শিশির ভেজা রোদ্দুর পর্ব-৬৮+৬৯

0
866

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_68
#Writer_NOVA

— ভাবী, একটু শুনবে প্লিজ!

বাবার বাসার থেকে বড় একটা সফর দিয়ে আজ ফিরে এসেছি। বিয়ের পরের এই দিনগুলো খুব তাড়াতাড়ি কেটে গেলো। বাইক থেকে নামতেই একটা মেয়েলী কন্ঠ পেয়ে থমকে দাঁড়ালাম। এনাজ, এনাম ভেতরে চলে গেছে। লং কুর্তি পরহিত একটা মিষ্টি দেখতে মেয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি এক চিলতে হাসি দিয়ে বললাম,

— আমাকে বলছেন আপু?

— হ্যাঁ ভাবী তোমাকেই বলছি।

— জ্বি বলুন।

— আমি তোমার ছোট হবো ভাবী। তাই প্লিজ আপনি করে বলবে না। আমার নাম নিতুয়া। সবাই নিতু বলে ডাকে। তুমিও আমার নাম ধরে ডেকো।

— আমি তোমাকে চিনতে পারলাম না। যদি দয়া করে তোমার পরিচয় দিতে নিতু।

— আমি ঐ পাশের দালানে থাকি। আসলে তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। এনাজ ভাইয়ার সাথে বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ভাইয়াকে আমার ভয় করে। তাই তোমার কাছে এসেছি। তুমি পারো আমাদেরকে সাহায্য করতে।

— আমাকে একটু খুলে বলো নিতু। আমি তোমার কথা কিছু বুঝতে পারছি না।

— একটু আড়ালে যাই চলো।

— ওকে চলো।

নিতু আমার হাত ধরে দেয়ালের আড়ালে নিয়ে গেলো। আমার মাথায় কিছু খেলছে না।নিতু হাসফাস করছে। বারবার হাত কচলাচ্ছে। চোখ দুটো এদিক সেদিক ঘুরছে। বেচারীকে অনেক চিন্তিত মনে হচ্ছে। আমি ওর হাত ধরে আশ্বাসের সুরে বললাম,

— তোমার যা বলার বলতে পারো। এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমার আশ্বস্ত কন্ঠ শুনে নিতু আমার হাত ধরে কান্না করে দিলো। আমার কিছু বোধগম্য হচ্ছে না। অচেনা, অজেনা একটা মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কেন কাঁদবে? কাহিনিটা কি? মুখটাকে থমথমে করে বললাম,

— তুমি কান্না করো না প্লিজ। কি হয়েছে বলো?

— ভাবী আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কিভাবে শুরু করবো? আমার কাছে সব এলোমেলো লাগছে।

— কোন কিছু না ভেবে শুরু করে দাও।

নিতু কিছু সময় থেমে চোখের পানি মুছে নিলো। বেচারী আসলেই বুঝতে পারছে না কোথা থেকে কি শুরু করবে। এনাম ভাইয়া ডাকতে ডাকতে এদিকে আসছে মনে হচ্ছে। আমার সামনে এসে বললো,

— এই যে ভাবী আপনি এখানে? আর আমি আপনাকে সারা দালান খুঁজে হয়রান।

এনাম ভাইয়া প্রথমে নিতুকে খেয়াল করেনি। এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে নিতুর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,

— নিতু তুমি এখানে? ভাবীর সাথে কি কথা বলো?

নিতু গম্ভীর কন্ঠে বললো,
— যা এতদিন তুমি বলতে পারোনি তাই বলতে এসেছি। আমি বড় বিপদে পরে আজ এখানে এসেছি। আমি আর লুকোচুরি চালাতে পারছি না।

— তুমি আমার কথাটা শুনো নিতু।

— তোমার আর কোন কথা শুনবো না আমি এনাম।আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি কি করতে হবে।

— আমি তো আছি। তাহলে তুমি এতো টেনশন করছো কেন বলো তো?

— তুমি আছো তবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছো। আর কিছু নয়।

এদের দুজনের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। অবাক চোখে একবার এনামের দিকে আরেকবার নিতুর দিকে তাকাচ্ছি। তারা দুজন যে দুজনকে আগের থেকে চিনে তা আমি সিউর। আমি দুজনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

— তোমারা কি আমাকে বলবে এখানে হচ্ছেটা কি?

