শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব-০৯

0
250

#শেষ_বিকেলের_প্রণয়
#হালিমা_চৌধুরী
#পার্ট_০৯

নিধি আর অয়ন মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে, অয়নের ঠোঁটে বাঁকা হাসি। সে নিধির দিকে কিছুটা অসহায় চোখে তাকিয়ে বলল,

“আমি কি কখনো তোমার খারাপ চাই নিধি? ফারিশ তোমার জন্য পারফেক্ট পুরুষ নয়।”

অয়নের কথা শুনে নিধি তার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলল,

“আমার জন্য কে সঠিক আর কে ভুল সেটা আপনাকে বলতে হবে না। পারফেক্ট এর থেকে পারমানেন্ট কেউ দরকার, সে হলো ফারিশ। কেউ একজনও তো ছিল আমার জীবনে পারফেক্ট, কই সে-তো আর আমার জীবনে পারমানেন্টলি থেকে যায় নি।”

নিধির কথা শুনে অয়ন বিড়বিড় করে বলল,

“তুই যখন আমার হলি না, তখন আমি তোকে কিভাবে ফারিশের হতে দিই বল?”

অয়নের কথা বুঝতে না পেরে নিধি তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতে সে আবার বলল,

“ফারিশ তোমাকে ভালোবাসে না নিধি, তার মনে তো অন্য এক নারী রাজত্ব করছে। দেখো না ফারিশ তোমাকে কেমন ধমক দেয়, শুধু শুধু রাগারাগি করে তোমার সাথে। এসব কি আর এমনি এমনি করে কেউ?”

অয়নের কথা শুনে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। তবুও সে নিজেকে সামলিয়ে বলল,

“কে বলেছে উনি আমার সাথে খারাপ বিহেভ করছে? উনার থেকে কেউ আমাকে বেশি ভালোবাসতে পারবে না। আপনি আমাকে এসব ভুয়া তথ্য দিয়ে উনাকে আমার কাছে খারাপ বানাতে পারবেন না। তাই দয়া করে এখান থেকে চলে যান প্লিজ, উনি এখনই চলে আসবে বাড়িতে।”

নিধির কথা শুনে অয়ন এক পা ও নড়লো না, বরং সে আরো শক্তপোক্ত হয়ে দাড়িয়ে তার পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিধির দিকে ধরে বলল,

“আমি যদি তোমাকে ভুলভাল খবরই দিয়ে থাকি, তাহলে এসব ছবি কি মিথ্যে?”

মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে নিধির চোখ ছলছল করে উঠল। মোবাইলের স্কিনে ফারিশ আর একটা সুন্দরী নারী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাস্যজল দৃষ্টিতে তাকানো একটা ছবি। নিধি মোবাইলের স্কিন থেকে চোখ সরিয়ে বলল,

“এসব বন্ধ করুন, আপনার মতো দুমুখো মানুষকে অন্তত আমি বিশ্বাস করবো না, প্রথমে ফারিশ কে আমার নামে বাজে কথা বলেছেন, যখন দেখেছেন ফারিশ আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না তখন এবার আমাকে উনার সম্পর্কে ভুলভাল খবর দিচ্ছেন। দয়া করে আপনি চলে যান এখান থেকে।”

নিধির কথা কানে না নিয়ে অয়ন ফারিশ আর মেয়েটার একনাগাড়ে ছবিগুলো দেখাতে ব্যাস্ত।

“দেখো, একজন আরেকজনকে কেমন ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে, যে ছেলে অন্য একটা মেয়ের সাথে এত ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটিয়েছে, সে কি করে তোমাকে ভালোবাসবে? আসলে আমার মনে হয় ফারিশের চরিত্রে সমস্যা আছে।”

অয়নের কথা শুনে নিধি তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না, সে সজোরে অয়ন কে একটা চ’ড় দিয়ে বলল,

“নেক্সট টাইম আমার সামনে আমার স্বামী কে নিয়ে এসব বাজে কথা বলবেন না। আমার স্বামী কেমন তা আমি বুঝে নিবো, আমার স্বামীর চরিত্রের সার্টিফিকেট আপনাকে দিতে হবে না। আমরা তো আপনাকে মাস শেষে কোনো বেতনই দিই না, শুধু শুধু কেনো আপনি আমাদের পিছনে কামলার মত খাটছেন?”

নিধির কথা শুনে অয়ন রক্তিম চোখে তার দিকে তাকিয়ে নিধির হাত চেপে ধরে বলল,

“তোর যখন এতোই বিশ্বাস তোর বরের উপর তাহলে তোর বর কে জিজ্ঞেস করিস অবন্তী কে, জিজ্ঞেস করিস অবন্তী কি তার বিয়ে করা বউ না? কেনো অবন্তীর সাথে ফারিশের বিয়ের কথা লুকিয়েছে সেটাও জিজ্ঞেস করিস। কেনোই বা তোদের বিয়েতে কোনো লোক কে জানায়নি, এবং কোনো অনুষ্ঠান করেনি। তারপর আসিস আ….”

