#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_১১
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
জবা চুপচাপ শুধু আয়ানের পিছু পিছু হাটছে। পুরো মার্কেট ঘুরে ঘুরে আয়ান নিজের পছন্দ মতো জবার জন্য মার্কেট করলো।
ওদের সাথে অভ্র আর বেলীও ছিল।
অভ্র মোবাইলে কি যেনো করছে আর বেলী একটার পর একটা ড্রেস অভ্রকে দেখাচ্ছে।
এক পর্যায়ে ওদের মার্কেট করা শেষ হয়৷
আসার সময় আয়ানের খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা কল আসলো এখনি অফিসে যেতে হবে। আয়ান অসহায় চোখে জবার দিকে তাকালো। ভেবে ছিল এখন জবা কে নিয়ে ভালো কোনো একটা রেস্টুরেন্টে যাবে তা আর হলো না।
বেলী বলে উঠলো, ‘ আয়ান ভাই আমিও তোমার অফিসের কাছেই যাব মারিয়ার বাসায় তুমি না হয় আমাকে নামিয়ে দিবে৷ অভ্র ভাইয়া জবা ভাবিকে নিয়ে চলে যাক’
আয়ান জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ সাবধানে যাবেন আর হ্যা বাসায় গিয়ে একটা কল দিয়ে জানাবেন ‘
অভ্র দাঁড়িয়ে আড়চোখে আয়ানের এমন কথা শুনে বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ মনে হচ্ছে আমি ছিনতাই করে নিয়ে যাব! নাকি একটা মেয়েকে সাবধানে বাসায় নিয়ে যাওয়ার মতো পুরুষ নই আমি!..?’
আয়ান আবার অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ অভ্র দেখেশুনে নিয়ে যাস কোনো সমস্যা হলে আমাকে কল দিবি’
অভ্র নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নিলো, কিছু সময় চোখ বন্ধ রেখে বললো,’ এতো টেনশন অন্যের বউ নিয়ে হলে নিজের সাথে অফিসেও নিয়ে যা ‘
আয়ান কিছু বলার আগেই অভ্র গিয়ে বাইকে বসে পরলো।
আয়ান বাইক দেখে বলে উঠলো, ‘ বাইকে যাবে.? ‘
অভ্র বিরক্তিকর দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাইক এনেছি ত কি গরুর গাড়িতে করে নিব.?’
আয়ান জবার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ না আমি সেটা বলিনি, জবার যদি সমস্যা হয়!’
অভ্র এবার সত্যি সত্যি রেগে গেলো,’ জবা! উনি এখনো সম্পর্কে তোমার ভাবি আর উনি আমার সাথে যাচ্ছে তারপর ও এতো চিন্তা করার মতো কিছু দেখছি না ‘
আয়ান বলে উঠলো, ‘ তুই না হয় গাড়িতে করে যা আমি বেলীকে নিয়ে বাইকে যাচ্ছি ‘
বেলী বলে উঠলো, ‘ দেখো আয়ান ভাই আসার সময় আরেকটু হলে আমি বাইক থেকে পরে হসপিটালে ভর্তি থাকতাম। এই অভ্র ভাই আমাকে কাঁধে হাতটাও রাখতে দেয়নি, মাঝে এতোটা জায়গা রেখেছে মনে হচ্ছিল আরও দুইজন বসতে পারবে। আমি ভুলেও বাইক দিয়ে যাব না৷
~ তাহলে রিক্সা করে চলে যা।
~ রিক্সা করে যেতে পারলে তোমাকে কখনো বলতাম না।
জবা চুপচাপ গিয়ে অভ্রর পেছনে বসে বললো,’ বাইক চালান।’
আয়ান বেলী এখনো তর্কাতর্কি করেই যাচ্ছে, আশেপাশে মানুষ অদ্ভুত ভাবে ওদের দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ এগিয়ে এসে বললো,’ নতুন বিয়ে হয়েছে বুঝি তোমাদের.? ‘
আয়ান বেলীর দিকে তাকাতেই বেলী হ্যা করে আয়ানের দিকে তাকালো। ‘
~ মশা ঢুকবে এতো বড় হ্যা বন্ধ কর।
বেলী আয়ান কে কিছু বলার আগেই বৃদ্ধ আবার বলে উঠলো, ‘ নতুন নতুন বিয়ে এমনি হয়, আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিয়ে করে ছিলাম তখন আমাদের ও রাস্তায় এভাবে ঝগড়া হতো, শুধু রাস্তায় নয় যেখানে যেতাম সেখানেই ঝগড়া, ছোট একটা বিষয় নিয়েও ঝগড়া তবে মজার বিষয় কি যানো.? আমরা ঝগড়া করে এক সেকেন্ড ও আলাদা থাকতে পারতাম না, কথা না বলে থাকতে পারতাম না।’
বেলী আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আরে দাদাভাই এই ছেলের মুখ দেখেছেন.? আপনার কিভাবে মনে হলো এমন হনুমান, মহিলা স্বভাবের ছেলেকে আমি বিয়ে করে জীবন শেষ করবো!.?