নিতু কিছু সময় থেমে বললো,
— আমি বলছি ভাবী। এনাম ও আমি একে অপরকে প্রায় দেড় বছর ধরে ভালোবাসি। আমরা চুটিয়ে প্রেম করছিলাম। হঠাৎ করে আব্বু আমাদের ভালোবাসার কথা জেনে গেছে। তবে এনামের কথা জানে না। শুধু জানে আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি। তাই এখন আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। এনামকে কত করে বললাম এনাজ ভাইয়ার কাছে আমাদের কথা বলতে। কিন্তু এনামের কোন হেলদোল নেই। তাই বাধ্য হয়ে তোমার কাছে আসতে হয়েছে। এখন তুমিই পারো আমাদেরকে বাঁচাতে। ভাইয়ার কাছে তুমি যদি আমাদের বিষয়টা খুলে বলতে তাহলে ভাইয়া নিশ্চয়ই মেনে নিবে।

পুরো তায়াং ভাইয়ার লাভ স্টোরির মতো ওদের কেস।আমি চোখ দুটো ছোট করে এনাম ভাইয়ার দিকে তাকালাম। এনাম মাথা নিচু করে চুলে হাত বুলাতে লাগলো। তলে তলে দেড় বছর ধরে প্রেম করে। আর তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে কেউ নেই। কন্ঠে কিছুটা কঠিনভাব রেখে এনামকে বললাম,

— এই ছিলো আপনার মনে? আমিও তো বলি আমার এত সুন্দর একটা দেবরের কোন গার্লফ্রেন্ড নেই। তা কি আদোও বিশ্বাসযোগ্য। আপনি তো আপনার ভাইকে বলে দিলেই পারতেন। আপনার ভাইয়া তো মানা করতো না। যেহেতু আপনার ভাইয়েরও লাভ ম্যারেজ। তাকে না বলতে পারলে আমাকে বললে মেয়েটাকে কি এত টেনশন করতে হয়? দেখেন তো চেহারার কি হাল হয়েছে? একটা মেয়ের কাঁধে যখন বিয়ের প্যারা আসে তখন কি অবস্থা হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি।

এনাম মুখটাকে অসহায় করে অপরাধী ভঙ্গিতে বললো,
— ভাইয়ার বিয়ের চাপে কিছু বলা হয়নি। বিয়ের আগেও তো আপনাকে নিয়ে ভাইয়া অনেক টেনশনে ছিলো। তাই নতুন করে ভাইয়ার মাথায় কোন টেনশন ঢুকাতে চাইনি। ভেবেছি ভাইয়াকে বিয়ের ঝামেলা যাওয়ার পর ধীরেসুস্থে সব বলে দিবো।

নীতু আমার হাত ধরে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,
— প্লিজ ভাবী তুমি কিছু করো। আমার এখন শেষ ভরসা তুমি। আমি সব ভেবে তোমার কাছে এসেছি। আব্বু এনাজ ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসে। আমার বিশ্বাস সে প্রস্তাব দিলে আব্বু মানা করতে পারবে না।

আমি ডান পাশের কপাল ডলে কিছু সময় ভেবে নিতুকে বললাম,
— আচ্ছা তোমরা আমার সাথে চলো। আমি দেখছি কি করা যায়!

নিতু একবার এনামের দিকে আরেকবার আমার দিকে তাকালো। ও ভয় পাচ্ছে। এনাম ওকে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলো। আমার দিকে তাকিয়ে নিতু বললো,
— আমার ভয় করছে ভাবী। ভাইয়া যদি মেনে না নেয় কিংবা আমাদের ওপর রাগ করে।

আমি মুচকি হেসে বললাম,
— তেমন কিছু হবে না। তোমারা চলো তো আমার সাথে। আমি আছি তো।

আমার কথায় নিতু কিছুটা স্বাভাবিক হলো। গুটি গুটি পায়ে আমার সাথে চলতে লাগলো। এনামের মুখটাও শুকনো দেখাচ্ছে। আমি ওপরে সাহস দেখালেও মনে মনে একটু ভয় পাচ্ছি। যদি আমার পাগল রেগে যায় তাহলে কি হবে?

💖💖💖

সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে এনাজ। ওর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই ও এখন কোন মুডে আছে। ওর বরাবরি নিতু বসা। আর পাশে এনাম ভাইয়া। আমি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি। এনাজকে আমি সবটা খুলে বলার পর থেকে ও এমন গম্ভীর মুখে বসে আছে। নিতু ওড়নার কোণা ধরে মোচড়াচ্ছে। ওর মুখে স্পষ্ট ভয়। এনাম ভাইয়া চুপচাপ বসে আছে। এনাজ এতখন পর মুখ খুললো। নিতুকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— তুমি বাসায় যাও। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি দেখি কি করা যায়। তুমি টেনশন করো না। আমি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখি কি হয়।

নিতু মুখ কুচোমুচো করে বললো,
— আচ্ছা ভাইয়া।

— এনাম যা নিতুকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আয়।

— তার কোন দরকার নেই ভাইয়া। আমি একা চলে যেতে পারবো। পাশাপাশি দালানেই তো আছি।

— সন্ধ্যা হয়ে আসছে। তাই দরকার আছে। এনাম কি বলেছি শুনতে পেয়েছিস কি?

