শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব-১৮+১৯+২০

0
241

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৮

” আমি তোকে বিয়ে করতে চাই শুভ্রা, আমি আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে নতুন একটা সুন্দর সম্পর্কে জড়াতে চাই। যেখানে আমরা সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিজ্ঞা করব,শুধু আমি তুই আর ভালোবাসা থাকবে।”

” আপনি বারবার একই কথা কেন বলছেন বলুন তো নিহান ভাই? আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না, একদমই সম্ভব না।”

” কেন বিয়ে করা সম্ভব না বল আমায়। আমি ছেলে হিসেবে ভালো নই? ”

” কোন ছেলের সাথে আপনার তুলনা করা ভুল। আপনি যথেষ্ট ভালো ছেলে। হয়তো লাখে একটা করে পাওয়া যেতে পারে তা আমি জানি না। আপনি এত ভালো ছেলে জন্যই আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না নিহান ভাই। আর তাছাড়া আমি এখন বিয়েতেই জড়াতে চাই না। আমি আমার জীবনটা নতুনভাবে গোছাতে চাই যেখানে শুধু আমিই থাকব। আমি আপাতত আমার জীবনের সাথে কারো জীবন জড়াতে চাই না নিহান ভাই। ”

নিহান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, শুভ্রতার কথা শুনছে। শুভ্রতা কথা শেষ করলে নিহান বলে ওঠে, ” এত খারাপ থাকা আমি ডিজার্ভ করি না শুভ্রা। তুই আমাকর এত খারাপ থাকার উপায় হোস না প্লিজ। ”

” আর কত নিহান ভাই? বিয়েতো একবার করলাম, করে দেখেছি তো কেমন হয় বিয়ের পরের জীবন, আর নাহয় না-ই দেখলাম। আপনার ভালো থাকা প্লিজ আমার সাথে জড়াবেন না নিহান ভাই। আমার প্রতি আপনার ভালোবাসার কথা বলে শুধু শুধু সম্পর্কটা খারাপ করছেন। ”

” ভালোবেসে কাউকে বিয়ে করে তো দেখলি। ওর প্রতি তোর কত বছরের স্যরি কয় মাসের ভালোবাসা ছিল যাকে বিয়ে না করে থাকতে পারিস নি? নয়মাস নাকি একবছর? আমি তোকে সাতটা বছর ধরে পছন্দ করি ভালোবাসি। এটা এপাক্ষিক ভালোবাসা, এখানে কোন ভেজাল নেই। আমার কি অধিকার নেই এত ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘর করার?”

” নিহান ভাই আপনার সাথে আমার কোন শ*ত্রুতা নেই। যদি কোন মানুষ জানতে পারে কেউ তাকে ভালোবাসে সে তখন সেই ব্যক্তির সম্মানের, ভালোবাসার মানুষ হয়ে যায় শ*ত্রু বা অপছন্দের মানুষ না। সেক্ষেত্রে আমি আপনাকে সম্মান করি আমি চাই না আপনি আমার মতো মেয়েকে বিয়ে করুন যার শরীরে ডিভোর্সি ট্যাগ লেগে গেছে। আপনি সুন্দর সুপুরুষ, কর্মক্ষেত্রেও একজন সফল আমি আপনাকে ডিজার্ভ করি না। এত পার্থক্যে মিল হয় না নিহান ভাই। মিল হতে হলে অবস্থান কাছাকাছি হতে হয় আকাশ পাতাল কখনো এক হতে পারবে না নিহান ভাই। আমি দোয়া করি আপনি আপনার মনের মতো অন্যকোন মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হন। ”

” তার মানে কোন ডিভোর্স, বিপত্নীক লোক তোকে ডিজার্ভ করে?”

” হয়তো তাই।”

” কি করলে আমি তোকে পাব বলতে পারিস? কাউকে বিয়ে আর তারপর ডিভোর্স দিয়ে তো আর তোকে পেতে চাইব না আমি। অন্যকোন মেয়েকে বিয়ে করলে তার জীবনটা শুধু নষ্টই হবে। আচ্ছা শুভ্রা ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে তো বিয়ে করেছিলি ভালো থাকতে পারিস নি, এবার যে তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখ ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে রাখব। আমি তোকে ছাড়া আমাকে আমার একটা দিন কল্পনা করতে পারছি না শুভ্রা। এত অসহায় আমার কোনদিন লাগে নি।”

