শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
239

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৭

” ওই ছেলে আমাকে খুব খারাপভাবে ছুয়েছে নিহান ভাই। ওই ছোয়া আমি আমার শরীর থেকে কীভাবে দূর করব বলুন তো? সবাই ক্ষতি করার জন্য আমাকেই কেন বেছে নেয়? আমি এসব কথা থানায় গিয়ে কীভাবে বলব বলুন তো? ছেলেটা আমাকে ধ*র্ষণ করতে চেয়েছিল এটা আমি নিজের মুখে সবাইকে কীভাবে জানাবো?”

পরিক্ষা শেষ করে শুভ্রতাকে নিয়ে আজ থানায় যাওয়ার কথা কারণ এই মামলার জন্য শুভ্রতার জবানবন্দি খুব প্রয়োজন। গতকাল কি হয়েছিল সেটা এখন শুভ্রতা ছাড়া কেউ বলতে পারবে না।

শুভ্রতার পরিপ্রেক্ষিতে নিহান কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ফাউজিয়া বলে ওঠে, ” তুই কি চাচ্ছিস ওই সোহেল এত বড় অপ*রাধ করে ছাড়া পেয়ে যাক? সেদিন তুই ওকে মে*রেছিলি, মানুষের সামনে মাফ চাইতে হয়েছে তাই সে নিজের রাগ কন্ট্রোলে রাখতে না পেরে এরকম একটা কাজ করেছে। নিহান ভাইয়া তো তোর সাথে আছে তাহলে তোর ভয় কীসের?”

শুভ্রতা কিছু বলে না, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে সে। ফাউজিয়া আবার বলে, ” দেখ শুভ্রতা, ওই ছেলে কাল তো ক্ষতি করতে চেয়েছিল। তুই যদি আত্মরক্ষা করতে না পারতি তাহলে হয়তো তোকে আজ এই অবস্থায় দেখতে পেতাম না। কাল তোর সাথে খারাপকিছু হতেই পারতো, কিন্তু হয় নি। কি কি হয়ছে সেটা শুধু বলবি। আমি জানি তুই পারবি। দেখ তুই যদি না জানাস তাহলে সোহেল কোন শাস্তি না পেলে পরবর্তীতে অন্য মেয়ের ক্ষতিও করবে। তোর উচিৎ এখনই তার শা*স্তির ব্যবস্থা করা। পারবি না?”

” আমি থানায় ও তোর পাশেই থাকব, তুই চাইলে। তোর কোন চিন্তা নেই। তুই শুধু জবানবন্দিটা দিবি বাকিটা আমি দেখে নিব। ওই ছেলেকে তো আমি কিছুতেই এমনি এমনি ছেড়ে দিব না। হয়তো আইন শা*স্তি দিবে নয়তো আমি।”

” আমি যাব নিহান ভাই, আমি সব জানাবো।”

ফাউজিয়া শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে, বিদায় নিয়ে চলে যায়। নিহান এবার অনুমতি পেয়ে দেরি না করে শুভ্রতাকে নিয়ে থানায় রওয়ানা দেয়।
~~
” আপনার সাথে কালকে কি ঘটেছিল? একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলবেন। ”

পুলিশ অফিসারের প্রশ্নে শুভ্রতা নিহানের দিকে তাকায়। নিহান বলতে বললে শুভ্রতার একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে গতকালের ঘটনা বলতে শুরু করে।

” গাড়িতে একটা মেয়েকে বসে থাকতে দেখে আমিও গাড়িতে উঠে বসে গাড়ি চলতে শুরু করে। পরীক্ষা শেষ হয়েছিল পাঁচটায়, আমার ফ্রেন্ডের সাথে কথাবার্তা বলে ভার্সিটির মেইন গেইট থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসি। আমার ডিপার্টমেন্ট থেকে মেইন গেইটের কাছে আসতে ১০-১২ মিনিট সময় লাগে। গাড়িতে যাত্রী না হওয়ায় অনেকক্ষণ দেরি হচ্ছিল। এদিকে আমার চাচাতো বোনের বিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে অথচ গাড়ি ছাড়ছে না খুব বিরক্ত লাগছিল। ড্রাইভারকে জানাতেই ড্রাইভার বলে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে তাহলে উনি দুজনকে নিয়েই আসবেন। আমিও রাজি হয়ে যাই কারণ আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে। গাড়ি ছাড়তে ছাড়তে ৫:৪৫। গাড়ি ছাড়ার আগ মুহূর্তে আমি একটা পানির বোতল কিনে নেই কারণ গাড়িতেই রোজা ভাঙতে হবে সময় ছিল না। গাড়ি চলতে শুরু করে কিছুদূর যাওয়ার পরে পাশের মেয়েটা নেমে যায় আমি বাড়িতে একা। গাড়ি আবার চলতে শুরু করে কিছু দূর যেতে গাড়িতে তিনজন ছেলে ওঠে। তিনজনের মুখে মাস্ক পরা একজনকে দেখে চেনা চেনা লাগছিল। তারা তিনজন গাড়িতে উঠে বসে, গাড়ি চলতে শুরু করে কিন্তু সেটা আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে না আবার পিছন দিকে ব্যাক করে। আমি ড্রাইভারকে চিৎকার করে বলি গাড়ি ঘুরিয়েছেন কেন?

আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমার পাশে বসে ছেলেটা আমার মুখে রুমাল বেঁধে দেয়। একে একে হাত দুটো বাঁধে এবং পা দুটো এক করে বেঁধে দেয়। খুব অসহায় লাগছিল নিজেকে, কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটবে আমি সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। গাড়িটা ফাঁকা রাস্তায় চলে যায় যেখানে কোন জ্যাম থাকে না। জ্যাম থাকলে তো গাড়ি থামাতে হবে আর গাড়ি থামলেই ধরা পড়ে যাবে তাই তারা গ্রামের ফাঁকা রাস্তা বেছে নেয়।

সন্ধ্যা পার হয়ে যায় গাড়ি এদিক ওদিক ঘুরতে থাকে আমি কান্না করতেই আছি,শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে কিন্তু শব্দটা হয়তো কারো কানে পৌঁছচ্ছে না। যখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে যায়, সবাই তখন ইফতার করতে ব্যস্ত মসজিদে সবাই পৌঁছে গেছে বাহিরে মানুষ নেই। তিনজন মিলে গাড়ি থেকে আমাকে নামিয়ে ওই ভাঙা ঘরটায় নিয়ে যায়।

আমাকে ঘরের মেঝেতে ফেলে রেখে তিনজন বাহিরে কথাবার্তা বলতে থাকে। আমি ভিতরে মেঝেতে বসে কখনো কান্না করছিলাম আমার ভাগ্যে কি আছে সেটা ভাবছিলাম। তখন একজন ভেতরে আছে বাহিরে থেকে তোর দরজা লাগিয়ে দেয়। কাউকে ভেতরে আজকে দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। সেই ব্যক্তি তখন আমার সামনে এসে মুখের মাস্ক খুলে অট্টহাসিতে ফেটে পরে।

মাস্ক খোলার পর আমি তাকে চিনতে পারি। ওটা সোহেল ছিল। সে বলতে থাকে খুব ইচ্ছে তাই না আমাকে দিয়ে মাফ চাওয়ানো? পুরুষ মানুষকে কি মনে হয় তোর? আর সেদিন কাকে যেন এনেছিলি? সে কি আজ তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে?”

শুভ্রতা এতক্ষণে একটু দম নেয়। এত কথা একটানা বলা কষ্টসাধ্য। শুভ্রতাকে থামতে দেখে পুলিশ অফিসার বলে, ” তারপর? তারপর কি হলো?”

শুভ্রতা আবার বলা শুরু করে- আমাকে অসহায়ের মতো কাঁদতে দেখে মুখের বাঁধন খুলে দেয়। আমি অনুরোধ করতে থাকি যেন আমার সাথে খারাপ কিছু না করে।
সে বলে, ” আমার সাথে বাড়াবাড়ি করার সময় মনে ছিল না? ডিপার্টমেন্টে ওইদিন ওতগুলো মানুষের সামনে গায়ে হাত তুলেছিলি। তোকে আমি ক্ষমা করব?”

আমি চিৎকার করতে থাকলে সে শব্দ করে হেসে উঠে বলে, ” এই সময়ে আমার হাতে থেকে তোকে বাঁচাতে কেউ আসবে না। ”

আমি চিৎকার করে কান্না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সে আমার মুখে, গলায় স্পর্শ করতে থাকে আমি শুধু ছটফট করে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে সে বলে, ” এরকম নিস্তেজ দেহ আমাকে সুখ দিবে না, তুই চিৎকার করবি নিজেকে রক্ষার জন্য ভিক্ষে চাইবি তবেই তো মজা হবে!”