এনাম ভাইয়া মাথা নিচু করে বললো,
— ঠিক আছে ভাইয়া। চলো নিতু।

নিতু সোফা থেকে উঠে ধীর পায়ে আমার সামনে এসে ফিসফিস করে বললো,
— আসছি ভাবী। কোন আপডেট এলে আমাকে জানিয়ো।

— নিশ্চয়ই, আর দেরী করো না। জলদী চলে যাও।

— আল্লাহ হাফেজ।

নিতু ধীর পায়ে বের হয়ে গেলো। ওর পিছু পিছু এনাম ভাইয়া। আমি এনাজের পাশে গিয়ে বসলাম। ও মনোযোগ সহকারে কিছু ভাবছে। আমি মৃদুস্বরে ডাকলাম।

— এনজিও সংস্থা।

— হুম বলো।

— রাতের জন্য কি রান্না করবো?

— তোমার যা মন চায়।

— আচ্ছা।

— আমি রুমে যাচ্ছি। কোন দরকার পরলে ডেকো।

আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম। সে ভীষণ চিন্তায় আছে। তাকে একটু একা থাকতে দেওয়া উচিত। তাই আমি কোন দ্বিধা না করে কিচেনে চলে গেলাম। রাতের জন্য হালকা-পাতলা নাস্তার আয়োজন করলাম। মগরিবের নামাজ পরে দুই মগ কফি হাতে রুমে ঢুকলাম। এনাজ মসজিদ থেকে নামাজ পরে মাত্র ফিরছে। এনাম ভাইয়া সেই যে নিতুকে এগিয়ে দিতে গেছে এখনো আসেনি।

রুমে ঢুকে এনাজকে কোথাও পেলাম না। বারান্দার দরজাটা হালকা করে আবজানো। আমি সেদিকে ছুটলাম। এনাজ একটা চেয়ারে বসে আরেক চেয়ার পা তুলে বসে আছে। দৃষ্টি তার সামনের দিকে। আমি কফির মগটা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম,

— কফি!

— Thanks

— শুধু Thanks?

— আর কি লাগবে?

— কিছু না। পা সরান আমিও একটু বসি।

এনাজ পাশের চেয়ার থেকে পা সরিয়ে আমাকে জায়গা করে দিলো। আমি চেয়ারে বসে তার দিকে তাকালাম। সে ততক্ষণে কফির মগে চুমুক দিয়েছে। আমি ধীর কন্ঠে বললাম,

— টেনশনে আছেন?

— হুম অনেকটা।

— কি করবেন এখন?

— দেখি তায়াং-এর সাথে কথা বলে।

— যা ভালো মনে করেন তাই করেন। তবে দেখেন শেষ অব্দি যেনো ওরা এক হতে পারে।

— এর জন্য একটু বেশি চিন্তিত।

— চিন্তা করেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।

— তাই যেন হয়।

আমি কোন কথা না বলে কফির মগে বিশাল এক চুমুক দিলাম। এনাজ ডান হাতে কফির মগ ধরে রেখেছে। বাম হাতে আমার ডান হাত নিয়ে শক্ত করে ধরলো। তারপর কফি রেখে আমার হাতের আঙুল নিয়ে খেলতে লাগলো। আমি মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলাম,

— হচ্ছেটা কি?

— কিছু না। একটা কথা বলবে?

— হুম বলেন।

— তুমি সাথে থাকলে আমার মন যত খারাপ থাকুক নিমিষেই মন ভালো হয়ে যায়। এই যে এখনকার উদাহরণ দেই। এতখন মনটা ভীষণ খারাপ ছিলো। তুমি আমার পাশে বসতেই মন খারাপ লেজ গুটিয়ে পালালো। তুমি সত্যি আমার ম্যাজিক টিডি পোকা।

— আপনিও আমার ম্যাজিক।

— মাঝে মাঝে মনে হয় তোমাকে হারিয়ে ফেললে আমার কি হতো? আমি বোধহয় দমবন্ধ হয়ে মারাই যেতাম।

আমি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বললাম,
— খালি উল্টোপাল্টা কথা! চুপ করেন।

— সত্যি কথা। আমার ভালো থাকার জন্য যে তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন।

— ভালোবাসি!