নিহানের কণ্ঠ ভারী শোনাচ্ছে। পৃথিবীর সমস্ত কষ্ট যখন বুকে এসে ভর করে, না পাওয়ারা এসে ভীড় করে তখনই গলা ভারী হয়ে যায়। প্রিয় মানুষগুলো বুঝতেই পারে না তাদের কেউ ঠিক কতটা চায়! মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসে সেটা সে জানলে ফিরিয়ে দিতে পারতো না।

” ভালোবাসা একদিন কমে যায় নিহান ভাই। ভালোবাসার মানুষকে পেয়ে গেলে তাকে হারানোর ভয়টা চলে গেলেই ভালোবাসা কমে যায়। ভালোবাসা ততদিন থাকে যতদিন হারানোর ভয়টা থাকে। হারানোর ভয়টা চলে গেলেই ভালোবাসা হারিয়ে যায়। তখন সবাই মনে করে পেয়েই তো গেছি, সে এবার আর ছেড়ে যেতে পারবে না তখন ধীরে ধীরে গুরুত্ব কমিয়ে দেয়। যার অত্যাধিক ভালোবাসা পেয়ে অভ্যাস সেই শখের পুরুষ যখন ভালোবাসা, গুরুত্ব কমিয়ে দেয় তখন একটা মেয়ের বেঁচের থাকার ইচ্ছেটাই মাঠে মা*রা যায়।”

” “শোন শুভ্রা ভালোবাসা সময়ের সাথে গাঢ় হয়, হালকা নয়। সময়ের সাথে ভালোবাসা যদি কমে যায় তাহলে সেটা ভালোবাসা নয় সেটা মোহ। তোর প্রতি যদি আমার মোহ থাকতো তাহলে আমি নিশ্চয়ই এখন আর তোকে নিয়ে ভাবতাম না। তাই শুধু শুধু অতীত নিয়ে না ভেবে জীবনকে রাঙাতে শিখে নে। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না থাকবেও না। অতীতকে ভুলে আমাকে একবার ভালোবেসে দেখনা প্লিজ, সবটা অন্যরকম হয়ে যাবে।”

” আমার রঙহীন জীবনে আপনার রঙধনুর সাত রঙে রাঙানো জীবনটাকে জড়াতে চাই না আমি নিহান ভাই। আমার সাথে আপনি জড়িয়ে গেলে যে সবকিছু নিকষ কালোতে আচ্ছাদিত হয়ে যাবে।”

শুভ্রতার কথার পরিপ্রেক্ষিতে নিহান নরম স্বরে বলে ওঠে, ” রঙহীনের সাথে রঙ মেশালে পুরোটা রঙীন হয়, রঙহীন নয়।”

শুভ্রতা কি বলবে এখন? ভালোবাসায় যে নিহান তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়েছে। কীভাবে বের হবে সে এই গোলকধাঁধা থেকে? ভালোবাসার কাঙাল সে, একটু ভালোবাসা পেলেই থেকে যেতে চায় সে। ভয় লাগে এই ভালোবাসাও যদি কমে যায়? নিহানকে নিয়ে ভাবা তার জীবনের দ্বিতীয় ভুল হবে না তো? কিন্তু নিহানের সাথে তার কোনভাবেই মিলে না। নিহান অতি ভালো ছাত্র ছিল, তারপর এমন একটা জায়গায় আছে সে হিসেবে শুভ্রা একদম জিরো। এত অমিলে মিল হবে কীভাবে? এত অমিলের মানুষ খুব করে যেমন ভালোবাসতে পারে ঠিক তেমনই ছুড়ে ফেলতেও পারে। শুভ্রতার ভাবনার যেন শেষ হচ্ছে না। বয়স কখনো মানুষের ম্যাচুরিটি হতে পারে না, পরিস্থিতি মানুষকে ম্যাচিউর করে তোলে। যে যত বিপদে পড়বে কষ্ট পাবে সে তত শিখবে সিদ্ধান্ত ভালো নিতে পারবে।

শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিহান বলে, ” ভালোবাসি শুভ্রতা, খুব ভালোবাসি বিশ্বাস কর। ”

” আমি এখনই বিয়েতে জড়াতে চাই না নিহান ভাই আমি আমার ক্যারিয়ার গড়তে চাই।”

” আমি সাহায্য করব তোকে।”

নিহানকে আর কি বলে নেতিবাচক উত্তর দিবে সেটা ভেবে পাচ্ছে না শুভ্রতা। মানুষটার ভালোবাসা যে তাকে আর না বলার সুযোগ দিচ্ছেই না। কিন্তু সমাজ! মানুষ বিষয়টা দেখবে কীভাবে? একটা মেয়ের মাস দুই আগে ডিভোর্স হয়েছে এত কম সময়ের মধ্যে আরেক বিয়ে তার ওপর কাজিনের সাথে। সবাই ভাববে কাজিনের সাথে হয়তো সম্পর্ক ছিল তাই হয়তো বিয়েটা টিকে নি।

