সংসার সমরাঙ্গন পর্ব-০৯

0
12

#সংসার_সমরাঙ্গন (০৯)
রূপন্তি রাহমান (ছদ্মনাম)

মেহেরুন্নেসা হকচকিয়ে গেলেন। ছেলের কাছ থেকে এমন কথা তিনি আশা করেননি। মেজাজ বিগড়ে যায় তার। ঝাঁঝালো কণ্ঠে কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেলেন। না, এখনই নয়। নিজেকে সামলে নিলেন দ্রুত। একদিনে কিছুই হবে না—ছেলেকে হাতে আনতে হবে ধীরে ধীরে, ধৈর্য ধরে। মেকি হেসে বলেন,

‘তোরা আলাদা হয়ে গেলে আমরা বুড়ো-বুড়ির কি হবে? মুনিরা তো আজ আছে কাল নেই। নাকি আমরা তোদের বোঁজা হয়ে গেলাম?’

মাহমুদ তপ্ত শ্বাস ফেলে। নিষ্প্রাণ ঠোঁটে আওড়ায়,

‘না সন্তান কখনো বাবা মায়ের বোঁজা হয় আর না বাবা মা। মাঝে মাঝে কর্মফল মানুষকে এমন এক শেকলে বাঁধে যার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য তারা ছটফট করে।’

মেহেরুন্নেসা জবাব খুঁজে পেলেন না। নাড়ীর টানকে অস্ত্র করে মুখে আঁচল গুঁজে জবাব দেন,

‘বিয়ের পর ছেলেরা যে পর হয়ে যায় এর থেকে ভালো উদাহরণ আর হতেই পারে না। তারা কেবল মায়ের দোষ দেখে। বউয়ের টা না।’

____________

মাগরিবের নামাজ শেষে বাসায় ফিরে বেশ অবাক হন খালেকুজ্জামান। বাসা জুড়ে কেবল নিস্তব্ধতা। রান্নাঘরের আলো নিভানো দেখে তার অবাকের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো। এখন রান্নাঘর শান্ত থাকার সময় নয়। এই সময়টাতে তনয়া একা হাতে নাস্তা আর রাতের রান্নার আয়োজন করে। তাই রান্না শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত কড়াই, চামচ আর খুন্তির টুংটাং শব্দ আসতেই থাকে। সামনে মাহমুদ কে জানতে চাইলো,

‘তনয়া কে দেখছিনা। বাসায় নেই?’

মাহমুদ এক পলক খালেকুজ্জামানের দিকে তাকালো। পরক্ষণে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে জবাব দিলো,

‘ও ঘুমোচ্ছে।’

খালেকুজ্জামান আপনমনে বিড়বিড় করে, ‘ঘুমোচ্ছে? এখন?’

মুনিরা তার রুম থেকে বের হয়ে আসে। এসেই মাহমুদকে বলল,

‘আম্মা তোমায় ডাকছে ভাইয়া।’

মাহমুদ কাজ অসমাপ্ত রেখেই উঠে দাঁড়ালো। এখন না গেলে তিনি নিজের মতো করে অনেককিছুই ভেবে ফেলবেন। মাহমুদ যেতেই মুনিরা খালেকুজ্জামান কে বলে,

‘আব্বা আপনি বসেন। নাস্তা দিচ্ছি আপনাকে।’

খালেকুজ্জামানের অবাক মাত্রা যেন এবার আসমান ছুঁলো। তিনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন মুনিরার দিকে।

মুনিরা তার সামনে পিঠা রাখতেই তিনি বিষম খেলেন।

‘কি হলো আব্বা?’

‘না না তেমন কিছু না। এগুলো তুই বানিয়েছিস?’

