শুধু তুই পর্ব-০৩

0
54

#শুধু_তুই
#পর্ব_৩
#লেখনীতে_উদন্তিকা_নাথ_বর্ষা

“গরুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিস নাকি? ”

সিয়াম ওয়াশরুম থেকে বের হতে হতে আদ্রিককে বললো। আদ্রিক বিরক্ত হয়ে বলে, সালা তোর গার্লফ্রেন্ড সনিয়াকে নিয়ে দেখছি।”
রিয়াদ বলে উঠে, সনিয়া নয় সানিলিওন।”
আদ্রিক এবার বালিশ নিয়ে রিয়াদের পিঠে বারি দেয়। রিয়াদ ও মাগো বলে উঠে।
আদ্রিক ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। সিয়াম কফি বানাচ্ছে আর রিয়াদ বসে এক্সারসাইজ করছে। তার দিন দিন ভুরিটা সামনে যাচ্ছে তার মনে হয় এই ভুরিটার জন্য প্রেম হচ্ছে না। বন্ধু বান্ধব সহ অনেকেই এটা নিয়ে ট্রল করে। আদ্রিক বাদ নেই সেও ট্রল করে। ফ্লোর থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। সিয়াম কফির মগ তিনটা নিয়ে আসে। একটা রিয়াদের সামনে ধরে বলে, কিরে ভার্সিটি যাবি।
রিয়াদ কফির মগটা নিয়ে বলে, ভার্সিটি গিয়ে কি করবো। এক্সাম শেষ ভাই চিল মাস্তি করবো। আচ্ছা সিয়াম, বাড়িতে ব্যাক করবো নাকি কোথাও ঘুরতে যাবো।
সিয়াম একটু ভেবে বলে, বাড়িতে গিয়ে কি করবো ওর চেয়ে কোথাও ঘুরতে গেলে কেমন হয়।
আদ্রিক এর মাঝে ফ্রেশ হয়ে এলো। আলমারি থেকে একটা হোয়াইট শার্ট আর একটা কালো প্যান্ট বের করলো। তারপর পরতে পরতে রিয়াদ আর সিয়ামের দিকে চোখ জোড়া আটকে গেলো। তারা দুজনে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদ্রিক ওদেরকে বলে,
কিরে ছেলে হয়ে ছেলের ইজ্জত লুটে নিবি নাকি?”
দু’জনে এবার হিহি করে হাসতে লাগলো। সিয়াম বললো, আমরা না তোর ওই তরু লুটে পুটে নিবে।
রিয়াদ বলে, ওসব ছাড় তো। কোথাও যাচ্ছিস নাকি আদ্রিক৷”
” হুম বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।”
ওহ, তা তোর কোনো প্লান আছে নাকি। বাড়ি নাকি ট্যুর।”
“বাড়ি যাবো।”
সিয়াম বলে, আরে ও আবার ট্যুর, ও তো তরুতেই আটকে আছে।”
“চুপ কর সিয়াম নাহলে কেলানি খাবি।”
রিয়াদ তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, তুই বাড়ি গেলে আর আমরা কি করবো চল সিয়াম আমরাও বাড়ি যাই।”
” বাড়িতে ভালো লাগে না রে। আদ্রিকের মতো যদি একটা থাকতো তাহলে যেতে ভালোই লাগতো। কি বলিস আদ্রিক।”
” সেটাই তো, বউ ছাড়া ভালো লাগেনা। রিয়াদ বললো।
আদ্রিক হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বললো, আমার সাথে চল, বাড়িতে বিয়া আছে।
” কার বিয়ে? ”
” আয়না আপুর।”
ইশ তোর এই আয়ন আপুর পিক দেখে ক্রাশ খাইছিলাম। ভাবছিলাম সিনিয়রকে পটাবো। এখন দেখি বিয়া হয়ে যাচ্ছে। বড়সড় একটা ছ্যাকা খাইলাম।” রিয়াদ বললো।
“তোর মাথা মানুষ এসব ছাড়া আর কি ভাববি। গেলে বল আগামীকাল সকালে রওনা দিবো।
রিয়াদ আর সিয়াম ভাবছে কি করবে। আদ্রিক কফির মগটা নিয়ে বেডে বসলো।
রিয়াদ বলে উঠলো, যাবো নাকি যাবো না। যাবো নাকি যাবো না। যাবো নাকি যাবো না।
সিয়াম রেগে রিয়াদকে লাত্থি মারলো। তারপর বললো,
সালা তুই পাবনায় যা তোর জন্য ওটাই ভালো।
” আমি গেলে তোকেও নিয়ে যাবো। উজবুক কোথাকার।
শুরু হয়ে গেলো দু’জনের মারামারি। অতঃপর দুজনেই রাজি তারা যাবে।