নিহান আবার বলে ওঠে, ” তুই শুধু আমার হয়ে যা শুভ্রা বাকিসব আমি দেখে নেব। তুই যদি চাস আমি তোর কাছে স্বামীর অধিকার ততদিন চাইব না যতদিন না তুই চাইবি।”

” নাটক, সিনেমার ডায়ালগ। ”

” এটা আমি তোকে কথা দিচ্ছি। প্লিজ আমার মানুষ হয়ে যা না। আমার ব্যক্তিগত একটা মানুষ যেন আমি বলতে পারি এই পৃথিবীতে একটা মানুষ আমারও আছে। প্লিজ শুভ্রা, আমি তোর ভালোবাসা নামক শুভ্র রঙে নানানরকম রঙ ছিটিয়ে দিতে চাই। শুভ্র রঙের সাথে অন্য রঙ মিশলে খুব একটা খারাপ কিন্তু লাগবে না। প্লিজ আমার হয়ে যা।”

শুভ্রতা নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার দুই চোখে পানি জমেছে এখনই গড়িয়ে পড়বে। একটা মানুষ আসলেই এত ভালোবাসতে পারে? সে তো ইমতিয়াজকে ভালোবেসেছিল তবে সেটা তো নিহানের মতো ছিল না! ছেলেরা ভালোবাসলে সেটা আসলেই ভয়ং*কর হয়।

শুভ্রতার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে, নিহান হাত এগিয়ে মুছতে গিয়েও হাত ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, ” চোখের পানিটা মুছে নে শুভ্রা, আমার মানুষের চোখে আমি পানি দেখতে চাই না। সে তো তার চোখের পানি মুছে দেওয়ার অধিকার আমায় দেয় নি আমি মুছেও দিতে পারব না। আমি এই দায়িত্ব কখনো নিতেও চাইব না। আমি আমার ভালোবাসার মানুষের চোখে কষ্টের পানি আসতে দেব না ইন শা আল্লাহ। ”

শুভ্রতা কিছু বলছে না দেখে নিহান বলে, ” একটা সুযোগ আমাকে দেওয়া যায় না শুভ্রতা?”

” ভালোবাসা কমে যাবে নিহান ভাই, কম ভালোবাসা আমার সহ্য হয় না। ”

” কমবে না, একফোঁটাও কমবে না আরও বাড়বে দেখিস।”

শুভ্রতা আর কিছু বলছে না। তার এখন কান্না পাচ্ছে ভীষণভাবে৷ কারণটা ঠিক কি সেটা আপাতত অজানা। তার এখন একলা ঘরে একটু কান্না করা প্রয়োজন, কষ্টে তার বুক ভারী হয়ে নেই তবুও কান্না করতে হবে। শুভ্রতা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায় নিহান একপলকে সেদিকেই তাকিয়ে থাকে।

#চলবে……

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৯

সন্ধ্যায় শুভ্রতা ছাদে পায়চারি করছে, তার কানে শুধু একটা কথাই বাজছে, ” প্লিজ শুভ্রা আমার ব্যক্তিগত মানুষ হয়ে যা প্লিজ।”

এত তাড়াতাড়ি কি সত্যিই সবকিছু শুরু করা যায়? মানুষ বিশ্বাসঘাতক বলবে না? বলবে না যে আগে থেকে সব ঠিক করা ছিল বলেই চাচাতো ভাইকে বিয়ে করছে? অপরা*ধ না করেও যে অপরা*ধী হয়ে থাকতে হবে।

শুভ্রতা ছাদ থেকে নেমে আসবে ঠিক তখনই শাহাদাত সাহেব এসে উপস্থিত হন। শুভ্রতা পা থামিয়ে দেয়।

” বাবা তুমি এখন ছাদে কেন?”

” তোর কাছেই আসলাম।”

” কিছু বলবে?”

” সারাদিন দেখলাম কেমন অন্যমনস্ক হয়ে আছিস। কি হয়েছে বল তো?”

” কিছু হয় নি বাবা।”

” চল বসে কথা বলি।”

শাহাদাত সাহেব গিয়ে চেয়ারে বসেন, শুভ্রতাও পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে৷ তাদের বাসা থেকে কিছু দূরেই রেলস্টেশন। লাল, সোনালি আলো জ্ব*লছে রাস্তার পাশেও কিছুদূর পরপরই ল্যাম্পপোস্টের আলো। শুভ্রতা বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

” শুভ্রতা!”

