শুধু তুই পর্ব-০২

0
61

#শুধু_তুই
#পর্ব_২
#লেখনীতে_উদন্তিকা_নাথ_বর্ষা

মির্জা বাড়ির সদস্যরা লিভিং রুমে বসে আছে। সবাই মিলে গল্প গুজব করছে। হুট করে দরজা দিয়ে আশরাফুল মির্জা আর জয়নুল মির্জা প্রবেশ করলেন। তারা ব্যবসার কাছে গিয়েছিলো চিটাগং। আসার কথা ছিলো আগামীকাল কিন্তু তারা আজকেই চলে আসবে তারা ভাবেনি। রিয়া, টিয়া,আয়না আর ফাহিমের চোখ গেলো ব্যাগের দিকে। মনে হয় অনেক কিছু নিয়ে এসেছে। তারা উঠে ব্যাগ গুলো নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেলো।

আশরাফুল মির্জা হচ্ছে জাফর মির্জার বড় সন্তান। তার মেয়ে আয়না আর ছেলে ফাহিম। জয়নুল মির্জা সবার ছোট ওর দুটো মেয়ে, রিয়া আর টিনা। মেজো ছেলের সন্তান হচ্ছে আদ্রিক তার বাবা রফিকুল মির্জা ঢাকায় থাকেন। তিনি হাইস্কুলের একজন শিক্ষক। রফিকুল মির্জার ছোট বেলা থেকে খুব ইচ্ছে শিক্ষিক হবেন। তবে তিনি সন্তান আর বউকে ঢাকায় নিয়ে যেতে চান নি। তার কারণ তিনি চান সবার সাথে ওরা থাকুক।

আশরাফুল আর জয়নুল বাবার সাথে বসে গল্প করছেন কেমন আছে নেই। বৃষ্টি বেগম রুমেই ছিলেন, মদিনা পা টিপে দিচ্ছিলো। তার ছেলেদের আসার কথা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসেন। আশরাফুল বৃষ্টি বেগমের হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দেয়। আয়েশা আর রজনী রান্না করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন।

আদিবা এতোক্ষণ রফিকুলের সাথে কথা বললো। আশরাফুল আর জয়নুলের আসার কথা শুনে নিচে নেমে আসে। আপাততো এখানে মুরুব্বি ছাড়া কেউ নেই। তাই তিনি এগিয়ে এসে সবার সাথে কিছু কথা আলাপ -আলোচনা করে কিচেনে চলে যান।
______

“আমি এসেছি, তোর মা নয়।”

তরু আদ্রিককে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো। হাত দিয়ে চোখ দুটো কচলে বলে, তুমি কখন এলে ভাইয়া?”
আদ্রিক তপ্ত শ্বাস ফেলে জবাব দেয়, এখুনি। তুই না বলে এখানে কেনো এসেছিস, তুই জানিস কতটা চিন্তা হসছিলো।

আমার কিছুই হবে না ভাইয়া, তুমি শুধু শুধু চিন্তা করো। তরু বললো।

” মাকে খুব মিস করছিস বুঝি?
তরু মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো তার মায়ের কথা মনে পরছে৷ তারপর মুখটা অন্ধকার করে নিচু করে নিলো।
আদ্রিক তরুকে বিছানার উপর দাঁড় করিয়ে বলে, মন খারাপ করিস না তরু। তোর মন খারাপ হলে যে আমারও মন খারাপ হয়। চল তোকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাই।”

তরু আলতো করে হেসে বলে, কোথায় নিয়ে যাবে?

” তুই বলনা কোথায় যাবি। আমি না হয় সেখানেই নিয়ে যাবো।”

তরু একটু ভেবে বলে, মেলায় যাবো।”

ঠিক আছে তোকে মেলায় নিয়ে যাবো, তবে একটা প্রমিজ করতে হবে।”

কি প্রমিজ? ”

আমাকে না বলে কোথাও যাবি না আর এখানেও তুই আসবি না। আসলে আমার অনুমতি নিয়ে তারপর আসবি।”

