণি তার রুমে চলে গেল। গতকাল বিকেলে দাদী চলে গেছে। তাই খালামণি এখন একা। পাশের ফ্লাটে গুছগাছের পর্ব চলছে। আজ ইফাতের আম্মুর সিজার করাবে। রাতে তার সাথে কথা বলে এসেছি। আমি চিরকুটটা ভাজ করে বক্সের ভেতর রেখে দিলাম। আর গিফট বক্সটা ডেসিং টেবিলের ওপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

💖💖💖

— মামা, ঐ ঘড়ির দোকানটার সামনে রিকশা থামিয়েন তো।

রিকশাওয়ালা আমার কথামতো দোকানের সামনে রিকশা থামালো। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। তন্বী আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,

— তুমি এখানে এলে কেন?

— নাচতে।

— প্লিজ বলো না।

— ঘড়ির দোকানে মানুষ কি করতে আসে?

— ঘড়ি কিনতে।

— তাহলে আমিও তা করতে এসেছি।

— তোমার তো অনেকগুলো ঘড়ি আছে। তুমি আবার ঘড়ি কিনে কি করবে?

— আমার জন্য নয়।

— তাহলে কার জন্য?

— আমার উনির জন্য।

— এনাজ ভাইয়ার জন্য!

— জ্বি হ্যাঁ। আমার উনি তো তিনিই। নিশ্চয়ই অন্য কেউ নয়।

— কি উপলক্ষে গিফট করছো?

— জামাইকে গিফট করতে আবার উপলক্ষে লাগে নাকি?

— না লাগে না। তবুও জিজ্ঞেস করলাম।

— ওর ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম আমি একটা গিফট করে দেই।

— যাক এতদিনে একটা কাজের মতো কাজ করছো।

— কেন অন্য সময় কি অকাজ করি?

— তুমি কাজের থেকে অকাজই বেশি করতে পছন্দ করো। সেটা আমি ভালো করে জানি।

— হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। চল, ভেতরে যাই।নয়তো কলেজে যেতে দেরী হয়ে যাবে।

— ওকে চল।

দুজন কথা বলতে বলতে দোকানের ভেতরে চলে গেলাম। দুদিন আগেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম এনাজকে একটা ঘড়ি গিফট করবো। এর মধ্যে সময় করে উঠতে পারিনি। আজ সময় করে চলে এলাম।

দুপুরে……

কলেজ শেষ করে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য। তন্বী, শারমিনের হদিস নেই। কল করছি দুটোর মোবাইল বন্ধ বলছে। দুপুর হয়ে গেলো এখনো একজনও আমাকে উইশ করেনি। তায়াং ভাইয়া তো প্রতিবার আমাকে উইশ করে। কিন্তু এবার কোন খোঁজ নেই। আমার এনজিও সংস্থা তো এখন অব্দি কলও করেনি। বউয়ের জন্মদিন সেও বোধহয় ভুলে খেয়ে ফেলছে। মন আমার ভীষণ খারাপ। আসুক আবার ভালোবাসা দেখাতে। প্রত্যেকটাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো। রোদ উঠেছে আজ গ্রীষ্মকালের মতো। যার দরুণ গরম লাগছে।চারিদিকে কোন মানুষের আনাগোনা নেই। হঠাৎ আমার সামনে একটা বাইক থামলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বাইকের দিকে তাকাতেই আবিরকে দেখতে পেলাম। আবির হাত নাড়িয়ে বললো,

— হেই মিস, কেমন আছেন?

আবিরের দিকে আমি একটা ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডানে-বামে তাকাতে লাগলাম। কলেজ ছুটি হয়েছে প্রায় দশ মিনিট ধরে। এর মধ্যে পুরো কলেজ ফাঁকাই বলা যায়। হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে না বলে বিগত ছয় মিনিট ধরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এখন এই ফালতু ঝামেলা এসে কাঁধে ভিড়লো। আবির আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তাড়া দিয়ে বললো,

— কি হলো কথা বলছেন না যে?

অনেক কষ্টে নিজেকে একটু শান্ত করেছিলাম। কিন্তু এই ছেলে আমার মেজাজ পুনরায় বিগড়ে দিলো। কঠিন গলায় বললাম,

— আমি কি আপনাকে চিনি যে আপনার সাথে কথা বলবো?

— ওমা, কালকে না পরিচিত হলাম।

— কখন?

— এখুনি ভুলে গেলেন?

— দেখুন গায়ে পরে কথা বলার মানুষ আমার একদম পছন্দ নয়। ছেঁচড়া মনে হয়। আপনি তো সবসময় নায়কের সাজ সেজে থাকেন। তাহলে স্বভাবটা নায়কের মতো না হয়ে ছেঁচড়ার মতো কেন?

— অপমান করছেন?

— এতখনে বুঝলেন?

— আপনি গতকাল উপকার করলেন। তাই আমি ভাবলাম আজ যদি তা ফেরত দিতে পারি। আপনাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলাম। আর আপনি আমাকে ছেঁচড়া বানিয়ে দিলেন।

— সামান্য একটা উপকার করলে যে আপনি এমন ফেভিকল আঠার মতো চিপকে থাকবেন, সেটা যদি জানতাম, তাহলে ভুলেও গতকাল আপনাকে উপকার করাতো দূরে থাক আপনার সাথে কথা বলতাম না।

— আপনাকে দেখে তো শান্তশিষ্ট মনে হয়। কিন্তু এত তেজ কোথা থেকে আসছে তাই ভাবছি আমি।

— আমি মোটেও শান্তশিষ্ট নই। গতকাল ভদ্রতার খাতিরে ভালো ব্যবহার করেছি তো তাই পার পেয়ে গেছেন। যত্তসব আজাইরা পাবলিক।

গটগট পায়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম। আর দু-এক মিনিট থাকলে ব্যাটার গালে ঠাস করে চড়ও বসিয়ে দিতাম। তার চেয়ে ভালো এর সামনে থেকে সরে যাই। কিন্তু সে হাল ছাড়লো না। ধীরে বাইক চালিয়ে আমার সাথে সাথে আসতে লাগলো। আমি থেমে তার দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললাম,

— সমস্যা কি আপনার? আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করছেন কেন?

— আমি কি করলাম?

— আপনি জানেন না আপনি কি করেছেন?

আবির ইনোসেন্ট ফেস করে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। মাথার মধ্যে চিনচিন রাগ উঠছে। আমি কিছু বলতে নিলেই দেখলাম সে চোখের ইশারায় কারো সাথে কথা বলছে। আমি তার দৃষ্টি বরাবর তাকাতেই কেউ একজন দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরলো। আমি সেদিকে গ্রাহ্য না করে এক দফা তাকে ঝাড়লাম। বেচারা করুন চোখে তাকিয়ে বললো,

— এবার একটু থামেন প্লিজ। সেই কখন থেকে আমাকে বকেই যাচ্ছেন। আপনি যেরকম ছেলে ভাবছেন আমাকে, আমরা মোটেও সেরকম ছেলে নই।

— আপনি কিরকম ছেলে তা আমার জানা হয়ে গেছে। চিপুক টাইপের ছেলে আপনি। যে কারো সাথে চিপকে থাকেন। আমি আপনাকে…..

পুরো কথা আমার শেষ করা হলো না। তার আগেই পিছন থেকে কেউ মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আমি কিছু সময় ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে গেলাম। জ্ঞান হারানোর আগে শুধু এতটুকু দেখেছিলাম যে আমার সামনে থাকা আবিরের মুখে এক টুকরো রহস্যময় হাসি ফুটে উঠেছে।

#চলবে।