শেষ থেকে শুরু পর্ব-২৬+২৭

0
1039

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নিস্তব্ধতায় ঘিরে আছে চারপাশ।
আয়ান অবাক চোখে চারপাশ তাকাচ্ছে। এখানে নিয়ে আসার সময় ও অজ্ঞান ছিল। জ্ঞান ফিরতেই নিজের হাত পা বাঁধা অবস্থায় মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আসিফ।
আয়ানের বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো না নিজের ভাই হ্যাঁ ছোট থেকে ত আসিফ কে নিজের বড় ভাই ভেবে এসে ছিল। আজ ভাই পিস্তল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সামনে তাকিয়ে দেখলো ওর ছোট মামার হাত পা দিয়ে রক্ত ঝড়ছে কাটা স্থানে লাল মরিচের গুঁড়ো, লবন দিয়ে রেখেছে চিৎকার জেনো না হয় সেই জন্য মুখের ভেতর কাপড় ঢুকিয়ে রেখেছে।
পাশে মৌরির হাত পা বাঁধা মেয়েটা কাদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ওর মুখে স্টেপ মারা, ভেতরের রুম থেকে মহিলার আর্তনাদ ভেসে আসছে। কন্ঠটা চিনতে একটুও ভুল হলো না আয়ানের। ওর বড় আন্টি শিলা কিন্তু এভাবে চিৎকার করে আর্তনাদ কেন করছে.?
সবশেষে নিজের মায়ের দিকে তাকালো আয়ান,, থমথমে মুখে বসে আছে টেবিলের অন্য পাশে নিরুপমা কে দেখে শীতল নদীর মতো তাকালো আয়ান। এই মেয়েটাকে সে বড্ড ভালোবেসে ছিল আজ পছন্দের মানুষের ভিন্ন রুপ আয়ান কে একদম শান্ত করে দিল৷ এতোক্ষণ খুঁজা প্রশ্ন গুলো সব হাওয়াই মিলিয়ে গেলো। সে দেখতে চায় সাধাসিধা, বোকাসোকা জবা উঁহু সে জবা নয়! জবা পৃথিবীর সব মেয়ে থেকে আলাদা, ওর চোখে মুখে সারাক্ষণ মায়া ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু ওর সামনে বসে থাকা মেয়েটার মুখে কোনো মায়া নেই কি ভয়ংকর অনুভূতি! একই মানুষ অথচ ভিন্ন দুইটা সত্তা…

নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ মায়া তালুকদারের সাথে যা হয়ে ছিল সবটা সত্যি জানতে চাই একটা মিথ্যা বললে তোমার ছেলের গায়ে দুইটা আঘাত পরবে।’
শায়েলা সিদ্দিকীর দূর্বলতাই তার ছেলে আর স্বামী। নিরুপমা সেই দুইটাই টার্গেট করলো।

___________

সময়টা ছিল আজ থেকে ২৫ বছর আগের।

তখন আমি নতুন ভার্সিটিতে ভর্তি হই। ভার্সিটিতে তেমন কাউকে চিনতাম না তখন একটা মেয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়। বলা যায় আমি র্্যাগিং এ পড়ে ছিলাম একটা চিঠি নিয়ে সিনিয়র ভাইয়াকে দিতে হবে।
সিনিয়র ভাইয়া শুনতেই ভীষণ ভয়ে কান্না করছিলাম আর সবাই দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিল। এই ভিড়ের মধ্যে একটা মেয়ে এগিয়ে আসে।
পরপর দুইটা থাপ্পড় মেরে ছিল ওই সিনিয়র ভাইয়াদের লিডারের গালে।
আর ওই লিডার আর কেউ নয় আমার স্বামী শফিক আহমেদ ছিল।

আর মেয়েটা ছিল মায়া তালুকদার। প্রথম দেখায় শফিকের মায়া কে ভালো লেগে যায় যার জন্য সে মায়া তালুকদার কে কিছুই করে না। উল্টো ওর দলের এক সিনিয়র রেগে মায়ার হাত ধরাতে সেই দিন ওই ছেলের হাত ভেঙে দিয়ে ছিল শফিক।
শফিক ভার্সিটিতে বখাটে ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে নাম করা ছিল। এক নামে সবাই চিনতো যেমন বখাটে ছিল তেমন পড়াশোনায়ও অনেক ভালো ছিলো। দেখতেও সিনেমার হিরোদের মতোই ছিল।

মায়া তালুকদারের সাথে আমার পরিচয় সেইদিন হয়। সে অনেক সাহসী আর মিশুক ছিলো আর আমি ছিলাম ওর বিপরীতে।

দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধত্ব অনেক গভীর হলো। ভার্সিটিতে অনেকেই আমাদের বন্ধত্ব দেখলেই হিংসে করতো। মায়া কে ছাড়া আমি জেনো একদম অচল ছিলাম। আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে হঠাৎ করে উপস্থিত হলো শফিক।
প্রতিদিন আমাদের ফলো করা, কাউকে না কাউকে দিয়ে ফুল পাঠানো, কখনো ফুচকার দোকানে গেলে আমাদের থেকে টাকা রাখত না বলত বড় ভাইয়ের নিষেধ ভাবির থেকে টাকা নিতে পারবো না।