মুনিরা অসম্মতি জানিয়ে বলে,

‘আম্মা বানালো।’

পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে তিনি খেতে বসলেন।

‘আজ যে সূর্য কোন দিক উঠলো আর কোন দিক দিয়ে ডুবলো কিছুই বুঝতে পারছি না। নাকি আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছি কে জানে।’

________________

মাহমুদ রুমে ঢুকতেই কানে আসে কান্নার গুনগুন শব্দ। শব্দটা এতটাই চাপা, তবু যেন দেয়ালের ভেতর দিয়ে চুইয়ে এসে তার বুকে বিঁধতে থাকে। ধীরে ধীরে তার চোখ ঘুরে যায় জানালার দিকে।

জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মেহেরুন্নেসা। জানালার ফাঁক দিয়ে আসা ম্লান আলোয় তার মুখের রেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তার কাঁধ হালকা কাঁপছে। মাথাটা সামান্য ঝুঁকে আছে। দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরেছেন জানালার গ্রিল। যেন নিজেকে সামলে রাখার শেষ চেষ্টা করছেন।

মাহমুদ নিঃশব্দে কয়েক কদম এগিয়ে যায়। কান্নার শব্দটা এখন আরও স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মাহমুদ গলা খাঁকারি দেয়। মেহেরুন্নেসা চমকালেন না।

‘আম্মা…’ মাহমুদ ধীরে ধীরে ডাক দেয়।

তিনি সাড়া দিলেন না। সাড়া না পেয়ে মাহমুদ তপ্ত শ্বাস ফেলে। যেন সমস্ত হতাশা বেরিয়ে গেলো নিঃশ্বাসেই।

‘কাঁদছো কেন তুমি?’

তিনি নাক টেনে মৃদুস্বরে প্রশ্ন করেন,

‘কেন এসেছিস আমার কাছে? বিয়ে করেছিস। মা তো এখন পর। এই পরের কাছে কি দরকার?’

‘মুনিরা বলল তুমি আমায় ডাকছিলে। এসে দেখি তুমি কান্না করছো। কেন আম্মা?’

‘ছেলে আর মেয়ের মাঝে এখানেই পার্থক্য। আমার মেয়েটার কানে কান্নার শব্দ যেতেই ঠিক বুঝে গেলো তোর জন্য কাঁদছি। অথচ তোর হুঁশ নেই।’

‘আমি আবার কি করলাম আম্মা?’

‘করিস নি। তবে করতে কতক্ষণ? আজ বলেছিস আলাদা হয়ে যাবি। দেখা যাবে কাল হয়েও গিয়েছিস। ছেলে মেয়েরা আজ এতো বড় হয়েছে যে ভালোর জন্য কিছু বলা যায় না। খারাপ মনে করে।’

মাহমুদ এগিয়ে এলো। একহাতে জড়িয়ে ধরে মেহেরুন্নেসাকে। আশস্ত করে বলে,

‘আমি তো শুধু এমনি বলেছি। তুমি শুধু শুধু তনয়াকে বকাঝকা করো। এসবের কি কোনো দরকার আছে? এগুলো কি ঠিক আম্মা?’

‘মায়েরা বুঝি তার সন্তানদের শাসন করতে পারবে না? ওকে তো সন্তান মনে করেই একটু আধটু শাসন করি যেন কোনো রকম ভুল না করে।’

‘তুমি আদৌও সন্তানের মতো মনে করো? করলে আজ সকালে খাসির মাংশ নিয়ে ওভাবে বলতে? এগুলোও কি শাসন? ও এসব সহ্য না করে যদি আলাদা হতে চায় তখন? তখন তো আর আমার কিছু করার থাকবে না।’

‘ওটা তো রাগ থেকে বলেছি। শীত চলে যাচ্ছে। তোর শ্বাশুড়ি এখনো তোকে ফোন দিয়েছে? শীত এলে শ্বাশুড়িরা তাদের জামাই কে কত রকমের পিঠাপুলি বানিয়ে খাওয়ায়। তোকে কি বলেছে একবারো যেতে? আমার খারাপ লাগে না? আমার ছেলের কপাল কি এতই খারাপ?’

‘কপাল খারাপের কি আছে? ব্যস্ত হয়তো। আর আমি তো এসব নিয়ে ভাবি না। আর আমারই বা সময় কোথায়?’