” হ্যাঁ, হ্যাঁ বাবা।” বাবার ডাকে হকচকিয়ে ওঠে শুভ্রতা। সে প্রায় অনেকটাই অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল।

শাহাদাত সাহেব বলেন, ” তোর বিয়ের কথা যদি এখন চিন্তা করি তাহলে তুই কি বলবি?”

শুভ্রতা বাবার কথায় শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে। সে মনে মনে এটা ভেবেছিল যে বাবা এসে বিয়ের কথা তুলবে। শুভ্রতা বলে,

” বাবা আমি এখনই বিয়ে, সংসার, কোন বাড়ির দায়িত্ব এসবে জড়াতে চাই না। আমি পড়া শেষ করে তারপর এসব নিয়ে ভাববো। আর তাছাড়া এখনই নতুন কোন মানুষের সাথে ঘর করতে আমি পারব না বাবা, এটা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। লোকে কি বলবে বলো তো? ভালোবেসে বিয়ের ডিভোর্স হয়েছে তাও আবার দুইমাস যেতে না যেতেই আবার বিয়ে?”

” তোর এতকিছু করতে হবে না। তুই দুইদিন না খেয়ে থাকলে কেউ দুমুঠো ভাত নিয়ে আসবে না। তুই কি কোনভাবে এখনো ইমতিয়াজকে….”

” না বাবা, প্লিজ ওর নাম ও আমার সামনে উচ্চারণ করবে না। ওকে আমার আর সহ্য হয় না একদম সহ্য হয় না। ওর জন্য এক ফোঁটা ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই আর।”

” তাহলে বিয়ে কেন করবি না?”

” বাবা, নিহান ভাই এত সম্মানের একটা জায়গায় অবস্থান করছে। কাজের ক্ষেত্রে সফল, ভালো দেখতে সে কিনা আমাকে বিয়ে করতে চাইছে। উনি আমার ওপর দয়া করতে চাইছেন? আমার তো উনার দয়া লাগবে না। এত ভালো একটা ছেলের জন্য বড়মা নিশ্চয়ই একটা ভালো, সুন্দরী, ওয়েল এডুকেটেড মেয়েই চাইবেন, আমার মতো ডিভোর্সিকে তিনি মানবেন না। মেয়ের মতো তিনি আমাকে ভালোবাসেন আমি এই ভালোবাসাগুলো হারাতে চাই না। বড়মা এসব শুনলে অনেক কষ্ট পাবে। তুমি নিহান ভাইয়ের সাথে কথা বলো বাবা, উনি যেন আমাকে নিয়ে না ভাবে।”

” নিহান ছেলেটা তো ঠিক কতটা পছন্দ করে বুঝতে পারিস না? তোর বিয়ের সময় কি পরিমাণে কান্না করেছিল মনে নেই তোর?”

” সব মনে আছে বাবা কিন্তু আমার পক্ষে সম্ভব না বাবা। তুমি উনার সাথে কথা বলে নিষেধ করে দিও, আমি এখনই বিয়েতে জড়াতে চাই না। আমি আসছি।”

শুভ্রতা চলে যায় সেখানে থেকে৷ শাহাদাত সাহেব শুভ্রতার যাওয়া দেখে আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ” এই মেয়েটা নিজের ভালো কবে বুঝবে? কবে বুঝবে কে তার জন্য ভালো আর কে মন্দ!”
~~

দুই তিনদিন ক্লাস করার পর ভার্সিটি ছুটি হয়ে যাওয়ায় শুভ্রতা তার মামার বাড়ি দুই সপ্তাহের মতো সময় কাটিয়েছে। এখানে সে কয়েকদিন ধরে অনেক চিন্তাভাবনা করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে বিয়ে করবে। তবে বিয়েতে কিছু শর্ত রাখবে সে। মামাবাড়ি থেকে একাই বাড়ি ফিরতে পারে শুভ্রতা। বাড়িতে এখন শাকিরার বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হবে নিহানের সাথে আলাদা কথা বলা যাবে না তাই সে নিজেই নিহানকে কল দেয়। কয়েকবার রিং হতেই কল রিসিভ হয়।

” নিহান?”

” হ্যাঁ, কে?”

” আমি শুভ্রতা। চিনতে পারেন নি, নম্বর সেভ নেই?”

” আছে, তুই তো নিহান ভাই বলিস তাই…”

” যাকে বিয়ে করব বলে মনস্থির করেছি তাকে আর ভাই কীভাবে বলি বলেন?”