শফিকের এমন পাগলামো দিন দিন বাড়তে শুরু করলো। আমি আসতে আসতে ওর প্রতি দূর্বল হতে শুরু করি। ওর পাগলামি আমাকে ওকে ভালোবাসতে বাধ্য করে আবার অবাক ও হতাম ভার্সিটির এতো ডাক নাম যেই ছেলের, যার জন্য সব মেয়ে পাগল সেই ছেলে আমার মতো শ্যামবর্ন একটা মেয়ের জন্য এমন পাগলামো করছে!.? মায়া কে বললে সে হাসতে হাসতে বলতো, ” আমার চোখে দেখা সেরা সুন্দরী তুই ছেলে ত পাগল হবেই, আমি ছেলে হলে তোকে বিয়ে করে নিতাম ”
আমিও হাসতাম কারণ মায়া ছিল অপূর্ব সুন্দরী, যে একবার ওর দিকে তাকাবে তার চোখ ফেরানো কষ্ট কর হয়ে দাঁড়াবে। মাঝে মাঝে ভাবতাম শফিক আসলে কাকে ভালোবাসে.? কার জন্য এমন পাগলামি করে.? কখনো নাম বলেনি হতে ত পারে মায়া সেই মেয়ে, ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে ছিল মায়া। এমনটা ভাবতেই আমার বুকে ব্যাথা হত কারণ ততদিনে আমি শফিক কে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। আমি মেয়ে হয়ে ভাবি আল্লাহ নিশ্চয়ই মায়া কে নিজ হাতে খুব যত্ন করে বানিয়েছে। মায়ার রুপ যেমন ভয়ংকর ছিল তেমনি ওর রাগ, জেদ ছিল আরও বেশি ভয়ংকর। ছেলেরা সেই ভয়ে কখনো সামনে এসে প্রপোজ করতো না। প্রতিদিন বেনামে কতো চিঠি আসতো৷

মায়া জানতো শফিকের জন্য আমি কতো পাগল ছিলাম। একদিন মায়াকে বললাম আমি শফিক কে মনের কথা জানাতে চাই। মায়া বললো জানিয়ে দেওয়া উচিত কতোদিন এভাবে লুকোচুরি চলবে!

আমি সেই দিন একটা চিঠি লিখলাম শফিকের জন্য। পরের দিন সেটা মায়া কে দিয়ে পাঠালাম। ও যেতে চায়নি আমি জোরাজোরি করলাম আমি ভিতু আর সে সাহসী তাই ওকে দিয়েই পাঠালাম।

সে ফিরে আসলো ঘন্টা খানেক পর। আমি জিজ্ঞেস করে ছিলাম এমন কি কথা হলো যে ঘন্টা লেগে গেলো.? সে বললো সিক্রেট তোর জন্য সারপ্রাইজ তাই বলা যাবে না। আমিও বিশ্বাস করে নিলাম।

সপ্তাহ খানেক শফিকের কোনো দেখা পাওয়া গেলো না। এদিকে আমার অবস্থা খারাপ, খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি, সারাক্ষণ মনমরা, ভার্সিটিতে মন বসে না।

হঠাৎ একদিন সামনে এসে হাজির শফিক, পুরো ভার্সিটির সামনে সে আমাকে প্রপোজ করে। এই শফিক একদম আলাদা ছিল আগের সেই বখাটে শফিকের সাথে ওর কোনো মিল নেই। মাথার চুল এলোমেলো , চোখ গুলো কেমন ভেতর চলে গেছে, চোখের নিচে কালচে পড়ে গেছে, আগের থেকে শুকিয়ে গেছে আর একদম শান্ত হয়ে গেছে।

আমি সেইদিন খুশিতে পাগল প্রায়। আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন ছিল সেটা দূর থেকে আমার খুশি দেখে আরও একটা মুখে হাসি ফুটে ছিল সেটা হলো মায়া তালুকদার।

পুরো একটা বছর ভার্সিটিতে চুটিয়ে প্রেম করে বেড়িয়েছি আমি আর শফিক।
মায়ার সাথে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে।

হুট করে আমার বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া শুরু করলো এদিকে শফিক কিছুতেই রাজি না এখন বিয়ে করতে সামনে ওর পুরো কেরিয়ার পরে আছে।

আমি কান্না করে এইসব বললাম মায়া কে। আমার চোখের পানি ছিল মায়ার দূর্বলতা সে বললো শফিক কে বুঝাবে। হলোও তাই মায়া কি বললো জানা নেই শফিক রাজি হয়ে গেলো। আমরা পালিয়ে বিয়ে করলাম কারণ আমার বাবা তখন বেকার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে রাজি নয়।

চৌধুরী বাড়িতে বিয়ে করে নিয়ে আসলো শফিক, কেউ তেমন ঝামেলা করেনি কুলসুম বেগম আমাকে আদর করে ঘরে তুলে নিলো। আমার শাশুড়ী নিজ হাতে আমাকে এই ঘরের নিয়ম কানুন শিখালো। আমি জেনো একটা মা আর বোন পেলাম, শরিফের বড় ভাই ছিলো আরও ভালো আমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করতো শরিফ ও সারাদিন ভাবি ভাবি বলে পেছন পেছন ঘুরঘুর করতো।

