শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব-১১

0
432

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_১১

সূবর্ণা আলতোভাবে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে।সামনে গুটিসুটি মেরে বসেই বলে উঠে,

“ভাবী?ভাইয়াকে জানাইছো?”

সূবর্ণার কথায় মনটা খারাপ হয়ে যায়–জানি সে কোন বিষয়ে বলেছে।আমার প্রেগনেন্টের বিষয়টা আকাশকে এখনো জানে না।আকাশ কল না করা পর্যন্ত আমি কথা বলতে পারি না তারসাথে।একবার এক এক নাম্বারে কল করে ওখান থেকে।নির্দিষ্ট কোনো নাম্বার নেই আকাশের।নির্দিষ্ট একটা নাম্বার থাকলে সেদিনই টুপ করে বলে দিতে পারতাম,
“শুনছো?আমি মা হতে যাচ্ছি?”

আমার মুখের হাবভাব দেখে সূবর্ণা বুঝে ফেলে যে এখনো জানে না আকাশ। এই পিচ্চি মেয়েটা ইদানীং আমার অনেককিছুই ধরে ফেলে!সেদিন
রাতের দশটার দিকে আমার রুমে ঢুকেই বলে উঠে,

“ভাবী?সানহা আপু একটু অন্যরকম।কারো সাথেই মিশতে চায়না।ছোট বেলা থেকেই এরকম।উনার এই স্বভাবের কারণে আজঅব্দি
স্কুল,কলেজ এবং ভার্সিটিতেও কোনো ফ্রেন্ড বানাতে পারেনি।।তুমি রাগ করো না ভাবী।”

অবাক হলাম সূবর্ণার কথায়।অথচ আমি সানহার বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞেসও না।আর সে-ই নিজে থেকে বললো সব যত প্রশ্ন সানহাকে নিয়ে আমার মনের ভেতর ঢুপঢাপ করেছিলো।সূবর্ণা বলে,
“ভাবী?মন খারাপ করোনা।আমার মন বলছে ভাইয়া শীঘ্রই চলে আসবেন।”

আমি হাসলাম এবার।বললাম,
“পড়াশুনা শেষ?”
“পুরো না।ম্যাথটা বাকি আছে।”

বলে থামে কিছুটা আবার বলে উঠে,
“ভাবী একটা তোমাকে কথা বলতাম..!”
“হু বলো?”

মেয়েটা চুপ হয়ে যায় এবার!বললাম,
“কী হলো বলো..।’
” নাহহহ কিছু না!”

বলে মুখ টিপে হেসেই আবার বেরিয়ে যায়।জানি না মেয়েটার মাথায় হুটহাট কি উঠে!ঘুমানোর জন্যে প্রস্তুতি নিব শাশুড়ী মা দরজায় টোকা মারেন এমন সময়।ক্লান্ত শরীর টা নিয়ে আবার উঠে গিয়ে দরজা খুলি!বলেন,
“সানহার প্রচন্ড মাথা ব্যথা করতেছে।আদা চা লাগবে ওর।”

এটুকুন বলে চলে যান।মানে উনার আদেশ দেওয়ার ভণিতা দেখলে আমাকে তখম এই বাড়ির বউ মনে হয়না।কাজের বেটি মনে হয়!চল্লিশ মিনিটস অপেক্ষা করে গাঢ় করে আদা চা করে দিলাম সানহাকে।তারপর নিয়ে টি-টেবিলের উপর রেখে চলে আসবো,পেছন থেকে সানহা হঠাৎ বলে উঠে,

“ভালোই পটিয়েছেন আকাশ ভাইয়াকে!প্রথম প্রেমিকার কথা ভুলে কি সুন্দর দ্বিতীয় কোনো নারীকে গ্রহণ করে ফেললো!কিছু নারীরা ছলনাময়ী হয় খুব।পুরুষদের সহজে হাত করতে জানে!”

সানহার কথা শুনে হঠাৎ অবাক হলাম।আর সবথেকে অবাক হলাম এরকম কথা বলাতে।তার কথাতে যেনো কোথাও রাগ জমে আছে!তবে আমি হাসলাম।মিষ্টি করে হাসলাম।আর বললাম,
“ধন্যবাদ,আমাকে এভাবে এপ্রিশিয়েট করার জন্যে!আসলে এই গুণও আবার সব মেয়ের থাকে না!”