ঠিক আছে।

সাইকেলের পিছনে বসে আছে তরু। আদ্রিকের শার্ট খামছে ধরেছে শক্ত করে। তরু খুব মজা লাগছে এভাবে ঘুরতে। আদ্রিক তরুর সব ইচ্ছে পূরণ করে। না চাইতেও অনেক কিছু এনে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা মেলায় পৌঁছে যায়। মেলায় টিকিট কেটে ঢুকে পরলো দুজনে। তরুর প্রথমেই চোখ গেলো পুতুলের দিকে। আদ্রিক তরুর দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলো। তাই তরুকে একটা পুতুল কিনে দিলো। তারপর তারা এদিক সেদিক ঘুরে শেষে তরু বায়না ধরলো সে চুরি নিমে। আদ্রিক তিন জোড়া চুরি কিনে দিয়েছে। একজোড়া দু’হাতে পরিয়ে দিয়েছে। তরু হাত নাড়ি চুরি ঝনঝন শব্দ তুলছে।

তারা সন্ধ্যা নাগাদ বাড়িতে ফিরলো। সবাই নিজ নিজ কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কেউ কোথাও নেই। বুঝতে আর বাকি রইলো না। তাই তরুকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে নিয়ে যায়। মদিনাকে বলে ফ্রেশ করে দিতে। তারপর সে নিজের রুমে চলে যায়।

রাত আটটা বাজছে পড়তে বসছে আদ্রিক এই সময় রুমে ঢুকে পরে আদিবা।

আদ্রিক মাকে দেখে বই বন্ধ করে বলে, মা কিছু বলবে?

আদিবা আদ্রিকের পাশে গিয়ে বসলো। তারপর বললো,
অনেক কিছুই বলার আছে, যদি তুই শুনিস তাহলে তোর জন্য ভালো। বাবা মা সন্তানের খারাপ চায় না। তুই বড় হয়েছিস নিশ্চয়ই বুঝবি।
_____

কেটে গেছে কয়েকটা দিন। এই কয়েকদিনে আদ্রিক তরুকে অনেক সময় দিয়েছে। তবে তার এসবের পিছনে ছিলো অনেক বড় কারণ। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তরু নাচতে নাচতে আদ্রিকের রুমে ছুটছে। সে গিয়ে আদ্রিককে ঘুম থেকে তুলবে। কিন্তু আজকে তরু আদ্রিকের রুমের সামনে গিয়ে বেশ অবাক হলো। দরজাটা খোলা। সে আসতে করে দরজাটা খুলে দেখলো আদ্রিক কাপড় গোছাচ্ছে। ব্যাগেও কাপড় গুলো রাখছে।
আদ্রিক তরুকে দেখে বলে, এদিক আয়।

তরু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় আদ্রিকের সামনে। আদ্রিক তরুকে বেডে বসিয়ে দেয়। তারপরদুই-হাত ধরে তরুর মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে বলে, আমি অনেক দূরে চলে যাচ্ছিরে তরু। আদ্রিকের চোখ জোরা ভিজে এলো।
অবুজ তরু কোনো কিছু না বুঝে জবাব দিলো, কোথায় যাবে তুমি ভাইয়া? ”

“অনেক দূরে রে। তোর সাথে আমার দেখা হবে না তবে ফোনে কথা হবে। আমায় ছাড়া থাকতে পারবি তো।”

তরু কাপড় গুলোর দিকে একবার তাকালো তারপর প্রত্ত্যুতরে বললো, সত্যি চলে যাবে তুমি।
“যেতে হবে রে। না গেলে যে আমি আমার সব চেয়ে প্রিয় জিনিসটাকে হারিয়ে ফেলবো।”

আমিও যাবো তোমার সাথে।”

আদ্রিক তরুর গালে হাত রেখে বলে, তুই এখানেই থাকবি। আমি যখন আবার এই বাড়িতে ফিরে আসবো তখন তোকে আমি আমার সঙ্গে নিয়ে যাবো।
তরু আদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। তার মা মারা যাওয়ার পর আদ্রিক তাকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছিলো, আদ্রিক ছিলো তার সব কিছু। সে চলে গেলে তার আর নিজের বলতে কেউ থাকবে না। আদ্রিক তরুর মতো নিরবে কান্না করছে। দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো ফাহিম আর আয়না। তারা ওদের দিকে এগিয়ে এলো। তাদেরও মন খারাপ আদ্রিক চলে যাবে। দু’জনে ছোট্ট তরুকে কাছে টেনে নিয়ে বোঝাচ্ছে। আদ্রিক চলে গেলেও তারা তো তার সাথে আছে। কিন্তু তরু বুঝছে না। সে কান্না করছেই।