মায়া প্রায় আসতো আমাকে দেখতে। মায়াকে এই বাড়ির সবাই অনেক বেশি পছন্দ করতো। আমি খেয়াল করতাম মায়া আসলে সবাই জেনো আমাকে ভুলে যেতো মায়াকে নিয়ে মেতে থাকতো। আমার শাশুড়ী মায়ার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতো আর কুলসুম বেগম জেনো হারিয়ে যা-ওয়া বন ফিরে পেয়েছে এমন আড্ডা শুরু করতো। অবশ্য মায়া ছিলই এমন একটা মিষ্টি মেয়ে।

দেখতে দেখতে বিয়ের এক বছর কেটে গেলো আমার পেটে তখন আয়ান। প্রায় বাড়ির কথা মনে হলে মন কাঁদত তবে বাবার কঠিন আদেশ ছিল ওই বাড়িতে আমার পা রাখলে বাবার মরা মুখ সবাই দেখবে।

আয়ান জন্মনিলো, মায়া তালুকদার উকিল হলো, আস্তে আস্তে ওর ডাক নাম সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পরতে শুরু করলো।

দেখতে দেখতে পাঁচটা বছর কেটে গেছে। এই পাঁচ বছরে কিছুই পাল্টায়নি শুধু পাল্টেছে মায়া তালুকদারের জীবন। শহরের সবচেয়ে বড় উকিল হয়ে উঠেছে সে, দু একদিন পর পর আয়ান কে দেখতে আসে। আসিফ আর অভ্র ও মায়া কে দেখলেই গিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে গল্প করে। অথচ আমি বাড়িতে সারাদিন থাকলেও কেউ আমার আশেপাশে আসে না। আয়ানও এমনি হলো মায়ার পিছু পিছু ঘুরঘুর করে। বাড়ির সবার বেশ পছন্দের মানুষ ছিল মায়া তার উপর এখন ত নাম করা উকিল আমার হিংসে হতো ওর উপর। সবাই কেন ওকে এতো পছন্দ করে.? শফিক ও আমার কথা কখনো শুনেনা অথচ মায়াকে দিয়ে আমি একবার বলালেই শফিক রাজি। এইসব আমাকে দিন দিন মায়ার প্রতি রাগ বাড়াচ্ছিল।

তার মধ্যে মায়ার বিয়ে ঠিক হলো ওর কাজিনের সাথে।
মায়া এসে আমাদের সবাইকে ইনভাইট করলো।

ভালো ভালো ওর বিয়ে হয়ে গেলো। আমার বুকের উপর থেকে জেনো একটা ভয় দূর হলো। কিন্তু কিসের ভয় এতোদিন বুকে লালন করে ছিলাম আমি.? সংসার হারানোর নাকি স্বামী.? যদিও মায়ার উদ্দেশ্য এমন কিছু কখনো ছিল না। কারণ সে ছোট থেকেই ওর কাজিনকে পছন্দ করতো সেটা আমি ভার্সিটি থেকেই জানতাম। ওর পছন্দের মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে এটা ভাবতেও আমার রাগ হলো, হিংসে হলো ওর জীবনটা এতো সুখের কেন.? যা চাচ্ছে সবকিছু পাচ্ছে, সবাই ওকে এতো ভালোবাসে কেন.? ওর সৌন্দর্য.?

আমার ওর প্রতি হিংসে বাড়তে শুরু করে।

ওর বিবাহিত জীবনে এতো আনন্দ দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না। একটা মেয়ের মধ্যে কিছু ত খুঁত থাকবে, কষ্ট থাকবে অথচ ওর জীবনে কিছুই নেই। অথচ আমার জীবন.? না আজ পাঁচ বছরে কখনো পরিবারের কারো মুখ দেখতে পেরেছি আর না স্বামী! হাহ্ স্বামী বললে ভুল হবে আমাদের মধ্যে এতো এতো দূরত্ব হয়ে গিয়ে ছিল সপ্তাহে একদিন দেখা হত না অথচ একই বাড়িতে থাকতাম। আমার মনে হতো সবকিছু মায়ার জন্য হচ্ছে! ওর জন্য আমার জীবনটা এমন হয়ে গেছে আর ওর জীবনটা কতো সুন্দর।

মায়ার এই বাড়িতে আসা একটু একটু করে কমে গেলো। সে হয়তো বুঝতে পারছে আমার ওকে পছন্দ নয়।

একদিন ফোন দিয়ে বললো ওর একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। শফিক সেই কথা শুনেই চলে গেলো ওর মেয়েকে দেখতে হসপিটাল বিষয়টা আমার রাগ আরও বাড়িয়ে দিলো। আমার মনে হচ্ছিল ও দূরে থেকেও আমার স্বামী কে আমার থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে।

আমার শাশুড়ী, কুলসুম, আসিফ, অভ্র সবাই গেলো মায়ার মেয়েকে দেখতে আয়ানও কান্না করে ছিলো কিন্তু আমি দেইনি।