মেহেরুন্নেসার কান্না আরো ভারি হয়। একটু একটু করে শব্দের মাত্রা বাড়তে থাকে। মাহমুদ পড়ে যায় বেকায়দায়। সে চাইছে না তনয়ার কান পর্যন্ত এই কান্নার শব্দ যাক। শেষের কথাগুলো কোনোভাবে জানতে পারলে আবারও ছোটখাটো একটা গৃ*হ*যু*দ্ধ বাঁধবে। তাই মেহেরুন্নেসাকে শান্ত করতে বলে,

‘ছোটবেলায় যে চুলে তেল দিয়ে আস্তে আস্তে বিলি কে’টে দিতে মনে আছে? আমার মাথাটা ভীষণ ধরেছে। আগের মতো একটু বিলি কে’টে দিবে আম্মা?’

মনে মনে ক্রূর হাসেন মেহেরুন্নেসা। ছেলেকে একটু হলেও বাগে এনেছেন। এ যেন যুদ্ধ জয় করার মতো আনন্দ।

_______________

রাত তখন আটটা। খালেকুজ্জামান কক্ষ থেকে বের হয়ে এলেন। রান্নাঘরের আলো তখনো নিভানো। ব্যাপারটা অদ্ভুত ঠেকে তার কাছে। তিনি এগিয়ে গেলেন মাহমুদের রুমের দিকে। বার কয়েক ডাকলেন তনয়াকে। কোনো সাড়া পেলেন না। ভেতরে যাবেন কি যাবেন না সেটা নিয়ে পরে গেলেন দোটানায়। এদিকে মনটাও খচখচ করছে। এভাবে রান্নাবান্না ফেলে বসে থাকার মেয়ে সে না। তিনি আস্তে করে দরজা ধাক্কা দিলেন। আলো নিভানো কক্ষের। আলো জ্বালান তিনি। আলো জ্বালাতেই দেখলেন তনয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ভারি নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। কপালে মশা একটা বসে আছে। অতিরিক্ত রক্ত খাওয়ার ফলে সে উড়ে যেতে পারছে না। মশাটাকে মা*রা*র জন্য তিনি যেই না তনয়া কপালে হাত ছুঁয়ালেন ওমনি আঁতকে উঠলেন। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে তনয়ার। জ্বরের মাত্রা এতই যে হুঁশ নেই তার।

রক্ত চেপে যায় খালেকুজ্জামানের মাথায়। দাঁত কিড়মিড় করে ছুটলেন মুনিরার রুমের দিকে। মুনিরার খিলখিল হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তিনি লাথি মে*রে দরজা খুলে ফেললেন। মেহেরুন্নেসার কোলে মাথা গুঁজে শুয়ে ছিলো মাহমুদ। তিনি মাহমুদের চুলে বিলি কে’টে দিচ্ছিলেন আর ছোটবেলার গল্প করছিলেন। সেগুলো শুনেই হাসছিলো মুনিরা।

দরজা খোলার বিকট শব্দে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে মাহমুদ। থতমত খেয়ে যায় সকলে। মেহেরুন্নেসা কপাল কুঁচকে বলে,

‘এসব কি মাহমুদের আব্বা?’

খালেকুজ্জামান রক্ত চোখে তাকিয়ে আছেন মাহমুদের দিকে। দাঁতে দাঁত পিষে প্রশ্ন করেন,

‘কয়টা বাজে এখন, মাহমুদ?’

মাহমুদ হকচকিয়ে গেলো। এখন কয়টা বাজে তার জানা নেই। সে তো ঘড়ি নিয়ে বসে নেই।

‘কয়টা বাজে জানার জন্য তুমি এভাবে দরজায় লা*থি মা*র*লে।’

খালেকুজ্জামানের এমন রাগ দেখে চুপ করে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে মুনিরা। মাহমুদ ফিরতি প্রশ্ন করে,

‘কেন আব্বা?’

‘তুমি জানো এখন কয়টা বাজে?’

মাহমুদ এপাশ ওপাশ মাথা দোলায়।

‘না, সাড়ে ছয়টা সাতটা বাজবে।’

‘সাড়ে আটটা বাজতে চলেছে।’

‘কিহ্‌?’ মাহমুদ আঁতকে উঠলো।

‘তোমার বউ সেই দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত ঘুমোচ্ছে। তোমার অদ্ভুত লাগছে না?’

