#শেষ_থেকে_শুরু
#পর্ব_৩৫ ( সারপ্রাইজ পর্ব)
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
কি অধঃপতন হলো ডাক্তার সাহেবের! সকাল সকাল রান্না ঘরে থালাবাসন মাজছে!!
অভ্র পেছন না ফিরেই বললো,’ ত কি করবো.? বাসায় লতিকা নেই এই সকাল সকাল কোথায় গিয়েছে কে জানে!’
আয়ান সোফায় বসে ট্রি টেবিলের উপর পা রেখে মোবাইল চোখের সামনে ধরে বললো,’ ভিডিও করে রাখি কোনো সময় কাজে লাগবে।’
অভ্র রেগে একটা চামচ আয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারলো।
‘ আরেএ ইয়ার মেয়েদের মতো ছুড়াছুঁড়ি কেন শুরু করেছিস.? আমি তোর প্রেমিক নই ঝাপটে ধরে রাগ ঠান্ডা করতে যাব!’
অভ্র কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ মজা নিচ্ছিস নে খুব জলদি তোর কপালেও এমন কিছু অপেক্ষা করছে। ভিডিও করলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি। ‘
‘ সরি ব্রো আমার পক্ষে এইসব করা সম্ভব নয় আর এতো বড় সাহস কারো হয়নি যে আয়ান চৌধুরী কে রান্না ঘরে প্রবেশ করাতে পারবে থালাবাসন ত দূরের থাক!’
অভ্র বিরবির করে বললো,’ বলো বলো এক সময় আমিও বলতাম এখন দেখো বিয়ের তিনদিন ও পার হয়নি বউ হাত ধরতেও দেয়নি কিন্তু থালাবাসন ঠিকই হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।’
আয়ান রান্না ঘরে উঁকি দিয়ে বললো,’ কিছু বললি.?’
অভ্র উত্তর না দিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখে চা বসালো। নিরুপমার চা পছন্দ। আজ অভ্র নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবে এর পুরস্কার হিসেবে নিরুপমা কে বলবে, ‘ বউ আমি কি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে পারি!’ কি এক অবস্থা বিয়ের পর বউয়ের সামনে সিংহ ও বিড়াল হয়ে যায়।
আয়ান মোবাইলে গেইম খেলছে অভ্র কে ডেকে বললো,’ আমার জন্য এক কাপ নিয়ে আয় ত ‘
অভ্র রাগে পেছন ফিরে উপরের দিকে তাকিয়ে ভেতরের সব রাগ শ্বাসের সাথে বের করে বললো,’ শ্লা তোর কপাল হলো…
অভ্র কথা শেষ করার আগেই আয়ান বলে উঠলো, ‘ জানি সোনায় বাঁধানো কপাল! বউ ও নাই কপালে রান্না ঘরও নাই।’
আয়ানের কথা শেষ হতে হতেই বেলী হেলেদুলে এসে রান্না ঘরে ঢুকলো।
আয়ান গেইম রেখে ভ্রু কুঁচকে রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে আছে।
বেলী এসে অভ্র কে রান্না ঘরে দেখে অবাক হয়ে বললো,’ ভাই আপনি এখানে কি করছেন.? ‘
অভ্র বেলীর দিকে তাকিয়ে কাপে চা ঢেলে বললো,’ তোর ভাবির জন্য! ‘
বেলীর চোখ গেলো সামনে লবনের কৌটার দিকে।
‘ সব কিছু ঠিক আছে ত ভাই.? একবার খেয়ে দেখেছেন.?’
অভ্র চায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,’ একদম একশো তে একশো ‘
‘ গুড’
অভ্র রান্না ঘর থেকে ড্রয়িং রুমে চোখ যেতেই দেখলো আয়ান উঁকি ঝুঁকি মারছে। অভ্রর মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেলো।
‘ বেলী তুই কি আজ ফ্রী আছিস.?’