সময় যায়, সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।

মায়ার মেয়ের নাম নিরুপমা নিরু রাখা হয়েছে। মেয়েটা এখন দৌড়ে হাটে।
এই বাড়িতে প্রায় নিয়ে আসে শফিক। আয়ান ওকে দেখলেই পেছন পেছন ছুটে খেলার জন্য । আয়ান ওর থেকে আট বছরের বড় অথচ ওকে দেখলেই বাচ্চা হয়ে যায়।
অভ্র নিরুপমা কে দেখলেই রাগী চোখে তাকিয়ে থাকবে জানা নেই এই ছোট বাচ্চাটার সাথে ওর এতো কিসের শত্রুতামু।

হঠাৎ একদিন শায়েলা সিদ্দিকী বড় বোন শিলা সিদ্দিকী আসলো উনার সাথে দেখা করতে। আজ দশ বছর পর নিজের পরিবারের কাউকে দেখে খুশিতে আত্মহারা শায়েলা সিদ্দিকী। তবে শিলা সিদ্দিকীর মুখে ছিল আমাবস্যা।

শায়েলা সিদ্দিকী বোনের মুখ দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই ঝরঝর করে কেঁদে উঠলো শিলা সিদ্দিকী।

শায়েলা সিদ্দিকী বোনের কান্না দেখে নিজেও কান্না করে দিলো।
~ আমার অভিময় আর নেই রে।
শায়েলা সিদ্দিকীর বুক কেঁপে উঠল। অভিময় শিলা সিদ্দিকীর স্বামী, নেই মানে.? কোথায় গেছে.?

~ ওর ফাঁসির রায় হয়েছে, মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে আমার অভিময় কে ওরা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিচ্ছে।

শায়েলা সিদ্দিকী কি বলবে.? কিভাবে বোনকে শান্তনা দিবে পাগল প্রায়। এতোদিন পর, এতো বছর পর বুঝি এমন একটা খবর পেতেই শায়েলা সিদ্দিকী অপেক্ষা করে ছিলো.?

শিলা সিদ্দিকী বলতে শুরু করলো। এক মেয়েকে রেপ করা হয়েছে, রেপ করে মে’রে নদীতে বাসিয়ে দিয়েছে এই কেইস পেয়েছে মায়া তালুকদার, এই মায়া তালুকদার বিনা অপরাধে মিথ্যা প্রমাণ দিয়ে অভিময় কে ফাসিতে ঝুলিয়ে দিলো!

আবারও মায়া তালুকদার! রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা শায়েলা সিদ্দিকীর। শান্তসৃষ্ট মহিলাটা হঠাৎ এক ভয়ংকর রুপ নিলো।

~ তুই এখন কি চাস.?
~ আমি প্রতিশোধ নিতে চাই আমার স্বামী কে মিথ্যা ফাঁসিতে ঝুলানোর।
শায়েলা সিদ্দিকী বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তবে তাই হবে, আমার জীবনটাও নরক বানিয়ে ফেলেছে ও, আমার স্বামী আমার হয়েও আমার না সে ওই ভার্সিটি থেকে আমাকে নয় মায়া কে ভালোবাসতো শুধু মাত্র মায়ার উপর রাগ করে ভালোবাসার অভিনয় করে গেছে আমার সাথে। আমার জীবনটা ওরা খেলনার পুতুল বানিয়ে দিয়েছে। আমার স্বামী ওকে ভালোবাসে সেটা জেনেও ও সারাক্ষণ ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করেছে যার জন্য আজ আমাদের মধ্যে এতো দূরত্ব।

সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই শায়েলা সিদ্দিকী সেই রাতে গিয়ে হাজির হলো মায়া তালুকদারের বাসায়।
প্রাণ প্রিয় বান্ধবী কে দেখে মায়া তালুকদার খুব খুশি হলো। বাসায় ওই দিন মায়ার স্বামী ছিল না সে অফিসের কাজে বাহিরে ছিল।

শায়েলা সিদ্দিকী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে মায়া তালুকদারের অগোচরে ওর পানিতে ড্রাক মিশিয়ে দিলো। কিছু সময় যেতেই মায়া তালুকদারের মাথা ঘুরতে শুরু করে নিজেকে মাতাল মাতাল লাগে।

শায়েলা সিদ্দিকী মায়া তালুকদারের মেয়ে নিরুপমা কে নিয়ে অন্য রুমে চলে যায় আর শিলা সিদ্দিকী সাত জন ছেলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে । যেই রেপ কেইসে অভিময় কে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে সেই রেপ করা হয় মায়া তালুকদারের সাথে।
শিলা সিদ্দিকী মায়া তালুকদারের হাত চেপে ধরে রাখে, একটা মেয়ে হয়ে তার মেয়ে হলো না অন্য একটা মেয়ের উপর ।

ভেতরের রুম থেকে মায়ের এমন করুন চিৎকার শুনে বার বার পাঁচ বছরের নিরুপমা ছুটে যেতে চায় সেই রুমে কিন্তু শায়েলা সিদ্দিকী শক্ত করে হাত চেপে ধরে রাখে। জেনো মায়া তালুকদারের এক একটা চিৎকার শায়েলা সিদ্দিকী কে আনন্দ দিচ্ছে, এতো বছর ধরে তিলে তিলে জমানো ঘৃণা, রাগ, ক্ষুভ মিটে যাচ্ছে।

মায়া তালুকদারকে সাত জন মিলে গনধর্ষন করা হয় তারপর গলায় রশ্মি দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় ঘরের ফ্যানের সাথে।