এই বলে আমার হাতের বাঁধন, পায়ের বাঁধন খুলে দেয় সে। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। সে জানতো না আমি আত্মরক্ষায় পারদর্শী। সে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেই আমি পা উপরের দিকে বাঁকা করে হাটু দিয়ে ওর পু*রু*ষাঙ্গে আর তলপেটে আঘা*ত করি। সাথে সাথে ও আমার ওপর থেকে পাশে পড়ে যায়। পাশের সাথে কিছু একটা বাধতে সেটা দিয়ে ওর সারাশরীর আর মাথায় আঘাত করি আর তাতেই সোহেল সেন্সলেস হয়ে যায়। তারপর থেকে চিৎকার করে সাহায্য চাইতে থাকি। এশারের দিকে মনে হয় কেউ ঘরের দিকে আসছে তখন সাহায্য চেয়েও কোন কাজ হয় না। শরীর অসুস্থ হতে থাকে আমি এক কোণায় বসে পড়ি। তারপর জানি না কীভাবে মাঝরাতে আমাকে ওখান থেকে উদ্ধার করা হয়।”

” যাক, তাহলে আপনি ধর্ষ*ণ হন নি তাহলে,তাই না?”

পুলিশ অফিসারের এমন প্রশ্নে নিহান বলে, ” ও তো সবটা বলল, ওরকম কিছু হলে নিশ্চয়ই বলতো। ”

” স্যরি স্যার, আসলে….”

” নিজের কাজ করুন। নম্বর রেখে দিন কোর্টে দেখা হচ্ছে। এই ছেলের সর্বোচ্চ শা*স্তি আমি চাই।”

” অপরাধ অনুযায়ী সে শা*স্তি পাবে স্যার। ”

পুলিশ অফিসারের থেকে বিদায় নিয়ে নিহান আর শুভ্রতা বেরিয়ে যায়। তাদের এখন বাসায় ফিরতে হবে তার আগে নিহান সিদ্ধান্ত নেয় শুভ্রতার মন একটু ভালো করতে হবে। তাই সে বাড়ি না গিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার মনোভাব পোষণ করে। শুভ্রতা আনমনে নিহানের পাশে হাটতে থাকে।

#চলবে…..

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৮

শুভ্রতাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে নিজের একাউন্ট থেকে টাকা উঠায় নিহান। পাঁচশো টাকার দুইটা মোটা বান্ডেলের মধ্যে থেকে একটা বান্ডেল সে নিজের হাতে রেখে একটা শুভ্রতার হাতে দেয়। নিহান কী করছে সেটা বুঝতে না পেরে নিহানকে প্রশ্ন করে,

” আমাকে টাকা দিচ্ছেন কেন নিহান ভাই?”

” এই টাকা তোর গিফট। কারণ জানতে চাইবি না, গিফট দেওয়ার কোন কারণ নেই। তোর আজকে এই টাকার মাঝে যা যা কেনার ইচ্ছে কিনে নিবি।”

” এখানে তো অনেক টাকা!”

” কিছু কিনতে গেলে অনেক টাকা মনে হবে না।”

” লোভ ধরিয়ে দিচ্ছেন। পরে যখন আমার অল্পতে পোষাবে না তখন কি করবেন?”

” আমিও চাইও না যে আমার ভালোবাসার মানুষের চাওয়া সীমিত হোক। তুই চাইবি, তোর যখন যা কিনতে ইচ্ছে হয় আমাকে বলবি, দেখবি সামর্থ্য থাকলে মুহূর্তের মধ্যে হাজির করব। আমার শুধু এই মানুষটাকেই লাগবে যে কী না আবদার করবে, বাচ্চাদের মতো আচরণ করবে আবার আমি ভুল করতে গেলে আমাকে বোঝাবে আমাকে অনেক ভালোবাসবে। জীবনে ভালো থাকতে হলে অনেককিছু লাগে না শুভ্রা।”

” হয়েছে হয়েছে, কথা বলার সুযোগ দিলেই স্কুলের হেড স্যারের মতো বক্তব্য শুরু করে দেয়।”

নিহান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” আমি আমার অনুভূতি জানালাম তোকে, আর তুই কী না হেড স্যারের বক্তব্যের সাথে তুলনা করলি?”

” এভাবেই দাঁড়িয়ে কথা বলবেন? ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে বেশি সময় নেই আর। আমার আর দুইটা পরিক্ষা হলেই বেঁচে যাই। রোজা থেকে আর পড়তেও হবে না, পরিক্ষাও দিতে হবে না বিন্দাস লাইফ।”

নিহান তার কাছে থাকা আরেকটা বান্ডেল থেকে আরও কিছু নোট শুভ্রতার দিকে এগিয়ে দেয়। সে বলে,
” এগুলোও রাখ।”

” এত টাকা কেন আবার?”