‘ জ্বি ভাইয়া’
আয়ান কান পেতে রেখেছে শুনার জন্য।
অভ্র আয়ান কে শুনিয়ে বলে উঠলো, ‘ আজ অনিক বলে ছিল ও একটু মার্কেটে যাবে তোকে দরকার ছিল, তোর ভাবি ত জানিস কাজে চলে যাবে ‘
‘ ঠিক আছে ভাই ‘
‘ অনিক তোকে কল দিবে আমি নাম্বার দিয়ে দিব!’
আয়ান রান্না ঘরের দরজা থেকে বলে উঠলো, ‘ ও কেন যাবে.? আর তুই নাম্বার দিবি মানে.? ‘
অভ্র আয়ান কে কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। বিজয়ী হাসি দিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো। এতোক্ষণ ত বলছিল বউ নাই রান্না ঘরও নাই এখন মিনিট না যেতেই রান্না ঘরের দরজায়!
বেলী আয়ান কে দেখেও না দেখার মতো নিজের জন্য নুডলস বসালো।
আয়ান বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ আজ তুই রুম থেকে বের হবি না’
বেলী বিরক্ত হয়ে বললো,’ কেন?? ‘
‘ আমি বলেছি তাই’
‘ ওহ্ এখন আমার তোমার কথা শুনতে হবে.?’
‘ অবশ্যই ‘
‘ শুনবো না, আমার যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাব বিরক্ত না করে যাও ত’
আয়ান রেগে বেলীর হাত চেপে ধরে বললো,’ আমি তোকে নিষেধ করেছি বেলী মুখেমুখে তর্ক করবি না!’
বেলী ঝাড়া দিয়ে আয়ানের হাত ছাড়িয়ে বললো,’ তোমার আসলে সমস্যাটা কোথায়.? আমার উপর অত্যাচার করছো তুমি! ‘
আয়ান অবাক হয়ে বললো,’ কি! আমি তোর উপর অত্যাচার কখন করলাম.? ‘
‘ এই যে যখন তখন হাত ধরে টানাটানি করো, রুমে নিয়ে দরজা বন্ধ করে সামনে মুর্তি বানিয়ে বসিয়ে রাখো, কোথাও যেতে দাও না’
‘ এই গুলোকে অত্যাচার বলে.?’
‘ তা নয়তো কি.?’
আয়ানের ইচ্ছে করলো কপালটা ঘষা দিতে কিন্তু কার সাথে.? অভ্রর সাথে.? ওই বেচারার অবস্থা ত আরও খারাপ।
আয়ান নিজেকে শান্ত করে মায়া মায়া দৃষ্টিতে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ বেলী এটাকে অত্যাচার বলে না’
‘ তাহলে কি বলে.?’
আয়ান চোখ সরিয়ে বললো,’ জানিনা আমি’
‘ নিজেই জানো না! আমাকে বিরক্ত না করে রান্না ঘর থেকে যাও ত ‘
আয়ান বিরবির করে বললো,’ বেলী তুই ত ছোট বাচ্চা না, তুই কি কিছু বুঝিস না.?’
বেলী চুলগুলো হাত খোঁপা করে পেছন ফিরে বললো,’ কি বুঝবো.? আচ্ছা ঠিক আছে এইগুলোকে অত্যাচার বলে না এখন যা বলে গুগল থেকে সার্চ করে জেনে নিব!’
আয়ান বেলীর মুখের দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ তুই আর তোর গুগল!’
বেলী নুডলস ছেঁকে রাখলো। পেঁয়াজ কাটতে নিলে আয়ান বললো,’ সাবধানে! ‘
আয়ান বলার সাথে সাথে ছুরি হাতের কোনায় লেগে একটু কেটে গেছে।
বেলী হাতে রক্ত দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। আয়ান শক্ত করে বেলীর হাতটা চেপে ধরে বললো,’ বেশি ব্যাথা করছে.?’