— আমিও খুব বেশি।

এনাজ চুপ হয়ে গেলো। আমার হাতটাকে শক্ত করে ধরে নিজের কেলের মধ্যে রাখলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

—আমার একরাশ শূন্যতার মাঝে তুমি এক বিশাল পূর্ণতা টিডি পোকা 🌼।

আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।এই মানুষটাকে যত দেখছি তত বেশি ভালোবেসে ফেলছি।আজকাল একে ছাড়া আমার চলেই না। এনাজ আমার মাথাটা তার বুকের সাথে চেপে ধরে মাথার ওপরে চুলের মধ্যে একটা গাঢ় করে চুমু খেলো। মগটা গ্রীলের পাশে রেখে দুই হাতে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

— তোমাকে ছাড়া আমি নিঃস্ব। আমার বাকি জীবনটা তোমার সাথে কাটিয়ে দিতে চাই। শুধু ইহকাল নয় পরকালেও আমি শুধু তোমাকে চাই। অনেক অনেক ভালোবাসি তোমাকে।

আমি চুপ করে তার বুকে মাথা হেলিয়ে রাখলাম। কথা বলে আমি এত সুন্দর মুহুর্তটা নষ্ট করতে চাই না। তার বুকে মাথা রাখলে আমার সারাদিনের হয়রান নিমিষেই হাওয়া। এনাজ পরম যত্নে আমার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে। আমি চুপ করে তার হৃৎপিণ্ডের ঢিপঢিপ শব্দ শুনছি। সময়টা থমকে যাক না এখানে, মন্দ কি তাতে?

#চলবে

#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_69
#Writer_NOVA

দুই দিন পর…..

আজ আমরা পুরো পরিবার খালামণিদের বাসায় আসছি। খালামণি তার নতুন ভাগ্নির জামাইকে দাওয়াত করেছে। তায়াং ভাইয়ার সব বন্ধুদেরও দাওয়াত করা হয়েছে। মোহনা, শারমিনও এসেছে। সবাই হুলস্থুল করে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি, তন্বী খালামণিকে হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছি। খালামণি একা এত রান্না সামলিয়ে উঠতে পারবে না। তন্বী ড্রয়িংরুম থেকে ট্রে,পিরিচ এনে আমাকে বললো,

— নোভাপু তোমাকে তোমার জামাই ডাকে।

খালামণি ওকে ধমক দিয়ে বললো,
— এসব কেমন কথা তন্বী? তোমার জামাই কি? তোর কি হয় ওর জামাই?

তন্বী দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো,
— আমার দুলাভাই হয়। তাই তো এমনি বললাম। দুলাভাইয়ের সাথে তো শালীকা একটু ঠাট্টা-মশকরা করতেই পারে।

খালামণি মুখটাকে কুঞ্চিত করে বললো,
— এনাজ তোর ভাইয়ার সমান। তাই ওকে অসম্মান করে কোন কথা বলবি না। আমি কিন্তু আমার ছেলের অপমান সহ্য করতে পারবো না।

খালামণির কথা শুনে আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
— ইস, তোমাদের ছেলেরাই সব। আমরা যেন বানের জলে ভেসে আসছি। কি তন্বী তুই কিছু বল?

তন্বী আমার সাথে সুর মিলিয়ে বললো,
— কি আর বলবো বলো? আমি এসব বহু আগের থেকে দেখে আসছি। তুমি দেখো। মায়েরা ছেলেদের বেশি আদর,স্নেহ দেয়। আর এমন একটা ভাব ধরে থাকে যেন আমরা কেউ নই।

খালামণি মুচকি হেসে বললো,
— হয়েছে অনেক বলেছিস। এবার দয়া করে দ্রুত হাত চালা। কত রান্না বাকি আছে! নোভা যা শুনে আয় এনাজ কেন ডাকছে।

তন্বী মুখ টিপে হেসে বললো,
— যাও যাও জলদী যাও। তুমি তো আবার এনাজ ভাইয়ার অক্সিজেন। তোমাকে না পেলে তো তার শ্বাসকষ্ট উঠবেই।

আমি মুচকি হেসে তন্বীর পিঠে একটা জোরে থাপ্পড় মারলাম। তন্বী আহ্ করে পিঠে হাত দিয়ে বসে পরলো। আসলে থাপ্পড়টা অনেক জোরেই লাগছে। আমিও বুঝে উঠতে পারিনি। থাপ্পড় মেরে আমি এক মিনিটও দেরী করিনি। দ্রুত কিচেন থেকে ছুট লাগিয়েছি। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তাকে পেলাম না। এদিক সেদিক তাকাতে দেখে রওনক জোরে চেচিয়ে বললো,

— তোমার জামাই এখানে নেই ভাবী।

আমি চোখ দুটো রওনকের দিকে স্থির করে জিজ্ঞেস করলাম,
— তাহলে ও কোথায়?