” তোর মন ভালো করতে হবে না? আমরা এখন রিকশায় করে রেস্টুরেন্টে যাব। বাইক এখানেই এক পরিচিত ভাইয়ের দোকান আছে ওখানে রেখে যাই। রিকশাওয়ালাকে গাড়ি ভাড়া এই টাকার দুই তিনটা নোট দিবি দেখবি মনের মধ্যে অনেক ভালো লাগবে। রেস্টুরেন্টে খেয়ে কিছু টাকা বেশি দিবি টিপস হিসেবে দেখবি ওয়েটার খুশি হলে তুই ও খুশি হবি। এভাবে এই টাকাগুলো কিছু মানুষের মাঝে দিবি।”

শুভ্রতা বাহিরে বাহিরে ভালো আছে, স্বাভাবিক আছে দেখালেও ভেতরে ভেতরে সে ভেঙে চুড়মার হয়ে গিয়েছে কিন্তু সে চায় না এই বিষয়গুলো তার মনে চেপে বসুক আর তার কষ্টের মাত্রা বেড়ে যাক। সে নিজেকে ভালো রাখার জন্য এক প্রকার যু*দ্ধ করে যাচ্ছে নিজের সাথে।

” চুপচাপ দাঁড়িয়ে না থেকে চল, আর বেশি সময় নেই হাতে। ”

নিহানের কথায় কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। সে বলে, ” হ্যাঁ চলুন। ”

নিহান তার বাইক তার পরিচিত একটা লোকের দোকানের সামনে রেখে দুজন হাঁটা শুরু করে। কিছুদূর যেতেই দুজন মিলে একটা রিকশা নেয়। নিহান এবং শুভ্রতা রিক্সায় উঠে বসে।

” আমরা বাসায় কখন ফিরব? ”

শুভ্রতার প্রশ্নে নিহান জবাব দেয়, ” আমার সাথেই বাহিরে আছিস চিন্তার কোন কারণ নেই। আমার সাথে বাহিরে থাকলে তোর বাবা মা কিছু বলবেও না। ”

” ফোন করে জানিয়ে দিলে ভালো হতো না? বাবা তো চিন্তা করবে। ”

” এই চিন্তা আপনার করতে হবে না আমি আসার সময় বলে এসেছি আমাদের ফিরতে লেট হবে। ”

“ সব সময় একধাপ এগিয়েই থাকেন আপনি। ”

“ ভালো না? ”

“ হ্যাঁ খুব ভালো। ”

ইফতার করার পর নিহান এবং শুভ্রতা এসে বসেছে একটা মাঠে। এখানে সাধারণত মানুষ আসে স্ট্রিট ফুড খেতে। বিশেষ করে মেয়েরা যে খাবারগুলো পছন্দ করে সেগুলোর ব্যবস্থা করা হয় এখানে।
নিহান আর শুভ্রতা বসে ফুচকা আর ঝালমুড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। নিহান বসে ফোন টিপছে আর শুভ্রতা বসে টেবিল গুতোগুতি করছে। নিহান বলে ওঠে, “কি হয়েছে, এমন করছিস কেন?”

” ছয় মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড হয়ে গেছে তবু ফুসকা দিয়ে গেল না কেন? আর কত অপেক্ষা করতে হবে ফুসকার জন্য? আমার আর অপেক্ষা করতে ভালো লাগছে না। ”

” আমার ঝালমুড়িও তো দেয় নি আমি কি টেবিলে গুতোগুতি করছি?”

” আমি ফোন নিয়ে আসলে আমিও ফোন টিপতাম।”

নিহান কিছু না বলে মুচকি হেসে নিজের ফোনটা প্যান্টের পকেটে রাখে। একটা ঝালমুড়ি আর দুইটার ফুসকার প্লেট দেখে নিহান জিজ্ঞেস করে, ” দুইটা ফুসকার প্লেট কেন? আমি তো খাব না।”

শুভ্রতা খুশিতে দুই হাতের তালু একে অপরের সাথে ঘষতে ঘষতে বলে, ” আপনাকে খেতে বলেছে কে? এগুলো তো আমি খাব।”

” দুই প্লেট কোন পেটে আটাবি শুনি?”

” যে পেটে আটবে ওটাতেই আটাবো আপনার চিন্তা করতে হবে না।”

নিহান কিছু বলবে তখন শুভ্রতা হাত টেবিলে শব্দ করে রেখে বলে, ” থামুন, খাওয়ার সময় কোন কথা হবে না।”

” আনহেলদি খাবার একটু কম খেলেই হয়।”

” চুপ থাকুন তো, কতদিন ফুসকা খাই না! খাওয়ার সময় বেশি জ্ঞান দিলে কিন্তু ফু দিয়ে উড়িয়ে দেব।”

নিহান শব্দ করে হেসে ফেলে, ” কি! আমাকে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিবি? পাঁচ ফিট এগারো ইঞ্চি, পঁচাত্তর কেজি ওজনের মানুষ কী না তোর ফু তে উড়ে যাবে?”