এতটুকুন বলে কি ভেবে যেন সূবর্ণার রুমের দিকে এগুলাম–মেয়েটা ঘুমায় নাকি পড়ে?দরজা বন্ধ করে ভেতর থেকে।তবে সূবর্ণা কারো সাথে যে বলতেছে ।
“আমি এতকিছু জানি না!আপনি সব ডিলিট করেন!আমার ভাইয়া-মা-ভাবী জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে!”

সূবর্ণার চাপা কন্ঠস্বর ছিল।বেশি রাত হওয়াতে সবকিছু নিরব এবং চুপচাপ,ছোট গলার শব্দগুলোও দরজার সাথে ভালো করে কান পেতে রাখলে সুস্পষ্ট শোনা সম্ভব,যা এখন আমি শুনতেছি!সূবর্ণার কথায় আমার আগ্রহ বেড়ে গেলো আরো!
“হ্যাঁ,আমি আপনাকে ভালোবাসি।বিশ্বাস করি তো আপনাকে!তারপরও প্লিজ!প্লিজ!”

বাকিটুকু বুঝতে আর বেগ পেতে হলো না!মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো সাথে সাথে।দরজার খিল শক্ত করে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলাম।কিছুটা শক্ত হলে নিজের রুমে ফিরে এলাম।মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,
“সূবর্ণা রিলেশন করতেছে?তাও এই বয়সে!?”

দুইদিন পরই সবই পরিষ্কার হয়ে যাই আমি!আর সবথেকে বেশি অবাক হই যখন সূবর্ণা আমারই আপন খালাতো ভাই নিহালের সাথে জড়িয়েছে!সম্পর্কটা ৬ মাসের!বুঝতে পারি ও ফোন যখন ওর বইয়ের নিচে লুকিয়ে রেখে যখন বাইরে যায়।আমি সুযোগে চেইক করি।আর চেইক করেই মেসেন্জারে নিহালের সাথে ওর কথোপকথন দেখি।তারপর ফোনটা আগের জায়গায় সযত্নে রেখে দিই।এখনো সূবর্ণাকে কিছু বলি নি এ ব্যাপারে।সুযোগ খুঁজতেছি কখন ওকে হাতের কাছে সঠিক সময়ে পাবো!আর আজকেই পেলাম।ঘুমাবো এমন সময় ও আমার রুমের দরজা ঠেলে উঁকি মারে,
“ভাবী শুয়েছো?”

বললাম,
“ভেতরে আসো।”

ভেতরে ঢুকে,
“কিছু বলবে ভাবী?”

আমার সারা শরীর রাগে রি রি করে উঠে।এই দুইদিন অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে সবার সামনে হাসিখুশিতে থাকার চেষ্টা করেছি!কিন্তু এখন আর মনে হয় সেই ধৈর্য্যের বাঁধটা আর ধরে রাখতে পারবো না!ধপ করে বিছানা থেকে নেমে যেয়ে দরজাটা বন্ধ করে
তারপর সূবর্ণার দিকে তাকিয়ে চোখমুখ শক্ত করে বলে উঠি,

“এসব কি সূবর্ণা? এসব কি হচ্ছে!”
“মানে ভাবী?”
“তু-মি..!”

বলতে যেয়েও রাগে কোনো কথাই যেন আসতেছে না।
“ভাবী?”
“নিহালের সাথে তোমার কি সম্পর্ক!?”

সূবর্ণা এবার যেনো খুব অসংযত হয়ে যায়।আমি সুক্ষ্মভাবে খেয়াল করেছি ও একটা ঢোক গিলেছে!আমার চোখমুখে রাগ দেখে এবার কেঁদে উঠে।কিশোরী।এদের ভেতর আবেগ বেশি।কারো সামনে ধরা পড়ে গেলে আর আবেগের তালও ধরে রাখতে পারে না এরা।নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে!দ্রুত পায়ে এগিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে।আর কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠে,

“ভাবী?আমি নিহাল ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসি ভাবী।অনেক ভালোবাসি!নিহাল ভাইয়া অনেক ভালো।আমাকে অনেক কেয়ার করে!”