” বিয়ে!”

” হ্যাঁ, কেন বিয়ে করবেন না? নাকি সময় নিয়েছি জন্য ভেবেছেন না করে দেব এই সুযোগে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছেন? এমন যদি হয় তাহলে শুভকামনা। ”

” আরে না না আমার ভালোবাসা এত ঠুনকো নাকি! আট নয় বছর যার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনব বলে অপেক্ষায় আছি তাকে পনেরো দিনের ব্যবধানে হৃদয় থেকে সরাবো কি করে?”

” আমি স্বার্থপর হতে চাই, আমি একটু ভালো থাকতে চাই, ভালোবাসা চাই যেটা আমি আমার প্রাক্তনের কাছে পাইনি।”

শুভ্রতা একটু থেমে আবার বলে, ” বাড়িতে কি আত্মীয়রা সবাই এসে গেছে?”

” বিয়ের এক সপ্তাহ বাকি, এত জলদি এসে কি করবে সবাই? তবে কাল পরশু আমজাদ কাকা, ইরা, কাকি আসবে।”

” বিকেলে আমার মামাবাড়ি চলে আসুন।”

” কেন?”

” আমি বাসায় যাব, আপনি এসে আমাকে নিয়ে যাবেন।”

” ঠিক আছিস তুই?”

” ঠিক না থাকার কি আছে?”

” তুই তো আমার বাইকে উঠতেই চাস না। সেদিন আমার সাথে যাবি না জন্য কি কান্ডটাই না করলি।”

” আপনার থেকে দূরে থাকার জন্য ওসব করেছি।”

” আর এখন?”

” জানি না, তবে আমারও মাঝেমাঝে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে। আমিও চাই কেউ আমাকে ভালোবাসুক। বিয়ের তিনবছরে প্রায় দুই বছরই কেটেছে আমাদের ঝগড়া আর মনোমালিন্যে ভালোবাসাটা কেমন ছিলই না। ভালোবাসার অভাবে হৃদয়টা মরুভূমি হয়ে গেছে। এক ফোঁটা জলের ন্যায় ভালোবাসাটা খুব করে প্রয়োজন।”

” কখন আসব আমি? ”

” আসরের পর আসলেই হবে। আপনি কি ফ্রি আছেন?”

” এখন কাজে আছি, সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকব। সন্ধ্যার পর গেলে সমস্যা হবে?”

” না, আসুন। সন্ধ্যার পরের সময়ে বের হলে আরও ভালো লাগবে। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

শুভ্রতা ফোন কেটে দেয়। পনেরো দিন পর সে নিজেই আজ নিহানকে কল দিয়েছিল। যেদিন বাড়ি থেকে এখানে আসে সেদিন সে নিহানের সাথে কথা বলেছিল। সে যখন ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়েছে মামার সাথে তখন নিহান পিছন থেকে নিম্নস্বরে বলে ওঠে,

” আমার থেকে আর কতদিন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবি শুভ্রা? তুই আমাকে ভালো না বাসলে আমি সারাজীবন একা থাকব তবু তুই ছাড়া অন্যকাউকে নিজের করব না।”

” পাগলামি করবেন না নিহান ভাই। আপনি মেয়ে হলে এই সমাজের ভিন্নরূপ আপনার নজরে পড়ত। মেয়ে নন বলেই এমন এমন কথা বলতে পারছেন। আপনি আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন কীভাবে দিন পার করতে হয় আমার। ”

” বিশ্বাস কর এই সমাজের ধার আমি ধারি না, যে সমাজ একটা সাধারণ মানুষের দূর্দশায় পাশে না দাঁড়িয়ে কোণঠাসা করে ছাড়ে সেই সমাজকে নিন্দা জানাই। যে সমাজ একটা নারীকে দুঃখের সময় কাটিয়ে জলদি সুখের সাগরে ভাসতে দেয় না সেই সমাজের ধার আমি সত্যিই ধারি না। আমি তোকে নিয়ে অন্যকোথাও চলে যাব বিশ্বাস কর, কারো খারাপ কথা তোকে শুনতে হবে না। ”

” ওখানে গিয়ে লুকিয়ে রাখবেন যে আমার একবার বিয়ে হয়েছিল, ডিভোর্স হওয়ার দুই মাসের মাথায় ভালো থাকার জন্য আবার বিয়ে করে নিয়েছি?”