‘কি? এখনো ঘুমোচ্ছে? রাতের রান্না করবে কখন আর খাবো কখন?’ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেন মেহেরুন্নেসা।

খালেকুজ্জামান হুঙ্কার দিয়ে উঠেন, ‘তুমি চুপ করো। আমি তোমার ছেলের সাথে কথা বলছি।

‘কি অদ্ভুত লাগছে না?’

মাহমুদ মাথা নুইয়ে ফেলে। এতোটা সময় যে কখনো কে’টে সে আসলেই টের পায়নি। মিনমিন করে বলে,

‘আসলে আব্বা,,,,,,,,

‘আসলে নকলে কিছুই না। মেয়েটার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।’

মাহমুদ চমকে উঠে।

‘বউয়ের খেয়াল রাখতে না পারলে বিয়ে করেছো কেন? সকলের যত্ন করার এই পরিণাম মেয়েটার? এতো উদাসীনতা মেয়েটার প্রতি তোমার? তোমার কি উচিৎ ছিলো না একটা বার দেখার কেন এতোক্ষণ অব্দি ঘুমোচ্ছে? কোনো দায়িত্ব জ্ঞান নেই তোমার? নাকি বিয়ে করেছো কেবল নিজের,,,,,

এতটুকু বলে থেমে যান তিনি। বাবা হয়ে নিকৃষ্ট শব্দটুকু ঠোঁটের কাছে এনেও গিলে ফেললেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।

‘মেয়েটার দূর্ভাগ্য তোমার মতো একজন জীবনসঙ্গী সে পেয়েছে।’

______________

তনয়ার কপালে হাত দিয়ে ভেতরটা হু হু করে উঠলো মাহমুদের। অপরাধবোধের তীক্ষ্ণ কাঁটা তার মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। খুব করে ইচ্ছে করলো তনয়ার উত্তপ্ত শরীরটাকে বুকের সাথে চেপে ধরতে। কিন্তু পারলো না সবাই থাকায়। আলতো করে ডাকলো তনয়াকে।

‘তনয়া? তনয়া?’

তনয়ার সাড়াশব্দ না পাওয়া গেলেও ঘুমন্ত চোখজোড়া দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা।

‘তনয়া? কাঁদছো কেন? বেশি কষ্ট হচ্ছে?’

মাহমুদের হাতের স্পর্শ বড্ড শীতল মনে হলো তনয়ার কাছে। পিটপিটিয়ে চোখ মেলতেই সে দেখতে পেলো মাহমুদ কে। ফুঁপিয়ে উঠলো সে। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করতে পারলো না।

‘কষ্ট হচ্ছে?’

তনয়া মাথা নাড়ায়।

‘ওর জ্বরটা মেপে দেখ।’

জ্বর মাপা হলো। শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট। জ্বরের মাত্রা দেখে খালেকুজ্জামান বলেন,

‘আমি বরং ডাক্তার নিয়ে আসি। উনি দেখলে ভালো হবে।’

_____________

তনয়ার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে মাহমুদ। মিনিট ত্রিশের মাথায় ডাক্তার নিয়ে হাজির হলেন খালেকুজ্জামান। ডাক্তার আবারও জ্বর মাপলেন। প্রেশারও মাপলেন। চিন্তিত গলায় বললেন,

‘জ্বর তো অনেক। জলপট্টি দিতে থাকুন। আমি তিনদিনের ঔষধ দিচ্ছি। তিনদিনে জ্বর না কমলে জানাবেন আমাকে। আপাতত উনাকে কিছু একটা খাইয়ে ঔষধটা খাওয়ান।’

ডাক্তার চলে গেলেন। তনয়া দূর্বল চোখে এক পলক সবাইকে দেখলো।

‘তনয়া ভাত খাবে?’

তনয়া উত্তর দেওয়ার আগেই মেহেরুন্নেসা জবাব দেন, ‘ভাত তো নাই।’

তনয়া অস্পষ্ট স্বরে জানায়, ‘ভাআআত খাবো না।’

‘চিতই পিঠা আছে খাবে?’