তওহিদ ভাইয়া শাহেদ ভাইয়ার পিঠে একটা চাপর মেরে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তোমার ও রুমে গেছে। তার এনার্জি কমে গেছে একটু বাড়িয়ে দিয়ে এসো।

আমি তওহিদ ভাইয়ার দিকে খাইয়া ফালামু লুক দিতেই সব হো হো করে হেসে উঠলো। শারমিন তওহিদ ভাইয়ার হাতে হালকা করে চড় মেরে বললো,
— কি ধরনের কথাবার্তা এসব?

তওহিদ ভাইয়া শারমিনের দিকে তাকিয়ে এক চোখ মেরে বললো,
— দোস্তের বউয়ের সাথে একটু মজা করি। তুমি চাইলে তোমার সাথেও বলতে পারি।

— আপনার মুখে লাগাম দিন তওহিদ।

— কেন গো আমার হবু বউ?

— ধূর, এর সাথে কথা বলাই বেকার।

— তাহলে বলো কেন?

তওহিদ ভাইয়া হে হে করে হাসতে লাগলো। শারমিন ভেংচি কেটে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো। শাহেদ ভাইয়া ইমরান হাশমি ভাইয়াকে খোঁচা দিয়ে বললো,

— ইমরান তুই কিছু বল।

ইমরান ভাইয়া মোবাইলে বুদ হয়ে ছিলো। মোবাইলের থেকে চোখ উঠিয়ে শাহেদ ভাইয়াকে বললো,

— কি বলবো?

— দোস্তের বউকে কিছু বলবি না?

— নারে শাহেদ। নোভা আমার বোন। বড় ভাই হিসেবে আমি কিছু বলতে পারি না।

ইমরান হাশমি ভাইয়ার কথাশ আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

— এই না হলে আমার ভাই। বাকিগুলো সব বদের হাড্ডি। (সবার দিকে চোখ বুলিয়ে) আবির ভাইয়াকে যে দেখছি না।

রায়হান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ও কাজে চলে গেছে। আবার তওহিদের বিয়েতে আসবে। এর আগে নয়।

আমি মোহনার দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দিলাম। মোহনাও তার বিনিময়ে হেসে বললো,

— কিছু বলবে ভাবী?

— না,তোমাদের সবকিছু ঠিক চলছে তো?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

— বিয়ের দাওয়াত কবে পাবো?

— আল্লাহ যেদিন কবুল করবে ভাবী সেদিন।

— ইন শা আল্লাহ খুব শীঘ্রই কবুল করবে।

— তাই যেন হয়।

আমাদের কথা শুনে রায়হান ভাইয়া আফসোসের সুরে ইমরান হাশমি ভাইয়াকে বললো,
— ইমরান আমরা কবে একটা গার্লফ্রেন্ড জুটাবোরে ভাই? তুই আর আমি কি সিঙ্গেল মরবো নাকি?

ইমরান ভাইয়া মুচকি হেসে বললো,
— আমাদের ভাই এরেঞ্জ ম্যারেজ আছে কপালে। লাভ ম্যারেজ নাই।

রায়হান ভাইয়া মুখটাকে কাঁদো কাঁদো বানিয়ে বললো,
— আব্বুকে সেদিন বিয়ের কথা বলছিলাম ছোট বোনটাকে দিয়ে। আব্বু একটা বকা দিয়ে বলে আমাকে নাকি কেউ মেয়ে দিবে না। এগুলো কোন কথা বল ভাই!

রায়হান ভাইয়ার কথা শুনে সব হো হো করে হেসে উঠলো। তায়াং ভাইয়া এতখন অব্দি চুপ করে ছিলো। হঠাৎ গম্ভীর মুখে বললো,

— তোকে এনাজ কোন সময় ডাকছে। আর তুই এখনো যাসনি?

— হ্যাঁ ভাইয়া যাচ্ছি। আমার দেবরটা কোথায়রে?