” অন্যের কথা কেন ভাবছিস তুই? তোর ইচ্ছে করে না কারো গভীর ভালোবাসা শুধু তোর জন্য হোক? যে পুরুষ তোকে অসম্ভব ভালোবাসে তার হতে ইচ্ছে করে না? তোর এই তিনবছরের সংসারের কাছে আমার নয় বছরের ভালোবাসা কিছুই না? আমি তো শুধু ভালো একটা সময়ের অপেক্ষা করছিলাম আর এর মধ্যেই সবকিছু তচনচ হয়ে গেল। তোকে না পেলে কেউ আমার হবে না শুভ্রা এটা মনে রাখিস। আর বেহায়া হতে পারব না আমি। আজই এই বিষয়ে শেষ কথা, এমনকিছু করিস না যেন আমি নরম তুলো থেকে কঠিন পাথর হয়ে যাই।”

” আমারও ভালো থাকার ইচ্ছে হয় নিহান ভাই। কিন্তু সেই ইচ্ছেকে আমি তীব্র হতে দেই না, এই সমাজ চিল শকুনের মতো ছিড়ে খাওয়ার জন্য সবসময় তৈরি থাকে। আমার সময় লাগবে সবকিছু ঠিক করতে।”

” আমার সারাজীবনটাই তোর জন্য বরাদ্দ করে দিলাম ভেবে দেখার জন্য। আমার শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগ মুহূর্তে এসেও যদি বলিস নিহান ভাই আমি আপনাকে ভালোবাসি তখনও হাসতে হাসতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলব। আল্লাহ আমার ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখুক।”

নিহান আর শুভ্রতার সেদিনই শেষ কথা হয়েছিল। এরপর কেটে গিয়েছে দুই সপ্তাহ, এই দুই সপ্তাহে শুভ্রতা অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এবার থেকে নিজের কথা ভাববে। একজন জ্ঞানবুদ্ধিহীন মানুষও নিজের ভালো বোঝে তাহলে সে কেন বুঝবে না!

#চলবে….

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২০

ফাউজিয়া রুমের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিল এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। তার মা গিয়েছে বাজারে, এতক্ষণে চলে আসার কথা তবুও দেরি কেন হচ্ছে কে জানে! দুইদিন পর রোজা শুরু হবে। রোজা থেকে বাজার করা সম্ভব হবে না। এই সময় রোদের তাপ খুব তীব্র হয়েছে।
ফাউজিয়াদের বাসায় সচরাচর কেউ আসে না। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মায়ের সাথে এখানেই আছে। আশেপাশে বড় বড় বিল্ডিং মানুষও অনেক কিন্তু কেউ কারো খোঁজ নেয় না। জায়গাগুলো গ্রাম থেকে যতই শহর হতে শুরু করেছে মানুষের মাঝে মানুষের জন্য টানও কমতে শুরু করেছে। এখানে কেউ মা*রা গেলেও দেখতে আসে না প্রতিবেশী।

ফাউজিয়া মাথায় ওরনা জড়িয়ে দরজা খুলতে চলে যায়। দরজা খুলেই দেখে সাহিল স্যার তার মাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মায়ের মাথাটা সাহিল স্যারের বুকে, চোখ বন্ধ। ফাউজিয়া মায়ের এই অবস্থা দেখে থতমত খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি করে মাকে ধরে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে বসায়।
তার মা কোন কথা বলতে পারছে না বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। সাহিল শেখ বলে,

” আমি জানতাম না এটা আপনাদের বাসা। রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম এমন সময় দেখি আপনার মা বাজারে ব্যাগ নিয়ে এই গরম আর তুখোড় রোদে হেটে আসছেন। ঠিকমতো পা ফেলতে পারছেন না, হয়তো উনার মাথা ঘুরছিল বেশ ক্লান্ত ছিলেন। আমি উনার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে রাস্তায় বসে পড়েন। আমি গিয়ে ধরে তুলে দোকানের চেয়ারে একটু বসিয়ে মাথায় একটু পানি দিয়ে উনার কাছে বাড়ি কোথায় জেনে নিয়ে এসেছি। এখানে এসে আপনাকে দেখছি। ”

” আমি অনেকক্ষণ যাবৎ মা’র জন্য অপেক্ষা করছিলাম। প্রেশারটা বেড়ে গিয়েছে, অনেক চিন্তায় আছি। কয়েকমাস যাবৎ অনেক ওষুধ খেতে হচ্ছে। আমি যেতে চাইলাম সাথে বাজারের জন্য মা তবু নিয়ে গেল না। ”

” আপনার বাসায় পুরুষ কেউ নেই? উনাকে কেন বাজারে যেতে হবে?”