” হ্যাঁ যাবে, এখন বসে বসে মুড়ি খান।”

শুভ্রতা একটা ফুসকা হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে টক মিশিয়ে নেয়, টক গড়িয়ে গড়িয়ে প্লেটে পড়ছে। পুরোটা একেবারে মুখে নিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। নিহান তাকিয়ে শুভ্রতার খাওয়া দেখছে। এই খাবারগুলো এত মজা করে খাওয়া যায়!

শুভ্রতা একের পর এক ফুসকা খেয়ে যাচ্ছে, শুভ্রতার খাওয়া দেখে এবার নিহানেরও খেতে ইচ্ছে করছে। শুভ্রতা এমনভাবে খেয়েছে দেখে মনে হয়েছে পৃথিবীর সেরা খাবার ফুসকা। শুভ্রতা প্লেটের শেষপিস মুখে নিয়ে নেয়। এখনো আস্ত একটা প্লেট পড়ে আছে। শুভ্রতা খাওয়া শেষ করে বলে, ” আমি আর খেতে পারব না।”

নিহান ঢোক গিলে বলে, ” বলেছিলাম তো দুই প্লেট খেতে পারবি না। সে নাকি দুই প্লেট খাবে! দে আমাকে দে প্লেট টা।”

” আপনি খাবেন? ”

” শুধু শুধু নষ্ট করে লাভ আছে নাকি?”

” অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন!”

” বেশি কথা না। ”

নিহান প্লেটটা নিবে তখন শুভ্রতা প্লেটটা টেনে ধরে। সেটা দেখে নিহান বলে, ” কি হলো?”

” আমি বানিয়ে দিচ্ছি, আপনি খান।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

খাওয়া শেষ করে বিল দিতে যায় শুভ্রতা। দোকানদারকে দুটো পাঁচশো টাকার নোট হাতে গুজে দিয়ে চলে আসতে দোকানদার ডাক দেয়। শুভ্রতা ফিরে আসে।

” কি হয়েছে চাচা?”

” মা, আপনাদের বিল তো একশো টাকা। আপনি হয়তো দুইটা পঞ্চাশ টাকা দিতে গিয়ে একশো টাকা দিয়েছেন।”

” না চাচা, দেখেই দিয়েছি। একশো টাকা বিল আর বাকি টাকা আপনার।”

” কিন্তু মা, আমি তো সাহায্য চাই নি।”

” এটা সাহায্য না চাচা, এটা মন ভালো করার ওষুধ বলতে পারেন। ”

” বুঝলাম না মা।”

শুভ্রতা নিহানকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে, ” ওই যে ওই লোকটাকে দেখছেন না? উনি আমার হবু স্বামী। অসম্ভব ভালোবাসেন আমাকে। আমার মন খারাপ উনি দেখতে পারেন না। আজ আমার মন খারাপ থাকায় তিনিই আমাকে টাকা দিয়ে এই রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন যে রাস্তায় আমার মন ভালো হবে।”

” আপনাদের মতো মানুষের বড় অভাব গো মা জননী। দোয়া করি আপনে আর বাপজান সারাজীবন হাসিখুশি থাকেন।”

” দোয়া করবেন চাচা, আমি আসছি তবে এখন।”

” আচ্ছা মা, আবার আসবেন কিন্তু।”

” জি অবশ্যই। ”

নিহান এবং শুভ্রতা পাশাপাশি হাটছে। শুভ্রতার মন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। কোন বিপদ তাকে খুব একটা স্পর্শ করতে পারে না। যে ব্যক্তি খুব বেশি বিপদে পড়ে তার কাছে হয়তো ভালো থাকাটাই অস্বাভাবিক মনে হয়। তারা খুব তাড়াতাড়ি খারাপ লাগা কাটিয়ে উঠতে পারে। শুভ্রতাকে দেখে কেউ বলতেই পারবে না গতকাল সে ওরকম একটা বিপদে পড়েছিল।

” ফুসকা কেমন ছিল নিহান ভাই?”

শুভ্রতার প্রশ্নে নিরবতা ভেঙে নিহান বলে, ” হ্যাঁ ভালো ছিল। তবে তোর খাওয়া দেখে মনে হচ্ছিল এটার স্বাদ তোর কাছে আরও বেশি ছিল। কি মজা করে খাচ্ছিলি তুই!”