সবার কাছে বলা হয় মায়া তালুকদার আত্মহত্যা করেছে। টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মায়া তালুকদারের স্বামী কম চেষ্টা করেনি সঠিক বিচার পেতে অথচ দিন শেষে ফলাফল শূন্য।

শায়েলা সিদ্দিকী সবটা শেষ করে তাকালো সামনে বসে থাকা নিরুপমার দিকে। এখানে উপস্থিত সবার চোখে পানি টলমল করছে। আজ শুধু নিরুপমা নয় মায়া তালুকদারের মৃত্যুর কাহিনী শুনে কাঁদছে হাজারো মানুষ।

নিরুপমার মুখ দেখে কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। জেনো সে আগে থেকেই সবকিছু জানতো।
নিরুপমা অনলাইন জগতে সিআইডি অফিসার হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত আজ সে সবটা কাহিনী লাইভে শুনিয়েছে। কতোটা ভয়ংকর ভাবে ওর মা কে মৃত্যু দিয়েছে নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবী তার গল্প শুনে আজ হাজারো মানুষের চোখে পানি।

এই লাইভ শুনেছে কুলসুল বেগম, শায়েলা সিদ্দিকী, বেলী। সবার চোখে পানি এমন করে ও নিজের প্রাণ প্রিয় বান্ধবী এমন করতে পারে.? হিংসে, রাগ মানুষ কে পশু বানিয়ে দেয়। একটা পশুকেও ত ভালোবাসা দিলে সে বেইমানি করে না অথচ সে ত মানুষ ছিল!

নিরুপমা সামনের ডায়েরিটা শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে এগিয়ে দিয়ে রুম থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেলো।
আলিফ কে ইশারা করে বললো,’ আয়ান আর ওর ছোট মামা কে ছেড়ে দিতে, মৌরি কেও ছেড়ে দিতে। ‘

একজন মেয়ে নিজের মায়ের এমন মৃত্যুর কথা শুনে নিজেকে কতক্ষণ ঠিক রাখতে পারে.? সেই ছোট থেকেই ত সে একটা লক্ষ্যে বড় হয়েছে, নিজেকে একটু একটু করে তৈরি করেছে। নিজের মায়ের মৃত্যুর সঠিক বিচার, এমন বন্ধু, বান্ধবীদের কি বলা হয়.? আমাদের আশেপাশেই এরা থাকে অথচ আমরা আপন বলে বুকে টেনে নেই ওদের বিষ দাঁতের কামড় খেতে।

নিরুপমা শুনশান মাঝ রাস্তায় এসে হাঁটু গেড়ে রাস্তার মাঝে বসে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। নিজের দূর্বলতা কারো সামনে দেখাতে চায় না সে তাই ত মাঝ রাতে রাস্তায় বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। দূর থেকে এক জোরা চোখ তাকিয়ে আছে নিরুপমার দিকে।

~ কেঁদে নাও, ইচ্ছে মতো কেঁদে নাও কতো বছর আর বুকে পাথর চেপে রাখবে!

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_২৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

এই বাড়িতে নিরুপমার আর মাত্র একরাত বাকি।
সকালে সে নিজের গন্তব্যে চলে যাবে।

বেলী ধীর পায়ে নিরুপমার রুমে উঁকি মারলো। নিরুপমা ব্যাগ গুছিয়ে রাখছে।
~ আসবো আপু..?
নিরুপমা দরজার দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে বললো,’ এসো’
বেলী নিরুপমার ব্যাগের দিয়ে তাকিয়ে বললো,’ সত্যি কাল চলে যানে নিরু আপু.? আর কয়টা দিন থাকলে হয় না.?’
নিরুপমা ব্যাগ একপাশে রেখে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোমার মুখে জবা নামটা বেশ মানায়।’
বেলী হাসলো, যতোটা কঠিন সবাই নিরুপমা কে ভাবে ততটাও পাষাণ সে নয়।
বেলী হেঁসে বললো,’ আচ্ছা জবা আপু ‘
জবা বললো বসো আমি কফি নিয়ে আসি। বেলী ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে লাগলো।

জবা সিঁড়ি দিয়ে নামতে অভ্র কে দেখলো হসপিটাল থেকে ফিরেছে। সোফায় চুপচাপ বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মন ভালো না, না হয় শরীর ভালো না। তাতে জবার কি! জবা সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো।

রান্না ঘরে আসিফ নিজের জন্য কফি বানাচ্ছিল। জবা কে দেখে হাল্কা হেঁসে বললো,’ কিছু লাগবে.?’
‘ কফি’
‘ দুইটা কেন.?’
‘ বেলীর জন্য একটা ‘
‘ আম্মু বলছিল তোমার সাথে কথা আছে, শুনলাম আগামীকাল চলে যাচ্ছ.?’
‘ নিজের বাড়িতে ত যেতেই হবে’
‘ এটাও তোমার বাড়ি’
আসিফের এমন বোকা কথা শুনে হাসলো জবা ‘
‘ হাসছো কেন.?’
‘ আপনার কথা শুনে, আমার বাপ দাদা আপনার বাড়িতে ত আমার জানা মতে কোনো সম্পত্তি ফেলে যায়নি।’
আসিফ কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললো,’ তুমি নিজেই ত তাদের কোটি টাকার সম্পদ যা আপাতত আমাদের বাড়িতে আমার সামনে।’
জবা শব্দ করে হেঁসে উঠলো।

ড্রয়িং রুমে ওদের হাসাহাসির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
অভ্রের রাগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। এমনিতেই ভীষণ ক্লান্ত ছিল, মন ভালো না তার মধ্যে আসিফের সাথে জবার এমন হাসাহাসি আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো।

জবা দুই কাপ কফি নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই পেছন থেকে শুনতে পেলো, ‘ এখনো যাচ্ছ না কেন.?’