অয়নের কথা আর শেষ হতে পারল না, তার আগেই অয়ন মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। ফারিশ নিধিকে ধমক দিয়ে বলল,

“রুমে যাও।”

ফারিশের কথা যেনো নিধির কানে পৌঁছায় না, সে তো অয়নের কথা শুনেই থমকে যায়! ফারিশ অয়ন কে ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নিধির হাত চেপে ধরে রুমের দিকে নিয়ে যায়।

“তোমাকে বলেছি না ওই অয়নের থেকে দূরে দূরে থাকবে। তারপরেও কেনো তুমি ওর সাথে কথা বলেছো?”

নিধি পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে আছে ফারিশের সামনে।

“ওর সাথে কথা না বললে কি আর বুঝতে পারতাম যে আপনার একটা সুন্দর অতীত রয়েছে। আর আপনি আমাকে এভাবে ঠকাবেন আমি ভাবতে পারিনি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ নিধির হাত চেপে ধরে শান্ত গলায় বলল,

“আমি তোমাকে ঠকাইনি নিধি। আমি কি করেছি? আমি তো চেষ্টা করছি আমাদের সম্পর্কটা কে মেনে নেওয়ার।”

নিধি ফারিশের কথা শুনে কঠিন গলায় বলল,

“বিয়ে করা বউ কে মেনে না নেওয়ার কি আছে? মেনে নেওয়ার চেষ্টা কি? সারাদিন রাগারাগি, ধমক দেওয়া এসব? আপনার যখন বিয়ে করা বউ কে মেনে নিতে কষ্টই হবে তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো আমাকে?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

“প্রিয় মানুষ গুলো শুধু রাগটাই দেখে, রাগের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসাটা আর দেখে না।”

ফারিশের কথা নিধির কানে পৌঁছায় না।

“অবন্তী কে? উনি কি আপনার বিয়ে করা বউ না?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ হুট করে রেগে যায়। সে তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিধি কে একটা চ’ড় দিতে গিয়ে আবার হাত গুটিয়ে ফেলল।

“যে সব বিষয় জানো না, সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসো না। এর পরিণাম কিন্তু ভালো হবে না।”

“থেমে গেলেন কেনো? মারলেন না কেনো আমাকে? সেই প্রথম থেকেই তো কিছু বলতে গেলে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন। এর পরিণাম কি খারাপ হবে শুনি তো? আজকে অন্তত আমি চুপ করে থাকতে পারবো না। অবন্তী কি হয় আপনার আমাকে বলুন।”

“অবন্তী কে হয় সেটা যেনে কি মহাভারত অসুদ্ধ করে ফেলবে নাকি? এই একমাসে আমি যতটা পেরেছি তোমাকে তোমার মত করে মেনে নিতে, তারপরেও যদি তোমার মনে হয় আমি তোমার হাজবেন্ড হিসেবে যোগ্য নয়, তাহলে তুমি চলে যেতে পারো। আমি তোমাকে আটকাবো না।”

ফারিশের কথা শুনে নিধির চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে, সেদিকে দৃষ্টি নেই ফারিশের। রাগে থরথর করে কাঁপছে ফারিশ।

“ এক মাস হলো আমাদের বিয়ের বয়স, এখনই বলছেন ছেড়ে দেওয়ার কথা? আসলে বলবেনই তো, আমার জন্যই তো আপনার আর অবন্তী নামের মেয়েটার প্রণয়ের পূর্নতা পাচ্ছে না বোধহয়।”

“বেশি হয়ে যাচ্ছে নিধি, বলেছি কিন্তু ওকে নিয়ে কথা না বলতে। যেটা জানো না সেটা নিয়ে কথা বলো না।”

“জানি না তো জানান আমাকে কি হয়েছে! আমি তো জানতে চাই কি হয়েছে? আমার তো অধিকার আছে জানার!”

নিধির কথার জবাব দেয় না ফারিশ। নিধি চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল,

“যে সম্পর্কে একে অপরের প্রতি বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস নেই, আমি অন্তত সেই সম্পর্কে থাকতে চাই না।”

নিধির কথা শুনে রেগে ফারিশ চট করে বলে বসল,

“তো থেকো না, আমি তো থাকতে বলিনি।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি হাসার চেষ্টা করে বলল,

“তবে তাই হোক, কোনোদিন আমি জোর করে কিছু পেতে চাইনি। আর চাইবোও না। ভালো থাকবেন আপনি আপনার মত করে৷ এই কয়েকদিনে আমার জন্য আপনাকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। এখন আর কিছু সহ্য করতে হবে না। চেষ্টা করবো আর কোনোদিন যেনো আপনি আমার দেখা না পান।”

বলেই নিধি তার কাপড়চোপড় ঘুছিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে নিধির যাওয়ার পানে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফারিশ। তার যে কিছুই করার নেই।

চলবে……