” আমার খাওয়া দেখে আপনার খেতে ইচ্ছে করছিল তাই না?”

” মোটেও না। নষ্ট হবে জন্য খেয়েছি। ”

” মিথ্যে বলবেন না নিহান ভাই। আমি জানি আমার খাওয়া দেখে আপনার খেতে ইচ্ছে করছিল। আমি এটা আগে থেকেই জানতাম। ছেলেরা ফুসকা নিয়ে যতই বাজে রিভিউ দিক না কেন এটার লোভ তারা সামলাতে পারে না। আর ওই প্লেটটা আপনার কথা ভেবেই অর্ডার করেছিলাম কারণ না খেতে পারলে আমার খাওয়ায় নজর লাগতো।”

কথাটা বলেই শুভ্রতা জোরে শব্দ করে হেসে দেয়। শুভ্রতা হাসলে তার গালের একপাশে গর্ত হয়ে যায়। যদিও মেডিকেলের ভাষায় এটা একটা রোগ তবে সাধারণ মানুষ একে টোল বলে। আর টোল শুভ্রতার হাসির সৌন্দর্য্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। হাসলে মেয়েটার চোখ ও ছোট হয়ে যায়। সৃষ্টিকর্তা এত রূপ দিয়েছেন তাকে! নিহান এক পলকে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে তার প্রাণখোলা হাসি উপভোগ করছে। হাসির শব্দ বারবার নিহানের কানে লাগছে। এই মেয়ে নিশ্চিত মোহময়ী, ভুবনমোহিনী।

#চলবে………

#শুভ্ররাঙা_ভালোবাসা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৯

পোশাক কিনতে গিয়ে প্রাক্তন স্বামীকে দেখতে পাবে এটা কিছুতেই ভাবতে পারে নি শুভ্রতা। ইমতিয়াজ এসেছে তার মা, বোন এবং হবু বউকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে। তারা বসে বিয়ের শাড়ি দেখছিল এমন সময় একই দোকানে নিহান এবং শুভ্রতা প্রবেশ করে। শুভ্রতা আর নিহান চেয়ার টেনে বসতেই দোকানী নিহানকে সালাম দিয়ে বলে, ” আরে ক্যাপ্টেন সাহেব যে! তা কেমন আছেন মশাই?”

” দীপ্ত দা?”

” চিনলেন তাহলে!”

” কতদিন আগে দেখা হয়েছিল বলুন তো! আর তারপর কেমন চলছে সব?”

” এইতো দোকান নিয়ে বসেছি। ”

নিহান দোকানীর সাথে কথা বলতে থেক। শুভ্রতা পাশে তাকাতেই দেখে ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বসে শাড়ি দেখছে, তাকে হয়তো কেউ খেয়াল করে নি। ইমতিয়াজের পাশেই মোনালিসা বসে শাড়ি পছন্দ করছে। বিয়েতে কোন শাড়ি পরবে সেটা দেখছে। কিছুদিন আগে যে শুভ্রতা ছিল সেই শুভ্রতা থাকলে হয়তো ওদের সামনে গিয়ে ইমতিয়াজকে অনুরোধ করতো এসব না করতে, তাকে ফিরিয়ে নিতে বলতো। কিন্তু শুভ্রতা এখন বুঝতে পেরেছে ইমতিয়াজের মতো মানুষ তাকে ডিজার্ভ করে না। শুভ্রতা দেখেও না দেখার নাটক করে নিহানকে বলল, ” আপনি কি গল্পই করবেন নাকি আমরা শাড়ি দেখব?”

” তুই ওদিকে দেখ কোনগুলো পছন্দ…….”

নিহানের চোখ যায় ইমতিয়াজের ওপর। ইমতিয়াজকে দেখা মাত্র মাথা গরম হয়ে যায় তার। শুভ্রতাকে বলে, ” অন্য দোকানে চল।”

” কেন?”

” আমার এখানে ভালো লাগছে না। ”

নিহান উঠে দাঁড়ালে সবাই তার দিকে তাকায়। শুভ্রতাও নিহানের সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়। ইমতিয়াজের বাড়ির সবাই তাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। কি করবে কেউ বুঝতে পারছে না। শুভ্রতা নিহানের হাত ধরে বলে,

” বসুন, আমরা শাড়ি দেখতে আর কিনতে এসেছে মানুষ দেখতে আসি নি।”

” কিন্তু শুভ্রা…”

” উহু, বসুন আপনি। আমি থাকতে পারলে আমি কেন পারবেন না?”