আদ্রিক কফি শেষ করে গাড়ি নিয়ে বের হলো। আধঘন্টা পর একটা ফ্লাট বাসার সামনে গাড়ি থামালো। গাড়ি সাইটে রেখে ভিতরে ঢুকবে তখনি একটা মেয়ে বের হয়ে আসে। আদ্রিক কে দেখেই বলে, কেমন আছো আদ্রিক?”

আদ্রিক চাপা কন্ঠে জবাব দেয়, জ্বী ভালো। আর কিছু না বলে চলে যায়। মেয়েটি দাঁড়িয়ে আদ্রিককে দেখতে লাগলো। এই ছেলেটা বরাবরই এরকম। কথা বলতে গেলেই কেমন এরিয়ে যায়। তার মতো সুন্দরী মেয়ের পিছনে কত ছেলে পরে আছে আর এই ছেলের পাত্তাই দেয় না।
মেয়েটি হচ্ছে মিহি। রফিকুল মির্জা যে ফ্লাটে থাকে সেই ফ্লাটে মিহি থাকে। মিহি মাঝে মধ্যে রফিকুল মির্জার সাথে সময় কাটান। আদ্রিক এই ফ্লাটে আসে মাঝে মধ্যে তাই মিহি প্রায় দেখতো। একদিন রফিকুল পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। সেই সুবাদে মিহি কথা বলতে যায় কিন্তু আদ্রিক তেমন একটা পাত্তা দেয় না।

রফিকুল রান্না শেষ করে ফ্রেশ হয়ে আসলো। তখনি কলিংবেল বেজে উঠলো। তার আর বুঝতে বাকি নেই আদ্রিক এসেছে। দরজা খুলে দিলেন তিনি। আদ্রিক সালাম দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিক মায়ের চেয়ে বাবাকে একটু বেশি ভালোবাসে। দুই বাবা ছেলে মিলে খেতে বসেছে ডাইনিং টেবিলে। রফিকুল রান্না ভালো পারে আর অনেক টেস্টিও হয়। তাই আদ্রিক আসলে রফিকুল অনেক কিছুই রান্না করে।
” আচ্ছা বাবা তুমি বাড়ি যাবে না। আয়না আপুর তো বিয়ে নিশ্চয়ই তোমাকে বলেছে।”
” হুম বলেছে।
” তোমার কি ইচ্ছে যাবে তুমি।”
” ইচ্ছে নেই।”
” কেনো? ”
” জানি না।”
” দাদি, দাদা,চাচা, বড় বাবা, মা সবাই তোমাকে খুব মিস করে। এই বার চলো না। বাড়িতে প্রথম বিয়ে তাও আয়না আপুর। তোমাকে দেখলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে।”
” আমার আর যাওয়া, তুই যা, তুই গেলে সবাই বেশি খুশি হবে।”
” আমি তো যাবো কিন্তু তুমি কেনো যাবে না। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।”
” না নেই, তুই আর কিছু নিবি, ভাত দেই একটু।”
” না বাবা নিবো না। ” বাবা আমি কিন্তু তোমাকে না নিয়ে যাবো না। তুমিও আমার সাথে যাবে গিয়ে সবাইকে চমকে দিবো।”
” না।”
” বাবা প্লিজ।”
” পরে বলবো।”
” ঠিক আছে।”
______

কয়দিন পর আয়নার বিয়ে, এ নিয়ে মির্জা বাড়িতে তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। ফাহিম একটুও রেস্ট নেওয়ার সময় পাচ্ছে না। তার উপর প্রচুর গরম। ঘেমে গিয়ে একাকার। সব কাজ তাকে সামাল দিতে হচ্ছে। আশরাফুল আর জয়নুল অফিস নিয়ে ভিষণ ব্যস্ত। তারপরেও একটু চেষ্টা করে ফাহিম কে সাহায্য করতে।
মির্জা বাড়ি অনেক সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে বাগানে প্যান্ডেল, ছাঁদে প্যান্ডেল করা হচ্ছে।