বেলী চোখ বন্ধ করেই দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ না মজা লাগছে! ‘
‘ কি আজব! আমি আবার কি করলাম.? নিজে হাত কেটে আমার সাথে কেন রাগ দেখাচ্ছিস.? এই জন্যই মানুষ বলে মেয়েদের মন গিরগিটির মতো সেকেন্ডে সেকেন্ডে রং বদলায়!’
‘ তুমি রান্না ঘরে এসে আমার সাথে ঝগড়া না করলে এমনটা হতো না’
‘ এখন আমার দোষ!.? ‘
‘ না আমার’
‘ আচ্ছা হাতে চেপে ধরে এখানে বস আমি পেঁয়াজ কেটে নুডলস রান্না করে দিচ্ছি। ‘
____________
অভ্র চা এনে নিরুপমার সামনে রেখে বললো,’ বউ তোমার জন্য! ‘
নিরুপমা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। বাড়িতে আজ মহিলারা কেউ নেই সবাই গ্রামে কারো বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছে।
নিরুপমা চুলগুলো বিনুনি করে শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিজেকে একবার ভালো করে আয়নায় দেখে নিল।
অভ্র মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে নিজের বউয়ের দিকে।
নিরুপমা চা হাতে নিতে নিলে অভ্র চা সরিয়ে নিয়ে বললো,’ উঁহু আজ আমাকে দিয়ে থালাবাসন মাজিয়েছো সাথে চা এর পুরস্কার হিসেবে আমি কিছু চাই’
নিরুপমা বিছানায় বসে অভ্র দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমি শুধু তোমাকে থালাবাসন মাজতে বলেছি। সবকিছু স্বামী স্ত্রী মিলেমিশে করতে হয়। আমি নাস্তা বানিয়েছি আর তুমি থালাবাসন মেজেছো সমান সমান। আর চা এর জন্য ধন্যবাদ।
অভ্র নিরুপমার পাশে বসে বললো,’ আমার অন্য কিছু চাই বউ’
‘ কথায় কথায় বউ বউ কেন করো.? আমার একটা সুন্দর নাম আছে। ‘
অভ্র মন খারাপ করে বললো,’ তোমার ভালো লাগে না.?’
” বউ ডাকটার গভীরতা জানো.? শোনার পর অনুভূতি কেমন হয় জানো.? আর যদি হয় সখের পুরুষের মুখে “বউ” এটা যেন একে অপরের প্রতি সেই সম্পর্কের সূচনা বা দৃঢ়তার অনুভূতি প্রকাশ করে, যেখানে দুটি হৃদয় একসাথে বেঁধে যায়।
আর যখন সে স্বামী হয়, তখন “বউ” ডাকটার মধ্যে শুধু ভালোবাসা নয়, দায়িত্ব, আস্থা এবং গভীর বিশ্বাসও চলে আসে। এটা এমন এক অনুভূতি, যেখানে ভালোবাসা কেবল শব্দ নয়, বাস্তবতার রূপ নেয়। সে সময়, “বউ” ডাকটার মধ্যে সঙ্গীর প্রতি একটি অগাধ শ্রদ্ধা ও পরিপূর্ণ যত্ন প্রকাশিত হয়। স্বামী হিসেবে, সে তার সঙ্গীকে শুধু ভালোবাসে না, বরং তার সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে পাশে থাকতে চায়, জীবনের সমস্ত পথচলায় একে অপরের জন্য হয়ে ওঠে অবিচ্ছেদ্য।
এটা সত্যিই এক অদ্ভুত সুন্দর এবং গভীর অনুভূতি, যা কেবল সম্পর্কের ভিতরে নয়, জীবনের একান্ত অংশ হয়ে ওঠে বুঝলে..?
অভ্র মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে ছিল নিরুপমার মুখের দিকে।
‘ এতো কিছু বুঝো! অথচ আমাকে কেন বুঝ না.?’