— মোবাইলে তোর জা -এর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত আছে।

ইমরান ভাইয়া রায়হান ভাইয়াকে বললো,
— বুঝলি রায়হান, এই এনামকে সাধাসিধা, সহজ-সরল ছেলে ভাবছি। কিন্তু এই ছেলে তো বড় খেলোয়াড় বের হলো। আমরা কি করলাম জীবনে? কোন মেয়ে জুটাতে পারলাম না।

তওহিদ ভাইয়া বললো,
— থাক ভাই মন খারাপ করিস না। আমরা সবাই যদি বিয়ে করে ফেলি তাহলে আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা সামলাবে কে বল? বাচ্চাদের সামলাতে তো তোদের মতো দু-একটা বন্ধু লাগবে। তাই অপেক্ষা করে বিয়ে কর। আমাদের বাচ্চাদেরও তো তোদের বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার হক আছে।

শাহেদ ভাইয়া তওহিদ ভাইয়ার কথায় তাল দিয়ে বললো,
— তওহিদ কিন্তু খারাপ বলেনি।

রায়হান ভাইয়া শাহেদ ভাইয়ার পিঠে ধুপ করে একটা ঘুষি দিয়ে বললো,
— আবার তাল দেওয়া হচ্ছে?

তায়াং ভাইয়া এবার আমাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
— তুই এখনো যাসনি?

আমি কিছুটা চমকে থতমত খেয়ে বললাম,
— হু হু যাচ্ছি।

রওনক শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— জলদী যাও ভাবী। আমার ভাইয়া তোমাকে অনেক মিস করছে।

আমি রওনকের দিকে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,
— দিন আমারো আসবে বোন জামাই! তখন আমিও সব উসুল করে নিবো।

— নিয়ো, আমি কি ভয় পাই নাকি।

আমি আর দেরী না করে দ্রুত তায়াং ভাইয়ার রুমের দিকে রওনা দিলাম। হঠাৎ করে আমার উনি আবার একা কেন ডাকলো? কোন সমস্যা হয়নি তো? এতখন তো এসব মাথায় আসেনি। এখন আসায় দ্রুত পায়ে এগিয়ে যোতে লাগলাম।

💖💖💖

— কাকে খুঁজো ভাবী?

এনামের কথায় অনেকটা চমকে গেলাম। তায়াং ভাইয়ার রুমের খাটের ওপর বসে নিতুর সাথে মনযোগ সহকারে কথা বলছে এনাম। ওদের সবকিছু সেটিং করে ফেলছে এনাজ। বিয়ের পিড়িতে বসতে ওদের দেরী আছে। তবে আপাতত আমরা কয়েকজন গিয়ে নিতুকে আংটি পরিয়ে রেখে আসবো। পরবর্তীতে এনামের চাকরী হলে নিতুকে উঠিয়ে আনা হবে। নিতুর বাবা আমার বাবার মতো এতো বেশি ঝামেলা করেনি। আমি একবার এনামের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম,এনাম এখানে হলে এনাজ কোথায়? আমি ওর দিকে তাকিয়ে কিছুটা মুখে হাসি রেখে জিজ্ঞেস করলাম,

— আপনার ভাইয়া কোথায়?

— ভাইয়া তো তন্বীর রুমে। কোন দরকার ভাবী?

— আপনার ভাইয়া আমাকে ডাকছিলো। তাই আরকি। ওর শরীর খারাপ করলো কিনা।

— ভাইয়া বললো তার নাকি মাথা ধরছে।

— আচ্ছা আমি যাচ্ছি।

— ভাবী শুনেন?

— জ্বি বলেন ভাইয়া।

— অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

— কেন?

— আপনার জন্য নিতুকে আমি পেলাম। সবটা আপনার সাহায্যের কারণে। আগে সবসময় শুনতাম বড় ভাইয়ের বউ হয় বড় বোন কিংবা মায়ের মতো। আজ আমি নিজ চোখে তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম।

— তেমন কিছুই তো করতে পারলাম না দেবরজী।

— তবুও যা করেছেন কম কি?

— অনেক কম।

— একটুও না। আপনি ভাইয়াকে কত সুন্দর করে সবটা বুঝিয়ে বললেন সেদিন। আমি হলে কখুনি পারতাম না। আপনি সেদিন আমাদের সাহায্য না করলে আজ আমরা দুজন দুদিকে ছিটকে পরতাম।

— আরে ধূর, আপনি একটু বেশি বলছেন।

— একটুও বেশি বলছি না।

— আচ্ছা, আমি আসি। আপনার ভাইয়ার কাছে যাই।
আর কোন কিছু লাগলে আমাকে ডেকেন।

—ওকে।

তায়াং ভাইয়ার রুম ছেড়ে এনাজের কাছে গেলাম। রুমে ঢুকতেই দেখলাম সে কপালে হাত দিয়ে বালিশে শুয়ে আছে। আমি ধীর পায়ে তার কাছে গিয়ে মৃদুস্বরে ডেকে বললাম,

— এনজিও সংস্থা খারাপ লাগছে?