শুভ্রতার কথায় নিহান বসে পড়ে। শুভ্রতাও পাশের চেয়ার টেনে বসে। ইমতিয়াজ ও তার পরিবারের কারো মুখে কোন কথা নেই। তবে ইমতিয়াজ কিছুক্ষণ পরপর শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে দেখছে।

শুভ্রতা মজার ফলে নিহানকে জিজ্ঞেস করে, ” আমি যদি আজকে অনেকগুলো শাড়ি নিই আপনি কি বিল দিতে পারবেন? ”

নিহান শুভ্রতার কথায় তার দিকে তাকায়। শুভতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি তো আমাকেই দিয়ে দিয়েছি তোকে, আমার যা আছে সবই তোর। অনেকগুলো শাড়ি নিবে বলছি? অনেকগুলো কেন পুরো দোকানেও যদি নিতে চাস তাহলে সেটাও আমি দিয়ে দেব। ছয় বছর ধরে চাকরি করছি, যা পেয়েছি সব ব্যাংকে তোলা আছে। কত টাকা আছে তোর হবু বরের বুঝতে পারছিস? তুই যা চাইবি তাই পাবি। ভাবিস না নিয়ে নে।”

নিহানের কথায় শুভ্রতা চোখের থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। এই লোকটা তাকে এত ভালবাসে কেন সেটাই তো বুঝতে পারেনা। একটা মানুষকে আরেকটা মানুষকে আসলেই এতো ভালবাসতে পারে!!

শুভ্রতা বেছে বেছে একটা সাদা আর একটা বেগুনী শাড়ি নিলো। শুভ্রতার বাবা বলে শুভ্রতাকে সাদা রঙে একদম শুভ্রপরী লাগে। কোনকিছু কিনতে গেলে বাবার পছন্দকে খুব বেশি প্রাধান্য দেয় শুভ্রতা। শুভ্রতা দুটো শাড়ি নিয়েই নিহানকে বলে, ” এই দুটোই আমার পছন্দ হয়েছে। এই দুটো নেব।”

” কে যেন বলল অনেকগুলো শাড়ি নেবে?”

” ওটা তো মজা করে বলেছি।”

” আচ্ছা বসো একটু। দাদা ওই যে ওই পাশের নীল আর খয়েরী রঙের দুটো শাড়ি বের করুন তো দেখি।”

দোকানীকে উদ্দেশ্যে করে নিহান কথাটা বললে দোকানের ছেলেটা শাড়ি দুটো নামিয়ে দেয়। নিহান শাড়ি দুটো নেড়েচেড়ে দেখে। শাড়ি দুটো বেশ সুন্দর।

দোকানী একই শাড়ি কালো রঙেরও বের করে। শাড়িটা নিহানের সামনে রেখে বলে, ” এ রঙে শাড়িটাও কিন্তু দারুন, আপনার স্ত্রীকে দারুণ মানাবে। ”

দোকানী কথাটা বলতেই ইমতিয়াজ চোখ বড় বড় করে নিহান আর শুভ্রতার দিকে তাকায়।

নিহান শুভ্রতাকে বলে, ” এই শাড়িগুলো কেমন?”

” সুন্দর।”

” পছন্দ হয়? কোন রঙ বেশি পছন্দ?”

শুভ্রতা কিছু বলার আগেই দোকানী বলে, ” আরও রঙ আছে বের করব?”

নিহান বলে, ” হ্যাঁ বের করুন।”

নিহান আর শুভ্রতার সামনে আরও তিনটে শাড়ি রাখা হয় সবুজ, আকাশী আর গোলাপি রঙের। সামনে ছয়টা একই শাড়ি শুধু রঙ ভিন্ন। নিহান শুভ্রতাকে জিজ্ঞেস করে,” কোনটা বেশি ভালো লাগছে?”

” আমার তো আর শাড়ি লাগবে না, এই দুটোই হবে। আমি তো শাড়ি পরি না। ”

নিহান শুভ্রতার দিকে মুখ এগিয়ে এনে আস্তে আস্তে বলে, ” বিয়ের পর আমরা যখন একসাথে থাকব তখন প্রতিদিন শাড়ি পরতে হবে।”

নিহানের কথায় শুভ্রতা লজ্জা পেয়ে যায়। সে বলে, ” তখন প্রতিদিন শাড়ি পরলে আর শাড়িতে ভালো লাগবে না।”

” তুই যেমন কোনদিন অপছন্দের তালিকায় যাবি না ঠিক তেমন শাড়িতে তুই কখনো খারাপ লাগা সৃষ্টি করতে পারবে না। এখন বল কোনটা ভালো লাগে?”