জবা পেছন ফিরতেই অভ্র বুক টানটান করে ওর সামনে দাঁড়ালো । রাগে চুখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।

অভ্র আবার বলে উঠলো, ‘ যা চেয়েছিলে তা ত পেয়েই গেছো! আজ এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তুমি তোমার উদ্দেশ্য পূরণ করে ফেলেছো আর কি চাই এখানে.? ‘

জবা যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধ মেয়ে, এতোদিন পরিস্থিতির জন্য সবকিছু সহ্য করলেও এখন সে কিছুতেই এমন অপমান সহ্য করবে না।

‘ তোমার বাড়িতে থাকার, খাওয়ার সম্পূর্ণ টাকা আমি দিয়ে দিব, আগামীকাল শেষ হবে। আমি আমার এক টাকারও ক্ষতি করতে পারবো না তাহলে আগে আগে কিভাবে চলে যাই.?’

অভ্র জবার হাতের কনুই শক্ত করে চেপে ধরে বললো,’ তুমি আমাকে টাকার বড়াই দেখাচ্ছ!.?’
জবা দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বললো,’ আপসোস তুমি আজও নারীদের সম্মান দিতে শিখোনি, তোমাকে ত আমি পরে দেখে নিব’

‘ কি হচ্ছে এখানে.? ‘
মা’য়ের কঠিন কন্ঠ শুনতেই অভ্র জবার হাত ছেড়ে দিল। আজকাল মা টা কেও এই মেয়ে হাত করে ফেলেছে। সারাক্ষণ নিরু নিরু করে বেড়ায় আম্মু।

কুলসুম বেগম কড়া চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ এটা কেমন বেয়াদবি অভ্র.? দিন দিন তুমি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছ!’
‘ আমি ভালো ছিলাম কবে আম্মু.?’
‘ অভ্র তুমি সবার সাথে বেয়াদবি করে ভেবো না আমি তোমাকে প্রতি বার ক্ষমা করে দিব। নিরু আম্মুর সাথে বেয়াদবি করলে আমি তোমার…. ‘
‘ থামলে কেন বলো.’
কুলসুম বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ রুমে যাও’
অভ্র রেগে রুমে চলে গেলো।
কুলসুম বেগম নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বললো,’ কিছু মনে করো না নিরু অভ্র আগে এমন ছিল না দিন দিন ওর যে কি হচ্ছে! ‘
‘ না আন্টি কিছু মনে করিনি আগামীকাল সকালে বের হতে হবে ঘুমাবো এখন’
‘ আচ্ছা যাও’

নিরুপমা চলে যেতেই আসিফ মা’য়ের কাছে এসে অভিমানী সুরে বললো, ‘ আম্মু তুমি ওকে আটকাবে না.?’
কুলসুম বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বললো,’ তুমি অফিসে সময় দাও আসিফ, ছেলে মানুষ হতে হয় স্ট্রং পার্সোনালিটির অথচ তুমি দিন দিন এমন কেন হচ্ছ.?মেয়েদের মতো স্বভাব ছেড়ে দাও। নিরুপমা কয়েকদিন নিজের মতো থাকুক, জানোই ত মেয়েটার মনের অবস্থা কেমন! এখন ওকে আমি কোনো টেনশনে ফেলতে চাই না’
‘ আম্মু তুমি এভাবে বলতে পারলে.? আমি ওর উপর দূর্বল বলেই এমন করছি, আমি ওকে হারাতে চসই না। বিয়ের পর যেখানে ইচ্ছে ঘুরে বেড়াক আমার ত কোনো বাঁধা নেই, কখন না জানি কে এসে নিয়ে যায়। আম্মু আমার নিরুপমা কে চাই’

কুলসুম বেগম টেনশনে পরে গেলেন কিভাবে নিরুপমা কে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন! মেয়েটার মুখের উপর নিষেধ করে দেওয়ার স্বভাব। এমন প্রস্তাব শুনলে যদি আর কখনো এই বাড়িতেই না আসে! আসিফের বউ হয়ে এই বাড়িতে পা রাখার পর কম ত অত্যাচার সহ্য করেনি কুলসুম বেগমের। কত্তো এই হাত দিয়ে মে’রে ফেলে রেখেছিল, কতো রক্ত জড়াছে, কতো দোষারোপ করেছে ওকে, কষ্ট সহ্য করেছে শুধু নিজের মায়ের খুনিকে বের করতে।

কুলসুম বেগমের জানতে ইচ্ছে হয় জবা কি শাস্তি দিয়েছে ওদের.? কেমন ভয়ংকর শাস্তি দিয়েছে.??
যে মেয়ে খুনিকে বের করতে এতো কিছু সহ্য করতে পারে, মৃত্যুকে হাসি মুখে বরণ করে নিতে পারে না জানি খুনিকে কেমন মৃত্যু উপহার দিয়েছে!