আদিবা বেগম এসে আদ্রিক কে বলে, সময় নেই বাবা চলে আয়।
ছোট্ট তরু আরো জোরে কান্না করছে। আদ্রিকের তরুকে ছেড়ে যেতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। তারপরেও তাকে যেতে হবে। তরুকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে নেমে গেলো। ফাহিম ব্যাগ গুলো নিয়ে গেলো।

সবাই কাঁদছে আদ্রিকের জন্য। আদিবা বেগমের চোখে অশ্রু নেই। শুধু ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন। আদ্রিক তরুকে নিয়ে আদিবার সামনে গেলো। তরুর হাতটা আদিবার হাতে দিয়ে বললো, তরুর সব দায়িত্ব এখন তোমার মা। তরুকে আগলে রেখো মা। কথাটা বলেই আদিবাকে জড়িয়ে ধরলো। চোখ দিয়ে নোনাজল গরিয়ে পরছে।

সবার সাথে কথা বলে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। তাকে রাখতে যাবে আশরাফুল আর জয়নুল।

তরু আদিবার থেকে হাত ছাড়িয়ে গাড়ির পিছনে ছুটে যায়। রিয়া আর টিয়া দুজনে তাকে ধরার জন্য ছুটলো৷

রাত হয়ে গেছে চারিদিকে অন্ধকার। তরু আদ্রিকের রুমে শুয়ে গুটি গুটি পায়ে গিয়ে রুমটা দেখছে। রুমটা কেমন খালি খালি। যে রুমে আগে দু’জনে কত মজা করেছিলো এখন নেই সব কেমন হারিয়ে গেলো একনিমিষেই। আদ্রিকের একটা ফটো ফ্রেম রাখা আছে টেবিলে। সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো। তারপর আসতে আসতে বেডে গা এলিয়ে দিলো। তরু কখন ঘুমিয়ে গেছে শুয়ে থাকতে থাকতে। আদিবা এসে তরুকে ভালো করে শুয়ে দিয়ে যায়। তারপর লাইট অফ করে চলে যায়।

______

সকালে সূর্যের আলো তরুর চোখমুখে আঁচড়ে পরছে। চোখ পিট পিট করে খুলে উঠে বসলো। তারপর আড়মোড়া ভেঙে বেড থেকে নেমে এলো। কেটে গেছে কয়েকটা বছর। ছোট্ট তরু এখন বড় হয়ে গেছে। এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে। তার কত পড়ার চাপ। সে টেবিলে রাখা আদ্রিকের ছবির দিকে তাকিয়ে স্মিথ হাসলো। তারপর জানালার পর্দা সরিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো। তরুর পাশে শুয়ে ছিলো আয়না। রোদের আলো গায়ে পরতেই বিরক্তিতে চোখমুখ খিচে বললো, তরুর বাচ্চা তরু।”

ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। সবাই কাজে ব্যস্ত। সে গিয়ে হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। আদিবা এসে বলে, তোকে”” কাজ করতে হবে না আমি করছি তুই গিয়ে পড়তে বস।

আদিবার কথা মতো রুমে চলে গেলো। টেবিলে বই মাত্রই খুলেছে তখনি আয়নার ফোনটা বেজে উঠলো। তরু জানে কে ফোন করেছে, তাই দৌড়ে গিয়ে কলটা রিসিভ করে৷ ঘুম জড়ানো কন্ঠ শুনতেই তরুর বুকটা ধুক করে উঠলো।
“গুড মর্নিং।
” গুড মর্নিং। আসতে করে বললো তরু।
“পড়তে বসেছিস।
” পড়তে বসবো এখন।
” লেট করে উঠেছিস কেনো? ”
” লেট করে ঘুমিয়েছি।”
“লেট কেনো হলো?
” তোমার সাথে কথা বলবো বলে জেগে ছিলাম। তুমি তো কাল কথা বলো নি।”
” আমার জন্য তোকে রাত জাগতে হবে না নেক্সট টাইম যেনো না শুনি। যা পড়তে বস।”
“ঠিক আছে।”
কলটা কেটে দিয়ে তরু আনমনে হেসে চেয়ারে গিয়ে বসলো। আদ্রিক দূরে থেকেও তরুকে শাসনে রেখেছে। শাসন না পেলে নির্ঘাত বাদর হয়ে যাবে। আদ্রিক ফোনটা রেখে চোখ বন্ধ করে বলে, সারপ্রাইজ তরু।”

#চলবে?

(ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন)