শ্রাব‌ণের সে অপেক্ষা পর্ব-১৩

0
215

#শ্রাব‌ণের_সে_অপেক্ষা
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ১৩

আ‌মি তখন বাসায় ছিলাম না। আমার বোন সা‌মিহা ফো‌নে আমা‌কে সবটা ব‌লে‌ছে।
‘জা‌নিস ভাইয়া, আজ বিকা‌লে মা আর সা‌মিয়া ভা‌বির সা‌থে একদম ঠিক ক‌রে‌নি।’
আ‌মি বেশ চি‌ন্তিত হ‌য়ে বললাম,
‘‌কেন? কী ক‌রে‌ছে?’
‘ভা‌বি ‌মে‌বি আজ বেতন পে‌য়ে‌ছি‌লেন। তি‌নি বেশ খু‌শি ছি‌লেন। আমা‌কেও ব‌লে‌ছিল, বেত‌নের একভাগ টাকা মা‌য়ের হ‌া‌তে দি‌বে। তি‌নি তার কথা ম‌তো মা‌য়ের কা‌ছে বেত‌নের তিন ভা‌গের একভাগ টাকা দি‌লেন।’

মা টাকাগুলো হা‌তে বল‌লেন,
‘তু‌মি মাত্র এই কয়টাকা বেতন পাও?’
ভা‌বি বললেন,
‘না, মা। এখা‌নে তিন ভা‌গের এক ভাগ টাকা। এক ভাগ আমার নি‌জের খর‌চের জন্য রে‌খে‌ছি আর একভাগ আমার বাবা মা‌কে পা‌ঠি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি।’
মা বেশ রে‌গে বল‌লেন,
‘তু‌মি এখন এ বা‌ড়ি‌তে থাক‌ছো খা‌চ্ছো তো তোমার বেত‌নের টাকা তোমার বাবা মাকে কেন দিব?’
ভা‌বি বেশ বি‌স্মিত হ‌য়ে বল‌লেন,
‘আমার বাবা মা‌কে আমি আমার আয়ের টাকা দিব না?’
‘‌বি‌য়ের আগে দি‌য়ে‌ছো না? ঐ পর্যন্তই যথেষ্ট এখন কেন দি‌বে? এখন তোমার বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে। বি‌য়ের পর বাবার বা‌ড়ির জন্য এত টান কেন থাক‌বে? বি‌য়ের পর মে‌য়ে‌দের সব টান থাক‌বে স্বামী সংসা‌রের প্র‌তি।’

ভা‌বি মাথা নিচু ক‌রে ফেলে‌ছিল। হয়‌তো এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে সে কখ‌নো প‌ড়ে‌নি, তাই জা‌নে না, কীভা‌বে হ্যা‌ন্ডেল কর‌তে হয়? তখন আমি বলে‌ছিলাম,
‘এগুলা কী বল‌ছো মা? বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে ব‌লে কী বাবা মা‌য়ের প্র‌তি সব দা‌য়িত্ব শেষ?’
মা বেশ রাগ ক‌রেই বল‌লেন,
‘হ্যাঁ, শেষ। বি‌য়ের পর বাবা মা‌য়ের প্রতি আবার কি‌সের দা‌য়িত্ব? আর ওর বাবা মা-ও-বা কেমন? মে‌য়ে টাকা দি‌লো ওমনি নি‌য়ে নি‌লো? একবার জি‌জ্ঞেস করল না ওর শ্বশুর বা‌ড়ির লোক খু‌শি কী না? তা‌দের অনুম‌তি নি‌য়ে‌ছে কি না?’

ভা‌বি তখন কেঁ‌দে ফে‌লে‌ছিল। আমি বেশ রাগ ক‌রেই বলে‌ছি,
‘মা, খবরদার মু‌র্খের ম‌তো কথা বল‌বে বা। ভাবি কেন ‌তার বাবা মা‌কে তার উপর্জ‌নের টাকা দেওয়ার জন্য ‌তোমাদের অনুম‌তি নিবে? অনু‌মতি কেবল ভাইয়ার নি‌বে। সে নিশ্চয়ই অনুম‌তি দিয়ে‌ছে। না দি‌লে তো ভা‌বি দিত না। তাছাড়া স্বামীর অনুম‌তি নেওয়া যেমন উচিত তেমনি বাবা মা‌য়ের সেবা করা সন্তা‌নের উপর ফরজ। সে সন্তান ছে‌লে হোক বা মে‌য়ে। তু‌মিই তো আমা‌কে ব‌লো সব বিষয়ে শ্বশুর শাশু‌ড়ি‌কে বলার কী দরকার? তাহ‌লে যে জি‌নিস আমার ক্ষে‌ত্রে ঠিক ভা‌বির ক্ষে‌ত্রে ভুল কীভা‌বে?’