~ এই হনুমানের নানি তোর কি মনে হয় তোর মতো শাঁকচুন্নি কে আমি বিয়ে করে আমার ঘার মটকাবো!.?
~ আমি তোমার মতো ঝগড়ুটে খবিশ কে বিয়ে করে রাস্তা ঘাটে মানসম্মান হারাবো?
~ তোর মতো ছেলে টাইপ মেয়েকে বিয়ে করে জীবন জাহান্নাম বানাবো এতো বড় পাপ আমি করবো.?
~ আহারে আমার হুজুর টাইপ লোক রে…
এদের ঝগড়া চলতেই আছে বৃদ্ধ একবার আয়ানের দিকে আরেক বার বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ এদের মধ্যে আমি আর আমার রাণীকে দেখতে পাচ্ছি, একটা সময় আমাদের ও এমন ছিল যা আজও আছি, এই যে বলে দিয়েছে আশার সময় কিছু নিয়ে আসবে আমি ওর জন্য ফুলকপি নিয়ে যাচ্ছি। ঝগড়া হওয়ার কোনো চান্স রাখিনি খাবার নিয়ে যাইনি বলে ঝগড়া করতে আসলে বলবো ফুলকপি রান্না করে খেয়ে নাও আর ফুল নিয়ে যাইনি বলে গাল ফুলিয়ে রাখলে ফুলকপি হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে সামনে ধরলে সব রাগ শেষ হয়ে যাবে বলা যায় এক ঢিলে দুই পাখি…
অভ্র কিছু দূর এসে বাইকের গতি কমিয়ে দিল, রাস্তার একটা সাইডে গাড়ি থামিয়ে বললো,’ রাস্তার ওই পাশে একটা টং দোকান আছে চলেন চা খেয়ে আসি।’
জবা একবার রাস্তার ওই পাশে তাকালো অভ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি খেয়ে আসুন আমি অপেক্ষা করছি।’
অভ্র জবার হাত ধরে বলে উঠলো, ‘ চলুন ত’
জবা একবার নিজের হাতের দিয়ে তাকালো৷
অভ্র জবার হাত ধরে রাস্তায় পার হলো। পুরোটা সময় জবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রর দিকে।
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দুইজন চা খেয়ে এসে বসলো বাইকে।
জবা বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ বাড়িতে যাওয়ার পর যে কি হয় কে জানে!’
অভ্র জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনি কি ভয় পাচ্ছেন.? জবা রক্তজবা ভয় পাচ্ছে.? যাকে সবাই ভয় পায় সে ভয় পাচ্ছে.? ‘
অভ্রর এমন কথায় জবার কিছুটা সন্দেহ হয়! জবা অভ্রর পেছনে বাইক শক্ত করে ধরে বললো,’ আপনি একটু বেশি বলছেন মনে হচ্ছে না?
~ আমি বেশি বলছি.? আর আপনি পরিচয় গোপন করে মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে আছেন তার বেলায় কি বলবেন জবারাণী.?’
~ আমি মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে আছি তার প্রমাণ কি.? আপনি ? আপনার কথায় এটা প্রমাণ হয়ে যাবে.?
অভ্র বাইক থামিয়ে জবার সামনে এসে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,’ আমার ভাই কোথায়.?’
জবা অভ্র রাগ দেখে অবাক হয় সাথে ভয়ও পেয়ে যায়।
অভ্র জবার দুইগাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমার ভাইয়ের কিছু হলে আমি তোমার সবকিছু সবার সামনে মুখোশ টেনে খুলবো সে তুমি যতবড় সিআইডি অফিসার হওনা কেন!! আমার ভাই এখনো বেঁচে আছে সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি…’
ব্যাথায় জবার চোখ জলে টলমলে হয়ে উঠে। জবার চোখে জল দেখে হুঁশ ফিরে অভ্রর জবার গাল ছেড়ে অন্য দিকে ফিরে রাগে ইচ্ছে করে নিজের গালে নিজে থাপ্পড় বসাতে ও কিভাবে পারলো জবার সাথে এমন ব্যাবহার করতে।
জবা যেনো এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। কয়েক মিনিটে কি হয়ে গেল.? আসিফ বেঁচে আছে.? আর জবাই কেন ওকে লুকিয়ে রাখবে.?
জবা অভ্রর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘ ভালোই ত আমার বিষয় জেনে গেছেন তাহলে ভালো করে শুনে রাখুন না আমি আপনার ভাই কে কিডন্যাপ করেছি আর না আমার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ‘
অভ্র রাগ নিয়ন্ত্রণ করে জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি এখনো কাঁচা খেলোয়াড় রয়ে গেছো রক্তজবা! আমি তোমার সব উদ্দেশ্য সম্পর্কে যেনেই ছাড়বো, সবকিছু সবার সামনে আনতে আমার বা হাতের খেল অথচ আমি চাই তুমি কতটুকু করতে পারো! তুমি নিজ থেকে সবকিছু সামনে আনবে আমি কেন কষ্ট করতে যাব!