নিরুপমা চোখ সরিয়ে ব্যাগ হাতে নিতে নিলে অভ্র বলে উঠলো চা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
নিরুপমা হাত বাড়ালো চায়ের দিকে। অভ্র আবার বলে উঠলো, ‘ আমার একটা ইচ্ছে ছিল’
‘ হুম শুনছি বলো’
‘ তোমাকে জড়িয়ে ধরতে চাই!’
সোজাসাপটা অভ্র বলে উঠলো।
নিরুপমা চায়ের কাপ থেকে চোখ সরিয়ে অভ্রর দিকে তাকালো। অভ্র নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে নিরুপমার মুখের দিকে।
নিরুপমা লজ্জায় এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে। নিরুপমার ফর্সা গাল গুলো কেমন লাল টকটকে হয়ে উঠেছে।
অভ্র ছোট ছোট ছোট করে নিরুপমার গালের দিকে একটা আঙ্গুল দিয়ে হাল্কা টাচ করে বললো,’ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছ বউ.?’
নিরুপমা এইবার সত্যি লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো।
অভ্র উচ্চ সুরে হেঁসে নিরুপমা কে জড়িয়ে ধরলো। নিরুপমা নিজেই হাত বাড়িয়ে দিলো।
অভ্র বলে উঠলো, ‘ শান্তি’
নিরুপমা চুপচাপ কিছু সময় অভ্রর বুকে মাথা রেখে বললো,’ দেরি হচ্ছে যেতে হবে ছাড়ো’
অভ্র নিরুপমা কে ছেড়ে বলে উঠলো, ‘ আজকের মতো ছেড়ে দিলাম বউ’
নিরুপমা চা হাতে নিয়ে বললো,’ এক সপ্তাহ আর আমার আশেপাশে আসতে পারবে না!’
অভ্র ভাবুক কন্ঠে বললো,’ তাহলে কি এক সপ্তাহ পরে আসতে পারবো.? পারমিশন দিচ্ছ.?’
লুচু পুরুষ সারাক্ষণ শুধু মাথায় চিপকে থাকার চিন্তা হসপিটালে যাওয়ার সময় চলে যাচ্ছে সেই দিকে খেয়াল নেই।
অভ্র মনে পরার মতো দ্রুত রেডি হতে গেলো।
নিরুপমা চা মুখে দিয়ে চোখ মুখ খিঁচে ফেললো। এতো লবন মনে হচ্ছে বিষ মুখে দিয়েছে।
অভ্র শার্টের হাতা গুটিয়ে চুল গুলো আয়নার সামনে ঠিক করছে।
নিরুপমা গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমার জন্য ভালোবেসে বিষ নিয়ে আসলে.?’
অভ্র অবাক হয়ে পেছন ফিরে বললো,’ কি বলছো বউ.? বিষ আর আমি তোমার জন্য!.?
নিরুপমা থমথমে মুখে ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে চা অভ্রর সামনে শব্দ করে রেখে বেরিয়ে গেলো।
অভ্র পেছন থেকে চিৎকার করে বলছে, ‘ আমার জন্য ত দাঁড়াও। এক সাথে যাব।’
অভ্র চায়ের কাপ হাতে নিয়ে একটু মুখে দিয়েই চোখ মুখ খিঁচে ফেললো।
_____________
অভ্র ড্রয়িং রুম দিয়ে বাহিরে যাওয়ার জন্য বের হতে নিলেই রান্না ঘরে টুংটাং শব্দ শুনে একবার ভাবল উঁকি দিবে আরেকবার ভাবল এটা কেমন দেখায়.? তাও কৌতূহল ধরে না রাখতে পেরে উঁকি দিয়ে আয়ান কে নুডলস বানাতে দেখে থমথমে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমাকে দিয়ে কখনো রান্না ঘরেই আনাতে পারবে না বলা ছেলেটাও নুডলস রান্না করছে!বাহ্ বাহ্ ভিডিও করে রাখি অন্য সময় পল্টি নিতে আসলে কাজে লাগবে’
আয়ান খুন্তি হাতে নিয়ে অভ্র কে দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ চুপচাপ মুখে ট্যাপ লাগিয়ে বের হয়ে যা’
‘ তুই কি আমার বউ নাকি যে খুন্তি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছিস.?’