আমার কথা শু‌নে সা‌মিয়া‌ বলল,
‘‌আপু, তোর বিষয় আর ভা‌বির বিষয় কি এক? ত‌ুই কী জব ক‌রিস? ভা‌বি ক‌রে। তো বি‌য়ের পর মে‌য়েদের সব‌কিছুর উপর অধিক‌ার তার স্বামী আর‌ শ্বশুর বা‌ড়ির।’
আমার এত রাগ হ‌য়ে‌ছিল, মন চে‌য়ে‌ছিল সা‌মিয়া‌কে ক‌ষে এতটা চড় দি। তারপর বললাম,
‘য‌দি বি‌য়ের পর মে‌য়ে‌দের উপর সব‌চে‌য়ে বে‌শি অধিকার স্বামী আর শ্বশুর বা‌ড়ির হয়, তাহ‌লে তুই কেন মা‌সের ম‌ধ্যে বিশ‌দিন এখা‌নে প‌ড়ে থা‌বকিস? তোরও তো স্বামী-শ্বশুর-শাশু‌ড়ি আছে। তাদের কেন সেবা কর‌ছিস না? নি‌জের শ্বশুর শাশু‌ড়ি, সংসার রে‌খে ভাইয়ার সংসা‌রে কেন নাগ গলা‌চ্ছিস।’

মা তখন সা‌মিয়ার সাইড নি‌য়ে ব‌লে‌ছিল,
‘তুই কেন ত‌বে আমার সংসা‌রে নাক গলা‌চ্ছিস? আমি আমার ছে‌লে বউ এর সা‌থে যা খু‌শি করব। তুই বলার কে? বেড়া‌তে এসে‌ছিস দু’দিন বে‌ড়ি‌য়ে ভা‌লো মন্দ খে‌য়ে চ‌লে যা।’

‘ভাইয়া মা‌য়ের কথায় এত রাগ হ‌লো যে তখনই চ‌লে এসে‌ছি। ত‌বে তারপর মা আর সা‌মিয়া মি‌লে ভা‌বি‌কে অনেক কথা ব‌লে‌ছে। ভা‌বি বুড়ি, তোকে জাদু কর‌ছে, তার প‌রিবার ছো‌টো‌লোক, তো‌কে বি‌য়ে‌তে তেমন কিছু দেয়‌নি। আরও অনেক কথা।
ভাইয়া, কিছু ম‌নে ক‌রিস না তো‌কে একটা কথা ব‌লি, য‌দি তুই জীব‌নে সুখী হ‌তে চাস, তোর সংসার টি‌কি‌য়ে রাখ‌তে চাস তাহ‌লে আলাদা হ‌য়ে যা। এ্যাটলিস্ট সা‌মিয়া‌কে‌ আমা‌দের বা‌ড়ি থে‌কে দূ‌রে রাখ। ও-ই মা‌কে কুবুদ্ধি দি‌য়ে দি‌য়ে মাথাটা নষ্ট কর‌ছে। নয়তো তোর সংসার টিক‌বে না। এক‌দিন দুই‌দিন তিন‌দিন হয়‌তো ভা‌বি সহ্য কর‌বে। তারপর কর‌বে না। শি‌ক্ষিত সাবলম্বী মে‌য়ে সে কেন এমন অত্যাচার সহ্য কর‌বে?

সা‌মিয়ার কথা কী বল‌বো; লো‌কে বলে মানুষ কা‌লো হ‌লেও মনটা ভা‌লো, কিন্তু ও মানুষটা যতটা কা‌লো মনটা তার চে‌য়ে কো‌টি কো‌টিগুণ কা‌লো। কারও সুখ ও সহ্য কর‌তে পা‌রে না। ও নিজ স্বার্থ ছাড়া কিছু ভাব‌তে পা‌রে না। ওর মন পু‌রোটাই ঘৃণা, কু‌টিলতা আর প্যাচ দি‌য়ে ভ‌র্তি। দে‌খিস না বি‌য়ের পর শ্বশুর শাশু‌ড়ির সা‌থে মি‌লে ছয় মাসও খে‌তে পা‌রে‌নি। ওর শ্বশুর শাশু‌ড়ি কিন্তু য‌থেষ্ট ভা‌লো। তবুও ও মি‌লে‌মি‌শে থাক‌তে পা‌রে‌নি। নি‌জের বর‌কেও ভুলভাল বু‌ঝি‌য়ে ভেড়া ক‌রে রাখ‌ছে। তুই নিজ সংসার বাঁচা‌তে চাইলে ভা‌বি‌কে নি‌য়ে আলাদা থাক।’

অমি চুপচাপ সা‌মিহার কথাগু‌লো শু‌নে বললাম,
‘মা, সা‌মিয়া যখন ঐশী‌কে কথা শোনাল ঐশী কিছু ব‌লে‌নি?’
‘আ‌মি থাকতে তো শু‌নি‌নি। প‌রেও হয়‌তো ব‌লে‌নি। ভা‌বি যতই স্বাবলম্বী হোক না কেন, সে খুব শান্ত মে‌য়ে। হয়‌তো প‌রিবা‌রে ঝা‌মেলা করা তি‌নি পছন্দ ক‌রেন না।
আ‌মি দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বললাম,
‘‌সে জন্যই বা‌ড়ি ফি‌রে দেখ‌ছি মন খুব খারাপ। ঠিক ম‌তো কথাও বলে‌নি আমার সা‌থে। জি‌জ্ঞেস করার পরও কিছু ব‌লে‌নি। এখন বুঝলাম কেন?’
‘হুম হ‌তে পা‌রে। ভাই কথাটা আবারও বল‌ছি, ভা‌বি‌কে নি‌য়ে সুখী হ‌তে চাই‌লে মা বোনের কথা শু‌নে কো‌নো কিছু ঠিকভা‌বে না জে‌নে, না বু‌ঝে খবরদার ভা‌বি‌কে কিছু বল‌বি না। হুট ক‌রে কো‌নো সিদ্ধান্ত নি‌বি না। আর যত দ্রুত পা‌রিস আলাদা হ‌য়ে যা।’
‘আচ্ছা তোর কথাগু‌লো ভে‌বে দেখ‌ছি। এখন রাখ‌ছি। ঐশী‌কে একটু স্বাভা‌বিক ক‌রি।’
‘হুম যা।’

‌ফোন রে‌খে আমি কিছুক্ষণ ব‌সে রইল‌াম। সবার কথা বল‌লেও আপনা‌দের‌কে আমার বোন সা‌মিহার কথা ব‌লি‌নি। সা‌মিহা আমার প‌রে জন্ম নি‌য়ে‌ছে। তারপর সা‌মিয়া তারপর শফিক। অদ্ভুতভা‌বে সা‌মিহা আর আমার চিন্তা ভাবনা একরকম এবং আমা‌দের চিন্তাধারা অনেকটা বাবার ম‌তো। আর শ‌ফিক আর সা‌মিয়ার চিন্তাধারা একরকম। মায়ের চিন্তাধ‌ারাও ওদের সা‌থে মি‌লে যায়। বুঝ‌তে পা‌রি না একই র‌ক্তের চার ভাই বে‌ানের চিন্তাধারা কেন আলাদা?

বাবা মারা যাবার পর কেউ যদি আমার কষ্ট সবচে‌য়ে বে‌শি বু‌ঝে‌ছে সেটা আমার বোন সা‌মিহা। ওকে কিন্তু আমার বে‌শি‌দিন টান‌তেও হয়‌নি। ওর পড়া‌লেখার খরচও তেমন বহন কর‌তে হয়‌নি। ঐশী আর সা‌মিহা সমবয়সী। বাবা যখন মারা যায় তখন সা‌মিহাও এইচএস‌সি পরীক্ষার্থী ছিল। তারপর যখন ও অনা‌র্সে ভ‌র্তি হয়, তখন ও নি‌জেও বেশ ক‌য়েকটা প্রাই‌ভেট পড়া‌তো। ঘ‌রে কিছু না দি‌লেও নি‌জের খরচ নি‌জে বহন করত।