জবা ভেতর ভেতর রেগে গেলোও ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রর দিকে।
অভ্র জবার হাসির দিকে তাকিয়ে বললো,’ তুমি এতোটা পাল্টে গেলে কিভাবে রক্তজবা!..?’
~ আপনি ত নাম দিয়ে ছিলেন রক্তজবা! আচ্ছা রক্তজবার গল্প জানেন.? এই যে খুব সহজে একটা নাম দেওয়া যায় কিন্তু তার অর্থ খুঁজে বের করলে নামের সাথে হয়তো জীবনটাও পাল্টে যায়, পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করে আসল রক্তজবা হয়ে উঠতে।
~ এমন কি হয়ে ছিল.?
~ আপনার হসপিটালে দেরি হচ্ছে! রোগী রেগে ঘুরঘুর করে বেড়ান কেমন ডাক্তার আপনি.?
অভ্র হাসতে হাসতে বাইকে উঠে বসলো।
~ আমার বিষয়ও ভালোই খবর রাখো দেখছি।
~ শত্রুকে শেষ করতে হলে তার চারপাশের সবার খবর রাখতে হয়!
~ তোমার সেই শত্রুর সাথে দেখা করার আমার আকাশসম ইচ্ছে।
~ যদি সেটা আপনার খুব কাছের কেউ হয়.? আপনার হৃদপিণ্ডের কাছের.?
~ তাও তার অপরাধ কি জানতে চাই!
~ তখন যদি আমাকে ভুল মনে হয়.?
~ তোমার চোখে আজও আমি সঠিক দেখি না রক্তজবা উহু তুমি শুধু জবা! আমার দেখা সেই রক্তজবার সাথে এই জবার কোনো মিল নেই। এই জবার নাম কি দেওয়া যায়.?
জবা ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ ধ্বংস জবা! এই জবা আপনার পুরো পরিবার কে ধ্বংস করে দিবে যেভাবে আজ থেকে বিশ বছর আগে আমার মা’কে! আমার পরিবার কে করে ছিল আপনার পরিবারের লোকজন। ‘
অভ্র বলে উঠলো, ‘ কিছু বললে.?’
জবা চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো,’ না’
অভ্র লোক লাগিয়ে জবার সব খবর জেনে গেছে, জবা কি করে.? ওর পরিবারে এখন কে কে আছে.? ও এখানে কিভাবে এলো.? সব জানতে পারলেও জবার এখানে আসার কারণ এখনো বুঝতে পারছে না, কেউ জানেনা জবা এখানে আছে, প্রায় জবা বাড়িতে যায়!
কথা হলো এখন অভ্র ভাবছে জবা আসিফকে লুকিয়ে রেখেছে কিন্তু কেন.? এতে জবার লাভ কি.? আর অভ্রর বা এমন কেন মনে হচ্ছে.? সবাই ত জানে আসিফ মা-রা গেছে! এখানে আবার কি রহস্য লুকিয়ে আছে..?
জবা পুরো রাস্তা ভাবতে ভাবতে আসলো। জবার ভাবনায় ঢুকে গেলো সত্যি কি আসিফ বেঁচে আছে.? আসিফের লাশ পাওয়া যায়নি! এটা কেন জবা আগে ভেবে দেখেনি.? আসিফ কে কেউ ইচ্ছে করে লুকিয়ে রাখেনি ত.? জেনো দোষটা জবার উপর দিয়ে চলে যায়!.? জবার এখন আসল কাজ হলো আসিফ কে খুঁজে বের করা! আসিফের গাড়ি যেখান থেকে খাদে পরে ছিল জবা কাল সেখানে যাবে। তাহলে কি আরও কেউ জবার আসল পরিচয় জেনে গেছে.? জবাকে আরও সাবধান হয়ে চলতে হবে। বাবাকে দেওয়া ওয়াদা জবা পূরণ করবেই, সবগুলো পাপিকে তার শাস্তি জবা নিজ হাতে দিবে।
বাড়িতে আসতেই মুখোমুখি হলো কুলসুম বেগমের। উনি জবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আয়ান কোথায়..?’
জবা মাথা নিচু করে বললো,’ অফিসে চলে গেছে ‘
~ তুমি কার সাথে এসেছো.?
‘ আমার সাথে ‘
সবাই পেছন ফিরে অভ্রকে আসতে দেখলো।
কুলসুম বেগম একবার অভ্র আরেকবার জবার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে নাও রুমে গিয়ে ‘
শার্লিন বেগম ভেবেছিল আজ একটা তুফান চলবে ঘরে অথচ কিছুই হলো না! কুলসুম বেগম ত রেগে ছিল হঠাৎ কি হলো.?
কুলসুম বেগমের মাথায় উল্টাপাল্টা কিছু ঢুকার আগেই আজই বেলী আর অভ্রর বিয়ের কথা বলতে হবে। আজ বেলীর আব্বু শরিফ সাহেব বাসায় আসলে বড় ভাবির সাথে বেলী আর অভ্রর বিয়ের বিষয় কথা বলে সবকিছু ঠিক করে নিতে হবে। ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো। আর অভ্রর মতো ছেলে লাখে একটা মিলে না।
চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।