মানে?কি বলবো এই মেয়েকে?এই ছোট্ট মেয়ে নিহালের ব্যাপারে ভালো করে কিছু জানে?!ভালো করে ওকে চেনে, যতটা আমি চিনি!তাছাড়া সূবর্ণাকে আমার ভালে করে বুঝাতে হবে।উল্টাপাল্টা বুঝালে বুঝ ধরবে না।তাই নিজেকে যথেষ্ট শান্ত করলাম ক্ষণিকে।বুক থেকে সূবর্ণার মাথা তুলে বিছানায় নিয়ে বসলাম।তারপর বললাম,

“বোন আমার?আমার কথা মন দিয়ে শোন!তুই করল বলতেছি তোকে।অত্যন্ত আপনের তাড়নে তুই চলে এসেছে!কিছু মনে করিস না!এই বয়সটা তোর পড়াশুনা করার বয়স।প্রেম করার বয়স না।তুই এখন টিনেজার।তোর ভেতর আবেগ কাজ করে বেশি!ছেলেদের দুই-তিনটে সুমিষ্ট কথাই তুই গলে যাবি।অন্ধের মতন বিশ্বাস করে ফেলবি।তার ভালোমন্দ কোনোকিছুই ভাববি না!তাছাড়া,এখন ভাবতে পারিস আমরা কেনো তোকে উপদেশ দিচ্ছি।তোর জীবন। তোর ডিসিশন! তোর এই বয়সটা আমাদের ডিসিশনে পারফেক্ট।পরে তুই নিজেই তোর লাইফের ডিসিশন নিস বোন আমার।ইউনিভার্সিটিতে উঠবি যখন তোর ডিসিশনে আমরা কেউই দ্বিমত করবো না।তখন তোর পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে।ভালোমন্দ বুঝতে পারবি।কিন্তু এখনো তোর ওই বয়সটা হয়নি।এখন নিজেকে সামনের ক্যারিয়ারের দিকে মনোনিবেশ করবি।তাছাড়া,সামনে তোর এস.এস.সি।সময়ও তেমন নেই।রেজাল্ট খারাপ হবে।পরে রেজাল্ট খারাপ হলে মা,তোর ভাইয়া তোকে সন্দেহ করবে।যদি এসব শুনে তোকে মেরেই ফেলবে!”

“কিন্তু ভাবী,নিহাল ভাইয়া আমাকে অনেক ভালোবাসে!প্লিজ বারণ করো।আচ্ছা তোমার আপত্তি থাকে আমি উনার সাথে কথাও তেমন বেশি বলবো না।মাঝে মাঝে বলবো।তারপরও প্লিজ তার থেকে আমাকে সরে যেতে বলো না!”
“সূবর্ণা ভাবীর কথা বোঝার চেষ্টা কর একটু!এইটা তোর প্রেমের বয়স না!নিহাল কেমন আমি জানি!”
“তারমানে তুমি বলতে চাচ্ছো নিহাল ভাইয়া খারাপ?আমিতো উনার মাঝে খারাপের কিছুই দেখছি না!অনেক জায়গায় ভাবীরা সাহায্য করে ননদকে এসবে।আর তুমি!কতটা ভালো জেনেছি তোমাকে!”

সূবর্ণা রাগ হলো আমার উপর খুব!এবার মুখ ফসকেই বলে দিলাম,
“তোকে আমি আবারো সাবধান করছি ওর থেকে দূরে থাক!নাহলে আমি ফোন নিয়ে নিব তোর।আর নাহলে মায়ের কাছে বলে দিব সব!”

সূবর্ণা আরো রাগ হয়ে গেল!কিছু আর না বলেই উঠে বেরিয়ে গেল রুম থেকে!আমি মাথার উপর হাত দিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম!চোখ থেকে টপটপ করে পানি বেরিয়ে এলো!
“নিহাল সূবর্ণা কে তো ভালোই ব্রেণ ওয়াশ করেছে।আর এসব যদি আকাশ এবং আমার শাশুড়ি মা জানে আমার সংসার!”

চলবে…..