শুভ্রতা শাড়িগুলো ভালোভাবে দেখে বলে, ” সবুজ রঙ।”

ইমতিয়াজ সবার আড়ালে মনোযোগ শুভ্রতার ওপর রেখেছিল। শুভ্রতার সবুজ রঙ পছন্দ করায় সে অবাক হয়। সবুজ রঙ ইমতিয়াজের অপছন্দের হওয়ায় শুভ্রতার একটা শাড়ি বা কোন পোশাক সবুজ রঙের ছিল না। ইমতিয়াজ বুঝতে পারে না শুভ্রতার পছন্দের রঙের লিস্টে সবুজ ও আছে কি না! শুভ্রতা সারাক্ষণ বলতো সবুজ রঙ তারও অপছন্দ।

নিহান সবগুলো শাড়িই দিয়ে দিতে বলে। শুভ্রতা জিজ্ঞেস করে, ” শাড়ি পছন্দ করতে বলার পর এখন আবার সবগুলো কেন? ”

” পছন্দ করতে বললাম আপনার নিজের জন্য, সবুজ রঙের শাড়ি আপনার আর বাকিগুলো আবিরা, নেহা,স্নিগ্ধা,ইরা আর শাকিরার জন্য। তোদের সবার একই শাড়ি, সুন্দর না?”

” হ্যাঁ সুন্দর। আচ্ছা নিন।”

নিহান সব কয়েকটা শাড়ি নিয়ে নেয়। দুজন শাড়িগুলো নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে যায়। দুজন চলে গেলে ইমতিয়াজ সেটা তাকিয়ে দেখে আবার শাড়ি দেখায় মনোযোগ দেয়।

শুভ্রতা আর নিহান হাটছে, তখন রাত আটটা বেজে গিয়েছে। শুভ্রতার হাতের শপিং ব্যাগগুলো নিহান তার হাতে থেকে নিয়ে নেয়। শুভ্রতাও আর কিছু বলে না কারণ নারীকে কোনকিছু বহন করতে না দেওয়া সুপুরুষের লক্ষণ। শুভ্রতার হঠাৎ টাকার কথা মনে পড়তেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রতার দাঁড়ানো দেখে নিহানও দাঁড়িয়ে যায়।

” কি হলো দাঁড়িয়ে গেলি কেন? পা ব্যথা করছে? আমি বললাম যে রিকশা নিই। ”

” থামুন তো, শুধু বেশি কথা বলেন আপনি।”

” আমি তোর সাহস দেখে অবাক হয়ে যাই, শত শত সেনাবাহিনী আমার আন্ডারে, আমার কথা শোনে আর তুই কথায় কথায় ধমক দিস।”

” কথা বেশি বললে ধমক তো খাবেনই। ”

নিহান আর কিছু না বলে মিটিমিটি হাসতে থাকে।শ্যভ্রতা ব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করে নিহানের দিকে বাড়িয়ে দেয়। নিহান ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে, ” কি?”

” টাকাগুলো নিন।”

” টাকা নিব কেন?”

” আমার টাকা লাগবে না৷ টাকা দিয়ে আর কি করব?”

” রেখে দে ওগুলো।”

” নাহ লাগবে না, নিন। চলুন তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।”

” হুম। ”

নিহান টাকাগুলো নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। দুজন আবার হাটা শুরু করে দেয়। নিহান হাটতে হাটতে বলে, ” আজকের পর থেকে খুব প্রয়োজন না হলে আমাদের দুজনের একান্ত সময় কাটানো হবে না। তবে সবার সামনে আগের মতোই থাকব আমরা। কখনও প্রয়োজন হলে অবশ্যই জানাবি আমাকে।”

” ঠিক আছে। তবে আজকের দিনটার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আজকের দিনটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনগুলোর একটি। আজকে যেমন কিছু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছি ঠিক তেমন আমার মুখেও হাসি ফুটেছে, এর পুরো ক্রেডিট আপনার। ”

” তুই আমার হবি তো শুভ্রা? আমার ভাগ্য কি আসলেই এত ভালো! আমার কেন যেন তোর সেদিনের কথাগুলো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে।”

” আমি ডিভোর্সি একটা মেয়ে, তবুও আমাকে যদি আপনি আগের মতো ভালোবাসতে পারেন, যত্ন নিতে পারেন, বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন তাহলে আমি কেন আপনার থেকে আর পালিয়ে বেড়াবো!”

” আমি তোকে…..”

নিহানকে থামিয়ে দিয়ে শুভ্রতা আস্তে করে বলে ওঠে, “আমি জানি নিহান ভাই, আপনি আমাকে ভালোবাসেন।”

#চলবে………