ওর বি‌য়ে সম্পূর্ণ ঘ‌রে‌ায়া পদ্ধ‌তি‌তে হ‌য়েছে। আস‌লে ওর বর মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। য‌দিও সে ব্যবসা ক‌রে ত‌বে বেশ ধা‌র্মিক মানুষ। তি‌নি যৌতুক কিংবা ধ‌র্মে মানা এমন কাজ একদমই পছন্দ ক‌রেন না। তাছাড়া সা‌মিহা যেমন সুন্দরী তেমন মে‌য়ে হিসা‌বে শান্ত, গুণী, লক্ষী ম‌তো মে‌য়ে। অনার্স তৃতীয় ব‌র্ষে থাক‌তে বি‌য়ে হয় ওর। ওদের বি‌য়ের বয়স দশ বছর হ‌লো, কিন্তু ওর ব‌রের কখ‌নো কো‌নো চা‌হিদা দেখি‌নি। সামিয়ার বর‌কে যে এত এত দি‌য়ে‌ছি তা নি‌য়েও সে কখ‌নো মুখ গোমড়া ক‌রে‌নি। বি‌য়ের পর সে-ও আমা‌দের কম সাহায্য করে‌নি। তার বু‌দ্ধি নিয়েই আমি ইট, বালু, সি‌মে‌ন্টের ব্যবসা শুরু ক‌রে‌ আজ সফল আলহামদু‌লিল্লাহ। সামিয়া আর সা‌মিহার ম‌ধ্যে বিস্তর ফারাক। সা‌মিয়ার মন্দটা যে‌হেতু ব‌লে‌ছি সা‌মিহার ভা‌লোটাও বলা উচিত। দু‌জন র‌ক্তের বোন তবুও আচার আচরণ, চ‌রি‌ত্রে বিস্তর ফারাক।

যা হোক সা‌মিয়ার কল কে‌টে আমি মা‌য়ের কা‌ছে গি‌য়ে বললাম,
‘মা, ঐশী সকা‌লে তোমা‌কে যে টাকাটা দি‌য়ে‌ছে সেটা দাও তো।’
‘‌কেন?’
‘আমার লাগ‌বে।’
‘ও তো‌কে ব‌লে‌ছে যে বাবার বা‌ড়ি টাকা পা‌ঠি‌য়ে?’
‘হ্যাঁ, ব‌লে‌ছিল।’
‘তুই কিছু ব‌লিস‌নি?’
‘না। বলার কী আছে? ওর উপার্জ‌নের টাকা ও যা‌কে ইচ্ছা দি‌বে, আমি বলার কে?’
‘কী বল‌ছিস? তাহ‌লে আমার ঘ‌রে থে‌কে জব কেন কর‌বে? ঘ‌রের কাজ ক‌রবে?’
‘বউ আমার, সে ঘ‌রের কাজ কর‌বে না‌কি জব সে সিদ্ধান্ত আমি নিব তোমরা না। দাও টাকাগু‌লো দাও।’
মা আমতা আমতা ক‌রে বলল,
‘পু‌রোটা তো নেই।’
‘‌কেন?’
‘সন্ধ্যায় পাঁচ হাজার টাকা নি‌য়ে সা‌মিয়া মা‌র্কে‌টে গি‌য়ে শ‌পিং ক‌রে আস‌ছে।’
‘ওহ। যেটা আ‌ছে সেটা দাও।’