‘সেগুলোও তো শেষ।’ মুনিরা বলতেই তনয়া বিবর্ন হাসে।

‘আমি ভাত বসাবো ভাইয়া?’

‘ভাত হতে হতে দেরি হয়ে যাবে। আমি দোকান থেকে পাউরুটি আর কলা নিয়ে আসি।’ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন খালেকুজ্জামান।

মাহমুদ এক নাগাড়ে জলপট্টি দিয়েই যাচ্ছে।

__________________

রাত প্রায় সাড়ে দশটা। তনয়া ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে। শরীরের তাপমাত্রাও কমতির দিকে। মাহমুদ খেতে আসলো৷ আজকে সাদামাটা আয়োজন। ডিম ভাজি, বেগুন ভাজা, ভাত আর পাতলা ডাল।

চেয়ার টেনে বসতেই খালেকুজ্জামান জানতে চাইলেন,

‘জ্বরটা কমলো?’

‘কমেছে একটু। এখন ঘুমোচ্ছে।’

বলেই ডিম ভাজি দিয়ে ভাতের লোকমা টা যেই না মুখে দিলো ওমনি মুখটা বিকৃত করে ফেলে সে। কোনোরকম ভাতের দলাটা গিলে নিলো।

‘ডিম কে ভাজি করেছে?’

‘আমি করেছি ভাইয়া। কেন?’

উষ্ণ শ্বাস ফেলে মাহমুদ।

‘কিছু না। একটু লবন বেশি হয়েছে আরকি।’

‘ওমন একটু আধটু হয়ই। ও আর রান্না করেছে নাকি?’

মেহেরুন্নেসার কথার পিঠে আর কিছু বলল না মাহমুদ। চুপচাপ খেয়ে নিলো।

_____________

মাঝরাতে আচমকা জেগে যায় তনয়া। পুরো শরীর তার দরদর করে ঘামছে। ঘামে জুবুথুবু অবস্থা তার। তাকে এক হাতে জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে মাহমুদ। দূর্বল হাতে মাহমুদের হাতটা সরিয়ে উঠে বসলো সে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ। জ্বর কমতেই খিটাদাও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। ভাত খেতে ইচ্ছে করছে তার। মাহমুদ কে ডাকতে গিয়েও থেমে যায় সে। নিজে নিজে ওঠে দাঁড়ালো।

ডাইনিংরুমে যায়। সদর দরজার ভেন্টিলেটর দিয়ে মৃদু আলো আসছে। মৃদু আলোয় সুইচ চেপে লাইট অন করে সে। এক গ্লাস পানি খেয়ে গেলো রান্নাঘরের দিকে। রান্নাঘরের আলো জ্বালাতেই দেখলো রান্নাঘর একদম ঝকঝকে তকতকে। এমনটা সে আর কখনো দেখেনি। সবাই সবসময় খেয়ে এঁটো থালাবাটি রেখে যেতো। আজ সে অসুস্থ বলেই হয়তো ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছে। সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেখে আপনা-আপনি তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। তবে সেই হাসি স্থায়ী হলো না তার। ভাত খাওয়ার জন্য ভাতের পাতিলের খোঁজ করতেই দেখলো তা ধুয়ে উলটো করে রাখা। তরকারি বলতেও কিছু নেই। কেবল ডাল আছে। সে ফ্রিজ খুললো। সেখানেও কিছু নেই। সমগ্র পৃথিবী যেন ভেঙে পড়লো তার উপর। কান্না যেন গলা আটকে দিলো তার। কোনো রকম ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ার টেনে বসলো সে। আরো এক গ্লাস পানি সে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। টেবিলে হাত রেখে মুখ গুঁজলো। ফুঁপিয়ে উঠলো সে। কাঁপা কাঁপা গলায় আওড়ালো,

‘নিজের মেয়ের সাথেও এমনটা করতে পারতেন আম্মা? আবার শেষ বয়সে আপনারাই ছেলের বউয়ের কাছে সেবা আশা করেন।’

#চলবে