” না আমাদের বাসায় পুরুষ কেউ নেই।”

” আপনার বাবা?”

” আমার বাবা মা*রা গিয়েছেন। আমার কোন ভাই নেই। বড়বোন ঢাকায় থাকে বরের সাথে। আমি আর মা এখানে থাকি, আপু মাঝেমাঝে আসে এখানে।”

” ওহ আচ্ছা। ”

সাহিল হাতের ঘড়ির দিকে খেয়াল করে। সাহিল ফাউজিয়ার মন অন্যদিকে নিতে চায় কারণ যেকোন মেয়ে তার বাবার মৃ*ত্যুর কথা বলতে পছন্দ করে না তারা একাকিত্ব বোধ করে।

” আন্টির নম্বরটা দিন আমি খবর নিব আর মাঝেমাঝে আমি বাজার করে পাঠিয়ে দেব। আপনাদের কাউকে বাজারে যেতে হবে না, এখানে অন্যকিছু ভেবে সংকোচ বোধ করবেন না এটা মানবিকতা। ”

” না না স্যার আপনার এতকিছু করতে হবে না। এরপর থেকে ক্লাস করে আসার সময় আমিই নিয়ে আসব বাজার করে।”

” আপনাদের ক্লাস হয়তো ছুটি দিয়ে দেবে খুব তাড়াতাড়ি। ঈদের পরই তো পরিক্ষা এবার একটানা হয়ে সপ্তাহখানেকের মাঝেই শেষ হয়ে যাবে হয়তো।”

” জি।”

” নম্বরটা দিন আমার বাড়ি ফিরতে হবে। আর আপনার বান্ধবীর কি খবর? ক্লাসে আসছে না কেন?”

” মামাবাড়ি গিয়েছে হয়তো আগামীকাল আসবে স্যার। অনেকদিন ওকে দেখি না আমারই খারাপ লাগছে। ”

ফাউজিয়া কপালে হাত দিয়ে আফসোস করে বলে, ” উফফফ দেখেছেন স্যার আমি আপনার সাথে এভাবেই দাঁড়িয়ে কথা বলছি। প্লিজ বসুন না স্যার আমি অন্তত এক গ্লাস শরবত করে নিয়ে আসছি। এই গরমে ভালো লাগবে।

” না, আপনাকে ওসব করতে হবে না। আমি বাড়ি ফিরব এক্ষুণি। মা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যদিন শরবত খাওয়া যাবে। ”

ফাউজিয়া আরো দুই একবার বলে কিন্তু কাজ হয় না। নম্বরটা নিয়েই সাহিল বেরিয়ে যায় সেখান থেকে। হাটতে থাকে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ফাউজিয়া দরজা আটকে মায়ের পাশে এসে বসে।
~~

শুভ্রতার মামাবাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে নিহানের প্রায় সাতটা বেজে যায়। সে কোনো একটা কাজে আটকে গিয়েছিল। শুভ্রতার কিঞ্চিৎ রাগ হয়েছিল এতক্ষণ অপেক্ষা করতে কিন্তু কিছু করার তো নেই মানুষের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। কিছুক্ষণের মধ্যে শুভ্রতা আর নিহান বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। সারারাস্তা দুজন কোন কথা বলে নি বাড়ির কাছাকাছি এসে শুভ্রতা বলে,

” গাড়ি একটু থামান প্লিজ আমার কিছু কথা আছে।”

নিহান শুভ্রতার কথা শোনামাত্র গাড়ি রাস্তার একপাশে থামায় আর শুভ্রতা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।

” হ্যাঁ বল কি বলবি?”

” রাস্তার ওই পাশে টঙে বসবেন?”

” ঠিক আছে।”

শুভ্রতা আর নিহান গিয়ে টঙের পাশে বেঞ্চটায় বসে। নিহান দুজনের জন্য দুই কাপ চা অর্ডার করে। দুজন পাশাপাশি বসে আছে। শুভ্রতা বাহিরে আকাশের দিকে তাকিয়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস ফেলছে। চোখ বন্ধ করে প্রকৃতির মমতা অনুভব করছে। নিহান সেদিকেই তাকিয়ে আছে। চা এলে সে নিজে এক কাপ নিয়ে অন্য কাপ শুভ্রতার দিকে বাড়িয়ে দেয়।

” নে চা খাবি না?”

” হ্যাঁ দিন।”

শুভ্রতা চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বলে, ” আমি আপনাকে কিছু কথা বলব বলেছিলাম। ”

নিহান চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, ” হুম শুনছি বল।”

” আপনি যাচ্ছেন কবে বাড়ি থেকে?”