মা টাকাটা দি‌লে আমি গলা হে‌কে সা‌মিয়া‌কে ডাকলাম। সা‌মিয়া আসলে বললাম,
‘তুই ঐশীর টাকা থে‌কে পাঁচ হাজার টাকা নি‌য়ে‌ছিস?’
‘হুম।’
‘‌সেটা ফেরত দে।’
‘কেন?’
‘টাকা ঐশীর, তোর বাপ ভাইয়ের না যে তা‌দের ম‌নে ক‌রে খরচ কর‌বি। দে টাকাগু‌লো।’
‘খরচ ক‌রে ফে‌লে‌ছি।’
‘কাল তোর ব‌রের কাছ থে‌কে টাকা এনে ফে‌রত দিবি। আর তো‌কে বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি বাবার বা‌ড়ি থাক‌তে নয়। মা‌সের ম‌ধ্যে বিশ দিন এখা‌নে উঠে প‌ড়ে থা‌কিস, তোর স্বামী কী ক‌রে তখন? তোর সংসা‌রে কাজ কে ক‌রে? তোর সংসা‌রের দেখভাল কে ক‌রে? আর এভা‌বে দি‌নের পর দিন বাবার বা‌ড়ি থে‌কে স্বামীর হক নষ্ট কর‌ছিস কেন? এরপর তোর বর আরেকটা বি‌য়ে কর‌লে ব্যাপারটা কেমন হ‌বে? তারও নিশ্চয়ই নি‌জের স্ত্রী ছে‌লের সঙ্গ‌ পে‌তে ইচ্ছা ক‌রে। তারপর সেটা না পে‌য়ে যখন নতুন সংসার খুঁজ‌বে তখন দোষ হ‌বে ছে‌লেরা ভা‌লো না। আর তোকে লাখ লাখ টাকা খরচ ক‌রে বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি কী বাবার বা‌ড়ি এসে উঠে ব‌সে থাকার জন্য? নি‌জের বা‌ড়ি গি‌য়ে নি‌জের সংসা‌রে মন দে। আর আমার সংসা‌রে গু‌টিবা‌জি করা বন্ধ কর।’

আমার মুখ থে‌কে এমন কথা শুন‌বে হয়‌তো সা‌মিয়া কখ‌নো ভাব‌তেও পা‌রে‌নি। ও হতভম্ব হ‌য়ে বলল,
‘ভাইয়া, আমি তোর সংসা‌রে গু‌টিবা‌জি ক‌রি?’
‘অবশ্যই ক‌রিস। আজ সন্ধ্যায় তুই আর মা মি‌লে ঐশীর সা‌থে যা কর‌ছিস ত‌া সা‌মিহা আমা‌কে ফোন ক‌রে সব ব‌লে‌ছে। আর তোমা‌কেও ব‌লি মা, কোথায় মে‌য়ে‌কে নিজ সংসা‌রে মন দি‌তে বল‌বে, তা না ক‌রে বি‌য়ের এত‌দিন পরও মে‌য়েকে কো‌লের ম‌ধ্যে রে‌খে দি‌য়ে‌ছো। একবার ভে‌বে দেখ‌ছো তোমার ম‌তো য‌দি আমা‌দের না‌নি তোমার সা‌থে এমন কর‌তো, তাহ‌লে বাবা নিশ্চয়ই তোমা‌কে নি‌য়ে সুখী হ‌তো না।
একে তো সা‌মিয়ার ঝগরু‌টে স্বভা‌বের কার‌ণে ওর বি‌য়ে হ‌চ্ছিল না। বহু ক‌ষ্টে ভা‌লো পাত্র, ভা‌লো প‌রিবার পেলাম। তা-ও মোটা অং‌কের টাকা যৌতুক দি‌য়ে, কিন্তু তোমার মে‌য়ে কী করল? বি‌য়ে হওয়ার পর এক বছরও শ্বশুর শাশু‌ড়ির সা‌থে মি‌লে খে‌তে পারল‌ না। সা‌মিয়ার শ্বশুর শাশু‌ড়ি কিন্তু স‌ত্যি ভ‌ালো মানুষ, কিন্তু তোমার মে‌য়ের মাত্রা‌তি‌রিক্ত রাগ আর ঝগড়ু‌টে স্বভা‌বের কার‌ণে তা‌দের সা‌থে মি‌লে সংসার কর‌তে পারল না। এতে কিছুটা দোষ তোমারও মা। তু‌মি ওকে শাসন ক‌রো‌নি কখ‌নো। ওর দোষ সবসময় ঢে‌কে রে‌খে‌ছে‌া। তখন দোষ ঢে‌কে‌ছো ব‌লে এখন সেটা ব‌ড়ো আকার ধারণ ক‌রে সাম‌নে আস‌ছে।’
মা বেশ রে‌গে বল‌লেন,
‘কী দোষ ঢাক‌ছি?’

চল‌বে…