বেলী সাইডে থেকে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো।
আয়ান রাগী চোখে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ তোকে বলেছি হাসতে.?’
বেলী বোকার মতো গাল ফুলিয়ে আবার বসে পরলো।
আয়ান অভ্রকে দরজার দিকে রাস্তা দেখিয়ে বললো,’ ওই দিকে দরজা যা।’
অভ্র গম্ভীর মুখে ফেছন ফিরেই হেঁসে ফেললো।
অভ্র চলে যেতেই আয়ান বেলীর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আজকের পর তোকে কোনো ছেলের সামনে হাসতে দেখলে তোর দাঁত গুলো আমি একটা একটা করে খুলে ফেলবো। তারপর তোকে হাসলে ঠিক কেমন লাগবে.? ‘
বেলী ঠোঁট উল্টে রাগী সুরে বলে উঠলো, ‘ তুমি একটা সাইকো! আমার এখন হাসতেও মানা।’
বেলীর রাগ দেখে আয়ান হাত বাড়িয়ে ওর কপালে আশা অবাধ্য চুলগুলো কানের পেছন গুঁজে দিয়ে বললো,’ হাসতে মানা কে বলেছে সারাক্ষণ আমার সামনে হাসবি’
বেলী মনে মনে বলে উঠলো, ‘ এই ছেলের কি মাথায় সমস্যা হয়েছে.? ‘
____________
অনেক কষ্টে পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে হাঁপিয়ে শুয়ে পরলো একটা মেয়ে তার পাশেই বসে আছে একটা ছেলে।
ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে একটুও ক্লান্ত নয়।
মেয়েটা চোখ বন্ধ করে বললো,’ তুমিও শুয়ে পরো পাশে ‘
ছেলেটা হাল্কা হেঁসে বললো,’ আমি ঠিক আছি। ‘
কিছু সময় যেতেই মেয়েটা বলে উঠলো, ‘ আসিফ তোমার কাছে ওই মেয়ের ছবি আছে.?’
আসিফ মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।
মেয়েটা লাফ দিয়ে বসে বললো,’ যার কথা দেখা হওয়ার পর থেকে শুনছি তাকে কি দেখাবে না.?’
আসিফ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে দূর থেকে দূরে সবুজ গাছ পালা দেখছে।
মেয়েটা বুঝলো আসিফ দেখাতে চাচ্ছে না এবং কি নামটাও বলছে না। এতো সুন্দরী রূপবতী, গুণ বতীর কথা গল্পে পাওয়া যায় বাস্তবে না। অথচ আসিফ কে দেখে মনে হচ্ছে না সে মিথ্যা বলছে।
মেয়েটা আবার বললো,’ তার সাথে প্রথম দেখা কোথায় হয়ে ছিল তোমার.? ‘
আসিফ এইবার সরাসরি মেয়েটার মুখের দিকে তাকালো। শ্যামবর্ন মুখটা ক্লান্তিতে মিইয়ে গেছে তবুও কতো আগ্রহ নিরুপমার বিষয় জানার। নিরুপমা এমনি একজন নারী যাকে সবাই জানতে চায় একবার নয় বার বার।
এই শ্যামবর্ন নারীর সাথে আসিফের দেখা হয়েছে পাহাড়ের নিচে। মেয়েটার সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝা গেলো সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। পাহাড় চড়া তার নেশা বলা যায়। আর আসিফ মন ভালো করতে এসেছে। আগে অভ্র, আয়ান, বেলী এক সাথে আসতো আজ সে একা এসেছে।
ওর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়ে ছিল বাসে।
‘ কি বাসে.? ওয়াও ইন্টারেস্টিং তারপর…?’