_______________

আজ এক সপ্তাহ পর আয়ান নিজের বাড়িতে পা রেখেছে। ওর জেনো এই বাড়ির দেয়াল, আসবাবপত্র গুলোকেও লজ্জা লাগে এখন। মনে হয় ওকে দেখে সবকিছু হাসছে, ইশশশ কি ভয়ংকর লজ্জা জনক অনুভূতি। মায়ের অপরাধে সন্তান কে লজ্জিত হতে হয়৷, মুখ লুকিয়ে বেড়াতে হয়। কি জবাব দিবে সে তার শখের নারীকে! যতই হোক সে জীবনের প্রথম কোনো নারীর প্রেমে পড়ে ছিল, সেটা রূপের হোক কিংবা মনের। সে প্রেমে ত পড়েছিল! অনুভূতি প্রকাশ করে ছিল! ভালোবাসা টা কি এক তরফা ছিল.? কই না ত! জবাও ত বলে ছিল ‘ আমি আছি আপনি না হারিয়ে যান!’ সময়ের সাথে আয়ান হারিয়ে গেছে।

আয়ানের মনে প্রশ্ন জাগে, জবা কি আগে থেকেই জানত সবকিছু.? সেই জন্যই কি আয়ানের সাথে বিয়ের নাটক, ভালোবাসার নাটক করে ছিল.? কতো কত প্রশ্ন! এতো প্রশ্নের উত্তর কোথায়.?

আয়ান ধীর পায়ে উপরে উঠে গেলো। বাড়ির সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে একটা রুমের সামনে আসতেই পা জোরা থেমে যায় আয়ানের।

ভেতর থেকে শোনা যায় বেলীর কান্নার শব্দ। বেলী কাঁদছে কিন্তু কেন.? আয়ান আস্তে করে রুমে ঢুকে। বেলী নামাজের বিছানায় বসে আছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেছে স্পষ্ট নয় কথা গুলো তবুও আয়ান বুঝতে বাকি নেই বেলী কি বলছে।

আয়ান যেভাবে ভেতরে এসে ছিল ঠিক সেভাবে রুম থেকে চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো। বুকের ভেতর হাহাকার! কোথাও কেউ ভালো নেই। ভালোবেসে সবাই মরেছে….

আয়ান বেড়িয়ে যেতেই বেলীও ধীর পায়ে রুম থেকে বের হয়ে এসে অভ্রের রুমের দরজায় খটখট শব্দ করলো।

অভ্র হয়তো জেগেই ছিল। দরজা খুলে বেলীকে এতো রাতে এখানে দেখে অবাক হলো।
‘ বেলী তুই!’
বেলী হাল্কা হেঁসে বললো,’ এতো অবাক কেন হচ্ছেন অভ্র ভাই!’
অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো,’ কিছু বলবি.?’
বেলী মলিন হাসি দিয়ে বললো,’ বলার ত ছিল অনেক কথা অথচ সম্পর্ক যে আজ বদলে গেছে! একটা প্রশ্ন করার ছিল’
‘ কি প্রশ্ন আর এতো রাতে কেন.? সকালে করিস এখন যা’
‘ দরজা বন্ধ করবেন না অভ্র ভাই, অনেক চেষ্টা করেছি আপনাকে ঘৃণা করার কিন্তু আমরা ত ভুলে যাই ভালবাসার মানুষ কে কি ঘৃণা করা যায়.? ‘
অভ্র নিশ্চুপ
বেলী আবার বলে উঠলো, ‘ আমাকে কেন বিয়ে করলেন না অভ্র ভাই.? আমার মধ্যে এমন কিসের কমতি ছিল.? ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখালেন, আগে ত ভালো ছিলাম এক তরফা ভালোবাসা ছিল, বিয়ের কথা উঠায় নিষেধ কেন করলেন না.? অন্তত সারাজীবন আপনাকে না পাই একা কাটিয়ে দিতাম। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখালেন ক্ষনিকের জন্য তারপর নিজ হাতে সেই ঘর স্বপ্ন ভেঙে দিলেন।

আপনি কি জানেন মানুষ মৃত্যুর আগে বহুবার মা-রা যায়.? আমিও তাদের দলের হয়ে গেছি, এখন যে মৃত্যু ছাড়া সবকিছু মিথ্যা মনে হয়।

অভ্র গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে বেলীর জলে ভরে উঠা টলমলে চোখের দিকে, ঠোঁটে কি বিষাদের হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।

“আপনিই ত ছিলে আমার হৃদয়ের রাজকুমার রক্ত জড়াতে একটুও কষ্ট হয়নি আপনার!.? ”

অভ্র কে এভাবে চুপ থাকতে দেখে বেলী খিলখিল করে হেঁসে উঠলো, চোখে পানি মুখের বিষাক্ত যন্ত্রণার হাসি

” আমি আপনারে জড়াইয়া ধরতে গিয়া সারাজীবনের জন্য দুঃখে জড়াইয়া ধরলাম এবার আপনি খুশি ত!.?’