কপালের উপর থেকে হাত না সরিয়ে বললো,
— ওহ আসছো তুমি। এতখন পর আমার কথা মনে পরলো তাহলে তোমার?

— কিচেনে কাজ করছিলাম। তায়াং ভাইয়া বললো আপনার নাকি মাথা ধরছে!

— হুম ভালোই ধরছে। কপালটা একটু টিপে দিবে। সাথে চুলে একটু বিলি কেটে দিও।

— আচ্ছা আমি কপালে বাম লাগিয়ে টিপে দিচ্ছি। আপনি শুয়ে থাকুন।

— টিডি পোকা!

— হুম বলেন।

— তুমি কিন্তু আবারো আপনি বলা শুরু করছো।

আমি জিহ্বায় কামড় দিয়ে অপরাধী ভঙ্গিতে বললাম,
— পুরনো অভ্যাসতো ছাড়তে পারি না।

— অভ্যাস করতে হবে।

— আচ্ছা জনাব।

টেবিলের ড্রয়ার থেকে মাথাব্যথার বাম বের করে তার শিউরের পাশে বসলাম। আমি বসতেই সে আমার কোলে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পরলো। কপালে বাম ডলে কিছু সময় টিপে দিলাম। সে উপুড় হয়ে শুয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমি একটু ঘুমাবো।

— ঘুমাও, মানা করলো কে?

— তুমি এভাবে বসে থাকো। তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাবো। এখান ছেড়ে কোথাও যাবে না। ঘুম থেকে উঠে যেন তোমাকে এভাবেই দেখতে পাই।

— কিরকম কথা এসব? খালামণি, তন্বীর সাথে একটু কাজ করতে হবে তো। তাছাড়া আপনার বন্ধুরাই বা কি বলবে?

— কেউ কিছু বলবে না। তুমি চুপ করে এখানে বসে থাকো। আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকবো।

— এটা কেমন কথা এনাজ?

— এমন কথাই। তুমি যদি এখান থেকে উঠে যাও তাহলে আমি কিন্তু অনেক রাগ করবো।

তার কন্ঠে স্পষ্ট রাগী ভাব শোনা যাচ্ছে। পাগল রাগালে আমার কপালে শনি আছে। তাই চুপচাপ মেনে নিলাম। কোমড়টাকে আরো শক্ত করে ধরে পেটে দুটো চুমু খেলো। আমি কিছুটা চমকে উঠলাম। তার দিকে তাকাতেই সে আমার এক হাত নিয়ে তার মাথায় রেখে বললো,

— হাত বুলিয়ে দাও। সাথে একটু বিলি কেটেও দিয়ো।

আমি কোন দ্বিধা না করে তার মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলাম। আল্লাহ জানে বাকি সবাই কি ভাবে!

— এনাজ, নোভা খেতে আয়।

তায়াং ভাইয়ার ডাক শুনে হুরমুর করে উঠলাম। এনাজের মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে কখন যে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছি বলতেও পারি না। এনাজ এক হাতে পেট জড়িয়ে ধরে এখনো ঘুমিয়ে আছে। তায়াং ভাইয়া আবারো দরজার বাইরে থেকে ডাকলো।

— কিরে তোরা কি খাবি না?

— আসতেছি ভাইয়া।

— জলদী আসিস। এনাজ কি এখনো ঘুমে?

— হুম উঠে নাই।

— মাথাব্যথা কমছে?

— বলতে পারছি না।

— না কমলে খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে বল।

— আচ্ছা তুই যা আমরা আসতেছি।

তায়াং ভাইয়া চলে গেলো। আমি এনাজকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বললাম,
— এই যে ওঠো। খাবে না?

— উহু।

— উহু বললে তো হবে না। খেতে হবে তো। খাবার খেয়ে একটা ঔষধ খেয়ে নিও।

— আরেকটু ঘুমাই।

— জ্বি না উঠো।

জোর করে তাকে উঠিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলাম। আমাদের দেখে রওনক টিটকারির সুরে বললো,

— বুঝলেন তওহিদ ভাই, আমাদের এনাজ ভাই তো দেখছি সেই বউ পাগল ছেলে। বউকে নজর ছাড়া করতে চায় না। বউ সামনে থাকলে মাথাব্যথাও ভালো হয়ে যায়।

এনাজ চেয়ার টেনে বসতে বসতে রওনককে বললো,
— খুব সহজে আমাদের তন্বীকে পেয়ে যাচ্ছো তাই গুরুত্ব টের পাচ্ছো না। আমার মতো কষ্ট করে পেলে তার মূল্য বুঝতা।

রওনক বুঝদারের মতো ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে বললো,
— কথা ভুল বলেন নাই বড় ভাই।

খালামণি প্লেটে পোলাও বেড়ে দিয়ে এনাজের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— মাথাব্যথা কমছে বাবা?