আসিফ চোখ ছোট ছোট করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ এতো আগ্রহ দেখানোর কিছু নেই প্রথম দেখায় সে আমাকে ভাইয়া বলে ছিল’
মেয়েটা দুই ঠোঁট ফাক করে হাত দিয়ে অবাক হওয়ার মতো বললো,’ ওয়াও ভাইয়ার পূর্ন রুপ ছাইয়্যা জানো না.?’
আসিফ মেয়েটার কথা শুনে হেঁসে ফেললো।
‘ সে আমাকে কিছু গুন্ডাদের সামনে বলেছিল আমি তার রক্তের আপন ভাই। কসম কেটে বলে ছিল ওর বাপের ছেলে আমি।’
মেয়েটা এই কথা শুনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। হাসি আটকে বললো,’ আবার গুন্ডা আসলো কোথায় থেকে.? ‘
‘ আমি যখন বাসে বসে ছিলাম বলা যায় কোম্পানির কাজে একটা জায়গায় যাচ্ছিলাম সিআইডি অফিসে তার মধ্যে বাসে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আমার পাশের সিটে বসে পরলো। মেয়েটার মুখ ক্যাপ আর মাস্ক দিয়ে ডাকা ছিল পরনে শার্ট প্যান্ট।
কিছু সময় যেতেই একদল গুন্ডা এসে বাস আঁটকে মেয়েটার সামনে দাঁড়ালো ।
ভয়ে মেয়েটা আমার হাত খামচে ধরে গুন্ডাদের বলে উঠলো, ‘ দেখো তোমাদের যা ক্ষতি হয়েছে সব আমার ভাই দিয়ে দিবে।’
গুন্ডার লিডার বললো,’ এমনিতেই মাইয়া মানুষ রাস্তা খাটে মারামারি করোস তোর ভই কই পামু.?’
মেয়েটা আমাকে দেখিয়ে বললো,’ এই দেখেন আমার ভাই, আমার বাপের একমাত্র ছেলে। আমার বাপের অনেক সম্পত্তি সব ত ভাইয়ের ভাই দিয়ে দিবে।’
আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। কি বলতে হবে, কি রিয়াকশন দিব ভুলে গেছি ছিলাম।
লোকগুলো আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বুঝলাম মেয়েদের মামলা। এখানে কিছু বললে নিজেই ঝামেলায় পরবো তাই আমার অফিসের কার্ড দিয়ে ওদের বিদায় করে ছিলাম। ‘
গুন্ডা গুলো যেতেই মেয়েটা ক্যাপ সরিয়ে আমাকে বললো,’ জানালার সাইডে আমি বসবো। আমি চুপচাপ উঠে সিট দিয়ে দিলাম।
মেয়েটা একটু পর মাস্ক খুলে আমাকে বললো,’ ধন্যবাদ ভাইয়া আমি নিরুপমা নিরু। আপনার টাকা দিয়ে দিব আপনার নাম্বারটা দেন।’
আমি প্রথম দেখায় থমকে গিয়ে ছিলাম। ‘
আসিফ চুপ হয়ে পাহাড় থেকে নিচে তাকালো।
মেয়েটা এসে আসিফের পাশে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ এভাবে তাহলে প্রথম পরিচয়! ‘
আসিফ হাসলো। আজকাল অকারণেই তার হাসি পায়।
” তারপর সারারাস্তা টুকটাক কথা হয়ে ছিল। আমি আর দ্বিতীয় বার নিরুপমার দিকে তাকাইনি। বুকের বা পাশে কেমন ধুকপুক শুরু হয়ে গিয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল হার্ট বুঝি হাতে চলে আসবে।”
সিআইডি অফিসে গিয়ে ছিলাম কোম্পানির বিষয় কথা বলতে। বেশ কয়েকদিন ধরে কোম্পানিতে লোক উধাও হয়ে যাচ্ছে।