বেলী উত্তরের আশা করে না। ওর ত জানা আছে অভ্রর কাছে কোনো উত্তর নেই।

বেলী ধীর পায়ে নিজের রুমে চলে যায় শব্দ করে লাগিয়ে দেয় দরজা।

_____________

অভ্রের ব্যালকনি থেকে এতো রাতে গিটারের টুংটাং শব্দে ঘুম ভেঙে যায় জবার। রাগে মেজাজ বিগড়ে যায়। এতো রাতে এই ছেলের পিনিক উঠেছে নাকি! শান্তিতে শেষ ঘুমটাও এই বাড়িতে ঘুমাতে দিবে না..

অভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে গিটারে সুর তুলে বিষাদের। ফিসফিস করে বলে ‘ আমাকে ক্ষমা করিস না বেলী ফুল! আমাদের পথ যে একই আমিও ত তাকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে দুঃখকে জড়িয়ে ধরেছি, আমার এই বিষাক্ত জীবনে তোর মতো পবিত্র ফুলকে কিভাবে পুড়াতে জড়িয়ে নিতাম বল.? আমিও ত মরেছি কাউকে ভালোবেসে,আমাকে তুই কখনো ক্ষমা করিস না!

” আমার আগুনের ছাই জমে জমে..
কতো পাহাড় হয়ে যায়!
আমার ফাগুনেরা দিন গোণে গোণে
আর উধাও হয়ে যায়..
যত পথের বাঁধা, সবি ত কালো সাদা..
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙিন
চেনানা মেরি ডাকে
আমি কি পাব তাকে
কবে যে আসবে সেই রোদেলা দিন
তোরই ত কাছে চায়! পুড়নো কথা টায়
শুনতে আবার করে.. ও…
এমনো যদি হয় মনেরা নদী হয়
ভাসাবো অনেক দূরে

অভ্রের গানের গলা অনেক ভালো। অন্ধকারে সামনের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা ছায়া সরে গেছে।
অভ্রর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো। এভাবে আর কতো লুকোচুরি!

বেলী গভীর ঘুমে অনুভব করলো ওকে কেউ জড়িয়ে ধরে আছে। কারো শরীর কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ নাকে এসে ঠেকছে, পুরুষলী হাতের বাঁধনের মাঝে আটকা পরে আছে বুঝতে পেরেই
হঠাৎ ঘুম ছুটে গেলো, চোখ মেলে পাশে তাকাতেই মনে হলো চোখ গুলো এখনো বের হয়ে চলে আসবে! এটা স্বপ্ন নয় ত.? কান্না করে আলতোফালতো ভেবে ঘুমিয়ে ছিল যার জন্য এমন ভয়ংকর স্বপ্ন দেখছে!
নিজের হাতে নিজেই চিমটি মেরে ‘ আউ’ বলে মৃদু চিৎকার করে উঠতেই চোখ বন্ধ করা অবস্থায় আয়ান বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ এতো মোচড়ামুচড়ি কেন করিস.? এমনিতেই ত জামাই সাথে ঘুমায় না বলে কান্না কাটি করে বিচার দিতে পারিস একটু ত লজ্জা কর বেলী।’
বেলী হতভম্ব হয়ে গেলো, সে কার কাছে বিচার দিয়েছে.?
বেলীর গলা এমনিতেই শুকিয়ে কাট হয়ে গেছে, এই প্রথম কোনো পুরুষ ওকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে, এমন ভারি ভারি শ্বাস এসে ওর গলায় পরছে। বেচারি কিছু বলতেও পারছে না সবকিছু গলায় আটকে যাচ্ছে।

আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে আয়ান রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ দেখ আমার অনেকদিন ঘুম হয় না, শান্তিতে ঘুমাতে দে!’
‘ দূরে সরে ঘুমাও ‘
আয়ান ঘুম ঘুম চোখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
‘ আমি কাকে বিচার দিয়েছি.?’
আয়ান চোখ বন্ধ করে বললো,’ অভ্র কে’
বেলীর মুখ হ্যা হয়ে গেলো। অভ্রের উপর রাগ আরও বেড়ে গেলো। কিভাবে পারলো এমন মিথ্যা কথা বলতে.?

‘ সব মিথ্যা কথা, আমি কেন জামাইর জন্য কাঁদবো আজব! আমি তোমাকে জামাই হিসেবে মানলে ত!’
‘ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাক বেলী আমি ঘুমাবো! আর কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তোর চোখ দেখেই বুঝা যায়! ‘
ফেঁসেছে বেলী, কান্না করলো কার জন্য! কান্না করলো একজনের জন্য নাম হলো আরেকজনের আহা ভাগ্য..

আয়ানও জানে অভ্রের বলা সবগুলো কথা মিথ্যা, বেলী এখনো আয়ান কে স্বামী হিসেবে মানেনা আর না কখনো মানবে। আয়ান বাড়িতে আসে কিনা সেটাই বেলী জানেনা আর ওর জন্য কাঁদবে! তবে ওর এখন একজন মানুষের সঙ্গ প্রয়োজন অনেকদিন হয় ঘুম হয়না।

বেলী না চাইতেও আয়ানের শক্ত হাতের বাঁধনে আটকা পরে চুপচাপ শুয়ে থাকে।

চলবে,
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।