— জ্বি আলহামদুলিল্লাহ আন্টি,অনেকটা কমছে।

— খেয়ে একটা ঔষধ খাও।

— ঠিক আছে।

রায়হান ভাইয়া মুখ টিপে হেসে বললো,
— মাথাব্যথা এমনি কমে গেছে আন্টি। এতখন বউ সাথে ছিলো তো। অনেক সময় ধরে বউকে দেখেনি বলে মাথাব্যথা উঠছিলো।

এনাজ চোখ ছোট ছোট করে রায়হান ভাইয়ার দিকে তাকালো। শাহেদ ভাইয়া দুষ্টুমীর সুরে বললো,
— এনাজ চাচা হবো কবে?

খালামণি মুচকি হেসে বললো,
— হ্যাঁ বাবা আমরা নানী,দাদী হবো কবো?

আমি সবাইকে সার্ভ করে দিচ্ছিলাম। তাদের কথা শুনে মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসলাম।এনাজ একবার আমার দিকে তাকালো। ও কিছু বলার আগে তায়াং ভাইয়া বললো,

— সবে তো বিয়ে হলো। দুই -এক বছর যাক তারপর দেখা যাবে। তাছাড়া নোভা পড়াশোনা করছে করুক না। তারপর আস্তেধীরে সব হবে।

তায়াং ভাইয়ার দিকে হাসিমুখে তাকালাম। ভাইটাকে কিছু না বললেও সবকিছু নিজ থেকে বুঝে যায়। আমি এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ার সামনে হা করে বললাম,
— ভাইয়া একটু খাইয়ে দে তো।

ভাইয়া কোন অমত না করে প্লেটে খাবার মেখে আমাকে খাইয়ে দিলো। মুখে খাবার তুলে দিয়ে নাক মুখ সিটকিয়ে বললো,
— ইস দিলি তো আমার হাতটাকে নোংরা করে। দেখ দেখি থু থু লাগিয়ে দিছিস। এখন আবার আমাকে হাত ধুতে হবে।

আমি রাগী লুকে তাকিয়ে ওর পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলাম। ভাইয়া আমাকে কিছু বললো না। আমাদের কান্ড দেখে সবাই মিটমিট করে হাসছে। তন্বীও আমার দেখাদেখি তায়াং ভাইয়ার সামনে এসে বললো,

— আমাকে একটু খাইয়ে দে ভাইয়া।

ভাইয়া ভেংচি কেটে বললো,
— যা ভাগ। তোর হাত আছে না হাত দিয়ে খা। একটায় থুথু ভরিয়ে দিছি তুইও তা করবি।

— এমন করিস কেন দে না।

— এদিকে আয় দিচ্ছি।

তায়াং ভাইয়া এক লোকমা তন্বীর মুখে তুলে দিলো। আমি এনাজের পাশে দাড়াতেই এনাজ ফিসফিস করে বললো,
— দেখছো আন্টিও নানী হতে চায়। কিন্তু তুমি তো শুনো না।

আমি পরপর দুইবার মুখ ভেংচে তার কানের সামনে মুখ নিয়ে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া কি বলছে শুনো নাই।

এনাজ আমার দিকে চোখ দুটো ছোট করে তাকিয়ে কটমট করে একটা শসার পিসে কামড় মারলো। মনে হলো শসাকে নয় আমাকেই সে চিবিয়ে খাচ্ছে। শসা চাবাতে চাবাতে নিচুস্বরে বললো,

— আজকে খবর আছে।

আমি মুখ বাঁকিয়ে তার সামনের থেকে সরে গেলাম। এতে সে আরেকটু বেশি রেগে গেলো। তাকে রাগাতেই এমনটা করছি। আমার দিকে তাকিয়ে যে কাঁচামরিচে কামড় বসিয়ে দিয়েছে সেদিকেও খেয়াল নেই। একটু পর পানি, পানি বলে চেচিয়ে উঠলো। তার কাজ দেখে আমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে কিচেনে চিনি আনতে ছুটলাম। মরিচগুলো অনেক ঝাল।পানি খেয়ে এর ঝাল কমবে না।

#চলবে