নিয়ে যাওয়া হলো নিরুপমা নিরুর ক্যাবিনে দ্বিতীয় বার নিরুপমা কে দেখে আরও অবাক হয়ে ছিলাম নিরুপমা ও অবাক হয়ে ছিল। ওর সাহস, আচরণ সবকিছু আমাকে মুগ্ধ করলো। তবে আমি ওর দিকে বেশি তাকাতাম না। সূর্যের দিকে তাকালে চোখ ঝলসে যায়।
ওর সাথে আমার সুন্দর একটা বন্ধুত্ব হয়। প্রথম সে যখন আমার পরিবার আর কোম্পানি সম্পর্কে জানে তখন ওর আগ্রহ বাড়ে। আমার সাথে নিজ থেকে বন্ধুত্ব করলো তারপর একদিন শর্তদিল সে আমার কোম্পানির মানুষ উধাও হওয়ার রহস্য বের করবে তাতে ওকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আমার বাড়িতে রাখতে হবে।
আমি জেনো আশার আলো দেখলাম ভাবলাম ও বুঝি আমাকে পছন্দ করে। তাই ত বউ হয়ে আসতে চাচ্ছে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে নিরুপমা আমার সাথে বন্ধুত্ব করার আমার বাড়িতে আশার কারণ বলে দিল।
আমি প্রথম ভাবলাম তারপর সবকিছু মেনে নিজের পরিবারে নিয়ে আসলাম। সে ত ভুল কিছু করতে চাচ্ছে না নিজের মায়ের খুনিকে খুঁজতে চাচ্ছে। আমি তার সঙ্গ দিলাম।
মেয়েটাকে এক এক করে আসিফ সব বললো। অচেনা একটা মেয়ের কাছে এইসব বলার কোনো মানে নেই তবুও আসিফ বলছে মেয়েটার আগ্রহ দেখে।
আসিফ কথা শেষ করে মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটার চোখে পানি।
একতরফা ভালোবাসা গুলো মারাত্মক! বলতে না পারা ভালোবাসা গুলো ভয়ংকর। ভালোবাসার মানুষ নিজের ভাইয়ের বউ হয়ে যাওয়া। সখের নারী নিজের হতে গিয়েও একটুর জন্য হলো না। এই কষ্ট সহ্য করে ছেলেটা কিভাবে হাসছে.? হাসির পেছনের যন্ত্রণা কেউ দেখে না।
মেয়েটা আসিফের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি ফাইজা তালুকদার। কাল রাতে দেশে ফিরেছি বলা যায় আব্বু আম্মুর চোখ ফাঁকি দিয়ে এসেছি ছোট বোনকে দেখতে। ওর বিয়ে হয়েছে আজ তিন দিন। প্রথম ভাবলাম দেশটা ঘুরে নেই তারপর ওর কাছে যাচ্ছি, পেশায় আমি একজন সাংবাদিক। ‘
আসিফ অবিশ্বাস চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো,’ ফাইজা তালুকদার!..? ‘
মেয়েটা হেঁসে মাথা দুলালো। আসিফ অন্য দিকে ফিরে চোখ মুখ খিঁচে নিজেকে কয়টা বিশ্রী গালি দিল।
নিরুপমার মুখে সে তার পরিবারের সবার নাম শুনেছে এখনো মনে আছে নিরুপমার বড় মামা পরিবার নিয়ে বাহিরের দেশে থাকে যার ছোট মেয়ের নাম ফাইজা তালুকদার আর নিরুপমার বিয়ের আজ তিনদিন তার মানে.? মা’র কাছে মামুর বাড়ির গল্প বলার মতো কাহিনী হয়ে গেলো না..?
চলবে,
( এই পর্বে চেয়েও সবটা ক্লিয়ার করতে পারলাম না আরও একটা পর্ব দিব, কেমন হয়েছে জানাবে সবাই )
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।