এদিকে তরু রুমে বসে পড়ছে। আদ্রিক পই পই করে বলে দিয়েছে রুমের বাইরে যাবি না। তোর সামনে এক্সাম তুই এখন পড়াশোনা নিয়ে থাকবি। কিন্তু পড়াশোনায় মন টা বসাবে কি করে? রিয়া আর টিনা এসে বার বার সব গন্ডগোল করে দিচ্ছে। তারা বিয়ে নিয়ে এতো এক্সাইটেড যে হলুদের দিন কি পরবে, বিয়ের দিন কি পরবে আবার কি দুল পরবে কি হৈ-হুল্লোড় অবস্থা। তারা সবাই মিলে মার্কেট করে এনেছে গতকালকে। তরু বাড়িতেই ছিলো তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নি। কিন্তু তার জন্যও অনেক কিছু নিয়ে এসেছে আদিবা বেগম।

সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছে সবাই। সবাই সবার নিয়ে ব্যস্ত। তরুর মন খারাপ। তাই বেডে বসে আছে। আদ্রিক আজকে কল করেনি। আয়না বলে, কিরে তরু এভাবে বসে আছিস যে। বাইরে যাবি না।
” ভালো লাগছে না।”
” আদ্রিক ফোন করেনি বলে।”
তরু মাথা ঝাকালো। আয়না তরুর হাত ধরে বলে, চল খেতে যাই খুব খিদে পেয়েছে। অনেক কাজ পরে আছে। তরু রাজি হয়ে গেলো।

বিকেল হতে হতে লোকজন বেরে গেলো। সবাই কত সুন্দর করে সেজেছে। সবাই সবুজ কালার শাড়ি পরেছে। ছেলেরা পাঞ্জাবি পরেছে। আয়নাকে হলুদ রঙের শাড়ি পরানো হয়েছে। তরু আয়নাকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। এমনিতেও আয়না অনেক সুন্দর, সাজগোজ করে একটু বেশি সুন্দর লাগছে।

ছেলে পক্ষ থেকে কিছু লোকজন চলে এসেছে। আশরাফুল সেদিকটা দেখছে। খাবারের দিকটা দেখছে জয়নুল। বৃষ্টি বেগম সোফায় বসে গল্প করছেন। জাফর মির্জা বাইরে হেঁটে হেঁটে সব কিছু দেখছে। হুট করে একটা কালো গাড়ি থামলো মির্জা বাড়ির সামনে। সেদিকে জাফর মির্জা চোখ রাখলেন দেখার জন্য কে নামছে। প্রথমে দুটো ছেলে নামলো তাঁদের ঠিক চেনে না জাফর। গাড়িটা আবার পার্কিং করতে নিয়ে গেলো ঠিক জায়গায়। ছেলে দুটো এগিয়ে আসলো। তাদের পিছনে আরেকটা ছেলেকে দেখতেই ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। জাফর মির্জার চিনতে বাকি রইলো না তাঁর বড় নাতি চলে এসেছে। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিক। আদ্রিক বললো, কেমন আছো দাদাই?”
” আলহামদুলিল্লাহ, তোকে দেখার পর আরো ভালো আছি। কত বড় হয়েছিস, তোকে চেনাই যায় না।”
” হুম যাবে না তো, তোমাদের ছোট আদ্রিক এখন বর হয়ে গেছে। দাদা ওরা হচ্ছে আমার ফ্রেন রিয়াদ আর সিয়াম।”
রিয়াদ আর সিয়াম কুশল বিনিময় করে আদ্রিকের সাথে ভিতরে চলে গেলো। প্রথমেই দেখা মিললো আশরাফুলের সাথে ছেলে পক্ষের লোকদের সাথে আছেন। সালাম দিলো আদ্রিক। তারপর ছেলে পক্ষো লোকদের দেখলো বেশ কয়েকটা ছেলে আর মেয়েও এসছে মুরুব্বি দুটো। সেদিকে আর পাত্তা দিলো না। সবার সাথে দেখা হলো কিন্তু আদ্রিকের চোখ দুটো অন্যজনকে খুঁজছে। রিয়া আর টিনা আদ্রিকের সাথে কথা বলেই তরুর রুমে ছুটেছে। তরু বসে বসে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে কখন ফোন দিবে। হুট করে রিয়া আর টিনাকে দৌড়ে আসতে দেখে সেদিকে তাকালো।
কি হয়েছে আপু? ” তরু বললো।”
” আদ্রিক ভাই এসেছে।”

#চলবে?