” কেন?”

” জানতে চাইছি।”

” তিনমাস আছি এখানে তার মাঝে একমাস প্রায় শেষ হতে চলল।”

” বিয়েতে আমার কিছু শর্ত আছে।”

” বিয়েতে শর্ত? তুই শর্ত সামনে রেখে বিয়ে করবি? ভালোবাসি বলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছিস তুই?”

” আমি সুস্থ মস্তিষ্কে নতুন সম্পর্কে জড়াতে চাইছি। ”

” এখন কি তুই অসুস্থ মস্তিষ্কের? ”

” আমার নির্ঘুম রাত কীভাবে যায় সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না নিহান ভাই। সকালে উঠে চারপাশটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে আমি আপনাকে বোঝাতে পারব না। আমার সারাটাদিন ঠিক কেমন অসহায়ের মতো থাকি সেটাও বুঝবেন না। এসব থেকে বেরিয়ে আসতে আমার সময় লাগবে।”

” আর কত সময় শুভ্রা? আর কত অপেক্ষা করাবি আমায়? আমি যে যুগ যুগ ধরে পিপাসায় কাতর হয়ে আছি। আমাকে কেন ভালোবাসতে পারিস না শুভ্রা?”

” আমাকে কয়েকটা মাস সময় দিবেন? আমি কথা দিচ্ছি আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার হবে। এমনিতেও ডিভোর্স হওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করার আগে কিছু মাস ব্যয় করার নিয়ম আছে। সেই সময় পার না হলে বিয়ে করা ঠিক না, হয়তো সেটা বিয়ে বলে কবুল হয় না। আমার দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হতে পাঁচ ছয় মাস লাগবে। দুই একদিন পরেই হয়তো টেস্ট পরিক্ষার রুটিন দিয়ে দিবে। এই ছয়টা মাস আমি আপনার থেকে সময় চাইছি। এই ছয়মাসে আপনি আমার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলবেন না মাঝেমাঝে খবর নিতে পারেন। আমি চাই না বিয়ের আগে আমি আরও একবার প্রেমে পড়ি। ”

” আমি পারব শুভ্রা, আমি তোর জন্য অপেক্ষা করব। তুই শুধু আমাকে কথা দে তুই অন্যকারো হবি না কখনো!”

” কথা দিলাম নিহান ভাই আমি আপনাকে ঠকাবো না। ”

” আজকে থেকে আমি তোকে আমার ভালোবাসার কথা আর জানাবো না, বিরক্ত করব না সবটা সময় তুই নিজের মতো থাকবি। ”

” হুম।”

” ক্লাসে…..”

” আমি একাই যাতায়াত করতে পারি নিহান ভাই এটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না।”

নিহান চায়ের কাপটা নিচে রেখে দুই হাত একত্র করে ঘষতে ঘষতে বলে, ” কে যেন বলেছিল আমাকে আর ভাই বলবে না?”

” ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।”

” জি, ঠিক করে নিন। আর এই যে আপনার ম্যাচুরিটি স্বভাবটা আমার পছন্দ না। মেয়েরা বাচ্চামি না করলে ভালো লাগে?”

” হ্যাঁ তাই তো। বেশি বাচ্চামি করলে তো ঠিকই ধমক দিয়ে গম্ভীরমুখে বলবেন শুভ্রা বড় হবি কবে তুই?”

” নাহ বলব না।”

শুভ্রতা নিহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে, ” চলুন তবে এখন বাসায় যাই দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

” সবাই জানে আপনি আমার সাথে আছেন কেউ চিন্তা করবে না।”

” তাই বলে কি রাত করে ফিরতে হবে নাকি চলুন তো।”

আকাশে একটা গোল চাঁদ উঠেছে। দুই একেই নতুন চাঁদ দেখা দিবে প্রতিটা মুসলিমের ঘর আলো করে আসবে রমজান। এই একটা মাস রাত জেগে, তারাবী নামাজ,তাহাজ্জুদ, ইবাদতে মশগুল থাকবে আর তারপরই ঈদ।

নিহান আর শুভ্রতা নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। শুভ্রতার আজ মন ভালো। তার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল রাতে ঘুরবে আর আকাশ দেখবে সেটা আজ পূরণ হয়ে গেল। রাতে আকাশ আর চারপাশ যেন নতুন সাজে সজ্জিত হয়। শুভ্রতা অন্ধকারের মাঝে আলোর ছটা, আকাশে চাঁদ, হালকা বাতাস অনুভব করতে থাকে আর নিহান তার প্রিয় মানুষকে।

#চলবে….